যদি_জানতে পর্ব ৯

#যদি_জানতে
Part:09
Written by: Shawon

পরেরদিন সকালবেলা…
আহিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল শাহরিয়ার ওয়াশরুম থেকে বের হলো।আহিন কিছু না বলে চুপচাপ নিচে চলে গেল।সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করছিল শাহরিয়ারের ছোট ভাই তার মাকে বললো…
-“মা,অনেকদিন হলো গ্রামে যাওয়া হয়না,চলো না গ্রাম থেকে ঘুরে আসি।আর ফারজুও এসেছে,আব্বুরও ভালো লাগবে আমরাও একটু মজা করে আসলাম।”
-“ঠিকই বলেছিস তাহলে তোর বাবা-র সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।”
আহিন বললো,,,,
-“মা,আমি এখন কিছুদিন খুব বিজি থাকবো,অফিস থেকে কোথাও যাওয়া যাবে না।তাই আমি মনে হয় কোথাও যেতে পারবো না!!!”
আহিনের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো।তাই সে সেখান থেকে উঠে চলে যায়।রুমে এসে ব্যাগ আর ফোনটা হাতে নিয়ে চলে যাবে তখনই শাহরিয়ার রুম ঢুকে।আহিন কিছু একটা বলবে কিন্তু কি করে বলবে তাই বোঝতে পারছিল না।অবশেষে শাহরিয়ারের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো…..
-“একটা কথা ছিলো!”
-“হুম,বলো শুনছি!!”
-“আসলে আজকে আমার অফিসে লেইট হবে,একটা মিটিং আছে আছে তারপর একটা পার্টিও আছে।আমার আসতে লেইট হতে পারে,আমি বাড়ির সবাইকে বলেই যাবো।আপনি শুধু আমাকে গিয়ে একটু নিয়ে আসবেন??যদি আপনার প্রবলেম না হয়।আমি বলতাম না কিন্তু এতরাতে আমি একা আসলে ভয় পাবো আর এখনের দিনকালও ভালো না।”
-“আচ্ছা,তুমি তোমার কাজ শেষ করে আমাকেফোন করো আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।”
-“থ্যাংক্স”
-“হুম”
আহিন রুম থেকে বেরিয়ে সবাইকে বলে বের হয়ে গেল।শাহরিয়ারের বোন ফারজু’র কিছু কাজ থাকায় সেও বাহিরে যাবে,তাই সে আহিন’কে ড্রপ করে দিয়ে গেল।আহিন অফিসে ঢুকে কেবিনে বসতে না বসতেই সাদাফের কল আসলো।মিস্টার সাদাফ তাকে ওনার কেবিনে ডেকেছেন।আহিন নিজের ফোন আর ব্যাগ রেখে ওনার কাছে গেল।
-“আমাকে ডেকেছেন স্যার?”
-“হুম,বসো!!”
-“ধন্যবাদ স্যার!”
আহিন মিস্টার সাদাফের সামনের চেয়ারে বসলো।মিস্টার সাদাফ আহিন’কে জিজ্ঞেস করলেন….
-“তোমার প্রজেন্টেশনের প্রস্তুতি কেমন?”
-“স্যার,ভালোই কিন্তু একটু ভয়ে আছি।প্রথমবার তো তাই,তাছাড়া আমার তো এই গ্রুপে কাজ করার কথা না।”
-“আমি বুঝতে পারছি তোমার বিষয়টা,আচ্ছা তুমি আমার সামনে একবার প্রেজেন্টেশন করবে চলো।”
-“এখন!!!”
-“হুম,তাতে করে তোমার ভিতরের ভয় টুকু কেটে যাবে,আর একটু অভিজ্ঞতাও হবো।চলো আমার সাথে।”
মিস্টার সাদাফ আহিনের হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।অফিসের সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছে,কারন আজ পর্যন্ত মিস্টার সাদাফ কোনো মেয়ের হাত ধরা তো দূর,কোনো মেয়ের পাশাপাশিও দাঁড়ায়নি।মিস্টার সাদাফ আজকে প্রথম আহিনের হাত দরেছে এটা ভেবে নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পাচ্ছে।এদিকে আহিন মিস্টার সাদাফের এমন আচরনে একটু অবাক হলো কিন্তু তা বুঝতে দিলো না।হলরুমে এসে আহিনকে দাঁড় করিয়ে,নিজে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো।তারপর বললো…
-“তো শুরু করো তোমার প্রজেন্টেশন!”
-“কিন্তু…”
-“আমি তোমার মুখ থেকে অতিরিক্ত একটা কথাও শুনতে চায়না,আমি যা বলেছি তাই করো।”
মিস্টার সাদাফ একটু রাগ দেখিয়ে ধমকের সুরেই কথাটা বললো।আহিনও আর কোনো কথা না বলে চোখ বুঝে একটা দম নিলো।তারপর সে তার নিজের মতো করে বলতে লাগলো,আর তার প্রেজেন্টেশন করতে লাগলে।মিস্টার সাদাফ আহিনের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে,আহিনের কথাগুলো তার কানে না গেলেও তার মুখের অঙ্গিভঙ্গি কথা বলার ধরন সবকিছুই তার মনে গেঁথে যাচ্ছে।ওনি যেন চোখের সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী চেহারার মেয়েটাকে দেখছে।আহিনের প্রেজেন্টশন শেষ করে পানি খেয়ে নিল একদমে,তার রাখা গ্লাসের শব্দে মিস্টার সাদাফের ধ্যান ভাঙ্গলো তার ওনি উঠে আহিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আহিনের বা হাতটা নিজের দু’হাতে ধরে বলে,…..
-“ভয় করো না,পাশে আছি। তিন সেকেন্ড তোমার চোখ বন্ধ করে দেখবে তোমার মনের মানুষটা তোমাকে আশা দিচ্ছে আর বলছে তোমার পাশে আছি।আর হ্যা,প্রেজেন্টেশন সুন্দর হয়েছে,শুধু মুখটা এমন আতংকিত না করে একটু হেঁসে হেঁসে বললে আরো বেশী ভালো হবে।”
মিস্টার সাদাফ আহিনের একদম কাছে গিয়ে তার হাত ধরে কথাগুলো বললো।আহিনের বুকের হার্টবিট বাড়তে লাগলো,তার হাতটা কাঁপছে।মিস্টার সাদাফ বিষয়টা বুঝতে পেরে তার হাত ছেড়ে দেয়,আর কিছুটা লজ্জাতেও পরে যায়।কথা পাল্টানোর জন্য আহিন’কে বলে…..
-“আহিন,আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আনতে পারবে?”
-“আব,,হুম।আপনি কেবিনে যান আমি নিয়ে আসছি।”
-“ওকে”
মিস্টার সাদাফ চলে গেলেন,মুখে তার অনুভূতি’কে এতটা কাছে পাওয়ায় বিশ্বজয় করা সেই লাজুক হাসি।আহিন প্রথমে একটু বিষয় টা নিয়ে ভাবলেও পরে ভাবে,”বস হয়,একটু তো হাত ধরতেই পারে,আর ওনার সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি ওনার কোনো বদ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয়না।”
আহিন চা বানিয়ে নিয়ে আসে মিস্টার সাদাফের কেবিনে…..
-“মে আই কামিং স্যার?”
-“ইয়েস কামিং!!”
-“স্যার,আপনার চা।”
-“থ্যাংকস,আর তোমার আমাকে জিজ্ঞেস করে আসার কোনো দরকার নেই শুধু দরজায় একটু নক করেই চলে আসবে।”
-“ওকে স্যার,আমি তাহলে আসি??”
-“তোমার কি কোনো কাজ আছে এখন??”
-“না,তেমন কোনো কাজ নেই।ঐ আগের আর আজকের প্রেজেন্টেশনের ফাইলগুলোই একটু চ্যাক করবো।”
-“ওহহ,তাহলে আজকে আমরা লান্চ টা একসাথে বাহিরে করতে পারি??যদি তোমার কোনো প্রবলেম না হয়তো!!!”
-“নাহ নাহ,আমার কোনো প্রবলেম নেই।কিন্তু…”
-“প্রবলেম নেই তো কিন্তু কিসের?আর তুমি যদি অফিসের লোকদের নিয়ে কিছু ভেবে থাকো তাহলে শোনো,এখানে সবাই প্রফেশনাল,সবাই এসব বিজনেসের বিষয়গুলো বলে।তাই ওরা এগুলো স্বাভাবিক ভাবেই নিবে যদি না আমাদের মাঝে কিছু হয়…”
শেষের কথাটা সাদাফ নিজের অজান্তেই বলে ফেলেছে,তাি সে আর কিছু না চুপ হয়ে যায়।আহিন ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মিস্টার সাদাফ বললো…
-“মানে তোমার প্রোমোশন হলে ভাববে হয়তো সেজন্য তুমি আমাকে স্পেশাল ভাবে ট্রিট দিচ্ছো,ওদেরকে না জানিয়ে।”
-“ওহহ আচ্ছা,আমি রাজি।”
-” ওকে তাহলে তুমি যাও,আমরা লান্চ টাইমে বের হচ্ছি?”
-“হুম”
আহিন কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলো,মিস্টার সাদাফ ইয়েস ইয়েস করতে লাগলো।সে অনেক খুশি,আহিনকে নিয়ে তার ভালোবাসার অনুভূতি কে নিয়ে সে প্রথম ডেটে যাবে।ভাবতেই যেন নিজের মাঝে কেমন একটা ভালোলাগার সৃষ্টি হয়ে যায়।
মিস্টার সাদাফ আর আহিন একটা রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে গেল।রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকতেই সাদাফকে সবাই স্যার স্যার করতে লাগলো।তারা গিয়ে বসলো একটু পর একটা ওয়েটার এসে মিস্টার সাদাফকে জিজ্ঞেস করলো….
-“স্যার,কি নিবেন?”
-“আমাকে নয় ওকে জিজ্ঞেস করো!”
-“ম্যাম,কি অর্ডার করবেন?”
-“আব,আমি??আচ্ছা আমার জন্য এক প্লেট কাচ্চির,সাথে সিদ্ধ ডিম,বোরহানি আর একটা চপ।”
-“স্যার আপনি কি নিবেন?”
-“ওনি যা বলেছেন সেইম আমার জন্য।”
-“ওকে”

লান্চ শেষ করে,আহিন আর মিস্টার সাদাফ অফিসে ফিরে আসলো।আসার সাথে সাথে সবাই অনুরোধ করলো আজকে যেন তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হোক।ওরা সন্ধ্যায় এসে মিটিং এ জয়েন করবে।মিস্টার সাদাফ বললো পরে জানাবে,ওনি ওনার নিজের কেবিনে চলে গেল।একটু পর ফিরে এসে বললো….
-“ওকে গাইজ,তোমাদের ছুটি মজুর করা হলো কিন্তু তোমাদেরকে একটু আগে আসতে হবে।মানে সন্ধ্যায় না,বিকেল পাঁচ টায় আসতে হবে।তোমাদের এই সময় টুকু দেওয়া হলো তোমাদের মাইন্ড ফ্রেস করার জন্য,আরেকটা কথা আজকে পার্টিতে সবাই যেকোনো ড্রেস পরে আসতে পারবে।
সবাই হাত তালি দিলো,মিস্টার সাদাফ আহিন’কে আবারো নিজের কেবিনে ডেকে নিলো।আহিন সামনে যেতেই ওকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো….
-“এটা তোমার জন্য,আজকে তোমার প্রথম প্রেজেন্টেশন তাই আমার তরফ থেকে এই ছোট্ট একটা উপহার।আশা রাখছি,ভালো লাগবে আর আজকে সন্ধ্যায় এটা পরে আসবে।”

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে কিন্তু এখনো আহিন আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।বার বার মিস্টার সাদাফ ঘড়ির টাইম দেখছে,তার মনে উতাল পাতাল ঢেউ শুরু হলো।সে ভাবছে,”তাহলে কি আহিনকে এভাবে গিফট দেওয়ায় ও কোনো ভাবে রাগ করেছে বা অন্য কিছু মনে করেছে।ও কি বুঝতে পেরে গেছে আমি যে তাকে পচ্ছন্দ করি।এসব ভাবছে আর নিজের কেবিনে পায়চারি করছে।

#চলবে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here