#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__১০
#অদ্রিতা_জান্নাত
ইশানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম ৷ তখনি পিছন থেকে হাতে টান পরলো ৷ আমাকে ঘুরিয়ে মুখের কাপড় টান মেরে সরিয়ে দিলো ৷ ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে কিছুই বুঝতে পারলাম না ৷ ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে ৷ সামনে জিজু অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ তারপর বললো,,,,,,,
—- আর কত পালিয়ে পালিয়ে বেরাবি? চল এবার ৷
বলেই আমাকে এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগল ৷ আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,
ইশিতা : ছেড়ে দাও প্লিজ ৷ বাপির কাছে নিয়ে যেও না আমাকে প্লিজ ৷ বাড়ি নিয়ে যেও না ৷ যাবো না আমি ৷ প্লিজ জিজু আমাকে ছেড়ে দাও ৷
—- কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবি না ৷ আর এসব বলে লাভও হবে না ৷ তোর কথাও আমি শুনছি না ৷
ইশিতা : শুনবে কেন? তুমি তো আমার বাপির চামচা ৷ তো যা বলবে তা না করলে বাড়িতে থাকতে পারবে না ৷
শুভ (ইতির বর) ইশিতাকে টান মেরে সামনে এনে বললো,,,,,,,,
—- বোনের মতো তোর সাহসও বেশি হয়ে গেছে না ৷ বাড়িতে চল আমাকে কিছু করতে হবে না ৷ যা করার তোর ওই বাপিই করবো ৷
বলেই আমাকে টেনে গাড়িতে উঠাতে গেলে পিছন থেকে আমার হাতে টান পরলো ৷ পিছনে তাকিয়ে দেখি ইশান দাঁড়িয়ে আছে ৷ যেই ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হলো ৷ এখন ওরা ইশানের কি করবে? সেটা ভাবলেই গলা শুকিয়ে আসছে ৷ ইশান আমার হাত ধরে টেনে আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
ইশান : ভালোই ভালোই যা বলছি ৷
শুভ ইশিতার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,,,,,,
শুভ : তো এই তোর সেই প্রেমিক যার সাথে পালিয়েছিস তুই?
ইশিতা ইশানের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ৷ কারো কথাই কানে যাচ্ছে না ওর ৷ ইশান অবাক হয়ে বললো,,,,,,
ইশান : কে আপনি? ও পালিয়েছে সেটা আপনি জানেন কি করে?
শুভ : আমি জানবো তো কে জানবে? ওকে ছাড়ো তুমি ৷ ইশিতা চলে আয় ৷
বলেই শুভ ইশিতার হাত ধরে টান মারলো ৷ তাতে ইশিতার ধ্যান ভাঙ্গলো ৷ চমকে উঠলো ও ৷ ইশান ইশিতাকে ছাড়াতে গেলে ইশিতা ওকে সড়িয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,
ইশিতা : ইইইশান তুমি চচলে যাও প্লিজ ৷
ইশান : ইশিতা তুমি এটা বলছো? তুমি…
ইশিতা : ইশান যাও না প্লিজ ৷ আমাকে বাড়ি যেতে হবে তুমি যাও ৷
ইশান ইশিতার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো ৷ ইশিতা ইশানের থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নিল ৷ তারপর একটু সামনে আগাতেই ইশানের চিৎকার শুনে থেমে গেল ও ৷ পিছনে তাকিয়ে দেখে ইশান রাস্তায় মাথা ধরে বসে আছে ৷ মাথা থেকে রক্ত পরছে ৷ সেটা দেখে ইশিতা চিৎকার করে ইশানের কাছে যেতে নিলে শুভ ওর হাত ধরে বললো,,,,,,,,
শুভ : গাড়িতে ওঠ ৷ নাহলে ওর অবস্থা আরো খারাপ হবে ৷
ইশিতা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,
ইশিতা : ওর কিছু করো না প্লিজ ৷ কেন মারলে ওকে? আমি তো যাচ্ছিলামই ৷ ওকে আর মেরো না প্লিজ ৷ আমি যাবো কিন্তু ওর গায়ে হাত দিয়ো না প্লিজ ৷
শুভ : ওই ওকে হাসপাতালে দিয়ে আয় ৷ এটুকুই এখন যথেষ্ট ৷ তুই গাড়িতে ওঠ ৷
ইশিতা গাড়িতে উঠলে ইশান চিল্লিয়ে বললো,,,,,,,,,,,
ইশান : ইশিতা যেও না প্লিজ ৷ মরে যাবো আমি ৷ আমার থেকে দূরে যেও না তুমি ইশিতা ৷ আহ…
মাথায় হাত দিয়ে ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠলো ও ৷ ইশিতা গাড়িতে উঠলে গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে গেল ৷ চোখ ভর্তি পানি গাল বেয়ে বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ ঝাপসা ঝাপসা চোখে ইশানের কান্নারত রক্তমাখা চেহারা দেখতে পেল ৷ মূহুর্তেই লুটিয়ে পরলো ৷ জ্ঞান হারিয়ে ফেললো ইশিতা ৷
_____________
চোখ খুললে নিজেকে একটা রুমে পাই ৷ রুমটা চিনতে অসুবিধা হয়নি আমার ৷ এটা আমার রুম ৷ এতোদিন পর আবার এই রুমের দেখা পেলাম ৷ বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে বাহিরে পা বাড়াতেই একটা গম্ভীর স্বর শুনে পা থেমে গেল ৷ বাপি আমার কাছে এসে আবার বললো,,,,,,
—- কোথায় যাচ্ছো আবার? আর যদি এই বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করো তাহলে তোমার কি অবস্থা করবো কল্পনাই করতে পারবে না ৷ সাহস বেড়ে গিয়েছে অনেক না? যাও রুমে যাও ৷ রুম থেকে বেরিয়েছো তো খবর আছে তোমার ৷
বলেই বাপি অামার হাত ধরে রুমে নিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিল ৷ আমি কিছু বললাম না ৷ দরজা ধরে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ ইশানের জন্য চিন্তা হচ্ছে ৷ ও ঠিক আছে তো ৷ ওর মাথা থেকে তো রক্ত পরছিল অনেক ৷ হাসপাতালে যেতে পেরেছে তো? এসব কথা ভাবতে ভাবতেই নিচ থেকে ইশানের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম ৷ হঠাৎ এভাবে ইশানের ডাক শুনতে পেয়ে ভয়টা আরো বেড়ে গেল ৷ ও আমার বাড়িতে চলে এসেছে ৷ এখন কি হবে? যেটা চাই না সেটাই খালি কেন হচ্ছে ৷ রুমের দরজা বাহির থেকে লক তাই যেতে পারলাম না নিচে ৷ বেলকনিতে চলে গেলাম দৌঁড়ে ৷
মাথায় ব্যান্ডেজ সেই ব্যান্ডেজের উপর দিয়েও রক্ত ভেসে উঠেছে ৷ চোখ মুখ লাল হয়ে আছে আর ফোলাও ৷ ক্রমাগত ‘ইশিতা ইশিতা’ বলে বাড়ির বাহিরে চিল্লাচ্ছে ইশান ৷ বাড়িতে ঢুকতে চাচ্ছে কিন্তু বাপি ঢুকতে দিচ্ছে না ৷
হঠাৎ ইশানের চোখ পরে উপরে বেলকনির দিকে ৷ ইশিতা ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর নিঃশব্দে কাঁদছে ৷ সেটা দেখে ও ভিতরে যেতে নিলে কয়েকটা ছেলে ওকে ধরে আটকে দেয় ৷ মাথায় আঘাত পাওয়ায় ও এখন অনেক দূর্বল ৷ তবুও নিজ শক্তি দিয়ে ছোটার জন্য চেষ্টা করছে ৷ ইশিতা উপর থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,,,,,,
ইশিতা : বাপি বাপি ওকে মেরো না প্লিজ ৷ ওকে কিচ্ছু করো না প্লিজ ৷ ও আসবে না আমার কাছে ৷ আমিও যাবো না তবুও ওর কিছু করো না প্লিজ ৷ বাপি ওকে ছেড়ে দিতে বলো না প্লিজ ৷ ইশান তুমি চলে যাও প্লিজ ৷ আর আসবা না এখানে ৷ ইশান যাও না প্লিজ ৷
ইশান : তোমাকে না নিয়ে কোত্থাও যাবো না আমি ৷ তুমি নিচে আসো ৷ নাহলে যাবো না আমি ৷
ইশিতা : ইশান জেদ করো না প্লিজ যাও ৷
তখনি রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম ৷ বেলকনি থেকে দৌঁড়ে রুমে গিয়ে দরজা ধাক্কাতেই দরজা খুলে গেল ৷ দরজা খুলে সামনে যেতেই ফুপ্পিকে দেখতে পেলাম ৷ ফুপ্পিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,,,,,
ইশিতা : কেমন আছো ফুপ্পি? কখন এলে এখানে?
—- ইশু তুই যা ৷ ছেলেটার কাছে যা তাড়াতাড়ি ৷ পরে এসব কথা হবে ৷
ইশিতা : থ্যাঙ্কিউ ফুপ্পি ৷ ততুমি আসো আমি যাই ৷
বলেই দৌঁড়ে নিচে চলে গেলাম আমি ৷ বাহিরে গিয়ে দৌঁড়ে ইশানের কাছে যেতে নিলে বাপি আমার হাত ধরে টান মেরে ঘুরিয়ে বললো,,,,,,,,,
—- কোথায় যাচ্ছো তুমি? রুম থেকে বেরোলে কীভাবে? ইতি ওকে রুমে নিয়ে যাও ৷
আমি আপুর দিকে তাকালাম ৷ আপু ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ বাপিকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,,
ইতি : ওকে ছেড়ে দাও না ৷ বাপি ওকে যেতে দাও প্লিজ৷
আরমান চৌধুরি রাগী চোখে তাকালো ইতির দিকে ৷ ও চুপ হয়ে গেল ৷ ইশিতা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না ৷ ইশান লোকগুলোকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে ইশিতার কাছে আসতেই ওর পায়ে একটা ছেলে বারি মারলো ৷ ইশান নিজের পা ধরে মাটিতে বসে পরলো ৷ লাঠিটা ইশানের হাটুর কাছে সোজা হাড্ডিতে লেগেছে ৷ তাই ও দাঁড়ানোর কোনো রকম শক্তি পেল না ৷ ইশিতা ইশানকে এভাবে দেখে চিৎকার করে উঠলো ৷ আরমান চৌধুরি ওকে টানতে টানতে বললো,,,,,,
—- চলো ভেতরে চলো ৷ আরেকটা কথা যদি আমাকে বলতে হয় তো এই রাস্তার ছেলেকে কি করবো সেটা নিজেও জানি না ৷
ইশিতা : বাপি ওর কিছু করো না প্লিজ ৷ আমি চলে যাবো ৷ ওকে শুধু ওর বাড়ি দিয়ে আসো ৷ প্লিজ ৷
—- আসো তুমি ৷
বলেই বাপি আমাকে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগল ৷ ইশান তখন চিৎকার করে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
ইশান : ইশিতা যেও না প্লিজ ৷ আমি তোমাকে না নিয়ে কোত্থাও যাবো না ৷ ইশিতা যেও না ৷
বলেই ওখানে বসে পাগলের মতো কাঁদতে লাগল ইশান ৷ ইশিতার মা মুখে আঁচল গুজে কাঁদতে কাঁদতে ভিতরে চলে গেলেন ৷ ইতি কাঁদতে কাঁদতে শুভকে বললো ইশানকে ছেড়ে দিতে ৷ সে কিছু না শুনার ভান করে ইতিকে জোর করে নিয়ে ভিতরে চলে গেল ৷
বাপি টানতে টানতে আমাকে রুমে নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভেতর ফেলে দিলো আমায় ৷ আমি উঠে বসে বাপির দিকে তাকালাম ৷ এই চোখে তার মেয়ের জন্য নেই কোনো কষ্ট আছে শুধু রাগ আর ঘৃণা ৷ ইশিতা বললো,,,,,,,,
ইশিতা : ইশানের কিছু করো না প্লিজ ৷ ওকে বাড়ি দিয়ে আসো ৷
আরমান চৌধুরি কঠোর গলায় বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,
—- চুপ করো তুমি ৷ অনেক দেখেছি তোমাদের নাটক ৷ আর না ৷ ওই ছেলেটা এই বাড়িতে আসার সাহস পায় কি করে? এই বারের মতো ছেড়ে দিলাম ওকে ৷ আবার আসলে ওকে নিজের হাতে মারবো আমি ৷ ওই ছেলেটার সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না তুমি ৷ তোমার এই দুদিনের ভালোবাসা তুমি ভুলে যাও ৷ নয়তো ভালো হবে না সেটা ৷ আর হ্যাঁ আবার যদি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো তাহলে তোমার ওই ভালোবাসার মানুষটা বেঁচে থাকবে কি না সন্দেহ ৷ আর তোমরা পালিয়ে গেলে তার প্রভাব পরবে তোমাদের পরিবারের উপর ৷ ইশানের পরিবারকে তো মেরে ফেলবো সঙ্গে থাকবে তোমার মা, বোন আর তোমার আদরের ফুপ্পিরও যে কি করবো সেটা তোমার ধারনারও বাহিরে ৷ তাই আশা করছি সেসব কিছুই করতে হবে না আমাকে ৷ কারণ তুমি হয়তো শুধু তোমাদের দুজনের জন্য এতোগুলো মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে না ৷ তাই ওর থেকে দূরে দূরে থাকো ৷ এতে সবারই ভালো ৷”
ইশিতা পাথরের মতো বসে আছে ৷ ওর মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না ৷ আরমান চৌধুরি রুম থেকে বাইরে যেতে যেতে আবার বলে উঠলেন,,,,,,,,,
“So be carefull. এক ভুল বারবার করলে সেই ভুলের ক্ষমা করি না আমি ৷ তাই আর চেষ্টাও করো না!”
বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,