-” তুমি আমাকে বিয়ে করবে কি-না আমি তা জিজ্ঞেস করি নি?তোমায় আমাকে বিয়ে করতে হবে এইটা জানিয়েছি।এখন চলো আমার সাথে।” কথাটি বলেই আমার হাত ধরে টেনে হিছঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে একটা অজানা লোক।যাকে আমি চিনিও নাহ।আমি কান্না করতে করতে চিৎকার করে বললাম,
-” প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।কে আপনি?আর আমি আপনাকে বিয়ে কেন করবো?”
কিন্তু আমার কথাটা মনে হয় উনার কান অব্দি পৌছাঁলো না।আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেন।যার ফলে গাড়ির জানালার সাথে প্রচন্ড জোড়ে আর্তনাত করে উঠলাম।কিন্তু তাতে উনার ভ্রু-ক্ষেপ নেই।উনি একমনে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভারকে নির্দেষ দিলেন গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার জন্যে।
আমি আবারো আকুতিভরা গলায় বললাম,
-” প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন! কেন এমন করছেন?”
কথাটা শুনতেই যেন উনার চোখ গুলো রক্তবর্ণ ধারন করলো।আমাকে হেচঁকা টানে নিজের কাছে এনে মাথায় রিভলভার তাক করে বললেন,
-” আর একটা কথা যদি তোমার মুখ থেকে শুনি তাহলে তোমার কথা বলা আমি চিরতরে বন্ধ করে দিবো।”
এদিকে ভয়ে আমি জমে গিয়েছি। আমার শরীর থরথর করে কাপতে লাগলো।জীবনে এতো ভয়ানক পরিস্থিতির স্বিকার আমি কোনদিন হইনি।
আমার প্রচুর কান্না পাচ্ছে।কেন আমার সাথেই কেন এমনটা হওয়া লাগলো।আমি চুপচাপ জানালার সাথে চেপে বসলাম আর ভাবতে লাগলাম একটু আগের ঘটনা।
★★★
আমি নিঝুম রহমান।বাবা,মার বড় মেয়ে আমার একটা ছোট্ট বোন আছে।আমরা ২ বোন।
আমি এইবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি।আজ যখন ভার্সিটির ক্লাস করছিলাম তখন হঠাৎ কোথা থেকে ক্লাস রুমে এই লোকটা এসে আমার হাত চেপে ধরে বলে,
-” চলো আমার সাথে!”
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
-” কে আপনি?আর আমিই বা আপনার সাথে কোথায় যাবো?”
তখন উনি দাতেঁদাত বলেন,
-” বিয়ে করতে।”
ব্যস এরপর কি হয়েছে তাতো জানেনি। ”
★★★
উনার গম্ভীর গুমোট আওয়াজে ভয়ার্ত চোখ তাকালাম।উনি আমার হাতটা খপ করে ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামালেন।আমি তখনো ছটফট করছিলাম ছাড়া পাবার জন্যে।কিন্তু উনি আমাকে টানতে টানতে কাজি অফিসে এনে চেয়ারা ধপ করে বসালেন।কাজি রেজিস্ট্রি পেপার রেডি করতে বললেন।আমি আবারো বললাম,
-” প্লিজ এমন করছেন কেন?আমি বললাম তো আমি বিয়ে করবো নাহ।”
সাথে সাথে উনি ঠাস করে আমার পায়ের কাছে শ্যুট করে বসলেন।আমি আর কিছু বলায় সাহস করলাম না।
কি করতে চাইছেন উনি?কেনই বা আমার সাথে এরকমটা করছেন?আমি তো উনার কোন ক্ষতি করিনি।তবে কেন উনি আমার সাথে এই নির্মম অত্যচার চালাচ্ছেন।
না আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো নাহ।কোনভাবেই না এতে যদি আমার প্রাণ চলে যায় তবুও না।আমি শক্ত হয়ে বসে রইলাম।বার বার শুধু আহান এর চেহারা ভেসে উঠছে।নাহ আমি আহান কে কিছুতেই ঠকাতে পারবো নাহ।
হ্যা আহান! আমার উডবি আমাদের ফ্যামিলি থেকে বিয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছে।এইতো আর সপ্তাহ খানিক বাদে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু এর মধ্যে উনি আমাকে এইভাবে জোড় করে বিয়ে করতে চাইছেন।
-” সাইন করো!” পেপারটা এগিয়ে দিয়ে বললেন উনি।
আমি উনার কথা শুনে চমকে উনার দিকে তাকালাম।
নাহ আমি বিয়ে করবো নাহ।এই সিদ্ধান্তে অটল রেখে আমি কাঠ কাঠ গলায় বললাম,
-” নাহ! আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো নাহ।”
উনি সাথে সাথে আমার গাল চেপে ধরলেন।
-” মৃত্যুকে খুব করে আপন করে চাইছো তাই নাহ।”
-” আপনি আমাকে মেরে ফেললেও আমি এই বিয়ে করবো নাহ।”
আমার কথা শুনে কিছুক্ষন রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয় থেকে উনার একটা লোককে ডাকলেন।ছেলেটা একটা ল্যাপটপ এনে আমার সামনে ধরতেই দিন দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো আমার।একটা মানুষ ঠিক কতোটা খারাপ হলে কারো সাথে এমন করতে পারেন।
উনি বাকা হেসে বললেন,
-” কিহ! বেবি জেদ পানি হয়ে গেছে।এক্ষুনি সাইন করো নয়তো তোমার বোনকে আমার লোকেরা উপরে পাঠাতে দুই মিনিট সময় নেবে নাহ।”
উনার কথায় আমি অস্রুসজল নয়নে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকালাম সেখানে দেখা যাচ্ছে আমার ছোট্ট বোন সোহাকে হাত-পা মুখ বেধে রাখা হয়েছে।আর ও কাদঁছে।
আমি উনার দিকে করুণ চোখ তাকালাম।উনি এখনো হাসছেন।
আমার কাঁছে করার কিছু রইলো নাহ।।
আমি কাপা হাতে সাইন করে দিলাম
শেষ সব শেষ। আমি নিঃস্ব।আজ থেকে এই লোকটা আমার স্বামি।
ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছে আমার।
_________
গাড়িতে নিস্তেজ শরীর নিয়ে বসে আছি আমি।
আমার পাশেই নিভৃত বসে একধ্যনে ল্যাপটপে কাজ করছেন।
হ্যা এই সুদর্শন দেখতে পুরুষটির নাম নিভৃত।পুরো নাম নিভৃত রায়হান।
কাজি অফিসে বিয়ে পড়ানোর সময়েই উনার নাম জানতে পেরেছিলাম আমি।
উনি ভ্রু-কুচকে মনোযোগ সহকারে কাজ করছেন।
কালো রঙের শার্টেয় বেশ আকর্ষনীয় লাগছে উনাকে।
উনার চুল গুলো বাতাসে হালকা দুলছে।
বুজাই যাচ্ছে বেশ সিল্কি উনার চুল গুলো।
চোখ হালকা সবুজ বর্ণের।
উনার চোখের নিচে হালকা ডানপাশে একটা লাল তিলে আছে এতে যেন উনার সৌন্দর্যতা আরো দ্বিগুন হারে বেড়ে গেছে।
ডার্ক রেড বর্ণের ঠোঁট জোড়া মাজেই মাজেই কিছু একটা চিন্তা করে দাঁত দিয়ে চেপে ধরছেন।
এক কথায় বলতে গেলে অতি সুদর্শন যাকে বলে।
কিন্তু উনার এই বাহিরের সৌন্দর্য দিয়ে কি হবে যেখানে উনার ভীতরটা কুচকুচে কালো।
ঘৃনায় চোখ সরিয়ে নিলাম।
এই জঘন্য লোকটাকে এক মুহূর্তের জন্যে আমার সয্য হচ্ছে নাহ।
এর সাথে সারাটা জীবন আমি কাটাবো কিভাবে?
কি ভাবছি আমি এইসব না এর সাথে থাকা অসম্ভব।
আমি! আমি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাবো।
আমি জানি আহান আমাকে অনেক ভালোবাসে আর আহান কে বুজিয়ে বললে আহান আমাকে মেনে নিবে।
হ্যা পালাতেই হবে আমাকে। হবেই হবে।
এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আমরা একটা বাড়ির ভীতরে প্রবেশ করলাম।
উনি গাড়ি থেকে নামতে আমিও নেমে দাড়ালাম।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
এটা এটা তো আহানদের বাড়ি।
মানে আমার হবু শশুড় বাড়ি হওয়ার কথা ছিলো।
এখানে কেন নিয়ে এসেছেন উনি।
তবে কি উনি নিজে এসে আহানকে সব বলে দিবেন।
এইসব ভাবতেই মাথা ঘুরতে লাগলো আমার।
এই পরিবারের প্রতিটা লোক ভীষন ভালোবাসে আমায়।
তারা যদি জানতে পারে আমি আহানকে রেখে এই লোকটাকে বিয়ে করেছি তবে প্রচন্ড কষ্ট পাবেন তারা।
আমি এইসব ভাবতেই বরফের মতো শক্ত হয়ে রইলাম স্রেফ।
উনি আমাকে উনার সাথে যেতে না দেখে ভ্রু-কুচকে পিছু ফিরে তাকালেন। আমাকে আগের জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গটাগট পা ফেলে আমার কাছে এসে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলেন উনি।
আমি হতবাক হয়ে তাকালাম।
লোকটা করতে চাইছে কি?
এইভাবেই আমি ভয়ে জমে যাচ্ছি যে এই বাড়ির লোকেদের আমি কি বলে বুজাবো।
আর এখন তো উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার টেন্সন শতোগুন বাড়িয়ে দিলেন।
আমি শুধু ছুটাছুটি করতে লাগলাম।
মানে যে কোন উপায়ে উনার থেকে ছাড়া পাওয়া লাগবেই।
উনি আমাকে এইরকম করতে দেখে ধমকে উঠলেন,
-” আর একবার যদি এরকম করো আই সুয়ের আমি এইমুহূর্তে তোমাকে সবার সামনে কিস করে দেবো।”
উনার কথায় আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম।
বলে কি এই লোক।আমি আশেপাশে একবার তাকিয়ে বার কয়েক শকনো ঠোক গিল্লাম।উনার শতোখানিক লোক এখন এখানে আছে।এদের সামনে উনি আমাকে কিস করবেন?
কি জানি করতেও পারে।
এই লোককে দিয়ে বিশ্বাস নেই।
আমি আর কিছু বললাম না।উনি আমাকে কোলে নিয়ে বাড়ির দরজার সামনে দাড়ালেন।
আর উনার একটা লোক এসে কলিংবেল বাজালো।
খানিক বাদে দরজা খুলে গেলো। আর দরজাটা খুললো স্বয়ং আহানের মা।
উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমাদের দিকে।
উনি আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বললেন,
-” কাকিমা! আমাদের ভীতরে যেতে দিবে নাহ।”
চলবে,,
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০১
আর এটা নতুন গল্প কেমন হয়েছে জানাবেন।
আমাকে উৎসাহ দিয়ে আমার সাথে থাকবেন।
ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্ঠিতে দেখবেন।
ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০২
লজ্জায় আমি মাথা উঠাতে পারছিনা।এতোটা অপমানিত বোধহয় আমি কখন হয়নি।
জীবনডা বড্ড বিষাক্ত মনে হচ্ছে আমার।
নিশ্বাসটাও ফেলতে কষ্ট হচ্ছে।
শেষে কিনা আহান এরই বড় ভাই মানে ওর চাচাতো ভাইকেই বিয়ে করতে হলো।
কিন্তু আমি তো অসহায় ছিলাম এই কথাটা কে৷ বুজাবে এদের।
আমার উনার নাম শুনেই বুজা উচিত ছিলো ‘নিভৃত রায়হান’। আহান এরও সার্নেম রায়হান।তবে কেন বুজলাম না।ধুরর দুনিয়াতে কি রায়হান নামের আর কোন বংশ নেই।আমি কি করে বুজবো?যে এই দজ্জালটাই আমাকে বিয়ে করবে আর তাও সে আহানের ওই চাচাতো ভাই। আমাদের বাগদানের সময়েও তো উনাকে দেখি নি আমি।হঠাৎ কোথা থেকে টপকালেন উনি
আমি এখন মুখ দেখাবো কি করে?
সবাই আমাকে হয়তো অনেক খারাপ ভাবছে।
হঠাৎ আহানের মায়ের গলায় আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
-” নির্লজ্জ মেয়ে আমি আগেই আহানকে বলেছিলাম যে এই মেয়েকে বিয়ে করিস নাহ।এই মেয়ে টাকার লোভী। যেই শুনেছে নিভৃত এই বাড়ির বড় ছেলে ওমনি নিভৃত ফাসিয়ে বিয়ে করে নিলো।”
আমার কান্নাগুলো থামছেই নাহ।কি করে থামাবো এতোটা খারাপ কথা কেউ কখনো বলেনি আমাকে।
-” ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।তুই যে একটা চরিত্রহীনা মেয়ে তা আমি আগেই জানতাম।তোর বাবা মাও মনে এই ধরনের।”
কথাটা আমার কান ভেদ করে কলিজায় গিয়ে লাগলো।নিজের বাবা মা’র নামে এইসব কথা শুনে ধপ করে মাথায় রক্ত উঠে গেলো। আমি কেন কোন সন্তান ওই নিজের বাবা মা আর নিজের চরিত্র নিয়ে এইসব বাজে কথা শুনতে পারবে না।
আমি উঠে দাড়ালাম,স্থির কন্ঠে বললাম,
-” দেখুন আন্টি এতোক্ষন আমাকে যা বলার বলেছেন কিন্তু আমার বাবা মা তুলে কিছু বলবেন নাহ।আর আমাকে টাকার লোভী ভাবছেন?আপনাদের থেকে আমার বাবারও কিন্তু কম টাকা পয়সা সম্পত্তি নেই।আমি সারাজীবন বসেই খেতে পারবো তা দিয়ে।”
আমার কথায় আহানের মা রেগে গিয়ে বললেন,
-” বেহায়াপনা করে আবার আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক।আজ তোকে মেরেই ফেলবো।”
আহানের মা যেই আমাকে থাপ্পর মারতে নিবে।আমি চোখ খিচে বন্ধ করে অন্যদিকে নুখ ঘুরিয়ে নিলাম।অনেকক্ষন যাবত চড় গালে না পড়ায় চোখ পিটপিট করে সামনে তাকাতেই দেখতে পাই।আহানের মা সে সম্পর্কে এখন আমার কাকি শাশুড়ি উনার হাত ধরে রেখেছেন নিভৃত।
সকলের চোখে বিষ্ময়।উনি এমনটা করবেন আমিও ভাবিনি।আমি আশেপাশে সবার পাণে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।
কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ আমার।
-” আমার বউকে আমার অনুমতি ব্যাতিত কারো স্পর্শ করার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।সেখানে তুমি ওকে চড় মারার সাহস কি করে পেলে? বলেই ঝাটকা মেরে কাকিমার হাত সরিয়ে দিলেন।
আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম স্রেফ।এই লোকটা চাইছে টাকি?নিজেই বিয়ে করে আমাকে এখানে আনলো সাথে কতো টর্চার করলো।
সেখানে উনি কাকিমা’র সাথে এমন করলেন কেন?”
নাহ আর কিছুই সয্য করতে পারছি নাহ।মাথাটা ব্যাথায় ভণভণ করছে।পা দুটো টলমল করছে।সকাল থেকে না খাওয়া তার উপর শরীরের উপর দিয়ে যে প্রেসার গেলো আবার এখানে আসার পর এতোগুলো অপমানজনক কথা।আমার শরীর তা কোনমতো মেনে নিতে পারলো নাহ।
আমি হালকা আর্তনাদ করে ঢলে পড়লাম।
এদিকে,,,,
নিভৃত কাকিমার সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ নিঝুমকে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে দেখেই তড়িঘড়ি করে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
নিঝুমের এইভাভে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গেছে সবাই।
এতোক্ষনে মুখ খুললেন মিস সাবিহা। উনি হলেন নিভৃতের মা।
ভীষন ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ তিনি।
মিস সাবিহা বললেন,
-” বউমা কে উপরে তোর রুমে নিয়ে যা। বাকি কথা পরে হবে।”
নিভৃত ও নিজের মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে নিঝুমকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
সবাই যার যার রুমে চলে গেলেন।এই বাড়িতে সদস্য সংখ্যা নয়জন,
সাবিহা রায়হান, আরমান রায়হান আর তাদের ছেলে নিভৃত রায়হান।
আনিতা রায়হান,জিহাদ রায়হান উনাদের ছেলে আহান রায়হান আর তাদের আর একটা মেয়ে আছে নাম এলিনা রায়হান।যিনি আপাততো বাড়িতে নেই।
আর শেখ আমিনা রায়হান, সাবাব রায়হান তারা হলেন নিভৃতের দাদু,দাদা ভীষন ভালো মনের মানুষ।
নিভৃতের বাবা হলেন তাদের বড় সন্তান।
ব্যাক্তিটি একটু গম্ভীর স্বভাবের হলে কি হবে তিনিও ভীষন ভালো মনের মানুষ।
আর নিভৃতের কাকা কাকি হিংসে ভরা মনে,অহংকার তাদের রক্তে রক্তে।আহান আর এলিনা ওদের বিষয়ে আসতে আসতে জানতে পারবেন।আপাততো কিছু সিকরেট থাক।
♣️
নিঝুমকে ডক্টর চেক-আপ করে গেছে।না খাওয়ার জন্যে আর অতিরিক্ত ম্যান্টাল প্রেসারের কারনে নিঝুম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ডক্টর ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছে।
নিভৃত একধ্যানে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিক।
ঘুমুন্ত অবস্থায় কতোটা নিস্পাপ লাগছে।
নিস্পাপ ওই তো ওর তো কোন দোশ নেই।
ভাগ্যের কি লিখন যাকে নিজের জীবন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলো তাকেই কিনা প্রকৃতি ওকে নিজের কাছে টানতে বাধ্য করেছে?
কি করবে নিভৃত এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে ও যে ও চাইলেই সেখান থেকে ফিরে আসতে পারবে নাহ।
নিজের এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে নিঝুমকে জড়াতে চাইনি নিভৃত কিন্তু পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে আজ নিঝুমকে বিয়ে করতে হলো ওর।
একদিক দিয়ে সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে নিভৃতের।
ঘুমুন্ত অবস্থায় এই হুরপরিটি এখন থেকে তার স্ত্রী।
অপরদিকে তার দুঃখ লাগছে কারন তার জীবনটা এতোটাই ভয়ানক যে এই জীবনের সাথে নিঝুমের মতো নিস্পাপ মেয়েটাকে ও জড়িয়ে নিলো।
নিঝুমের মুখের কাছে ঝুকে এলো নিভৃত।এলতো করে নিঝুমের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
-” তুমি তো আমার কাছে স্বর্গ নিঝুম।আমার স্বর্গকে কি করে আমি আমার নরক যন্ত্রনার ন্যায় জীবনে জড়িয়ে ফেললাম।আমাকে মাফ করে দিও নিঝুম। তোমার সাথে এইসব করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলো নাহ আমার।আ..আমি পরিস্থিতির স্বিকার ক্ষমা করে দেও নিঝুম।”
বলেই নিঝুমের পাশে শুয়ে ওকে বুকে টেনে নিলো নিভৃত।
নিঝুমকে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
♣️
ঘুমের মাজে হঠাৎ শ্বাসকষ্টজনিত কারনে ঘুম ভেংগে গেলো আমার।চোখ পিটপিট করে জোড়ে অক্সিজেন নিজের চ্যালান করার দেখি নিভৃত আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।।
বিষ্ময়ে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।
একি এই লোকটা আমাকে এইভাবে ধরে রেখেছে কেন?
আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে আম্রান চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু কোথায় এই দানবের মতো শরীর দারি মানব আর আর কোথায় আমি ছোট্ট একটা পিপড়ার মতো নিস্পাপ বালিকা আমি কি উনার সাথে পারি।
নিজেকে ছাড়াতে না পেরে অবশেষে উনার কাছে জোড়ে বললাম,
-” এইযেএএ শুনছেন ছাড়ুন আমাকে!উফফফ!”
আমার চিৎকারে ভীষন বিরক্ত হলেন মনে হয় উনি।ভ্রু-জোড়া কুচকে চোখ মেলে আমার দিকে তাকালেন।
আর আমি ডাগর ডাগর চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
ঘুম থেকে উঠার পরেও কাউকে কি এতোটা সুন্দর লাগতে পারে। কি জানি?উনাকে আমার কাছে অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছে।
উনার সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
চোখে মুখে ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি।
ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে আছে বোধহয় ঠান্ডার কারনে।
উনার খোচাখোচা দাঁড়িগুলো আমার কাছে চমৎকার কার লাগে।
হঠাৎ নিজের বিবেকে সারা দিলো।
নাহ এটা আমি ঠিক করছি নাহ, এইভাবে তো আমি আহানকে ঠকাচ্ছি।
রূপের মায়ায় পড়ে আমি ওকে ঠকাতে পারবো নাহ।
আমি তো ওর কাছেই যাবো।
নাহ নাহ আমাকে নিভৃত থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে।
আমার এইসব ভাবনার মাজেই উনার গম্ভীর স্বর শোনা গেলো।
-” কি হলো তোমার এইভাবে ধাকাচ্ছো কেন?”
আমি মুখটা কাচুমাচু করে ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনার দৃষ্টি এখনো আমার মুখমন্ডলে স্থির।আমি বললাম,
-” আ..আপনি আ..আমাকে এইভাবে ধরে রেখেছেন কেন?”
উনি আমার এই কথায় ভ্রু-কুচকে তাকালেন।বললেন,
-” তুমি আমার ওয়াইফ সো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো নাতো অন্য কোন মেয়েকে ধরবো না-কি?”
উনার কথায় গোল গোল চোখ উনার দিকে তাকালাম।
উনি আবার বললেন,
-“কি হলো?”
আমি আবারো একটু সাহস জুগিয়ে বললাম,
-” আমিই আ..আমি আপনাকে স্বামি মানি নাহ।আর….”
আমার পুরো কথাটাও শেষ হতে পারলো নাহ।
তার আগেই উনি আমাকে বেডে ফেলে দিয়ে আমার দু-হাত বেডের সাথে চেপে ধরলেন।
আমি ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
কি করবেন উনি?মারবেন আমাকে?
ভাবতেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
আমি অনুভব করছি উনার গরম নিশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে।আমি ছাড়া পাবার জন্যে ছটফট করতে লাগলাম।যার ফলে উনি আমার হাত দুটো আরো জোড়ে চেপে ধরলেন।
এইবার আমি ব্যাথা সয্য করতে না পেরে ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। তবুও মুখ দিয়ে টু শব্দ করলাম নাহ।
উনি আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-” আমার থেকে মুক্তি পাবার আশা ভূলেও করো নাহ।আর তুমি আমাকে স্বামি হিসাবে মানো কি মানো নাহ আই ডোন্ট কেয়ের।তোমাকে আমার সাথে থাকতেই হবে।তুমি না চাইলেও থাকতে হবে।”
বলেই একপ্রকার আমাকে ঠেলে সরিয়ে উনি ওয়াশরুমে চলে গেলেন।
আমি কান্না করতে লাগলাম।এ কোন পরিস্থিতে পরলাম আমি।
আমি কি করবো?জীবনে বিয়ে একবারি হয়।
তবে আমি কি করবো?কিচ্ছু মাথায় আসছে নাহ।
আমার এইসব ভাবনার মাজেই উনি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসলেন।উনার দিকে তাকাতেই আমি এক চিৎকার দিলাম।
লোকটা কি উনার কোন লজ্জা সরম নেই।
শুধু ট্রাউজার পরে বের হয়েছেন কেন উনি?
উনি কি ভূলে গেছেন এই রুমে এখন একটা মেয়েও আছে।
-“open your eyes. you don’t need to close them.”
উনার কথায় আসতে আসতে চোখ খুলে তাকালাম আমি।
এইবার উনি একটা টি-শার্ট পরে নিয়েছেন।
শাউয়ার নেওয়ার ফলে উনার চুল দিয়ে এখনো চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে।
বড্ড স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে উনাকে।উনার ঘোলাটে সবুজ চোখ জোড়ায় বড্ড রহস্য ঘেরা।উনার এই চোখের ভাষা আমি বুজতে পারিনি।
-” কি দেখছো? ”
উনার কথায় হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি
-Go and fres yourself. ”
আমি মাথা নারিয়ে সম্মতি জানিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
বিপত্তি ঘটলি তখনি যখন দেখলাম ফ্রেস হওয়ার পর আমি জামাকাপড় এর কথা ভূলে গেছি।
এখন আমি কি করবো?কাল তো উনি আমাকে টেনেটুনে এখানে নিয়ে আসলেন।কিন্তু আমার যে ব্যবহার সামগ্রি প্রয়োজন সেটা কি উনি জানেন?
দরজা খুলে উকি দিলাম।দেখি উনি চুল আচড়াচ্ছেন।
আমি কি করবো এখন।
-” এরকম করছো কেন?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
-” ইয়ে মানে ইয়ে আসলে…”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি আমাকে হাত দিয়ে থামতে বললেন।তারপর আলমাড়ির একপার্টের কাবাড খুলতেই আমার চোয়াল খুলে পড়ে যাবার উপক্রম।এতো এতো শাড়ি মাগো মা।
এইসব দেখে আমার দিন দুনিয়া ঘুরতে লাগলো।
উনার রুমে এতো শাড়ি আসলো কোত্থেকে?তবে কি উনি আরো কাউকে আগে বিয়ে করেছিলেন।আস্তাগফিরুল্লাহ শেষে কিনা আমি সেকেন্ড হ্যান্ড বর পেলাম।
-” Don’t pressured on your brain.এইগুলো তোমার জন্যেই এনেছি। সো বেশি উল্টাপাল্টা না ভেবে পড়ে আসো।”
ওহ মোর আল্লাহ এই লোকটা তার মানে আগে থেকেই সব প্লান করে রেখেছে।কে জানে আমার আগোচাড়ে আমার জন্যে আর কি কি করেছেন?
তবে আমাকে উনার থেকে সব জানতে হবে?
উনি কেন আমার সাথে এমন করলেন?
যেখানে আমি উনার ছোটভাইয়ের হবু বউ ছিলাম।।মাথায় নানান চিন্তা ভাবনা নিয়ে উনার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।
চলবে,,,,,,,,,
আপনাদের রিকুয়েস্ট এ ২য় পার্ট দিয়ে দিলাম😒।
এখন চক্কেত দেও সবাই আমাকে।
আজকে সারাদিন শুধু লিখেছেই আমি😒।
আশা করি সবাই রেস্পন্স করবেন!
সুন্দর মন্তব্য করবেন।