ছুয়ে দিলে মন পর্ব ৭+৮

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৭
আজ আমি নিজের হাতে নাস্তা বানিয়েছি।নিভৃত ফ্রেস হয়ে এখনো আসেনি নিচে।আমার নাস্তা বানানো শেষ।আমি সব নাস্তা টেবিলে এনে রাখলাম।তারপর বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

-” সরি আমি দেরি করে ফেলেছি।তুমি অপেক্ষা করছিলে?”

হঠাৎ নিভৃতের কথায় আমি উপরে সিরির দিকে তাকালাম।ওমনি আমার মুখটা হা হয়ে গেলো।এই লোকটা ভয়ানক সুন্দর।সাদা শার্ট এ্যাশ কালার কোর্ট আর ডেনিম প্যান্ট মারাত্মক লাগছে উনাকে।আমি তাকিয়েই রইলাম।

-” নাস্তা দেও এতোক্ষন না কাজে যাওয়ার জন্যে তাড়া দিচ্ছিলে?”

উনার কথায় আমার ধ্যান ভাংলো।আমি থতমত খেয়ে গেলাম। ইসস! বেহায়ার মতো কিভাবে তাকিয়েই ছিলাম।আমি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে নাস্তা দিতে লাগলাম।হঠাৎ উনি আমার হাত ধরলেন।তারপর রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন রুমে।রুমে এসে আমাকে একপ্রকার ছুড়ে মেরে বিছানায় বসালেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।কি হলো হঠাৎ সকালে তো উনি ভালোই ছিলেন।৫ সেকেন্ড এর মাজে কিভাবে এতো রেগে গেলেন।আমি তো কোন ভুল করেনি।হঠাৎ উনি একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললেন।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।নিভৃত চিৎকার করে বললো,,

-” তোমাকে বলেছিলাম নাহ ব্রেকফাস্ট বানানো লাগবে নাহ।তাহলে কেন গেলে?কেন?হুয়াই?”

আমি ভয়ে জমে গিয়েছি।চোখের কোণে জ্বল এসে পড়েছে।একটা ঠোক গিল্লাম কান্না আটকানোর জন্যে।কাপা গলায় বললাম,

-” নাস্তা বানিয়েছি এতে দোষের কি হলো? ”

উনি আমার কাছে আসলেন আমার চুল মুঠো ধরে বললেন,

-” তুমি জানোনাহ কেন?কেন আমি রেগে গিয়েছি?তুমি কি বুজোনা?”

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।কান্না আটকাতে না পেরে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলাম।আমি তো সামান্য নাস্তাটাই বানালাম এতে দোষের কি হলো?নিজের স্বামির মন ভালো করার জন্যে কি এখন তার জন্যে খাবারটাও বানাতে পারবো নাহ।এমন কেন উনি?আমাকে কেন এতো কষ্ট দেন।হঠাৎ উনি আমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন।কপালে একেরপর এক চুমু দিয়ে ‘সরি’ বলে যাচ্ছেন।আমি অভিমান করেছি ভীষন অভিমান।উনি কেন শুধু আমাকে বকা দিবেন।উনি দুহাতে আমার মুখটা উচু করে ধরলেন।তারপর উনার ঠোঁট দিয়ে আমার চোখের পানিগুলো শুষে নিলেন।আমি উনার কাধ চেপে ধরলাম।
উনি আস্তে করে বললেন,

-” তুমি কেন বুজোনা?আমি তোমাকে আঘাত পেতে দেখতে পারি নাহ।তুমি নাস্তা বানাবে ভালো কথা। কিন্তু আমার একটু দেখে শুনে বানাবা না?”

আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে উনার দিক তাকিয়ে।নিভৃত হঠাৎ আমার ডানহাতটা সামনে এনে ধরলেন।আমি তাকালাম সেখানে; স্পষ্ট দেখতে পেলাম হাতটা একটুব পুরে গেছে।
উনি সেখানে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বললেন,

-” দেখো তো কতোখানি পুরে গেছে!তুমি যেহেতু নাস্তা বানাতে পারো নাহ তাহলে যাও কেন?”

এতোক্ষনে বুজলাম উনি কেন এতো রেগে গেছেন।তবে সামান্য একটুই তো পুরেছে।এতে কি হয়েছে?

-” অল্প একটুই তো হয়েছে এতে এতো রেগে যাওয়ার কি হলো?”

উনি ভ্রু-কুচকে ফেললেন।ধমকে বললেন,

-” এখানে এতোটুকু ইডিয়ট!তুমি তো এখন এই কথাই বলবা। মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে একটা চড় মারি।”

আমি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।উনি উঠে ফাস্ট এইড বক্স এনে আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন।এমন ভাবে লাগাচ্ছেন যেন ব্যাথা উনি পেয়েছেন।নিভৃত করুন গলায় বললো,

-” ব্যাথা করছে অনেক তাই নাহ?আ’ম সরি আমারি দোষ আমি কেন তোমাকে অনুমতি দিলাম।ইসস কতোখানি পুরে গেছে।”

আমি তাকালাম উনার দিক।নিভৃতের চোখগুলো লাল হয়ে আছে।চোখে পানি টলমল করছে?আমি আকস্মিক একটা প্রশ্ন করে বসলাম,

-” ভালোবাসেন আমায়?”

উনি মলম লাগানো থামিয়ে দিলেন।কিছুক্ষন থম মেরে বসে থেকে।আবারো সুন্দর করে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।আমি অবাক হলাম উনার কাজে।উনি আমার প্রশ্নকে ইগনোর করছেন?কিন্তু কেন?তবে কি উনি আমাকে ভালোবাসেন না?আমি আবারো বললাম,

-” কিছু জিজ্ঞেস করেছি?”

উনি উঠে ফাস্ট এইড বক্স জায়গা মতো রেখে আসলেন
আমার পাশে বসে আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন।উনার এই চোখের চাহনীতে আমি আমার জন্যে স্পষ্ট ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি।তবে উনি কেন স্বিকার করছেন না?

উনি গম্ভীর গলায় বললেন,

-” যেদিন আমার সব কিছু জেনে শুনে।আমার ভালো কাজ খাবার কাজ।আমার ভালো দিক খারাপ দিক সব কিছু মেনে নিয়ে আমাকে তুমি আপন করে নিবে।সেদিন এই প্রশ্নটার উত্তর দিবো তার আগে নাহ।”

কথাটা বলেই উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে টাই বাধঁতে লাগলেন।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম।তারপর উনার সামনে গিয়ে উনার হাত থেকে টাইটা নিয়ে নিলাম।উনি জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আমি হঠাৎ উনার পায়ের উপর পা তুলে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।হঠাৎ পড়ে যেতে নিতেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।আমি কেপে উঠলাম।কিন্তু তবুও মনে শতো সাহস সঞ্চার করে উনার কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,

-” রান্না যেহেতু করতে দিবেন নাহ।তবে আমার স্বামির কাজটুকু তো আমি করে দিতে পারি।”

মুখ উঠিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখ বন্ধ তবে ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ হাসি।আমার উনার হাসিটা দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।
আমি সুন্দর করে উনার টাইটা বেঁধে দিলাম।উনি মুচকি হাসলেন।ইসস এই হ্যান্ডসাম লোকটা আমার স্বামি।এই একমিনিট একমিনিট উনি তো এখন বাহিরে যাবেন।তারমানে বাহিরের মেয়েরা উনার দিকে তাকাবে।এইজন্যেই বলে সুন্দর জামাই কপালে জুটলে এই টেন্সেনে পড়তে হয়।
আমি আমার চোখের কোণ থেকে কাজল নিয়ে উনার কানের পিছনে লাগিয়ে দিলাম।উনি ভ্রু-কুচকে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললেন,

-” এটা কি হলো?”

আমি উনার ঠোঁট উলটে উনার গলা ধরে ঝুলতে ঝুলতে বললাম,

-” নজর টিকা লাগিয়ে দিলাম?”

-” কেন?”

-” বাহ রে আপনি এতো সুন্দর তাই?”

-” আমি সুন্দর?”

-” হ্যা সুন্দরই তো!তাই তো নজর টিকা লাগালাম।যাতে আমার নজর ছাড়া আর কোন শাকচুন্নি মেয়ের নজর আপনার উপরে না পড়ে!”

আমার কথায় উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন।উনার হাসি ঝংকার তুললো সারা ঘরময়।সাথে ঝংকার তুলে নাচিয়ে দিলো আমার ছোট্ট হৃদয়টাকে।আমি মুগ্ধ হয়ে হাসি দেখতে লাগলাম।উনি আস্তে করে আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকালেন।উনি চোখ বন্ধ করে নিলেন।আমিও চোখ বন্ধ করলাম।
উনি মৃদু আওয়াজে বললেন,

-” আমাকে নিয়ে এতো জেলাসি?”

আমি উনাকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে উনার কাধে মাথা রাখলাম।তারপর বললাম,

-” ভালোবাসি না ঠিকি।তবে আল্লাহ্ তায়ালা স্বামি স্ত্রীর মাজে এক অদ্ভূত মায়া সৃষ্টি করে দেন।যেটা বিয়ে হওয়ার সাথে সাথেই তৈরি হয়।তাই ভালো না বাসলেও আমরা মেয়েরা তাদের স্বামিকে আগলে রাখতে চাই।তারা যেন আমাদের থেকে দূরে না যায় সেটা চাই।আর অন্যরা আমাদের স্বামির দিকে তাকালে আমাদের জ্বেলাসি হবে এটা স্বাভাবিক!”

উনি আমাকে সামলেন উনার চোখে আমি অদ্ভূত এক নেশা দেখতে পেলাম।এটা যে আমাকে পাওয়ার নেশা তা আমি ভালোভাবে জানি।তবে আমি এতো সহজে উনার কাছে ধরা দিবোনা।উনি যেদিন আমাকে ভালোবাসি বলেন বলবেন আমি উনাকে বাধা দিবো নাহ।তবে এখন আপাততো উনার এই নেশাময় তৃষ্ণা খানিক মিটিয়ে দিতে পারি।
আমি উনার কপালে চুমু খেলাম।উনি চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলেন। তারপর উনার দু-চোখের পাতায় চুমু খেলাম,উনার দু-গালে,উনার থুতনির নিচে গাঢ়ো তিলটাও চুমু একে দিলাম।আমি লজ্জায় লাল হয়ে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যেতে নিলেই। উনি আমার হাত ধরে ফেললেন।আমি এখনো উনার দিকে তাকাচ্ছি না।জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি।উনি আমার আছে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।
কানের কাছে আস্তে করে বলেন,

-“সব জায়গায় চুমু খেলে ঠোঁটে বাকি রাখলে কেন?”

-” ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।আপনার দেরি হচ্ছে কাজে যাবেন নাহ?”

-” আমার এখন তোমার ওই নরম ঠোঁটের ছোয়া চাই আমার ঠোঁটে।”

আমি লজ্জায় কোনরকমে বললাম,

-” ইসস! সকালেই না দিলাম!”

-” উহুম! এটা গুড বাই কিস তাড়াতাড়ি দেও।”

-” পা..পারবো নাহ।”

-” তাহলে আজ আমি কাজে যাচ্ছি নাহ।আর তুমি যতোক্ষন না আমাকে আমার পাওনা দিবে আমি সারাদিন তোমাকে এইভাবেই জ্বালাবো।”

বুজলাম বান্দা নাছোরবান এতো সহজে যাবেন নাহ।আমি কি করবো। ধ্যাৎ নিজের কাজে নিজেই ফেসে গেলাম। আমি কি করবো?

বললাম,

-” আপনি কি বোকা বুজেন না আমার লজ্জা লাগছে।”

উনি নিঃশব্দে হাসলেন,

-” আমিই নিয়ে নেই কেমন?”

আমি ‘নায়ায়া’ বলে আর কিছু বলতে পারলাম নাহ।উনি আমাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দিয়ে।আমার ওষ্ঠদ্বয় জোড়া আকড়ে ধরলেন উনার ওষ্ঠ দিয়ে।আমি উনার হাত খামছে ধরলাম।আমি পারলাম না উনাকে ঠেলে দিতে নিজেও সমান তালেতাল মেলালাম।,
🌺
নিভৃত নাস্তা খেয়ে আমার হাতের রান্নার অনেক প্রশংসা করলেন।তবে বারবার শুধু এককথাই বলেছেন আমি যেন আর রান্না ঘরে না যাই।
যাওয়ার সময় আমার কপালে গভীরভাবে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে গেছেন।
উনি বলে গেছেন আমাকে,

-” কিছু লাগলে আমাকে ফোন দিবা।কিন্তু বাড়ি থেকে বাহিরে যাবে নাহ।”

আমি তখন মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি জানিয়ে উনার থেকে আম্মু আব্বু সাথে কথা বলার অনুমতি চাইছিলাম।উনি বলেছেন ল্যান্ড লাইন থেকে কল দিয়ে কথা বলে নিতে।
আমি আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে নিলাম।উনাদের সব বুজিয়ে বললাম।যা হয়েছে তা আমার নিয়তি ছিলো আর তা মেনে নিতে।সোহার সাথেও কথা বললাম।বেচারির নাক মুখ ফুলে আছে তবে ঠোঁটে হাসি।কারন ওর হাতে যে এখন এতোগুলা চকোলেট।ওর বর্ননা শুনে বুজলাম নিভৃত নিজেকে আড়াল রেখেছে যে উনিই সোহাকে আটকে রেখেছিলেন।উলটো সোহার কাছে ভালো সাজার জন্যে ওকে চকোলেট কিনে দিয়েছে।নিজেই ওকে বাড়িতে পৌছে দিয়েছে।সোহার সাথে সেল্ফিও নিয়েছে সেখান থেকেই দেখলাম।আমিও ব্যাপারটা চেপে গেলাম।কারন আমি চাইনা আমার স্বামি আমার আম্মু আব্বুর কাছে খারাপ হোক।কিছু কথা গোপন রাখাই ভালো।
সারাদিন সুয়ে বসেই কেটে গেলো।কি আর করার কাজ তো করতে দিবে না কেউ।জনাব কড়া গলায় সবাইকে মানা করে গেছেন যাতে আমি যেন কোন কাজ না করতে পারি।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৮
‘আমি ডানা ছাড়া পাখি,
তোমার আশায় আশায় থাকি
আমি পটে আঁকা ছবি প্রেম,
তুমি ভালোবাসায় সবই’

রাতের আকাশ দেখছিলাম রেলিং ঘেসে আর গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছিলাম।কেন যেন আজ অনেক সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে।হঠাৎ একজোড়া ঠান্ডা হাত আমার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আমি বুজতে পারলাম লোকটা নিভৃত।নিভৃত আমাকে জড়িয়ে ধরেই গেয়ে উঠলো,

‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন,
আমি উড়ব আজীবন ।

তুমি আকাশের ওই নীল,
আমি মেঘে মেঘে স্বপ্নিল
তুমি হাওয়া হয়ে আসো,
শুধু আমাকেই ভালোবেসো’

আমি বুকের উপর হেলাম দিলাম তারপর গাইলাম,

‘তুমি মনের আল্পনা,
তুমি সেই প্রিয় কল্পনা ‘

উনি আমার ঘাড়ে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে গাইলেন,

‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন,
আমি উড়ব আজীবন ।।

যেন ছায়া হয়ে আছি,
যেন তোমায় নিয়ে বাঁচি
তুমি আমার সুখ পাখি,
বলো কোথায় তোমায় রাখি’

আমি মুচকি হেসে গাইলাম,

‘তুমি রাত দিনোমান,
আমি ডুবে থাকি সারাটাক্ষণ

তুমি ছুঁয়ে দিলে মন,
আমি উড়ব আজীবন ।।’

উনি আমাকে নিয়ে দুলতে দুলতে গাইলেন,

তুমি ছুঁয়ে দিলে মন,
আমি উড়ব আজীবন

আমরা একসাথে গাইলাম,

তুমি ছুঁয়ে দিলে মন
আমি উড়ব আজীবন।।

গান শেষে অনেকক্ষন দুজনেই চুপ করে রইলাম।খানিক বাদে আমি পিছনে ফিরে উনার দিক তাকালাম।উনি আমাকে উনার দিক ফিরতে দেখেই দু-হাতে আমার মুখ উচু করে ধরে আমার কপালে চুমু খেলেন।আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
আমি বললাম,

-” কখন এলেন?”

-” এইতো আমার বউটা যখন এতো সুন্দর করে গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছিলো।”

উনার কথায় আমি মুচকি হাসলাম।

-” আপনিও তো অনেক সুন্দর গান গাইতে পারেন।”

-” এই শুনছো আমার না অনেক দিনের ইচ্ছে অনেক দূরে কোথায় পাহারের মাজে তোমাকে নিয়ে তাবুতে থাকবো।চন্দ্রবিলাশ করবো তোমাকে আমার বুকে নিয়ে আর তুমি আমি প্রেমসিক্ত হৃদয় নিয়ে প্রেমময় গান গাইবো।চন্দ্রবিলাশ করে ভালোবাসার জোছনা গায়ে জড়াবে।সাথে তোমাকে জড়িয়ে নিবো আমার ভালোবাসাময় চাদড়ে।আর আমি আসক্ত হবো তোমাতে।”

ইসস! কি কথা শুনালেন উনি।উনার কথায় আমি কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলাম।উনি যেমনটা বলেছেন ঠিক তেমনটাই কল্পনা করলাম।আমার কোমল হৃদয়টা এই প্রেমসিক্ত দৃশ্যটা সয্য করতে না পেরে কেপে উঠলো।আমি কাপা গলায় বললাম,

-” লোভ লাগিয়েন নাহ।দেখেন আমার শরীরের লোমকূপ সহ দাঁড়িয়ে গিয়েছে।”

উনি মুচকি হাসলেন। বললেন,

-” কল্পনা করেই যদি এমন লাগে তবে বাস্তবে যদি এরকম হয় তো তুমি কেমন ফিল করবে!”

-” ইসস! এভাবে বলবেন নাহ প্লিজ পরে যদি আফসোস থেকে যায়?”

উনি ভ্রু-কুচকে তাকালেন।

-” আফসোস থাকবে কেন?আমার কি টাকার অভাব যে আমার বউকে নিয়ে এটুকু স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করতে পারবো নাহ?”

আমি তাকালাম উনার দিক।জল চিকচিক নয়ন নিয়েই বললাম,

-” তার আগেই যদি আল্লাহ্ তায়ালার ডাক পড়ে যায়।যদি আমি ততোদিন অব্দি বেচে না থাকি।”

আমার কথায় উনার চোখ লাল হয়ে উঠলো।আমাকে রেলিংয়ের সাথে চেপে ধরলেন উনি।

-” কোথায় যাবে তুমি?কে নিবে তোমাকে আমার কাছ থেকে? কেউ নিতে পারবে নাহ? ওই আহান কে তো আমি যে করেই হোক তোমার থেকে দূরে রাখবো।তাহলে কে নিবে তোমাকে?”

আমি উনার কাধে হাত রাখলাম।বললাম,

-” আল্লাহ্ যদি নিয়ে যেতে চান ধরে রাখতে পারবে কে?”

হঠাৎ উনি উনার হাত উচু করে আমার গাল চেপে ধরতে উঠালেই। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।আসলে উনি রেগে গেলে উনার এই রাগী ফেস দেখলে আমার অনেক ভয় করে।হঠাৎ সজোড়ে কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দে আমি চোখ মেলে তাকালাম।দেখি পাশের ফুলের টপটা ভেঙ্গে পড়ে আছে।আর উনি হনহনিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে সজোড়ে দরজা আটকে দিলেন।এতো জোরে শব্দে আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। লোকটার এতো রাগ উফফ!আমিও না কেন যে মরার কথা বলে উনাকে রাগিয়ে দিলাম।ধ্যাৎ! আমি নিচে বসে ফুলের টপটার ভাঙ্গা অংশ কুড়িয়ে নিলাম।হাতটা অল্প একটু কেটে গেছে।সমস্যা নেই এতে কিছু হবে নাহ।উনি না দেখেলেই হবে।নিচে যাই উনাকে খাবার দেওয়া লাগবে।
আমি নিচে চলে গেলাম খাবার সাজানোর জন্যে।
🧡
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে নিভৃত।তার উন্মুক্ত শরীর বেয়ে পানি গুলো বেয়ে বেয়ে পড়ছে।কপালে চুলগুলো লেপ্টে আছে।দেয়ালে একহাত দিয়ে মাথা নিচু করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে।নিভৃত আপন মনেই বললো,

-” আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই নাহ নিঝুম।কিন্তু তুমি বার বার এমন সব কথা বলো যে আমি না চাইতেও তোমার উপর রেগে যাই।তুমি কেন বুজোনা তুমি ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব।তোমাকে বাচানোর জন্যেই আমি এতো কিছু করলাম।ওই আহান আমার ভাই। তাকেও আমি ছাড় দিলাম নাহ।”

আবার কিছুক্ষন পর বলে,

-” নাহ আহান পালিয়েছে ঠিকিই তবে আমার নিঝুমের প্রতি আরো কড়া নজর রাখতে হবে।আমি জানি আহান নিঝুমের ক্ষতি করতে কখনো পিছপা হবে নাহ।আই হেভ টু প্রোটেক্ট নিঝুম।নিঝুম আছে তো নিভৃত আছে।”

কথাগুলো বলেই নিভৃত শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো।রুমে এসে সারারুম চোখ বুলিয়ে কোথাও নিঝুমকে দেখতে পেলো নাহ।আৎকে উঠলো নিভৃত তবে কি নিঝুম ওর উপর রাগ করে চলে গেলো। নাহ যাবে কিভাবে বাহিরে সিকুরেটি গার্ড আছে।তবুও নিভৃত চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,

-” নিঝুম! নিঝুম! কোথায় তুমি? কাম ফাস্ট নিঝুম।”
🧡
নিচে খাবার সাজাচ্ছিলাম আমি হঠাৎ নিভৃতের এমন চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে উপড়ে রুমের দিক পা বাড়ালাম। দেখলাম নিভৃত এদিকেই আসছে।আমি হা হয়ে রইলাম এই লোকটার লজ্জা নেই।শুধু তোয়ালে পেচিয়ে বাহিরে এসে পড়েছে।ছিহ! আমি তাড়াতাড়ি উনার কাছে গিয়ে উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনাকে ঠেলে রুমে নিয়ে আসলাম।উফফ! আমি কি উনার সাথে পাড়ি। যে বডিবিল্ডার উনি মাগোমা আমার ঘাম ছুটে গেছে।আমি এখনো উনার দিকে তাকাচ্ছি নাহ।উলটো দিকে ঘুরে থেকেই বললাম,

-” কি অবস্থায় বাহিরে এসেছেন?আপনার লজ্জা করে নাহ।জলদি চেঞ্জ করুন।”

-” হয়ে গেছে।”

নিভৃতের আওয়াজে আমি পিছে তাকালাম।হ্যা টি-শার্ট পড়েছেন স্কাই ব্লু কালার আর সাদা টাওজার।মাত্র শাওয়ার নেওয়া স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।আমি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম কতোক্ষন।উনি গলা খাকাড়ি দিতেই চোখ সরিয়ে নিলাম।
আমি আস্তে করে বললাম,

-” এতো চিৎকার করার কি আছে?আমি নিচে ছিলাম খাবার সাজাচ্ছিলাম।ডিনার করা লাগবে নাহ।”

আমি উনার দিক তাকালাম।উনি চোয়াল শক্ত করে আমার হাতের দিক তাকিয়ে।আমি চোখ ঘুরিয়ে আমার হাতের দিক তাকালাম।ইসস! এই লোকটার চোখ না অনুবিক্ষন যন্ত্র এতো লুকিয়ে রাখলাম আর এতো ছোট করে কেটেছে তাও দেখে ফেলেছেন।আমি একটা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললাম,

-” ওই আসলে ওইযে ফুলের টপটা উঠাতে গিয়ে কেটে গেছে।”

উনি চোয়াল শক্ত রেখেই দাঁতেদাঁত চেপে বললেন,

-” বাড়িতে কি সার্ভেন্ট’স এর অভাব।”

আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।এখন কি উনি আমাকে মারবেন।উনি তেড়ে আসলেন আমার দিকে।আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। আমাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে ঘাটে বসালেন।তারপর যত্ন করে আমার গাতে মলম লাগিয়ে দিলেন।কিছুক্ষন আমার কাটা জায়গা টায় একধ্যানে তাকিয়ে থাকলেন।তার উঠে গিয়ে ধুম করে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লেন।আমি হা করে রইলাম।এটা কি হলো?উনি কি রাগ করেছেন?খাবার খাবেন না উনি?ইসস আমারও কি খিদে পেয়েছে।একেই বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।কেন ওই বেহুদা কথা বলতে গেলাম।
আমি উনার কাছে গিয়ে উনার হাত টেনে ধরে উনাকে উঠাতে লাগলাম।উনি বিন্দুমাত্র নড়লেন নাহ।উফফ! কি জ্বালা আমি কি উনার সাথে পারি।একপ্রকার টানাটানি যুদ্ধ করেও উনাকে না উঠাতে পেরে বললাম,

-” প্লিজ উঠুন খাবার খাবেন নাহ।আমার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।”

-” তুমি খেয়ে নেও।আমার খিদে নেই।”

উনি পাশ ফিরে সুয়ে পড়লেন।
আমি কি করবো।গেলাম নিচে দেখলাম উনি ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে ছিলেন।আমি একটা ভেংচি কেটে নিচে গিয়ে এক প্লেটে দুজনেরি খাবার নিয়ে নিলাম।তারপর উপরে গিয়ে এক প্রকার উনার কানের কাছে এতো জোড়ে চিৎকার করলাম যে।উনি ধরাম করে উঠে বসে কিছু বলার জন্যে হা করতেই আমি ভাত মাখিয়ে উনার মুখে ঢুকিয়ে দিলাম।উনি কতোক্ষন বিষ্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থেকে রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়েই খাবার চিবুতে লাগলেন।আমি উনার রাগী চোখ দেখেই ভয়ে আছি।তবুও উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।উনিও খেলেন আর এক লোকমা দিতে গিলেই উনি হাত দিয়ে বুজালেন আর খাবেন নাহ।উনার এখনো রাগ ভাঙ্গেনি।আমার মন খারাপ হয়ে গেলো।আমি মুখ ফুলিয়ে খাবার ঢেকে রেখে দিলাম।তারপর উঠে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলেন।তারপর খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে খাবার মুখের সামনে ধরতেই আমি না করবো তার আগেই উনার চোখের দিক তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে খেয়ে নিলাম।উফফ! এই লোকটা এভাবে তাকায় কেন আমার ভয় করেনা বুজি।খাওয়া ধাওয়া শেষে প্লটে গুলো আমি নিচে পাঠিয়ে দিলাম সার্ভেন্টস দিয়ে।দরজা আটকে সব লাইট নিভিয়ে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।
দেখি জনাব অন্যদিকে ফিরে সুয়ে আছেন।
আমি বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম।উনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

-” সরি আর করবো নাহ এমন।সত্যি সরি।”

উনি কিছু বললেন না একটুও নড়লেন ও নাহ।
আমি আবার বললাম,

-” সরি তো! আর কখনোই এইসব কথা বলবো নাহ প্রমিস।”

তারপরেও উনি কোন রেস্পন্স করলেন নাহ।এইবার আমার কান্না পাচ্ছে ভীষন কান্না।আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলাম।মুখে হাত দিয়ে কাঁদছি যাতে উনার কানে আওয়াজ না যায়।
হঠাৎ উনি হেচঁকা টানে আমাকে উনার বুকে নিয়ে আসলেন।এইবার আমি শব্দ করে কেঁদে দিলাম।উনি আমার মাথায় হাতবুলিয়ে দিচ্ছেন।বললেন,

-” কান্না থামাও নিঝুম।হুসস আর কান্না করো নাহ।”

আমি হেঁচকি দিয়ে কাদঁতে কাদতে বললাম,

-” আমি সরি আর কখনো বলবো নাহ এইসব কথা।প্লিজ রাগ করে থাকিয়েন নাহ।”

-” হুস! আমি রাগ করিনি পাগলি কান্না থামাও।
আমার মায়াময়ীর চোখে আমি জল দেখতে চাইনাহ।”

উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন।একসময় আমি শান্ত হলাম।উনি আমার মুখটা উপড়ে তুললেন।আমার দু-চোখের পাতায় চুমু খেলেন।তার ঠোঁটে গভীরভাবে ভালোবাসার স্পর্শ দিলেন।আমি চোখ চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।উনি আমার কপালে চুমু খেয়ে আমাকে নিজের সাথে জোড়ে জড়িয়ে নিলেন।

-” আর কখনো এমন কোন কথা বলোনাহ।যেটাতে আমি কষ্ট পাই।তোমাকে হারাতে পারবো নাহ আমি।তুমি আমার স্বর্গ। আর আমার স্বর্গ আমার কাছ থেকে দূরে গেলো।তো নরক যন্ত্রনাও আমার কাছে ফিকে মনে হবে সেই কষ্টের কাছে।”

আমি কিছুই বললাম না।শুধু শক্ত করে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।আমি জানি, এবং বুজেছি এই মানুষটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।আর আমিও আস্তে আস্তে এই মানুষটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি।হয়তো ভালোও বেসে ফেলবো।তবে এই দুদিনেই আমার উনাকে ছাড়া থাকা অসম্ভব।একেই বলে স্বামি স্ত্রীর প্রতি টান।যা আল্লাহ্ তায়ালা নিজ হাতে তৈরি করে দেন।

চলবে,,,,,

আমি কি বেশি রোমান্টিক করে ফেলছি।তাহলে বলবেন প্লিজ।আমি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত কমিয়ে দিবো।আসলে আমি স্বামি স্ত্রীর ভালোবাসাটা সবাইকে গভীরভাবে উপলব্ধি করাতে চাইছে।কারো যদি এতে কোম দ্বিমত থাকে প্লিজ নির্দ্বিধায় বলবেন।আর আপনারা অনেকেই বলছেন ছোট হয়। তাহলে আমি রেগুলার দিবো নাহ।একদিন পর পর দিবো।তাহলে বড় করে দিতে পারবো।
আমি বিবাহিত। যেটুকু সময় পাই লিখি।বড় করে দিতে হলে একদিন পর পর পাবেন।
চলবে,,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি বারবার আশাহত হই।অন্যদের গল্পে তাদের পাঠকরা কি চমৎকার মন্তব্য করেন।আর আমার পাঠকরা শুধু দু একজন বাদে সবাই nice আর next এটা ছাড়া কিছু না।ওয়াও হুয়াট অ্যা কমেন্ট।আর কিছু বলার নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here