সম্পর্কের_মায়াজাল পর্ব শেষ

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৯

—” আমি খুব ইনোসেন্ট একজন ছেলে। কারো কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারি না। তাই কেউ মনে মনে ভালোবাসলে তার ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিতে পারি না। এখন কি করা উচিৎ আমার?”

সাধনা মুখ ঘুরিয়ে বলল……

—” মানে তোমাকে যারা যারা ভালোবাসবে সবার ভালোবাসা তুমি অ্যাকসেপ্ট করে নিবে?”

—” অফকোর্স। আমি আগেই বলেছি কেউ মনে মনে কষ্ট পেলে তা সহ্য করতে পারি না।”

—” তাহলে এইখানে বসে না থেকে চলে যাও তোমার মনে মনে ভালোবাসা মানুষদের কাছে। কেন এসেছ এইখানে?”

সাধনার কথা শুনে মুগ্ধ মুচকি হেসে কলেজের সবাইকে অবাক করে দিয়ে সাধনার উদ্দেশ্য বলল…….

—” তুমি কি জানো,ভালবাসা হলো দুটি হৃদয়ের সমন্বয়, যেখানে একটি ছাড়া অন্যটি অচল। তাই হয়তো তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমায় ভালোবাসা শিখাতে পেরেছো তুমি। হ্যাঁ এইটা ঠিক যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনো কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না সব কিছু হটাৎ হয়ে যায় এই জন্যই হয়তো আমার মনের ভিতর ফিলিং হটাৎ হয়ে গেছে। “উইল ইউ ম্যারী মি?” আমি তোমার হাতটা সারাজীবনের জন্যে ধরতে চাই, তুমি কী আমার জীবনসঙ্গিনী হবে?

সাধনার আনন্দে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মুগ্ধ ঠোঁটের কোণায় হাসি রেখে আবারো বলল……

—” আমার নাক দেখে ক্রাশ খেয়েছো এখন এই নাক দেখে কি প্রেমে পড়া যায়?”

সাধনা একটি হাত মুগ্ধের হাতে রেখে বলল……

—” তোমার নাক দেখে প্রেমে কেন ড্রেনেও পড়তে রাজি আমি যদি পাশে থাকো।”

মুগ্ধ চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো সাধনাকে। এতদিন পর সাধনা তার ভালোবাসার মানুষের হাতটি নিজের বলে ধরতে পেরেছে সেই জন্য খুব খুব খুশি হয়েছে সে……….

__________________

সন্ধ্যা আম গাছের নিচে চুপটি করে বসে আছে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। হটাৎ মনের এমন চেঞ্জ হওয়াতে বিরক্ত সে। নীল রঙের একটি ডাইরি নিয়ে কিসব লিখছে সে। হটাৎ গাছ থেকে কাঁচা আম মাথার উপরে পড়ায় বিরক্ত নিয়ে বলল……

—” এই গাছও দেখছি আমার শত্রু হয়ে গেছে। দুনিয়ার সবাই শত্রু আমার এমনকি যাকে ভালোবাসি সেও শত্রু। গতকাল রাতে ফোন দিতে বারণ করেছি বলে আজ সারাদিন আমার কোনো খুঁজ নেয় নি। এই তাহলে ভালোবাসা আমার প্রতি। জানি সবই ছলনা কেউ ভালোবাসে না আমাকে।”

আম গাছের উপর থেকে গান ভেসে আসছে…..

“ও ললনা ও ললনা আমার ভালোবাসা নহে ছলনা,
আমার মত ভালো আর কোনো ছেলে হবে না।।

তুমি আমায় এখনও বুঝলা না।।”

সন্ধ্যা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গাছের উপরে তাকিয়ে অবাক হওয়ার চরম পর্যায় চলে গেল। কেননা গাছের উপরে সমুদ্র বসে আছে আর হাসছে।

—-” তুমি এইখানে?”

—” তুমি যেখানে আমি সেখানে।”

গাছ থেকে নেমে দুই হাত সন্ধ্যার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল। সন্ধ্যা মুখে হাসির রেখা টেনে বলল…..

—” ফলো করছিলে বুঝি?”

—” তাতো অবশ্যই। আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র হবু বউ আর বর্তমান গার্লফ্রেন্ড তাকে অনুসরণ না করে উপায় আছে নাকি? মন ভালো হয়েছে এখন?”

সন্ধ্যা আফসোস করে বলতে লাগলো…..

—” উহু এখনও মন ভালো নেই আমার। কি করলে মন ভালো হবে বলতে পারো?”

সমুদ্র কিছুক্ষণ ভেবে বলল…..

—” চলো কোথাও ঘুরে আসি। প্লিজ না করবে না।”

সমুদ্রের ইনোসেন্ট মুখ দেখে রাজি হয়ে গেল সন্ধ্যা।

_______________________

অফিসে বসে কফি খাচ্ছে স্পন্দন আড় চোখে বার বার শুভ্রতাকে দেখছে। শুভ্রতা কলম দিয়ে সামনে থাকা চুল গুলো পেচ্ছাচ্ছে আর দাঁত কটমট করছে। স্পন্দনের খুব হাসি পাচ্ছে……..

—” মিসেস শুভ্রতা তুমি যদি চলো ডালে ডালে তাহলে আমি যে চলি পাতায় পাতায়। এখন দেখি কিভাবে ডিভোর্স দেও আমাকে।”

প্রায় আধা ঘন্টা পর স্পন্দন শুভ্রতাকে ডেকে পাঠালো। শুভ্রতা একটা ফাইল নিয়ে এসে বলল……

—” আসবো স্বামী?”

শুভ্রতা রুমের ভিতর থেকেই বলছিল। স্পন্দন একবার তাকিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল….

—” এই অফিস বাড়ি নয় জানো না?”

—” আপনিও কি জানেন না এইটা অফিস?”

স্পন্দন চোখ তুলে তাকালো। শুভ্রতা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে স্পন্দনের সামনে গিয়ে বসল।

—” ডেয়ার স্বামী ওহহ সরি স্যার, আপনি কি ভুলে গেছেন অফিসের বস কর্মচারীর দিকে কু-নজরে তাকানো ঠিক না।”

স্পন্দন শুভ্রতার কথা শুনে সামনে থেকে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে পান করে নিলো। শুভ্রতা যে তাকে ফলো করছিলে সে বুঝতেই পারিনি। শুভ্রতা তখন আবারো বলল…..

—” স্যার, যদি কিছু মনে না করেন আজ সন্ধায় আমার সাথে এক জায়গায় যাবেন?”

—” কোথায়?”

—” গেলেই বুঝতে পারবেন। যাবেন কি?”

—” ওকে।”

____________________

সমুদ্র সন্ধ্যাকে একটা বিশাল বইয়ের রাজ্যেয় নিয়ে আসে। সন্ধ্যার চোখ চড়ক গাছ এত এত বই দেখে। সবচেয়ে বেশি অবাক হয় ইয়া বড় একটি ছবি দেখে। ছবিটা মূলত জলছবি আর তাও সন্ধ্যার প্রতিচ্ছবি।

—” পছন্দ হয়েছে আমার আর তোমার ভবিষ্যত্ সংসার? এইটা আমার ধীরে ধীরে তৈরি করা তোমার জন্য ছোট্ট একটি উপকার। মন ভালো হয়েছে এখন?”

সন্ধ্যা সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরল খুশিতে। সমুদ্র এক হাতে সন্ধ্যার চুলে হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো…..

—” তুমি কি জানো মন ভালো না থাকলে নামাজ পড়তে হয়, কুরআন তেলাওয়াত করতে হয়। আর বেশি বই পড়তে হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি মন ভালো হয়ে যায়। এখন থেকে মন ভালো করার উপায় হিসেবে এইগুলো করো কেমন?”

—” হুম।”

—” খুশি তো?”

—” ভীষণ খুশি। লাভ ইউ।”

—” লাভ ইউ টু আমার মিষ্টি পাখি।”

____________________

সন্ধার সময় শুভ্রতার কথা অনুযায়ী স্পন্দন শুভ্রতাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। শুভ্রতার কথা অনুযায়ী একটি নিরিবিলি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো তারা।

—” আমি কি আপনার চোখ বেঁধে দিতে পারি?”

শুভ্রতা কথা শুনে স্পন্দন একবার পুরো বাড়িটা চোখ বুলালো। ছোট ছোট চোখ করে বলল…..

—” খুন করার ইচ্ছা হলো নাকি তোর? দেখ আমি কিন্তু তোর ভাই হই। স্বামী হওয়ার আগে ভাই। ভাইকে খুন করা কিন্তু মহাপাপের থেকে মহাপাপ।”

—” ধ্যাত! যা বলছি তাই করো। সারপ্রাইজ আছে।”

সারপ্রাইজ নামক শব্দটি শুনে বেচারা স্পন্দন রাজি হয়ে গেল। শুভ্রতা আগে থেকে রমাল নিয়ে এসেছিল। স্পন্দনের চোখ বেঁধে দেওয়ার পর শুভ্রতা তাকে ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো।

বাসার ভিতরে এসে চোখ খুলার পর স্পন্দন যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। স্পন্দনের সামনের এক অপরূপ জায়গা স্থির হয়ে আছে।

শুভ্রতা হাতে একটি মোমবাতি এনে বলতে লাগলো…..

—” তুমি কি জানো স্পন্দন ভাইয়া, নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশই ভালোবাসার মুহূর্তকে আরও ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়ে, স্পেশাল কিছু করে তুলে।”

স্পন্দন অবাক চোখে চারপাশটা দেখছে। চারদিকে গোটা কয়েক ডিজাইন করা ক্যান্ডেল স্ট্যান্ড দিয়ে সাজানো। তাতে রাখা সুদৃশ্য মোমবাতি। ফুলদানি থেকে ভেসে আসছে টাটকা সুগন্ধি ফুল ঘ্রাণ তার উপর ফুল দিয়ে জায়গাটা আরো সুন্দর করে সাজানো।।

সাদা রংয়ের টেবিল ক্লথ উপর চোখ গেলো এবার স্পন্দনের। টেবিলের উপরে কিছু ড্রিংকস আর মিষ্টি জাতীয় খাবার। টেবিলের চারপাশে বিভিন্ন ডিজাইনের মোমবাতি ও গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়ানো।

স্পন্দন শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল….

—” হটাৎ এইগুলো কি করছিস? আচ্ছা মারার আগে কি আমাকে হার্ট অ্যাটাক করাতে চাচ্ছিস?”

—” ওই তোমার মুখে কি খারাপ কথা ছাড়া আর কোনো কথা নেই। সবসময় বাজে কথা।”

—-” বইন মদ গাঁজা সেবন করেছিস মনে হচ্ছে। আয় বাসায় যাই আর তোকে তেঁতুলের শরবত পান করাই দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

স্পন্দনের কথা শেষ হওয়ার আগেই শুভ্রতা স্পন্দনের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো। স্পন্দনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—” সিনেমা বা উপন্যাস সব সময় এই ভাবে ছেলেরা প্রপোজ করে কিন্তু আজ আমি তোমায় এইভাবে প্রপোজ করবো। তুমি খুব অবাক হচ্ছো তাই না কেন আমি এমন করছি? অবাক হওয়ার কিছু নেই মাফিন।”

স্পন্দন মাফিন নাম শুনে চোখ বন্ধ করে ফেলল। শুভ্রতা তখন আবারো বলল……

—” তোমার পরিচয় কিভাবে জানতে পেরেছি সেই ভেবে অবাক হচ্ছো তাই না? আসলে কি জানো তুমি খুব বোকা স্পন্দন ভাইয়া। সেদিন তুমি আমায় বুঝতে চেয়েছিলে আমি কি মাফিনের কথা শুনে বাসা থেকে পালিয়ে যাই নাকি পরিবারের কথা ভেবে অচেনা অজানা মানুষের ভালোবাসা ত্যাগ করি।কিন্তু দেখো, না বুঝে কি কাজটাই না করতে যাচ্ছিলাম। আচ্ছা এইসব বাদ এখন বলছি কিভাবে বুঝলাম তুমিই আমার সেই মাফিন। মনে আছে একবার তোমার হাতে ‘ক’ অক্ষর লেখা থেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কার নাম তখন তুমি এড়িয়ে যাও। আমাকে সেদিন নিয়ে আসার পর যখন আমায় রুমে বন্ধী করে রাখা হয়েছিল তখন কিন্তু তুমি আমায় বলতে, কিসের মাফিন কিসের কিসের কাপকেক। তখনি আমার মনে সন্দেহ হয় কিছুটা কজ তোমাকে আমি কাপকেক মাফিনের ব্যাপারে কিছুই বলিনি তুমি জানলে কিভাবে? এই জন্যইতো এত অভিনয় করেছি যেন তোমার সাথে আমার বিয়ে দেয় পরিবারের সম্মতি নিয়ে। আমি যদি পাগলামি না করতাম তাহলে এতদিনে অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যেত আমার।”

শুভ্রতা বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে দিলো। স্পন্দন এখন অবাক হওয়ার চরম পর্যায় চলে গিয়েছে আর মনে মনে ভাবছে এই ভুল কিভাবে করতে পারলো ও। শুভ্রতা একটা কালো রঙের ডাইরি স্পন্দনের সামনে ধরে বলল……

—” বাসর রাতে বউকে রেখে ব্যালকনিতে গিয়ে থেকেছ আর এইদিকে তোমার পুরো রুম সার্চ করে এই ডাইরি পাই। ডাইরির পাতা পড়ে সব কিছু একদম পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যায় আমার কাছে কিন্তু তোমার মুখ থেকে জানার জন্য এইসব প্ল্যান করি।”

স্পন্দন চোরের মত মাথায় হাত বুলাতে লাগল। নিজের কাজের বোকামোর জন্য খুব হাসি পাচ্ছে তার। এক প্রকার হাসি কন্ট্রোল করতে না পেরে হেসেই দিলো। শুভ্রতা তখন আবারো বলল…..

—” ওই বজ্জাজ আমার প্রপোজ অ্যাকসেপ্ট করবে নাকি তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো।”

স্পন্দন শুভ্রতার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল…..

—” অবশ্যই আপনার প্রপোজ অ্যাকসেপ্ট হবে মিস ওহ সরি মিসেস। আপনি তো এই স্পন্দনের মনের এক মাত্র রাণী। আমার চাঁদের ফিউচার আম্মু। আপনার কথা না রেখে পারা যায় তার উপর যেভাবে হুমকি দিচ্ছেন ভয়ে তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা।”

শুভ্রতা একটু উচু হয়ে স্পন্দনের কপালে চুমু দিয়ে বলল…..

—-” থানকু পাতা মাফিন। আমি কিন্তু তোমার সম্পর্কের মায়াজালের বাঁধন খুব সহজেই ধরে ফেলেছি কি বলো?”

—” একদম আমার বুদ্ধিমতী বউ।”

অনেকদিন পর দুটি ভালোবাসার মানুষ একত্রে হলো। তাদের মনের কথাগুলো একে অপরকে খুলে বলল। ভালোবাসার সীমাহীন আনন্দ নিয়ে তারা আজ নতুন এক সংসার তৈরি করার স্বপ্ন বুনছে।

“লুইস ম্যাকেন” বলেছেন….

ভালোবাসা হচ্ছে একধরনের মায়া যেখানে পুরুষ এক নারীকে অন্য নারী থেকে আলাদা করে দেখে আর নারী এক পুরুষকে অন্য পুরুষ থেকে আলাদা করে দেখে- লুইস ম্যাকেন।

সমাপ্ত……..

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা বড় করার ইচ্ছা ছিল আমার কিন্তু পড়ালেখার চাপে শেষ করতে বাধ্য হলাম। আমি কিন্তু মাফিন হিসেবে আগে মুগ্ধ কে ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু সামনে পরীক্ষা তাই শেষ করতে বাধ্য হলাম জানি ভালো হয় নাই। আজ রি-চেইক করা হয় নাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here