#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৯
#অাদির_রায়
১৯.
অপারেশনের পর ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরার কোন কন্ডিশন দেখা যাচ্ছে না৷ ডাক্তার বলে দিয়েছে এক ঘন্টার মাঝে জ্ঞান না ফিরলে কোমায় চলে যাবে৷
সবাই ছোঁয়ার কেবিনে পায়েচারী করছে৷ সকলের মুখে দুশ্চিন্তার ছাঁপ। সকলে ঘেমে একাকার। এত কিছু হয়ে যাচ্ছে তপেসের কোন খোঁজ নেই৷ সিদ্ধার্থ অনেক বার তপেসকে ফোন করেছে। কিন্তু তপেস ফোন তুলে নি।
ছোঁয়ার মা কেঁদে কেঁদে চোখের জল ফুরিয়ে ফেলছে৷ ছোঁয়ার মায়ের দিকে তাকানো যাচ্ছে না৷ তার এক মাত্র মেয়ে তারই চোখের সামনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা নড়ছে৷ ময়ের মন বলে মেয়েকে রেখে তাকে যেন ভগবান নিয়ে যায়৷ এজন্য পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার কোন তুলনা হয় না৷
— আমার মেয়ের কখন জ্ঞান ফিরবে ডাক্তার? ছোঁয়ার বাবা ক্ষেপে উঁচু গলায় বলে ডাক্তারকে৷
— দেখেন আমরা ডাক্তার। মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের কাজ৷ ভগবানের উপর আস্থা রাখেন ছোঁয়ার কিছু হবে না৷
— আপনি বলে দিয়েছেন এক ঘন্টার মাঝে জ্ঞান না ফিরলে কোমায় চলে যাবে৷ আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখেন মেয়ের শোকে কেমন পাথর হয়ে গেছে৷ অচল পয়সার মতো দাঁড়িয়ে আছে৷
— দেখেন এখন আমাদের হাতে ১০ মিনিট সময় আছে৷ প্লিজ আপনারা এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আস্থা রাখেন৷
— আর কত আস্থা রাখবো৷ ছোঁয়ার ২ দিন থেকে কোন রেসপন্স নেই৷ প্লিজ ডাক্তার আমার বোনকে ভালো করে দেন৷ আমি আপনার বাসায় সারাজীবন গোলাম হয়ে থাকবো৷ (সিদ্ধার্থ)
মা বাবার পরেই ভাইয়ের অবস্থান৷ প্রতিটি ভাইয়ের কাছে তার বোন এক একটা কলিজার টুকরা। বোন ছাড়া প্রতিটি ভাই অচল। যেসব ভাইদের বোন নেই তারা বুঝতে পারে বোন না থাকা কতটা কষ্টের৷ বোন ভাইকে যেমন সব বিপদ থেকে আগলে রাখে তেমনি ভাই বোনের জন্য সব বিপদে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে৷
— শান্ত হও সিদ্ধার্থ। তোমাদের ভালোবাসা ছিন্ন করে কেউ যেতে পারবে না৷ দেখ ছোঁয়া ঠিক ভালো হয়ে যাবে৷
–রিয়া চিৎকার করে বলে উঠে আন্টি ছোঁয়া হাতের আঙ্গুল নড়াচ্ছে।
— প্লিজ সাইট দেন৷ এখন বিরক্ত করবেন না৷ এখন কোন ক্ষতি হবে না ছোঁয়ার। আপনারা প্লিজ এখন শান্ত হন৷
সকলের চোখে জল। এটা কোন শোকের জল না৷ এটা হলো খুশির জল। মানুষের কষ্টে যেমন চোখে জল আসে তেমন অতিরিক্ত আনন্দেও চোখে জল আসে। সকলের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে।
মার কোলে দু বছরের বাচ্চা যেমন হাসলে মনে হয় পৃথিবী হাসছে। পৃথিবীর সকল সুখ নেমে আসে তেমন তাদের হাসিতে পৃথিবীর সকল সুখ নেমে এসেছে তাদের হাতে।
ছোঁয়া পিন পিক করে চোক মেলছে। চোখ মেলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও চোখ খোলার চেষ্টা করছে। কেন সে চোখ খোলার চেষ্টা করছে সে নিজের জানে৷ এমন কিটিক্যাল পরিস্থিতিতে চোখ খোলার কোন দরকার আছে কি৷ তার জ্ঞান ফিরেছে এটাই কি বেশি নয়৷ কিন্তু ভালোবাসা এটা বুঝতে চায় না। পাহাড় যতই উঁচু হক না কেন ভালোবাসা দিয়ে সে পাহাড় জয় করা সম্ভব।
ছোঁয়ার চোখ খোলে চোখের ইশারায় ডাক্তারকে অক্সিজেন মাস্ক খোলে দিতে বলে৷ ডাক্তার ইশারা বুঝতে পেরে অক্সিজেন মাস্ক খোলে দেয়৷ ছোঁয়া সকলের দিকে এক বার চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে৷ ছোঁয়ার চোখ শুধু কাকে খোঁজজে জানা নেই৷ হ্যাঁ ছোঁয়ার চোখ আর কাউকে না অধিরকে খোঁজছে৷ তার ধারণা এখানে সে আছে৷
— মা তোমার কোন কষ্ট হচ্ছে না তো।ছোঁয়ার মা ছোঁয়ার গালে আলতো করে ভালোবাসা পরশ এঁকে।
— মা আমার কি হয়েছিল? অনেক কষ্টে ছোঁয়া কথা বলে৷
— প্লিজ এখন কেউ তাকে বিরক্ত করবেন না৷ আপনাদের প্রার্থনা বিফলে যায় নি৷ এখন খুব তারাতাড়ি ছোঁয়া সুস্থ হয়ে যাবে৷ প্লিজ আপনারা এখন বাহিরে যান৷
একে একে সবাই বাহিরে চলে যায়।কিন্তু এখনও ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে ছোঁয়ার মা ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়াও দু চোখ ভরে তার মাকে দেখে যাচ্ছে। মায়ের মন চায় না মেয়েকে এভাবে রেখে যেতে৷ এক পা বাড়ালে দু পা পিছিয়ে নেয় ছোঁয়াকে দেখার জন্য।
— প্লিজ ম্যাম বাহিরে যান(নার্স)
— আমাকে আর একটু থাকতে দাও না।
— ম্যাম বুঝার চেষ্টা করেন৷ আপনারা এখানে থাকলে ছোঁয়া আপনাদের এমন অবস্থা দেখে দুর্বল হয়ে পড়বে৷ তার রেসপন্সের জন্য প্লিজ বাহিরে যান৷
ছোঁয়ার মা এক বুক কষ্ট নিয়ে ছোঁয়ার কেবিন থেকে চলে যায়। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা চলে যায়নি৷ চলে গেছে মায়ের দেহটা৷ মা রয়ে গেছে ছোঁয়ার কাছে।
২০.
ছোঁয়া এখন অনেক সুস্থ। সে কথা বলতে পারে। ছোঁয়া শুধু তপেসের কাজ কর্ম ভেসে আসছে৷ যে তাকে এত ভালোবাসতো সেই তপেস কিনা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে৷ কেন তপেস তাকে মারতে চায়৷ সেটা জানার অদম্য ইচ্ছা পূষন করে রেখেছে মনের এক গহীন কোনে।
আজ ছোঁয়াকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে হসপিটাল থেকে। আর রইল ছোঁয়ার বিয়ের কথা৷ ছোঁয়া বলে দিয়েছে সে এখন বিয়ে করতে প্রস্তুত নয়৷ কিন্তু কাউকে তপেসের আসল পরিচয় বলেনি৷
ঘুমের মাঝে ছোঁয়া বুঝতে পারে আজও সেই অদ্ভুত লোকটি এসেছে৷ তাকে খুব যত্ন করে জড়িয়ে ধরে আছে৷ আজ তার জড়িয়ে ধরার মাঝে নেই কোন রাগ নেই কোন অভিমান।আছে শুধু ভালোবাসা। হ্যাঁ অধির প্রতিটি রাতেই এসেছে ছোঁয়ার কাছে। সে প্রতিদিন ছোঁয়ার খুব খেয়াল রেখেছে।কখন কি লাগবে তার জোগান দিয়েছে অধির৷
ছোঁয়া অধিরের স্পর্শ পেয়ে চোখে জল আসে৷ ছোঁয়া ভাবতে পারেনি তার মা বাবার পর কেউ তাকে এত বেশি ভালোবেসে আগলে রাখবে৷
— সুইটহার্ট তুমি কাঁদছো কেন?
— আমি কাঁদছি আপনি কোন আমার সামনে আসেন না৷ এভাবে ছায়া হয়ে কেন থাকেন?
— আমি ঠিকই তোমার কাছে আসব।একটু অপেক্ষা কর।
— ডাক্তার আঙ্কেল আমাকে সব বলেছে আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। সবার সামনে আসেন আমার সামনে আসেন না কেন?
— সেটা তো আমার দায়িত্ব। আমি তোমার জন্য করব না তো কার জন্য করবো৷ তুমি আমার বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস। তোমাকে আঁকড়ে ধরেই আমি বেঁচে আছি।
–আপনাকে একটা কথা বলব?
— হুম তোমার যা মন চায় তাই বল।
— আপনি কেন আমার পিছনে পড়ে আছেন।
— তোমাকে আমি আমি সেই সত্য যুগ থেকে ভালোবাসি৷ তোমার ভালোবাসার জন্যই আমি এখানে এসেছি৷
— কি বলছেন আবুলের মতোন?
— তোমার সত্য যুগের কোন কথা মনে নেই৷
— আপনার মাথা ঠিক আছে কি?
— আমার মাথা সম্পুর্ন ঠিক আছে৷
— তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে যান৷ আমি আপনাকে ভালোবাসি না৷
— কেন আমাকে ভালোবাস না৷ আমি কি ভালোবাসার যোগ্য নয়৷
— আমি সেটা বলতে চায় নি৷
— তাহলে তুমি কি বলতে চাও?
— দেখেন আমি হলাম মানব৷
— সমস্যা কি?
— কিন্তু আপনি অদৃশ্য অদ্ভুত একটা লোক৷ আমাদের মাঝে কোন মিল নেই৷ কি করে ভালোবাসবো অাপনাকে।
— যেভাবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
— ভালোবাসার জন্য দুইটা মনের মিল থাকতে হয়৷ এখানে আমাদের মাঝে তেমন কোন মিল নেই৷
— আমাদের উদ্দেশ্য এক৷ তাই আমাদের ভালোবাসা কেউ আটকি রাখতে পারবে না৷
— আপনি ভুল ভাবছেন।
— আমি কোন ভুল ভাবি না৷
— আপনাকে আমার পরিবারের কেউ এক্সেপ্ট করবে না৷ কিছুতেই তারা আমাকে অদৃশ্য অদ্ভুত লোকের সাথে তুলে দিবে না৷
— তাহলে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বল।
ছোঁয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছিল এতক্ষণ অধির৷ কিন্তু ছোঁয়া বুঝতে পারে সে আজও অদৃশ্য হয়ে আছে৷ অধির অদৃশ্য হয়ে থাকলেও ছোঁয়া অধিরের পরশ বুঝতে পারে৷
ছোঁয়া অধিরের দিকে ফিরে দেখে অধিরের মুখ ছাড়া সবই দেখা যাচ্ছে। মানে অধির মায়াজালে নিজের মুখকে লুকিয়ে রেখেছে৷
— তুমি আমার মুখ তখনই দেখতে পাবে যখন তোমার মনে কোন দ্বিধা থাকবে না৷
— আপনি কেন আমার কাছ থেকে আপনার মুখ লুকিয়ে রাখেন৷
— সময়ের কাছে সব কিছু ছেড়ে দাও৷ সময়ই একদিন তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবে৷
— তাহলে কি আপনি কোনদিন আমাকে আপনার ফ্রেস দেখাবেন না৷
— কে বলছে দেখাব না৷ এখন তুমি ঘুমিয়ে পড়। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
ছোঁয়া জানে তার কাথায় সায় না দিলে এর বিপরীত হবে৷ ছোঁয়া অধিরের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।অধির ছোঁয়ার মাথায় খুব যত্নে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়৷
২১.
ছোঁয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ব্যাগ খুব সুন্দর করে গুছানো৷ আজও টেবিলের উপর একটা নীলা চিরকুট।
ছোঁয়া খুশি মনে চিরকুট টা খুলে৷
প্রিয় ছোঁয়া ❤
শুভ সকাল। তোমার দিনটা যেন আজ খুব ভালোভাবে কাটে৷ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় আর কারো সাথে কোন শয়তানি করবে না৷ মন দিয়ে লেখাপড়া করবে৷ আমি তোমার উপর সব সময় নজর রাখবো৷
ইতি
তোমার মনের মানুষ
অধির🖤
ছোঁয়া এসব উপদেশ শুনে বিরক্ত হয়ে যায়। আমি আমার মন মতো চলবো তোর কি সালা ভুত। তোর কথামতো আমি চলবো না৷ তুই কি করবি। আমি তোকে ভয় পায়।
ছোঁয়া আজ এক মাস পর আবার ভার্সিটিতে পা রাখছে। ছোঁয়ার কাছে সব কিছু নতুন মনে হচ্ছে। কিন্তু কোন?
সেই বটগাছ নিজ অবস্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। ভার্সিটির সব ফুলের বাগান আগের মতোই আছে৷ ঘাসের উপর বসে সবাই কথা বলছে৷ কিন্তু কেন আমার কাছে নতুন লাগছে৷
এটাও তো নয় ভার্সিটির দালান এক জায়গা থেকে সরে অন্য জায়গায় অবস্থান করছে। আগের মতোই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে৷ প্রতিটি বেঞ্জ ঠিক অবস্থানেই আছে৷এসব ভাবনার মসগুল হয়ে আছে ছোঁয়া।
— কি রে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? (রিয়া)
— এমনেই অনেক দিন পর আসলাম তো তাই সব কিছু একটু দেখে নিচ্ছি।
— দেখার কি আছে? তুই তো সব জায়গায় সবার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতি৷ তাহলে আজ কি হলো?
— কিছু না৷
— চল ক্লাসে যায়।
— তুই যা।
— তুই যাবি না।
— না।
— কেন?
— একটা কাজ আছে।
– কিসের কাজ?
— পরে জানতে পারবি।
— না বললে তোকে এখানে রেখে যাবো না।
— পরে তোকে সময় করে সব বলবো৷
— আমিও তোর সাথে যাব
–প্লিজ এমন করিস না।
— তাহলে বল কি কাজ?
— আমি এখন এক জায়গায় যাব।
— কই যাবি৷
তোকে আমি কিছুতেই বলব না আমি তপেসের সাথে দেখা করতে যাব।এখন একটা উপায়ে তোর কাছ থেকে ছাড়া পেতে হবে।
— বললি না কই যাবি?
— আসলে আমি এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাব।সে আমাদের ভার্সিটি চিনে না। তুই মন দিয়ে ক্লাস কর৷ আর সবকিছু আমাকে বলে দিস৷
ছোঁয়া আর কোন কথা না বলে চলে যায়।জানে এখানে থাকা মানে হাজার টা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া।
–
–
–
ছোঁয়া তপেসদের বাড়িতে যায় সরাসরি। তপেস রুমে বসে একের পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না তপেস সিগারেট খায়৷ খেতেও পারে যে মানুষ ভালোবাসাকে মেরো ফেলতে পারে নিজ হাতে।
— আসতে পারি।
— কে?
— ছোঁয়া।
ছোঁয়া নাম শুনেই তপেস খুব তেড়ে আসে ছোঁয়ার দিকে।
চলবে,,,#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_১০
#অধির_রায়
২২.
ছোঁয়া নাম শুনেই তপেস খুব তেড়ে আসে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। ছোঁয়া ব্যথা পাওয়ার আউচ বলে উঠে। কিন্তু তপেস ছোঁয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেই রাখে।
— চোখ পাকিয়ে তুই এখানে কেন এসেছিস?
তোকে বুঝতে দেওয়া যাবে না আমি এখানে তোর উদ্দেশ্য জানতে এসেছি৷ তুই কি আমাকে কাঁচা খেলোয়াড় মনে করিস?(মনে মনে)
— কি হলো কথা বলছিস না কেন?
ছোঁয়া অপলক দৃষ্টিতে তপেসের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তপেসের দিকে তাকিয়ে থেকে সারা রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।
— এভাবে দেখার কি আছে?
— আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
— এখানে ন্যাকামি করে লাভ নেই৷ বেশি কথা বললে তোর খারাপ অবস্থা করতে পারি। সেজন্য আমাকে পরে দায়ী করিস না৷
— আপনি কোনদিন আমাকে তুই করে বলেননি৷ হঠাৎ কেন আমার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করছেন৷
— তাহলে তোর সাথে আমি কি করব? তোদের মতো মেয়েদের বেঁচে থাকার কোন রাইট নেই।
— এজন্য আমাকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছেন।
— কিন্তু তোর কই মাছের প্রাণ। তুই মরলি না বরং আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস?
— এখন আমি আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি৷ তাহলে এখন মেরে ফেলেন৷
ছোঁয়া কথা বার বার তপেসের কানে নাড়া দিচ্ছে। তপেস ছোঁয়ার কথা সহ্য করতে পারছে না৷ তপেস ক্ষেপে ছোঁয়ার উপর হাত তুলতে নেয়। কিন্তু কি মনে করে হাত নামিয়ে নেয়।
— কি হলো মারলেন না কেন?
— তুই এখন থেকে এই মুহুর্তে এখান lতুই কোন অপরাধ করিস নি৷
— আমি জানি আমি নিঃদোষ। এজন্য আমাকে ভগবান আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন৷ আপনার সাহস থাকলে আমার অপরাধ আমার চোখের তুলে ধরেন৷
— তাহলে তোর প্রমাণ চায় তাই তো?
— হুম আমার প্রমাণ চায়?
— আমার সাথে এখানে আসতে পারিস।
–কোথায়?
তপেস ছোঁয়ার কোন কথায় কর্ণপাত না করে ছোঁয়ার হাত ধরে এক প্রকার টানতে টানতে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়।ছোঁয়া ভয়ে কাচুমাচু করে আছে৷ এই অন্ধকার রুমে ছোঁয়াকে বন্দী করে রাখবে কি?ভয়ের কারণে গলা থেকে কথার বুলি বেরুচ্ছে না৷ বাকহীনদের মতো তাকিয়ে আছে৷ তাকিয়ে আছে বললে ভুল হবে,,, ছোঁয়া কিছু দেখতে পাচ্ছে না৷
— মনের মাঝে সাহস জুগিয়ে ধীরে ধীরে আমতা আমতা করে এই অন্ধকারে রুমে কেন নিয়ে এসেছেন?
–ওয়েট।
তপেস ফোনের ফ্লাক্স অন করে। চারিদিকে ধুলা বালি৷ শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তবুও ছোঁয়া নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে।তপেস এতক্ষণে রুমের লাইট অন করেছে। চারিদিকে রাউন্ড করা জালের মতো করে ঘিরে রেখেছে বিরুল প্রজাতির এক প্রাণী (মাকরাসা)
— আমাকে এই ধুলা বালি যুক্ত এই রুমে নিয়ে এসে নিজেকে মহান ভাবা বন্ধ করেন।
— আমি তোকে কথা বলতে মানা করেছি। এর পর তোর মুখ থেকে একটা কথা শুনতে পেলে মুখ বন্ধ করে দিব চিরকালের জন্য।
— সালা তুই কি ভেবেছিস? আমি তোকে ছেড়ে দিব। কোনদিনও না৷ তুই আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি তার শাস্তি ভোগ করতে হবে না বাবুসোনা। তোকে আমি নরকের আগুনে জ্বালাতে না পারলে আমি ছোঁয়া নয়৷(মনে মনে)
— কি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি? আমার সাথে আর সামনে যেতে হবে৷
— আর কোথায় যাব?
— তোর প্রশ্নের উত্তর তুই নিজেই জেনে নিবি।
ছোঁয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছোঁয়ার হাত চেপে ধরে ধুলাবালি যুক্ত রুমের শেষ পান্তে নিয়ে আসে৷ নিয়ে এসে রশি টেনে একটা প্রাচীন সিল্কের পর্দা টেনে নামায়৷ পর্দার পিছনে আরও একটা দ্বার৷ দ্বার দেখে ছোঁয়া আরও ভয় পেয়ে যায়।তবুও নিজেকে শক্ত রেখেছে কি রহস্য লুকিয়ে আছে জানার জন্য।
পর্দার পিছনের দ্বার খোলে তারা ভিতরের রুমে প্রবেশ করলো। কিন্তু ভিতরের রুমে নেই তেমন ধুলাবালি। এখানে রয়েছে কিছু বই খাতা৷ একটা বেড। একটা আলমারি। আছে কয়েকটা স্মৃতি জড়িত আর্ট। কিন্তু সেগুলো পর্দা দিয়ে ঢাকা৷
— আমাকে এই বদ্ধ শুনশান রুমে নিয়ে আসার কারণ কি?
— দেখ তো এই লোকটাকে চিনতে পারিস কি না?
তপেস একে একে সব পর্দা সরিয়ে ফেলে।ছোঁয়ার সামনে ধরা দিল অতীতের এক করুন কাহিনি। ছোঁয়া স্তব্ধ হয়ৈ দাঁড়িয়ে আছে৷
২৩.
অতীত,
ছোঁয়ার কিছু বন্ধু মিলে ২ বছর আগে কলেজ ফাঁকি দিয়ে দার্জিলিং এ ঘুরতে যায়।ছোঁয়া ছোট থেকে স্বপ্ন সে একা দার্জিলিং এ যাব। তার মন মতো নেচে খেলে সময় কাটাবে৷ তার পরিবারকে যতবার দার্জিলিং এর কথা বলেছে ততবারই সপরিবারে দার্জিলিং এ ঘুরতে এসেছে৷ ছোঁয়াকে নিজের মতো করে ঘুরতে দেয়নি৷ কারণ দার্জিলিং এর অনেক জায়গা শুনশান। আবার এখানে অনেক প্রাচীন লোক আছে যারা মানুষকে একা পেলে তাকে ধরে নিয়ে যায়।তারা মানুষের মাংস খেতে ভালোবাসে।
ছোঁয়া তাঁর বন্ধুদের সাথে নিচু খাদ পাহাড় বেয়ে নামছে৷ ছোঁয়া আজ সব চেয়ে নিচু নেমেই ছাড়বে। মাঝে মাঝে চা বাগানে নিজের বন্ধুদের সাথে সেলফি নিচ্ছে। ছোঁয়া আজ নিজেকে গর্ব করছে। সে তার নিজের লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবে৷
ছোঁয়া ধীরে ধীরে খাদের ধারে নেমে যায়। খাদের জল ভিষণ ঠান্ডা। শীত মৌসুমে এই জল বরফে পরিণত হয়৷ খাদের স্বচ্ছ জলে ছোঁয়া নিজেকে দেখগে পাচ্ছে৷ ছোঁয়া উপর দিকে তাকাতেই সে ভাবে এখন এত বড় পাহাড় বেয়ে কিভাবে উপরে উঠবে৷ সেটা পরে দেখা যাবে৷ এখন কয়েকটা সেলফি নেই।
ছোঁয়া খাদের ধার বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছোঁয়ার বন্ধুরা নিচে নেমে আর হাঁটতে পারছে না। তারা সেখানেই বসে পড়েছে৷ ছোঁয়া সেলফি নিতে ব্যস্ত যে নিচের দিকে কে আছে সে দিকে খেয়াল নেই।
হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে। খাদের ধার বেয়ে বসে বিয়ার সেবন করে যাচ্ছে প্রার্থ। (প্রার্থ তপেসের দাদা৷ তার থেকে ২.৫ বছরের বড়)। হেঁটে যেতেই ছোঁয়া প্রার্থকে লাথি লাগে৷ যার ফলে ছোঁয়া পড়ে যায় প্রার্থের উপর৷
প্রার্থ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷ ছোঁয়ার ফোন খাদের জলে পড়ে যায়।ছোঁয়া প্রার্থের উপর পড়েই কান্না শুরু করে দেয়৷ প্রার্থ ভয় পেয়ে তারাতাড়ি ছোঁয়াকে দাঁড় করায়।
— এই তুমি কান্না করছো কেন?
— সালা তোর জন্য আমার দামী ফোনটা জলে পড়ে গেছে৷ স্বচ্ছ জলের মাঝে আমার ফোন দেখা যাচ্ছে না৷ বা* তুই এখানে বসে বিয়ার খাচ্ছিলি কেন? তোর জায়গা কম পড়েছে এই ভারতবর্ষে।
— এই মেয়ে তুমি যে আমাকে লাথি দিলে সে নিয়ে আমি তোমাকে কথা শুনাবো৷ তা নি তুমিই আমাকে বকে যাচ্ছো।
— ছোঁয়া প্রার্থের পায়ে পাড়া দিয়ে তার সমান হয়ে তোর সাহস কম নয় তুই আমাকে ভয় দেখাস? সালা মারবো এখানে লাশ পড়বে শশ্মানে।
প্রার্থ ছোঁয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে৷ ছোঁয়া প্রার্থের সাথে কি ব্যবহার করতেছে সে নিজেই জানে না৷ সে তার ফোন হারিয়ে ফেলছে তার মাথা ঠিক নেই৷
— ছোঁয়া নিজেকে একটু দূরে দাঁড় করিয়ে সাল তোর নাম কি?
— তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো? আমি তোমার থেকে বড় হবো৷ আর তুমি আমাকে তুই তুকারি করছো?
— তোর মন চাইলে তুই আমাকে তুই করে বলতে পারিস? নাম বল তোর না হলে এখনই নাক ফাটিয়ে দিব৷
— প্রার্থ আমার নাম। তোমার নাম কি?
— সালা আমার নাম উগান্ডা৷ সালা তোর জন্য আমার কত্তো সুন্দর ফোন জলে পড়ে গেছে৷ কাল বি এম সি কলেজে ফোন নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবি৷
— কি? আমি তোমার জন্য ফোন নিয়ে অপেক্ষা করব?
— হ্যাঁ তুই আমার জন্য ফোন নিয়ে অপেক্ষা করবি। এটাই তোর শাস্তি। না হলে মানকি টাইপে এমন মার মারব সোজা শশ্মানে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়বি৷
প্রার্থ ছোঁয়াকে কিছু বলে যাচ্ছে না৷ ছোঁয়ার এমন বাচ্চা সূলভ কথা প্রার্থের মন জয় করে নেয়৷ প্রার্থ ছোঁয়াকে ভালোবাসে ফেলে। তাই তার আবদার মানতে রাজি হয়ে যায়৷
— তোমার আরও কিছু লাগবে নাকি?
— হ্যাঁ লাগবে?
— কি লাগবে?
ছোঁয়া মাটিতে বসে পড়ে.
— তুমি মাটিতে কেন?
— আমাকে কোলে করে আমার বান্ধবীদের কাছে পৌঁছে দেন৷
প্যাচার মতো মুখ করে কথাটা বলে যা প্রার্থ ইগনোর করতে পারল না৷ প্রার্থ জানতে চেয়েছিল এত নিচে নামার কি দরকার ছিল। কিন্তু ভালোবাসার জন্য কিছু বলল না। তার সমম্ত আবদার মেনে নিল।
২৪.
প্রার্থ ছোঁয়াকে কোলে করে তার বান্ধবীদের সামনে হাজির হলো।সকলের চোখ আকাশ পানে৷
— আমাকে নামা হুনুমান। ছোঁয়ায় কথায় মনে হচ্ছে ছোঁয়া প্রার্থের মালকিন।
প্রার্থ ছোঁয়াকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই৷ছোঁয়া চিৎকার করে বলে উঠে।
— এই যে পাদ (প্রার্থ) আমার ফোন কাল ভালোই ভালোই দিয়ে আসবি। না হলে তোর বাড়িতে গিয়ে তোকে কিলিয়ে আসবো।
— ছোঁয়া তুই কাকে কি বলছিস? তুই এই প্রার্থকে চিনিস না। অনেক বড়লোক। তুরি দিয়ে উঠিয়ে দিবি৷ (ছোঁয়ার বন্ধু)
— ওই ফকিন্নি আমাকে কি তোর গরিব মনে হয়৷ আমি হলাম তার থেকে অনেক বড়লোক।
— এই যে ম্যাম আপনি পাদ কাকে বললেন।
— আরে সালা তোর নাম প্রার্থ নাকি। আমি এত কঠিন নাম মুখে নিতে পারি না৷ আমি তোকে পাদ বলেই ডাকবো৷ এখন তোকে ২ মিনিট সময় দিলাম এখান থেকে চলে যা না হলে এই খাদের জলে তোকে ডুবিয়ে মারবো৷
প্রার্থ ছোঁয়ার কথামতে চলে যায়।নিজেকে মহান & ছোঁয়ার চোখে ভালো প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসে। এভার ছোঁয়ার সামনে আসেনি৷ লুকিয়ে থেকে ছোঁয়ার মন জয় করার হাসি দেখে যাচ্ছে।
–
–
–
— দেখেছিস তোরা আমাকে সবাই ভয় পায়। আমি হলাম ডেবিল কুইন। আমাকে সন সময় সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
— সম্মান দিব ভালো কথা এখান থেকে কি উপরে উঠতে হবে না৷ এখানে এভাবে থাকলে রাতের বেলা সাপ এসে তোকে ভক্ষণ করবে৷ (ছোঁয়ার বান্ধবী)
[ অনেকে বলতে পারেন ছোঁয়ার বান্ধবী রিয়া।তাহলে এনি কে৷ আমি ছোঁয়ার কলেজ লাইফ নিয়ে কথা বলছি৷ রিয়াও কলেজ লাইফে বন্ধু ছিল।কিন্তু রিয়া ছোঁয়ার মতো উড়নচণ্ডী ছিল না]
— এই তারাতাড়ি চল বাড়ি ফিরতে রাত হলে আর বাড়িতে ঢুকতে দিবে না৷ (ছোঁয়া)
ছোঁয়া & ছোঁয়ার বান্ধবীরা অনেক কষ্টে খাদের উপর উঠে আসে৷ সকলেই হাঁপিয়ে উঠেছে৷ ছোঁয়ার একটা কথায় মাথায় ঘুরছে৷ তার কত্তো সুন্দর সুন্দর পিক গুলো তার আর হলো না৷ সব কিছু জলে গেল।
তারা সকলেই খুব সাবধানে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে যায়।
–
–
–
— সারা দিক কোথায় ছিলে ছোঁয়া? (ছোঁয়ার মা)
আসছে এখন যশ সাহেবা৷ প্লিজ তুমি এর সামনে ভালোই ভালোই মিথ্যা কথা উপস্থাপন করার সুযোগ দিও। আজ যেন বেঁচে যেতে পারি৷ (মনে মনে)
— কি হলো কথা বলছিস না কেন?
— কোন প্রশ্নের উত্তর দিব?
— সারাদিন কোথায় ছিলি কলেজ তো অনেক আগেই ছুটি হয়৷
–যাক বাবা জানে আমি কলেজে ছিলাম। মিথ্যা কথা এখন কম বলতে হবে৷ (মনে মনে)
–ছোঁয়া আমি তোর সাথে কথা বলছি। খুব রেগে কথাটা বলে৷
— ছোঁয়া ন্যাকা কান্না করে আজ একটা বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম৷ কোনদিন যেতাম না এমন ভাবে বকা দিলে৷ জানি আমাকে কেউ ভালোবাসে না৷ লাগবে না তোমাদের ভালোবাসা।
ছোঁয়া তারাতাড়ি কেটে পড়। এখন কেটে না পড়লে সুনামি নিয়ে আসবে তোর মা৷ ছোঁয়া আর কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
রুমের দ্বার বন্ধ করে লুঙ্গি ড্যান্স গানে নাচতে শুরু করে। কারণ তার পরিবারের কেউ জানে না ছোঁয়া দার্জিলিং দিয়ে ঘুরে এসেছে৷রাতে নিচে খাবারের জন্য নামে নি। মার সম্মুখীন হতে হবে বলে।
কিন্তু রাতের বেলা ক্ষুধা সহ্য করে আর ঘুমাতে পারছে না। ছোঁয়া চুপি চুপি নিচে নেমে খাবার খাচ্ছে। খাবার খাওয়ার পর উপরের দিকে তাকাতেই তার মা খুন্তি নিয়ে হাজির।
— মা তুমি এখন আবার কি রান্না করবে৷
— এখন তোকে কেটে রান্না করব?
— কেন মা?
— কলেজে যাসনি কেন?
— কি বললে?
— আমি ফোন করে জেনে নিয়েছি তুই কলেজে যাসনি।
— তুমি কার কাছে ফোন করেছিলে?
— রিয়ার কাছে ফোন করেছি।
— রিয়াই তো কলেজে যায়নি৷
— আমি সব জানি৷ তাই পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই৷
— মা প্লিজ বাবাকে কিছু বল না৷ আমার ঘুম পাচ্ছে।
ছোঁয়া কিছু না বলে রুমে চলে যায়।
পরের দিন সকালে কলেজে ঢুকতেই,,,
চলবে,,,
বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল না দেওয়ার জন্য সরি।
বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল জানতে পারবেন কেন তপেস ছোঁয়ার সাথে এমন করেছে।