ছুয়ে দিলে মন পর্ব ৫+৬

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৫
বাবার রুমের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছি আমি।
আমার ভীষন ভয় লাগছে।উনি ঠিক কি কারনে আমাকে এখানে ডেকে আনলো আমি বুজতে পারছি নাহ?
বাবা আলমাড়িতে কিছু একটা খুচ্ছেন। কিছুক্ষন পর হাতে করে কি একটা বক্স নিয়ে আমার পাশে বসলেন।দেখে মনে হচ্ছে গহনার বক্স।
আমি চুপ করে রইলাম।বাবা নিজে থেকেই বললেন,

-” তোমাদের যেই পরিস্থিতিতেই বিয়ে হোক না কেন?এখন তুমি রায়হান বংশের বড় বউ।আর আমার একমাত্র পুত্রবধু। বিয়েটা হুটহাট করে হয়ে গেলো।তাই সবাইকেই মানতে একটু কষ্ট হচ্ছে।আরো কষ্ট হচ্ছে কারন তুমি আমার ভাইয়ের ছেলের হবু বউ ছিলে সেখানে এখন আমার ছেলের বউ।বিষয়টা কতোটা বাজে তুমি নিজেই চিন্তা করে দেখো।”

উনার কথা শুনে আমি লজ্জা সিটিয়ে বসে রইলাম।গুরুজনদের মুখে এসব কথা শুনতে কারইবা ভালো লাগে?লজ্জায় আমার চোখে জল এসে পড়েছে।এ কোন পরিস্থিতে ফেললেন নিভৃত আমাকে?এর থেকে ভালো আমাকে মেরে ফেলতেন তিনি।তবুও এসব কথা তো আমায় শুনতে হতো নাহ।
কিন্তু আমার সব ধারনা ভুল প্রমানিত করে দিলেন বাবা।তিনি হঠাৎ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।আমি মাথা উঠিয়ে অবাক চোখে তাকালাম বাবার দিকে।দেখলাম বাবা আমার দিকে স্নেহভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।বাবা বলে উঠলেন,

-” তুমি কেঁদো নাহ মা।আমি বাহির থেকে নিজেকে শক্ত দেখালেও সন্তানদের সামনে শক্ত থাকতে পারি নাহ।তোমার চোখের জলটাই বলে দিচ্ছে তুমি ইচ্ছে করে বিয়েটা করো নি।কিন্তু কিছু করার নেই মা ভাগ্যের খেলা কেউ বুজে নাহ ভাগ্যকে মেনে নেও মা। নিভৃত কোন কারন ছাড়া কিছু করে নাহ মা।নিশ্চয়ই কোন কারন আছে? আর সেটা আমি জানিও।কিন্তু এই মুহুর্তে আমি তা বলতে পারবো নাহ তোমাকে।সময় হলে নিভৃত নিজেই তোমাকে বলে দিবে।তুমি ওকে ভুল বুজো নাহ মা।বাবা হয়ে তোমার কাছে আবদার করছি আমার ছেলেটাকে মেনে নেও মা।ওকে কষ্ট দিও নাহ।পারলে ওকে আগলে রেখো।”

আমি শুধু তাকিয়ে আছি বাবার দিকে।এই কঠিন, গম্ভীর স্বভাবের লোকটা এতো নরম মনের তা ভাবতেই পারিনি।বাবা আমাকে তার হাতের গয়নার বক্সটা হাতে দিয়ে বললেন,

-” এটা আমার উপহার আমার পুত্রবধূর জন্যে।খুলে দেখো।”

বাবার অনুমতি পেয়ে আমি বক্সটা খুললাম।সেখানে একজোড়া ছোট্ট দুল আর একটা লকেট ডায়মন্ড এর ভীষন সুন্দর। আমি তাকালাম আবারো বাবার দিকে।বাবা আমার মাথায় আবারো হাত বুলিয়ে দিয়ে বলন,

-” পছন্দ হয়েছে মা?”

-” জ্বি আংকেল!”

-” আংকেল কি বাবা ডাক!”

চোখ ভরে উঠলো আমার।মানুষগুলো এতোভালো কেন?আমি ভেজাকন্ঠে বললাম,

-” জ্বি বাবা পছন্দ হয়েছে।”

আমার কথায় বাবা প্রচন্ড খুশি হলেন।

-” এখন নিভৃত তোমাকে যেই বাড়িতে নিয়ে যাবে সেখানে গিয়ে বলবে নিভৃতকে স্বয়ং এইগুলো নিজের হাতে পরিয়ে দিতে।ঠিকাছে?”

আমি মাথা দুলালাম।তারপর বাবা আর আমি আর একটু কথা বললাম। খানিক বাদে নিচে চলে এলাম। সবাই আমাকে আর নিভৃতকে দোয়া করে দিলেন।দাদু দাদাও আমাকে ভীষন আদর করলেন।সবাই ভালো শুধু নিভৃ তের কাকা আর কাকিই সেখানে থাকলেন নাহ।তাদের আর দেখিনি আমি।

।__
গাড়িতে বসে আছি আমি পাশেই নিভৃত বসে ড্রাইভ করছেন।নাহ চাইতেও আমার চোখ বারবার তার দিকে চলে যাচ্ছে।লোকটা ভয়ংকর সুন্দর। এ্যাশ কালারের শার্টটায় চমৎকার লাগছে উনাকে।
আমি চোখ সরিয়ে বাহিরে তাকালাম।মনটা এখন অনেক ভালো।যাক অবশেষে সবাই আমাকে মেনে নিয়েছেন এটাই অনেক।কিন্তু আমি যদি নিভৃতকে ছেড়ে আবার আহানের কাছে চলে যাই। তাহলে তো আবার সবাই আমাকে খারাপ ভাব্বে।উফফ! আমি করবোটা কি? নিভৃতকে মানতে পারছি নাহ আবার আহানের কাছে যাবো সেটারও একটা দ্বিধাবোধ কাজ করছে। এইভাবে আর কয়দিন?দম বন্ধ হয়ে আসে আমার এইসব ভাবলেই।নিজেকে পাগলপ্রায় মনে হয়।

-” এতো টেন্সন করে লাভ নেই।তুমি শুধু আমার কাছে থাকবে এটাই হবে।বাকিগুলো নিয়ে টেন্সন করা লাগবে নাহ আমি আছি।”

আমি গোল গোল চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি ড্রাইভিং এর মাজেই হঠাৎ আমার গাল টেনে দিলেন।আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।
দেখলাম উনি মুচকি মুচকি হাসছেন।হঠাৎ কেন যেন আমার প্রচুর লজ্জা লাগছে?উনি এরকম করলেন কেন?এই লোকটার হুটহাট এইসব কাজকর্ম আমাকে বিষ্ময়ের সাত আসমানে নিয়ে যান।
আমি কিছু বললান না চুপচাপ বাহিরের দৃষ্য দেখতে লাগলাম।
খানিক বাদে একটা বড় বাড়ি দেখতে পেলাম মাগোমা এতো দূরে বাড়িটা শহর ছেড়েও অনেকটা দূরে।গার্ডরা গেট খুলে দিতেই উনি গাড়িটি বাড়ির ভীতর নিয়ে থামালেন।বাড়িটা ভীষন সুন্দর।অনেক বড় এড়িয়া নিয়ে বাড়িটা।ফুলের বাগান আছে তাতে অসংখ্য প্রজাতির ফুল।রাতের বেলা চাঁদের বেলায় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে।আমি আর নিভৃত আস্তে আস্তে বাড়ির ভীতরে ডুকলাম। বাড়ির ভীতরের টাও ভীষন সুন্দর।উনি আমাকে নিয়ে দুতলায় বামপাশের প্রথন রুমটায় গেলেন।রুমটায় ডুকে আমি হা হয়ে রইলাম।এতো সুন্দর রুমটা গোল বেডে সাদা চাদর বিছানো।তারপাশেই ছোট্ট টেবিল। ড্রেসিংটেবিল,আলমাড়ি একটা রুমে যা যা লাগে সবই আছে।পাশেই সোফাসেট। বেডের ডানপাশে চোখ যেতেই দেখলাম এটাচ্ড মিনি ছাদ।আমি কেন যেন কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে দৌড়ে সেখানে চলে গেলাম।অসম্ভব সুন্দর,ফুলে ভরা ছাদটা।কতোধরনের যে ফুল এখানে একটা ছোট্ট সুইমিংপুল ও আছে সেখানে পদ্মফুল ও আছে( জাস্ট কাল্পনিক সিরিয়াস ভাবিয়েন নাহ আবার কেউ আমাকে ধুয়ে দিয়েন না এটা নিয়ে আমি জাস্ট এইভাবেই এটা লিখে দিলাম)।
এতো সৌন্দর্য দেখে আনন্দে আমার চোখ দুটো চিকচিক করছে।
হঠাৎ পিছন থেকে দুটো ঠান্ডা হাত আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি কেঁপে উঠলাম।এটা যে নিভৃত ভালোই বুজতে পারছি।আমি নিজেকে ছাড়াতে চাইলে।উনি আমার কানে হালকা ফুহহ দিলেন।আমি উনার হাত খামছে ধরলাম।উনি মৃদু কন্ঠে বললেন,

-” একদম নড়বে নাহ। এখন বলো পছন্দ হয়েছে?”

আমি কাপাগলায় বললাম,

-” হুম।”

-” আবার পরে দেখিও এখন গিয়ে হালকা ফ্রেস হয়ে নেও।ডিনার করতে হবে।রাত হয়েছে।”

আমি মাথা ঝাকালাম।উনি আমাকে ছাড়তেই আমি ফ্রেস হতে চলে গেলাম।ওয়াসরুম থেকে বের হতেই।উনি আমাকে আকস্মিক টেনে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এনে বসালেন। তারপর বাবার দেওয়া গহনার বক্সটা বাহির করে আমার সামনে রাখলেন।উনি বললেন,

-” বাবা পরিয়ে দিতে বলেছেন তোমাকে তাও আমি যেন পরিয়ে দেই এইটা হুকুম জারি করেছেন।”

আমি মানা করার সাহস পেলাম নাহ। যদি আবারো উনি রেগে যান।
উনি আমার ডানকানে দুল পড়ালেন তারপর বামকানে, তারপর ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে গলায় লকেটটা পড়িয়ে দিলেন।
উনার প্রতিটা স্পর্শে আমি থরথর করে কাপছি।
উনি আমাকে দার করালেন তারপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে অবাক হয়ে কতোক্ষন তাকিয়ে থাকলেন। তারপর আমার গালের দু-পাশে হাত দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেলেন।আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।কেমন যেন অদ্ভূত ভালোলাগা কাজ করছে আমার মাজে।
তারপর উনি আমাকে নিয়ে বিছানায় বসলেন।তারপর আমরা দুজন ডিনার করে নিলাম।
ডিনার শেষে উনি আমাকে ঘুমোতে বলে।উনি মিনি ছাদে চলে গেলেন মনে হয় কারো সাথে কথা বলছেন।আমি ভ্রু-ক্ষেপ করলাম নাহ।চুপচাপ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। ঘুম আসছে নাহ আমার তবুও চোখ বুজে রাখা রইলাম।হঠাৎ হেঁচকা টানে নিভৃত এসে আমাকে উনি আমার বুকে টেনে নিলেন।আমি বড়বড় চোখে উনার দিকে তাকালাম।নিভৃত কখন আসলো।

উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

-” ঘুমাওনি কেন?”

আমি চোখ নামিয়েই জবাব দিলাম,

-” দুপুরে অনেক্ষন ঘুমিয়েছি তাই ঘুম আসছে নাহ।”

-” আচ্ছা নিঝুম?”

-“হুম!”

-” আমাকে এতো ঘৃনা কেন করো? আমাকে স্বামি হিসাবে মেনে নেওয়া যায় নাহ?” করুন গলা নিভৃতের।

আমি কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম।আমার বলার কিছুই নেই।ভাবলাম আসলেই তো এখন তো নিভৃত আমার স্বামি। এখন পর পুরুষের কথা চিন্তা করে তো লাভ নেই।আর আমি এটাও বলবো নাহ যে আমি আহানকে ভালোবাসি।ওকে আমি ভালোবাসি নাহ আমার ফ্যামিলি আমাদের বিয়ে ঠিক করেছিলো।তাই আমি মেনে নিয়েছিলাম কারন আমি কাউকে ভালোবাসতাম নাহ।তাই ফ্যামিলি আহানের সাথে বিয়ে ঠিক করায় আর কিছু বলিনি।
কিন্তু এখন তো নিভৃতের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।ওকে আমি ঠকাতে পারবো নাহ এখন।আগে ছিলাম আহানের হবু স্ত্রী।আর এখন নিভৃতের বিবাহিত স্ত্রী। আহানের চেয়েও নিভৃতের প্রতি আমার দ্বায়িত বেশি।আমাকে এটা মেনে নিতেই হবে।তাছাড়া সবাই এখন আমাকে নিভৃতের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছেন সেখানে আবারো উনাদের কষ্ট দিতে পারবো নাহ।

– কি ভাবছো?” হঠাৎ নিভৃতের কথায় ধ্যন ভাংলো বললাম,

-” কিছু নাহ! আমার ঘুম পাচ্ছে।” আসলে আমি কথা বাড়াতে চাইছি নাহ।

-” আচ্ছা ঘুমাও!”

নিভৃত আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে লাগলেন।একসময় উনার এমন করায় আমি ঘুমিয়ে গেলাম।


। #ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০৬
সকালে মিষ্টি রোদের আলো এসে পড়লো নিভৃতের মুখে।চোখ মেলতেই নিঝুমকে নিজের বুকে দেখে একটা স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠে ওর মুখে।মেয়েটা কতোটা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।এমনটাই তো কতো রাত স্বপ্ন দেখেছিলো সে।আজ তার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে।ভাবতেই নিঝুমকে নিজের সাথে আর একটু জোড়ে জড়িয়ে নিলো।
নিভৃত নিঝুমের কপালেই ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-” আমি তোমাকে কখনো হারাতে দেবো নাহ নিঝুম।আহান তোমার ক্ষতি কোনভাবেই করতে পারবে নাহ।আমি সবসময় আমার বাহুডোরে তোমায় আগলে রাখবো।তোমাকে আর নিজের থেকে দূর করবো নাহ।”

ফিসফিস করে কথা বলাতে নিভৃতের গরম নিশ্বাস গুলো নিঝুমের কানের কাছে এসেপড়ছিলো।আস্তে করে নড়ে উঠে নিঝুম।নিভৃত নিঝুমকে নড়তে দেখে সাথে সাথে চোখ বুজে নেয়।
🌺
কানের কাছে কারো গরম নিশ্বাস অনুভূত হতেই চোখ খুললাম আমি।চেয়ে দেখি আমি নিভৃতের বুকের মাজে ঘুমোচ্ছি আর নিভৃত আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।আমি তাকিয়ে রইলাম নিভৃতের দিকে।এই লোকটা আস্ত একটা মায়া।আমি একবার তাকালে আর চোখ সরাতে পারি নাহ কেন?রোদের মিষ্টি আলোয় উনার মুখটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।ঘুমোন্ত অবস্থায় ও কি কোন ছেলে মানুষকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে তা নিভৃতকে না দেখলে জানতাম না আমি।আমি তাকে ক্রমশই দেখতে লাগলাম।হঠাৎ নিভৃত বললো,

-” এইভাবে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেন?আমার লজ্জা করে নাহ বুজি?”

উনার কথা শুনে আমি লজ্জায় চোখ চেপে বন্ধ করে নিলাম।লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।উনি যে জেগে আছেন আমি বুজতে পারিনি।লোকটা এতোটা অসভ্য জানতাম না।এইভাবে আমাকে লজ্জা না দিলে কি উনার হতো নাহ?

-” কি হলো এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন?আমি তো বরই দেখতো পারো অধিকার আছে তোমার।চোখ খুলো।”

নিভৃতের কথায় আমি আরো লজ্জায় গুটিয়ে গেলাম। ইসস!! কি লজ্জা,কি লজ্জা। আমি নিজেকে মুক্ত করতে চাইলাম উনার কাছ থেকে কিন্তু উনি ছাড়ছেই নাহ।
আমি হালকা আওয়াজে বললাম,

-” কি হলো ছাড়ছেন না কেন?আমি কি উঠবো নাহ?”

-” নাহ উঠবে নাহ! এখন মাত্র ৭ঃ৩০ বাজে এতো তাড়াতাড়ি উঠে কি করবে?”

আমি তাকালাম উনার দিকে।মৃদু কন্ঠে বললাম,।

-” আপনি কাজে যাবেন নাহ?নাস্তা বানানো লাগবে তো।”

নিভৃত ভ্রু-কুচকে ফেললেন আমার কথায়।মনে হয় আমার কথাটা উনার পছন্দ হয়নি। উনি বলেন,

-” এতো পাকামো কে করতে বলেছে?বাড়িতে কি সার্ভেন্টস এর অভাব যে তুমি নাস্তা বানাবে?”

আমি কাচুমাচু করে বললাম,

-” সার্ভেন্টসদের রান্না আর বউয়ের হাতের রান্না কি আর এক হলো?”

নিভৃত হা করে তাকালো আমার দিকে।তারপর খুশিতে জ্বলজ্বল চোখে বললেন,

-” তার মানে?তার মানে? তুমি আমাকে বর মেনে নিয়েছো?”

আমি মাথা নাড়ালাম।উনির দিক স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।বললাম,

-জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে এই তিনটে জিনিসের উপর আমাদের কোন অধিকার নেই।এটা স্বয়ং আল্লাহ্ সব কিছু করে থাকেন।সেখানে আল্লাহ্ তায়ালা হয়তো আগে থেকেই আপনার সাথেই আমার ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাই তো আমাদের বিয়েটা হয়েছে।”

উনি বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেন নাহ।

-” তবে নিঝুম তুমি কি আহানকে ভালোবাসা নাহ?”

আমি না বোধক মাথা নাড়িয়ে বললাম,

-” উহু! আমি আহানকে ভালোবাসি নাহহ।আমি কখন কাউকে ভালোবাসতাম নাহ তাই ফ্যামিলি যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলো তাকেই মেনে নিয়েছিলাম।এখন ভাগ্য আমাকে আপনার সাথে জুড়ে দিয়েছেন।
আমি আগে আহানের হবু স্ত্রী ছিলাম,এখন আপনার বিবাহিত স্ত্রী,আল্লাহ্ তায়ালার কালাম সাক্ষী রেখে আমাদের বিয়ে হয়েছে।”

নিভৃত আকুতিভরা চোখে তাকালো।বললেন,

-” তারমানে তুমি আমাকে এখন ভালোবাসো?”

আমি ধীরকন্ঠে বললাম,

-” উহু! আমি মিথ্যে বলবো নাহ। আমি আপনাকে ভালোবাসি নাহ।তবে এখন যেহেতু আমি আপনার স্ত্রী আপনার প্রতি আমার দ্বায়িত আছে।তা আমি একজন আদর্শ স্ত্রী হয়ে পাল করবো।আর আপনারও আমার উপর অধিকার আছে।আর ভালোবাসা?সেতো একসাথে থাকতে থাকতে একদিন তৈরি হবেই।অন্তত মায়াটাতো জন্মাবে,মায়া থেকে জন্ম নেবে অনুভূতি আর একসময় তা ভালোবাসার রূপ নেবে।আমি আপনাকে আজ থেকে এই মুহূর্ত থেকে এই স্নিগ্ধ সকালের প্রবিত্র আভা, এই মৃদু বাতাস সব সাক্ষী রেখে আপনাকে আমার স্বামি মেনে নিলাম।”

আমার কথায় নিভৃতের চোখের কোনে জল চিকচিক করে উঠলো।নিভৃত আমাকে দু-হাতে ঝাপটে ধরে রাখলেন।আমি অবাক হলাম আমার কথায় তার চোখে পানি আসলো কেন?আমি কি কোনভাবে উনাকে কষ্ট দিলাম।তবে আমি যে উনাকে কোন মিথ্যে আশ্বাস দিতে চাই নাহ।যা সত্যতা তাই বলেছি।

-” আপ..আপনি ক..কি আমার কথায় কষ্ট পে..পেয়েছেন? ” জিজ্ঞেস করলাম আমি।

আমার কথায় আমার দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি।আমার কপালে একটা গভীর চুমু খেলেন।আমি আবেশে চোখ বুজে নিলাম।উনি যতোবার আমার কপালে চুমু খান আমার সারাশরীর অদ্ভূত ভালোলাগায় ছেয়ে যায়।উনি যে আমাকে ভালোবাসেন তা আমি প্রতিবার অনুভব করতে পারি এই ছোয়ায় তবে উনি আমাকে বলেন না কেন যে উনি আমাকে ভালোবাসেন। উনার কথায় তাকালাম আমি।

-” আমি কষ্ট পাইনি নিঝুম।তবে তুমি যে আমাকে স্বামি মেনে নিয়েছো এটা মানতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।এতো সহজে আমাকে মেনে নিভে ভাবিনি।আমাকে ক্ষমা করে দিও নিঝুম।আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।আমি প্রমিস করছি আমি তোমাকে আর কখন কষ্ট দিবো নাহ।শুধু তুমি আমার মতের বিরুদ্ধে কিছু করো নাহ।তাহলে আমার রাগ লাগবে।আর আমি আমার রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলবো যেটা আমি কোনভাবেই চাই না।”

আমি নিভৃতের হাত আকড়ে ধরলাম আশ্বাস দিয়ে বললাম,

-” আপনি আমার স্বামি। আর নিজের স্বামি বিরুদ্ধে আমি কখনো যাবো নাহ।আমি মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথেই থাকবো।”

উনি কিছুক্ষন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর হঠাৎ এমন এক আবদার করলেন যেটা শুনে আমি অবাক হলাম।

-” নিঝুম আ..আমি জানি আমি তো..তোমাকে জোর করে ব..বিয়ে করেছি।বাট প্লিজ আমাকে এখন তোমার ওই রক্তরঞ্জীত ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেতে দিবে।আমি আমি নিজেকে বুজাতে পারছি নাহ।তোমার ঘুমু ঘুমু চোখ মুখ দেখে আমি নিজেকে নিয়ত্রন করতে পারছি নাহ।তবে আই প্রমিস তুমি মানা করলে আমি দিবো নাহ।”

আমি এখন কি করবো কিসব আবদার করেন উনি এদিকে যে আমি লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছি সেটা কি উনি দেখছেন নাহ।তবে কেন যেন উনার এই আবদার আমার মেনে নিতে ইচ্ছে করছে।কেনই বা বাধা দেবো এখন তো উনি আমার স্বামি সম্পূর্ণ অধিকার আছে উনার।উনি তো তবু অনুমতি চাইছেন।এই সমাজে এমন অনেক পুরুষ নামক পশু আছে যারা অনুমতি না নিয়েও নিজের পুরুষত্ব ফলায়।আর উনি তো নিজের বিবাহিত স্ত্রীর ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ দিবেন সেটাও অনুমতি চাইছেন।মনটা ভালোলাগায় ভরে উঠলো।উঠে বসতে চাইলে উনি ছেড়ে দিলেন।এইবার আর আটকালেন নাহ।উনি নিজেও উঠে বসলেন।আমি আড়চোখে উনার মুখের দিক তাকালাম।উনার মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছে।আমিও বা কি করবো এতো সহজে কি হ্যা বলতে পারি।আমার সে লজ্জা করে।
আমি মনে সাহস সঞ্চয় করে উনার দিকে তাকালাম।তারপর উনার কাছে একেবারে কাছে গিয়ে বসলাম।উনার চোখের দিক তাকালাম।সেখানে স্পষ্ট বিষ্ময় দেখতে পাচ্ছি আমি।চোখ নামিয়ে নিলাম তাকানোর সাহস আমার নেই।আমি শুধু উনার কাছে গিয়ে একহাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরালাম আর আর একহাত দিয়ে উনার কাধের টি-শার্ট আকড়ে ধরলাম।তীব্রভাবে আকড়ে ধরলাম।
🤎🤎
🤎🖤
ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো নিভৃতের নিঝুম যে তাকে অনুমতি দিয়েছে সেটা ও বুজতে পেরেছে।মুচকি হাসি নিভৃতের ঠোঁটে। অপ্রতাশিত কিছু পেয়েছে সে।নিভৃত আস্তে করে নিঝুমের মুখটা উপরে তুললো লজ্জা নিঝুমের চোখ মুখে বিরাজমান,লাল আভা ছড়াচ্ছে,গাল,নাক সব লাল হয়ে আছে।এতোটা আবেদনময়ী লাগছে নিঝুমকে তার কাছে।ঘুমের রেশে এখনো কাটেনি সেখানে লজ্জায় রাঙ্গা এক লজ্জাবতী।কি মারাত্মক এক অনুভূতি মুখে বলে বুজাতে পারবে নাহ নিভৃত।আস্তে করে বলে,

-” চোখ খুলো নিঝুম।”

নিঝুম মাথা নাড়ালো।লজ্জায় তার গলার স্বরটাও আসছে নাহ।তা দেখে মৃদু হাসলো নিভৃত।

-” এতো লজ্জা পেয়ো না।ভূলে অন্য কিছুও করে দিতে পারি।”
🖤

উনার ” অন্যকিছু করে দিতে পারি” কথাটা শুনে শিহরীত হলাম আমি।
চমকে চোখ খুললাম।সাথে উনার ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁটে ছোয়ালেন।গভীরভাবে স্পর্শ করে চলেছে। শতো চেষ্টার পর খোলা চোখজোড়া আবারো উনার এই ভালোবাসা পরশ পেয়ে বন্ধ করে নিলাম।উনি এমনভাবে আমাকে স্পর্শ দিয়ে চলেছেন যেন আমাকে উনি শত প্রার্থনার পর পেয়েছেন।আমি সয্য করতে পারছি নাহ।সারা শরীর মৃদু কাপছে।আমি হেলে পড়তে নিলেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।এতোটা শক্তভাবে নিজের সাথে চেপে ধরে আমাকে চুমু খাচ্ছেন যে আমি বিন্দুমাত্র নড়তে পারছি নাহ।
উনি ঠোঁটের এই তীব্র ছোয়া আমাকে ঠিক থাকতে দিচ্ছে নাহ।অনেকক্ষন সময় নিয়ে আমাকে চুমু খাচ্ছেন উনি।আমি এইবার সয্য করতে না পেরে নিজেই সরে এলাম।মাথা এলিয়ে দিলাম উনার ঘাড়ে।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছি।আমার ঠোঁট জোড়ার সব রক্ত মনে হয় উনি শুষে নিয়েছেন।একহাত আমার কোমড়ে আর একহাত আমার আমার মাথার পিছনে দিয়ে আমাকে সামলে রাখছেন উনি।হঠাৎ উনি আমার চুলগুলো সরিয়ে দিলেন।আমি উনার পিঠ খামছে ধরলাম।উনি গভীরভাবে ঠোঁট ছোয়ালেন আমার ঘাড়ে আমি আরো জোড়ে উনাকে খামছে ধরলাম।এভাবে দুজন কতোক্ষন থাকলাম জানিনাহ।
খানিকবাদে উনি আমাকে সামনে আনলেন।আমি চোখ নামিয়ে রেখেছি।এখনো আমি আমার কাপাকাপি বন্ধ করতে পারছি নাহ।উনি মৃদু আওয়াজে বললেন,

-” সরি আমি একটু বেশিই করে ফেলেছি তাই নাহ।”

এইবার আমার রাগ লাগছে বেটা তুই বুজতে পারছিস না।আমার লজ্জা লাগছে তার উপর এই কথাটা কেন বলতে হলো।আমি যে লজ্জায় মরে যাচ্ছি বুজতে পারছিস নাহ।

আমি কাপা গলায় বললাম,

-” আপনি ফ্রেস হতে যান। দেরি হয়ে গেছে কাজে যাবেন নাহ।”

-” তুমি ফ্রেস হবে নাহ?” আমি উনার কথা শুনে তাকালাম উনার দিক।আমি কিভাবে উনাকে বুজাবো এই মুহূর্তে আমি হাটতে পারবো নাহ একদম নাহ।উনার ঠোঁটের স্পর্শে যে আমি নেতিয়ে।আমি আমতা আমতা করে বললাম,

-” আপনি আগে যান আমি পরে যাচ্ছি।”

দেখখাম উনি খানিক আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।তারপর হঠাৎ ওই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।তারপর বললেন,

-” আমার ছোয়া যে তোমাকে এতোটা দূর্বল করে দিবে ভাবতে পারি নি।”

আমি সাথে সাথে উনার কাধে নিজের মুখ লুকালাম।ইসস! লজ্জা কি লজ্জা।উনি আমাকে ওয়াসরুমে নামিয়ে দিলেন। বললেন,

-” এখন কি ফ্রেস হতে পারবে না-কি আমি..”

উনার কথা শেষ করার আগে আমি চিল্লিয়ে উঠলাম,

-” অসভ্য কোথাকার চুপ করুন।যান বাহিরে আমি ফ্রেস হতে পারবো।”

উনি হাসতে হাসতে চলে গেলেন।আমি ওয়াসরুমের দরজা আটকে আয়নায় তাকালাম।আমার মুখ লাল হয়ে আছে।এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা বিরাজমান।স্বামি ভালোবাসার জাদু বুজি একেই বলে।আমি হাসলাম।সে হাসি লজ্জামিস্রিত হাসি।
আমি মানি উনি আমার স্বামি।মনে প্রানে মানি।

চলবে,,,,,,

এটা আমার স্টোরি আমি একটু ইউনিকভাবেই লিখছি।সবাই তো জোর করে বিয়ে করলে নায়িকা মেনে নিতে চায় না।রাগ করে চলে যায়। এইসব ধরনের গল্প লিখে।আমি বিবাহিত আমি জানি স্বামি স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন কতোটা দৃঢ়।আমি আমার অনুভুতি থেকে লিখেছি।নিঝুমের এই অনুভূতিগুলো ঠিক আমার অনুভূতিগুলো কেন্দ্র করে লিখা।প্লিজ সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করবেন।নাহলে বেশি বড় করবো নাহ।আমি দুভাবেই এন্ডিং ভেবে রেখেছি কয়েক পর্বেই এন্ডিং দিতে পারি আবার অনেক বড় করেও দিতে পারি।এখন আপনাদের উপর সব ডিপেন্ড’স করছে।
চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কালকে আমি গল্প দিতে পারবো নাহ।বাড়িতে আয়োজন আছে।তাই শত কষ্ট করে হলেও এই পার্ট টা দিয়ে দিলাম।কেমন হয়েছে জানাবেন।ছোট বলে লজ্জা দিবেন নাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here