যদি_জানতে পর্ব ১০

#যদি_জানতে
Part:10
Written by: Shawon
মিস্টার সাদাফ নিজের কেবিন থেকে বের হতেই তার চোখ আটকে গেল তার অনুভূতির দিকে।তার অনুভূতি তার দেওয়া কালো কালার শাড়ি পরেছে,সাথে হালকা ম্যাকআপ চুলগুলো খোপা করা।মিস্টার সাদাফের আর অন্য কোনো দিকে খেয়াল নেই,আহিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।আহিন’কে দেখে অফিসের সবাই প্রশংসা করছে,এতে মিস্টার সাদাফের একটু হিংসে হলো তাই সে আহিন কল করে নিজের কেবিনে ডাকলো…
-“আমাকে ডেকেছেন স্যার?”
-“হ্যা,এই ফাইলগুলো আমাকে এক্ষুনি শেষ করে দাও!”
-“একটু পরে মিটিং আর এখন এগুলো করতে নিলে আমার মাথা সব প্যাচ খেয়ে যাবে।”
-“তুমি এইখানে বসে থেকে ফাইল গুলো করো,আমি তোমাকে হেল্প করছি।”
আহিন ফাইলগুলো নিয়ে সোফায় চলে গেল,মিস্টার সাদাফ নিজের চেয়ারে বসে থেকে আহিন’কে দেখছে।ভালোবাসে কিন্তু সাহস করে বলতে পারছেনা,এই মিস অনুভূতিকে সে কতটা অনুভব করে তা শুধু ওনি নিজেই জানে।আহিনের খোপার বাহিরের সামনের চুলগুলো আহিন’কে বার বার বিরক্ত করছিল,মিস্টার সাদাফ বিষয়টা লক্ষ্য করে আহিনের কাছে এগিয়ে গেল।আহিনের চুলগুলো বাম হাত দিয়ে কানের পাশে গুচে দেয়।আহিন মিস্টার সাদাফের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে,চোখ ফিরিয়ে ওনার দিকে তাকায়।দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,মিস্টার সাদাফের চোখ প্রেম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কিন্তু আহিন শুধু ওনার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে।এভাবেই কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো তারা নিজেরাও জানে না,হঠাৎ করে দরজায় নক হবার শব্দে ওদের দুজনের ধ্যান ভেঙে যায়।মিস্টার সাদাফ দাঁড়িয়ে বলে….
-“ইয়েস কামিং!!”
-“স্যার,এসটি কোম্পানি এসে গেছে।আমি ওনাদের হলরুমে পাঠিয়ে দিয়েছি আর ওনারা বলেছেন আপনাকে একটু তারাতারি যেতে।তাই আপনাকে ইনফর্ম করতে এসেছি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি যাও।আমরা আসছি।
মেয়োটি চলে গেল,মিস্টার সাদাফ টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বললো….
-“চলো,যাওয়া যাক।আর হ্যা কথাগুলো মনে আছে তো,???ভয় পেও না,আর আতংকিত মুখ না বানিয়ে একটু হেঁসে হেঁসে প্রেজেন্টশন করবে।আর তিন সেকেন্ড চোখটা অফ করে দম নিয়ে দেখবে কে আসে তোমার চোখের পাতায়।বেস্ট অফ লাক!!!”
-“ধন্যবাদ।”
মিস্টার সাদাফ আর আহিন হলরুমে যেতেই বাকি সবাই দাঁড়িয়ে গেল।মিস্টার সাদাফ বললো..
-“আপনারা আপনাদের সিটে বসে পরেন,আপনার সাথে ওনার পরিচয় করিয়ে দেয়।ওনি হচ্ছে আহিন,আজকে ওনি ই প্রেজেন্টেশন করবে আপনাদের মাঝে।আহিন তুমি এবার তোমার মতো করে শুরু করে দাও!”
মিস্টার সাদাফ কথাটা বলেই নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো।আহিনের হার্টবিট এতটা জোরেই চলতে চুরু করেছে মনে হবে একটু পরেই বের হয়ে আসবে।মিস্টার সাদাফের কথা মতো নিজের চোখটা বন্ধ করে দেখতে লাগলো কে তাকে আশা জুগিয়ে দিচ্ছে,চোখ বন্ধ করতেই ওর সামনে ভেসে উঠলো শাহরিয়ারের সেই হাসি মাখা মুখ,আহিনও একটু মুচকি হাসলো সেটা নিজের অজান্তেই,দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে সে তার প্রেজেন্টেশন শুরু করলো।এখন তার মুখে কোনো আতংক নেই,হাসি হাসি মুখে নির্ভয়ে সে তার মতো করে প্রেজেন্টশন করছে।মিস্টার সাদাফ আহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,কি অদ্ভুত সুন্দর আহিনের সেই হাসি।সাদাফের যদি কখনো মন খারাপ থাকে তাহলে এই হাসিটুকুই যথেষ্ট সব মন খারাপ দূর করে দেবার জন্য।প্রেজেন্টেশন শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিতে লাগলো,মিস্টার সাদাফও দাঁড়িয়ে আহিনের কাছে গিয়ে বললো….
-“অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে।”
-“ধন্যবাদ”
সবাই আহিনের প্রেজেন্টেশনের প্রশংসা করছে,আর এসটি কোম্পানি তাদের কে নতুন ক্যামপেইনের দায়িত্ব দেয়।এতে সবাই অনেক খুশি,কারন এই কোম্পানির ক্যামপেইন করার সুযোগ অনেকদিন ধরে হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু আজকে অনেকদিন পর এই সুযোগটা নিজেদের হয়েছে।
আহিন’কে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো,তারপর সাদাফ বলতে লাগলো…..
-“হ্যালো গাইজ,গুড ইভনিং আশা করি তোমরা সবাই খবরটা পেয়ে গেছো।তাই আর নতুন কিছু বললাম না।শুধু এতটুকুই বলবো,আজকের এই দিনটা শুধু মাত্র আহিনের জন্য হয়েছে।আমার কথা ছিল যদি আহিন এই প্রেজেন্টেশন ঠিক মতো করতে পারে তাহলে তাকে প্রোমোশন দেওয়া হবে।আর এখন তাকে তাই করা হবে,এখন থেকে সে এই অফিসের ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার এবং আমার একমাত্র পিএ”
মিস্টার সাদাফের কথা শুনে আহিন একদম হতভম্ব হয়ে গেল।সে ভাবতেই পারছে না এত তারাতাড়ি সে এত উচ্চ পর্যায়ে চলে যাবে,সবাই তাকে হাত তালি দিয়ে বরণ করে নিলো।

সবাই পার্টিতে,যে যার মতো করে ইনজয় করছে।কেউ হালকা ড্রিংক করছে,কেই হালকা নাচছে কিন্তু আহিন একলা এক কোনায় দাড়িয়ে থেকে সবাইকে দেখছে।
মিস্টার সাদাফ পার্টি প্লেসে এসেই আহিন’কে খুঁজতে লাগলো।কোথাও পেল না অবশেষে দেখতে পেল তার অনুভূতি এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।ওনি তার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে পিছন থেকে বললো…..
-“পার্টটি টা কি কুব বোরিং লাগছে?”
পিছন থেকে বলায় আহিন কিছুটা ভয় পেয়ে পিছনে ফিরলো,মিস্টার সাদাফকে দেখে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো….
-“না,তেমন কিছুনা।আমার একটু একা থাকতে ইচ্ছে হচ্ছিল তাই এখানে আসলাম।”
-“তুমি কি ডান্স পারো?”
-“হুম,পারি তো।কেন?
-“চলো তাহলে ডান্স করি!!”
আহিন’কে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টান দিয়ে ডান্স করা শুরু করে দিলো।আহিন প্রথম মন না দিলেও পরে মন দিয়ে ডান্স করতে তাকে।মিস্টার সাদাফ আহিনের চোখে তাকিয়ে আছে,পিচন থেকে আহিনের ঘাড়ের চুলের ঘ্রান নিচ্চে।তাদের ডান্স শেষ হলে সবাই হাত তালি দিতে লাগলো।অন্য আরেকটা ক্লাইন্ট আসলে মিস্টার সাদাফ সেখানে চলে যায় আহিন ওনার পিএ বলে ওকেও সাথে যেতে হলো।
ঐ ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেল।তারপর পার্টি শেষ করে দেওয়ায় যে যার মতো বের হতে লাগলে।আহিন অফিস থেকে বের হচ্ছিল তখনই মিস্টার সাদাফ জিজ্ঞেস করলো….
-“তুমি কি একা যেতে পারবে?নাকি আমি তোমাকে ড্রব করে দিয়ে আসবো।”
-“না,তার কোনো দরকার নেই।আমার গাড়ি চলে আসবে,আমি চলে যেতে পারবো।”
-“তুমি কি শিউর?”
-“হুম,আমি একদম শিউর!!”
-“তাহলে তুমি থাকো আমার কিছু কাজ আছে ওগুলো শেষ করে বের হবো।”

মিস্টার সাদাফ নিজের কেবিনে চলে গেল।আহিন নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করে শাহরিয়ার কে কল করতে লাগলো।কল হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না,টানাটানা পাঁচ থেকে সাতটা কল করলো কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না।আহিন ভাবলো হয়তো শাহরিয়ার আসবে না বলেই কল ধরছে না।ওর নিজের উপরই রাগ হলো ও কেন ওনাকে বলতে গেল?আর ওনিই কেন আমাকে মিথ্যে আশা দিতে গেল।সরাসরি না করে দিলেই পারতো,আমি অন্য কারো কাছ থেকে হেল্প চেয়ে নিতাম।
আহিন ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেল।রাস্তা ঘাটে তেমন কোনো লোকজন নেই,আহিনের ভয়ে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল।পাশ থেকে একটা কুকুর ঘেউ করে উঠতেই সে ভয়ে আতকিয়ে উঠে।সে দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে,কোনো গাড়িও সে দেখতে পারছে না।
হঠাৎ করে কতগুলো ছায়া ভেসে উঠলো,সে পিছনে তাকিয়ে দেখে কতগুলো লোক তার পিছনে।লোক বললে ভুল হবে,কতগুলো বখাটে ছেলে।আহিন পিছনে তাকাতেই ছেলেগুলো কেমন করে যেন হাসতে লাগলো।আহিন তার হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো সাথে ঐ বখাটে ছেলে গুলোও,আহিনের সারা শরীর ঘামতে শুরু করে দিলো।সে এবার দৌড় দিলো,ছেলেগুলো আহিনের পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো।এক পর্যায়ে ছেলেগুলো আহিনের সামনে চলে আসলো।আর শয়তানি হাসি দিয়ে বলতে লাগলো….
-“কি সুন্দরী!এত রাতে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?আমাদের নেশাটা জাগাতে নাকি??”
একটা ছেলে এই কথা বলতেই বাকিগুলো হো হো করে হেসে দিলো।আহিন পাশে থাকে ইঁটের টুকরা দেখতে পেল।সেগুলো সে কতগুলো নিয়ে বখাটে ছেলে দিকে মারতে শুরু করে,একটা ছেলে এসে ওর হাত ধরে ফেললে,ছেলের মেইন পয়েন্টে একটা লাথি মারে সাথে সাথে ছেলেটা নিচে পরে যায়।আরেকটা ছেলে তার হাত ধরে ফেললে কামড় দিয়ে দৌড় দেয়।ছেলেগুলো তার পিছু পিছু আসতেই লাগলো।আহিন দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ির গ্লাসের উপর পরে যায়।
মিস্টার সাদাফ অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিল তখনই দেখতে পায় একটা মেয়ে তার গাড়ির দিকে দৌড়ে আসছে।কষিয়ে ব্রেক করে,আর মেয়েটি গাড়ির উপর পরে যায়।মিস্টার সাদাফ বের হয়ে দেখতে পায় কতগুলো বখাটে ছেলেও আছে।ওনার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেন মেয়েটি এভাবে দৌড়াচ্ছিল।মেয়েটি মাথা তুলতেই সাদাফের রাগ উঠে যায়,কারণ এটা তার মিস অনুভূতি।আর ছেলে গুলো তাকে কুনজরে দেখেছে।আহিন মিস্টার সাদাফকে দেখে ওনাকে গিয়ে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দেয়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here