শুধু_আমারই
পর্ব ১২ এবং শেষপর্ব
বিয়ের অনুষ্ঠানটা আগামী মাসের মাঝামাঝিতে করে ফেলি কি বলিস??
সায়ান মায়ের কোলে আরাম করে মাথা রেখে মোবাইল স্ক্রলিং করতে করতে বলে, করো!
—পিয়ার বাবা মাকে আবার ডাকি তাহলে ?
— হু ডাকো!
— পিয়াকে অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগে পাঠিয়ে দিবো।
— কোথায়??
— ওর বাবার বাড়ি!
সায়ান শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বলে, কেন??
— কেন আবার কি?? ওর অনুষ্ঠান তো ওখান থেকেই হবে।
— কেন একসাথে করি? উনাদের আমাদের কাছে নিয়ে আসি। তারপর সব অনুষ্ঠান এক সাথে করি।
— না রে, উনাদেরও তো ইচ্ছে আছে। আর ঐদিন বলল না, উনারা সব নিয়ম মতো অনুষ্ঠান করতে চায়!
—- আচ্ছা করুক! কিন্তু পিয়ার যেতে হবে কেন? সব তো ঢাকাতেই হবে। ও এখান থেকেই এটেণ্ড করবে।
— কি বলিস! এভাবে হয় নাকি! তাছাড়া মেয়েটা বিয়ের পর একদিনও বাপের বাড়ি গেল না, একবার বলেও নি। আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই?
— না, ও যেতে চাইলে আমি ওকে নিয়ে যাবো সারাদিন থাকুক কিন্তু আমি আবার নিয়ে চলে আসবো।
— তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কি নির্লজ্জের মতো কথা বলিস। দিনে গিয়ে দিনেই নিয়ে আসবি। এতো বউ পাগলও ভালো না।
— সায়ান আবার মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে, কি আর করা। বউ তো তুমিই পছন্দ করেছো আমার জন্য!
— হু! ভেবেছিলাম বউ এসে ছেলেটাকে বুদ্ধিমান বানাবে। এখন তো দেখি ছেলে আমার আরও বোকা হয়ে গেছো। যা সর! আমার কাজ আছে। আমি এখন তোর চাচার বাসায় যাবো।
— তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?? আম্মু আমি খেয়াল করেছি আমার বিয়ের পর থেকে তুমি আমাকে সময়ই দিতে চাও না।
— ডায়লগ মারতে শিখেছিস না!! ভাগ দুষ্ট — বলে মা হেসে সায়ানের কান টেনে দেন।
সায়ানও কান মলা খেয়ে মায়ের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে ঢুকে।
পিয়া শাওয়ার নিচ্ছে। সায়ান ডিভানে বসতেই সাইড টেবিলে রাখা একটা ডাইরীর দিকে চোখ যায়। খুলে দেখে এলোমেলো কিছু কথা লিখা, কিছু কবিতা লিখা।
পিয়া কবিতা লিখে!! এটা পিয়ার ডাইরী!!
***
আমি শাওয়ার থেকে বের হয়ে দেখি সায়ান আমার ডাইরী হাতে নিয়ে পড়ছে।
উফঃ! আমার নিজের উপরই রাগ হয় কেন ওটা ড্রয়ারে না রেখে উপরে রাখলাম। এটাতে আমার কত না অনুভূতির কথা লিখা! সায়ানকে নিয়ে দু তিনটে কবিতাও আছে।
না, না! সায়ান যদি পড়ে ফেলে! আজ সায়ানের হাতে আমি অস্ত্র তুলে দিয়েছি। সায়ান এখনই তার ব্যবহার করবে। আল্লাহ! আমার হাতের লেখা দেখেই তো আমার বারোটা বাজাবে। আমি রাগী সুরে বললাম সায়ান আমার ওটা ধরেছো কেন, তাও পারমিশন ছাড়া??
— পিয়া ম্যাম, আপনি তো দেখি সেইরকম গুনী ডাক্তার! আমি তো এটাকে প্রেসক্রিপশন ভেবেছিলাম। হাতের লেখার যে হাল! পড়ে দেখি মেডিসিনের নাম না ভালোবাসার কথা লিখা।
উফঃ আল্লাহ! যে ভয়টা পাচ্ছিলাম তাই হলো! দাও আমার ডাইরী, দাও! আমি কিন্তু প্রচণ্ড রাগ করবো।
— তোমার রাগ আমি লেবু কাচামরিচ ডলে প্রতিদিন খাই। বরং এ ডাইরী আমার কাছে একেবারে কাচ্চী বিরিয়ানি!
তোমার মনে এতো প্রেম, ভালোবাসা! ডাক্তার পিয়া ম্যাম তো দেখি সেরকম রোমান্টিক কবি !
সায়ান তার গজদাঁত বের করে হাসতে থাকে।
— সায়ান আমি তোমাকে খুন করবো! দাও আমার ডাইরী!
— আহা! থামো না, ভালোই তো লাগছে পড়তে। কি সুন্দর কবিতাগুলো, হাতের লিখাও কি সুন্দর! যেন কোন স্কুল পড়ুয়া মেয়ে কচি হাতে ইচরে পাকা কবিতা লিখেছে! খুব তো ভকর চকর মারো আবেগী রং-ঢং নাই, মুডি মানুষ! আর ডাইরীতে উথাল পাথাল আবেগ! বাহ!
আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। রাগে দুঃখে অপমানে নিজের চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে।
আমি আমার সম্মান বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাই। কিন্তু ছয়ফুট লম্বা মানুষের উঁচুতে ধরা হাত থেকে তা নিতে মোটামুটি আমি লাফাতে থাকি। ব্যর্থ হয়ে ওর পেটে কাতুকুতু দেই। আমার আকস্মিক হামলায় সায়ান হেসে ঝুঁকে পড়ে। ওমনি আমি ডাইরী কেড়ে নিয়ে ছুটতে গেলে সায়ান পিছন থেকে আমার কোমরে জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়।
আমি ডাইরী বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাই কিন্তু এক সময় খেয়াল করি যুদ্ধ আমি একাই করছি সায়ানের মনযোগ অন্যদিকে।
আমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সায়ান।
শরীরের জোর হঠাৎ যেন কমতে থাকে আমার। ক্রমেই অবশ হতে থাকি আমি। আমাকে জড়িয়ে সায়ান যেন তার বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলছে!
চুলের ফাঁকে ফাঁকে ওর গরম শ্বাস আমার হৃদয় স্পন্দন যেন বন্ধ করে দিচ্ছে। ওর স্পর্শে শিরশির কাঁপুনি উঠে আমার সারা গায়ে।
সায়ানের উষ্ণ ঠোঁট আমার কাঁধ স্পর্শ করে। তা ধীরে ধীরে গলা পর্যন্ত গড়িয়ে আসে।
আমি নিজেকে হারিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকাই। দুজন দুজনের বুকের ধুপধুপ শব্দ শুনতে পাই। কতক্ষণ জানি না!
দুহাতের তালুতে আমার মুখ নিয়ে আলতো করে ঠোঁটে চুমু খায় সায়ান।
ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ!
আমার সবকিছু যেন থেমে যায়! নীরব নিস্তব্ধ! শান্ত নদীর মতো শান্ত আমি!
এ অনুভূতির কি কোনো নাম আছে!
আমি আধো চোখে তাকাই। দুজনের চোখাচোখি হতেই আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায় সায়ান।
–পিয়া সরি! আমি আসলে এভাবে চাই নি!
সরি???? কানকে যেন বিশ্বাস হয় না!
আমার সমস্ত অনুভূতি মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যায়। এ আমি কি করলাম! সায়ান আমাকে সরি বলছে! আর আমি??
—সায়ান, আমার সামনে থেকে যাও। এক্ষুনি..
—-পিয়া আমাকে ব্যাখা করতে দাও। আমি আসলে…
আমি রাগে ফসফস করে বলি ব্যাখা??? কিসের ব্যাখা? তোমার চেহারা যেন আমি না দেখি। আর এক মুহুর্ত আমার সামনে থাকলে আমি তোমার মাথা ফাঁটিয়ে দিবো। জাস্ট গো…
সায়ান লম্বা পা ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
আমি ওভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
আয়নায় নিজের দিকে তাকাই।
আমি কি এই পিয়া! এতোটা নির্লজ্জ!
আমি কেন ওকে বাঁধা দিলাম না? সায়ান সরি বলল আর আমি বেহায়াই রয়ে গেলাম!
আমার হৃদয়ে শখ করে পোষা এতোদিনের পবিত্র ভালোবাসার এমন বাজে রূপ দিলাম আমি! সায়ান তো সরি বলে পার পেয়ে গেলো আর আমি ভেসে যাচ্ছিলাম সুখের ভেলায়! ছিঃ!
নিজের গালে থাপ্পড় দিতে লাগি। একটা, দুটো, অনেকগুলো। মনে হচ্ছে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেই। নিজেকে ঘেন্না লাগছে আমার।
কেন এতোটা নির্লজ্জ হলাম আমি! কেন আমি নিজেকে সঁপে দিলাম ওর কাছে? কেন আমি বিশ্বাস করলাম সে আমাকে ভালোবাসে!
বিশ্বাসে ভরসা রেখো — সায়ান যে কি বিশ্বাস করতে বলেছিলো আর আমি বোকা কি বিশ্বাস করে বসে ছিলাম?
আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। অনেকক্ষণ কাঁদি। আজ আমি একেবারে নিঃস্ব। আমার সকল অনুভূতি উজার করে আজ আমি নিঃস্ব।
না, আর না! এখানে এক মুহূর্ত না!
*****
সায়ান উদভ্রান্তের মতো রাস্তায় হাঁটছে। কিচ্ছু মাথায় আসছে না। আজ কেন এমন হলো? পিয়াতো প্রচন্ড ক্ষেপে আছে।
জীবনের প্রথম স্পর্শ, প্রথম আবেশ, প্রচণ্ড ভালোলাগার অনুভূতি এভাবে হঠাৎ কেন হলো! ও তো পিয়াকে এভাবে পেতে চায় নি।
কত ইচ্ছে করতো পিয়াকে কাছে টেনে প্রচণ্ড আদর করার। কিন্তু নিজের ভালোবাসার কথা বলার আগ পর্যন্ত নিজেকে সংযত করে চলছিলো সায়ান। আর আজ কিনা এমন হলো, কেন যে পিয়াকে এমন কাছে টেনে নিলো!
নিজের উপর কন্ট্রোলই নাই তোর, সায়ান! আর তুই কিনা পিয়াকে ভালোবাসা অনুভব করানোর দায়িত্ব নিয়েছিলি! পিয়ার ভালোবাসা জিততে গিয়ে এভাবে বিশ্বাস ভেঙে দিলি!
নিজের হেয়ালীপনার আজ চরম মূল্য দিতে হবে মনে হচ্ছে !!
সায়ানের জীবনে সানজানার যে কোনো স্থান নেই, সায়ান যে শুধুই পিয়াকে ভালোবাসে তা কেন সে আগে জানালো না পিয়াকে? পিয়া এখন কি ভাবছে সায়ানকে?
কেন যে আজাইরা রোমান্টিকতার ঢং মাথায় আসলো! কিভাবে যাবে এখন পিয়ার সামনে!
সব গুলিয়ে গেলো। ধুর!
সানজানার সাথে কথা বলা উচিত। কোনো একদিক অন্তত ঠিক হোক।
হুট করে বের হওয়ায় সায়ান মোবাইল নিতে ভুলে গেছে, মানিব্যাগও সাথে নেই। তারপরও সে রিকশা নিয়ে সানজানার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সানজানা বাসায় আছে কিনা তাও জানে না। দুদিন আগে চিটাগাং থেকে ফেরার কথা। সায়ান খবর নেয় নি, সানজানাও জানায় নি।
সানজানার বাসার নিচে নেমে সিকোরিটি গার্ডকে ভাড়া দিতে অনুরোধ করে সায়ান। গার্ড মুচকী হেসে ভাড়া দিয়ে দেয়।
সানজানা বাসাতেই ছিল।
সায়ান ড্রইংরুমে অপেক্ষা করার কিছুক্ষণেই সানজানা সামনে এসে দাঁড়ায়।
— সানজানা তোমার সাথে খুব জরুরী আলাপ ছিল। খুব জরুরী!
— সায়ান তুমি এতো বিধ্বস্ত হয়ে আছো কেন? আগে বসো!
সায়ান বসে ইতস্তত করতে থাকে। ঝোঁকের মাথায় চলে এসেছে। কিন্তু এখন কিভাবে শুরু করবে? সানজানার তো কোনো দোষ নেই কিভাবে সায়ান সানজানার মন ভাঙবে! সায়ান যে আজ সানজানার অপরাধী!
সানজানা পানি এগিয়ে দেয়। সায়ান ঢকঢক করে পানি গিলে আবার চুপ হয়ে থাকে। কথা গোছানোর চেষ্টা করে কিন্তু কি বলে শুরু করবে সে??
সানজানা সায়ানের মুখোমুখি বসে বলে সায়ান তুমি কিছু বলার আগে আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। তুমি একটু মন দিয়ে শুনো!
অস্থির চোখে তাকায় সায়ান।
—-আমি দুদিন আগে ঢাকায় ফিরেছি সায়ান, কিন্তু তোমাকে কল করি নি, তোমার সাথে দেখাও করতে চাই নি, কেন জানো??
সায়ান তাকিয়েই থাকে।
— সায়ান, তুমি খুব ভালো একটা ছেলে তা আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি। তুমি খুব ভালো জীবনসঙ্গী হবে, তোমার হাত ধরে যে কেউ শান্ত ঝিলের পাশে বসে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
একটু থেমে সানজানা বলে, আমি শান্ত ঝিল পছন্দ করি না সায়ান! আমি জীবনে এক্সাইটমেন্ট চাই, অস্থিরতা চাই। আমি চাই কেউ আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসুক, আমাকে পাওয়ার জন্য অস্থির থাকুক, এমন এমন পাগলামী করুক যেন আমিও তাকে ভালোবাসতে বাধ্য হই।
আমি যেরকম লাইফ পার্টনার চাই তুমি মোটেও সেরকম নও সায়ান।
একে অন্যের প্রতি কোনো টান নেই তারপরও দুজনই শুধু ভালো মানুষ বলেই কি সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত?
সায়ান, আমি দেশে ফেরার আগে থেকেই বুঝছিলাম আমাদের রিলেশনটা ঠিকমতো জমছে না। হ্যাঁ আমি ব্যস্ত ছিলাম, দেশের বাইরে ছিলাম কিন্তু যতদূরেই থাকি একটা টান, একটা শূন্যতা কিছু তো তোমার প্রতি অনুভব হওয়া উচিত ছিলো! কিন্তু এমন কিছুই তোমাকে নিয়ে অনুভব হয়নি আমার।
আমি আসলে অনেকটা হুট করেই তোমাকে ভালোবাসি বলে ফেলেছিলাম! অনেকটা ঝোঁকের মাথায়। তোমার আমার সে অনুভূতিটা হয়তো মিথ্যা ছিলো না।
একটু শ্বাস ফেলে সানজানা বলে, সায়ান তুমি আমার শুধুই ভালোলাগা ছিলে, ক্রাস ছিলো। তোমার আমার মাঝে আসলে কোনো ভালোবাসা তৈরীই হয়নি। আমরা একে অন্যকে সম্মান করেছি, উৎসাহ দিয়েছি, হয়তো ভালোও বেসেছি কিন্তু সে ভালোবাসায় কোনো মানসিক বন্ধন তৈরী হয় নি। আবারও বলছি সায়ান তুমি খুব ভালো ছেলে কিন্তু তুমি আমার টাইপ না। আমেরিকায় বসে বার বার ভাবছিলাম তোমাকে কিভাবে না করবো, কিভাবে কষ্ট দিবো। খুব গিল্ট ফিল হচ্ছিলো।
শেষে আমি সিদ্ধান্ত নেই আরেকবার না হয় চেষ্টা করি,নিজেকে সুযোগ দিয়ে, তোমাকে সুযোগ দিয়ে দেখি।
কিন্তু আমি বুঝে গেছি খামখা আমি নিজের মনের উপর জোর দিচ্ছি। আমার মনে সারা জাগানোর মতো কোন গুণ তোমার নেই, সায়ান! তুমি আমার কাছে খুব ভালো, ভদ্র, সুদর্শন কিন্তু খুব বেশি সাধারণ, বোরিং একটা পারসন!
সায়ান,আমি আর চাচ্ছিনা এ রিলেশনটা রান করতে।
অজান্তেই সায়ানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।
সানজানা চমকে উঠে বলে সায়ান, আমি তোমাকে অপমানজনক কথা বলছি আর তুমি হাসছো? সত্যি করে বলো তো তুমি কি বলতে এসেছিলে এখানে??
— আমার জীবনের কিছু সত্য, যা তোমার জানা দরকার। আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে এ ক’দিনে, সানজানা!
সানজানা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে তুমি হুট করে পিয়ার প্রেমে পড়ে গেছো, তাই তো??
সায়ান একটু অবাক হয়। তুমি কিভাবে বুঝলে??
— পিয়ার প্রতি তোমার অস্থিরতা দেখে। গাড়িতে বসে বার বার ব্যাক মিররে পিয়াকে দেখা, আমার কাছে বসেও পিয়ার জন্য অস্থির হওয়া আর পিয়ার সাথে অঘটনের পর তো তুমি রীতিমতো ভিন্ন মানুষ হয়ে গিয়েছিলে। কিভাবে গর্জে উঠেছিলে! পিয়ার প্রতি তুমি যে অধিকার দেখিয়েছো আমার প্রতি তুমি তা কখনোও দেখাও নি।
জানো সায়ান, তুমি পিয়াকে এতোটা ইমপোর্টেন্ট দেয়ায় আমার খুব হিংসা হচ্ছিলো। বাসায় ফিরে আমি কোনোভাবেই হিসেব মিলাতে পারছিলাম না। আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি পিয়াকে ভালোবাসো। কেমন যেন নিজেকে ঠকে যাওয়া লাগছিলো। কেন তুমি পিয়ার হবে এটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছিলো।
কিন্তু দুদিন পর আমার যেন হুশ আসে। মনে হয় এ আমি কি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি! আমি নিজেই যেখানে তোমাকে নিয়ে দ্বিধায় ভুগছি সেখানে তুমি পিয়ার প্রেমে পরায় আমি হিংসার বসবর্তী হয়ে এখন তোমাকে চাইছি!! এখন আমি তোমাকে জোর করে আবার আমার করে চাইলেও তুমি তো সেই বোরিং সায়ানই থাকবে, তাই না!
সুতরাং এতোদিন নিজেকে তোমার দোষী ভাবা এ আমি এখন নিজেকে মহান ভাবতে শুরু করেছি, তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে। খামখা তোমাকে নিয়ে টানাটানি করার চেয়ে আমার আরও অনেক কিছু করার আছে জীবনে।
পিয়া তোমার জীবনে এসেছে বলেই আমি তোমাকে মুক্ত করছি এ কথা তুমি ভেবো না। অধিকারের বেলা ওতোটা উদার আমি নই।
আজ হোক কাল আমাদের রিলেশন ভাঙ্গতোই, সেখানে পিয়া আসুক আর না আসুক।
সায়ান একটু বোকার মতো তাকিয়ে থাকে সানজানার দিকে। এভাবে পুরো ঘটনা যে উল্টে যাবে কে জানতো! কি বলা বা করা উচিত সায়ান বুঝছে না।
সানজানা বলে রিলাক্স সায়ান! একটু ঠিক হয়ে বসো! এখন আমাকে বলো, কবে থেকে তুমি পিয়ার প্রেমে পড়েছো?
সায়ান মাথা নিচু করে বলে আমি জানি না। তোমার সাথে ঐদিন দেখা করার সময়ও আমি জানতাম না আমি পিয়াকে ভালোবাসি।
— পিয়াও কি তোমাকে ভালোবাসে?
— সেটাও জানি না! মুখে কখনোও বলে নি তবে হয়তো বাসে।
— ও অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে! ওকে দেখে কিন্তু আমি বুঝিনি সেও তোমাকে ভালোবাসে কিনা। কিন্তু তুমি অনেক বোকা, সায়ান! তোমার ভালোবাসাটা মোটেও লুকাতে জানো না। আমিই তো ধরতে পারছিলাম আর তুমি নিজেই নিজেরটা জানতে না, অবাক মানুষ তুমি!
পিয়াকে বলেছো তুমি ওকে ভালোবাসো ??
— না! ও জানে আমি তোমার কাছে কমিটেড।
— তা আর থাকলে কই! ঠিকই তো পিয়ার প্রেমে পড়ে গেলে!
—আমি আসলে সরি সানজানা! আমি তোমার সাথে…
সানজানা হেসে বলে কে কাকে সরি বলবে?? আমি তো সরি ফিল করতে করতেই দেশে এসেছিলাম। ভালোই হলো সরি সরি কাটাকাটি।
সায়ান গলা শুকিয়ে বলে সানজানা আর একটা কথা তোমায় বলা হয়নি। পিয়া কিন্তু আমার কাজিন না। ও আমার…
— হোয়াটএভার সায়ান! পিয়া তোমার ভালোবাসা এটাই ওর পরিচয়।
হঠাৎ সানজানা হাত উপরে তুলে বলে, যাও তোমাকে মুক্ত করে দিলাম, সায়ান! তুমি নির্দ্বিধায় তোমার ভালোবাসার কথা জানাও পিয়াকে।
—সানজানা….
— কি??
—তুমি খুব ভালো মেয়ে সানজানা!
— তা আমি জানি। কিন্তু এতো ভালোগিরি দিয়ে মিডিয়া লাইনে কতদিন টিকতে পারবো সেটা বুঝছি না। অবশ্য বেশি ঝামেলা দেখলে সব ছেড়ে পালাবো। ওতো প্যারা নেওয়ার ইচ্ছা আমার নাই। শখ করে ঢুকেছি শখ চলে গেলেই বাই বাই করবো।
— না সানজানা, তুমি অনেক ভালো করবে। তুমি যেমন বুদ্ধিমতী তেমনি তোমার সততা অনেক দীপ্তিময়।
—- থ্যাংকিউ! এবার যাও। পিয়াকে নিয়ে ভালো থেকো সায়ান! আর আমার জন্য দোয়া কর যেন কোনো চার্মিং জীবনসঙ্গী পাই। তোমার মতো বোরিং নয়।
সায়ান হেসে বলে অবশ্যই দোয়া রইলো। তবে তার জন্য আমার একটু উপকার করতে হবে!
— কি??
— নিচের সিকিউরিটি গার্ড জুয়েল আমার কাছে আশি টাকা পায়। দয়া করে টাকাটা দিয়ে দিও।
সানজানা হেসে সায়ানকে বিদায় জানায়। সানজানার আজ খুব হালকা লাগছে। জোরে একটা শ্বাস ফেলে সানজানা বলে আপাতত কাজে মনোযোগ দেয়া যাক!
*****
সায়ান হাওয়ায় উড়ে উড়ে বাড়ি ফিরে। ঢুকতেই স্বপ্না বু সায়ানের হাত খপ করে ধরে উপরে টেনে নিয়ে যায়। উনি যেন সায়ানের অপেক্ষাতেই দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল।
— সায়ান, কোথায় ছিলে তুমি? মোবাইল নাও নি, গাড়ি সাথে নাও নি, তোমাকে কিভাবে পেতাম?? ভাগ্যিস ফুফু আজ বাসায় নেই, কিছু জানে না!
কি হয়েছে তোমার আর পিয়ার মাঝে বলো তো??
— কেন কি হয়েছে ??
— সর্বনাশ হয়েছে! পিয়া তো ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেছে। আমি এতো করে জিজ্ঞেস করলাম ,কোন উত্তর দিলো না। ফুফুর দোহাই দিলাম, বলল তুমি নাকি সব বুঝিয়ে বলবে। সায়ান বলো কি হয়েছে??
সায়ান বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। পিয়া বাসা ছেড়ে চলে যাবে সায়ান তা ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করে নি।
— সায়ান উত্তর দিচ্ছো না কেন?? ফুফু সন্ধ্যায় ফিরে আসবে। উনাকে কি উত্তর দিবো? কেন গেছে পিয়া?? সকালে তো সব ঠিকঠাক ছিল! সায়ান, তুমি জলদি পিয়াকে নিয়ে আসো!
সায়ান আনমনে বিড়বিড় করে বলে, পিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গেলো?? ও কি আমাকে বিশ্বাস করবে??
— কি আবোলতাবোল বলছো! তুমি ওকে ভালোবাসো না?? ভালোবাসার জোর খাটায়ে নিয়ে আসো। যা ঝগড়া ঘরে বসে করো লোক যেন না জানে।
সায়ান হঠাৎ অস্থির হয়ে বলে আমি যাই স্বপ্নাবু, পিয়াকে নিয়ে আসি!
— মোবাইল নিয়ে যাও। দাঁড়াও আমি এনে দেই।
— না থাক স্বপ্নাবু , আমিই নিচ্ছি।
সায়ান নিজের রুমে ঢুকে ধাক্কা খায়। পিয়া ওর কিচ্ছু রেখে যায় নি। কোনো চিহ্ন পর্যন্ত না। ড্রসিং টেবিলে ওর কসমেটিকস, চুড়ির বক্স এমন কি দেয়ালে মায়ের সাথে সায়ান আর পিয়ার ছবি টাঙানো ছিলো সেটাও নেই। বেডকাভার পর্যন্ত বদলে দিয়ে গেছে যেখানে পিয়ার ছোঁয়া ছিল ওর চুলের গন্ধ মিশে ছিল। সায়ানের বুক চিড়ে আর্তনাদ বের হয়— –এতোটা নিষ্ঠুর হলে!
******
পিয়া দুপুর থেকে রুমে বন্দি। পিয়ার মা অস্থির পায়চারি দিচ্ছে। পিয়ার বাবা আর প্রত্যুষ বাসায় নেই। দুজনই জমি সংক্রান্ত কাজে গ্রামে গেছে, ফিরবে রাতে। এসে যদি দেখে পিয়া ব্যাগ গুছিয়ে এভাবে একা চলে এসেছে উনি আবার না অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কতো না খুশি পিয়ার বাবা! শুধু বাবা কেন পিয়ার মাও কত খুশি। কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো যে একেবারে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরে এলো পিয়া?
পিয়া তো অবুঝ মেয়ে না যে অল্প ঝগড়া করেই রাগের মাথায় বাড়ি ছাড়বে। কি হয়েছে? নিশ্চয়ই বড় কোনো ঝামেলা।
পিয়া কিছুই বলে নি। শুধু বলল আমাকে একটু সময় দাও, সব খুলে বলবো। সায়ানের মাকেও ফোন দিতে মানা করলো। এদিকে সায়ানও ফোন ধরছে না। কি ঝামেলা হলো কিছুই বুঝছে না পিয়ার মা। হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই উৎকণ্ঠা নিয়ে দরজা খুলেন উনি।
দরজায় সায়ান দাঁড়ানো। বিধ্বস্ত চেহারা, শুকনো মুখ। তবুও পিয়ার মা খুশি হোন সায়ানকে দেখে। যাক কিছু তো জানা যাবে কি হয়েছে, কেন হয়েছে।
— মামনি, পিয়া এসেছে??
— হ্যাঁ বাবা! এসো ভেতরে এসো! কি হয়েছে বলো তো??
— আমি কি পিয়ার সাথে কথা বলতে পারি?
— অবশ্যই! এটা আবার জিগ্যেস করা লাগে!
পিয়ার দরজায় দুতিনবার টোকা দিলে, পিয়া শান্ত গলায় বলে আম্মু তুমি অস্থির হয়ো না। আমি ঠিক আছি।
— পিয়া দরজা খুল, মা!
সায়ান বলে মামনী আমি দেখছি। আপনি চিন্তা করেন না।
–ঠিক আছে বাবা! আমি ওদিকটায় আছি বলে উনি সায়ানকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে সরে আসেন। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকেন যেন ছেলেমেয়ে দুটোর সমঝোতা হয়।
— পিয়া আমি সায়ান! দরজা খুলো।
সায়ান আসবে তা পিয়া জানতো। নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নেয় সে।
আজ এখানেই সব শেষ করতে হবে। কোনোভাবেই আর পিয়া ওবাড়ি যাবে না। অনেক হয়েছে সংসার সংসার খেলা। আজ না থামলে খেলা চলতেই থাকবে। পিয়া দরজা খুললে সায়ান ভেতরে ঢুকে দরজা ভিজিয়ে দেয়।
—পিয়া তুমি চলে এলে কেন??
— একদিন তো আসতেই হতো!
— তাই বলে এভাবে! আমাকে না বলে!
— তোমাকে পাবো কোথায়? তুমি তো বাসাতেই ছিলে না।
— তুমিই তো আমাকে বের করে দিলে। মাথা ফাঁটিয়ে দিবে বললে। আমাকে তো কিছু বলার সুযোগই দিলে না।
— কি সুযোগ দিবো? সরি তো বলেছোই?
—তুমি রেগে আছো পিয়া।
— আমি মোটেও রেগে নেই। শান্ত, স্থির আছি।
— পিয়া, আসলে সকালের ওই সিচুয়েশনটা আমি.. আসলে ওভাবে…
—সায়ান তোমার কাছে সবকিছু কত সোজা, না? আমাকে কাছে টানবে, চুমু খাবে তারপর সরি বলবে।
—- পিয়া প্লিজ, এরকম কিছুই না।
—- সত্যি কথা বলো তো! কোথায় ছিলে এতোক্ষণ??
— সানজানার কাছে গিয়েছিলাম।
— সেটাই! তোমার আমাকেও চাই সানজানাকেও চাই। তোমাকে বিশ্বাস করাই ভুল হয়েছে।
— পিয়া পুরো কথা না শুনে কেনো কথা বলছো??
— কারণ আমি রেগে আছি। তোমাকে বেড়িয়ে যেতে বললাম আর ওমনি তুমি সুরসুরিয়ে সানজানার কাছে চলে গেলে?
— তুমি আগে বাসায় চলো! আমি তোমাকে সব বলছি। আমি আসলেই একটা বোকা.. আমি বিরাট ভুল করেছি তোমাকে না বলে। সব গুলিয়ে এখন আমি সরি বললেও কাজ হবে না জানি কিন্তু… ..
—জানো সায়ান, তোমাকে বিয়ে করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল না। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসা। বেহায়ার মতো ভালোবাসা। আমি আস্ত একটা গাধী মেয়ে! আমি বার বার চেয়েছি আমি তোমাকে যেভাবে ভালোবাসি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
কিন্তু আমি ভুল করেছি। চরম ভুল! আমি বেহায়ার মতো তোমার ভালোবাসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি বার বার হিংসা করেছি সানজানাকে। ভালোমানুষের ভং ধরেছি। নিজেকে নির্লোজ্জ প্রমাণ….
আর কিছু বলার আগেই সায়ান পিয়াকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
পিয়া স্তম্ভিত হয়ে যায় । ওর হুশ আসতে একটু সময় লাগে। ওদিকে সায়ান মিটমিট হাসছে।
তোতলাতে তোতলাতে পিয়া বলে এ… এটা কি হলো???
— তুমি আজ একটু বেশি কথা বলছো তাই তোমার মুখ বন্ধ করে দিলাম।
— ম…মানে??
— মানে তুমি আমাকে ভালোবাসো এ কথা শুনার পর আর অন্য কোনো কথা শুনতে ইচ্ছা করছিলো না। তাই..
— কিন্তু আমি…
— কিন্তু আমি কি?? তুমি আমাকে ভালোবাসো এটাই সত্য। তারপরে আর কোন কিন্তু নাই। একবার কি বলা যেতো না আমাকে তুমি এতো ভালোবাসো!!
— কেন বলবো! আমাকে কে ভালোবাসে!
— তোমার সামনে দাড়ানো এ বোকা হোদ্দটা। তোমার চোখে পড়ে না? এই ছেলেটা যে তোমাকে ছাড়া অচল, একেবারে শূন্য তা কি বুঝো না? দুনিয়ার সবাই বুঝে তুমি বুঝো না!
— কি করে বুঝবো! কখনোও তো বলোনি।
—অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু রোমান্টিক ভাব আনতে গিয়ে ভং ধরেছিলাম আর আজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সব গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছি। তাছাড়া তোমারও দোষ আছে! না হয় একটু কাছেই এসেছিলাম যে মেজাজ দেখালে!
— আমি মেজাজ দেখিয়েছি! সুন্দর মুহূর্ত কিভাবে নষ্ট করতে হয় তাতো তোমার কাছ থেকে শেখা উচিত। তুমি তখন সরি কেন বললে? সানজানার জন্য অনুশোচনা হচ্ছিল? আমার পর সানজানার কাছে ছুটে গিয়েছিল কেনো? ওকেও চুমু খেতে ইচ্ছে হয়েছিল?
— চুপ! একদম চুপ! নইলে আবার মুখ বন্ধ করে দিবো। হ্যাঁ, তোমার কাছ থেকে ছুটে আমি ওর কাছেই গিয়েছিলাম। তোমার ভয়েই গিয়েছিলাম। এক সাথে দুই নারীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা খারাপ চরিত্রের লক্ষণ। তাই না, বলো!!
তাই যার পাশে বসে হৃদয়ে ঝড় উঠে না, মন আনচান করে না তাকে বলতে গিয়েছিলাম সখী আমি তোমার নই, কখনো হৃদয়ে ছিলে না।
— কি কাব্যিকতা শুরু করেছো?? আসল কথা বলো কি বলেছো ??
—বীরের বেশে গিয়েছিলাম আমার সত্যিকারের ভালোবাসার নাম বলতে কিন্তু সানজানা আমাকে চরম অপমান করে তাড়িয়ে দিলো। ধরনীতে মনে হয় আমিই প্রথম ব্যক্তি যে চরম অপমানিত হওয়ার পরও খুশিতে কেঁদেছে।
— সানজানা অপমান করলো??
— হ্যাঁ। সেই রকম অপমান। এমন অপমান আমি জীবনেও হইনি। ও বলেছে আমাকে দেখে নাকি ওর মনে কোনো এক্সসাইটমেন্ট হয় না, হার্টবিট বাড়ে না, মনে আকু পাকু হয় না, আমি নাকি শান্ত ঝিলের মতো ভোন্দা মানুষ। আমার মতো বোরিং মানুষ তোমার মতো বোরিং মেয়েই ডিজার্ভ করে।
— কি আমি বোরিং??
— আমি বলি নি সানজানা বলেছে।
— হয়েছে ওটা সানজানা বলে নি তুমিই বলছো!
আমাকে তোমার বোরিং মনে হয়! আমি তোমাকে নিয়ে কত রোমান্টিক কবিতা লিখেছি জানো? তাছাড়া….
পিয়া খেয়ালই করে নি সায়ান কখন ওকে কোমরে জড়িয়ে আবার কাছে টেনে এনেছে।
পিয়া বলতে থাকে তাছাড়া তোমাকে কল্পনার ভেলায় চড়িয়ে আমি শিলং ঘুরাই নি, বৃষ্টিতে ভিজাই নি?এমন কজনা পারে বলো?
পিয়ার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে সায়ান বলে, হু তোমার সাথে শিলং গিয়ে আমি কি কাণ্ড ঘটিয়েছি তাতো আর জানো না!
— কি করে জানবো! বলেছো তুমি? কি আর ঘটাবে নিশ্চয়ই হাঁচি কাশি দিয়ে নাক চোখ লাল করেছো ! এছাড়া আর কি? রোমান্টিকতা তো আর তুমি পারবে না।
সানজানা তোমাকে বোরিং বলে ডাম্প করেছে ভালো করেছে। আসলেই তো তুমি কিছু পারো না।
— তাই, আমি কি পারি না ??
সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে পিয়া চুপ মেরে যায়। কখন সে সায়ানের বাহুতে এমন আবদ্ধ হয়ে আছে খেয়ালই করে নি।
সায়ান সরাসরি তাকিয়ে বলে, বলো আমি কি পারিনা??
পিয়া উত্তর দেয় না। কি বলবে সে? এতো কাছে সায়ান,উল্টাপাল্টা কিছু বললেই যদি আবার মুখ বন্ধ করে দেয়!
যে ভয়টা পেয়েছিলো তা-ই হলো!
সায়ান পিয়াকে আরও কাছে টেনে কষে একটা চুমু খায়। তারপর কানে ফিসফিস করে বলে সঠিক মানুষের অপেক্ষায় ছিলাম এতোদিন, তাই তো কিছু করি নি!
এবার পিয়ার লজ্জা পাওয়া শুরু। সে কি থাকবে না পালিয়ে যাবে বুঝছে না। কিন্তু সায়ানের বুকে লেপ্টে থাকতে বেশ ভালো লাগছে। ছেলেটার বুকে এতো মিষ্টি গন্ধ কেন??
পিয়ার নাকে নাক ঘষে সায়ান বলে চলো শিলং ঘুরে আসি পিয়া! ঔদিন অনেক কিছু করার বাকী রয়ে গেছে! অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করা প্রয়োজন!
সমাপ্ত।।
লেখকঃ ঝিনুক চৌধুরী।।
“শুধু আমারই “গল্পের মাধ্যমে মনে হলো যেন আমি- আপনারা সবাই মিলে একটা ভেলায় চড়ে সুন্দর সফর শেষ করলাম।
সবার এতো ভালোবাসা পাবো মোটেও আশা করিনি। এ যেন অল্প প্রস্তুতি নিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়া। দীর্ঘ বিশ দিন যেন হাওয়ায় ভেসেছি আমি।
অধিকারের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো আপনাদের সাথে। আপু আজই পর্বটা দেন, বড় করে দেন, বারোটা বেজে গেছে এখনই দেন, সায়ানরে বেশি করে ডলা দেন—কমেন্টে, ম্যাসেঞ্জারে এমন অধিকারগুলো দারুন মিস করবো।
একটা প্রেমের গল্প লিখে রেখেছি। কিন্তু এ গল্পের কাছে ওটা যেন পানশে লাউয়ের তরকারী।
তারপরও লিখেছি যখন একসময় দিবো। আকাশ জুড়ে মেঘ করলে, শহর ভিজলে তখন। হয়তো বর্ষাকালে হয়তো তার আগে।
ভালো থাকবেন সবাই। আজ যেহেতু আর নেক্সট বা অপেক্ষা নেই সব পাঠকদের কাছে চাওয়া গল্প নিয়ে একটা করে অনুভূতি লিখে যাবেন। আমিও কমেন্টগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
ভালো থাকবেন সবাই।