শুধু আমারই পর্ব ৯

শুধু_আমারই

সকালে সায়ানের মোবাইল থেমে থেমে কিছুক্ষণ বাদেই ভাইব্রেট দিচ্ছে। আজ শুক্রবার বলে সায়ান একটু বেশিই ঘুমাবে। আমি কয়েকবার খেয়াল করে নিজেই এগিয়ে মোবাইলটা হাতে নেই। যদি কোনো দরকারী কল হয়ে থাকে। সাথে সাথে আবার কল আসতেই আমার ভেতরটা ধক করে উঠে। “সানজানা”।
আমার জীবনের চরম সত্য নাম। আমি খুব শান্তভাবে সায়ানকে ডেকে তুলি।
সায়ান চোখ খুলে আমাকে দেখে হাসি মুখে বলে কি ব্যাপার পিয়া, এতো আদর করে ডাকছো? কোনো সুখবর নাকি??

আমি মোবাইল হাতে ধরিয়ে বলি সানজানা কখন থেকে তোমাকে কল করছে। ধরো!
রুমে আর দাঁড়াই না আমি। এখানে সায়ান আর সানজানার মাঝে আমার কোনো ভূমিকা নেই।

*****
মোবাইল হাতে মুখ কালো করে বসে আছে সায়ান। ফোন ধরতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। এতোদিন পর সানজানার মনে পড়েছে সায়ানকে! কিন্তু সায়ানের মনে কোন অভিমানও জমছে না। কেমন এক ভোঁতা অনুভূতি কোন অভিমান নেই, অনুযোগ নেই, কোনো অধিকার নেই, ভালোলাগাও নেই।
ফোন ধরে হ্যালো বলতেই সানজানা বলে উঠে “সারপ্রাইজ “! গেস করো আমি কোথায়??
— কোথায়??
— অফকোর্স ঢাকায়। গতকাল এসেছি। সকাল থেকে কতবার তোমাকে কল করছি। মহাশয় কি এখন উঠলেন নাকি??
— হু।
— হু কি?? কোনো আনন্দ নেই কেন গলায়? আজ বিকালে তোমার সাথে দেখা হচ্ছে। বুঝলে!
— আজ??
— মানে কি? মুখ পাংশু করে আজ বলছো কেন? তোমার ইচ্ছে নেই বুঝি? দেখো আগামীকাল আমি আবার চিটাগাং যাচ্ছি। তাই আজই দেখা করবো। তুমি ভেবে দেখেছো আমদের রিলেশন হওয়ার পর ঠিকমতো ডেটিংই করতে পারলাম না। অবশ্য সব দোষ তোমার। তোমার সাথে এফেয়ারের পর থেকেই আমি একটার পর একটা বড় বড় অফার পেতে থাকি। ইউ আর মাই লাকি চার্ম! বুঝলেন মহাশয়! আপনার পরশে আমি মহান হয়েছি অথচ আপনিই কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন।

— না সানজানা! তুমি খুবই টেলেন্টেড। তুমি তোমার গুনে এতোদূর গেছো। কোনো লাকী চার্মের কারণে নয়।
—সায়ান তুমি খুব সাপোর্টিভ একটা ছেলে। তুমি কখনো অধিকার ফলাও নি কিন্তু উৎসাহ দিয়েছো বার বার। এ ব্যাপারটা আমি সবসময় ফিল করি।
তোমাকে আমার ঠিকমতো সময় দেয়া হয় নি তাই এবার প্ল্যান করেছি সব সুদ সমেত ফেরত দিবো। অনেক অনেক সময় দিবো সো…. আজ দেখা হচ্ছে ওকে?? তুমি দুপুরে আমার ফ্ল্যাটে চলে এসো। তারপর কোথাও একসাথে ঘুরতে যাবো। ওকে ওকে!!! বাই!! লাভ ইউ!!

সায়ান ভোঁতা মুখে বিছানায় বসে থাকে। পিয়ার সামনে যেতে তার খুব অপরাধী লাগছে। কিন্তু নিজেকে অপরাধী ভাবার তো কোনো কারণ নাই। পিয়া তো প্রথম থেকেই জানে সানজানার কথা। বরং সানজানা কিছুই জানে না পিয়া সম্পর্কে। সানজানা এও জানে না সায়ানের বিয়ে হয়ে গেছে। অপরাধী তো সে সানজানার কাছে। কিন্তু মন খারাপ করছে পিয়ার জন্য। কেমন এক পরিস্থিতি! সায়ানের কিছুই ভালো লাগছেনা।

****

সকালের নাস্তা পর্বে আমি সায়ানের সাথে সহজ হতে পারছিলাম না। সায়ান নিজেও যেন কেমন মুখ লুকিয়ে চলছিল। মা তো জিজ্ঞেসই করে বসলেন তোদের কি এখনও মান অভিমান চলছে??
আমি সায়ান এক সাথে চেঁচিয়ে উঠি –না… না…!
আমি তরিঘড়ি বলি সায়ান তুমি কেন গম্ভীর হয়ে আছো? দেখো, মা ভাবছেন আমাদের ঝগড়া চলছে।

সায়ান বলে সকাল সকাল এতো কথা আমি কোথায় পাবো আম্মু??
আমি অযথা হাসতে লাগলাম যেন সায়ান খুব হাসির কথা বলছে।
সায়ানও সাথে যোগ দিয়ে হাসে। মা আমাদের অদক্ষ অভিনয় হয়তো ধরতে পেরেছেন হয়তো না কিন্তু কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে উঠেন।

আমি খুব দরকারী কথা বলার ভঙ্গিতে সায়ানকে আস্তে জিজ্ঞেস করি কি আলাপ হয়েছে তোমার সানজানা গ্রুপের সাথে??
সায়ান একটু অবাক হয়ে তাকায়। আমার ইশারা বুঝে বলে আজ দূপুরে দেখা করতে বলেছে।

দূপুর অবদি আমি সায়ানের সামনে যাই না। সায়ানও আমাকে খোঁজে না। এটাই হওয়া উচিত। আমার আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে। তারপর একসময় চলে যেতে হবে। তা-ও হাসি মুখে।

***★**

সায়ানের কিছুই ভালো লাগছে না। একদিকে সানজানা আজ অপেক্ষা করবে অন্যদিকে পিয়ার অন্ধকার মুখ সায়ানকে ব্যথিত করছে। মন চাচ্ছে পিয়ার কাছে গিয়ে বলতে আমি আজ কোথাও যাবো না।
কিন্তু সানজানাকে কি বলবে সে ?? ধুর…

সায়ান খুব অনিচ্ছায় রেডি হয়ে নিচে নেমে এলে মা জিজ্ঞেস করেন কিরে, ছুটির দিনে এখন কোথায় যাচ্ছিস??
সায়ানটাও বোকার মতো ব্যবসার অযুহাত না দিয়ে উত্তর দেয় বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

—কেন বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার দরকার কি?? কাল না পিয়াকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইলি, আজ ওকে নিয়ে যা!! কি সারাক্ষণ বন্ধু বন্ধু করিস! এখন বিয়ে হয়েছে। কদিন বউ নিয়ে ঘুরাঘুরি কর।

আমি সাথে সাথে বলি না না মা, ও যাচ্ছে যাক না! আমি তো অন্যসময়ও বের হতে পারবো।
— না আজ ওর সাথে ঘুরতে যাও। অন্যসময় আবার যাবে।
— মা আজই কেন?? আমি আরেকদিন যাব। সায়ান তুমি তোমার বন্ধুর সাথে দেখা করো ,যাও।

আমাকে পুরো আহাম্মক বানিয়ে সায়ান বলে উঠে, না পিয়া তুমিও চলো।

আমি থ মেরে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলে এই ছেলে! সে তার বউ নিয়ে যাবে গার্লফ্রেণ্ডের সামনে??

মা বলেন কি পিয়া তুমি হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন??

— মা আমি.. আমি…
— কোনো আমি আমি না, যাও।
— আমি… আমি… আমার অনেক মাথা ধরেছে। আমি আজ পারবো না যেতে।.
— অযথা মিথ্যা বলবে না তো পিয়া! এতোক্ষণ তো ঠিকই ছিলে। হঠাৎ মাথা ধরে গেলো? তুমি মাথা ব্যাথা নিয়েই বের হও। একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিও।

আমি মুখ অন্ধকার করে বলি, তাহলে আমি শাড়ি বদলে আসি।
— কেন? বদলাতে হবে কেন? এভাবেই তো সুন্দর পরিপাটি লাগছে।
— না মা। আজ কামিজ পরে বের হই। প্রতিদিনই তো শাড়ি পরি। সায়ান রুমে আসো তো একটু… বলে আমি সায়ানকে চোখে ইশারা করি।

মা বলেন ইশারা করছো কেন? কি হয়েছে?

আমি থতমত খেয়ে বলি না.. ম.. আসলে.. ইয়ে.. মান… আমার জামার হুক লাগানোর জন্য ওর হেল্প দরকার।

সায়ান অবাক হয়ে বলে আমি লাগাবো?

উফ আমি এ গাধাটাকে নিয়ে মহা মুসকিলে পড়েছি। দাঁত কিটমিট করে বলি, তো অন্য কেউ লাগাবে? আসো বলছি!
সায়ান মনে হয় এখন বুঝতে পেরেছে। কিছু না বলে চুপচাপ আমার পিছে পিছে রুমে ঢুকে।

বকা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ভঙ্গিতে সায়ান আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
আমি রাগে ফসফস করে বলি এটা কি হলো?

— আমার কি বা করার ছিল??
— তোমার কখনোই কিছু করার থাকে না। বিয়ে করার সময়ও তোমার কিছু করার ছিলো না। এখনও তোমার কিছু করার নেই। তুমি এখন তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে সাথে কাবিন করা বউ নিয়ে? তোমার মাথা ঠিক আছে?

— পিয়া তুমি অনেক রেগে যাচ্ছো।

— রাগ করার যথেষ্ট কারণ কি নেই? তোমার লাইফের সবকিছুতেই কেন তুমি আমাকে ইনভল্ব কর? তুমি যখন সানজানাকে বিয়ে করবে তখন সাক্ষীও কি আমাকেই রাখবে?? প্লিজ গিভ মি স্পেস, সায়ান! আমার দম বন্ধ লাগে!

সায়ান আহত চোখে আমার দিকে তাকায়।

— তুমি আমাকে কি পরিচয় দিবে বলো তো??

সায়ানকে দেখে মনে হচ্ছে পড়া না পারার অপরাধে শিক্ষকের কাছে বকা খাচ্ছে। কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন??

সায়ান বলে থাক আজ তাহলে বেরই হবো না।

উফঃ এ ছেলেটার কি নিজেস্ব কোনো মতামত নেই। নিজে থেকে কিছুই কি চিন্তা করতে পারে না।
–সায়ান তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো, আমার বকা খেয়ে এখন যাবে না কেন বলছো?

— সত্যি কথা কি আমার এতো ঝামেলা করে যেতে ইচ্ছা করছে না। বাদ দাও! এতো প্যারা ভালো লাগে না জীবনে।

ওর চেহারা দেখে আবার আমার সেই চরাচরিত মায়া লাগে। উফঃ আল্লাহ, এ ছেলেটার উপর কি আমি কোনোদিন রাগ করতে পারবো না?
— আচ্ছা চল। আমি যাচ্ছি। তুমি সানজানাকে বলবে আমি তোমার কাজিন। ঢাকা ঘুরতে এসেছি। পারবে বলতে??

—হু। এবার চলো।

আমি শাড়ি বদলে ইচ্ছে করে কামিজ পরেছি। শাড়ি পরে সায়ানের সাথে বের হলে সানজানা অবশ্যই কিছু একটা আঁচ করে ফেলবে।

সায়ান খুব ফুরফুরে মনে গাড়িতে স্টার্ট দিলো। যেন টেনশনের সকল দায় ভার আমার। আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। আমি কি করছি আমি নিজেও জানি না। সায়ান আজ সানজানার সাথে দেখা করবে এটা যেমন আমি সহ্য করতে পারছি না তেমনি সায়ান আর সানজানার মাঝে আমি তৃতীয় পক্ষ হয়ে বসে থাকবো এটাও বিরক্তিকর লাগছে।
একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করলাম আমি নিজেকে খুব বুদ্ধিমতী আর সায়ানকে বোকা ভাবি। কিন্তু কেন জানি আমি এ বোকা ছেলেটার ইচ্ছে মতোই চলি। ও আমাকে যেভাবে নাচায় আমি যতই ভাব দেখাইনা কেন ওর ইশারাতেই নাচি।

গাড়িতে উঠে বললাম তোমার বিরক্ত লাগছে না আমাকে তোমার সাথে নিয়ে?
সায়ান বলল, কেন জানি লাগছে না। বরং ভালোই লাগছে।
— সায়ান তুমি তোমার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছো তাও আবার এতো দিন পর। সেখানে আমি হলাম কাবাব মে হাড্ডি। আমাকে তুমি কোথাও নামিয়ে দিয়ে যাও তো। আমার নিজেরই বিরক্ত লাগছে।
— আহা এতো ভেবো না তো, চলো।
—- শুনো, সানজানা এটা কোনোভাবেই ভালোমনে নিবে না। আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হলে কখনোই ডেটের মাঝে হাড্ডি নিয়ে ঘুরা পছন্দ করতাম না।

গাড়ি চালাতে চালাতে সায়ান হেসে বলে তাই বুঝি??তুমি তোমার হাসবেন্ডকে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে দিচ্ছো কিন্তু বয়ফেন্ডের সাথে হাড্ডি সহ ডেটে যাবে না! অদ্ভুত মেয়ে তুমি!

আমি মুখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি। আমি কি বলবো? আসলেই তো অদ্ভুত মানুষ আমি! আমি কেন এমন করছি আমি নিজেও জানি না। কেন আমি সায়ানকে ফেলে যেতে পারি না। কেন আমি আগের আমলের গল্প সিনামার মতো গাধী সেজে নিজের জামাইকে অন্যের কাছে তুলে দিচ্ছি। আমার পারসোনালিটি নিয়ে আমার নিজেরও অবাক লাগে। এতো হেংলা কেন আমি!! কেনই বা ওর উপর রাগ করি না। কষ্ট কি পাই না! ও এখন সানজানার সাথে দেখা করবে হয়তো একান্তে সময়ও কাটাবে। আর আমি তা পাশে বসেই দেখবো। উফঃ আমি কেন আসলাম? আমার নিজের উপরই খুব বিরক্ত লাগছে। কেন এতো ভালো মানুষী দেখাতে গেলাম!

হঠাৎ সায়ান বলল কি এতো চিন্তা করছো?

আমি নিশ্চুপ।

—জানো পিয়া তুমি আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছো। সবকিছুতেই আমার কেন জানি তোমাকে চাই। ইভেন সানজানার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তাতেও তোমাকে নিয়ে যেতে আমার ভালোই লাগছে। আম্মু যখন বলল তাই আমি তখনই রাজি হয়ে গেলাম।

আমি জানালা দিয়ে বাইরেই তাকিয়ে থাকি। সায়ান কি বলে নিজেও বুঝে না। একদিন সানজানা ওর জীবনে স্থায়ী হবে আর আমাকে অনেক দূরে সরে যেতে হবে। আর সায়ান কিনা বলছে আমি ওর অভ্যাস হয়ে গেছি।

******

সানজানার ফ্ল্যাটের নিচে গাড়ি পার্ক করে লিফটের আটতালায় উঠে কলিংবেল চাঁপে সায়ান।

আমার বুকের অস্থিরতা বাড়তে থাকে। একে তো সায়ানের ভালোবাসার মুখোমুখি হবো দ্বিতীয় ওদের দুজনের ডেটের মাঝে নিজেকে খুব হেংলা লাগছে। এতো অসহায় হয়তো আমি কোনোদিন হইনি। বার বার মনে হচ্ছে কেন আসলাম। কত অজুহাতেই তো চলে যেতে পারতাম। সায়ানকে সামলানো তো কোনো ব্যাপারই ছিল না।

সানজানা দরজা খুলে সায়ানকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমি ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিকভাবেই নিলাম। কারন শুধু প্রেমিক বলে নয় সায়ান এভাবে সবার সাথেই মেশে।

সানজানা আসলেই অনেক সুন্দরী। একেবারে মোমের মতো রং যেন এখনই গলে গলে পড়বে। লম্বা ফিগার, সায়ানের পাশে খুব মানাচ্ছে।
আমার দিকে তাকালে সায়ান বলে আমার কাজিন ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। আম্মু বলল আজ সাথে নিয়ে বের হতে। তাই নিয়ে এলাম।

আমি সাথে সাথে বললাম আমি আসলে খুবই লজ্জিত। আমি কোনোভাবেই আপনাদের মাঝে আসতে চাই নি। কিন্তু আন্টিকে মানাও করতে পারি নি।
সানজানা হেসে বলল ইটস ওকে! এতো বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। কি নাম তোমার? আমি তোমাকে তুমি করে বলি? আমরা নিশ্চয়ই সমবয়সী হবো?

—অবশ্যই! আমি পিয়া! আপনি সামনাসামনি অনেক বেশি সুন্দরী!
— থ্যাংকস!! তুমিও অনেক মিষ্টি দেখতে। আমাকে তুমি করেই বলো, প্লিজ!

সানজানা খুব সিম্পল একটা কুর্তি আর পাজামা পরে আছে অথচ কি গর্জিয়াস লাগছে। অদ্ভুতভাবে আমি সানজানাকে হিংসা না করে মুগ্ধ হচ্ছি। মিডিয়া লাইনে আছে যেহেতু আমি ধরেই নিয়েছিলাম খুব অহংকারী হবে, ঢং গলে গলে পড়বে, আমাকে দেখে নাক সিটকাবে, সায়ানের গলা ধরে ঝুলে থাকবে।
কিন্তু সানজানা এসবের কিছুই করে নি। ও পুরোই ভিন্ন। হয়তো ভিন্ন না এটাই স্বাভাবিক আর আমরাই ধরে নেই মডেল মানে হাব ভাব বেশি।
সবচেয়ে বড় কথা সানজানা খুবই সুইট একটা মেয়ে তাই হয়তো সায়ান ওকে ভালোবাসে।

আমার মাঝে যে দমবন্ধ অস্থিরতা কাজ করছিল সানজানার সাথে কথা বলে সেটা অনেকটাই কেটে গেছে। পুরো পরিবেশটাই খুব হাল্কা লাগছে। সানজানা সায়ানকে নিয়ে আলাদা কোনো আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে না।
এ বাসায় সানজানা দুজন মেইড নিয়ে একাই থাকে। ওর বাবা মা আমেরিকায় থাকেন। ওখানে ওর বড় বোন আছে। ওরা দুবোন এক ভাই। ভাইও কানাডা স্যাটেল হয়েছে। সানজানা সবার ছোট। ওদের ফ্ল্যাটটা খুবই পরিপাটি। চারিদিকে আভিজাত্য আর সৌখিনতার বহিঃপ্রকাশ। সায়ানদের পরিবারের সাথে সানজানার পরিবারের সব কিছু যায়। আমার সাথে বিয়ে না হলে দু পরিবারের সম্পর্ক হতে মনে হয় না ঝামেলা হতো। কিংবা হয়তো এখনও কোনো ঝামেলা হবে না। সব ঠিকঠাক ভাবেই হবে।

হাল্কা নাস্তা পর্ব শেষে সানজানা বলল চল বিকাল হওয়ার আগেই তিনশো ফিটের দিকে যাই। নিরিবিলি পরিবেশ আছে, আমারও কোনো ডিসটার্ব হবে না আর পিয়াও ঘুরে আসবে। কি বলো পিয়া?

আমি মিষ্টি হাসি দিলাম।

— পিয়া, তুমি আমার গেস্ট। আজ তোমাকে রাতে আমি ট্রিট দিবো। ওকে!

আমি আবারও হাসলাম। আমার এছাড়া কিছু করারও নেই।

প্রথম ধাক্কা খেলাম যখন গাড়িতে সানজানা সায়ানের পাশে বসলো। সায়ানের পাশে সানজানা বসবে এটাই হওয়ার কথা কিন্তু আমি হয়তো প্রস্তুত ছিলাম না। তবু মুখে হাসি এনে আমি পেছনে বসলাম। মিথ্যে অভিনয়ে আমি এখন বেশ পটু হয়ে গেছি।

**
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর সায়ান যখন সানজানাকে পাশের সিটে আবিষ্কার করলো তখন রীতিমতো ধাক্কা খেলো। সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখে পিয়া হাসি মুখে পিছনে বসে আছে।
পিয়ার ঠোঁটের কোণের মিষ্টি হাসি সায়ানের বুকে যেন তীরের মতো বিঁধলো।

চলবে।।
লেখকঃ ঝিনুক চৌধুরী।।

আবারো বলছি আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্টে আমি অভিভূত! বেচারী সানজানাকে নিয়ে সবার মন্তব্যগুলো ছিলো মজার।
আগামী পর্ব ১৮ তারিখ দিবো।
/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here