ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ৩৪+৩৫

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৩৪

এসির ঠাণ্ডা বাতাসেও কুলকুল করে ঘামছে পুতুল।গলাটা শুকিয়ে গেছে,কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে নিশ্বাস নিতে পারছে না মনে হচ্ছে। কি থেকে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না পুতুল।সে তো তিতিয়ার সাথে রিকশা করে প্রতীকদের বাসায় যাচ্ছিল কিন্তু কোথা থেকে এই লোক গুলো এসে তাদেরকে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছে।আশেপাশে তাকিয়ে তিতিয়াকে দেখার চেষ্টা করলো, কিন্তু পুরো ঘরটাতে দুজন মোটাসোটা লোক ছাড়া আর কেউ নেই।হাত দুটো ব্যাথায় টনটন করছে। অনেকক্ষণ চেয়ারের সাথে হাত-পা বাধা অবস্থায় বসে থাকাতে কোমড়েও ভীষণ ব্যাথা করছে।কাউকে যে ডাকবে তারও অবস্থা নেই মুখটাও বেধে রেখেছে।এই লোক গুলোর থেকে তো রিচার্ড ডেনিয়েল ভালো ছিল, তাকে যত্ন করে তুলে নিয়ে যেত। কিন্তু এরা কেন তাকে তুলে আনলো সেটাই তো বুঝতে পারছে না।এসব ভাবনার মাঝেই একজন সুট বুট পড়া জেন্টেলম্যান টাইপ লোক বাঁকা হাসি দিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
-“প্রিয়ন্তিকা জামান, ডটর অফ ক্যাপ্টেন মিহির জামান অর সে উডবি অফ ক্যাপ্টেন অবাক মাহবুব সূর্য?
উমম,,,,বাবা যেহেতু নাই ক্যাপ্টেনের অর্ধাঙ্গিনী বলায় বেটার।”
লোকটার কথায় পুতুল টলটলে চোখ নিয়ে লোকটার দিকে তাকায়।লোকটা তীক্ষ্ণ চোখ আর বাঁকা হাসি নিয়েই এক আঙুলে পুতুলের চোখের পানি নিয়ে আফসোসের সুরে বলল,
-” খুবই হতাশাজনক, স্পেশাল ফোর্সের ক্যাপ্টেনর অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে চোখ থেকে আগুন বেরিয়ে আসাটা উচিত মিস প্রিয়ন্তিকা জামান।”
বলে লোকটা মোটাসোটা লোক দুটোকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো।লোক দুটো কাছে আসতেই বলল,
-” এনি ফোনকলস ফ্রম ক্যাপ্টেন?”
-” নো স্যার।”
-” মেসেজ টা ঠিকঠাক সেন্ড করেছো তো?”
-” জি স্যার,দুই ঘন্টা হয়ে গেছে মেসেজ দিয়েছি বাট কোনো রিপ্লাই আসেনি।”
-” ক্যাপ্টেন সাহেব ব্যস্ত মানুষ মেসেজ নাও চেক করতে পারে।তোমারা বরং মেয়েটার ফোন নিয়ে এসো একটা লাইভ চ্যাট হয়ে যাক।”
লোকটার কথায় দুজনেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।আর লোকটা হেসে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” লেট’স সি ইউর হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ড মিস প্রিয়ন্তিকা।”

দিকবিদিকশুন্য হয়ে নওয়াজ মারওয়াকে পিটাচ্ছে সূর্য।রাগে মাথার শিরা উপশিরা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে তার।কিবরিয়া ফোন করে যখন জানাই পুতুল বা তিতিয়া কেউই প্রতীকের বাসায় আসেনি আর কারো ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েও যখন ওদের পাওয়া যায়নি তখনই সে বুঝেছে দিশিকাকে টোপ বানিয়ে ফয়সাল মারওয়া পুতুলকে তুলেছে।এতো বড়ো একটা পয়েন্ট কী করে ভুলে গেল সে ভেবেই নিজের চুল গুলো টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে সূর্যর। কল্লোল টেনে ধরে সূর্যকে থামিয়ে বলল
-“সূর্য একে মারলে পুতুলকে খুঁজে পাবো না আমরা, আমাদেরকে ফয়সাল কে খুঁজে বের করতে হব আগে।”
কল্লোলের কথায় সূর্য হাতের স্টিকটা ফেলে দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে।ফোন ওপেন করতেই দেখে পুতুলের নাম্বার থেকে দুটো মিসড কল উঠে আছে। তড়িঘড়ি করে কল ব্যাক করার আগেই আবারও কল আসে।সূর্য রিসিভ করতেই স্ক্রিনে ফয়সাল মারওয়ার মুখটা ভেসে উঠে।
-“ক্যাপ্টেন সূর্য, প্রখর সূর্য! আই মিসড ইউর হ্যান্ডসাম ফেস।উমম,,,,ইটস’ জাস্ট নট অনলি মি ( ফোনটা পুতুলের দিকে ধরে) ইটস’ শি, শি অলসো মিসড ইউ ক্যাপ্টেন। রাইট মিস প্রিয়ন্তিকা?”
পুতুলের অবস্থা দেখে সূর্য অস্থির হয়ে বলল,
-“পুতুল ডোন্ট বি এফরেইড এন্ড ডোন্ট ক্রাই।কিচ্ছু হবে না তোমার,আমি কিছু হতে দেব না।আ’ল বি দেয়ার সুন, পুতুল ডোন্ট ক্রাই ওকে।”
সূর্যের কথায় পুতুলের কান্নার ধারা আরো বেগবান হয়ে উঠে।
-“ইটস মাই টার্ন টু গিভ দ্যা ওর্ডারস নাউ,ক্যাপ্টেন।”
-” হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্টস?”
-” আমার ভাইকে চায় আজ রাত ১২ টার মধ্যে আমার সামনে চায়।ইউ কান্ট বি ঠু লেইট এন্ড ইউ কান্ট বি ঠু আর্লি,ক্যাপ্টেন।আদারওয়াইজ,,,,তোর প্রেমিকা চালান হয়ে যাবে যেকোনো দেশে।”
-” ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ হার ফয়সাল।ওর কোন ক্ষতি হলে তোদের দুই ভাইয়ের বডি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো আমি।”
-” উমম,,,,তোর এই তেজ দেখলে মন ভালো হয়ে যায় ক্যাপ্টেন।ইনবক্স চেক করে রাইট টাইমে আমার ভাইকে নিয়ে আয়।ডোন্ট বি লেইট।”

মিসেস মধুমিতা ফোন টা রাখতেই মি.মাহবুব চিন্তিত হয়ে বললেন,
-“কাজটা কী ঠিক করলে মধু? টেনশনের মতো বড় বোঝা্ কারো উপর চাপানো মোটেও ঠিক হতে পারে না। ”
-” আমি কোনো বোঝা্ চাপায় নি মাহবুব, আমি জানি অবাক পুতুলের কিচ্ছু হতে দেবে না তাই এটা কোনো টেনশন নই।”
– “টেনশন নাহ!!”
– “না টেনশন না,আমি মনে করি এটা প্রীতিকে ফিরিয়ে আনার একটা বিশেষ সুযোগ।”
বলেই উঠে দাঁড়ালেন মিসেস মধুমিতা। স্বামীকে শক্ত কথা শোনালেও মনে মনে ছেলের জন্য ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে।আর অস্থিরতা কমাতে তাকে এমুহূর্তে একা থাকতে হবে।
অন্যদিকে হন্তদন্ত হয়ে মিসেস প্রীতি নিজের রুমে ঢুকে ড্রয়ার ঘাটাঘাটি করে ভিসা,পাসপোর্ট সব বের করলেন। মিসেস শীথি বোনের পেছন পেছন দৌড়ে এসে বলল,
-” প্রীতি কী হয়েছে এমন পাগলের মতো করছিস কেন? কী হয়েছে বলবি তো? আর এই ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে বল?”
– ” আপা আমি দেশে যাবো, তুই দুলাভাইকে বল এখনি আমার টিকেট কাটার ব্যবস্থা করতে।”
-” দেশে যাবি!! কী হয়েছে প্রীতি? পুতুল ঠিক আছে তো, ওর কিছু হয়নি তো?”
বোনের কথায় মিসেস প্রীতি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-” কিচ্ছু ঠিক নেই আপা কিচ্ছু ঠিক নেই।আমার মেয়েটার কিছু হলে আমি মরে যাবো আপা, আমি মরে যাবো।তুই প্লিজ দুলাভাইকে বল আমাকে এখনি দেশে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে।”

ফয়সাল মারওয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালো।পুতুলের কাছে এসে মুখে লাগানো টেপ টা টেনে খুলে বলল,
-” টাইমস আপ,লেট’স প্লে আ গেইম মিস প্রিয়ন্তিকা।”
বলে পুতুলের বাঁধন খুলে মোটাসোটা লোক দুটোর দিকে তাকিয়ে বলল,
-” জ্যাকেটটা নিয়ে এসো।”
লোক দুটো দরজা খুলে বের হতেই পুতুল ফট করে একটা দৌড় লাগায় কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না তাই তার আগেই লোকটার হাতে ধরা পড়ে একটা বড়সড় থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে পড়ে।
লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” ডোন্ট ট্রায় টু বি স্মার্ট।”
বলে পুতুলের হাত দুটো এবার পিছনে মুড়ে বেধে দিয়ে বলল,
-” আই থিংক ক্যাপ্টেনের তোমার প্রয়োজন নেই।ইটস অলরেডি টুয়েলভ নাইন্টিন বাট হি ডিডেন্ট কাম।নো প্রবলেম,ইউ আর দ্যা পারফেক্ট গার্ল টু স্পেন্ড মাই নাইট উইথ।”
লোকটার কথায় পুতুল শব্দ করে কেঁদে দেয়।

টিম হিমালয় পনের মিনিটেরও বেশি হলো বিল্ডিংটায় ঢুকেছে। দোতলায় ছয়জনকে টপকে তিতিয়াকে উদ্ধার করেছে তারা।সামিরকে দিয়ে তিতিয়াকে বের করে বাকি চারজন নিরব পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তিন তলায়। তিন তলায় গিয়ে যে যার পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।সূর্য বাকি তিনজনকে তাদের পজিশনে থাকতে ইশারা দিয়ে নিজে এগিয়ে তিনজন কে শুট করে এগোতেই চোখে পড়ে ফয়সাল মারওয়াকে। ফয়সাল বাঁকা হেসে একহাতে গান নিয়ে দেয়ালের সাথে হেলে করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে।
-” আমার জীবনে সবথেকে প্যারাময় ক্যাপ্টেন তুই। তোর সাথে খেলতে যত মজা পায় অন্য কারো সাথে পায় না ক্যাপ্টেন।লিটারালি সে,তুই আমার সবথেকে পছন্দের ক্যাপ্টেন।”
সোজা হয়ে দাড়িয়ে সূর্যকে বলল,
-” নওয়াজ কোথায় ক্যাপ্টেন?”
-” হোয়ার ইজ প্রিয়ন্তিকা? আই ওয়ান্ট টু সি হার ফাস্ট।”
ফয়সাল মৃদু হেসে বলল,
-” উফফ,,,, তোর এই ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে মন শান্ত হয়ে যায়।(পিছনে তাকিয়ে বলল) দিদার, টেইক দ্যা গার্ল হেয়ার।”
দুজন লোক ফয়সাল মারওয়ার পিছনে পুতুলকে দাড় করাতেই সূর্যর চোখ যায় পুতুলের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা রক্তের দিকে।
-” ডিড ইউ হিট হার বাস্টার্ড?”
বলেই ফয়সালের দিকে গান তাক করে সূর্য।ফয়সাল গানসহ হাত উঁচু করে বলল,
-” ওহ, ওহ ক্যাপ্টেন ডোন্ট শুট।(পুতুলের সামনে থেকে সরে গিয়ে বলল) ইট উইল বি ব্লাস্ট ক্যাপ্টেন।”
পুতুলের গায়ে জড়ানো বিস্ফোরক সমেত জ্যাকেট চোখে পড়তেই দমে যায় সূর্য।কানের ব্লুটুথ চেপে বলল,
-” পিয়াস, টেইক দ্যা বাস্টার্ড হেয়ার।”
কথা শেষ হবার ত্রিশ সেকেন্ড পরেই পুরো বিল্ডিং অন্ধকার হয়ে যায়।

আলো জ্বলতেই পুতুল নিজেকে করিডোরের এককোণে বসা অবস্থায় আবিষ্কার করে।আশেপাশে সেই মোটাসোটা লোক গুলোর রক্তাক্ত শরীর দেখতে পায়।স্তম্ভিত ফিরে কারো কথায়।
-” পুতুল নড়াচড়া করো না প্লিজ।”
রক্তিমের কথায় পুতুল কোনরকম বলল,
-” আ আমি নড়ছি না তো।”
বলে এক হাত দিয়ে অন্যহাত ধরে কাঁপা-কাঁপি বন্ধ করার চেষ্টা করে।ঠিক তখনই নিজের হাতের উপর চেনা একটা হাত দেখে চোখ তুলে তাকায় পুতুল।
-” কিছু হবে না পুতুল, প্লিজ শান্ত হয়ে থাকো ভয় নেই।”
পুতুল টাইমার দেখে বলল,
-” আর উ উনিশ সেকেন্ড আছে, আ আপনারা চলে যান প্লিজ।”
-” কমপ্লিট বস, এখন জ্যাকেটটা খুলতে হবে।”
রক্তিমের কথায় সূর্য দ্রুত জ্যাকেটা খুলে ফেলে। পুতুল তখনও কাপছে।সূর্য পুতুলকে ধরে দাঁড় করাতেই পুতুলের ডান বাহু ফুঁড়ে একটা বুলেট চলে যায়।মুহূর্তেই সূর্যর বুক থেকেও গলগল করে রক্তের স্রোত গড়িয়ে যায়। পুতুল সূর্যর বুকের রক্তের দিকে তাকিয়েই হাত বাড়িয়ে সূর্যকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৩৫

চার বছর পরে,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,

পদার্থবিজ্ঞান ভবন থেকে বের হয়ে একটু এগিয়ে যেতেই গাড়ির হর্ণ শুনে এক আঙুলে চশমাটা চেপে চোখ তুলে তাকায় পুতুল।সাদা গাড়ির ভেতরে বসে একহাতে হর্ন দিয়ে অন্যহাত গাড়ির জানালা দিয়ে বের করে ইশারা করে নিজের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে অর্ক। পুতুল ভাবলেশহীন ভাবে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসলো।অর্ক মুখে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” এক্সাম কেমন হলো?”
-” ভালো।”
-” সকালে ব্রেকফাস্ট করেছিলি?”
-” হুম।”
-” কেমন আছিস?”
অর্কের প্রশ্নে পুতুল একপলক তার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলল,
-” ভালো।”
অর্ক কিছুক্ষণ পুতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-” আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করলি না তো?”
-” কেমন আছো?”
পুতুলের কথায় অর্ক মৃদু হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।ভেতর থেকে একটা বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।দমবন্ধ যন্ত্রণার সূক্ষ্ম উপস্থিতি টের পাচ্ছে অর্ক। চার বছর যাবত পুতুলের এরকম ভাবলেশহীন ব্যবহারে অনেকটা অভ্যস্থ হয়ে গেছে অর্ক। তারপরও কেন যে বুকটা চিনচিন সুরে ব্যাথার জানান দেয় বুঝতে পারে না অর্ক।বুঝতে পারে না বললে ভুল হবে,এটা যে না পাওয়ার ব্যাথা। চঞ্চল, জীবন্ত,উচ্ছল পুতুলকে না পাওয়ার ব্যাথা।তার প্রান উচ্ছল পুতুল বউকে না পাওয়ার ব্যাথা।

ভাবনার মাঝে ফোনের রিংটোনে পাশ ফিরে তাকায় অর্ক।পুতুল সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে গেছে।কিন্তু অর্ক জানে পুতুল নিজের মতো থাকার জন্য ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে আছে।পুতুলের থেকে চোখ সরিয়ে হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকাতেই দেখে স্ক্রিনে মাম্মা নামটা ভাসছে।অর্ক একটা নিশ্বাস ফেলে একহাতে পুতুলের ফোন টা নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।
-” খালামনি বলো।”
-” বেরিয়েছিস তোরা?”
-” হুম অনেকক্ষণ হলো,আর ঘন্টা খানেক লাগবে পৌঁছাতে।”
-” পুতুল কী ঘুমিয়ে গেছে?”
পুতুলের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,
-” হুম।”
-” আচ্ছা সাবধানে আয়।”
-” ঠিক আছে।”

চারতলা বিশিষ্ট ভবনের সামনে গাড়ি থামতেই নেমে দাড়ায় পুতুল আর অর্ক।পুরাতন মডেলের ভবন হলেও রং চং দেখে মনে হয় কয়েক বছর হয়েছে তৈরি।অবশ্য মনে হবারই কথা,অর্কর বাবা আর বড় চাচা তার দাদুর স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রতিবছরই বাড়িটার ঘষামাজায় মোটা অংকের টাকা ব্যয় করেন।চারতলা ভবনের তিনতলায় থাকে অর্কদের ফুল ফেমেলি আর বাকিটা ভাড়া দেওয়া থাকে।ফুল ফেমেলি বলতে বড় চাচা-চাচি, মা-বাবা, খালামনি আর সে।ভার্সিটি উঠে পুতুল হল-এ থাকে, মাঝে মাঝে আসে।আর বড় চাচার একমাত্র মেয়ে বছরে এক-দুবার দেশে বেড়াতে আসে।

বাসায় ঢুকতেই অর্কর বড় চাচার মেয়ে অর্পি পুতুলকে ধরে বলল,
-” এই প্রিয়ন্তি ফটাফট ফ্রেশ হয়ে এসো তো শপিং গুলো দেখাবো।তোমার সব পছন্দ হলো কিনা জানতে হবে না?”
পুতুল মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
-” তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ আপু।”
বলে সামনে এগিয়ে এসে মা,খালামনি আর অর্কর চাচি আতিয়া আহমেদের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায় পুতুল।
মিসেস প্রীতি উঠে কিচেন থেকে খাবার নিয়ে মেয়ের রুমে যান।পুতুল ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে মাম্মা খাবার প্লেট হাতে বসে আছে।পুতুলকে দেখে মিসেস প্রীতি হেসে বললেন,
-” আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
পুতুল বিনাবাক্য ব্যয়ে মায়ের হাতে যথাসম্ভব খেয়ে নিল।পানি খেয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” মাম্মা, আমি একটু ঘুমবো।তুমি যাওয়ার সময় দরজা লাগিয়ে দিয়ে যেও।”
-” এখন ঘুমলে উঠবি কখন?তাছাড়া রেডি হবিই বা কখন?”
-” বেশি না মাম্মা ত্রিশ মিনিট ঘুমবো,আর সন্ধ্যার আগে রেডি হলেই হলো।এখন তুমি দরজাটা বন্ধ করে যাও তো।”
মিসেস প্রীতি আর কথা না বাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যান।

ড্রয়িং রুমে মি.ও মিসেস মাহবুব কে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে যায় অর্ক।মি. ও মিসেস মাহবুব এর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে চোখ পড়ে মি.মাহবুবের পাশে বসে থাকা ছন্দর দিকে।অর্ক হেসে ছন্দকে বলল,
-” কি ব্যাপার টুকটুকি, মন খারাপ?”
-” আপনার মুখে টুকটুকি ডাকটা ভালো লাগছে না স্যার, আপনি বরং ছন্দ বলেই ডাকবেন আমাকে।”
কথাটা বলেই ছন্দ উঠে মিসেস প্রীতির কাছে চলে যায়।আর অর্ক অবাক হয়ে ছন্দর দিকে তাকিয়ে আছে।ছন্দর বর্তমান কলেজের ইংলিশ টিচার অর্ক।ছন্দ কলেজে ভর্তি হয়েছে পর্যন্ত ছন্দর মুখ থেকে স্যার ডাক শোনেনি অর্ক।ক্লাসে তো কখনো ডাকেই না ক্লাসের বাইরে দেখা হলেই অর্ক ভাইয়া বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।সেই মেয়ে তাকে বাসায় বসে স্যার ডাকছে ব্যাপারটা অবশ্যই বিস্ময়কর।তার উপর ছন্দ নিজেই তাকে টুকটুকি ডাকতে বলে ইভেন ক্লাসে পড়ানোর সময় তাকে ছন্দ বলে ডাকলে নিজেই মনে করিয়ে দেয় ছন্দ নই টুকটুকি।ব্যাপারটা বড়ই বিস্ময়কর।

নীল আর মেরুন রঙের কম্বিনেশনের শাড়ী গায়ে জড়িয়ে হালকা সাজুগুজু করে আয়নার সামনে বসে একধ্যানে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে পুতুল।বাম হাতে ভেজা গালটা মুছে লাল রাঙা ছোট্ট একটা টিপ কপালে পড়ে নেয় পুতুল।দরজাটা হালকা খুলে ড্রয়িং রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। বড় আব্বু, বড় আম্মু আর টুকটুকিকে একপলক দেখে ঘুরে বেলকনির দিকে পা বাড়ায় পুতুল।
ফোন হাতে হন্তদন্ত হয়ে পুতুলের রুমের দিকে যাচ্ছে অর্ক।তিতিয়া দুপুর থেকে পুতুলকে ফোনে পাচ্ছে না তাই বাধ্য হয়ে অর্ককে ফোন করেছে।রুমে ঢুকে পুতুলকে না পেয়ে তিতিয়াকে একটু পরে ফোন দেবে বলে ফোনটা রেখে দেয় অর্ক।রুম থেকে বের হবার আগেই পুতুলের কন্ঠ শুনে বেলকনির দিকে এগিয়ে যায় অর্ক।

কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালবাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন
তোমার কাছে খরস্রোতাও গতিহীন।
নতুন সকাল গুলো কপাল ছুঁলো তোমারই,
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারই,
শুধু আমারই…..
কেন রোদের মত হাসলে না
আমায় ভালবাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না।

জলে ভেজা,চোখবোজা
ঘুম খোঁজা ভোর
নিশানা তীর, স্মৃতির ভীড়
এলোমেলো ঘর’দোর।

মেঘ আসে এলো কিসে ছুয়ে দিলে সব চুপ
সেই মেঘবালিকার গল্প হোক
শহর জুড়ে বৃষ্টি হোক
রোদ্দুর হোক আজ শুধুই তার ডাকনাম
পাতা ভরা সব দু টুকরোরা
কালবৈশাখীর মত মুখচোরা
সব ভিজে যাক শুধু বেচে থাক অভিমান।

এতোটুকু গেয়েই ফুপিয়ে কেঁদে ধুপ করে বেলকনির মেঝেতে বসে পড়ে পুতুল।অর্ক এতোক্ষণ বেলকনির দরজায় দাঁড়িয়ে পুতুলের গান শুনছিল।কিন্তু পুতুলকে হঠাৎ ওভাবে কাঁদতে দেখে দৌড়ে কাছে যায় অর্ক।কারো ছোঁয়া পেয়ে চোখ তুলে তাকায় পুতুল।
পুতুলের টলটলে মায়াবী চোখের ভাষা পড়তে এক সেকেন্ডও লাগেনি অর্কর।দমবন্ধ অনুভূতি বুঝি একেই বলে।অর্ক জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে পুতুলের দুহাত ধরে রেগে বলল,
-” তুই কী আমাকে একটুও ভালোবাসতে পারিস না পুতুল।কেন পারিস না, কেন?”
বলেই পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে উঠে হনহন করে বেরিয়ে যায় অর্ক।

চলবে
(মেখলা দাসগুপ্তার কন্ঠে গানটা আগে ভালো করে শুনবেন,,,,, তারপর কমেন্ট করবেন।লেখিকার বিশেষ রিকুয়েষ্ট।)

বি.দ্র.- যাদের গল্পটা ড্রামা মনে হচ্ছে তারা ভাই সেই ড্রামা দেখে নিবেন।গল্প পড়াতো বাধ্যতামূলক করিনি আমি।দয়া করে ড্রামা ট্রামা দেখেন।
চলবে
সরি😣😣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here