#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_47
#Writer_TanhaTonu
সিদ্রাতের বলা কথাটা সাথে সাথে আরশির বুকে পিয়ানোর সুর তুলে।আরশি বিষ্ময় নিয়ে সিদ্রাতের দিকে তাকায়।সিদ্রাত চোখের ইশারায় আরশিকে আশ্বস্ত করে যে সে মিথ্যা বলছে না।আরশির মন খারাপ চলে যায়।সেখানে এসে ভিড় করে এক রাশ লজ্জা।আরশি আবারও সিদ্রাতের বুকে মুখ লুকায়।সিদ্রাত আরশির মাথায় চুমু খেয়ে নিশব্দে হাসে…
_________________________________________
আরশির দুপুরের সেই ঘুম ভাঙে বিকাল সাড়ে চারটায়।ঘুম থেকে উঠে দেখে সিদ্রাত এখনো ঘুমে।আরশি মুচকি হেসে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে নেয়।তারপর সিদ্রাতকেও ডাকে…
—”এই যে শুনছেন?উঠুন..আসরের নামাজের টাইম চলে যাচ্ছে তো”
সিদ্রাত একটু নড়েচড়ে আবারও আগের মতোই শুয়ে থাকে।আরশি এবার হালকা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ডাকতে থাকে….
—”এই উঠুন..নামাজ পড়বেন না নাকি ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে ইবলিশ দূর করতে হবে?”
সিদ্রাত ভ্রু একটা কিঞ্চিত কুচকে আধো আধো চোখে আরশির দিকে তাকায়।আরশি বলে…
—”উঠুন এবার।নামাজ পড়বেন”
সিদ্রাত আরশিকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলে…
—”পাঁচ মিনিট এভাবে থাকো”
আরশিও কথা বাড়ায়না।পাঁচ মিনিটের মতো ওভাবেই সিদ্রাতের বুকের সাথে লেপ্টে থাকে।পাঁচ মিনিট পর সিদ্রাতই আরশিকে সরিয়ে ওযু করতে চলে যায়।আরশি লাজুক হেসে নামাজে দাঁড়ায়।এর মাঝে সিদ্রাতও এসে দাঁড়ায় নামাজে।নামাজ শেষ হলে আরশি ড্রয়িং রুমে যায়।ড্রয়িং রুমে কেউ নেই কিন্তু কেমন যেনো কথার চাপা আওয়াজ ভেসে আসছে।আরশি কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখে ওর শাশুড়ি আর আরেকজন মহিলা গল্প করছে।সিদ্রাতের আম্মু গল্পের পাশাপাশি চুলোয় বসানো চিকেন পাকোড়াটার দিকেও নজর রাখছে।আরশি কিচেনে গিয়ে মহিলাটিকে সালাম দিলো।মহিলাটি সালামের জবাব নিয়ে বলল….
—”এটাই বুঝি আমাদের নতুন বউ?বাহ মাশাল্লাহ”
আরশি লাজুক হাসল।সিদ্রাতের আম্মুও মুচকি হাসলেন।আরশি বলল…
—”আম্মু তোমরা ড্রয়িং রুমে গিয়ে গল্প করো।পাকোড়াটা বাকিটা নাহয় আমিই দেখি”
—”আরে না..তুই গিয়ে বস।রান্নার কাজে এখনি হাত লাগাতে হবে না।একটু আছে।আমিই করে নিচ্ছি”
মহিলাটি বলল…
—”আহ ভাবী নতুন বউকে এতো আশকারা দিতে নেই।আপনার তো তাও ভালোই নিজ থেকে কাজ করতে চাচ্ছে।জানেন তো যুগ কেমন!আমাদের আরিফের মাকে তো চিনতেন..কত শখ করে বাড়িতে বউ এনেছে।বউয়ের কচি হাত নষ্ট হয়ে যাবে বলে বিয়ের প্রথম প্রথম রান্না-বান্না একদমই করতে দিতো না।শুধু বলত তুমি আমার রান্না দেখো।জানেন না বউ ঘুম থেকে উঠার আগেই ছেলে আর বউয়ের শাওয়ারের জন্য গরম পানি করে রাখত আরিফের মা।বউকে দু’বেলা নিজে ডিম সিদ্ধ করে খাওয়াতো।কত শখের বউ ছিলো!অথচ বিয়ের দুই বছর না যেতেই সে বউ বিধবা শাশুড়িটাকে বাসা থেকে বের করে দিলো।আমাদের আরিফের মায়ের তো তাও কপাল ভালো ছিলো যে আরিফের বাবা মারা যাওয়ার আগে বউয়ের নামে ফ্লাট লিখে দিয়ে গিয়েছে।সেদিনও ফোন দিয়ে কতক্ষণ কাঁদল!কষ্ট হয় বুঝলেন..এজন্যই বলি বউদের এতো আশকারা দিতে নেই”
মহিলার কথাগুলো শুনে আরশির কিছুটা অপমানবোধ হলো।ও মাথাটা নিচু করে ফেলল।মুখটাও মলিন হয়ে গিয়েছে।সিদ্রাতের আম্মু প্যান থেকে ভাজা পাকোড়াগুলো তুলতে তুলতে মুচকি হেসে বলল…
—”হ্যাঁ ভাবী.. আরিফের মা-র জন্য কষ্টই হয়। বেচারী কত শখ করে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলো!কিন্তু জানেনই তো যেগুলো খারাপ সেগুলো প্রথম থেকেই খারাপ।ওগুলোকে আদর দিয়ে লাভ নেই আবার একটু কাজ করালেই তুলকালাম কান্ড করবে।আবার যেগুলো ভালো সেগুলো সবসময়ই ভালো।আমি আপনি..আমরা শাশুড়ি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিন্তু তার সেবা-যত্ন করেছি।কখনো উঁচু গলায় কথা বলিনি শ্বশুর-শাশুুড়ির সাথে।আমাদের আরশির উপরও বিশ্বাস আছে।হীরার টুকরা বুঝলেন..আর যদি আমার আর আপনার ভাইয়ের কপাল খারাপ থাকে তাহলে আপনার মতো ভালো মানুষের মেয়ে আনার পরও বাড়ি ছাড়া হতে হবে..”
মহিলাটি আর কথা বাড়ালো না।স্মিত হেসে সিদ্রাতের আম্মুর কথায় সায় দিলো।সিদ্রাতের আম্মু সিংকে হাত ধুতে ধুতে আরশিকে বলল…
_”আরশি পাকোড়াগুলো একটা বাটিতে ঢেলে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আয় তো।আমরা ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম”
—”আচ্ছা আম্মু…”
ওরা দুজন চলে যেতেই আরশি একটা বাটিতে সবগুলো পাকোড়া তেল ছেঁকে নিয়ে নিলো।তারপর একটা কাপে সস ঢেলে নিলো আর সাথে দু’পদের ফলও কেটে নিলো।মেহমানকে কি আর শুধু পাকোড়া খাওয়ানো যায়?সবকিছু একটা ট্রে-তে,সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফার সামনে সেন্টার টেবিলে রাখল।তারপর সিদ্রাতের আম্মুর পাশে বসল।মহিলাটি বলল…
—”আরে আরে..আবার ফল কেটেছো কেন?পাকোড়াই তো তোমার শাশুড়িকে বানাতে না করলাম”
আরশি শুধু মুচকি হাসল।সিদ্রাতের আম্মু বলল…
—”দেখলেন তো ভাবী আমার বউমা কোন ধাচের?কাজকর্ম তাকে শিখিয়ে দিতে হয়না।দু’দিনেই পাকা গৃহিণী হয়ে যাবে একদম ”
আরশি মুচকি হাসে।মহিলাটিও মৃদু হেসে তার কথা কন্টিনিউ করে।এর মাঝেই সিদ্রাতও এসে ওদের পাশে বসে মহিলাটিকে সালাম দিয়ে বলল…
—”কেয়া আন্টি যে!কেমন আছেন?”
—”ভালো আছি বাবা..তুমি কেমন আছো?সেই যে ধানমন্ডি থেকে এসে পড়লে তারপর তো আর কোনো খোঁজই নেই তোমার।দুদিন আগে ভাবী ফোন দিয়ে বলল বিয়ে করেছো।তাই বউ দেখতে এলাম”
সিদ্রাত আরশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।আরশি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল।সিদ্রাত হালকা হেসে বলল….
—”তো আন্টি কেমন দেখলেন বউ?সুবিধার তো?সংসার করতে পারব তো?”
মিসেস কেয়াও হেসে বলল…
—”আহ সিদ্রাত তোমার রসিকতা আর গেলো না।নতুন বউয়ের সামনে এসব কেউ বলে?বউ তোমার যা দেখলাম ভালোই।লক্ষী-মন্তই আছে।কপাল গুণে বউ পেলে”
সিদ্রাত আবারও আরশির দিকে তাকালো আর টেডি হাসল।আরশির ভীষণ লজ্জা লাগছে এবার।সিদ্রাত আরও পাঁচ মিনিট গল্প করে আরশিকে শুনিয়ে ওর আম্মুকে বলল…
—”আম্মু আমি তাহলে একটু বাইরে যাই।একদম মাগরিবের নামাজ পড়ে আসব।চিন্তা করো না”
আয়িশা আজওয়াদ সিদ্রাতের মাথায় গাট্টা মেরে হেসে বলল…
—”হয়েছে যা এবার।আর বলতে হবে না।বুঝেছে সে”
সিদ্রাতও মাথা চুলকাতে চুলকাতে হেসে বেরিয়ে গেলো।আরশি মনে মনে সিদ্রাতের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল…
—”খারুচ লোক!বেডরুমে ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও দেখায় না।আর এখন খোলা ময়দানে ভালোবাসা দেখাচ্ছে!”
আরশির এসব ভাবনার মাঝেই মোবাইলটা ভ্রাইবেট করে উঠে।আরশি স্ক্রিন ওপেন করে দেখে সিদ্রাতের মেসেজ—”কেয়া আন্টি লাচ্ছি ভীষণ পছন্দ করে।পারলে উনাকে খাওয়াও একটু।পুরো এলাকায় তোমার সুনাম করবে।আর হ্যাঁ আম্মুর সাথে উনার বান্ধবীর মতো সম্পর্ক ছিলো..ধানমন্ডি ৬/এ-এর আমাদের বাসার পাশের বাসাটা আন্টিদের ছিলো”
আরশি মেসেজটা পড়ে মুচকি হেসে বলল…
—”আন্টি আপনারা গল্প করুন।আমি একটু আসি”
মহিলা “আচ্ছা” বলে আবারও সিদ্রাতের মায়ের সাথে কথা বলায় মেতে উঠল।আরশি কিচেনে এসে পরিমাণমতো দুধ ব্লেন্ডারে ঢেলে তাতে চিনি,মিষ্টি দই,কয়েক টুকরো বরফ কুচি আর পরিমাণমতো পানি ঢেলে ব্লেন্ড করে নিলো কয়েক মিনিটের জন্য..ব্যাস হয়ে গেলো মিষ্টি লাচ্ছি।বড় বড় চারটা গ্লাসে লাচ্ছিগুলো ঢেলে একগ্লাস ফ্রিজে রেখে বাকি তিন গ্লাস নিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো।সিদ্রাতের আম্মু আর মিসেস কেয়ার হাতে একটা করে গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
—”আম্মু,আন্টি..লাচ্ছি খাও।আমি বানালাম তোমাদের জন্য।ডেজার্ট ছাড়া শুধু স্ন্যাক্স খেয়ে মজা নেই”
মিসেস কেয়া খুশিতে গদগদ হয়ে চুমুক বসালো গ্লাসে।তারপর আর কী!আরশির প্রশংসায় পঞ্চমুখ সে।সিদ্রাতের আম্মু ঠোঁট চেপে হাসল
————-
সন্ধ্যার পর সিদ্রাত রুমে এসে বেডে হেলান দিয়ে বসতেই আরশি ফ্রিজে রাখা লাচ্ছির গ্লাসটা এনে এগিয়ে দিলো।সিদ্রাত গ্লাসটা হাতে নিয়ে সোজা হয়ে বসে মুচকি হেসে বলল….
—”এবার বলো কেয়া আন্টি কি কি প্রশংসা করল তোমার?”
আরশি ফিক করে হেসে দিয়ে বলল…
—”বাবারে কি যে প্রশংসা!আমার মতো মেয়ে হয়না,আমি কোটিতে একটা,উনার ছেলে থাকলে আমাকে বউ করত..আরও কতকিছু।”
সিদ্রাতও হাসল।তারপর নিজের গ্লাসটা আরশির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল…
—”এখান থেকে একটু খাও”
—”না না..আপনি খান এটা।বিকালে আমি পুরো এক গ্লাস খেয়েছি”
সিদ্রাত বলল…
—”খেয়েছো তো কী হয়েছে?আমি তো আর দেখিনি।এখন আমাকে দেখিয়ে খাও..আমি একটু তৃপ্ত হই তোমাকে খেতে দেখে”
সিদ্রাতের কথা শুনে আরশির চোখ ছলছল করে উঠল।ও একটা চুমুক দিয়ে সরে দাঁড়ালো।সিদ্রাত বলল…
—”হেই কি হয়েছে?কাঁদছ কেন আবার?”
—”জানেন আমার নানা আমাকে খুব ভালোবাসত।আমি মাছ অনেক বেশি পছন্দ করতাম।এজন্য নানার সাথে যখন রাতে খেতে বসতাম তখন আমার পাতে মাছ দেয়ার পরও নানা নিজেরটাও আমায় দিয়ে দিতো।আমি নিতে না চাইলে বলত যে তোকে দুপুরে তো আমি খেতে দেখিনি।এখন আমার সামনে বসে এই দুইটা খাবি আর আমি দেখব..অনেক ভালোবাসত আমাদেরকে নানা আর আজ আপনি…”
আরশির চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ল।সিদ্রাত গ্লাসটা বেডসাইড টেবিলে রেখে আরশিকে বুকে জড়িয়ে ধরল।আরশিও সিদ্রাতকে আলতো করে ধরল।আরশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সিদ্রাত বলল…
—”তোমার নানা তোমায় কতটা ভালোবাসত তা আমি জানিনা।উনার মতো ভালোবাসতে পারব কিনা তাও জানিনা।তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে তোমায় ভালোবাসার চেষ্টা করব”
আরশির হৃদয়টা যেনো জুড়িয়ে গেলো সিদ্রাতের দুটো কথায়।মনের মধ্যে যেনো প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে…..
চলবে…
প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_48
#Writer_TanhaTonu
আরশির চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ল।সিদ্রাত গ্লাসটা বেডসাইড টেবিলে রেখে আরশিকে বুকে জড়িয়ে ধরল।আরশিও সিদ্রাতকে আলতো করে ধরল।আরশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সিদ্রাত বলল…
—”তোমার নানা তোমায় কতটা ভালোবাসত তা আমি জানিনা।উনার মতো ভালোবাসতে পারব কিনা তাও জানিনা।তবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে তোমায় ভালোবাসার চেষ্টা করব”
আরশির হৃদয়টা যেনো জুড়িয়ে গেলো সিদ্রাতের দুটো কথায়।মনের মধ্যে যেনো প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে…..
_______________________________________________
আর পাঁচদিনের মতো আজকের সকালটা আরশির কাছে এক না।আরশির ইচ্ছা করছে সিদ্রাতের চুলগুলো ছিঁড়ে টাকলু বানিয়ে দিতে।আরশি রাগে ফুসতে ফুসতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সাদা এপ্রোনটা পড়ে নিলো।তখনই সিদ্রাতও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।আরশি রেগে সিদ্রাতের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো।একদম হা হয়ে গিয়েছে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে।উন্মুক্ত সাদা বডিটায় শিশির ফোঁটার মতো পানি মিশে আছে আর কোমরে প্যাঁচানো হালকা স্কাই কালার একটা টাওয়াল..টাওয়াল ছেড়ে নিচের দিকে খোলা ভেজা পা দুটোও খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।আরশিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিদ্রাত সরু চোখে তাকালো।কিন্তু আরশির কোনো হেলদুল নেই।সিদ্রাত এবার আরশির কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর গালদুটো আলতো করে ধরতেই আরশি ঝাঁপিয়ে সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরল।সিদ্রাত প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও পরে মুচকি হেসে আরশিকে জড়িয়ে ধরল।মৃদু কন্ঠে বলল….
—”কন্ট্রোল হচ্ছে না নাকি?”
আরশির নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে।ও সিদ্রাতের বুকে নাক ঘষতে লাগল।সিদ্রাতও আরশির কোমর চেপে ধরে আরশির ঘাড়ে মুখ ডুবালো।অস্পষ্ট কন্ঠে বলল….
—”প্রতিজ্ঞা করেছো আমায় কন্ট্রোললেস করেই ক্ষান্ত হবে?”
আরশি কিছুই বলল না।সিদ্রাতকে খামচে ধরে রাখল।সিদ্রাত প্রায় পনেরো মিনিটের মতো আরশির ঘাড়ে গলায় ছোট ছোট কিস করল।তারপর আরশিকে সরিয়ে দিয়ে টেডি হেসে বলল…
—”আজ এ টুকুই থাক”
আরশি লজ্জায় দৌড়ে লিভিং রুমে চলে গেলো।সিদ্রাত হেসে দিলো।তারপর রেডি হতে লাগল।আরশি লিভিং রুমে আসতেই সিদ্রাতের আম্মু বলল….
—”কিরে এপ্রোন টেপ্রোন পড়ে রেডি দেখছি!মেডিকেলে যাবি নাকি?”
আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল….
—”তোমার ছেলে গত রাতে ওয়ার্নিং দিয়ে বলেছে আজ থেকেই ক্লাস করতে।নাহলে আমায় বারান্দা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে”
সিদ্রাতের আম্মুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।পরক্ষণেই উনি হেসে দিলেন।আরশি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল…
—”তুমিও বুঝলে না আমায়।তোমরা সব এক..হুহ”
—”সবাই কেমন এক শুনি?”
সিদ্রাত ওদের সামনে আসতে আসতে বলল।আরশি ভেঙচি কেটে চেয়ারে বসে পড়ল।সিদ্রাতও হেসে আরশির পাশে বসল।সিদ্রাতের আম্মু বলল…
—”সিদ্রাত তুই কি যে করিস?আর দুটো দিন পরে গেলেও তো হতে ক্লাসে।দেখ মেয়েটার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো”
সিদ্রাত আড়চোখে আরশির দিকে তাকালো।সিদ্রাতের আম্মু দুজনকে খাবার দিলো।ব্রেকফাস্ট করে ওরা দুজন একসাথে বেরিয়ে পড়ল।ড্রাইভার ড্রাইভ করছে।আরশি আর সিদ্রাত পেঁছনে বসেছে।আরশি বলল….
—”আপনি অফিসে যাবেন না?”
_”হুম তা তো যাবোই।আগে তোমাকে দিয়ে আাসি”
—”কিন্তু ওখানে যেতে আসতেইতো আড়াইঘন্টার মতো টাইম ওয়েস্ট হবে।আর এতো লং জার্নি করে কিভাবে অফিস করবেন?”
সিদ্রাত আরশির মাথাটা নিজের বুকে রেখে আরশিকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল…
—”ডোন্ট ওয়ারি..এতো চিন্তা করো না।আজ দিয়ে আসি।তারপর না হয় ড্রাইভার আঙ্কেলই যাবে।তোমার প্রবলেম হবে না তো?”
আরশি সিদ্রাতের বুকে বিড়াল ছানার মতো চুপটি করে মিশে রইল আর না সূচক মাথা নেড়ে বলল…
—”না সমস্যা হবে না।এতেই ভালো হবে।আপনি এতোবার আসা-যাওয়া করলে সমস্যা হবে পরে অফিস করতে”
সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির কপালে চুমু খেলো।মেডিকেলের সামনে কার থামলে সিদ্রাত আরশি নেমে পড়ল।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সিদ্রাত আরশির সাথে কথা বলল।তারপর আরশি সিদ্রাতের থেকে বিদায় নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।সিদ্রাতও কার নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো…
————-
অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে আটটা বাজল।রুমে এসে দেখল আরশি পড়ছে।সিদ্রাত ওয়াশরুমে না গিয়ে ধপাশ করে বেডে শুয়ে পড়ল।আরশি প্রথমে চমকে গেলেও পরে সরু চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে বলল…
—”এটা কি হলো?ফ্রেশ না হয়েই বেডে আসলেন কেন?যান ফ্রেশ হোন গিয়ে”
—”উম..নো..প্লিজ.. একটু রেস্ট নিই।প্রচুর টায়ার্ড লাগছে।আজ এতগুলো মিটিং করে আমি প্রচুর টায়ার্ড হয়ে পড়েছি..”
সিদ্রাত গভীর একটা শ্বাস ফেলল।আরশি কিচেনে এসে লবণ আর লেবু দিয়ে শরবত করে রুমে নিয়ে গেলো।এখনো সিদ্রাত চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।আরশি সিদ্রাতকে ডাকল…
—”এই যে উঠুন..শরবতটা খেয়ে নিন।ক্লান্তি দূর হবে”
সিদ্রাত চোখ মেলে তাকালো।তারপর উঠে বসে শরবতটা নিয়ে তিন চুমুকে শেষ করল…
—”উমম অনেক ভালো লাগল ফ্লেবারটা।কোথায় শিখলে এটা বানানো?”
আরশি মৃদু হেসে বলল…
—”আমায় হরমোনলা প্রবলেমের কারণে একটা ওষুধ খেতে হতো।কিন্তু ওটার কারণে আবার প্রেশার একবারে কমে যেতো।এজন্য ডক্টর বলেছিলো এই শরবতটা দিনে তিনবার খেতে।আমরা তো জানিই যে লবণ প্রেশার বাড়ায়।বাট শুধু লবণ তো আর পানিতে খেতে ভালো লাগবে না তাই লেবুটাও দেই”
সিদ্রাত হেসে বলল…
—”ওহ..গুড।আমিও আগে এটা খেতাম।কিন্তু নিজে বানিয়ে খেতাম যার কারণে লেবুটা বেশি পড়ে তেঁতো হয়ে যেতো।তখন আমি কলেজ লাইফফে…সারা বিকাল ফুটবল খেলে টায়ার্ড হয়ে যেতাম..প্রচুর ঘাম ঝরত..তাই খেতাম।আজ প্রায় অনেক বছর পর খেলাম”
আরশি মুচকি হাসল।তারপর বলল…
—”আচ্ছা যান ফ্রেশ হয়ে আসেন”
সিদ্রাত মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসল।সিদ্রাতের আব্বু বলল….
—”আরশি মামনি..তোমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো এ বাসায়?কোনো প্রবলেম হলে অবশ্যই বলবে”
—”না বাবা..আমার আবার কিসের প্রবলেম হবে?নিজের বাড়িতে আবার কারও প্রবলেম হয় নাকি?”
সিদ্রাতের আব্বু হাসলেন।সিদ্রাতও খেতে খেতে সবার আড়ালে মুচকি হাসল।সিদ্রাতের আম্মু বলল…
—”মনের মতো কথা বলেছিস।সবসময় মনে রাখবি এটা তোরই বাসা।তাই সবসময় কমফোর্ট থাকবি”
আরশি মুচকি হাসল।তারপর বলল…
—”কিন্তু একটা ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ আমার।বিয়ে তো সবারই হয়।তাই বলে কি বিয়ের পর ভাইয়ের বিয়েতে আসতে পারবে না?মুন আপু বিয়েতে তো আসতে পারত”
সিদ্রাতের আব্বু খেতে খেতে বলল…
—”তেমন কিছু না মামনী।তোমার মুন আপু তখন বাংলাদেশে ছিলো না।তোমাদের বিয়েটা তো হুট করে হলো।তার আরও নয়দিন আগেই মুন আরহামের সাথে কানাডা গিয়েছে আরহামের বিজন্যাসের কাজে।এখনো আসেনি।দেশে ফিরলেই এ বাড়িতে আসবে বলেছে”
—”ওহহ..”
গল্পগুজবের মধ্যেই রাতের ডিনারটা সবার শেষ হলো।সিদ্রাত আর ওর আব্বু সোফায় বসে আছে।আরশি আর সিদ্রাতের আম্মু মিলে প্লেট-গ্লাসগুলো ধুয়ে গুঁছিয়ে রাখছিলো।তখনই কলিং বেল বাজল।সিদ্রাতের আম্মু দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল পৌনে দশটা বাজে…
—”কে আসল আবার এই টাইমে?”
আরশি বলল…
—”দাঁড়াও আমি দেখছি”
—”এই না না..কে না কে এসেছে!এই সিদ্রাত দেখ তো কে আসল”
সিদ্রাত দরজা খুলতেই দেখল আরশির আম্মু।সিদ্রাত বলল…
—”আরে মামনী তুমি!আসো ভিতরে আসো”
—”নারে বাবা…টাইম নেই।তোর মাকে ডাক”
আরশির আম্মুর গলা শুনে আরশি আর সিদ্রাতের আম্মু আসল।আরশি ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরল।তারপর সরে এসে সিদ্রাতের পাশে দাঁড়ালো।আরশির আম্মু বলল…
—”আপা এই নাও বক্সটা রাখো।এটায় পাটিসাপটা পিঠা আছে।একটু আগে বানালাম”
—”এতো ঝামেলা করতে গেলি কেন আবার?আমায় ডাকতি।দুজন একসাথে করতাম”
আরশির আম্মু মুচকি হেসে বলল…
—”মেয়ের জামাইকে নিজ হাতে রেঁধে খাওয়ানোর মজা আছে।যাই হোক আমি যাই।সাজিদকে পড়তে বসিয়ে এসেছি।আমি রুমে না থাকলেই পড়া বন্ধ করে বাপ-ছেলে আড্ডায় লেগে যাবে”
সিদ্রাতের আম্মু হাসল।আরশির আম্মু চলে যাওয়ার সময় আরশিকে এত্তগুলো উপদেশ দিয়ে গেলো।তারপর সবাই আবারও খেতে বসে পড়ল।আরশির আম্মুর বানানো পাটিসাপটা পিঠা দিয়েই নেক্সট ডিনারটাও সবাই সেড়ে নিলো।সিদ্রাত চেটেপুটে খেতে খেতে আরশিকে বলল…
—”আমার শাশুড়িকে বলো আরেক বক্স আগামীকাল পাঠাতে।লোভ লাগিয়ে দিয়েছে এটুকু খাইয়ে।”
আরশি হেসে উঠল।সিদ্রাতের আম্মু সিদ্রাতের কান টেনে ধরে বলল…
—”পাজি ছেলে কোথাকার”
—”আহ আম্মু..ছাড়ো..”
আরশি আর সিদ্রাতের আব্বু হেসে দিলো মা-ছেলের কাহিনী দেখে…
দিনগুলো এভাবেই যেতে লাগল।সকালে ড্রাইভারের সাথে আরশি মেডিকেলে চলে যায়।আসতে আসতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে যায়।সিদ্রাত প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই চলে আসে।এসেই আরশির হাতের এক গ্লাস লেবুর শরবত খাওয়া ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।তারপর নিজ দায়িত্বে আরশিকে পড়াবে।আরশিও বেশ প্রফুল্ল মনেই পড়ে কারণ সিদ্রাতের পড়ানোর টাইপ অনেক দারুণ..একটুও এক ঘেয়েমি আসেনা।তারপর ডিনার করে আরও কিছুক্ষণ পড়ে কম্বলের নিচে ঢুকবে দুজন।ভিতরে ঢুকেই শুরু হয়ে যাবে দুজনের দুষ্টুমি-ফাজলামি।কোনোদিন সিদ্রাত আরশিকে সুড়সুড়ি দিয়ে কাঁদিয়ে ফেলে।আবার কোনোদিন আরশি সিদ্রাতকে সুড়সুড়ি দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলে।কারণ সিদ্রাত তো সিদ্রাতই…সে আরশির শরীরে যেখানে সেখানে মুখ ডুবিয়ে দিবে।ব্যাস আরশি তখন বরফের ন্যায় জমে যায়।এভাবে কল্পনারমতোই দিনগুলো কাটছে দুজনের…
চলবে…