18+19
#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:18
মাহিন আর কিছু বলেনি।সারা বাম হাত দিয়ে রোদ আর রোদ্রি কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। রোদ আর রোদ্রি ও মাম্মার বুকে চুপ করে শুয়ে আছে।সবাই ওদের তিন জনের দিকে তাকিয়ে আছে।এখন সারা দেখে কেউ বলবে না সারা অসুস্থ। তিনজন কি শান্তিতে চোখ বুজে আছে।
.
রোদ : মাম্মা তুমি ব্যাথু পেয়েথো কি কলে?
.
সারা : পড়ে গিয়ে বাবা।
.
রোদ্রি : আমলা ব্যাথু পেলে তুমি দে ভাবে আমাদেল ব্যাথু ভালু করু দেও।আমালাও তেমন কলবো মাম্মা?
.
সারা ওদের মাথায় চুমু দিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। রোদ আর রোদ্রি সারার বুক থেকে উঠে সারার মাথায় হাত পায়ের ব্যান্ডেজয়ে অনেক গুলো চুমু দিয়ে আবার সারার বুকে মাথা রেখে রোদ বলে।
.
রোদ : এবার তোমার ব্যাথু ভালু হয়ে দাবে মাম্মা!
.
সারা : আমার সোনা পাখিরা আমার কাছে থাকলে আমি এমনিতেই ভালো হয়ে যাবো।
.
মাহিন : অনেক হয়েছে আপনাদের আলাপ। রোদ,রোদ্রি এবার ডেডার কাছে আসো।মাম্মা অসুস্থ।
.
মাহিন কথা শুনে রোদ মাহিনের কাছে চলে যায়। কিন্তু রোদ্রি সারার বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
.
মাহিন : রোদ্রি চলে এসো এবার।
.
রোদ্রি : না আমি মাম্মার কাতে থাকবো।ও মাম্মা তুমি তিতু বলু না।
.
সারা : বলছি সোনা। ভাই তুই ভালো করেই জানিস রোদ্রি আমাকে ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এখন আমার কাছে থাক ও ঘুমিয়ে গেলে তখন নিয়ে যাস।
.
মাহিন : কিন্তু…
.
সারা : আমার ঠিক আছি।আর ওরা আমার কাছে থাকলে আমি বেশি ভালো থাকি।
.
মাহিন আর কিছু বলে না। সারা বাম হাত দিয়ে রোদ্রি কে হালকা করে জড়িয়ে ধরে।রোদ্রি সারার বুকে মাথা রেখে গল্প করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রোদ্রি ঘুমিয়ে গেলে আরাফ এসে রোদ্রি কে নিয়ে যায়। মাহিন জোর করে মাহির কে বাড়ি পাঠায় ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য। মাহিন সারা কে মাহিরের একদিনের পাগলামি সম্পর্কে সব কিছু বলে। সারা একদিক থেকে ভালো লাগে যে মাহির এখনো সারা কে ভালোবাসে, আবার অন্যদিক থেকে রিয়া কথা গুলো ও মনে পড়ে। কিন্তু সারা ঠিকই বুঝতে পারে কোথাও না কোথাও একটা বড় ঘাপলা আছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা সব ভুল বোঝাবুঝি ঠিক করে নেওয়ার। মাহির রাতে হসপিটালে এসে মাহিন কে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।মাহিনেও শরীর ক্লান্ত থাকায় ও চলে যায়। রাতে নার্স সারা কে খাবার, মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে চলে যায়। সারা ঘুমিয়ে পড়লে মাহির সারার কেবিনে ঢুকে। মাহির সারার এই অবস্থার জন্য নিজেকে ই দায়ী করছে। মাহির এখন আল্লাহ তায়ালা কাছে মোনাজাতে একটা কথাই বলে সারা সুস্থ হয়ে উঠলে ও যে সিদ্ধান্ত নিবে তাতে মাহির বাঁধা দিবে না। মাহির সারার হাত বুকের সাথে চেপে অনেক ক্ষন নিঃশব্দে কান্না করে।সারা সকালে ঘুম মধ্যে অনুভব করে তার চিরচেনা মানুষ তার খুব কাছে আছে। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে কে জেনো সারার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে। নিঃশ্বাসে তার ভালোবাসার মানুষের কথা জানান দিচ্ছে। চিরচেনা ঘ্রাণ সারা কে পাগল করে দিচ্ছে।সারার এখন আর বুঝতে বাকি নেই মানুষটি কে?সারার খুব ইচ্ছে করছে মাহির কে কাছে টেনে নিতে কিন্তু কোথাও কিছু একটা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাহির নড়াচড়া শুরু করলে সারা আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। মাহির ঘুম থেকে উঠে দেখে মাহির সারার বুকের উপর ঘুমিয়ে ছিলো। সকালে নামাজ পড়ে এসে সারার পাশে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা টের পায়নি। মাহির সারার দুই গালে হাত দিয়ে সারার কপালে ওর ঠোট ছোঁয়ায়। সারা ভালো করেই বুঝতে পারে মাহিরের এই ছোঁয়ায় কোনো অপবিত্রতা নেই। প্রথম ভালোবাসার স্পর্শের মত সারার মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি করে। এভাবেই রাগ, অভিমানের মধ্যে কেটে যায় পনের দিন।এই পনের দিনে মাহির সারার সামনে আসলেও কোনো কথা বলেনি।এই পনের দিনে কম বেশি সবাই সারা কে প্রতিদিন এসে দেখে যেতো।সবার সাথে কথা বললেও সারার মাম্মার সাথে সারা কথা বলতো না। একদিন সন্ধ্যার পর চৌধুরী বাড়ির সবাই সারার কেবিনে ছিলো তখন মাহিন ওর বাবা মা কে নিয়ে কেবিন ঢুকে।মাহিনের মা তো সারা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলেছে। সারা তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করে।মাহিনের বাবা মা মাহিন কে আচ্ছা করে বকে দেয় সারার কথা তাদের আগে জানায়নি তার জন্য। মাহিনের বাবা মা সারার পরিবারের সবার সাথে কথা বলে। জারার কথা বার্তা আচারন মাহিনের মায়ের খুব পছন্দ হয়। মনে মনে ঠিক করে রাখে সারা সুস্থ হলে জারা আর মাহিনের বিষয়ে কথা বলবে। কিন্তু তিনি তো জানে না মাহিন ইতিমধ্যে জারার প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু জারা মাহিন কে পাত্তা দেয় না।মাহিনের পুরো নাম যেহেতু মাহিন মির্জা।তাই জারা মাহিন কে মাহিন মিরজাফর বলে ডাকে। প্রতিদিন বিকেলে রোদ আর রোদ্রি এসে ওর মাম্মার সাথে দেখা করে। আর সারা ওদের মন ভরে আদর করে দেয়। সারার এসিস্ট্যান্ট হিয়া ওর মা ও মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। মাহির ওদের নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।হিয়া ই সারার খেয়াল রাখছে।রাজ মিথিলার বৌভাত আর হানিমুন সারার কারনে হয়নি বলে সারা ওদের সরি বলতে গেলে রাজ আর মিথিলা ওকে খুব করে বকে দেয়।আজ সারা বাড়ি ফিরবে,না মির্জা বাড়ি না চৌধুরী বাড়ি যাবে সারা খান বাড়ি। মাহিরের বোন মাহি সারা কে অনুরোধ করছে সারা যে কদিন পুরোপুরি সুস্থ না হচ্ছে অন্তত সে কদিন সারা খান বাড়িতে থাকুক। সারা কেমন না করতে গিয়েও না করতে পারেনি। সারা সম্মতি জানায় সারা যাবে। খান বাড়িতে যেনো আজ কোনো উৎসব লেগেছে।লাগারই কথা আজ কত বছর পর খান বাড়ির গৃহলক্ষ্মী আজ আবার বাড়ি ফিরছে। খান বাড়িকে বধূর বেসে সাজিয়ে তুলেছে নিলিমা খান।তার স্বামী শোহান খান ও কোনো অংশে কম যান না সারার জন্য পুরো শপিং মল তুলে এনেছেন।সারার মাম্মা, ছোট মাম্মা, মামনি,মাহিনের মা সবাই মিলে সারার পছন্দের খাবার রান্না করেছে।মাহি, জারা, আরফিন এরা রোদ,রোদ্রি,দিয়া কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই কয়জনে মিলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে। মাহিনের বাবা,সারার পাপা, ছোট পাপা এরা বাগানে চেয়ার পেতে গল্প করছে। মাহির, মাহিন,আরাফ,হিয়া এরা গেছে সারা কে আনতে। হিয়া হুইলচেয়ারে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু মাহির তা মানতে নারাজ। মাহির সবাইকে অবাক করে দিয়ে সারা কে কোলে তুলে নেয়।এতে সারা চরম অবাক হয়,তাও মাহির কে কিছু বলে না। সারা বাম হাত দিয়ে মাহিরের শার্ট খামচে ধরে থাকে। মাহির সারার দিকে নজর না দিয়ে সারা কে গাড়ির সিটে ভালো করে বসিয়ে দেয়।গাড়ি খান বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে দেখে সারা আজ বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো। গাড়ির শব্দ শুনে সবাই বাড়ির বাইরে হাজির হয়। মাহির গাড়ি থেকে নেমে আবার সারা কে কোলে তুলে নেয়।তা দেখে রোদ আর রোদ্রি হাত তালি দিতে দিতে বলে,তি মজা পাপা মাম্মা কে কুলে নিতে, ওদের এত কাছে দেখে সবার মুখে একটা তৃপ্তির হাসি দেয়। সারা মাহির দরজার কাছে এলে সবাই ওদের থামিয়ে দেয়। মাহির ভ্রু কুঁচকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে তার আগেই দেখে ওর মামনি বরনডালা জাতীয় কিছু নিয়ে এগিয়ে এসছে ওদের দিকে। ওরা কিছু বলবে তার আগেই মামনি বলে।
.
মামনি : আজ এত বছর পর আমার বাড়ির খুশি, আমার বাড়ির ভালো থাকার মাধ্যম, আমার বাড়ির গৃহলক্ষ্মী আবার ফিরে এসেছে।তাকে কি এমনি এমনি বাড়ি ঢুকতে দিতে পারি। আমি বধূবরণ করে আমার গৃহলক্ষ্মীকে ঘরে তুলবে।তাই এত আয়োজন।
.
সবার খুশির কারনে সারা আর কিছু বলেনি। আবার বরন করে সারা কে ঘরে তুলে। মাহির সারা কে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।আজ কত বছর পর সারা আবার তার চিরচেনা সেই ঘরে!কত ভালো লাগা,কত ভালোবাসার স্মৃতি বিজড়িত হয়ে আছে এই ঘরে। সারা অভিমান করলে মাহির সারা কে জড়িয়ে ধরে বা ফুসকা না হয় আইসক্রিম এনে সারার অভিমান ভাঙ্গাতো।এসব কথা ভেবেই সারার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।তা মাহিরের চোখ এড়ায় না। মাহির সারা কে আস্তে করে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি আর একটা তোয়ালে নিয়ে আসে। তোয়ালের এক কোনা ভিজিয়ে ভালো লাগে সারার মুখ,বাম হাত,ডান পায় মুছে দেয়। সারা শুধু মাহিরের কর্ম কান্ডগুলো লক্ষ্য করে যাচ্ছে। মাহির মুখে কিছু না বলে ওর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তোয়ালের শুকনো জায়গায় থেকে আবার সারার মুখ মুছে দিয়ে বালতি আর তোয়ালে নিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে যায়। মাহির ফ্রেশ হয়ে ওর জামাকাপড় বদলে নিয়ে সোফায় বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। সারা চোখ বন্ধ হয়ে আসছে কড়া মেডিসিনের কারনে সারা ঘুমে ডুলছে। মাহির সারা কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে যায়। মাহির এখন আর আগের মত কারো সাথে কথা বলে না।সব সময় নিজেকে একা রাখার চেষ্টা করে। দুপুরের দিকে সারার ঘুম ভেঙ্গে যায়। হিয়া সারার রুমে এসেছে সারার খাবার আগের মেডিসিন দিতে। সারা হিয়া কে নিজের কাছে ঢেকে বলে।
.
সারা : হিয়া তুমি জানো আমি সুস্থ হতে হতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে।আর হসপিটালে জয়েন করতে করতে আরো এক মাস।মোট চার মাস। তুমি তোমার ক্যারিয়ার থেকে চার মাস নষ্ট করবে কেনো তার থেকে বরং তুমি ইউকে ফিরে যাও।অন্য কোনো ডাক্তারের এসিস্ট্যান্টে হিসেবে জয়েন করো।
.
হিয়া : মেম আপনি আমাকে এক মুহুর্তে পর করে দিলেন?( ছলছল চোখে )
.
সারা : না তা কেনো। আমি তো তোমার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বলছি।
.
হিয়া : আমার ভালোবাসার মানুষ যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায় তখন দিয়া আমার গর্ভে। দুঃখের অথই সাগর থেকে আপনি আমাকে টেনে তুলেছেন আজ আপনার এই অবস্থায় আমি কি না ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববো? রোদ আর রোদ্রি থেকে কখনো দিয়া কে আলাদা চোখে দেখেনি। আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আপনার এই কথা রাখতে পারবো না মেম।( কান্না করে )
.
সারা : পাগলি বোন আমার কান্না করছিস কেনো? আমি আর কখনো আমার থেকে আলাদা করতে চাইবো না।আজ থেকে আমি তোর বড় বোন, এখন থেকে তুই আমাকে আপু বলে ডাকবি।কি ডাকবি তো?
.
কান্নার মাঝে হাসি ফুটিয়ে তুলে সারা কে জড়িয়ে ধরে বলে।
.
হিয়া : আমি তো প্রথম থেকেই আপনাকে আমার বড় বোন মেনে এসেছি।
.
সারা : তাহলে আপনি বলছিস কেনো? তুই অথবা তুমি করে বলবি ঠিক আছে?
.
হিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। হিয়া কিছুক্ষণ থেকে পরে চলে যায়।রোদ্রি আসে সারার কাছে এখন পর্যন্ত ওর মাম্মার সাথে কথা বলতে পারেনি।রোদ্রির পিছন পিছন রোদ ও আসে সারার কাছে। মাহির খাবার নিয়ে আসে সারা কে খাওয়াবে বলে।রোদ্রি বায়না ধরে মাহির ওদের তিন জনকে একসাথে খাইয়ে দিতে হবে। সারা ইশারায় মাহির কে খাইয়ে দিতে বলে। মাহির রোদ আর রোদ্রি কে খাইয়ে দিলে রোদ বলে।
.
রোদ : থুব মজা থাবার পাপা।
.
মাহির : তাই বাবা?
.
রোদ : অহহহ….
.
মাহির : আচ্ছা খাও।
.
রোদ্রি : পাপা তুমি তু আমাদেলকে থাইয়ে দিচ্ছে। তুমি থাবে না?
.
মাহির : না মা তোমরা খাও?
.
রোদ্রি : কেনু?
.
সারা : খেয়ে নেয় না অন্তত ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে।
.
মাহির খুব খুশি সারা আজ ওর সাথে কথা বলেছে আর তুমি করে বলেছে। মাহির ওদের খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।
To be continue…🍁
#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:19
মাহির খুব খুশি সারা আজ ওর সাথে কথা বলেছে আর তুমি করে বলেছে। মাহির ওদের খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।
.
রাতে মিথিলা আর রাজের বাড়ির সবাই খান বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলো।সবাই মিলে একসাথে অনেক আনন্দ করে। সারা কে মাহির সোফায় বসিয়ে রেখেছে। রোদ,রোদ্রি,দিয়া,জারা, আরফিন,মাহি এরা লুকোচুরি খেলছে।রাজ আর মিথিলা দুজন দুজনকে খোঁচা মেরে কথা বলছে।সবাই কিছু না কিছু কাজে ব্যস্ত। সারা চারদিকে চোখ বুলিয়।আজ সবাই কত খুশি।সারার হঠাৎ চোখ পড়ে ওর মাম্মার দিকে উনি সবার সাথে কথা বলছেন ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে একটা জড়তা কাজ করছে।সবার দৃষ্টিত অগচরে তিনি সুরু দৃষ্টিতে সারার দিকে তাকায়।সারার যে পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে ওর মাম্মার প্রতি। সারা রাজ আর মিথিলার হাতে একটা খাম এগিয়ে দেয়। ওরা কিছু জিজ্ঞাসা করবে তার আগেই সারা বলে।
.
সারা : দুটো ফ্লাইটের টিকিট আছে।তোরা হানিমুনে প্যারিস যাচ্ছিস। হোটেল বুক করা হয়ে গেছে। কাল রাতে তোদের ফ্লাইট। আমার জন্য তোদের বৌভাত আর হানিমুন দুটোই বেসস্তে গেছে। এবার আর না করিস না।
.
রাজ : জানু তুই সব সময় মনের কথা বুঝে যাস কি করে? আমার মনটাও কিছু দিন ধরে প্রেম প্রেম করছে।ভালোই হয়েছে এবার হানিমুনে গিয়ে চুটিয়ে প্রেম করবো।
.
রাজের কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে দেয়। মিথিলা তো লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছে না।নিজে নিজে বিরবির করে বলে।
.
মিথিলা : তোর খুব প্রেম পাচ্ছে তাই না।যখন বিয়ে করতে বললাম তখন তুই বললি আরো এক বছর পর করবি।আর এখন খুব প্রেম পাচ্ছে।সবার সামনে ইজ্জতের ফালুদা করে দিলি তো।চল না হানিমুনে তোর প্রেম করার সাধ জন্মের মত ঘুচিয়ে দেবে।
.
কথায় আছে না সুখের সময় তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হয়ে যায়, ঠিক তেমনি খান বাড়ির সবাই হেসে খেলে সারার সাথে দুই মাস অতিবাহিত করেছে। এই দুই মাস যেনো চোখের পলকে শেষ হয়ে যায়। এখন সারা খুরিয়ে একটু একটু হাঁটতে পারে,হাত দিয়ে একটু একটু কাজ করতে পারে। সকালে হিয়া আর মাহির মিলে সারাকে এক্সারসাইজ করায়। মাহির সারার সমস্ত কাজ করে দেয় কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া সারার সাথে কথা বলে না।এক বিছানায় ঘুমালেও তাদের মাঝে লক্ষ মাইল দূরত্ব। সারা মাঝখানে রোদ আর রোদ্রি দুজন সারার দুই পাশে আর রোদের পাশে মাহির ঘুমায়। এরমধ্যে মাহিন একবার ইউকে থেকে ঘুরে এসেছে। রোদ আর রোদ্রি যেহেতু খুব ছোট তাই সারার মাম্মা জারা আর আরফিন কে সারার কাছে পাঠিয়ে দেয় রোদ আর রোদ্রি কে সামলানো জন্য। রোদ,রোদ্রি, দিয়া প্রতিদিন নতুন নতুন পন্থায় সবাইকে নাজেহাল করে। এরমধ্যে একদিন রাতে শোহান খান বাড়িতে ফিরে বলে, রিয়া আর ওর মা মিলে শপিং করতে গেলে কি করেন রিয়া রাস্তা পার হতে গেলে একটা মাইক্রো রিয়া কে ধাক্কা দিতে গেলে রিয়ার মায় রিয়াকে সরিয়ে দিয়ে নিজে মাইক্রোর নিচে পড়ে যায়।রিয়ার চোখের সামনে ওর মা পুরো থেঁতলে যায়। নিজের চোখে ওর মায়ের এই অবস্থায় দেখে রিয়া মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। রিয়া এখন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি।ওর ভাই রিয়নের কোনো খোঁজ নেই দূর্ঘটনার পর থেকে।নিলিমা খান তার বোনের এই অবস্থায় জন্য কান্নাকাটি করলে হিয়ার মা তাকে সান্ত্বনা দেয়। কথায় আছে না পাপ কখনো কারো পিছু ছাড়ে না, আল্লাহ তায়ালা ওদের পাপের শাস্তি ঠিকই দিয়ে দিলো। গোধূলি বেলায় সারা বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে আছে। মামনি রুমে ঘুমাচ্ছে। জারা আর আরফিন আজ ঐ বাড়িতে গেছে। মাহির বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে।হিয়ার আজ দুই দিন ওর মামার বাড়িতে গেছে বেড়াতে।মাহি সারা কে বসে থাকতে দেখে ও দৌড়ে গিয়ে দুই মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসে।এক মগ সারার দিকে এগিয়ে দিলে সারা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে কফি মগ হতে নেয়। সারা মনে মনে ভাবে বিকেল বেলা এক মগ কফি আর পছন্দের উপন্যাস বই সাথে থাকলে মন্দ যায় না বিকেলটা।
.
মাহি : এভাবে আর কতদিন তোমরা দুজন দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে কষ্ট পাবে?
.
সারা মাহি দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালে মাহি এক চুমুক কফি নিয়ে সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে নিয়ে আবার বলে।
.
মাহি : জানে তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া কেমন হয়ে গেছিল। অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতো। তোমার উপর রাগ উঠলে নিজের ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতো। রিয়া ভাইয়ার কাছে অনেক বার জেতে চাইতো কিন্তু ওকে অপমান করে দূরে সরিয়ে দিতো। একদিন তো রাজ ভাইয়া আর মিথিলা আপুর সাথে ভাইয়ার রাস্তায় দেখা হলে ওরা তোমার কথা জিজ্ঞেস করলে ভাইয়া ওদের যা নয় তাই বলে। এরমধ্যে ভাইয়া সিগারেট খাওয়া শুরু করে। আর আমিও তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে ভাইয়ার সাথে কখনো কথা বলিনি।জানো রিয়া তোমাদের মধ্যে কি করে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেছে? রিয়া লোক লাগিয়ে তোমার আর রাজ ভাইয়ার কিছু ছবি তুলে তাতে রাজ ভাইয়ার চেহারা ভালো ভাবে বোঝা যায় না।এইসব ছবি দিয়ে ভাইয়ার মন বিষিয়ে দিতে শুরু করে। এরপর ভাইয়া তোমার থেকে দূরে যেতে শুরু করে। এরপর রিয়া আমাদের চরম সর্বনাশ করে তোমার আর রিয়নের কিছু ফেক ভিডিও ভাইয়া কে দেখার। তখন ভাইয়া নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেসে ভিডিও গুলো আসল না কি নকল তা না জেনেই তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
.
মাহি এইটুকু বলে থামে।সারার দিকে তাকিয়ে দেখে দু’হাত দিয়ে কফি মগ ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।মাহি আবার কফিতে চুমুক দিয়ে বলে।
.
মাহি : এক বছর ভাইয়া তার ছন্নছাড়া জীবন এইভাবে কাটিয়ে দেয়।এই এক বছর রিয়ার আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া বেড়ে যায়। এমনি একদিন রিয়া আসে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে কিন্তু ভাইয়া রুমে ছিল না ভাইয়া ওয়াশরুমে ছিল। রিয়া হয়তো খেয়াল করে নি। তখন ওর একটা ফোন আসে ফোনটা ওর ভাই রিয়ন করে।
.
.
.
অতীত 🍁
রিয়া : হ্যালো! বল।
.
রিয়ন : কি বলবো হ্যা, তুই তো ভালোই আছিস। কথা ছিল তুই মাহিরকে নিবি আর আমি সারা কে। কিন্তু আমি তো সারা কে পেলাম না। ভুলে যাস না প্লানটা কিন্তু আমার ছিলো। মাহির কে বলে দিলে তোর কি অবস্থা হবে ভাবতে পারছি?
.
রিয়া : অহহ,,,হ্যালো ভাই আমি তোরই বোন মনে রাখিস।রাজের সাথে সারার অস্পষ্ট ছবিগুলো আমি ফেক আইডি থেকে মাহিরের কাছে পাঠিয়েছি। তোর আর সারার ঐ সব ফেক ভিডিও আমি তৈরি করেছি।তাই এই প্লানে আমারো হাত আছে।আর রইল বাকি মাহিরের কথা ওকে খুব তাড়াতাড়ি নিজের করে নেবো।তুই সারা কে দিয়ে কি করবি? মাহির যখন সারা কে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তখন ও মাহিরের সন্তানের মা হতে চলেছে।আর এই এক বছরে ওর সন্তান বোধহয় পৃথিবীর আলো দেখে ফেলেছে। ওকে ছেড়ে নতুন কাউকে নিয়ে ভাব। এখন আমাকে ফোন করে বিরক্ত করিস না।
.
রিয়া ফোন রেখে মাহির দাঁড়িয়ে আছে চোখ ভয়ংকর হয়ে আছে। রিয়া ভাবে মাহির কিছু শুনে ফেলেনি তো এইভাবে শুকনো ঢোক গিলে। রিয়া মাহিরের হাত থেকে বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টা করে।
.
রিয়া : মাহির তুমি কখন এলে?
.
মাহির : যখন তোর ফোন এসেছে তখন।( দাঁতে দাঁত চেপে )
.
রিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই মাহির ওর সব কথা শুনে ফেলেছে। মাহির ঝড়ের গতিতে এসে রিয়ার গলা টিপে ধরে চিৎকার করে বলে।
.
মাহির : আমি কি এমন ক্ষতি করেছিলাম যে আমার ভালোবাসায় এমন ফাটল ধরালি? আমার থেকে সারা কে কেড়ে নিয়ে কি পেলি?তোরা দুই ভাই বোনে মিশে আমার সুখের সংসার ভেঙ্গে তসনস করে দিলি! কেনো এমন করলি?বল কেনো এমন করলি?
.
মাহিরের এমন বাড়ি কাঁপানো চিৎকারে সবাই মাহিরের রুমে এসে হাজির হয়। মাহির রিয়া কে এমন ভাবে গলা টিপে ধরেছে ওর চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে তা দেখে মামনি উত্তেজিত হয়ে বলে।
.
মামনি : মাহির কি করছিস কি? রিয়া তো মরে যাবে ছাড় ওকে।
.
মামনির কথা শুনে মাহির রিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে।
.
মাহির : ওকে তো আজ আমি নিজের হাতে মেরে ফেলবো।জানো ও কি করেছে?
.
মাহির প্রথম থেকে ওদের সবকিছু বলে। এতক্ষন মাহিরের বাবাই চুপ ছিলো মাহিরের কথা শুনে রেগে মুখ খোলে।
.
বাবাই : আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার বাড়ির গৃহলক্ষ্মীকে রাতের অন্ধকারে ঘর ছাড়া করছো। তোমার একবার মনে হয়নি আমাদের সারা এমন নোংরা কাজ করতে পারে না। তখন তোমার কি হয়েছিল তা একমাত্র তুমিই জানো। এখন তো তোমার খুশি হওয়ার কথা তাহলে চিৎকার করছো কেনো?আমি তোমার সাথে কথা বলে আমার সময় নষ্ট করতে চাই না।নিলিমা,মাহি চলে এসে তোমরা।
.
এই ফাঁকে রিয়া এখন থেকে পালিয়ে যায়।মাহিরের বাবাই চলে গেলে মাহির ওর মামনি পা জড়িয়ে ধরে বলে।
.
মাহির : মামনি সারা যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তখন ও অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। আমার সন্তান ওর গর্ভে ছিলো। আমি না জেনে ওকে এত কষ্ট দিয়েছি ও কি কখনো আমাকে ক্ষমা করবে?
.
মামনি : তুই যে অন্যায় করেছিস তার কোনো ক্ষমা হয় না। চিন্তা করেছিস একবারো এক বছর সারা কোথায় আছে? বেঁচে আছে কি না তাও তো জানিস না।
.
মাহির মামনির কথা শুনে দুকদম পিছিয়ে গিয়ে কি মনে করে গাড়ির চাবি নিয়ে চলে যায় সারাদের বাড়িতে প্রায় একবছর পর মাহির সারাদের বাড়ি যাচ্ছে। মাহির কে দেখে চৌধুরী বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়। মাহির গিয়ে অপরাধীর মতো সবার মাঝে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে মাহির ওদের সবকিছু খুলে বলে। জারা আর আরফিন রেগে গিয়ে মাহির কে আর ওদের মাম্মা কথা শুনিয়ে দেয়।আজ ওদের একটা ভুলের জন্য সারা নিরুদ্দেশ। মাহির সারার মাম্মার কাছ থেকে রাজ আর মিথিলার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে চলে যায় যদি ওরা কোনো খবর দিতে পারে সারার। কিন্তু রাজ মাহির কে যা নয় তাই বলে।এক বছর পর এসেছে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর খবর নিতে? তখন থেকে মাহির সারা কে খুঁজে যাচ্ছে। এরপর চার বছর পর মাহির সারা কে ওর ছোট পাপার অপারেশনের দিন দেখে। তখন সারা অনেকটাই বদলে গেছে।
.
.
.
বর্তমানে 🍁
মাহি : সবই তো শুনলে। এখন শুধু তোমার সিদ্ধান্তের উপর শুধু তোমার আর ভাইয়ার না রোদ আর রোদ্রি ভবিষ্যত নির্ভর করছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ভাবী ভাইয়া কিন্তু চক্রান্তে শিকার হয়েছে। একটা অনুরোধ যা করবে একটু ভেবে করো প্লিজ!
.
মাহি এই বলে কফি মগ দুটো নিয়ে চলে যায়।আর সারা কে ফেলে যায় এক রাশ চিন্তার মধ্যে।মাহি র কথা গুলো খুব ভাবাচ্ছে সারা কে।কি করবে ও?
To be continue…🍁