#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৯
-” এতোটা মায়াময়ী না হলেও পারতে।আমাকে নিজের মায়ায় এইভাবে আষ্টেপৃষ্টে না জড়ালেও পাড়তে।আমি বড্ড তৃষ্ণার্ত নিঝুম।তোমার চোখে আমার জন্যে অসীম ভালোবাসা দেখার জন্যে আমি দিনরাত ছটফট করছি।
তুমি জানো এইযে তুমি এখন আমার বুকের মাজে ঘুমিয়ে আছো।আমার কতোটা শান্তি অনুভব হচ্ছে।নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি মনে হচ্ছে।আমি তো বলতে চাই তোমাকে নিজের মনের মাজের সৃষ্ট সেই ভালোবাসা অনুভূতিটুকু যেটা আমার হৃদয়ে প্রতিক্ষনে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ন্যায় উথাল-পাতাল হচ্ছে।।”
কথাগুলো নিঝুমের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই আনমনে বলে উঠে নিভৃত।নিঝুমকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে সে।ঘুমুন্ত নিঝুমের পানে তাকিয়ে থাকতে একটু গ্লানি বোধ হচ্ছে না নিভৃতের।উল্টো যতো দেখছে ততোই যেন নিঝুমকে দেখার তৃষ্ণা বেড়ে যাচ্ছে।নিঝুমের চুলের উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে।সেখানে চুমু খেলো নিভৃত। বললো,
-” আমি জানিনা নিঝুম!তুমি আমার সত্যিটা জানার পর আদৌ আমার সাথে থাকবে কি-না।তবে এটুকু মনে রেখো আমি নিভৃত তার নিঝুমের জন্যে যতোটা শান্ত থাকতে পারি।ঠিক ততোটাই ভায়োলেন্ট হতেও পারি।আই কেন ডু এভ্রিথিং ফোর ইউ।সেটা তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়েও যদি করতে হয় আমি করবো।আমি ইল্লিগেল পথে আছি ঠিকি!তবে ইল্লিগেল বেছে নিয়েই আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি।আমি জানি তুমি আমাকে বুজবে। আর ওই আহানের একটা ব্যবস্থা করতেই হবে এট এনি কষ্ট।কোথায় যে লুকিয়ে আছে।আ’ম ড্যাম সিউর আ’ম গোন্না কিল দিস বাস্টার্ড।”
নিভৃত আস্তে করে নিঝুমকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।ওর কাজে যেতে হবে।নিঝুম কাল অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমোতে পারিনি।কান্না করার কারনে মাথা ব্যাথায় ছটফট করেছে।তাইতো এতোবেলা অব্দি ঘুমোচ্ছে।নিভৃত উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে।নিজেও নিঝুমের জন্যে নাস্তা উপরে নিয়ে এসে একটা গিফ্ট বক্স এনে পাশে রেখে নিঝুমের জন্যে একটা চিঠি লিখে রেখে দিলো।তারপর নিঝুমের কপালে চুমু খেয়ে ওর ঠোঁটেও আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো।খানিক নিঝুমের দিকে তাকিয়ে থেকে কাজের জন্যে বেড়িয়ে পড়লো নিভৃত।
🌺
ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় চোখ পিটপিট করে তাকালাম আমি।মাথাটা ভার ভার লাগছে।এই একটা সমস্যা আমার বেশি কান্না করলে মাথা ব্যাথা করে।কিছুক্ষন থম মেরে বসে থেকে পাশে তাকালাম না নিভৃত নেই।আমি আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে রুমের দিক চোখ বুলালাম।ওয়াসরুমের দরজাটাও খোলা।তারমানে উনি রুমে নেই।পাশে ঘড়িটার দিক চোখ পড়তেই।চোখ বড় বড় হয়ে উঠলো আমার।সকাল ১০ টা বাজে। হায় আল্লাহ! এতো দেরি হয়ে গেলো।নিভৃত নিশ্চয়ই কাজে চলে গেছেন।ইসস! আমিও নাহ কি করলাম ধ্যাৎ! টি-টেবিলের দিক চোখ গেলো।সেখানে খাবারের ট্রে রাখা,পাশে একটা গিফ্ট বক্স,গিফ্ট বক্সের উপর একটা কাগজও লাগানো দেখা যাচ্ছে।আমি আস্তে করে বক্সটা হাতে নিলাম।কাগজটা খুলতেই কিছু অসম্ভব সুন্দর পেচানো হাতের গোটাগোটা অক্ষরের লেখাগুলো ভেসে উঠলো।
‘নিঝুম,
টেন্সন করিও না।আমি কাজে চলে যাচ্ছি।তুমি উঠে ফ্রেস হয়ে নিও কেমন।আর ব্রেকফাস্ট টা করে নিও।
একদম মন খারাপ করবে নাহ।আমি জলদি চলে আসবো।আসলে কাল রাত তুমি মাথা ব্যাথায় ঘুমোতে পারোনি।তাই আমি আর জাগিয়ে তুলিনি তোমায়।আর হ্যা গিফ্ট টা কেমন হয়েছে আমি আসলে নিশ্চয়ই বলবে।
সারাদিন যেন ভালো কাটে তোমার একা একা যেন না লাগে সেই ব্যবস্থাই করে দিলাম।,
তোমার নিভৃত।’
আমি মুচকি হেসে গিফ্ট বক্সটা খুললাম।আমি অবাক উনি আমাকে ফোন গিফ্ট করেছেন।তাও i phone 11 pro max. উফফ! এতো দামি ফোন দেওয়ার কি দরকার ছিলো।শুধু টাকার অপচয়।
ভীতরে আর একটা কাগজও দেখতে পেলাম ফোনটা রেখে আমি কাগজটা খুললাম।সেখানে লিখা আছে।
‘ নিঝুম আমি জানি তুমি আমাকে বকাঝকা করবে ফোনটা গিফ্ট করার জন্যে।বাট ইট্স এ্যা গিফ্ট ইউনো নাহ।তাই আমাকে বকাঝকা করোনা প্লিজ।আমি জানি তুমি নিশ্চয়ই বোড় ফিল করো ঘরে থাকতে।তাই আমি ফোনটা তোমার জন্যে কাল নিয়ে এসেছিলাম।সিম আমি সেট করে দিয়েছি।আর যার যার নাম্বার লাগবে আমি সবারগুলো সেট করে দিয়েছি।ওকে নাউ তুমি সারাদিন হ্যাপি হ্যাপি থাকবে কেমন।’
আমি মৃদু হাসলাম এই লোকটাও নাহ।পুরো একটা পাগল। আমি আস্তে করে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নিলাম।
ফোনটা ওন করে কন্টাক্ট লিস্টে নাম্বার চেক করতে লাগলাম।।সামনে একটা নাম্বার চোখ পড়তেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।আজ তিনদিন ধরে ওর সাথে আমার কথা হয় না।নিশ্চয়ই আমাকে সার্ফ এক্সেল ছাড়া ধুয়েছে এতোদিন।এতো কিছুর মাজে আমার তো মনেই ছিলো না।আর আমার আগের ফোনটাও তো নিভৃত ভেঙ্গে ফেলেছিলো।
আমি নাম্বারটা ডায়াল করলাম।খানিক অপেক্ষা করলাম।ফোন পিক করতেই অপাশ থেকে একটা কর্কশ আওয়াজ কানে আসতেই সাথে সাথে কান থেকে ফোন সরিয়ে ফেললাম আমি।প্রায় ১৫ মিনিট পর আস্তে করে বললাম,
-” দোস্ত এটা আমার নাম্বার তুই জানলি কিভাবে?”
-” আমাকে জিজু নিজেই এই নাম্বার থেকে কল করেছে আর বলেছে এখন থেকে এটা তোর ফোন নাম্বার।”
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
-” রিধি’র বাচ্চা তুই এতো খারাপ কেন?আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস না করেই তুই আমাকে এভাবে বকাঝকা করতে পারলি?”
-” তোরে জুতা দিয়ে বাইরাই নাই এটাই অনেক।শয়তান মাইয়া বিয়ে করে আমাকেই ভূলে গেলি।আর ভূলারি তো কথা এতো হ্যান্ডসাম একটা বর পেলে তো আর বেস্টফ্রেন্ড এর কথা মনে থাকবেই বা কিভাবে?”
-” এভাবে বলছিস কেন?”
-” তো কিভাবে বলবো তোকে চুমু খাবো?”
-” হ্যা চুমু দিস।আজকেই দিবি।আমরা মিট করবো ওকে আজকে।”
-” ওয়াও দোস্ত সত্যি?”
-” হ্যা, তুই আর.এস ক্যাফেটেরিয়ায় এসে পড়।আমি আমিও আসছি।”
-” ওকে। বাট ভাইয়া তোকে যেতে দিবে?”
-” ওকে! আমি নিভৃত থেকে পার্মিশন নিয়ে তোকে জানাচ্ছি।”
-” ওকে।”
ও হলো আমার বেষ্টফ্রেন্ড রিধিরা। পুরো নাম রিধিরা নূর।
বিয়ে হওয়ার পর থেকে একদিন ও ওর সাথে কথা বলতে পারিনি।তাই আমাকে এতো বকাঝকা করলো।মেয়েটা বড্ড চঞ্চল আর বক বক বেশি করে।তবে মনটা একদম নরম।
আমি মুচকি হেসে নিভৃতের নাম্বারটায় হাত বুলালাম।কল করবো কি-না এমটা দ্বিধা হচ্ছে।আরে ধুর এতো ভাবাভাবির কিছু নেই আমারই তো বর।
সাত পাচ না ভেবে নিভৃতকে কল লাগালাম।
একবার রিং হতেই উনি পিক করলেন।আমি মৃদু আওয়াজে বললাম,
-” হ্যা..হ্যালো!”
-” হ্যা নিঝুম। ভালো আছো?”
আমি উনার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিলাম।
ওপাস থেকে উনি গম্ভীর কন্ঠেই বললেন,
-” হাসছো কেন আজীব?”
-” আপনি তো এক ঘন্টা আগেও আমাকে দেখে গেলেন! আর তাও ফোনের ভীতর জিজ্ঞেস করছেন ভালো আছো?”
-” এতে হাসার কি হলো?তোমার মাথা ব্যাথাছিলো সারারাত তাই জিজ্ঞেস করলাম।এখন কেমন লাগছে?”
-” বেটার।আচ্ছা আপনি কি নাস্তা করে গিয়েছিলেন?”
-” হ্যা করেছি।তুমি করেছো?”
আমি হালকা হেসে বললাম,
-” স্বয়ং মিষ্টারনিভৃত রায়হান, মিসেস নিভৃত রায়হান এর জন্যে নাস্তা দিয়ে গিয়েছেন তো নিভৃতের নিঝুম কি না খেয়ে থাকতে পারবে?”
-” বড্ড দুষ্টু তুমি।”
-” আচ্ছা শুনুন না?”
-” হ্যা বলুন নাহ আমি শুনছি!”
-” আসলে বলছিলাম কি…”
-” শোন নিঝুম আমি তোমার হাজবেন্ট সো কোন দ্বিধা ছাড়াই আমার কাছে সব বলবে ওকে?”
আমি হালকা আওয়াজে বললাম,
-” রিধি আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে!সো আমি বলছিলাম কি আমি যাই ওর সাথে দেখা করতে প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
-” দেখো নিঝুম…”
-” প্লিজ কাছেই যাবো আর.এস ক্যাফেটেরিয়া।”
নিভৃতের দীর্ঘশ্বাস ফেলা আমি অনুভব করলাম।উনি বললেন,
-” আচ্ছা আমি বডিগার্ড দিয়ে পাঠাবো ওকে।যেখানে যাবে বডিগার্ড নিয়েই যাবে ওকে?”
-” ওকে!” মুচকি হেসে বললাম আমি।
-” প্লিজ গার্ড পাঠিয়েছি তো কি হয়েছে তুমিও সাবধানে থাকবে ওকে?”
-” ওকে। আমি নিজের খেয়াল রাখবো।আচ্ছা আপনি সাবধানে কাজ করিয়েন ওকে।রাখছি।”
বলেই ফোন কেটে দিয়ে।রিধিকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম আমি আসছি।তারপর কাবার্ড থেকে সাদা একটা গোল ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিলাম।।
ক্যাফেটেরিয়ায় পৌছে গেলাম সাথে তো নিভৃতের বডিগার্ড আছেই।
দু বান্ধবী চুটিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম।আজ তিনদিন পর দেখা।অনেক কথা জমে আছে আমাদের।
💙
কাজে মগ্ন নিভৃত।পাশেই রাজ দাঁড়িয়ে আছে আর নিভৃতকে হেল্প করছে।কাজের মাজেই নিভৃতের ফোন বেজে উঠলো।নিভৃত ফাইলে মুখ গুজেই রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” রাজ পিক-আপ দ্যা ফোন। দেখো তো কে ফোন করেছে?”
রাজ ফোনটা হাতে নিয়েই বললো,
-” ভাইয়া গার্ডদের নাম্বার থেকে কল এসেছে!”
নিভৃত ফাইল থেকে মুখ তুলে ভ্রু-কুচকে তাকালো।
-” দেখি দেও তো! আধাঘন্টা হলো কথা বললাম কোন ঝামেলা হলো না তো?”
নিভৃত ফোনটা পিক করে কানে তুলতেই এমনকিছু শুনলো যেন নিভৃতের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।নিভৃত শ্বাস নিতে পারছে নাহ।হাত থেকে ফোনটা খসে পড়ে গেলো।
রাজ নিভৃতকে এমন করে থাকতে দেখে।হালকা ঝাকি দিয়ে বললো,
-” ভাইয়া কি হয়েছে?”
নিভৃত কেমন ঝাকি দিয়ে উঠলো।হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।রাজকে কোনরকম কাপাগলায় বললো,
-” আ..আমাকে আমার নি..নিঝুমের কাছে যেতে হবে রাজ।আ..আমি শরিরে শক্তি পাচ্ছি নাহ।আমার নিঝুমের কিচ্ছু হয়নি রাজ।চল আমার সাথে গিয়ে দেখবি আমার নিঝুম একদম ঠিক আছে। জলদি চল এই গার্ড’স রা মিথ্যে বলছে।”
রাজ নিভৃত গাড়িতে উঠে বসলো।যতোদ্রুত সম্ভব গাড়ি ড্রাইভ করছে রাজ।নিভৃত শ্বাস ফেলতে পারছে না ঠিক মতো।কেমন হাসফাস করছে। এমনটা হতে পারেনাহ।
💙
মুখের উপর অনেকগুলো মানুষের আবছা ছায়া দেখতে পাচ্ছি।সবকিছু ঝাপসা লাগছে। কিছুতেই চোখ গুলো খুলে রাখতে পারছি নাহ। সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে আমার।চোখ বন্ধ করার আগে নিভৃতের স্নিগ্ধ হাসি মাখা মুখটা ভেসে উঠলো।আস্তে করে বললাম,
-” নিভৃত!”
নাহ! আর সম্ভব হলো চোখ খুলে রাখা।তলিয়ে গেলাম অন্ধকার রাজ্যে।সেখান থেকে ফিরবো কিনা আমার জানা নেই।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১০
সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে গেম্স খেলছে একটি মেয়ে।এমন আরাম আয়াশে আছে যেন ওর থেকে সুখী মানুষটি বোধহয় এখানে আর কেউ নেই।
হঠা দরজা ঠেলে কেউ এসে জোরে চিৎকার করে উঠলো,
-” এইসব কি এলিনা?তোকে আমি বলেছিলাম না নিঝুমের যাতে কোন ক্ষতি না হয়।দেন হুয়াই? কেন তুই নিঝুমের এক্সিডেন্ট করালি?”
এলিনা মোবাইল হতে চোখের দৃষ্টি সরিয়ে বেশ আয়েশ করে বসলো।বললো,
-” ওই নিঝুমকে তো মরতেই হবে।আমার নিভৃতকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার মূল্য ওকে চুকাতে হবে আহান ভাই।”
আহান রাগী গলায় বলে,
-” নিজের বুদ্ধিসুদ্ধি কি গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছিস?নিঝুম আমাদের কাছে কি তা তুই ভালো মতোন জানিস! মি.আরাফাত আমাদের বলেছে যাতে নিঝুমের বিন্দুমাত্র ক্ষতি না হয়।এইগুলো জেনেও কেন করলে?”
-” আহ! ভাই! বেশি ক্ষতি তো হয়নি?জাস্ট মাথাটা একটু ফেটে গিয়েছে।”
-” ইউ আর জাস্ট ইম্পোসিবল।আমি এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না এলিনা।আমি তোকে আগেও বলেছি মি.আরাফাত নিঝুমকে নিয়ে গেলেও নিভৃত তোর হবে নাহ।কম চেষ্টা তো করিস নি নিভৃতকে নিজের করে পেতে।নিভৃত সেই নিঝুমকেই ভালোবেসেছিলো,এখনো ভালোবাসে আর ভবিষ্যতেও ভালোবাসবে।সেটা যদি মি.আরাফাত নিঝুমকে একরাতের বেড পার্টনার করতে সফল ও হয় তবুও নিভৃত কোন দ্বিধা ছাড়াই নিঝুমকে আপন করে নিবে।”
এলিনা এই কথায় রাগে নাক-মুখ লাল করে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ব্যাসটা ছুরে মারলো।জোরে চিৎকার করে বলে,
-” আমি ওই নিঝুমকে মেরেই ফেলবো।জাস্ট একবার শুধু ওকে আমি মি.আরাফাত এর বেড পার্টনার করতে পারলে তার পরের মুহূর্তেই আমি ওকে মেরে ফেলবো।”
-” এখন চিৎকার না করে ভাব এই নিঝুমকে কিভাবে মি.আরাফাতের কাছে পাঠাবো।নতুন প্লান করতে হবে।নিশ্চয়ই এই এক্সিডেন্ট এর পর নিভৃত নিঝুমের প্রতি আরো কড়া নজর রাখবে।বডিগার্ড বাড়িয়ে দিবে।এইসব কিছু জাস্ট তোর কারনে হয়েছে।”
এলিনা বাকা হাসলো। বললো,
-” নিভৃতকে তো আমার হতেই হবে।বাই হুক ওর বাই কুক।আই ওয়ান্ট নিভৃত এট এনি কস্ট।”
আহান বিরক্তি নিয়ে বললো,
-” হ্যা তাহলে তো নিউ প্লান করে তা এক্সিকিউট করতে হবে।”
-” ভাই হয়ে যাবে ডোন্ট বি সো ভায়োলেন্ট প্লিজ।”
-” তুই যেহেতু সব নষ্ট করেছিস তুই সব ঠিক করবি। আমি জাস্ট ইনফোর্ম করে দিলাম।”
বলেই আহান হন হন করে চলে গেলো।আর এলিনা নিভৃতের একটা বড় ছবির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।
ইন দ্যা হোস্পিটাল,,,,💙
জ্ঞানহিন পরে আছে নিঝুম হাস্পাতালের বেডে।ওর পাশেই ওর হাত ধরে বসে আছে নিভৃত।নিঝুমের দিক টলমল চোখ তাকিয়ে যেন এখনি চোখের জল উপচে পড়বে।নিভৃতের হাতে,পায়ে, মাথায় ব্যান্ডাজ,পেটেও খানিক ছিলে গেছে সেখানেও ব্যান্ডাজ করা।সবচেয়ে বেশি মাথায় আঘাত পেয়েছে সে।তবে ভাগ্য ভালো বেশি গুরুতর অবস্থা হয়নি।গার্ডদের থেকে নিঝুমের এক্সিডেন্টের কথা শুনেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছিলো নিভৃত।সারা হাস্পাতাল মাথায় তুলে নিয়েছিলো সে।তার নিঝুমের কিছু হলে সে এই হাস্পাতাল ধ্বংস করে দিবে।।আর নিভৃত রায়হান কে না চিনে।দ্যা রায়হান এম্পায়ার এর উইনার। এক ডাকে সবাই চিনে ওকে।সারা হাস্পাতালের মানুষ নিভৃতের পাগলামি দেখে ভয় পেয়ে কাপছিলো।
নিঝুমকে ব্যান্ডেজ করার আগে মাথায় সিলি দেওয়া লাগে।নিভৃত সেখানে ঘাপটি মেরে বসেছিলো তার এক কথা সে তার নিঝুমকে ছাড়া কোথাও যাবে নাহ।সেলাই করার সময় নিভৃত ডক্টরের মাথা খেয়ে ফেলছিলো।
‘ এতো মোটা সুতা কেন নিয়েছে?আস্তে টান দেয় যেন তার নিঝুম ব্যাথা পাবে! সুই যেন আস্তে ডুকোই নিঝুম ব্যাথা পেলে তখন ডক্টর কে না-কি মেরে ফেলবি এক গুলিতে ‘
নিঝুমের পেটে ব্যান্ডেজ করার সময় হাস্পাতাল মাথায় উঠিয়ে ফেলেছে।ছেলে ডক্টর কেন ব্যান্ডাজ করবে?মেয়ে ডক্টর আনো।বাধ্য হয়ে মেয়ে ডক্টর দিয়ে নিঝুমের ব্যান্ডেজ করানো হয়েছে।
সেই যে নিঝুমকে বেডে দেওয়ার পর নিভৃত নিঝুমের হাত ধরে বসেছে আর উঠার নাম নেই।বসেই আছে।
হাস্পাতালের কড়িডোরে বসে কাঁদছে রিধিরা।আজ তার জন্যেই তার প্রিয় বান্ধবির এমন হলো।সে যদি একটু খেয়াল রাখতো তাহলে এমন হতো নাহ।তার নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
রাজ রিধিরার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেন যেন তার রিধিরার কান্না ভালো লাগছে নাহ।মেয়েটা কেঁদেকেটে নাক মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
রাজ আস্তে করে রিধিরার পাশে গিয়ে বসলো।তারপর বললো,
-” এতো কাঁদছো কেন?ভাবি ঠিক আছে উনার কিছু হয়নি!”
রিধিরা মুখ উঠিয়ে তাকালো পাশে। রাজকে তার পাশে বসে থেকে চোখ বড়বড় করে ফেলে।
-” আ..আপনি!সত্যি বলছি আমি নিঝুমকে যথেস্ট দেখে রেখেছিলাম বাট সাডেনলি কোত্থেকে যে ট্রাক টা আসলো।”
-” বাট তোমার জন্যেই তো ভাবীর তেমন ক্ষতি হয়নি তুমি যদি ভাবীকে ধাক্কা না দিতে তাহলে আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো।”
রাজের কথা শুনে যেন রিধিরা সাত আসমান থেকে ধপাস করে মাটিতে পরেছে এমন রিয়েকশন দিলো।
-” আপনি সত্যি আমাকে গুলি করে মারবেন নাহ?”
রাজ রিধিরা’র কথা শুনে ভ্রু-কুচকে ফেললো।
-” আমি কেন তোমাকে শুধু শুধু গুলি করে মারবো?”
-” হাহ্ শুধুই তো আমাকে গুলি করে মারতে চান আপনি।সেই প্রথম দেখার দিন আপনি একটা ভুলের জন্যে ডিরেক্ট আমাকে সুট করে দেওয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলেন।”
রাজ বিরক্ত হয়ে বলে,।
-” লিসেন তখন মাথাটা গরম ছিলো তাই এমন করে ফেলেছিলাম।”
রিধিরা মুখে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
-” তার মানে আপনার যখন মাথা গরম হবে আপনি আমার মতো ভোলাভালা নিস্পাপ কিউট পিউট কুচুমুচু বাচ্চাকে বিনাদোষে শুট করে দিবেন?”
-” হুয়াট ননসেন্স…!! ”
রাজের চিৎকারে রিধিরা ভয়ে পেয়ে একদৌড় দিলো।দৌড়ের মাজে একপলক পিছু ফিরে তাকালো রাজের দিক।তার ঘন কালো ঢেউ খেলানো চুলগুলো নেচে-কুঁদে তার চোখ মুখে এসে বাড়ি খেলো।এক প্রানবন্তী কিশোরী ন্যায় চলে গেলো রিধিরা।আর সেদিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো রাজ।হঠাৎ ওই ফিক করে হেসে দিলো সে।
-” পুরাই বাচ্চা মেয়েটা।কিসব বলে ভোলাভালায়া কিউট পিউট।আউউউ কিউট এই তো অনেক।ইসস ইচ্ছে করছিলো গাল গুলো টেনে দেই।”
আবারো ফের নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে বলে,
-” স্টোপ রাজ এইসব কি ভাবছিস তুই?যা নিজের কাজে ধ্যান দে।”
আপন মনেই বিরবির করে কাউকে ফোন দিয়ে কথা বলতে লাগলো রাজ।
💚
চোখের পাতা গুলো খুলতে চেষ্টা করছি।কিন্তু খুলতে পারছি নাহ।কারো গলার আওয়াজ পাচ্ছি কিন্তু ঠিক কি বলছে তা আমি বুজতে পারছি নাহ।নিজের সাথে হাজার যুদ্ধ করে অবশেষে চোখ মেললাম আমি।উঠার চেষ্টা করতে নিলেই পারলাম নাহ।মাথার যন্ত্রনা এতোটা প্রখর যে চোখ মুখ খিচে ধরলাম।এতোটা যন্ত্রনা করছে মাথায়।
পিটপিট চোখে তাকালাম।গালে কেউ অনবরত চাপর মেরে আমাকে ডাকছে।পাশ ফিরে তাকাতেই নিভৃত উদ্বিগ্ন,ফ্যাকাশে মুখটা দেখতে পেলাম। আমাকে একনাগাড়ে ডেকেই চলেছে,
-” এই নিঝুম! নিঝুম! প্লিজ লুক এট মি! ”
আমি কাপা কন্ঠে বললাম,
-” কোথায় আমি?”
নিভৃত একিটা শ্বাস ফেললো।বুজলাম এতোক্ষন তিনি টেন্সনে ঠিকভাবে শ্বাসটাও নিতে পারছিলেন না।
-” তুমি হাস্পাতালে আছো!”
হাস্পাতালের নাম শুনতেই তখন কার কথা মনে পড়ে গেলো।
আমি আর রিধি যখন ক্যাফেটেরিয়া থেকে গল্প করতে করতে বাহির হচ্ছিলাম। রাস্তার অপাশে একটা আইস্ক্রিম এর গাড়ি দেখতে পেয়ে আমি হুসজ্ঞান হারিয়ে অপাশে যেতে নিলেই কোত্থেকে একটা ট্রাক এসে আমাকে ধাক্কা মারে তবে পুরোপুরি আঘাত করতে পারেনি।তার আগেই রিধি আমাকে হেচকা টানে সরিয়ে দিয়েছিলো শুধু মাথায় আঘাত পেয়েছিলাম।আর ধাক্কা দেওয়ার ফলে বোধহয় হাত-পা ছিলে গিয়েছিলো।
-” এখন কেমন লাগছে?” নিভৃতের প্রশ্নে তাকালাম।ভাঙ্গা গলায় বললাম,
-” ভা..ভালো।”
হুট করে নিভৃত আমাকে জড়িয়ে ধরলো।ডান হাত ছিলে যাওয়ায় বা-হাত আমি তার মাথার উপরে রাখলাম।সে কাঁদছে আমার জন্যে কাঁদছে।আমার কাধে আমি ভেজা উষ্ম কিছু অনুভব করছি নিশ্চয়ই তা নিভৃতের চোখের জল।তার কান্না দেখে আমার চোখেও জল এসে পড়লো।
-” হুসস! কেন কান্না করছেন আপনি?আমার কিছু হয়নি দেখুন আপনি?কিচ্ছু হয়নি!”
নিভৃর কান্নারত গলায় বললেন,
-” আ’ম সরি নিঝুম আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি।আমার দরকার ছিলো তোমাকে আরো কড়া সিকিউরিটি দিয়ে পাঠানো।নাহ নাহ! স্বয়ং আমি নিয়ে গেলাম না কেন?”
এই লোকটা আসলেই পাগল।তার প্রতিটা কাজ কর্মে আমি অনুভব করতে পারি নিভৃত আমাকে ভালোবাসে।পাগলামো ভালোবাসা তার আমার জন্যে।।
আমি আস্তে করে বললাম,
-” কিছু হয়নি তো?দেখুন আমি সম্পূর্ণ সূস্থ্য আছি।”
নিভৃত মুখ উঠালো আমার ঘাড় থেকে।ইসস! ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে।নিভৃত আমার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে,
-” আর বাহিরে যাওয়া চলবে না তোমার।আজ আমার গাফিলতির জন্যে তোমার কতোবড় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো ভাবতে পারছো।নো, নেভার আই কান্ট টেক এনি রিস্ক এনিমোর।আমি আরো বডিগার্ড বাড়িয়ে দিবো।আর তোমার কোথাও যেতে হলে আমি নিজে দিয়ে এবং নিয়ে আসবো।ভার্সিটি গেলেও আমি দিয়ে আসবো আর নিয়ে আসবো ওকে।”
আমি মৃদু হাসলাম।এর চেয়ে সুখ আর কিসে?নিজের অসুস্থতায় স্বামির এমন পাগলামো কয়জন স্ত্রী বা তা দেখতে পারে।সেদিক থেকে আমি ভাগ্যবতী নিভৃতকে পেয়ে আমি পরম সৌভাগ্যবতী।
।
।
।
বিকালে আমাকে ডিসচার্জ দেওয়ার পর নিভৃত আমাকে নিয়ে বাড়িতে চলে গেলো।নিভৃত ও খুব ক্লান্ত ছিলো।আমাকে খাইয়ে দিয়ে সে নিজে ফ্রেস হয়ে খেয়েদেয়ে দুজনে এক সাথে একটা ঘুম দিলাম।সারাদিনের ক্লান্তি কাটানোর জন্যে ঘুমটা আবশ্যক আমাদের জন্যে।
নিভৃত ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি তার বুকে মাথা দিয়েই তার দিক তাকিয়ে।কি সুন্দর নিশ্চিন্তে উনি ঘুমোচ্ছেন! মনে হয় আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমানোতেই উনি শান্তি পান।আমিও তো শান্তি পাই এই বুকটায় থাকলে।নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে হয়।
কি কিউট লাগছে উনাকে।মাত্র গোসল করায় মুখটা স্নিগ্ধ লাগছে।ঠোঁট গুলো উনার। চমৎকার। ডার্ক রেড ঠোঁট গুলো নিচে থুতনীতে এই গাঢ়ো লালতিলটা আমার অসম্ভব ভালো লাগে।উনি সুন্দর ভয়ংকর সুন্দর।
উনাকে দেখতে দেখতে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।অসুধের কড়া ডোজে আর চোখ খুলে রাখা সম্ভব হলো নাহ।
চলবে,,,,,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনারা ধৈর্য ধরুন আসতে আস্তে সব রহস্য খুলবে
চলবে,,,,,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন💙।প্লিজ একটু সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করিয়েন।