#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১০
দরজা ধাক্কানোর শব্দে বর্তমানে ফিরে এলাম আমি ৷ বসা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলাম ৷ বাহিরে বেরিয়ে দেখি আখি দাঁড়িয়ে আছে ৷ আমাকে দেখে বললো,,,,
আখি : আপু ঠিক আছো তুমি?
কাশফিয়া : আমি ঠিক আছি ৷ তোমার একটা ড্রেস এনে দিবা? এটা তো ভিজে গিয়েছে ৷
আখি : দিচ্ছি কিন্তু তোমার চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
কাশফিয়া : কিছু না ৷
আখি : আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও আমি এনে দিচ্ছি ৷
বলেই আখি চলে গেলো ৷ মাথাটা কি রকম ঘুরছে ৷ এতক্ষন ওয়াশরুমে শাওয়ারের নিচে বসে ছিলাম ৷ তাই শরীরটা অবশ হয়ে আসছে ৷ আখি ওর একটা জামা দিয়ে চলে গেলো ৷ আমি চেন্জ্ঞ করে নিলাম ৷ নড়াচড়া করার বিন্দু মাত্র শক্তিটুকুও পাচ্ছি না ৷ সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম ৷
_______________
— ভাইয়া?
আখির কথায় আরিহান রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো,,,
আরিহান : কি বলবি?
আখি : কখন এসেছিস?
আরিহান : কিছুক্ষন আগেই ৷ কেন?
আখি : কাশফিয়া আপুর চোখ মুখ কেমন ফোলা ফোলা লাগছিল ৷ মনে হয় কেঁদেছে ৷
আরিহান : হুম তো??
আখি : তো মানে? তোর কিছু যায় আসে না এতে? নিজের পরিবার ছেড়ে তোর কাছে পরে আছে ৷ আর তুই ওকে কষ্ট দিচ্ছিস?
আরিহান : কষ্ট তো এমনি এমনি দেই নি ৷ ও ওর কাজের জন্যই নিজে কষ্ট পেয়েছে ৷
আখি : কষ্ট দিয়ে, আর জোর করে এভাবে ভালোবাসা যায় না ভাইয়া ৷ ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটির কষ্টও তো সহ্য করা যায় না ৷ তাহলে তুই কীভাবে এতো চুপচাপ কাজ করছিস? আসলে তুই ওকে সত্যি ভালোই বাসিস নি ৷ সারাদিন একটা মেয়ে না খেয়ে ছিল ৷ চোখ, মুখ, শরীরের কি অবস্থা করেছে সেটা শুধু আমিই দেখেছি ৷ তুই তো একবারও দেখতে গেলি না ৷ ওর থেকে তোর কাজটা বড় হয়ে গেলো?
আরিহান : কোথায় ও?
আখি : নিজের ঘরে আছে ৷ দোহাই লাগি ভাইয়া মেয়েটাকে আর কষ্ট দিস না ৷ (বলেই চলে গেলো)
আরিহান হাতের ল্যাপটপটা পাশে রেখে রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে গেলো ৷ কাশফিয়ার রুমের দরজা বেজানো ছিলো ৷ ধাক্কা দিতেই খুলে গেল ৷ আরিহান রুমে ঢুকে দেখে কাশফিয়া সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে ৷ ও ওর কাছে গিয়ে ডাকলো তবে ওর ডাকের কোনো সাড়া দিলো না কাশফিয়া ৷
নিচে বসে বলতে লাগলো,,,,,
আরিহান : সরি আমি না বুঝি নি ৷ রাগ উঠে গিয়েছিল ৷ কি করব বলো?
কাশফিয়ার হাত দুটো আরিহান তার হাতের মধ্যে নিয়ে নিলো ৷ তখনি ও অনুভব করলো স্বাভাবিকের চেয়ে ওর হাত দুটো অতিরিক্ত গরম ৷ কপালে গালে হাত দিয়ে দেখলো ৷ পুরো গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ৷ ওকে কোলে নিয়ে খাটে শুয়ে দিয়ে আখিকে ডাকতে লাগলো ৷ এক প্রকার হন্তদন্ত হয়ে আখি ছুটে এসে বললো,,,,
আখি : কি হয়েছে?
আরিহান : ডাক্তারকে ফোন কর ৷ তাড়াতাড়ি আসতে বল ৷
আখি : কেন?
আরিহান : যেটা বলেছি সেটা আগে কর ৷
বলেই আরিহান নিচে চলে গেলো ৷ বাটিতে করে ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে কাশফিয়ার পাশে বসে পড়ল ৷ পানিতে কাপড় ভিজিয়ে জলপট্টি দিতে লাগলো ৷ বিছানার একপাশের কাঁথাটা কাশফিয়ার উপরে দিয়ে দিলো ৷ কিছুক্ষনের মাঝেই ডাক্তার এসে চেকআপ করিয়ে নিলো ৷ একটা কাগজে ওষুধের নাম লিখতে লিখতে আরিহানকে বললো,,,,,
— মিস্টার আহমেদ খেয়াল রাখবেন ওনার ৷ বেশ ভালোই জ্বর এসেছে ৷ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল ৷ ঘুমের ইনজ্যাকশান দিয়েছি ৷ জ্ঞান আসলে কিছু খাইয়ে এই ওষুধ গুলো খাইয়ে দিবেন ৷
আরিহান : আচ্ছা ৷
— ভয় পাওয়ার কিছু নেই ঠিক হয়ে যাবে ৷ জলপট্টি দিতে থাকুন ৷ জ্বর নেমে যাবে ৷ আর একটু খেয়াল রাখবেন ৷
আরিহান : ঠিক আছে ৷
— তাহলে আমি এখন আসছি ৷
আরিহান : হুম ৷ আখি ওনাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয় ৷ আর কোনো সার্ভেন্টকে দিয়ে ওষুধ গুলো আনার ব্যবস্থা কর ৷
আখি : আচ্ছা ভাইয়া ৷ তুই চিন্তা করিস না আমি দেখছি ৷
ওনারা দুজন চলে গেলেন ৷ আরিহান কাশফিয়ার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল ৷ উঠে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স সামনে নিয়ে বসে সেখান থেকে একটা মলম বের করলো ৷ আর সেটা কাশফিয়ার হাতে লাগিয়ে দিলো ৷ যেখানে আরিহানের নখের আচড় লেগে দাগ বসে গেছে আর রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে ৷ কাপড় ভিজিয়ে ওলট পালট করে কপালে দিয়ে দিলো ৷
ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে কাশফিয়া ৷ আর তাই আরিহান ওকে শক্ত করে ওর সাথে মিশিয়ে নিলো ৷
_________
মাথাটা ধরে আছে ৷ আর কেউ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে অনুভব করলাম ৷ চোখ খুলে দেখি আরিহান আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিছানায় আমার সাথে শুয়ে আছেন ৷ সেটা দেখে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সড়িয়ে নিলাম ৷ উনি খাট থেকে নিচে পড়ে গিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : কি হয়েছে? তুমি…
আমি উঠে কোনো রকমে বসে তাকে বলতে না দিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : আ-আপনি এখানে কি করছেন? আমার রুমে আমার সাথে কি করছেন আপনি? (চিৎকার করে)
আরিহান : কাশফিয়া শোনো…
কাশফিয়া : আপনি রাতে আমার সাথে ছিলেন? আপনি…আপনি চলে যান ৷ চলে যান আমার চোখের সামনে থেকে ৷ চলে যান ৷
আরিহান : কাশফিয়া তুমি ভুল বুঝছো ৷
কাশফিয়া : আপনি একটা নোংরা মানুষ, নিচ ৷ আপনার সাথে কথা বলতেও অসহ্য লাগে ৷ রুচিতে বাঁধে আমার ৷ ঘৃণা হয় নিজের প্রতি ৷ চলে যান এখান থেকে ৷ সহ্য করতে পারছি না আমি ৷ উফফ ৷ (মাথা চেপে ধরে)
আরিহান : কি-কি হলো?
কাশফিয়া : আরে আপনাকে আমি যেতে বলেছি তো ৷ শুনতে পাচ্ছেন না? বেহায়ার মতো আমার কথাগুলো শুনতে ভালো লাগে? গায়ে লাগে না, না?
আর কিছু না বলে উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ হাত, পা কাঁপছে আমার ৷ এতো জোরে কথা আমি কখনোই বলি নি ৷ এই প্রথম চিৎকার করে কাউকে কথা শুনালাম ৷ বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার ৷ ঠোট কামড়ে কান্নাটা আটকে যাচ্ছি ৷ তখনি মাথায় কারো হাতের স্পর্শে উপরে তাকিয়ে দেখি আখি ৷
ওকে দেখেই ওকে ধরে ডুকরে কেঁদে দিলাম আমি ৷ ও আমাকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলো,,,,”কি হয়েছে?”
আমি কিছু বললাম না ৷ আবার বললো,,,,,
আখি : কি হয়েছে? বলো আমায়?
আমি না সুচক মাথা নাড়ালাম ৷
আখি : শরীর ঠিক হয়েছে তো তোমার? কাল রাতে যা জ্বর এসেছিলো তোমার ৷
কাশফিয়া : জজজ্বর??
আখি : হুম ৷ সারা রাত জেগে ভাইয়াই তো তোমাকে সুস্থ করলো ৷
কাশফিয়া : মানে? আরিহান?
আখি : হুম ভাইয়াই তো ৷
কাশফিয়া : কি বলছো তুমি এগুলা? আরিহান কাল রাতে এই কারণে আমার সাথে ছিল?
আখি : হুম ৷
কাশফিয়া : (কিন্তু আমি তো ওনাকে ভুল বুঝে তাড়িয়ে দিয়েছি ৷ যা নয় তাই বলেছি ৷– মনে মনে)
আখি : কি ভাবছো??
কাশফিয়া : কিছু না ৷ আরিহান কোথায় এখন??
আখি : বাহিরে যেতে দেখলাম ৷
কাশফিয়া : ও আচ্ছা ৷
আখি : তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো ৷ খেয়ে ওষুধ খেতে হবে ৷
কাশফিয়া : তুমি যাও আমি আসছি ৷
আখি চলে গেলে আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম ৷ সারাদিন কেটে গেলো ৷ কিন্তু আরিহান এলেন না ৷ ফোন করেও লাভ হয় নি ফোন বন্ধ ৷ কোথায় গিয়েছে কিছুই জানিনা ৷ তার ওপর রাতও হয়ে গেছে ৷ এখনো ফিরছেন না উনি ৷
হঠাৎ বাহির থেকে গাড়ির হর্ণের শব্দ পেয়ে বেলকণিতে গিয়ে দেখি আরিহান নামছেন ৷ রুমের বাহিরে গিয়ে নিচে যাবো তখনি তিনি হেলতে দুলতে আমার সামনে এলেন ৷ আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হেলতে দুলতে বললেন,,,,,
আরিহান : জ্বর হ্যাঁ জ্বর ৷ দেখি ৷ (কপালে হাত দিয়ে) কমে গেছে ৷ ঠিক আছো তো তুমি ৷ তো এএখানে কি করছো?
কাশফিয়া : আপনি…আপনি ড্রিঙ্ক করেছেন??
উনি পরে যেতে নিলেই আমি তাকে ধরলাম ৷ কোনোরকমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : ড্রিঙ্ক? হ্যাঁ করেছি ৷ তুমি আমাকে একদমি বুঝো না কাশফুল!! কবে বুঝবে? ভালোবাসি অনেএএএএকক ভালোবাসি ৷ (হাত ছড়িয়ে)
আমি ওনাকে ওনার রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দিলাম ৷ আজে বাজে কথা বলেই যাচ্ছে এখনো ৷ আমি নিচে গিয়ে ওনার জন্য লেবুর শরবত করে নিয়ে এসে খাইয়ে দিলাম ৷ উনি বিড়বিড় করতে করতে চুপ হয়ে ঘুমিয়ে গেলেন ৷ পায়ের থেকে জুতা খুলে রেখে কাঁথাটা ওনার গায়ে ভালোভাবে দিয়ে দিলাম ৷
ওনার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম ৷ তখনি ওনার হাতের ফোনটা বেজে উঠলো ৷ হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলাম ৷ ওপাশ থেকে একজন বললো,,,,,,
— স্যার ছেলেটা পালিয়েছে ৷
কে পালিয়েছে? কার কথা বলছে? আমি চুপ করে শুনতে লাগলাম ৷ ওপাশের জন আবার বললো,,,
— স্যার কি করব আমরা এখন? কিছু তো বলেন ৷
আমার চুপ থাকা দেখতে পেয়ে ওপাশের জন আবারও বলে উঠলো,,,,,
— স্যার ছেলেটা কীভাবে যেন পালিয়ে গেছে ৷ বুঝতে পারি নি ৷ কি করব আমরা??
আমি ফোনটা কেটে দিলাম ৷ কার পালানোর কথা বলছে লোকগুলো?? আর আরিহান কাকে আটকে রেখেছে এবার? আরিহানের দিকে তাকালাম ঘুমিয়ে আছেন ৷ উঠে যেতে নিবো তখনি হাতে টান অনুভব করলাম ৷ আরিহান তো চোখ বন্ধ করে আছেন কিন্তু আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন ৷ যেন ছেড়ে দিলেই চলে যাব ৷
আমি আমার হাত ছাড়াতে যাবো তখনি দেখি তার হাতের তালু কেঁটে ক্ষতবিক্ষত করা ৷ ওনার হাত দেখেই আতকে উঠলাম ৷ ফার্স্ট এইড বক্স এনে পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলাম ৷ ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলতে লাগলাম,,,,,,
কাশফিয়া : আমাকে কষ্ট দিবে পরে নিজেই কষ্ট পাবে ৷ অদ্ভুত!! আচ্ছা উনি কাকে আটকে রেখেছেন? আর সায়ান? ওই বা কোথায়?
উনি কি সায়ানকে আটকে রেখেছেন? তো ও গেলো কোথায়? আচ্ছা সায়ান আর আরিহানের বন্ধুত্ব কীভাবে নষ্ট হয়েছিল? উনি বলেছেন সায়ান ভালো ছেলে না ৷ সত্যি কি তাই?
আবার ওনার মা বাবা কোথায়? মরে যায় নি সেটা তো আমি জানি ৷ আবার বেঁচে থাকলেও উনি কেন দেখা করতে যান না তাদের সাথে? আর তারাও কেন ছেলের কাছে আসেন না?
এই সব প্রশ্নের উত্তর কে দিবে আমায়? উফফো মাথাটা ধরে যাচ্ছে আমার ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,