The_Terrible_Lover part End

#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__৩৫ (অন্তিম পর্ব)

আরিহান দাঁড়িয়ে আছে আর কাশফিয়া ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ আরিহানের পায়ের উপর কাশফিয়া ওর পা জোড়া রাখলো ৷ পেছন থেকে ও ওর হাত দিয়ে আরিহানের মাথাটা সামনের দিকে নিয়ে এসে আরিহানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল ৷ কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে আরিহানকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিল ও ৷ আরিহান ওকে ধরলো না দেখে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ৷ কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,,,,,,,,,

কাশফিয়া : আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিয়েন না প্লিজ ৷ আমি যে মরে যাবো ৷ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আরিহান ৷ আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েন না আপনি ৷ আমি জানি আমি ভুল করেছি ৷ ওই দিন যদি আপনার কথা শুনতাম তাহলে কখনোই এমন হতো না ৷ এই ছয় বছর আমরা এক সাথেই থাকতাম ৷ কিন্তু ভাগ্য আমাদের সাথে ছিল না আরিহান ৷ এই কয়েক বছর আমার আগের কিছুই মনে ছিল না ৷ আমার নিজেরই পরিচয় তখন মনে ছিল না ৷ নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করতাম আমি কে? কিন্তু জানতাম না ৷ সেখানে আমি কি করে ফিরে আসতাম আপনার কাছে? চাইলেও কি পারতাম? আমি কি ইচ্ছা করে দূরে সরে গিয়েছি আপনার থেকে? বলুন ৷ যদি জানতাম ওই দিন এমন করলে আজ এরকম জায়গায় এসে পরবো তাহলেই কখনোই করতাম না ৷ আপনার বারন শুনলেও হয়তো এসব হতো না ৷ কিন্তু আমি সেদিন সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম ৷ আমার মাথা থেকে আশেপাশের সবকিছু বেরিয়ে গিয়েছিল ৷ এতো গুলো বছর আমি দূরে থেকেছি আপনার থেকে ৷ কিন্তু আর না ৷ আর পারছি না আমি ৷ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না ৷ ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনো কিছুই করি নি আমি ৷ বিশ্বাস করুন আমাকে প্লিজ ৷

আরিহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ও সত্যিটা না জেনেই এভাবে রিয়্যাক্ট করলো কেন? ও তো ভেবেছিল কাশফিয়া ইচ্ছা করে দূরে থেকেছে ওর থেকে ৷ কিন্তু না পুরোটাই ভুল ৷ নিজেকে সামলিয়ে আরিহান বললো,,,,,,,

আরিহান : ছাড়ো আমাকে কেয়া, আরিয়াকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে ৷

ছলছল চোখে মাথা তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : অাপনি…

আরিহান : ছাড়ো ৷

ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলাম আমি ৷ উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ আমার কথাগুলো কি বিশ্বাস হলো না ওনার? আমার একটু কষ্ট হলে যে কষ্ট পেত সে আজ আমায় ফেলে চলে গেল ৷ আমায় কাঁদতে দেখলে যে আমাকে বুকে জড়িয়ে শান্তনা দিতো সে আজ এক বার ছুঁয়েও দেখলো না?

চোখ মুছে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম ৷ নিচে গিয়ে দেখি আরিহান আরিয়া আর কেয়াকে খাওয়াচ্ছেন ৷ খাইয়ে দুজনকে নিয়ে ওদের স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে ৷ ওরা আমাকে দূর থেকে টাটা বলে চলে গেলো ৷ আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম ৷ কী করব ওই বাড়ি থেকে? যার জন্য থাকবো সেই ই তো আমাকে ভুল বুঝলো, বিশ্বাস করলো না ৷ এতোটা অবহেলা নিয়ে থাকতে পারবো না আমি ৷

এসব ভেবেই হেঁটে চলেছি অজানা রাস্তা ধরে ৷ হঠাৎ কেউ আমাকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো ৷ উপরে তাকিয়ে দেখি আরিহান ৷ আমাকে তাকাতে দেখে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন ৷ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর আমার হাত ধরে ঝাকিয়ে ধমকে বলতে লাগলেন,,,,,,,,

আরিহান : মাঝ রাস্তা দিয়ে এভাবে কেউ হাঁটে? কোন সাহসে বাড়ি থেকে বেরিয়েছো তুমি হ্যাঁ? তাও আবার রাস্তার মধ্যে এভাবে হাঁটছো? বোধ বুদ্ধি কি সব হারিয়েছো নাকি হ্যাঁ?

আমি তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে ৷ কি বলছেন কিছু বুঝতে পারছি না ৷ চুপচাপ তাকিয়ে আছি ৷ সেটা দেখে উনি আবার বলতে লাগলেন,,,,,,,,

আরিহান : কি হলো? কথা কেন বলছো না? আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে না? আমাকে ভয় দেখিয়েও শান্তি পাও তুমি না? রাস্তার মাঝে এভাবে হাঁটছো কেন? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত?

কাশফিয়া : হয়ে গেলে তো ভালোই হতো ৷ এভাবে ধুকে ধুকে মরার থেকে একবারে মরা…

আরিহান : চুপ একদম চুপ ৷ (ধমকে)

বলেই জড়িয়ে ধরলেন আমায় ৷ আমি চুপ করে আছি ৷

আরিহান : একবার তোমার হাত ছেড়ে অনেক বড় ভুল করেছি ৷ সেই এক ভুল বারবার করবো না আমি ৷ একবার দূরে চলে গিয়েছো দেখে বারবার দূরে যেতে কখনোই দিব না আমি তোমাকে ৷

কাশফিয়া : আমি তো দূরে যেতে চাই না ৷ কিন্তু আপনিই তো দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন আমাকে ৷ আপনার অবহেলা সহ্য হচ্ছে না আমার ৷ আমি আর কখনোই এরকম করবো না আরিহান ৷ প্লিজ দূরে সরিয়ে দিয়েন না আমাকে ৷ (কাদতে কাদতে)

আরিহান আমার মুখ তুলে চোখ মুছিয়ে বললেন,,,,,,

আরিহান : একটু অপেক্ষা করতে পারলে না? যদি আমি না দেখতাম তোমাকে তাহলে কি হতো বলো?

কাশফিয়া : কি হতো আবার? আপনার থেকে দূরে চলে যেতাম ৷

আরিহান : আবার?

কাশফিয়া : সরি!! (মাথা নিচু করে)

উনি আর কিছু না বলে আমাকে কোলে তুলে নিলেন ৷ আমি সেটা দেখে বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : কি হলো? এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?

আরিহান : রাস্তায় থাকার চিন্তা আছে নাকি ৷ তাহলে থাকতে পারো ৷ এমনিতেই আমি দেখতে চেয়েছিলাম যে আমার বউ আমার রাগ ভাঙ্গায় কীভাবে? কিন্তু কে জানতো? এই রাগ ভাঙ্গানোর চক্করে আবার হারিয়ে ফেলতে নিয়েছিলাম তোমাকে ৷

কাশফিয়া : আমি কত কেঁদেছি জানেন?

আরিহান : হুম জানি তো ৷

কাশফিয়া : আপনি অনেক খারাপ ৷ আমার কান্না দেখে হেসেছেন ৷ একটুও ভালোবাসেন না এখন আমাকে ৷ পুরোতন হয়ে গিয়েছি আমি না? তার জন্যেই ৷

আরিহান : কানের নিচে একটা মারবো ৷ আমি তোমাকে ভালোবাসতাম আর এখনো বাসি ৷ ভালোবাসা কখনোই পুরোতন হয় না ৷ ভালোবাসা মনের মধ্যে নতুন করে জন্ম নেয় বুঝেছো? তোমাকে হাসানোর, কাঁদানোর, রাগানোর, কষ্ট দেয়ার, খুশি করার, ভালোবাসার সব দায়িত্ব আমার ৷ আর তুমি এমন বাচ্চাদের মতো কাঁদো সেটা দেখে কে হাসবে না বলো?

কাশফিয়া : খোটা দিচ্ছেন আমাকে? আমি যেমন তেমনই থাকবো ৷

আরিহান : আমিও তো সেটাই চাই ৷ (হেসে)

আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন উনি ৷ কিছুক্ষন পর বাড়ির কাছে গাড়ি থামিয়ে দুজনেই ভিতরে চলে গেলাম ৷ ভিতরে গিয়ে দেখি আম্মু আব্বু এই বাড়িতে চলে এসেছে ৷ আমাকে দেখে আমার কাছে এসে হাত ধরে আব্বু বলতে লাগলো,,,,,,,,

আব্বু : চল ৷ এই বাড়িতে কেন এসেছিস তুই? চল আমাদের সাথে ৷

আরিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি হাত ছাড়িয়ে আব্বুকে বললাম,,,,,,,,

কাশফিয়া : আমি কোথাও যাবো না ৷ তোমরা চলে যাও৷

আব্বু : তোকে রেখে কোত্থাও যাবো না আমরা ৷

কাশফিয়া : ভেবে দেখো!! যদি আম্মুকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করা হতো তো তোমার কিরকম লাগতো? অথবা তোমাকে যদি আম্মুর কাছ থেকে আলাদা করা হতো কিরকম লাগতো? শুধু এটা বলো ভালো লাগতো কি? তেমনই আমাকে আরিহানের থেকে আলাদা করলে আমার ভালো লাগবে না ৷ এই ছয় বছর আমি সবার থেকে দূরে ছিলাম আরিহানের জন্য না? যেখানে দোষটা তোমাদের মেয়ের সেখানে দোষটা কেন অন্য কারো উপর চাপাচ্ছো বলো তো? ছোট থেকেই আমার একটু খুশিতে তোমরাও খুশি হতে তাই না? এখনো আমি খুশি আরিহানকে পেয়ে ৷ যদি আমাকে নিয়ে যাও তোমরা তাহলে তোমাদের মেয়ে কষ্টে থাকবে ৷ কষ্ট দিবে আমাকে? তাহলে নিয়ে যাও ৷ কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে কিছু বলি নি আমি ৷ কারন আমি জানি আমার মা বাবা আমার ভালোর জন্য সব করতে পারে ৷ আজও বলবো না ৷ তোমরা তোমাদের মেয়ের থেকে তার সন্তানদের আলাদা করবে? এতোটাই খারাপ কি হবে?

আম্মু আব্বু চুপ করে রইলেন ৷ চুপ করে থাকা সম্মতির লক্ষন ৷ হয়তো তাই চুপ করে আছে ৷ আমি বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : আচ্ছা চলো তাহলে ৷

পিছনে ঘুরতে নিলেই আম্মু আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,,,,,

আম্মু : আমাদেরকে এতোটা খারাপ ভাবিস তুই? তোর ভালোর জন্যই নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু সেটা যদি ভুল হয় আর তুই যদি এখানে ভালো থাকিস তবে থাক ৷

কাশফিয়া : ভুল বুঝো না আম্মু ৷

আম্মু : ভুল করলে তো ভুল বুঝবো ৷ কোনো ভুলই করিস নি তুই ৷ তো কীভাবে ভুল বুঝবো বল? (আব্বুর দিকে তাকিয়ে) চলো এখন ৷

আব্বু আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,,,,

আব্বু : ভালো থাকিস মা এটাই দোয়া করি ৷

বলেই আম্মু আব্বু চলে গেলো এখান থেকে ৷ তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি ৷ আরিহান তার বাবাকে বলতে লাগলেন,,,,,,,

আরিহান : ড্যাড যেই বিয়ের আয়োজন করেছিলে তোমরা সেটা ভেঙ্গে দাও ৷ আমি করবো না বিয়েটা ৷ তার কারণটা আলাদা করে বলতে হবে না তোমাদের জানি আমি ৷ আর এই বিয়ের ব্যাপারে বাড়িতে যেন আর কোনো কথা না উঠে ৷

বলেই উপরে চলে গেলেন উনি ৷ আমি আরিহানের মায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,,,,,,,

কাশফিয়া : জানি না কেন আপনি আমাকে পচ্ছন্দ করেন না ৷ তবে আগে যেমন আপনি আমাকে আপনার ছেলের জন্য মেনে নিয়েছিলেন তেমনি এবার না হয় আপনার ছেলের মেয়েদের জন্য মেনে নিন আমাকে ৷ আমি কাল আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি ৷ সেটার জন্য আমাকে মাফ করে দিবেন প্লিজ ৷

বলেই কাশফিয়া উপরে চলে গেল ৷ আরিহানের বাবা আরিহানের মাকে বলতে লাগলেন,,,,,,,

— অনেক তো হয়েছে ৷ এবার ছেলে মেয়ে দুটোকে শান্তিতে থাকতে দাও একটু ৷ শুধু শুধু ঝামেলা বাড়িয়ো না ৷

— আমি কি খালি ঝামেলা করি? আমাকে তোমাদের এতো খারাপ মনে হয়?

— আরে সেটা কোথায় বললাম ৷ আমি তো বললাম তুমি তো অনেক ভালো ৷

— মজা নিচ্ছো না?

— এই বুড়ো বয়সে মজা নিবো?

আরিহানের মা আরিহানের বাবার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন ৷ পাশে থেকে আখি বলে উঠলো,,,,,,,

আখি : ক্ষেপেছে! তোমার বউ ক্ষেপেছে গো বাবা ৷ যাও যাও সামলাও ৷ (হেসে)

— হুম হাসো বেশি করে হাসো ৷ তোমারও এমন একদিন আসবে মা ৷

আখি একটা ভেংচি কেটে চলে গেল ৷ আরিহানের বাবা হেসে রুমের দিকে চলে গেলেন ৷

★★★
রুমে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম আরিহানকে ৷ আরিহান আমাকে ঘুরিয়ে তার সামনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ৷ ওনার বুকে মাথা দিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম তারপর বলতে লাগলাম,,,,,,

কাশফিয়া : আরিহান?

আরিহান : হুম?

আমি মুখ তুলে বললাম,,,,,,

কাশফিয়া : আপনি আর রেগে নেই তো আমার উপর ৷

আরিহান : উহু!

কাশফিয়া : সত্যি তো?

আরিহান : একদম ৷

কাশফিয়া : ভালোবাসি আপনাকে ৷

আরিহান : কি বললে? শুনতে পাই নি আমি?

কাশফিয়া : ভালোবাসি তোমাকে! অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমায় ৷

আরিহান : আমিও ৷

কাশফিয়া : আমিও কি?

আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,,,,,,

আরিহান : ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসি তোমায় ৷

বলেই আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালেন আরিহান ৷ তারপর আমাকে তারসাথে মিশিয়ে নিলেন ৷ আমিও একদম মিশে গেলাম ওনার সাথে ৷ এতো দিন আমাদের মাঝে যতো টুকু দূরত্ব ছিল তা মূহুর্তেই ঘুচে গেল ৷

____________________সমাপ্ত_____________________

[একটা গল্পের যেমন শুরু আছে তেমন শেষও আছে ৷ এই গল্পটার শেষটা ছিল এখানে ৷ জানিনা কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পেরেছি আমি ৷ তবে সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি ৷ যারা যারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার সাথে ছিলেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ৷ শেষ পর্বে অন্তত সবাই নিজের মতামতটা বলে যাবেন সেটুকুই আশা করছি ৷ নতুন গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসবো ৷ ততোদিন পাশে থাকবেন ৷ ভালো থাকবেন ৷ আল্লাহ হাফেজ♥]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here