The_Terrible_LoverLover part 33

#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__৩৩ (বোনাস)

হাসপাতালে ওটির সামনে বসে আছে আরিহান ৷ চুল এলোমেলো, চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে, গায়ের শার্টেও রক্ত লেগে রয়েছে ৷ এক দৃষ্টিতে ওটির দরজার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ওর পাশে বসে কাঁদছে কেয়া আর আরিয়া ৷ জয় রিসিপশনে ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়েছে ৷ আরিহানের আর কাশফিয়ার ফ্যামিলীকেও জানিয়ে দিয়েছে ও ৷ তারা হাসপাতালে আসছে ৷

আরিহান চোখ সরিয়ে তাকালো কেয়া আর আরিয়ার দিকে ৷ ওরা ওর মেয়ে এটা ভাবেই ওর শান্তি লাগছে ৷ ওদের সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো ৷ চারটা ছোট ছোট হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে ওদের হাতে চুমু খেতে লাগলো ৷ ওদের চোখের পানিটা মুছে দিলো আরিহান ৷ আরিয়া হেচকি তুলতে তুলতে বললো,,,,,,

আরিয়া : মাম্মার কি হয়েছে আঙ্কেল? মাম্মা ঠিক হয়ে যাবে তো আঙ্কেল?

আরিহান : হুম তোমাদের মাম্মা একদম ঠিক হয়ে যাবে ৷ আর আমাকে আঙ্কেল বলো না ৷ পাপা বলে ডাকবে ঠিক আছে?

আরিয়া আর কেয়া দুজন দুজনার দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো ৷ তারপর কেয়া বললো,,,,,,,

কেয়া : কেন তুমি কি আমাদের পাপা?

আরিহান : হুম ৷

কেয়া : সত্যি?

আরিহান : হুম ৷

কেয়া আর আরিয়া দুজনেই ‘পাপা’ বলে আরিহানকে জড়িয়ে ধরলো ৷ আরিহানও ওদেরকে জড়িয়ে নিলো ৷ ওর মেয়ে ওরা ৷ তার জন্যই তো এতো টান ওর ওদের প্রতি ৷ কিন্তু কাশফিয়া কেন এই ছয় ছয়টা বছর ওকে ওর মেয়েদের থেকে দূরে রাখলো? ও বেঁচে আছে তাহলে কি পারতো না আরিহানের কাছে ফিরে আসতে? এই ছয় বছর এভাবে দূরে থাকার মানে কি? মনে মনে রাগ হলো ওর ৷ কেন এরকমটা করলো ও? এভাবে দূরে দূরে থাকলো কেন এই ছয় বছর আরিহানের থেকে? এরকম নানা কথা ভাবছে আরিহান ৷ ওর রাগ হচ্ছে এখন কাশফিয়ার উপর ৷ কেন এতোগুলো বছর নিজে দূরে থেকে নিজের মেয়েদেরকেও দূরে রেখেছো ও? কিসের এতো রাগ কাশফিয়ার যেটা আরিহানের উপর এভাবে মিটালো?

★★★
আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম ৷ মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে ৷ এতোই ব্যাথা যে নাড়াতেও পারছি না ৷ চোখ খুলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না ৷ তবুও চেষ্টা করছি ৷ আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেলাম বেডের একপাশে আম্মু আব্বু দাঁড়িয়ে আছে ৷ কতদিন পর দেখলাম ৷ অন্য পাশে তাকাতেই দেখি কেয়া আর আরিয়া আমার হাত ধরে আরিহানের কোলে বসে আছে ৷ মুখে হাসি ফুটে উঠলো ৷ আমার মেয়েদের চোখে পানি ৷ আরিহানকে পুরো এলোমেলো লাগছে ৷ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন ৷ আমি কাঁপাকাঁপা হাতে আরিহানের হাত ছুঁইয়ে বললাম,,,,,,”আরিহান?”

উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঝাটা মেরে হাত সরিয়ে নিলেন ৷ ওনার কাজকর্ম কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার ৷ কি করছেন উনি? আমি হাত বারিয়ে বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : কি হয়েছে আরিহান? এরকম করছেন কেন?

উনি বসা থেকে কেয়া আর আরিয়াকে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন ৷ আমিও আস্তে আস্তে মাথা ধরে উঠে বসলাম ৷ আরিহান কিছু না বলেই ওদেরকে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন ৷ সেটা দেখে আমি বললাম,,,,

কাশফিয়া : কি হলো কিছু বলছেন না কেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওদের? কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

আরিহান : চলে যাচ্ছি ৷

কাশফিয়া : মমমানে?

আরিহান : মানে এতো গুলো বছর তুমি দূরে থেকেছো আমার কাছ থেকে সঙ্গে আমার মেয়েদেরকেও দূরে রেখেছো আমার থেকে ৷ তাই এবার তুমি দূরে থাকবে আমাদের থেকে ৷

বলেই সামনে এগিয়ে যেতে লাগলেন উনি ৷ হাতের ক্যানেল গুলো খুলে দৌঁড়ে গিয়ে হাত ছড়িয়ে দাঁড়ালাম ওনার সামনে ৷ মাথা নাড়িয়ে ছলছল চোখে বলতে লাগলাম,,,,,,,

কাশফিয়া : প্লিজ না ৷ ওদেরকে নিয়ে যাবেন না ৷ আমি মরে যাবো আরিহান ৷

আরিহান : কেন নিব না? এতোদিন কইছিলে যে তুমি আসো নি আমার সামনে? আমি তো তোমাকে ছাড়া মরেই গিয়েছিলাম ৷ ছয় বছর আমার মেয়েদের দূরে রেখেছো কেন আমার থেকে? আমিও দূরে রাখবো ওদের তোমার থেকে ৷

কাশফিয়া : না না যাবেন প্লিজ ৷ আমি চাইলেই ফিরে আসতে পারতাম কিন্তু ফিরে আসার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না আমি ৷ প্লিজ ওদেরকে নিয়ে যাবেন না ৷

আরিহান : সরো সামনে থেকে ৷

কাশফিয়া : না আমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলুন তবুও নিয়ে যাবেন না আমার থেকে ৷ আমাকেও নিয়ে যান ওদের সাথে ৷

উনি আর কিছু না বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ আমাকে আম্মু আব্বু এসে ধরলো ৷ আমি ওদেরকে ছাড়িয়ে আরিহানের পিছে পিছে যাবো কিন্তু ওরা আমাকে আরো শক্ত করে ধরে রইল,,,,,

কাশফিয়া : ছাড়ো আমাকে ৷ এভাবে যেতে পারেন না উনি ৷ তোমরা ছাড়ো না আমাকে ৷ ছাড়ো (কাদতে কাদতে)

আম্মু : কাশফি শান্ত হ ৷ তুই অসুস্থ এরকম করলে হবে না ৷ শান্ত হ মা ৷ নইলে আরো অসুস্থ হয়ে পরবি ৷

কাশফিয়া : আম্মু উনি আমার মেয়েদেরকে নিয়ে গিয়েছে ৷ আমাকে যেতে হবে ৷ ওদের ছাড়া থাকতে পারবো না আমি ৷ প্লিজ আম্মু ওই বাড়িতে নিয়ে চলো আমাকে ৷

আব্বু : তুই আর ওই বাড়িতে যাবি না ৷ ওই আরিহানের জন্য তুই আমাদের থেকে ছয় বছর দূরে ছিলি ৷ আর না ৷ আর দূরে যেতে দিব না ৷ চল বাড়ি চল ৷ ওই বাড়ি যাবি না তুই ৷

কাশফিয়া : না না ওই বাড়িতে নিয়ে চলো আমায় ৷ কেয়া, আরিয়ার কাছে নিয়ে চলো প্লিজ ৷ আমি অন্য কোত্থাও যাবো না ৷ ওই বাড়িতে যাবো আমি ৷ আরিহানের কাছে যাবো আমি ৷ ছাড়ো আমাকে ছাড়ো তোমরা ৷ (কাদতে কাদতে)

আম্মু : ওই বাড়িতে গিয়ে তুই কি করবি? আরিহানের বিয়ে খাবি?

কাশফিয়া : মমমানে? কি বলছো এসব?

আম্মু : যেটা সত্যি সেটাই বলছি ৷

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ওদেরকে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,,,,,

কাশফিয়া : মিথ্যা বলছো তোমরা ৷ মিথ্যা বলছো ৷ সব মিথ্যা ৷ আরিহান এরকমটা কখনোই করবেন না ৷ আমি চিনি ওনাকে ৷ আমাকে ওই বাড়ি যেতে হবে ৷ যেতেই হবে ওখানে ৷

বলেই রুম থেকে বের হতে গেলে কয়েকজন নার্স ধরে ফেললো ৷ ছোটাছুটি করছি আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু পারছি না ৷ মাথাটাও ঘুরাচ্ছে এতো জোরে জোরে কথা বলার জন্য ৷ এদিকে নার্সগুলো ধরে আমার হাতে একটা ইনজ্যাকশান পুশ করে দিলো ৷ চোখে বুঝে এলো আমার ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,”আরিহানের কাছে যাবো আমি ৷ নিয়ে চলো আমাকে ৷”

★★★
কেয়া আর আরিয়াকে নিয়ে বাড়িতে এলো আরিহান ৷ ইতোমধ্যে কাশফিয়ার খবর মোটামুটি সবার কাছেই পৌঁছে গিয়েছে ৷ আরিহানের মা ভেতরে ভেতরে রেগে আছেন ৷ চলেই যখন গেল আবার ফিরে এলো কেন? এমনিতেও উনি কাশফিয়াকে পচ্ছন্দ করতেন না শুধু আরিহানের জন্য মেনে নিয়েছিলেন ৷ আর এখন কোথা থেকে চলে এলো ৷ এসব বিষয় ভাবছেন আর রাগে ফুসছেন ৷

আরিহান বাড়িতে ঢুকে কিছু সার্ভেন্টদের রুমে খাবার পাঠিয়ে দিতে বলে আর কারো সাথে কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো ৷ কেয়া আর আরিয়াকে বিছানার উপর বসিয়ে নিজেও ওদের পাশে বসলো ৷ এতোক্ষন কেয়া আর আরিয়া সব কিছু চুপচাপ সব দেখছিল ৷ এখন আরিহানকে বসতে দেখে ওরা খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ আরিহান মাথা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

আরিহান : কি হয়েছে হুম?

দুজনেই আরিহানের সামনে গিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,

কেয়া : মাম্মা আসবে না পাপা?

আরিয়া : মাম্মাকে নিয়ে আসো নি কেন পাপা?

আরিহান ওদেরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,,,,,,

আরিহান : এসে পরবে ৷

আরিয়া : কখন?

আরিহান : তাড়াতাড়ি এসে পরবে ৷ এখন তোমরা খেয়ে নিবে ঠিক আছে?

কেয়া : আগে মাম্মা আসুক তারপর খাবো ৷

আরিহান : আগে খেয়ে নেও তারপর নাহলে তোমাদের মাম্মা আসবে না ৷ কি খাবে?

দুজনেই মাথা দুলালো ৷ আরিহান মুচকি হেসে ওদেরকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজে চেন্জ্ঞ করে নিলো ৷ তারপর খাবার এলে ওদের খাইয়ে দিলো ৷ দুজনেই চুপচাপ খেয়ে নিলো ৷ খাওয়া শেষে আরিহান ওদের মুখ মুছিয়ে দিয়ে উঠতে গেলে কেয়া ওর শার্ট টেনে বলতে লাগলো,,,,,,

কেয়া : এবার মাম্মাকে নিয়ে আসো পাপা প্লিজ ৷

আরিহান : এসে পরবে তোমরা শুয়ে পরো রাত হয়ে গিয়েছে ৷

আরিয়া : মাম্মাকে ছাড়া ঘুমাতে পারবো না ৷ প্লিজ পাপা মাম্মাকে নিয়ে আসো তারপর আমরা সবাই একসাথে ঘুমাবো প্লিজ ৷

আরিহান প্লেট রেখে কেয়া আর আরিয়াকে শুয়ে দিয়ে ওদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,,,,,

আরিহান : চলে আসবে তোমরা এখন ঘুমাও ৷ নাহলে আমি চলে যাবো তোমাদের রেখে ৷

ওরা আর কিছু বললো না ৷ চুপ করে রইল ৷ আরিহান ওর চোখের কোনায় জমে থাকা পানিটা মুছে নিল ৷ কাশফিয়াকে কষ্ট দিতে তো ওরও কষ্ট হচ্ছে ৷ কিন্তু কি করবে ও? এতো বছর দূরে থাকাকে যে ও মেনে নিতে পারছে না ৷

★★★
নিজের রুমে পাথরের মতো বসে আছে কাশফিয়া ৷ ওর সামনে খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে ওর আম্মু ৷ জ্ঞান ফিরার পর থেকে খেতে বলছে ওকে কিন্তু ও কিছুই খাচ্ছে না ৷ চুপচাপ বসে আছে ৷ শেষমেষ ওর আম্মু ওর মুখে জোর করে খাবার দিতে গেলে হাতের থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো প্লেটটা ৷ চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,

কাশফিয়া : দূরে যাও ৷ চলে যাও ৷ কি করতে এসেছো? খাওয়াতে? না খাইয়ে মেরে ফেল ৷ তাতেই হবে ৷ তবুও এভাবে ঘরে আটকিয়ে রেখো না আম্মু ৷ যেতে দাও না আমায় প্লিজ আম্মু ৷

আম্মু : খেয়ে নে মা?

কাশফিয়া : রুম থেকে চলে যাও তোহ ৷ একটু একা থাকতে দাও আমাকে ৷ যাও এখান থেকে চলে যাও ৷

আম্মু আর কিছু না বলে চলে গেল ৷ খাট থেকে নেমে ফ্লোরে বসে পরলাম ৷ চোখ থেকে পানি পরতে পরতে এখন চোখ আর মাথা দুটোই জ্বালা করছে প্রচুর ৷ মন চাচ্ছে এক এক করে প্রথমে সবাইকে মারি তারপর নিজেও মরি ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(যারা যারা এক্সট্রা পর্ব চেয়েছেন তাদের জন্য ৷ কোনো রকমে লিখেছি, রিচেইক করা হয়নি ৷ এখন আমি বলি যে, আমাকে একটু টাইম দিন সব কিছু ঠিক করে দিতে ৷ সবাইকে বলছি একটু ধৈর্য্য ধরুন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here