#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__২১
#অদ্রিতা_জান্নাত
তখনি নিচ থেকে সবার বলা আনন্দের এক চিৎকার ভেসে এলো ওর কানে,,,,,,, “বর এসেছে! বর এসেছে!”
ইশিতা একটু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দৌঁড়ে ছাদে চলে গেল ৷ ছাদের একদম কিনারে গিয়ে দাঁড়ালো ও ৷ আনমনেই বলে উঠলো,,,,,,,,,,,
ইশিতা : আমি বিয়েটা করতে পারবো না ৷ পারবো না আমি ৷ পারবো না কখনোই ৷
বলেই ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকালো ৷ ওর হাত, পা কাঁপছে ৷ ছাদ থেকে লাফ দিতে যেয়েও ও পারছে না ৷ পারছে না ও সাহস করে মৃত্যুর পথটা বেছে নিতে ৷ ওর পুরো শরীর কাঁপছে ৷ পারবে না ও ৷ কখনোই পারবে না এমন ভয়ানক একটা কাজ করতে ৷ মেঝেতে বসে পরলো ইশিতা ৷ কাঁদতে লাগলো ও ৷
ইতি ইশিতাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এলো ৷ ছাদে এসে ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওর কাছে ছুটে চলে গেল ৷ ইশিতাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,
ইতি : বোন কাঁদছিস কেন? প্লিজ কান্না বন্ধ কর ৷ তুই পালিয়ে যাবি? এখনো সময় আছে ৷ বিয়ে পড়ানো দেরি আছে অনেকটা ৷ তুই যাবি? চল ৷
ইশিতা ইতিকে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,
ইশিতা : আমাদের সঙ্গে কেন এরকম হলো আপুই? বাপি কেন বোঝে না আমাদের? একটুও কি মায়া হয় না? একটুও কি কষ্ট হয় না আপুই?
ইতি : ওসব ছাড় ৷ চল তুই ৷ এই বিয়েটা করতে হবে না তোকে ৷ চল ৷
বলেই ইতি ইশিতাকে ধরে ধরে ওঠালো ৷ ইশিতা পাগলের মতো প্রলাপ বকছে ৷ যেন আজ ও নিজের মধ্যেই নেই ৷ ইতি ইশিতাকে ইশিতার রুমে বসিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,,,
ইতি : বোন তুই একটু বস ৷ কোত্থাও যাবি না একদম ৷ এক্ষুনি আসছি আমি ৷
বলেই ইতি দৌঁড়ে রুমের বাহিরে চলে গেল ৷ ইশিতা চুপ করে বসে রইলো ৷ হঠাৎ নিচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো ইশিতা ৷ চেনা একটা গলার আওয়াজ ওর কানে আসতেই দৌঁড়ে রুমের বাহিরে চলে গেল ৷ নিজের শাড়ি হাত দিয়ে ধরে ছুটে নিচে চলে গেল ও ৷ ওকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো ৷ ইশিতা ইশানকে ওর সামনে দেখে হালকা হাসলো ৷ ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো ৷
ইশান ইশিতাকে একপলক দেখতে ওর বাড়ি এসেছিল ৷ কিন্তু এখানে এসে ও নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছে ৷ বাড়ির চারপাশটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ একদম বিয়ে বাড়ির মতো ৷ সেটা দেখেই ইশানের বুকটা ধুক করে উঠলো ৷ সবাইকে উপেক্ষা করে বাড়ির ভিতরে চলে এলো ৷ ইশিতাকে কনে সাজে আজ ২য় বার দেখলো ও ৷ আগের বারের থেকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ৷ চোখ আটকে রইলো ইশিতার দিকে ৷ মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইশান ইশিতাকে ৷
ঠিক তখনি দুইটা লোক ইশানের হাত ধরে পেছনে নিয়ে গেলো ওকে ৷ খানিকটা চমকে উঠলো ইশান ৷ ইশিতাও ভয় পেয়ে গেলো ৷ ছুটে চলে গেলো ওর বাবার কাছে ৷ ওর বাবার হাত ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,
ইশিতা : বাপি ইশানকে ছেড়ে দাও প্লিজ ৷ ওওকে কিছু করো না প্লিজ ৷
ইশান ওই দুইটা ছেলের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে দিয়ে ওর দুই হাতের কনুই দিয়ে ওই দুইটা লোকের মুখের মধ্যে মারলো ৷ লোকগুলো মুখে হাত দিয়ে দুকদম পিছনে চলে গেল ৷ আরেকটা ছেলে এগিয়ে আসলে ইশান ওর বুকের মধ্যে একটা লাথি দিয়ে ফেলে দিলো ৷ পিছনের লোক দুইটা এসে ইশানের হাত আবার চেপে ধরলো ৷ সঙ্গে আরো তিনজন লোক এসে চেপে ধরলো ওকে ৷ ইশিতা একপ্রকার চিৎকার করে বললো,,,,,,,,,
ইশিতা : বাপি ছেড়ে দাও ওকে প্লিজ ৷ বাপি ওর কিছু করো না ৷ মেরো না ওকে প্লিজ ৷ ইশানের কিছু করো না বাপি ৷ প্লিজ!
বলতে বলতেই ফ্লোরে বসে পরলো ইশিতা ৷ ওর বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
ইশিতা : বাপি ছেড়ে দিতে বলো ইশানকে প্লিজ ৷ ওকে মেরো না ৷ ওকে ছেড়ে দাও না ৷
বলেই কাঁদতে লাগলো ৷ আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে দেখছে ইশিতাকে ৷ অনেকে আবার কাঁদছেও ৷ কিন্তু আরমান চৌধুরি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ৷ তিনি ইশিতাকে টেনে তুলে স্টেজে নিয়ে গেলেন ৷ সাফির পাশে ওকে বসিয়ে দিয়ে কাজিকে বিয়ে পরাতে বললেন ৷ ইশান চিৎকার করে বললো,,,,,,,,,,
ইশান : বিয়ে করবে না ইশিতা ৷ ডোন্ট ডু দিস প্লিজ ৷ ইশিতা বিয়েটা করবে না তুমি ৷ ইশিতা প্লিজ লিসেন টু মি ৷ তুমি এরকমটা করো না প্লিজ ৷ বিয়ে টা করো না ইশিতা?
ইশিতা ছলছল চোখে ইশানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল ৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওর বাবাকে সরিয়ে দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেল ইশানের কাছে ৷ ইশান লোকগুলোকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ৷ ইশিতা দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ইশানকে ৷ ইশানও শক্ত করে জড়িয়ে নিলো ৷ আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে দেখছে সব ৷ ইশান ইশিতার মুখ তুলে হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,
ইশান : চলে যাবো আমরা ৷ অনেক দূরে চলে যাবো ৷
বলেই ইশিতার হাত ধরে সামনে আগাতে গেলে ইশিতার বাবা টেনে ধরলো ইশিতাকে ৷ সঙ্গে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,
—- এই ছেলেটাকে বাহিরে নিয়ে যা ৷
ইশান ইশিতাকে নিয়ে যাওয়ার আগেই ওর মাথায় বারি পরলো ৷ চিৎকার দিয়ে উঠলো ইশিতা ৷ ইশিতাকে টেনে এনে বসানো হলো আবার স্টেজে ৷ ওর সামনে রেজিস্ট্রি পেপার দিয়ে ওর বাবা বললেন,,,,,,,,
—- সই করো ৷
ইশান চেঁচিয়ে বললো,,,,,
ইশান : ইশিতা না ৷ প্লিজ না ৷ সই করো না ৷
—- তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নিয়ে যা ওকে ৷
চিল্লিয়ে বললেন আরমান চৌধুরি ৷ লোকগুলো ইশানকে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে গেল ৷ কিন্তু ইশান চিৎকার করে যাচ্ছে অনবরত ৷ তাই আরমান চৌধুরি ওপরে চলে গেলেন ৷ সেটা দেখে ইশিতা ঘাবড়ে গেল ৷ হাতের সামনের রেজিস্ট্রি পেপারটা ছিড়ে ফেলে চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,,,,,,,
ইশিতা : তামাশা হচ্ছে এখানে? সবাই কি নাটক দেখছেন দাঁড়িয়ে? যান সবাই ৷ চলে যান এখান থেকে ৷ সব গুলো নিষ্ঠুর ৷ আমার ইশানকে ওই লোকগুলো মারছে এরা কিছু বলছে না ৷ কিচ্ছু না ৷
বলেই স্টেজ থেকে নামলো ইশিতা ৷ পাশ থেকে সাফির মা বলে উঠলো,,,,,,,
—- এই বিয়েটা?
ইশিতা : আপনার ওই ছেলেকে কখনোই বিয়ে করবো না আমি ৷ যেতে পারেন এখন ৷
বলে সামনে আগাতেই ইশিতা ওর বাবাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখলো ৷ আরমান চৌধুরির হাতে বন্দুক দেখে আৎকে উঠলো ও ৷ ওর বাবার কাছে গিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
ইশিতা : কোথায় যাচ্ছো বাপি? ইশানের কিছু করো না প্লিজ ৷ বাপি শোনো না…
ওর বাবা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বাড়ির বাহিরের দিকে চলে গেল ৷ ইশিতা ওর মায়ের উপর গিয়ে পরলো ৷ ও উঠে চলে যেতে নিলে ওর মা ওকে ধরে বললো,,,,,,,
—- মা রে! যাস না মা ৷ এদিকে দেখ ৷ বাহিরে যাস না ৷
ইশিতা ওর মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ৷ একপলক সবার দিকে তাকিয়ে দৌঁড়ে বাহিরে চলে গেল ৷
দুইটা ছেলে ধরে আছে ইশানকে ৷ আর ইশানের সোজাসোজি ইশিতার বাবা ওর দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ইশিতা দৌঁড়ে গিয়ে ওর বাবাকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,
ইশিতা : বাপি প্লিজ ৷ কিছু করো না ওর ৷ গুলি চালিয়ো না বাপি ৷ মেরে না ওকে ৷ তুমি যা বলবে তাই করবো আমি ৷ বিয়ে করবো? হুম করবো ৷ যাকে বলবে তাকেই করবো ৷ কিন্তু ওকে মেরো না প্লিজ ৷ তুমি চলো এক্ষুনি বিয়ে করবো আমি ৷ ওকে ছেড়ে দাও ৷ গুলি চালিয়ো না প্লিজ ৷ মেরো না ওকে বাপি ৷
আরমান চৌধুরি ইশিতাকে সরিয়ে দিয়ে ইশানের দিকে তাকালো ৷ ইশান চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,,,,,,,
ইশান : ইশিতা চলো চলে যাই আমরা ৷ বিয়েটা করতে হবে না ৷ চলো তুমি ৷ অনেক দূরে চলে যাবো আমরা ৷ চলো ইশিতা ৷
ইশিতা হালকা হেসে সামনে এগিয়ে গেল ৷ ইশান ওকে ধরে রাখা ছেলে দুটোর হাত টান মেরে সামনে এনে দুজনের মাথার সঙ্গে দুজনের বারি খাওয়ালো ৷ ছেলে দুটো মাটিতে পরে গেল ৷ ইশিতার দিকে হাত বারিয়ে বললো,,,,,,,, “চলো!”
তখন পিছন থেকে ইশিতার বাবা জোরে ডেকে উঠলো,,,,,,,,,,
—- ইশিতা? যাবে না তুমি ৷
ইশিতা ওর বাবার দিকে ঘুরে তাকালো ৷ তিনি ইশানের দিকে তাকিয়ে আছেন ৷ ইশিতা একবার মাথা ঘুরিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আবার ওর বাবার দিকে তাকালো ৷ কিছু একটা মনে হতেই দৌঁড়ে ইশানের কাছে চলে গেল ৷ তখনি একটা গুলির আওয়াজে সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গেল ৷ ইশিতার মা মাটিতে বসে পরলেন ৷ ইতি আর ওর ফুপ্পি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো ৷ কিছুক্ষনের জন্য চারপাশটা শান্ত হয়ে গেল ৷ সবার চোখ ইশান আর ইশিতার দিকে ৷
গুলিটা এসে লেগেছে ইশিতার পেটে ৷ পেটে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ইশানের বুকে ঢলে পরলো ও ৷ ইশান ইশিতাকে দুহাতে আগলে নিয়ে মাটিতে বসে পরলো ৷ ইশান ওর হাত দিয়ে ইশিতার পেট চেপে ধরলো ৷ তবুও ক্রমশ রক্ত পরেই যাচ্ছে ৷ ইশানের দম বন্ধ হয়ে আসছে ৷ ইশিতা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ওর বাবার দিকে তাকালো ৷ বন্দুক হাতে নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সে ৷ তবে আজ তার চোখে পানি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ৷ ইশিতা তাচ্ছিল্য হাসলো ৷ ইশানের হাতটা ওর পেটের উপর থেকে নিয়ে চুমু খেল ৷ ইশানের গালে ওর রক্তাত্ত হাত রেখে ইশানের চোখের পানি মুছে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,,,,,,,
ইশিতা : ই…ইশান শ…শে…ষ বারের মতো এ…একটু ছুঁয়ে দ…দিবে আমায়য়?
ইশান শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,,,,
ইশান : এটা কি করলে ইশুপাখি? কেন করলে এরকমটা? কেন সামনে এলে?
বলেই কাঁদতে লাগলো ইশান ৷ ইশিতা হাসলো হালকা ৷ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিলো ও ৷ ইশান ওর ঠােঁট ইশিতার কপালে হালকা ভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,
ইশান : তোমার কিচ্ছু হবে না ৷ হসপিটালে নিয়ে যাবো আমি তোমায় ৷ তোমায় বাঁচতে হবে আমার জন্য ৷
বলেই ইশিতাকে কোলে নিতে গেলে ইশিতা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,
ইশিতা : ন…না ই…ইশান ৷ নিয়ে য…যেও না ৷ ত…তোমার কোলে ম…মাথা র…রেখে মরতে চাই আ…আমি ৷
ইশান : কি আবোল তাবোল বলছো ইশিতা? কিচ্ছু হবে না তোমার ৷
ইশিতা : ব…বুকে জ…জড়িয়ে ন…নিবে আমায় এ…এ…একটু?”‘
ইশান ইশিতার মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরলো ৷ ঠিক তখনি আরেকটা গুলি এসে লাগলো ইশানের বুক বরাবর ৷ ইশিতা ওর কাঁপাকাঁপা রক্তে ভেজা হাত দিয়ে ইশানের বুকটা চেপে ধরলো ৷ ইশান মাটিতে লুটিয়ে পরলো ৷ কিন্তু ইশিতাকে ছাড়লো না ৷ ওকে জড়িয়ে ধরেই রইলো ৷
ইশান ওর কাঁপাকাঁপা হাত ইশিতার মাথার উপরে রেখে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রইলো ৷ ইশিতা ইশানের বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো ৷ ইশানের গায়ের শার্টটা টেনে ছিড়ে ফেললো ও ৷ বুকের যেখানে গুলি লেগেছে ঠিক সেখানে হাত রাখলো ও ৷ ইশানের উদাম বুকে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো ইশিতা ৷ আস্তে আস্তে চোখ বুজে এলো ওদের ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,