অদ্ভুত_নেশা পর্ব ৭+৮

#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৭
#অধির_রায়

ছোঁয়া পা বাড়াতেই তপেস ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে।

— কি হলো আবার?

তপেস চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই৷ একেবারে নির্জন।

— সিদ্ধার্থ কোথায়? কিছুটা সন্দেহের সাথে বল?

— ছাঁদে।আর আমি সামনে থেকে ছাঁদের দ্বার বন্ধ করে দিয়েছি।

তুমি আমার কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছো ছোঁয়া। তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব জানা নেই৷(মনে মনে তপেস বলে যাচ্ছে)

— কি হলো কি ভাবছেন?

— ওকে তুমি এখন যেতে পার আমি ছাঁদে যাব।

— এই না। আপনি আমার সাথে নিচে আসেন?

— তাহলে তুমি আগে পা বাড়াও?

ছোঁয়া সিঁড়িতে পা রাখতেই তপেস ছোঁয়াকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়৷ যার ফলে ছোঁয়া সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে ছোঁয়ার মাথা বারি খায়৷ যার ফলে মাঝ সিঁড়িতে ছোঁয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

তপেস ছোঁয়ার বুকে হাত দিয়ে দেখে ছোঁয়ার হৃদপিণ্ড নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ শয়তানি হাসি দিয়ে কেউ দেখার আগেই তপেস সেখান থেকে চলে যায়।

ছোঁয়ার চিৎকারের শব্দ শুনে ছোঁয়ার মা বাবা ছোঁয়ার কাছে দৌড়ে এসে। এসে দেখে ছোঁয়া রক্তাক্ত অবস্থা ফ্লোরে পড়ে আছে৷ ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে ছোঁয়ার মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ছোঁয়ার মা রক্ত দেখতে পারে না৷ ( যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় এক প্রকার রোগ বলে)

ছোঁয়ার চিৎকার সিদ্ধার্থদের কানেও পৌঁছে। কিন্তু তারা নিচে নামবে কিভাবে? তাদেরকে সামনে থেকে ছোঁয়া দ্বার বন্ধ করে দিয়েছে৷

— এখন আমরা নিচে যাব কিভাবে?(রিয়া)

— ছোঁয়া এভাবে চিৎকার করল কোন? ছোঁয়ার কিছু হয়নি তো?

— আমার মনে হয় ছোঁয়া মনে হয় সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে৷

— না কি বলছো এসব?

— হুম নিচ থেকে এমন শব্দই আসছে৷

— আমাকে এখনই নিচে যেতে হবে৷

— কিভাবে নিচে যাবেন?

— আমি নিচে যেতে পারব। তুমি চিন্তা কর না আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।

সিদ্ধার্থ আর কিছু না ভেবে ছাঁদ থেকে গাছ বেয়ে নিচে নামে৷ দৌড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে৷ এসে দেখে তার মা জ্ঞান হারিয়ে অন্য পাশে পড়ে আছে৷ ছোঁয়া এক পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে৷ সিদ্ধার্থ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷

সিদ্ধার্থ কিছু আর না ভেবে দৌড়ে একটা কাপড় নিয়ে এসে ছোঁয়ার মাথা বেঁধে ফেলে। যার ফলে মাথা থেকে রক্ত জ্বরতে না পারে৷ মার আগে ছোঁয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ কিন্তু মাকে এভাবে একা ফেলে যাব কিভাবে?

হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় রিয়ার কথা৷ সিদ্ধার্থ দৌড়ে রিয়ার সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে যায়। ছাঁদের দ্বার খোলে,

— রিয়া নিচে মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। প্লিজ তুমি মার খেয়াল রেখো৷

সিদ্ধার্থ কি বলে গেছে এত তারাতাড়ি যার কোন কিছুই রিয়ার মাথায় ঢুকল না৷ রিয়া পিছন থেকে সিদ্ধার্থকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু সিদ্ধার্থ তার কথার কোন রিপ্লাই না দিয়ে সে নিচে চলে আসে।

সিদ্ধার্থ নিচে এসেই ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে।

মা আমি জানি তোমার কিছু হবে না৷ এখন তোমার থেকে আমার বোন বড়৷ তুমি ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছ। রিয়া তোমার জ্ঞান না ফেরার আগ পর্যন্ত এখানে থাকবে৷ এটা আমার ভালোবাসার দৃঢ় বিশ্বাস।

সিদ্ধার্থ তার মাকে এমনেই ফেলে যায়নি৷ সে তার মায়ের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেছে৷ সেও তার মায়ের চোখে মুখে জলের ছিঁটা দিয়েছে। কিন্তু ফিরাতে পারেনি।

সিদ্ধার্থ আর কিছু না ভেবে ছোঁয়া নিয়ে হসপিটালে চলে যায়।

রিয়া ভাবনার মাঝে ঢুব দিয়ে অন্য মনস্ক হয়ে নিচে নামছে৷ সে ভাবছে সিদ্ধার্থ তাকে কি বলল? আমি তার কথার কোন রহস্য বুঝতে পারছি না৷ কিন্তু রিয়া সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে চিৎকার দিয়ে উঠে৷

–আন্টি📣

রিয়া দৌড়ে ছোঁয়ার মায়ের কাছে আসে। এসে দেখে ছোঁয়ার মায়ের কোন রেসপন্স নেই৷ কোথায়ও আঘাতের দাগ দেখতে পাচ্ছে না৷ কিন্তু ফ্লোরে এত রক্ত আসলো কোথায় থেকে।

রিয়া ছোঁয়ার মায়ের হাত ঘষতে থাকে। কারণ ঘর্ষণের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। এর ফলে দেহের রক্ত চলাচল আগের তুললায় বৃদ্ধি পায়৷

রিয়া কিছু সময় পর সফল হয় ছোঁয়ার মার জ্ঞান ফিরাতে।

–আমার ছোঁয়া কোথায়? কান্না করতে করতে বলে।

— আন্টি আপনার কি হয়েছে এভাবে কান্না করছেন কেন?

— আগে বলো আমার ছোঁয়া কোথায়?

— আমি এখানে শুধু আপনাকে দেখতে পেলাম। ছোঁয়াকে দেখতে পায়নি৷ ছোঁয়া কোথায় জানা নেই৷ প্লিজ আন্টি চোখের জল মুছেন।

–আমার ছোঁয়াকে আমার কাছে এনে দাও।

কান্না করতে করতে ছোঁয়ার মা আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ রিয়া অনেক কষ্টে ছোঁয়ার মাকে রুমে নিয়ে আসে৷

রিয়া এখন কাকে ফোন করবে ছোঁয়াকে নাকি ছোঁয়ার বাবাকে৷ রিয়ার মাথায় কিছুই ঢুকছে না৷ অবশেষে রিয়া ছোঁয়ার বাবাকে ফোন দেয়৷

–রিয়া বল। (ছোঁয়ার বাবা)

— আঙ্কেল আপনি প্লিজ তারাতাড়ি বাসায় আসেন৷ দরকার আছে৷

রিয়া এই মুর্হুতে খারাপ খবর দিল না৷ জানে হঠাৎ করে এই দূঃসংবাদ দিলে এর বিপরীত হতে পারে৷ এজন্য রিয়া ফোন কেটে দেয়৷

১৫.

সিদ্ধার্থ অনেক জোরে গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ তবুও গাড়ি যেন পিছিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধার্থের এক কাঁধে তার বোন অন্য কাঁধে তার বোনকে হারানোর বেদনা৷

সিদ্ধার্থ হসপিটালে ছোঁয়াকে কোলে করে নিয়ে আসে৷ ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে থাকে৷ সিদ্ধার্থের চিৎকার শুনে অনেক ডাক্তার এসে পড়ে৷ [বড়লোকদের জন্য সব সময় সব কিছু তৈরি থাকে।]

— ডাক্তার আঙ্কেল ছোঁয়াকে বাঁচান৷

— নার্স ছোঁয়াকে এখনই ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাও (ডাক্তার)

নার্সরা যত তারাতাড়ি পারে ছোঁয়াকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যায়৷ রক্ত মাখা সিদ্ধার্থ করিডোর বসে ছোঁয়ার জন্য প্রার্থনা করছে৷

কিছু সময় পর ডাক্তার বের হলো,

— ডাক্তার ছোঁয়া ঠিক আছে তো? টলমল চোখে

— ডাক্তার মুখ কালো করে বলে আসলে আমরা ডাক্তার তোমার কাছে কিছু লুকাতে চায় না৷

— আসলে কি? আর কি লুকাতে চান না? আমি আপনার পায়ে পড়ি আমার বোনকে ঠিক করে দেন৷

— সিদ্ধার্থ সব কিছু বিধাতার হাতে৷ ছোঁয়া মাথায় প্রচুর আঘাত পেয়েছে৷ তার মাথার অনেক টেস্ট করাতে হবে৷ কিন্তু তার যা কন্ডিশন। এই কন্ডিশনে তাকে এসব টেস্ট করালে এর বিপরীত হতে পারে।

— ডাক্তার আপনারা টাকার চিন্তা করবেন না৷ আমি সব ব্যবস্থা করবো৷

— বুঝার চেষ্টা কর? প্রচুর রক্তক্ষরণে তার দেহের এসব সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। একটা কথা বলো তো এসব কাজ কিভাবে হলো?

— ছোঁয়া সিঁড়ি থেকে পা স্লিপ করে পড়ে গিয়েছে৷

— চিন্তা কর না৷ ছোঁয়ার কিছু হবে না৷ বাসায় সবাইকে জানিয়ে দাও ছোঁয়া ঠিক আছে৷



ছোঁয়ার বাবা বাড়িতে এসে এসব দেখে অভাগ। রিয়া ছোঁয়ার বাবাকে ছোঁয়ার বিষয়ে কোন খবর দিতে পারছে না৷ ছোঁয়ার মা জ্ঞান ফিরার পর থেকে কান্না করেই যাচ্ছে।এমন সময় সিদ্ধার্থের ফোন আসে ছোঁয়ার মায়ের ফোনে।

— হ্যালো মা,, তুমি ঠিক আছো তো।

— সিদ্ধার্থের কথা শুনে তার মা আরও কান্না শুরু করে দেয়৷ কিছু বলতে পারছে না৷

রিয়া সিদ্ধার্থের মায়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে

— এখন আন্টি ঠিক আছে?কিন্তু ছোঁয়াকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না৷

— ছোঁয়া এখন ঠিক আছে৷ ছোঁয়াকে নিয়ে আমি “জতীয় বিজ্ঞান ” হসপিটালের নিয়ে এসেছি৷

ছোঁয়ার নাম শুনে সিদ্ধার্থের মায়ের মুখে কথা আসে৷

— আমার ছোঁয়া ঠিক আছে?

— হুম মা ছোঁয়া ঠিক আছে৷

সিদ্ধার্থ আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। এমন সময় সিদ্ধার্থের কোন কথা বের হচ্ছে না৷ হতাশ হয়ে চোখের জল মুছে করিডোর বসে আসে৷

হঠাৎ সিদ্ধার্থ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেল। কিন্তু তাকে সিদ্ধার্থ দেখতে পাচ্ছে না৷ অথচ শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধার্থ ভয় পেয়ে চিৎকার করতে নিলেই,,

— ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না৷ তুমি শান্ত হয়ে বসো।

— আপনি কে? ভয়ে ভয়ে কথা বলে সিদ্ধার্থ।

— আমি সশরীরে আসছি ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷

সিদ্ধার্থ অদ্ভুত লোকটিকে দেখে খুব অবাক।

চলবে,,,#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়

১৬.
সিদ্ধার্থ অদ্ভুত লোকটির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে হঠাৎ করে কোন মা তার ছেলেকে কুড়ি বছর পর ফিরে পেয়েছে।

— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? (অদ্ভুত লোকটি / অধির)

— সিদ্ধার্থ আমতা করে করে তোমার নাম অধির না৷

— হুম। কিন্তু তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন?

— তোমার মৃত্যু ৪ বছর আগে হয়েছে। তাহলে তুমি এখানে আসলে কিভাবে?

— আমার মৃত্যু হয়েছে কি বলছো তুমি? বমি তো এখনও জীবিত তোমার সামনে স শরীরে দাঁড়িয়ে আছি৷

— তোমার সৎকার করা হয়েছে আমাদের সামনে। এটা কিভাবে সম্ভব।

তোমাকে কিভাবে বুঝাব আমার আবার পুঃজন্ম হয়েছে? আমি এমনি এমনি মারা যায়নি৷ আমাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। ভালোবাসার টানে মহাদেব আমাকে আবার ছোঁয়ার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে৷ (মনে মনে)

— কি ভাবছ? অধিরের দেহ স্পর্শ করে।

অধিরের দেহ স্পর্শ করে নিজেই কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অধিরের দেহ প্রচুর ঠান্ডা। যেমনটা মৃত মানুষের দেহ ঠান্ডা থাকে৷ অধির ব্যাপারটা বুঝতে পেয়ে

— কি হলো?

— কই কিছু না? নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে৷

— এখানে কেন এসেছ?

ছোঁয়া কথা মনে পড়তেই সিদ্ধার্থের চোখ থেকে দু ফোঁটা জল কপোলে বেয়ে পড়ে যায়। এটাই মনে হয় ভাই বোনের ভালোবাসা। ভাই বোনের ভালোবাসা পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র ভালোবাসা।

— এভাবে চোখের জল ফেলছে কেন? সব ঠিক হয়ে যাবে৷

— চিন্তা কর না৷ ছোঁয়ার কিছু হতে দিব না৷

— তুমি ছোঁয়াকে চিন?

— ছোঁয়াকে না চিনার কি আছে? ছোঁয়ার জন্যই তো আমার আবার ফিরে আসা।

— ছোঁয়ার জন্য ফিরে আসা মানে কি?

— তেমন কিছু না। এখন ছোঁয়ার কন্ডিশন কেমন?

কিছুতেই সিদ্ধার্থকে বুঝতে দেওয়া যাবে না৷ আমি কেন এখানে এসেছি? তাহলে আমার পুঃজন্ম ব্যর্থ হয়ে যাবে৷ এবার কিছুতেই আমার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে দিব না৷ মহাদেব যে কারণে আমাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করবই।

— ছোঁয়ার কন্ডিশন তেমন ভালো না৷ ডাক্তার বলেছে ছোঁয়ার অনেক টেস্ট করাতে হবে।

— তাহলে করাচ্ছ না কেন?

— কিন্তু

— কিন্তু কি?

— ছোঁয়ার দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণের জন্য সমস্যা হতে পারে।

— ছোঁয়ার কোব সমস্যা হবে না৷ যা করার আমি করব।

— তুমি করবে মানে?

— হ্যাঁ আমি করব।

— কিন্তু ছোঁয়ার লাইফ রিক্স আছে!

— ছোঁয়ার কিছু হতে দিব না৷ ডাক্তারের সাথে আমার কথা বলিয়ে দাও৷

সিদ্ধার্থ অধিরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসে৷সিদ্ধার্থ ডাক্তারকে কিছু বলতে নিবে তখনই অধির সিদ্ধার্থকে থামিয়ে দেয়।

— তুমি বাহিরে যাও৷ আমি কথা বলে নিচ্ছি ছোঁয়ার বিষয়ে। (অধির)

— ওকে

সিদ্ধার্থ কেবিন থেকে বাহিরে চলে আসে। তবুও একটা দুর্বলতা কাজ করে৷ অধিরকে তেমন চিনি না। কিভাবে এতটা ভরসা করব। সেই কলেজে তার সাথে দেখা হয়েছিল। সে তো মারাও গিয়েছিল। কিভাবে ফিরে আসলো। হাজার টা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আসে সিদ্ধার্থ।

না এখানে বসে থাকলে হবে না৷ তার থেকে ভালো আমি মন্দিরে ছোঁয়ার জন্য পূজা দিয়ে আসি৷ এখনই মা বাবা চলে আসবে। ছোঁয়ার কোন সমস্যা হবে না৷

সিদ্ধার্থ আর দেরি না করে হসপিটালের পাশে একটা চেনা মন্দিরে পূজার দিতে চলে যায় ছোঁয়ার জন্য।সিদ্ধার্থ কোনদিন পূজা বিশ্বাস করতো না। কিন্তু তার বোন ছোঁয়ার জন্য এটা করতে পারে৷ ছোঁয়া মনে প্রাণে এসব বিশ্বাস করে।

১৭.
— কে তুমি?

— আমি ছোঁয়ার হাসবেন্ড। (অধির)

— কি বলছো তুমি? ছোঁয়ার তো বিয়েই হয়নি৷

— আমি বলতে চেয়েছি আমার ছোঁয়ার হবু হাসবেন্ড।

— ও আচ্ছা।

— ছোঁয়ার যা টেস্ট করা লাগে সব করে ফেলেন।

— এখন তো ছোঁয়ার লাইফ রিক্স আছে?

— ছোঁয়ার কিছু হবে না৷

— তুমি কি ডাক্তার? তুমি এসব কিছু জানো না।

— আমি ডাক্তার নয় ঠিকই৷ কিন্তু আমি আপনার থেকে বেশি কিছু করতে পারি৷

— হোয়াইট?

— আশ্চর্য হওয়ার কারণ নেই৷ আমার পরিচয় জানার পর আমার থেকে ভয় পাবেন না।

— আমি ডাক্তার। আমি কোন কিছুতেই ভয় পায় না৷

— ডাক্তাররা শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভয় পায় না৷ কিন্তু তাদের জীবন হঠাৎ করে কেউ চলে আসলে।

— কি বলতে চাও?

— বলতে চেয়েছি সত্য যুগের কাহিনি যদি এই কলি যুগে ঘটে।

— পাগল হলে নাকি৷ সত্য যুগের কাহিনি কিভাবে কলি যুগে ঘটবে৷ আর আমি সত্য যুগের কিছু বিশ্বাস করি না৷

— কেন?

— কারণ আমার সামনে কোনদিন তেমন কিছু ঘটে নি৷

— যদি এখন ঘটে

— হাস্যকর?এখন কিভাবে ঘটবে?

— কথা দেন। এমন কিছু আপনার সামনে আসলে আপনি ছোঁয়ার সব টেস্ট নিতে রাজি হবেন।

— হুম। আমি কথা দিচ্ছি। এমন কিছু সত্য আমার সামনে তুলে ধরতে পারলে আমি ছোঁয়ার সব টেস্টের ব্যবস্থা করব।

অধির মুচকি হেঁসে ডাক্তারের সামনে উধাও হয়ে যায়। ডাক্তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কিভাবে হলো। কোব কালতালিও নয় তো।

— এটা কোন কালতালিও না।

শূন্যে আওয়াজ ভেসে আসার জন্য ডাক্তার ভয়ে কাবু হয়ে যায়। সে এখন কি করবে? কিভাবে তার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে৷ যদি তার কোন ক্ষতি করে দেয়৷ ভয়ে কাঁপতে থাকে৷ কিন্তু এখনও হাল ছাড়েনি৷

–তুমি আমার সাথে মিজিক করছ?

— এটা কোন মিজিক না ডাক্তার। এখন আপনি যদি আপনার কথায় রাজি না থাকেন আমি আপনার সেই হাল করবো যেটা যেটা আমার ছোঁয়ার করা হয়েছে।

— আমি তোমার সব শর্তে রাজি৷ প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করো না৷

— আপনার কোন ক্ষতি হবে না৷

— তাহলে তুমি প্লিজ সশরীরে আমার সামনে আসো৷

অধির এবার সশরীরে ডাক্তারের সামনে আসে৷

— ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই আঙ্কেল। আপনি যেমন ছোঁয়ার আঙ্কেল লাগেন৷ তেমনি আমারও আঙ্কেল। আপনি শুধু ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরিয়ে দেন৷ তার পর তাকে সুস্থ করার দায়িত্ব আমার৷

— তুমি তাকে কিভাবে সুস্থ করবে?

— আমি কোন সাধারণ মানুষ নয়৷ তাঁকে সুস্থ করতে আমার তেমন সময় লাগবে না৷

–ওঁকে। তুমি যা বলবে তাই হবে।

— সময় নষ্ট না করে তারাতাড়ি কাজ করেন। আমি ছোঁয়াকে সব জায়গায় পৌঁছে দিব৷ কেউ কিছু জানতে পারবে না। নার্সরা শুধু ছোঁয়ার দেহ নিয়ে যেতে পারবে। আসলে ছোঁয়াকে আমি নিয়ে যাব।

— যেমনটা বলবে তেমনই হবে৷

ডাক্তার আর অধির ছোঁয়ার কেবিনে প্রবেশ করে। ছোঁয়াকে মরার মতো শুয়ে থাকতে দেখে অধিরের চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। অধির কষ্টে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে। অধির কিছুতেই তপেসকে ছাড়বে না৷ যেভাবে তার ছোঁয়াকে মারার চেষ্টা করেছে ঠিক একই ভাবে তপেসকে অধির মারবে।

১৮.
ছোঁয়ার মা বাবা এতক্ষণে হসপিটালে এসে পরেছে। ছোঁয়ার এমন কন্ডিশন দেখে ছোঁয়ার মাযের অব্স্থা আরও খারাপ হয়ে পড়েছে৷ সন্তানের বিপদ হলে মা ঠিক থাকতে পারে না৷ এটাই হলো নাড়ির টান৷

— আন্টি নিজেকে সামলান। আপনি যদি ভেঙে পড়েন তাহলে ছোঁয়ার কি হবে? আপনি তো ছোঁয়াকে সাহস জোগাবেন।(রিয়া)

— ছোঁয়া ঠিক হয়ে যাবে তো?

–হুম আন্টি কোন চিন্তা করবেন না ছোঁয়া ঠিক হয়ে যাবে৷

— ডাক্তারকে বলে আমাকে একবার ছোঁয়ার কাছে নিয়ে যাও।

— ডাক্তার বলল ছোঁয়ার কিছু টেস্ট করাচ্ছে। তার পর ছোঁয়ার সাথে দেখা করতে পারবেন৷
_______________

ডাক্তার অধিরের সাহায্যে ছোঁয়ার সব কিছু টেস্ট করিয়ে নেয়৷ টেস্ট দেখে ডাক্তার বলে

— এখনই ছোঁয়ার মাথায় একটা অপারেশন করাতে হবে৷

— কেন?(অধির)

— ছোঁয়ার সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার সময় মাথায় প্রচুর আঘাত পায় সাথে ঘাড়েও আঘাত পায়৷ তার ঘাড়ের একটা শিরা অনেকটা টান পড়ে আছে। যার কারণে ছোঁয়ার মাথা এখন বেকা হয়ে আছে।

— এতে ছোঁয়ার কোন ক্ষতি হবে না।

— সিউর বলতে পারি না৷ এখনই এই আপারেশ করতে না পারলে ছোঁয়ার ঘাড় আর কোনদিন সোজা হবে না৷

— আমি আপনাকে অনুমতি দিলাম। কিন্তু?

— কিন্তু কি?

— ছোঁয়ার মা বাহিরে আছে তাঁকে কিছু বলে আসেন।

–ওঁকে।

ডাক্তার ছোঁয়ার ব্যাপারে ছোঁয়ার মাকে অনেক কিছু বলে। এখন ছোঁয়ার একটা অপারেশন দরকার অনুমতি জানতে এসেছে ডাক্তার।

— আপনি যদি অনুমতি দেন। আমি এখনই ছোঁয়ার অপারেশন করতে পারি।

ছোঁয়ার মা অপারেশনের কথা শুনে একটা ঘুরে চলে যান৷ কোন কথা বলছে না৷ শুধু তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।

— আপনি অপারেশন শুরু করে দেন৷ ছোঁয়ার বাবা।

— আপনারা বন্ডে সাইন করে দেন৷ আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি৷

— ওকে। (ছোঁয়ার বাব)



অপারেশনের পর ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরছে না৷ ডাক্তার বলে দিয়েছে ১ ঘন্টার মাঝে ছোঁয়ার জ্ঞান না ফিরলে ছোঁয়া কোমায় চলে যাবে৷

চলবে,,

দেরি করে দেওয়ার জন্য সরি। ছোঁয়ার ঘটনা ৮০% সত্য মানে আমাদের পাশের বাসায় এমনটা হয়েছে৷ বিয়ের দিন দিন আগে বর মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।কিন্তু পারেনি৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কাল তপেসকে বাদ দিয়ে দিলাম।কিন্তু তপেস কেন এমন করল জানতে পারবেন আগামী ২ পর্বে।

আমার খুব খারাপ লাগছে ছোঁয়ার জন্য৷ আমি এমন করতে চায়নি৷ আজ যতটুকু লিখেছি তার মাঝে ৮০% সত্য ঘটনা৷বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here