অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই পর্ব ৬

#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই

#পর্ব-০৬
#লেখনী-সুরাইয়া ইসলাম সানজি।

সাদা কাপড় সড়িয়ে দেখে সেখানে অন্য একটা মেয়ে ন্যান্সির অফিসের পি.এ।
আয়াতস্বস্তির নিশ্বাস ফেলে, পরক্ষনে আবার অস্থির হয়ে চারদিকে হন্য হয়ে আলাইনাকে খুজতে থাকে।

আয়াত আলাইনাকে খুজতে খুজতে অফিসে এক পাশে এসে একটা রুমের ভিতরে কান্নার শব্দ পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে,
আলাইনা ছোট একটা মেয়ের পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।

আলাইনা যখন ফাইল নিতে লিফটের কাছে যায় তখন ছোট বাচ্চা মেয়ের কান্নার আওয়াজে সেদিকে ছুটে যায়। গিয়ে দেখে ছোট মেয়েটা সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরে যাচ্ছে।বাচ্চাটার পা ছিলে গেছে হাত মচকে ফুলে ওঠেছে। তাই দ্রুত মেয়েটাকে কোলে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে সিড়ির পাশে একটা ছোট রুমে এসে মেয়েটার হাতে মলম লাগিয়ে দেয়।

—“মিস আলাইনা, আপনার মাথায় কি কমন সেন্স বলতে কিছু নেই। ওদিকে কতো বড় দুর্ঘটনা হয়ে গেলো আর আপনি এই রুমে।”

আলাইনা আয়াতে কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে দেখে আয়াত আগোছালো ভাবে তাকিয়ে আছে। চুল গুলো এলোমেলো চোখ লাল হয়ে আছে। চোখের কোনায় জল জমে আছে।

আলাইনা ভীত গলায় বলে-

—“আসলে স্যার ফাইল নিতে এসে দেখি এই বাবুটা সিড়ি দিয়ে পরে গেছে তাই একটু মলম লাগিয়ে দিলাম। কিন্তু ওদিকে কি হইছে? আসলে স্যার ও খুব জোড়ে কান্না করছিলো বলে রুমে আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু আপনার কি হইছে এভাবে আগোছালো কেনো আপনি?

আলাইনার প্রশ্নের জবাবে কিছু না বলে আয়াত তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এই মুহুর্তে আলাইনাকে বুকের মাঝে শক্ত করে ঝড়িয়ে নিতে ইচ্ছা করলেও ইচ্ছাটা দমন রেখে বাহিরে বের হয়ে যায়।
,
,

পুলিশ এসে সবকিছু দেখে বলে এটা কোনো দুর্ঘটনা না ইচ্ছে করে লিফট নষ্ট করা হয়েছে।
এবার আয়াতে মনে ভয় হতে থাকে। না এসব আর যাই হোক কাকতলীয় না কেউ ইচ্ছা করেই আলাইনার ক্ষতি করতে চাইছে। কিন্তু এই দেশে কে বা চেনে আলাইনা কে? এই মুহূর্তে এসব না জেনে আলাইনাকে সেইভ করে নিতে পারলেই হতো, সে আর আলাইনাকে সাথে নিয়ে বিপদে পরতে চায় না। যতোদ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যাবে।

______________________________

বাসায় ফিরতেই রাহি আলাইনাকে ঝড়ায়ে ধরে কান্না করে।
ছোট বেলায় রাহির বাবা মারা যাওয়ার পর আলাইনার বাবা তাদের অনেক সাহায্য করছিলো সেই থেকেই আলাইনা রাহির বন্ধুত্ব। আলাইনা যখন পড়ালেখা করতে শহরে আসে তখন রাহির মা আলাইনাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। সেই থেকে ওদের একসঙ্গে থাকা।

আলাইনা রাহির কানে পাশে মুখ নিয়ে মুচকি হেসে বলে,
—“ওহহ আবার তো ছাড়, ভিতরে কি যেতে দিবিনা অনেক ক্লান্ত আমি। তোর সাথে অনেক কথা আছে আর হ্যাঁ সারপ্রাইজ ও আছে।”

সারপ্রাইজের কথা শুনে রাহি আলাইনার দিকে ফিরে বড় বড় চোখ করে বলে-
—“কি সারপ্রাইজ বল? আসলে দোস্ত জানিস তো তোর মতো ভালো আমাকে কেউ বাসতে পারবেনা।”

আলাইনা মুচকি হেসে চোখ টিপে বলে-
—“জামাই আনছি তোর জন্য, তোর তো হঠাৎ হঠাৎ জড়িয়ে ধরার স্বভাব আছে, এবার থেকে জামাইকে ধরবি।”

রাহি চোখমুখ কুচকে সেখান থেকে ওঠে যায়। রাহির মুখের রিয়েকশন দেখে হাসিতে ফেটে পরে আলাইনা।
,
,

মিটিংয়ে ডিলটা তারা পাওয়ায় কালকে রাতে আয়াতের বাসায় পার্টির এরেন্জ করা হয়েছে। অফিসের সব স্টাফদের আসতেই হবে, সাথে বাহিরের অনেক গেস্টরাও আসবে।

সকালে আলাইনার নামে একটা পার্সেল আসলে, খুলে দেখে গোল্ডেন কালারের খুব সুন্দর একটা গাউন। পাশে একটা চিরকুট

“তোমার সব রুপেই আমি বিমোহিত মায়াপাখি,আচ্ছা তোমার মাঝে একটু মায়া কম থাকলে খুব কি দোষ হতো। না পারি তোমার রুপের মোহোয় তলিয়ে যেতে আর না পারি তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে।”

রাহি পার্সেল ওল্টে পাল্টে কে দিছে এটা খুজতে থাকে। আলাইনা বেশ বুঝছে গাউন টা কে পাঠিয়েছে।পুরোনো সেই নাম “মায়াপাখি” নামটা আনমনে মুখে আওড়াতেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।
,
,

সন্ধ্যার দিকে আলাইনা আর রাহি পার্টির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে।
আলাইয়া আজ হালকা মেকাপ করেছে,সাথে নুড লিপস্টিক, গাউনের সাথে মিলিয়ে কানের দুল, চোখে হালকা কাজল, কোমর ছোয়া চুলগুলো খুলে দিয়েছে। সব মিলিয়ে এক মায়াপরী।

অফিসের কিছু কলিগের সাথে আলাইনা আর রাহি দাড়িয়ে কথা বলছে। সবার হাতে ড্রিংস এর গ্রাস থাকলেও আলাইনা আর রাহির হাতে জুসের গ্লাস কিছুখন পর ন্যান্সি এসে আয়াত কে ঝড়িয়ে ধরে আয়াতও কিছু না বলে মুচকি হেসে ন্যান্সি কে জড়িয়ে ধরে।

আলাইনা দূর থেকে আয়াতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, আয়াত গেষ্টের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। আলাইনা মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে আছে।আচ্ছা এই লোকটার সব কিছু এমন পার্ফেক্টলি কেনো?
হঠাৎ ন্যান্সি আয়াতকে জড়িয়ে ধরায়, চোখ মুখে বিরক্তে ছাপ এনে রাহি কে জিঙ্গেস করে-

—“আচ্ছা রাহি এই মেয়েটা কে? স্যার তো অনেক রাগী কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারেনা তাহলে এর সাথে এতো ক্লোজ কেনো।”

—“ওহহ এই মেয়েটা? ওহ তো ন্যান্সি, কেনো তুই ম্যামকে আর কখনো দেখিস নাই? আমাদের কোম্পানির সাথে ১০% সেয়ার আছে, আর আয়াত স্যারের ফিওন্সি।
বড় স্যার মানে আয়াত স্যারের বাবা একবার এক্সিডেন্ট করেছিলো তখন এই মেয়েটার জন্য বেঁচে যায়। তারপর বড় স্যার ন্যান্সি ম্যাম কে একমাএ ছেলের বউ হিসেবে গ্রহন করলেও আয়াত স্যার মেনে নেয়নি কিন্তু বাবার জোড়াজুড়ি আস্তে আস্তে মেনে নেয়।
এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই, এবার বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যই ন্যান্সি ম্যাম দেশে আসছে।”

রাহির এতোখন কথাগুলো সবকিছুই আলাইনার মাথার উপর দিয়ে যায়।
শুধু একটা কথা কানে ভাসছে ” ন্যান্সি আয়াতের ফিওন্সি”

আলাইনার কথা টা স্তব্দ মনে কয়েক বার ভাবতেই যেনো দম বন্ধ হয়ে যায়। যার জন্য আজো সব কিছু ছেড়ে শহরে পরে আছে সে কিনা অন্য একজনের। আলাইনার চোখ থেকে অঝোরে জল পরছে। এই মুহূর্তে তার শান্তি প্রয়োজন, কোথায় যেনো শুনেছে ড্রিংস করলে সামরিক শান্তি পাওয়া যায়।
আলাইনা আর কিছু না ভেবে পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে ড্রিংস ঠেলে নেয়, প্রথমে একটু মাথা ঝিম ঝিম করলেও পরে নেশা হয়ে যায়।
,

আস্তে করে ভিড় ঠেলে পাশের সোফায় শুয়ে পড়ে আলাইনা, পার্টি শেষ হতেই সবাই চলে যায়। রাহিও হালকা ড্রিংস করায় আলাইনার কথা মনে ছিলো না সে একাই বাসায় ফিরে। আয়াত সবাইকে বিদায় দিয়ে আসতেই দেখে আলাইনা সামনের সোফায় শুয়ে আছে আর মাতালের মতো বিরবির করে কিছু বলে যাচ্ছে।

আয়াত আলাইনাকে কিছুখন ডাকে আলাইনা ওঠে না। আয়াত বেশ বুঝতে পারছে আলাইনা আজ ড্রিংস করেছে।

আয়ায় কিছু না ভেবে আলাইনেকে কোলে তুলে । নিজের রুমে নিয়ে। আলাইনা আয়াতকে শক্ত করে ঝড়িয়ে ধরে, পিটপিট করে আয়াতের দিকে কিছুখন তাকিয়ে থাকে তারপর টুপ করে আয়াতের গালে চুমু দিয়ে আবার আয়াতের কোলে ঠোলে পরে বিরবির করে কিসব বলতে থাকে।

আয়াত আলাইনাকে নিজের বেডের ওপর রেখে একটা কাথা গায়ে টেনে আলাইনার মুখের সামনে বসে। এবার আলাইনার বিরবির করা কথাগুলো আয়াত স্পষ্ট শুনতে পারছে-
“আয়াত কেনো করলে এমন,” এই কথাটায় আলাইনা বিরবির করে বারবার বলছে।

আজ আয়াতে পুরানো কথাগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সে চলে আসার পর আদ্রিলের সাথে আলাইনার কি হয়েছিলো নিজের অতিতের সব কথা জানতে ইচ্ছা করছে, আলাইনার ডান হাতটা আলতো করে দু হাতের মুঠোয় নিয়ে আস্তে আস্তে করে আলাইনাকে সব জিঙ্গেস করে আর আলাইনাও একের পর এক সব বলে যাচ্ছে।
,
,

চলবে,,,,,,

[প্লিজ সবাই সবার মতামত । ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here