#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__১৮
#অদ্রিতা_জান্নাত
আম্মু আমাকে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল বাপির কথায় ৷ জানিনা কি হবে? এতো কিছু করার পরও কি রাজি হবে? সেটা নিয়ে টেনশান হচ্ছে ৷ আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত্বনা দিচ্ছে ৷ হঠাৎ পিছন থেকে কারোর আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকালাম ৷ বাপি রুমের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললো,,,,,,,,,,
—- কি ভেবেছিলে? এসব করলে তারা বিয়েতে অমত দিবে?
ইশিতা এগিয়ে গিয়ে বললো,,,,,,,
ইশিতা : উহু কিছুই ভাবি নি আমি ৷ যাদের সঙ্গে যে রকম বিহেভ করা উচিত ছিল সেটাই করেছি আমি ৷
—- করে কি লাভ হলো? বিয়েটা তো আর আটকাতে পারলে না ৷ রাজি হয়ে গিয়েছে তারা ৷ বিয়ের ডেটও ফিক্সড করা হয়েছে৷ এই শুক্রবার ৷
ইশিতা : কিহ? মানে টা কি? এতো তাড়াতাড়ি করার কি হলো?
—- সেটা আমি বুঝবো ৷ কাল বিয়ের শপিং করতে যাবে ৷ হাতে বেশি সময় নেই ৷ সব আয়োজনও করতে হবে আমাকে ৷ নিজেকেও সেভাবে তৈরি করে করে নাও ৷
ইশিতা : বাপি প্লিজ এরকম করো না ৷ বাপি তুমি বুঝছো না কেন? আমি বিয়েটা করতে পারবো না ৷ এরকম করো না প্লিজ ৷ ইশানকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি ৷ ওকে ভুলতে পারবো না ৷ ওর জায়গায় কাউকে মেনে নিতেও পারবো না ৷ প্লিজ বাপি এতোটা নিষ্ঠুর হয়ো না ৷ আমি মরে যাবো ৷
বলেই কাঁদতে কাঁদতে ইশিতা ফ্লোরে বসে পরলো ৷ ওর বাবা বলতে লাগলো,,,,,,,,,
—- তোমার মানিয়ে নিতে সময় লাগবে সেটা তুমি সাফিকে বলবে ৷ কিন্তু এখানে আমার কিছু করার নেই ৷ ওই ছেলেটাকে কখনোই মেনে নিবো না আমি ৷ বিয়ের দিন পালিয়ে যাওয়ার কোনো রকম চেষ্টাও করো না ৷ এর ফল ভালো হবে না ৷
ইশিতার বাবা চলে যেতে নিয়েও ইশিতার কথা শুনে থেমে গেলেন ৷ ইশিতা নিজের চোখ মুছে দাঁড়িয়ে বললো,,,,,,,,,
ইশিতা : আমি আপনার মতো স্বার্থপর নই ৷ যে শুধু নিজের কথা ভেবে অন্যদের কষ্ট দিব ৷ শেষ মূহুর্তে এসে আমি আমার পরিবারকে বিপদে কখনোই ফেলবো না ৷ আপনি না বাবা নামের কলঙ্ক ৷ বাবা নামের এতো সুন্দর শব্দটা অাপনার সঙ্গে মিলালে এর সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে যাবে ৷ আপনি না কখনো আমার বাবা ছিলেন না হতে পেরেছেন ৷ এতো নিচ মানুষ কখনোই দেখি নি আমি ৷ যে কিনা তার মেয়েকে কষ্ট দিতেও দুবার ভাবে না ৷ কোনো পশুর থেকে কম না আপনি ৷
—- ইশিতা? (চিৎকার করে)
ইশিতা : চিল্লাবেন না ৷ আপনার এই চিল্লানো কে এখন আর ভয় পাই না আমি ৷ চিন্তা করবেন না পালাবো না আমি ৷ তবে আপনাকে ডুবিয়ে দিব আমি ৷ এই বাড়িটা (পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করে) আর আপনাকে শেষ করে দিব আমি ৷ শেষ হয়ে যাবেন আপনি ৷ শেষ হয়ে যাবে আপনার অহংকারের সম্পত্তি ৷ মিলিয়ে নিয়েন ৷ বাবা মায়ের অভিশাপ যেমন সন্তানের গাঁয়ে লাগে ৷ তেমনি সন্তানেরও অভিশাপ বাবা মায়ের গাঁয়ে লাগে ৷ সেই অভিশাপেই নিঃস্ব হয়ে যাবেন আপনি ৷ নিঃস্ব!
বলেই ইশিতা দৌঁড়ে চলে গেল ৷ ওর পিছু পিছু ইতিও গেল ৷ ইশিতার মা তার স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,,,,,,,,,
—- মানুষ কতটা স্বার্থপর আর নিচ হয় তা তোমাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না ৷ তুমি কি আসলেই মানুষ? তোমার হৃদয় পাথরের তৈরি ৷ একটা পাষাণ মানুষ তুমি ৷ আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিতে তোমার কলিজা একবারও কাঁপে না, না? শুনেছি প্রত্যেক বাবার কাছে তার মেয়ে রাজকন্যা ৷ কিন্তু আমার মেয়ে তোমার কাছে শুধু মাত্র একটা ফেলনা বস্তু ৷ সেটা আমি বুঝে গেছি ৷ আসলেই তুমি নিঃস্ব হয়ে যাবে একদিন ৷ সেদিন তোমার পাশে কেউ থাকবে না ৷ সেই দিন বুঝবে একটা পরিবারের সবার গুরুত্ব ঠিক কতখানি?
বলেই ইশিতার মা মুখে আঁচল চেপে সেখান থেকে চলে গেলেন ৷ ইশিতার বাবা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন ৷
__________________________
রাত ২ টা বেজে ১০ মিনিট ৷ বালিশে মুখ চেপে ধরে কান্না করছে ইশিতা ৷ আজ ওর চোখের পানির কোনো বাঁধ মানছে না ৷ ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷ কান্নার আওয়াজ যেন রুমের বাহিরে না যায় সেজন্য বালিশে মুখ চেপে ধরে কান্না করছে ৷ কিছুক্ষন পর ওর ফোনটা বেজে উঠলো ৷ বালিশের থেকে মুখ তুলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালো ও ৷ ফোনের স্ক্রিনে ‘ইশান’ নামটা ভেসে উঠেছে ৷ সেটা দেখে আবারও বালিশে মুখ গুজে আগের ন্যায় কাঁদতে লাগল ৷
এভাবে ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেল ৷ আবার বেজে উঠলো ৷ ইশিতা মুখ চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ৷ কিন্তু পারছে না ৷ ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিল ৷ কিন্তু ওর অবাধ্য মনটা বারবার ওকে ফোনের দিকে টানছে ৷ ওর মন বলছে ফোনটা তুলতে কিন্তু মস্তিষ্ক বাঁধা দিচ্ছে ৷ এরকম ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে গেলে আবার বেজে উঠলো ৷
ইশিতা গায়ের ওড়না দিয়ে চোখ মুছে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে লাগল ৷ পাশে থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে গলাটা হালকা ভিজিয়ে নিল ৷ তারপর কাঁপাকাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে দিল ৷ ফোনের ওপাশের জন নিরব ৷ শুধু তার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে ৷ ইশিতাও চুপ করে আছে ৷ কতক্ষন পর এই চেনা নিঃশ্বাসের শব্দ অনুভব করছে ও ৷ আর কখনোই পাবে না ওকে ৷ ভাবতেই চোখ জোড়া ভিজে এলো ওর ৷ মুখ চেপে ধরে রাখলো নিজের ৷
কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে ওপাশ থেকে ইশান বললো,,,,,,,,,
ইশান : কাঁদছিলে কেন?
ইশানের বলা কথা শুনে ওর নিজেকে এলোমেলো লাগছে ৷ অস্থির লাগছে ৷ ও চুপ করে আছে দেখে ওপাশে ইশান আবার বললো,,,,,,
ইশান : কি হলো? কথা বলবে না?
ইশিতা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,,,,,,,
ইশিতা : ককাঁদবো কেন?
ইশান : তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমার চেনা ৷ সেই নিঃশ্বাসে তুমি কি করছো, না করছো আমি বুঝবো না?
ইশিতা : আমি কাঁদছি না ৷ ভুল ভেবেছো তুমি ৷
ইশান : তাহলে এটা বলো ভালো আছো তুমি?
ইশিতা : খুব ভালো আছি ৷ তোমার শরীর ঠিক হয়েছে? জ্বর সেরেছে তো?
ইশান : হ্যাঁ ৷ অনেক তো হলো ৷ আর কত? চলে এসো না আমার কাছে প্লিজ ৷
ইশিতা : বলার থেকে করাটা বেশি কঠিন ৷ ভুলে যাও আমাকে ৷
ইশান : এতোই কি সহজ?
ইশিতা : চেষ্টা করো পারবে ৷
ইশান : তুমি তো আমার অভ্যাস ইশিতা ৷ আমিতো তোমাতে আসক্ত ৷
ইশিতা : অভ্যাসটা বদলে নাও ৷ ভালোবাসলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা নেই ৷ আর আমাদের ফ্যামেলী কখনোই মেনে নিবে না আমাদেরকে ৷ তুমি বিয়ে করে নাও ইশান ৷ আমার বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গিয়েছে ৷
ইশান : কি বলছো এটা তুমি? মিথ্যা বলছো না? আমরা পালিয়ে যাই চলো প্লিজ ৷
ইশিতা : আমি ঠিক বলছি ৷ পালিয়ে যাওয়ার হলে অনেক আগেই যেতাম ৷ কিন্তু আমি পারবো না ৷ তাই বলছি বিয়ে করে নাও তুমি ৷ তোমাকে বর সাজে দেখতে চাই আমি ৷ হয়তো সেখানে তোমার পাশে আমি বউ সাজে থাকবো না ৷ তাতে কি? তোমাকে বর সাজে তো দেখতে পারবো ৷
ইশান : কেন এরকম করছো ইশিতা ৷ বুঝতে পারছো না কতটা ভালোবাসি তোমায়? সেখানে অন্য কাউকে কল্পনাও করতে পারি না আমি ৷
ইশিতা : আমি বলছি পারবে না? বিয়ে করে নাও ইশান ৷ তোমার ইশিতা তোমাকে বলছে ৷ রাখবে না আমার কথাটা?
ইশান : আমি পারবো না ৷
ইশিতা : পারতে হবে তোমাকে ৷ আমি পারলে তুমি কেন পারবে না? অামার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ৷ এখন তোমাকে পারতে হবে ৷ ফোন দিবা না আর ৷ অভ্যাস করে নিতে হবে তোমাকে ৷
ইশান : ইশিতা!!
ইশানের মুখে ওর নাম শুনে ওর বুকটা কেঁপে উঠলো ৷ মুখে যাইই বলুক ও তো এখনো ভালোবাসে ওকে ৷ কিন্তু সেটা কেউ বুঝচ্ছে না ৷ নিজেরদের জেদ নিয়ে সবাই বসে আছে ৷ ইশান আবার বললো,,,,,,,
ইশান : বিয়েটা করো না ইশিতা প্লিজ ৷ সহ্য করতে পারবো না আমি ৷ মরে যাবো ৷ বিয়ে করো না ৷ প্লিজ ইশিতা ৷
ইশিতা : কিছু করার নেই আমার ইশান ৷ সব ভালোবাসার পূর্ণতা পেতে নেই ৷ কিছু কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যাওয়াই শ্রেয় ৷ যেমনটা আমরা ৷ আমাদের মন তো অনেক আগেই এক হয়ে গিয়েছে ৷ বাকিটা নাহয় অপূর্ণই থাক ৷
কানের থেকে ফোন সরিয়ে বিছানায় রেখে দিল ইশিতা ৷ ওপাশ থেকে কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না ৷ চুপ করে আছে দুজনেই ৷ দুজনের চোখ ভর্তি পানি আর রয়েছে বুক ভর্তি কষ্ট ৷
“আমার জন্য কখনোই আমি তোমার ক্ষতি করতে পারবো না ইশান ৷ আমাদের ভালোবাসার জন্য কারো জীবনও নিতে পারবো না আমি ৷ আমি নিরুপায় ইশান ৷ আমি নিরুপায় ৷ আমার হাত, পা, মুখ সব বাঁধা ৷ চাইলেও আমি কখনোই তোমার কাছে যেতে পারবো না ৷ তোমাকে গভীরভাবে দেখতে পারবো না ৷ কেন আমাদের ভাগ্যটা এরকম হলো বলতে পারো? নিজের ভালোবাসার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে কখনোই পারবো না আমি ৷ তোমাকে বাঁচাতে হলে আমাদের ভালোবাসাটা হারিয়ে যাক ৷ তবুও তুমি তো থাকবে ৷ এটাই অনেক ৷” (ইশিতা মনে মনে বললো)
ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলো ও ৷ ওর দৃষ্টি ফোনটার দিকে ৷ চোখ বেয়ে পরছে অজস্র নোনা জল ৷ ইশানের শূন্যতা পুড়িয়ে দিচ্ছে ওকে ৷ সেই দহনে ওরা দুজন শেষ হয়ে যাচ্ছে ৷ বুক ফেঁটে আসা একটা শ্বাস নিয়ে ইশান ইশিতাকে বললো,,,,,,,,,
ইশান : একটা গান শোনাবে?
ইশিতা কিছুক্ষন চুপ করে রইল ৷ তারপর কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে খালি গলায় সূরে তুল গাইতে লাগলো,,,,,,,,,,
🎶চলতি সময় থমকে দাঁড়ায়🎶
জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
🎶তোমার এই হাত ধরতে চায়🎶
ফাগুন হাওয়ায়
🎶কি মায়া কোণ সে নেশায়🎶
বারে বার মন ছুঁতে চায়
🎶চেনা মুখ ঘুরপাক খায় চোখের পাতায়🎶
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
🎶আমি বার বার হাজারবার তোমাকে চাই🎶
_____________________
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,