১.
ড্রয়িংরুমে সবার সামনে কমড়ের বেল্ট দিয়ে বিরতিহীন ভাবে মেরে চলেছে আয়ান ভাইয়া।কেউ এগিয়ে আসছে না!সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে শো দেখছে।দুঃখের বিষয় তাদের মধ্যে আমার বাবা-মাও রয়েছে।চিল্লিয়ে কান্না করছি আমি।আয়ান ভাইয়া জলন্ত সিগারেট আমার গায়ে ছুড়ে মারে।জামার কিছু অংশ পুড়ে গায়ে আঁচ লাগে।তারপর আবার মারতে শুরু করে আয়ান ভাইয়া।গা ফেটে রক্ত পড়ছে।রক্তে ভিজে গায়ের সঙ্গে চেপটে বসেছে জামা।তবুও তার মারা বন্ধ হচ্ছে না।একপর্যায়ে ফুফা তাকে সড়িয়ে নেয়।আমার বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে।তাদের মুখের গভীরে একটু হাসির রেখা।কিন্তু বাহির থেকে বোঝা যাচ্ছেনা।ফুফা আয়ান ভাইয়াকে তার রুমে নিয়ে যায়।সবাই সেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।কেউ আমার দিকে তাকালোও না।ফুপি এসে আমাকে ধরে আস্তে আস্তে রুমে নিয়ে যায়।সমস্ত গা দিয়ে রক্ত জবজব করে পড়ছে।ফুপি আমাকে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।ওই অবস্তায় সাদা বিছানায় শুয়ে পড়ি আমি।রক্তে ভিজে যাচ্ছে সাদা চাদর।সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই আমার।গায়ে-পায়ে ব্যাথার শেষ নেই।আজকের মতো মাইর জীবনে আরো অনেকবার খেয়েছি।তাই বিষয়টাতে ততটা ভ্রুক্ষেপ করার মত ইচ্ছা বা মন-মানুষিকতা নেই এখন।আমার আজকের অপরাধটা এখনো বলা হয়নি।শুধু এইটুকুতেই অপরাধের শাস্তি মাফ হলে তো হতোই।এর পরে গিয়ে বসতে হবে দাদুর সামনে।সেখানে খেলেও খেতে হবে দু-চারটা মাইর।বিছানায় শোয়া অবস্তায় তাকিয়ে আছি উপরে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকে।হঠাৎ রুমে কারো আসার শব্দ হয়।তাকাতেও ইচ্ছে করছে না।অনিচ্ছাসস্ত্বেও মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি আয়ান ভাই।ভয়ে কাঁপতে শুরু করে সমস্ত শরীর।কারন,তার হাতে এখনো বেল্টটা রয়েছে।আয়ান ভাই দরজাটা লাগিয়ে দেয়।এগিয়ে আসতে থাকে আমার দিকে।আমি মাথা নিচু করে ভয়ে কাঁপতেছি।আয়ান ভাই এসে আমার পাশে দাঁড়ায়।আমি বসা অবস্তায় রয়েছি।আয়ান ভাই তার হাতটা দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে আমার নজরটা তার দিকে করে নেয়।তাকে দেখে চমকে উঠি খানিকটা।চোখগুলো মনে হচ্ছে জলন্ত আগুনের শিখা।আয়ান ভাই আমার মুখটা চিপে ধরে নিজের মুখটা আমার মুখের কাছাকাছি নিয়ে এসে বলে,
~”রাশু তোর আজকে অপরাধ কি জানিস?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে নিরব দর্শকের মতো না বলে দেই।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে এখনো।আয়ান ভাইয়া তার অপর হাত থেকে বেল্টটা ফেলে দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে খানিকটা চিল্লিয়ে বলে,
~”তুই এত বাজে সেটা আমরা কেউই ভাবিনি।ছি.তুই তোর ব্যাগের ভিতরে এসব নিয়ে ঘুরিস!”
এই বলে পকেট থেকে একটা পিল বের করে আমার সামনে ধরে।অপর হাতটা দিয়ে আমার চুলগুলো টেনে চিল্লিয়ে আবার বলে,
~”কি কার সাথে শারিরিক সম্পর্ক করিস?এত বাজে হয়ে গেছিস!বল কেন তোর ব্যাগে এসব?”
আমি বুঝতে পারছি না এই জিনিসটা কিভাবে আমার ব্যাগে আসলো।আয়ান ভাইয়া এবার পকেট থেকে লম্বা একটা কাগজ বের করে।আমি লক্ষ্য করলাম আয়ান ভাইয়ার চোখে পানি।কিসের কাগজ এটা?আয়ান ভাইয়া কান্নামৃশ্রিত গলায় বলে,
~”কার সন্তানের মা তুই!”
কথাটা শুনে শরিরে বিদ্যুতের শক খাই।কি বলছে ভাইয়া?আয়ান ভাইয়া চুলগুলো আরো জোরে টেনে বলে,
“কার সন্তানের মা তুই!নাকি তোর পেটের সন্তানের বাবা একাধিক ছেলে!”
নিজের চরিত্র নিয়ে কথা বলায় আর সহ্য করতে না পেরে ঝটকা দিয়ে সড়িয়ে দিলাম তাকে।তার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে দেখতে শুরু করি।এটা একটা প্রেগনেন্সি রিপোর্ট।বেশি অবাক হই সেখানে আমার নাম লেখা দেখে।আমি এক ঝটকায় ছুঁড়ে ফেলি কাগজটা।নিজের চোখকে বিস্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।কি দেখলাম?আজ পর্যন্ত কোনো ছেলের সাথে ভালোভাবে কথা বলিনি আর সেখানে কিনা নামের সাথে কলক্কিনি পদটা লেগে যাচ্ছে।আয়ান ভাইয়া কাগজটা কুড়িয়ে নিয়ে বলে,
~”বাবারা বলেছে,তোর মতো মেয়ে পরিবারে থাকলে পরিবারের দুর্নাম হবে।তুই যেন আর এই বাসায় না থাকিস।তোর মতো কলক্কিনিকে এই বাসায় আর কেউ দেখতে চায় না।তুই আজকেই বাসা থেকে বের হয়ে যাবি।এটাই আমাদের শেষ কথা।”
এই বলে আয়ান ভাই আমার রুমের দরজার দিকে এগোতে থাকে।তার বলা কলক্কিনি শব্দটা আমার কানে প্রতিধ্বনি করছে।আয়ান ভাই দরজার কাছে দাড়িয়ে বলে,
~”তোর কাছ থেকে এটা কেউ আশা করেনি।তোর পেটে রয়েছে একাধিক ছেলের বাচ্চা।”
কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায় আয়ান ভাই।আমি কিছুই ভাবতে পারছি না!কিভাবে আমার ব্যাগে এইসব জিনিস আসলো?আমি তো রাখিনি।তো কে রাখলো?
বুঝতেই পারছি আর এই বাড়িতে থাকা হবেনা।তবুও সেই শরির নিয়ে আস্তে আস্তে সবার ঘরে গেলাম।কেউ আমার সাথে কথা বলছে না।এমকি আমার বাবা-মাও আমাকে দেখে দরজা লাগিয়ে দেয়।মনে একরাশ অভিমান জায়গা করে নেয়।অভিমানটা এইটা যে,আমার বাবা-মাও আমাকে বিস্বাস করলো না।একটিবারও শুনতে চাইলো না কি হয়েছে?আমি তো পারি এখনি একটা ল্যাবে গিয়ে পরিক্ষা করে রিপোর্ট এনে তাদের ভুল ভাঙ্গতে।কিন্তু না আমি তাদের ভুল ভাঙ্গবো না।চলে যাবো এই বাসা ছেড়ে।যাদের মনে একবারের জন্য আমার জন্য অনিস্বাস জেগে উঠেছে তারা কিভাবে আর আমার কথা বিস্বাস করবে?
আস্তে আস্তে নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ গোছাতে শুরু করি।গায়ের রক্ত গায়েই জমাট বেধে রয়েছে।ক্ষত স্তানগুলো চিনচিন করছে ব্যাথায়।কোনো রকমে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ারটা ছেড়ে দেই।ক্ষত জায়গায় পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব ব্যাথা করে জায়গাটা।গলা ফেটে কান্না বের হচ্ছে।ক্ষুধায় পেট ফেটে যাচ্ছে।আস্তে করে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসি।ড্রেসিনের উপরে রাখা স্যাবনলটা তুলায় ভরে নিজের ক্ষত স্তানগুলোতে লাগাতে থাকি।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে সমানতালে।স্যাবলন লাগানো শেষ হলে একটা জামা বের করে পড়ে ফেলি।ব্যাগ গোছানোই রয়েছে।থাকতে চাইছে মনটা এই বাড়িতে।কিন্তু থাকতে মানা।তবুও ব্যাথায় গা এলিয়ে দেই বিছানায়।মুহুর্তেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায়।এক ঘুমেই দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে যায়।কারো গা ধাক্কানিতে ঘুমটা ছুটে যায়।তাকিয়ে দেখি আমার মা।আমার দিকে অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে।
আমি উঠে ঘড়িটা দেখে চমকে উঠি।এতক্ষন ঘুমালাম আজ।মা দাঁড়িয়ে আছে সামনে।ব্যাথা নিয়ে তারাতারি উঠে ব্যাগটা হাতে নেই।উদ্দেশ্য এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যাওয়া।মা পিছন থেকে বলে,
~”তুই এত খারাপ আমি ভাবিনি।তোকে পেটে ধরে কি আমি ভুল করেছিলাম।শেষ পর্যন্ত কলক্কিনির মা বানিয়ে চলে যাচ্ছিস।তোর সাথে কথা বলতে আসিনি।তোর দাদু বললো তোকে যেন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই।তুই চলে যা এই বাসা থেকে।”
প্রতিবাদের কথা থাকলেও বললাম না।কারন যেখানে একটা মা তার সন্তানকে কলক্কিনি বলেই দিয়েছে সেখানে কি আর ওই সন্তানটা তার মায়ের মনে জায়গা করে নিবে।কলক্কিনি উপাধি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি।
বের হয়ে যাওয়ার সময় সবাই আমাকে দেখে নিজের মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছে।নির্জন রাস্তায় একাই হাটতেছি।এই সময় আমার কলেজ ফ্রেন্ড আসে আমার সামনে।প্রত্যয়!কয়েকদিন আগে আমাকে প্রপোজ করেছে।একসেপ্ট করিনি,সে এখন সামনে এসে দাড়িয়েছে।তাকে দেখে খানিকটা চমকে উঠি আমি।রাতে ও আমাদের বাসার সামনে কেন?সে আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বলে,
“এত রাতে কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
আমি তার হাত থেকে ব্যাগ নিতে গেলে সে আমার হাতটা ধরে ফেলে।আয়ান ভাইয়া বাহিরে বের হয়েছিল।অর্ধেকটা দেখে ফেলে সে।আমি একটা ছেলের হাত ধরে আছি।রাগ ছড়িয়ে পড়ে তার সম্পুর্ন মুখখানিতে।বাসা থেকে বের করে দিতে না দিতেই একটা ছেলের হাত ধরে চলে যাচ্ছে।ছি.এই মেয়ে মনে হয় একটা ছেলের সাথে নয় একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক রয়েছে।ছি.
আমি প্রত্যয়ের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে নেই।প্রত্যায় আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে।রাস্তায় কেউ নেই!প্রত্যয়ের নজর খারাপ সেটা বুঝতেই পারছি।হয়তো সেদিনের প্রপোজাল একসেপ্ট না করার প্রতিশোধ নিচ্ছে।সে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।তাহলে কি সত্যি সত্যি কলক্কিনি উপাধিটা আমার নামের সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে?
চলবে..
গল্প:রক্তিম রোদ
লেখনীতে:নিয়াজ মুকিত
পর্ব:১ম
{এই স্ক্রিপটা আমার মাথায় আসে কাল রাতে।আজ সকালে গবেষণা করে লিখে ফেলি।ভালো করে সাজাতে পারিনি।তবুও কেমন হয়েছে জানাবেন।আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করছে পরবর্তি পর্ব দেয়ার উৎসাহ}আল্লাহ হাফেজ।নামাজ কায়েম করুন।