আজ আমার বিয়ে ৷ অথচ আমাকে বিয়ের আসর থেকে সবার সামনে দিয়ে তুলে আনা হয়েছে ৷ বিয়ের বেনারসি পরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ফ্লোরে বসে আছি আমি ৷ অন্ধকার ধুলা ভর্তি একটা রুমে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে ৷ চিৎকার করে বলছি আমাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু কাজ হচ্ছে না ৷ কারো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না ৷
একটু দুরে একটা ধারালো কিছু দেখতে পেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ওটা ধরতে এগিয়ে গেলাম আর পেয়েও গেলাম ৷ নিজের হাতে ওই কাচিটা নিয়ে পায়ের বাঁধন হাত দিয়ে আর হাতের বাঁধনটা অনেক কষ্টে কেটে খুললাম ৷ হাতের বাঁধন কাটতে গিয়ে হাতের এক সাইড কেটে গেলো ৷ শাড়ির আঁচল ধরে কাটাস্থান চেপে ধরলাম ৷ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম আমি ৷
সারারাত এভাবে থাকার জন্য শরীরটা দুর্বল হয়ে গেছে ৷ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে দরজার কাছে গেলাম ৷ বাহির থেকে দরজা লক করা ৷ পাশে একটা জানালা দেখে সেটার কাছে গিয়ে দেখি নিচে অনেক গার্ড পাহারা দিচ্ছে ৷ আমি চিল্লিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,
–”কে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন? কেন নিয়ে এসেছেন? সামনে কেন আসছেন না? সামনে আসুন যদি সাহস থেকে থাকে ৷ এভাবে একটা মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনে এভাবে বন্দি করে রেখে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? আপনি সব পারবেন? আপনি অনেক সাহসী? আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না? সামনে আসুন ৷ দেখি কে আপনি?”
আমার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একটা দেয়াল অটোমেটিক খুলে গেলো ৷ যতটুকু বুঝতে পেরেছি এটা একটা গুপ্ত দরজা আর ভিতরে গুপ্ত ঘর ৷ তারপর সেখান থেকে একটা কার্টুন মাস্ক পরে একজন লোক বেরিয়ে আসলো ৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এখনো ৷ লোকটা আমার কাছে এসে বললো,,,,,
–”এসেছি সামনে ৷ এবার দেখো কে আমি ৷”
–”কে আপনি? এটা কি পরে আছেন? মুখ থেকে সরান৷”
উনি মুখ থেকে মাস্কটা সরিয়ে বললেন,,,,
–”চিনতে পেরেছো?”
–”আপনি?”
–”জ্বী হ্যাঁ আমি ৷”
–”কেন নিয়ে এসেছেন আমাকে আপনি আরিহান? আমাকে কি একটু শান্তি দিবেন না আপনি?”
(এবার পরিচয়টা দিয়ে নি…আমি কাশফিয়া রহমান ৷ কনিকা রহমান আর সিয়াম রহমানের একমাত্র মেয়ে আমি ৷ বয়স ২১ বছর ৷ রাজশাহী থেকে এসএসসি দিয়ে ঢাকায় এসেছি অনার্স পরতে ৷ কিন্তু একটা কারণে আমার পড়া কমপ্লিট হয়নি ৷ সেই কারণটা গল্পের মধ্যেই জানতে পারবেন)______(আমি এখন যেই ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি ৷ তার নাম আরিহান আহমেদ ৷ নাদিয়া আহমেদ আর আহিল আহমেদ এর একমাত্র ছেলে ৷ বয়স ২৬ বছর ৷ অনার্স কমপ্লিট করে তার বাবার বিজনেসের দেখাশুনা করতো ৷ কিন্তু গত কয়েকদিন যাবত তার বিজনেসের বদলে আমার খোঁজ খবর রাখেন উনি ৷ যার কারণে আমার বিয়ের দিনেও আমাকে তুলে নিয়ে আসতে পারলেন ৷)
আরিহান : কত বার বলেছি তোমাকে? তুমি শুধু আমার ৷ একটা কথা বললে কানে যায় না? তাহলে এই বিয়ের মানে কি?
কাশফিয়া : এই বিয়ের মানে আছে ৷ অামি আর কতবার বলবো আপনাকে? আমি আপনাকে ভালোবাসি না ৷ তবুও কেন আমার কথা শোনেন না আপনি ৷
আরিহান : তোমার কোনো কথা শোনার প্রশ্নই আসে না ৷ তুমি ভালোবাসো আর না বাসো ৷ মেইন কথা আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমি আমার ৷
কাশফিয়া : প্লিজ চলে যান আমার লাইফ থেকে ৷ আপনার জন্য আমার লাইফটা বিষাক্ত হয়ে গেছে ৷ প্লিজ মুক্তি দিন আমাকে ৷
আরিহান : মুক্তি তোমাকে আমি জীবনেও দিব না কাশফুল!!
কাশফিয়া : কেন বুঝতে পারছেন না আপনি? আমি সায়ানকে ভালোবাসি ৷ আপনাকে ভালোবাসি…
পুরো কথাটা বলার আগেই আরিহান আমার মুখ চেপে ধরলেন ৷ তারপর বললেন,,,,,,
আরিহান : ‘না’ শব্দটা উচ্চারণ করার কোনো দরকার নেই ৷ এখন ভালোবাসো না কিন্তু পরে ঠিকই বাসবে ৷
আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : কেন তুলে এনেছেন আমাকে আপনি? কেন এই বিয়েটা হতে দিলেন না আপনি?
আরিহান : আমি থাকতে তোমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে পারে না ৷ এটা আমি আগেও বলেছি আবার বলছি ৷ আমি তোমাকে অনেক সহজে আমার ভালোবাসা বোঝাতে চেয়েছি ৷ কিন্তু তুমি বোঝো নি ৷ এতো সহজভাবে বোঝার মেয়ে তুমি না ৷ তাই আমি এবার তোমাকে বোঝাবো ৷ জোর করে, ভয়ংকর করে বোঝাবো ৷ যে আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি ৷
কাশফিয়া : আপনার ভালোবাসা বোঝার কোনো দরকার নেই আমার ৷ আপনাকে নিয়ে কোনো মাথা ব্যথাও নেই আমার ৷ আমাকে নিয়ে সায়ানের কাছে দিয়ে আসুন নাহলে আমাকে একা যেতে দিন ৷
উনি আমার হাত চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,
আরিহান : তুই এখন থেকে আমার কাছেই থাকবি ৷ না তো ওই সায়ানের কাছে আর না তোর বাবা মায়ের কাছে বুঝেছিস?
এই বলে উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন ৷ তাই আমি বললাম,,,,,
কাশফিয়া : থাকবো না আমি আপনার কাছে ৷ আমাকে ছাড়ুন ৷ আমার হাত ছাড়ুন আরিহান ৷
এই বলে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম আমি ৷ কিন্তু উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে রাখছেন ৷ এতে হাতে ব্যথাও পাচ্ছি ৷ তবুও ওনার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই ৷ উনি ওনার মতো আমাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসে গাড়ি লক করে দিলেন ৷ তারপর হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাতে শুরু করলেন ৷ আজ উনি অন্যদিনের থেকে অতিরিক্ত হিংস্র হয়ে উঠেছেন ৷ যার কারণে আমার ভয় ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷
এলোমেলো ভাবে ড্রাইভ করছেন উনি ৷ এমনভাবে করছেন যেনো গাড়ি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে ৷ তা দেখে আমি ওনাকে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : আরিহান আমার ভয় করছে ৷ প্লিজ আস্তে চালান ৷
আমার কথায় কোনো উত্তর দিলেন না উনি ৷ আগের মতোই ওনার কাজ করে যাচ্ছেন উনি ৷ একটু পর গাড়ির স্প্রিড কমে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি ৷ সামনে তাকাতেই দেখি আমাদের সামনে একটা গাড়ি চলে এসেছে ৷ সেটা দেখা আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,,,
কাশফিয়া : আরিহান…??
উনি আমার গলা শুনে চমকে উঠলেন ৷ হয়তো এতক্ষন উনি নিজের মধ্যেই ছিলেন না ৷ গাড়ির ব্রেইক কষে রিং ঘুরিয়ে বামদিকে গেলে একটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলো গাড়িটা ৷ আর পাশের গাড়িটার সাথে একটু ধাক্কা খেয়ে এই গাড়ির গ্লাস কিছুটা ভেঙ্গে গেল ৷ আরিহানের হাতটা সেই গ্লাসের সঙ্গে লেগে কেটে গেলো ৷ আর আমি সিটবেল্ট না বাঁধায় সামনের দিকে ঝুকে গেলাম ৷ যার ফলে আমার কপাল কিছুটা কেটে গেল ৷
নিজের কপালে হাত দিয়ে ‘আহ’ করে উঠলাম ৷ আরিহান গাড়ি থেকে নেমে আমার একহাত ধরে টান দিয়ে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,,,,,
আরিহান : আমি খেয়ালই করি নি ৷ যে গাড়িটা এভাবে চলে আসবে ৷ জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি? এতোটা কেয়ারলেস কি করে হলাম আমি? কাশফুল!! যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো? আমি কি করতাম?
আমাকে বুকে জড়িয়ে আরিহান এই কথা গুলো বলতে লাগলেন ৷ তার মধ্যে আমাকে হারানোর ভয় দেখতে পেয়েছি আমি ৷ কিন্তু তার এই মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিতে চাই না আমি ৷ তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের থেকে আলাদা করলাম ৷ উনি দুকদম পিছিয়ে গেলেন ৷ আমি তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালাম ৷ উনি আমার কাছে এসে আমার কপালের কাঁটা জায়গায় হাত বুলিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : অনেক ব্যথা পাচ্ছো না? আমি না দেখিই নি ৷ দাঁড়াও ৷ (বলেই পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে কপালে চেপে ধরলেন) গাড়িতে বসো আর এভাবে গাড়ি চালাবো না ৷
আমি কিছু না বলে চুপচাপ গাড়িতে বসলাম ৷ কারণ এই ছেলেটাকে বলেও কোনো লাভ নেই ৷ শুধু শুধু শক্তি নষ্ট করে কি হবে? উনিও গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ গাড়ি এসে থামলো একটা হসপিটালের সামনে ৷ এই হসপিটালকে দেখলেই আমার মনে পরে যায় প্রথম দিনের কথা যেই দিন আরিহানের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ৷
সেই দিনটাই আজ আমার জীবনের কাল ৷ ওই দিন যদি আমার আরিহানের সঙ্গে দেখা না হতো তবে আজ সবটাই ঠিক থাকতো ৷ কিন্তু ওই এক মূহুর্ত আমার জীবনটাকে আজ বিষাক্ত আর ভয়ংকর করে তুলেছে ৷ এই আরিহান নামক মানুষটা যে ঠিক কতটা ভয়ংকর তা শুধু আমিই জানি ৷ আর তার এই ভয়ংকরতা শুধু আমাকেই ঘিরে ৷
#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__০২
.
.
.
.
In the past…
কাশফিয়া : আম্মু আমার কিন্তু লেট হচ্ছে ৷
আম্মু : আসছি একটু বস ৷
কাশফিয়া : আর দেরি করলে ভার্সিটির ফার্স্ট দিনই লেট হবে আম্মু ৷ আমি বাহির থেকে খেয়ে নিবো নি ৷
আম্মু : এইতো নে ৷ খালি পেটে গেলে যে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি ৷
এক কামড় স্যান্ডউইচ মুখে দিয়ে বাকিটা হাতে নিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : দেখেছো? খেয়েছি ৷ এখন যাই টেনশান করো না ৷
আম্মু : আরে পুরোটা তো খেয়ে যা ৷
কাশফিয়া : সময় নেই ৷
বলেই বেরিয়ে পরলাম ৷ রাজশাহী থেকে কাল ঢাকায় এসেছি সপরিবারে ৷ আর আজ আমার ভার্সিটির প্রথম দিন ৷ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠলো ৷ উপরে ‘নিধি’ নামটা ভেসে উঠলো ৷ সেটা দেখে রিসিভ করে কানে ধরে বলতে লাগলাম,,,,
কাশফিয়া : হ্যালো? কোথায় তুই? বের হয়েছিস?
নিধি : জানু তুই হসপিটাল চলে আয়?
কাশফিয়া : কিহ? কেন? তোর কি হয়েছে?
নিধি : আরে একটু আয় না প্লিজ ৷
কাশফিয়া : আচ্ছা এড্রেস বল আমি আসছি ৷
নিধি : ওয়েট ম্যাসেজ করে দিচ্ছি ৷
বলেই ফোন কেটে দিলো ৷ ম্যাসেজ আসলে একটা সিএনজি করে হসপিটালে রওনা দিলাম ৷ আজ প্রথম ক্লাসটাই মিস হলো ৷ হসপিটালে এসে রিসিপশানিস্টকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,
কাশফিয়া : নিধি ইসলাম নামের কেউ কি এডমিট অর চেকআপ করাতে এসেছে এখানে?
— জ্বী ম্যাম একটু চেক করে নি ৷
পাশ থেকে একজনকে বলতে শুনলাম ‘জয় নামের কেউ আছে?’ এটা শুনেই তার দিকে তাকালাম আমি ৷ লোকটি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো ৷ চোখাচোখি হওয়ায় চোখ ফিরিয়ে নিলাম আমি ৷ রিসিপশানিস্টকে আবার বললাম,,,,
কাশফিয়া : পেলেন কি? এতক্ষন লাগে?
— সরি ম্যাম পেয়েছি ৷ দোতলায় গিয়ে ডানদিকের একটা চেম্বারেই পাবেন ৷ তাকে ডক্টর চেকআপ করতে নিয়ে গিয়েছে ৷
কাশফিয়া : ওকে থ্যাঙ্কস ৷
বলেই চলে আসলাম লিফ্টের কাছে ৷ লিফ্টের বাটন ক্লিক করলে কিছুক্ষনপর লিফ্ট খোলায় ভিতরে ঢুকে গেলাম ৷ লিফ্ট বন্ধ হবে তখনি ওই লোকটা তড়িঘড়ি ভিতরে ঢুকে পরলো ৷ তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে লিফ্টের বাটন ক্লিক করতে গেলে লোকটা নিজেরটা ক্লিক করলো আর ভাগ্যক্রমে একি ফ্লোরে আমরা দুজনই ৷ এত বিষয় ঘাটাঘাটি না করে সামনে তাকিয়ে রইলাম ৷ এতে আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পাচ্ছি লোকটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ৷
লিফ্ট থামলে নামতে যাবো তখনি পিছন থেকে টান অনুভব করলাম ৷ পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার ওড়নার একপ্রান্ত তার শার্টের বোতামের সাথে পেঁচিয়ে আছে ৷ কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই ৷ দূর থেকে আমি বললাম,,,,
কাশফিয়া : এই যে আপনি এভাবে কি দেখছেন? আমার ওড়নাটা ছুটিয়ে দিন ৷ কি হলো? কথা কানে যাচ্ছে না?
লোকটির কোনো রেসপন্স না পেয়ে তার কাছে গিয়ে ওড়নাটা ছুটিয়ে নিয়ে চলে এলাম ৷ বামদিকে তাকাতেই দেখি নিধি একটা ছেলের সঙ্গে বসে আছে ৷ দৌঁড়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম,,,,
কাশফিয়া : এই তোর কি হয়েছে? হসপিটালে ডাকলি ৷
নিধি : দেখেও বুঝতে পারছিস না কি হয়েছে?
কাশফিয়া : ইয়ে মানে তোর এই অবস্থা কীভাবে হলো?
নিধি : দোস্ত রিক্সা থেকে পরে গিয়েছি?
কাশফিয়া : তো লাফালাফি করলে তো পড়বিই ৷ যাইহোক চল এখন ৷
— তোমাদের পৌঁছে দিয়ে আসি চলো ৷
পাশের ছেলেটা বললো ৷ তাকে দেখে আমি বললাম,,,
কাশফিয়া : কে আপনি?
নিধি : ও আমার ফ্রেন্ড ৷
কাশফিয়া : রিয়ালি?? (ভ্রু কুচকে)
নিধি : তো কি…?
লিফ্টের ওই লোকটা হঠাৎ এখানে এসে বলতে লাগলো,,,,
— জয় সব ঠিক আছে তো?
জয় : হ্যাঁ ঠিক আছে ৷ কিন্তু আরিহান তুই এখানে?
আরিহান : আঙ্কেল বললো একটু হসপিটালে গিয়ে চেক করে আসতে ৷ তুই নাকি আঙ্কেলকে বলেছিস অ্যাসিডেন্টের কারণে বাড়ি যেতে পারবি না কিন্তু আমাকে বলিস নি কেন? আঙ্কেল আমাকে বললো ৷
জয় : ওই আর কি ৷
আরিহান : তো মেয়েটা কোথায়?
জয় : ওই যে দেখ ৷ (ইশারা করে)
যতটুকু বুঝলাম নিধির ফ্রেন্ডের নাম জয় আর ওই লোকটি জয়ের ফ্রেন্ড অথবা ভাই যার নাম আরিহান ৷ ওনারা দুজনেই আমাদের কাছে আসলো ৷ তারপর আরিহান বললো,,,,
আরিহান : হাই! তুমি নিধি রাইট? জয়ের কাছে শুনেছি ৷ তোমার নাম কি?
কাশফিয়া : ওই সময় যে আমি কথা বললাম মুখ দিয়ে তো টু শব্দটাও বেরোলো না ৷ আর এখন অচেনা একটা মেয়েকে তুমি করে বলছেন? কেন?
নিধি : কাশফিয়া এগুলা কি বলছিস তুই?
কাশফিয়া : তুই চুপ থাক ৷
আরিহান : ওহ তো তোমার নাম কাশফিয়া?
কাশফিয়া : নাহ ৷ এই নিধি চল ওঠ ৷
নিধি : আরে দোস্ত আস্তে আমার পায়ে ব্যথা ৷
নিধিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সামনে আরিহান এসে বললো,,,,
আরিহান : তোমাদের পৌঁছে দি চলো ৷
কাশফিয়া : থ্যাঙ্কস বাট তার কোনো দরকার নেই ৷ যেতে পারবো আমরা ৷ (বলেই চলে এলাম)
জয় : কি ভাবছিস?
আরিহান : কি আর ভাব্বো ৷ মেয়েটার এটিটিউড দেখেছিস? সো হোয়াট? আমিও আরিহান আহমেদ ৷ ওকে আমার একবার মনে ধরেছে তো ও শুধুই আমার ৷ (ডেভিল স্মাইলে)
________________
In the present…
— ম্যাম হাতটা সামনে দিন ৷
নার্সের ডাকে অতীত থেকে ফিরে এলাম ৷ এই হসপিটালেই আমার আরিহানের সঙ্গে দেখা হয়ে ছিলো ৷ ঠিক এভাবে ৷ প্রথমে তার ব্যবহার শান্ত থাকলেও ধীরে ধীরে তার ব্যবহার বদলে গিয়েছিলো ৷ তখন থেকে প্রতিদিন ওনার আর আমার দেখা হতো ৷ আমি বরাবরি এড়িয়ে চলেছি তাকে তবুও ওনার থেকে আজ অবধি বাঁচতে পারি নি ৷
একজন নার্স আমার কপালে আর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো ৷ আরিহানের হাতের দিকে তাকিয়ে তার হাতটা নার্সের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : ওনার হাতও ব্যান্ডেজ করে দিন ৷
আরিহান হাতটা সরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন ৷ তারপর বললেন,,,,
আরিহান : তার কোনো প্রয়োজন নেই ৷
আমিও দাঁড়িয়ে বললাম,,,,
কাশফিয়া : কেন প্রয়োজন নেই?
আরিহান : কেন ব্যান্ডেজ করবো আমি? হাতের এই ব্যথা তো কিছুই না ৷ মনের ব্যথাটা বোঝো তুমি?
আমি কিছু না বলে তাকে টেনে বসিয়ে ওনার হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,,,,
কাশফিয়া : ব্যান্ডেজ করে দিন ৷
আরিহান : কষ্ট হচ্ছে না তোমার আমার জন্য? কি হয় একবার ভালোবাসলে?
কাশফিয়া : এসব কথা ছাড়ুন আরিহান ৷ আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না ৷
আরিহান : তো এসব কেন করছো?
কাশফিয়া : মানুষ হিসেবে করছি ৷ আপনি আমার মতোই একজন মানুষ তো আমি মানুষ হয়ে আরেকজনের কষ্ট কি করে দেখবো ৷
আরিহান : এই কষ্টের জন্য এমন করছো? আর আমি যে তোমার জন্য পুড়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত সেটা দেখতে পাচ্ছো না?
আমি চুপ করে রইলাম কিই বা বলার আছে আমার ৷ আমি তো জানি আরিহান আমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে ৷ তার জন্য কি আমি সায়ানকে ভুলে যাবো? এটা যে আমি পারবো না ৷ কখনোই না ৷
আরিহান : কি হলো কিছু বলছো না যে?
কাশফিয়া : হুম চলুন ৷
আরিহান : কথা ঘোরাচ্ছো? ওকে নো প্রবলেম ৷ আমি আমার জিনিস নিজের করে নিতে পারি অ্যান্ড জানি ৷ তুমি আমার আর আমারি থাকবে ৷ তো চলো ৷
এই কথা বলতে গিয়ে ওনার চোখমুখ লাল হয়ে গেছে ৷ একটা হিংস্রতা ভাব আবার ফুটে উঠেছে ওনার মধ্যে ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় আমি বললাম,,,,
কাশফিয়া : ক-কোথায় যাবো?
আরিহান : আমার বাসায় ৷
কাশফিয়া : না আমাকে আম্মুর কাছে দিয়ে আসুন প্লিজ ৷ আমি আমার বাসায় যাবো ৷
উনি আমার হাত ধরে বললেন,,,,
আরিহান : এক ভুল আমি বারবার করবো না ৷ তোমাকে আমি আমার সাথেই নিয়ে যাবো ৷ (বলেই আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন)
কাশফিয়া : হাত ছাড়ুন প্লিজ ৷ আমি যাবো না আপনার সাথে ৷ আমার কথাটা তো শুনুন ৷ আমাকে সায়ানের…
আরিহান : আমাকে রাগিয়ো না কাশফিয়া ৷ ওই সায়ানের নাম আরেকবার বললে আমি যেটা করতে চাচ্ছি না এখন আমাকে সেটাই করতে হবে ৷ সো শুধু শুধু আমাকে রাগিয়ে আমাকে দিয়ে কোনো ভুল কাজ করিয়ো না ৷ (রেগে)
কাশফিয়া : আরিহান…?
আরিহান : চুুপচাপ চলো ৷
আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে আমার সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দিলেন উনি ৷ নরমাল ভাবেই গাড়ি চালাচ্ছেন উনি এখন ৷ আম্মু আব্বু কি করছে কিছু জানিনা ৷ আমার টেনশানে নিশ্চয়ই অসুস্থ হয়ে পরেছে আব্বু কিন্তু আমি কি করবো? এই আরিহান নামক লোকটার কাছে যে আমি বন্দি ৷ সায়ান কি আসবেনা? আমাকে খুঁজে নিয়ে যাবে না? মুক্ত করবে না এই বন্দি থেকে?
গাড়ি এসে একটা বাড়ির সামনে থামলো ৷ বেশ খোলামেলা আর অনেক বড় ৷ গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন উনি ৷ ভেতর এসে বলতে লাগলেন,,,,,
আরিহান : আখি?…আখি?…কোথায় তুই?
আখি নামের একটা মেয়ে নিচে নেমে বললো,,,,,
আখি : ভাইয়া তুই এখানে?
আরিহান : হুম আমি আসছি ৷ কাশফিয়াকে ওর রুম দেখিয়ে দে ৷
এটা বলেই আরিহান উপরে চলে গেলেন ৷ আমি যতটুকু জানি আরিহানের কোনো ভাইবোন নেই ৷ তাহলে আখি কে?
আখি : ভাইয়ার কোনো ভাইবোন নেই তো আমি কেন ভাইয়াকে ভাইয়া বলছি? সেটাই ভাবছো তো?
কাশফিয়া : না মানে আসলে…হ্যাঁ!!
আখি : সমস্যা নেই ভাবতেই পারো ৷ আমার আম্মু আব্বু নেই ৷ তাই আমি চাচ্চুর বাড়িতে থাকতাম ৷ আমাকে আমার চাচ্চু রোজ মারধর করতো ৷ অনেক খারাপ কাজ করাতো ৷ একদিন চাচ্চুকে মিথ্যা বলে বাহিরে গিয়েছিলাম ৷ পালাবো বলে ৷ তখনি ভাইয়ার গাড়ির সামনে পরি আমি ৷ তারপর ভাইয়াকে সব বললে ভাইয়া আমাকে এখানে আশ্রয় দেয় ৷ আর বলে তার একটা বোন থাকবে তার অনেক শখ ছিল ৷ তাই ভাইয়া আমাকে বোন বানায় ৷ এটা আরো ২ বছর আগের কথা ৷
কাশফিয়া : ও আচ্ছা ৷
আখি : হুম চলো তোমার রুমটা দেখিয়ে দেই ৷
কাশফিয়া : হুম ৷
আখি আমাকে উপরের একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো ৷ আমি পুরো রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম ৷ আয়নার সামনে গিয়ে চোখ আটকে গেলো ৷ লাল রঙের বেনারসি আর গা ভর্তি গয়না আমার গায়ে ৷ শুধু মুখের সাজটা একটু পাল্টে গিয়েছে ৷ আমার জীবনটা তো আজ অন্যরকম হতে পারতো ৷ খুব কি দরকার ছিল আরিহানকে আমার জীবনে আসার ৷ আজ আরিহান না গেলে তো আমার বিয়েটাও হয়ে যেত ৷ কিন্তু সেটা কি সম্ভব হলো?
আয়নার দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবছি আমি ৷ হঠাৎ পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে পিছনে তাকালাম আমি ৷ তখনি দেখি…
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
#