তোমাতে ❤ পর্ব ৫+৬

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৫/

সারারুমে ড্রিম লাইটের হালকা নীলচে আলোদের বিচরণ। সেই আলোয় মিটিমিটি হাসছি। অনুভূতিরা পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। কিছুক্ষণ পর পর লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকি। আবার হাত সরিয়ে আশপাশে তাকাই। দৃষ্টি জোড়া হঠাৎ এক ম্যাজিকের আশা করে। নয় এক অতিপ্রাকৃত ঘটনার। বোকাসোকা এই অবাস্তব চিন্তাগুলো আক্ষেপ করে জিসান ভাই কেন অতিপ্রাকৃত কিছু হলেন না? এমন কিছু যা দেয়ালের ইট, সিমেন্ট, কংক্রিটের মধ্যে অদৃশ্য শক্তির সাহায্যে হঠাৎ রুমে এসে চমকে দিবে। কি ভাল হত তাহলে! কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে ঝাঝ মিটাতাম। তিনি তাতে অপরাধীর হাসি হাসতেন! আসলেও কি হাসতেন? নিজের এসব উদ্ভট চিন্তাগুলোয় যখন সচেতন ভাবনারদের উঁকিঝুকি মিলছে তখন নিজের বোকামিতে গুটিয়ে যাচ্ছি। অযৌক্তিক ভাবনায় লজ্জারাঙা হয়ে পরছি। সময় কত গড়িয়েছে জানি না। হঠাৎ ড্রিম লাইটের আলো ছাপিয়ে রুমের লাইট জ্বলে উঠে। তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ খিচে বন্ধ করি। রেনু খালার বিস্মিত কণ্ঠ আসে, “এ কি অবস্থা!?”

চোখে আলো সয়ে আসতে সময় নিল। উঠে বসলাম চোখ কুচকে। তখনের কথা ভেবে আবার ঠোঁটে হাসি এল। রেনু খালা বিস্ময়ে বলেন, “আম্মা কি হয়ছে? হাসতেছ কেন? নিসা মামনী কেন তোমার পায়ের কাছে?”

পায়ের দিকে থাকা নিসার দিকে একবার তাকাই। ওর থেকে চোখ সরিয়ে ঠোঁট টিপে বলি, “ও ঘুমিয়ে গেছে গল্প করার সময়। ভাল করে ঘুমোতে বললাম। এখন নড়ছে না।”

খালা তীব্র দৃষ্টিতে তাকান। বলেন, “তুমি এতক্ষণ একা একা কথা বলতাছিলা?”

ঠোঁট প্রসারিত রেখেই মাথা নাড়ি। বলছিলাম না। খালার দৃষ্টি আরও সুচাতুর হয়। তীব্র কণ্ঠে বলেন, “আমি স্পষ্ট শুনছি তোমার কণ্ঠ।”

ভড়কে গেলাম এবার, “কি শুনেছেন খালা?”

খালা কেমন চোখে যেন তাকালেন। মুখটা গম্ভীর। রুমের আলোটা নিভিয়ে আবার ড্রিম লাইটের আলো জ্বাললেন। নিসাকে টেনে ঠিক জায়গায় আনলেন। আমি তখনো বসে। নিসাকে ঠিক করার পর ঘুরে আমার পাশে এলেন। বললেন, “কতক্ষণ পর সকাল হইব। তুমি ঘুমাও। আমি মাথায় হাত বুলাই দিতাছি।”

সুয়ে পরলাম। তিনি মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কাটতে লাগলেন। এক সময় ঘুমিয়ে পরি।

ঘুম ভাঙে বেশ কয়েকজনের কণ্ঠস্বরে। তাদের মধ্যে রেনু খালার কণ্ঠই প্রকট। উঠে বসি। চোখ কচলে ভাল করে তাকাই। আমার রুমে সবাই দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তবে নিসার মুখটা করুণ বেশি। ভীতগ্রস্তও। অবাক হয়ে বললাম, “কি হয়েছে?”

ওরা একে অপরের দিকে তাকায়। রেনু খালা কি যেন বলতে চাইলেন। ভাইয়া ধমকে থামিয়ে দেয়। খালা চুপসে যান। ভাইয়া বিছানায় আমার পাশে এসে বসল। বলল, “তোর নাকি শরীর খারাপ?”

মাথা নাড়ি, “না! কে বলেছে?”

ভাইয়া খালার দিকে তাকায়, “খালা তুমি বরং খাবার আনো ওর জন্য।”

খালা আমার ওপর সতর্ক দৃষ্টি ফেলে চলে যান। ভাইয়া মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে, “কালকে ঘুম হয়েছিল?”

আমি প্রত্যেকের মুখের দিকে একবার করে তাকাই। হ্যা বোধক মাথা নাড়ি। আপু পেছন থেকে চিন্তিত মুখে বলে, “ভাইয়া একবার শাফিকে দেখালে হয় না?”

ভাইয়া চিন্তিত মুখে আপুর দিকে তাকায়, “শুধু শুধু দেখাতে যাবি কেন? ও তো ঠিকই আছে।”

“ঠিক থাকলে তো ভালই। একবার দেখালে দোষ কি। সে তো উপরের তলাতেই থাকে।”

ভাইয়া উঠে পরল, “যা মনে করিস।” আমার দিকে ফিরে, “তোর কি ঘুম হয়েছে? খালা বলল তুই ভোরেও জেগে ছিলি। না হলে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরিস আবার!”

সদ্য ঘুম থেকে উঠা মস্তিষ্কে ওদের কথাবার্তা প্যাচালো লাগে। উলটো প্রশ্ন করাকে ঝামেলা মনে হয়। সায় দিয়ে তাই উঠে পরি। ফ্রেশ হয়ে বেরই। নিসা তখন চিন্তিত মুখে খাটের কোণে বসে। আমাকে দেখে ফ্যাকাশে হাসল। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কি কোন কারনে আমাকে ভয় পাচ্ছিস?”

নিসা তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ে। ভয় পাচ্ছে না। রুমে চোখ বোলালাম। আপুও চলে গেছে। বললাম, “এমন আজব ব্যবহার করছিস কেন তাহলে?”

নিসা তোতলায়, “তুই কালকে বারোটায় ছাদে গেছিলি?”

সম্মতি দেই। ওর মুখটা আরও ফ্যাকাশে হয়, “ত তোর ক কি মাথা ঝিমঝিম করছে? মনে হচ্ছে যে অন্য কেউ ভর করে আছে?”

চোখ-মুখ কুচকে বলি, “সোজা ভাষায় বল। কিসের কথা বলছিস!”

ঢোক গিলে, “বুঝে নে না। তেনাদের নাম নাকি মুখে আনতে হয় না।”

সুচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রাগ লাগে। অযথাই মাথা নেড়ে সম্মতি দেই। নিসা কাঁদোকাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে যায়, “সর্বনাশ খালার কথাই সত্যি তাহলে! একা ছাদে যেতে গেলি কেন?”

“তো তোমার মতো হুশজ্ঞান হারিয়ে পরে থাকতাম?”

নিসা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। এক সময় কাছে এসে ফিসফিসায়, “উনি কি এখন তোর সাথে আছে?”

বিরক্তি নিয়ে সম্মতি দিলাম। নিসা ছিটকে সরে গেল। কিছুক্ষণ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রুম ছাড়ল। আমি ছোট্ট শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরই। ভাইয়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়াই। চাপানো দরজার ফাঁক গলে কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ভাইয়া খাটের মধ্যে বসে ল্যাপটপে কারোর সাথে কথা বলছে। দরজা ঠেলে মুখ বাড়িয়ে তাকালাম। ভাইয়া ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায়, “তুই দরজায় দাঁড়িয়ে কেন? আয় রুমে আয়।”

গুটিগুটি পায়ে ভাইয়ার পাশে এসে বসি। ভাইয়া মৃদু হাসিতে বলেন, “মুখ এমন চিমসে করে রেখেছিস কেন?”

“ওরা আমাকে ভয় পাচ্ছে কেন ভাইয়া?”

ভাইয়া এবার সশব্দে হাসতে থাকে, বলে, “কে ভয় পাচ্ছে?”

ঠোঁট উল্টাই, “ঐ যে নিসা, আপু..”

“রেনু খালা বলেছে তোকে নাকি জ্বিনে, ভুতে ধরেছে। কাল ভোর রাতে তুই বিছানায় চুল এলোমেলো করে বসে ছিলি। আর বারবার, ‘উনার স্বধিকারে আমি’ কথাটা জপছিলি হেসে হেসে।”

ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। এই কথাটা কখন বললাম? না বললে খালা এই স্বধিকার কথাটা বলত কিভাবে?

“থাক বাদ দে। তোর আপুর সাথে কথা বলবি?”

“না তোমার বোন খুব জাদরেল। সেও নিশ্চয় বিশ্বাস করে নিয়েছে!”

ভাইয়া আবার সশব্দে হাসে, “আরে তোর ভাবীর কথা বলছি।”

ভাইয়া ল্যাপটপ এগিয়ে দিল। ল্যাপটপের ওপাশে রূপবতী এক আপু হাসোজ্জল মুখে হাই দিল। আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আরেকবার আপুর দিকে। বললাম, “এই ভাইয়া এত রূপবতীকে পটিয়েছিস কেন? তোর সাথে যায় আপুর?”

ভাইয়া ঘাড়ে হাত রেখে মৃদু হাসে। ওপাশের আপুটা খিলখিলিয়ে হাসছে।

বেলা গড়িয়েছে বেশ। আমি তখন পিঠের নিচে বালিশ রেখে আধশোয়া। শীর্ষেন্দুর “ফুল চোর” পড়ছি। রুমের দরজাটা চাপানো ছিল। সেটা খুলে সাদা পাঞ্জাবি পরনে জিসান ভাই ঢুকল। পেছনে রেনু খালা, তার সৈন্য সামন্ত। রেনু খালারা একটা গ্রুপ হয়ে গেছেন। রুমে এলে তিনজনই একসাথে আসছেন। বেরলে তিনজনই একসাথে বেরিয়ে যাচ্ছেন। নিসার ওপর আমি তাই চরম বিরক্ত। আমার সাথে গল্প করতে এসে আমাকেই এড়িয়ে চলা হচ্ছে! রুম থেকে একবার পানি খেতে বেরিয়ে ছিলাম। ওরা তিনজন রান্নাঘরে তখন গুজুরগুজুর করছে। রেনু খালা গম্ভীর মুখে ভাষণ দিচ্ছেন। আপু, নিসা ফ্যাকাশে কৌতুহলে সেসব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আমি উঁকি দিতেই চুপ করে গেল। অভিমানে কিছু বলিনি। চুপ করে নিজের রুমে এসে গেছি। জিসান ভাই এসে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে তোর?”

তিনজোটের দিকে একবার তাকালাম, “কিছুই না।”

তিনি জহুরি চোখে আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। রেনু খালার দিকে ফিরেন। বলেন, “কি যেন হয়েছে বলছিলেন?”

“তোমার কাজ কারবার না। সাদ’রে কইলাম আমি গ্রামের থেকে..”

জিসান ভাই মুখ বেকান, বলেন, “ওর সমস্যাটা আসলে কি? আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ দেখছি।”

“না মামনী সুস্থ নাই। ও রাতের বেলা হাসতেছিল কইতাছিল ‘উনার স্বধিকারে আমি!’, ঘুমানোর পরও শব্দ কইরা হাসছে। একই কথা বলছে। আমি দোয়া দুরুদ পইড়া ফু দিয়া একখান ধাক্কা মারলাম তারপর ঘুমায় গেছে!”

জিসান ভাই কেশে উঠেন। বিস্মিত হতবুদ্ধ আমি লজ্জায় উনার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নুইয়ে ফেলি। জিসান ভাইয়ের গম্ভীরস্বর আসে, “মাথায় ভুতটা দেখি ভাল ভাবেই চেপেছে!”

রেগে উনার দিকে তাকালাম। তিনি থুতনিতে আঙুল বোলাচ্ছেন। মিটিমিটি হাসছেনও। খালাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ওর সাথে একা কথা বলতে পারব? ওর সমস্যাটা সত্যিই ভৌতিক কিছু কিনা পরখ করে দেখব।”

রেনু খালা গাম্ভীর্য নিয়ে মাথা নাড়েন। উনার সৈন্য সামন্তকে ইশারা করেন। নিসা আপত্তি করছিল। আপুর হাতের টানে বেরিয়ে গেল। ওরা বেরিয়ে গেলে জিসান ভাই চেয়ার টেনে মুখোমুখী বসেন। তীর্যক চোখে তাকিয়ে থাকি।

“তুই তাহলে সত্যিই সেই ছেলেটার প্রেমে পরলি!”

ঠোঁটের কোণ প্রসারিত। ঠোঁট টিপে হাসি আটকাতে চাওয়ায় ঠোঁটের দুপাশ ডেবে টোল মুহূর্ত পর পর উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় কুকড়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। তিনি চিন্তিত কণ্ঠে বলেন, “তোর মাথার প্রেম ভুত কি আমার পক্ষে নামানো সম্ভব? ডাক্তারি শাস্ত্রে পাইনি এসব প্রেমভুত নামানোর কিছু! এখন কি হবে? খালাকে বরং বলি উনার গ্রামের বাবাদের ডেকে এনে ঝাটার বাড়ি দিয়ে তোর মাথার ভুত দূর করাক!”

“একদম মজা নিবেন না। সব আপনার জন্য হয়েছে!”

বিস্ময়ে, “আমার জন্য? তুই আমার প্রেমে পরেছিস?”

রাগ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। চোখাচোখিতে চোখ টিপে বলেন, “আয় তাহলে তোর প্রেমরোগের ট্রিটমেন্ট দেই। প্রেমভুত একেবারে চলে যাবে!”

লজ্জায়, রাগে দিকভ্রান্ত হয়ে বলি, “আপনি একটা যাচ্ছে তাই!”

তিনি নিশব্দে হাসতে থাকেন। সারাদেহ ঝাকিয়ে হাসছেন। হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টায় বলেন, “এসব আর বলিস না জনসম্মুখে!”

গাল ফোলাই, “আমি বলিনি সে কথা।”

“আচ্ছা? তাহলে রেনু খালা কিভাবে স্ব__অধিকার শব্দটা জানলেন?”

লজ্জায় এবার কুকড়ে গেলাম। এদিক সেদিক তাকাতে গিয়ে দরজার পর্দায় চোখ পরে। তা অস্বাভাবিকভাবে দুলছে। ভ্রু কুচকে আসে। নিচে তাকিয়ে থ হয়ে গেলাম। পর্দার নিচে দুজোড়া পা দেখা যাচ্ছে। সুচাতুর চোখে পর্দায় তাকিয়ে থেকে আবিষ্কার করলাম নিসা আর মিশেল আপু পর্দার পেছনে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছেন। জিসান ভাইও পেছনে তাকান। বলেন, “কে ওখানে?”

পর্দার নিচের পাগুলো সরে যায়। দৌড়ানোর ধুপধাপ শব্দ হতে থাকে। জিসান ভাই হতবুদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়ান, “তোদের বাসায় সবাই দেখি জোচ্চুরি করে! ভাগ্যিস নিজের নাম বলিনি তখন!”

আড়চোখে তাকিয়ে, “কমই বা কি বলেছেন?”

জিসান ভাই বেরিয়ে পরেন রুম থেকে। আমিও পেছনে বেরই। তিনি সরাসরি ভাইয়ার রুমে এলেন। কি কুমন্ত্র ঢালেন তা শুনতে আমিও পেছন পেছন এলাম। কুশলাদি বিনিময় শেষে দুজনের দৃষ্টি আমার ওপর পরল।

“ওর মধ্যে সত্যিই সমস্যা দেখা দিচ্ছে?”

জিসান ভাই প্রশ্নটায় আমার দিকে তাকান। এবং শব্দ করে হেসে ফেলেন, বলেন, “না ভাই। কমবয়সী আবেগের ব্যাপার স্যাপারকে ভুতুড়ে করে ফেলেছে খালা।”

ভাইয়া বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকাল। মনে হলো এই মুহূর্তে আমার কেটে পরা উচিত। করলামও তাই। তবে রুমের বাইরে রয়ে গেলাম। জিসান ভাই ভাইয়াকে বললেন আমার রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন। বাইরে ঘুরিয়ে আনলে ভাল হয়! সিরিয়াসলি!? সোজা সরল ভাইটাও এই ভন্ড ইন্টার্নের কথায় নেচে নেচে উঠছে! রাগে ফুসতে ফুসতে কানটা আরও এগিয়ে দিলাম।

“কিন্তু আমার তো সময় নেই আজকে। নেহাকে ঘুরতে নিয়ে যাব বলেছি।”

জিসান ভাইয়ের হাস্যরাত্মক কণ্ঠ আসে, “বোনকে নাহয় সঙ্গে নিলা। মাঝে মাঝে মেয়েরা ডেটের সময় ছোট বোনকে আনে না? তুমি ছেলে হয়ে নিবা। ব্যতিক্রম হও মিয়া!”

ভাইয়া হয়ত জিসান ভাইকে হালকা হাতে মারল। শব্দ হলো। বলল, “হুশ মজা নিস না। বোন এখন তিন চার বছরের হলে একটা কথা ছিল!”

“নিজের রোমান্টিসিজমের জন্য বোনের সুস্থতা দেখছ না?”

“আজকেই নিতে হবে? আগামী শুক্রবারে নিলে হয় না?”

“ওর পাগলামি আরও বাড়বে তাতে। রেনু খালা নিজে মন্ত্র পড়ে তখন ঝাটার বারি দিবেন।”

আমি গাল ফোলালাম। কি নাটক পারে! দুজনের হাসির শব্দ আসছে রুম থেকে। ভাইয়া করুণকন্ঠে বলল, “নেহাকে মানা করব তাহলে?”

“তুমি চাইলে আমি তোমার বোনকে ঘুরিয়ে আনতে পারি। এমনিতেও ফ্রি আছি।”

বিস্ময় কণ্ঠে, “তুই নিয়ে যাবি?”

জিসান ভাইয়ের কৌতুকপূর্ণ কণ্ঠ আসে, “কেন ভাই তোমার বোনকে পালিয়ে নিয়ে যাবার ভয় পাচ্ছ?”

“হুস! পালিয়ে আর যাবি কই? থাকিস তো আমাদের বিল্ডিংয়েই!”

আরেক দফা হাসির শব্দ। রুমে এসে পরি। রাগ হলেও খুশি খুশিও লাগছে। আজগুবি রোগের কথা বলায় ঘুরতে তো যেতে পারব! জিসান ভাই এসময় রুমে উঁকি দেন। বলেন, “এই প্রেমবানু ঘুরতে যাবি?”

আমি নিশ্চুপে তাকিয়ে থাকি। তিনি সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে। সম্মতিতে মাথা নাড়ি। তিনি এক গাল হাসেন। বলেন, “বিকেলবেলা রেডি হয়ে থাকিস।”

আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেই। তিনি চলে যান। বালিশ জড়িয়ে বিছানায় লাফিয়ে গিয়ে পরি। আহা! চারপাশে কেমন সুখ সুখ ঘ্রাণের অনুভূতি হচ্ছে। উনার ব্যবহারে আজকে পরিবর্তন পরিবর্তন ছিল না? হ্যা অবশ্যই ছিল। কি সুন্দর ঐ হাসি, ঝাকরাচুলো ঐ ছেলেটা! আমি ঝটপট উঠে বসি। আয়নার সামনে এসে নিজেকে খুটিয়ে দেখতে থাকি। আক্ষেপ হয়! উনি এত কেন সুন্দর হতে গেলেন? সৌন্দর্যের মাপ কাঠিতে কি আমাদের পাশাপাশি মানাবে? বড্ড চিন্তার বিষয়।
#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৬/

“এই ঝুম দুহাতে জড়ায় ধর। একহাতে ধরেছিস কেন? ও, একহাতেও দেখি জড়ায় ধরিস নাই।”

নিসার ফিসফিসানোয় রেগে ঘাড় ঘোরাই। নিসা ফিচেল হাসে। বাইক চলছে। আমার চোখ রাঙানিতে হাসি আরও প্রসারিত হয়, “মিঙ্গেল হয়েও মরার জন্য একহাতে ধরেছিস। তুই পরলে আমিও পরব। কুইক দুহাতে ভাইয়াকে জড়ায় ধর!”

জিসান ভাই কথাগুলো শুনছে কিনা সে চিন্তায় লজ্জারাঙা হয়ে একহাতে নিসার পায়ে চিমটি বসালাম। নিসা ব্যাথাদায়ক শব্দ করেও গা জ্বালানো হাসে।

“তোরা এভাবে নড়াচড়া করছিস কেন? বাইকের ব্যালেন্স নষ্ট হচ্ছে!”

নিসা এবার একহাতে মুখ চেপে ধরে। তবু হাসির শব্দ আসতে থাকে। আমি গাল ফুলিয়ে বসে রই। নিসা এবার সিরিয়াস কণ্ঠে ফিসফিসায়, “ভাইয়া কি তোকে প্রপোজ করেছে?”

অসম্মতিতে মাথা নাড়ি। সে ভাবুকমুখে বলে, “রিলেশনের আগেই এখানে সেখানে নিয়ে যায় রিলেশন হলে বোধহয় তোরা ডিরেক্ট হানিমুনে চলে যাবি!”

বিষম খেয়ে কেশে উঠি। ওর কণ্ঠটা এবার বেশ জোরে ছিল। জিসান ভাই নিশ্চিত শুনেছে! মনে মনে একটা কথা জপছি, ‘রাস্তা শেষ হচ্ছে না কেন!’ নিসার দিকে আড়চোখে তাকাই। জব্দ করতে পারায় ওর মুখে পৈশাচিক হাসি। আমাকে আড়চোখে তাকাতে দেখে চোখ টিপ মারে, “আমাকেও নে না একটু পরখ করি বেস্টফ্রেন্ডের ফার্স্ট ডেট!”

“নিসা তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস।”

“তুমি ফন্দিফিকির করে না বলে রিলেশনে যাবা আর আমি একটু দেখতে চাইলেই দোষ!”

“তুই ব্যাপক ঠোঁটকাটা অসভ্য হয়ে গেছিস।”

“সেটাই সেটাই। আর কতদিন সিঙ্গেল থাকব! সিঙ্গেল মন হাহাকার করে! নিয়ে যা না। তোদের রোমেন্স দেখে হাহাকার যদি কিছু কমে!”

“কি বারবার রিলেশন রিলেশন করছিস। আমি রিলেশনে যাই নাই!”

নিসা ঠোঁটকাটা মুখে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। এসময় বাইকটা ওদের বাসার সামনে থামে। স্বস্তির শ্বাস ফেলি। নিসা নামল নিতান্ত অনিচ্ছায়। নামার ইচ্ছে যেন সত্যিই নেই। হয়ত আশা করছে ভদ্রতা দেখিয়ে জিসান ভাই সাথে আসতে বলবেন। কথাটায় নিজেই ঠোঁট টিপে হাসি। ইনি তো আরেক অসভ্য। অবশেষে নিসাই প্রশ্ন করে, “ভাইয়া আমাকে নিবেন সাথে?”

জিসান ভাই ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন, “কেন? তোমাকে তো ভুতে ধরেনি!”

নিসা মুখ বেকায়। যুক্তিতে কিছু বলার আগেই জিসান ভাই বলেন, “হানিমুনে নিয়ে যাবনি। এখন গিয়ে কাজ কি?”

নিসা হতভম্ব। ওকে হতভম্ব রেখেই বাইক ছুটল। আমি লজ্জায় নিসার দিকেও তাকাতে পারিনি। আস্তে আস্তে ধাতস্থ হলাম। সময় গড়িয়ে লজ্জা কিছু কমল। কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারছি না। উনার সাথে স্বাভাবিক কথপোকথনও শুরু করতে জড়তা আসছে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য নিজেই নিজেকে মোটিভেশন দিচ্ছি। লম্বা লম্বা দম নিচ্ছি। নিজের মোটিভেশনে কাজ হয়েছে বোঝাতেই যেন একটু বেশি জোর গলায় কথাগুলো বেরিয়ে এল, “জিসান ভাই কোথায় যাচ্ছেন?”

“কই ঘুরতে চাস?”

আত্মবিশ্বাস একটু মিইয়ে গেল। কিন্তু সুপ্ত ইচ্ছেরা নাছোড়বান্দা। ওদের পূরণ হবার লোভও প্রচন্ড। মিয়ানো সেই আত্মবিশ্বাসে গলার জোড় কমল। ছাড়াছাড়া ভাবে বলি, “বাইক থামিয়ে চলেন রাস্তায় লক্ষ্যহীন হাঁটি। ফুটপাতে দাঁড়ানো কোন এক ফুচকার দোকানে ফুচকা খাই। দুজনে কম্পিটিশন করি। শখানেক কথার ঝুরি উপচে পরুক। আপনি গল্প না করলেও অংশগ্রহণ করতে মাঝে মাঝে চোখ রাঙালেন। ফুটপাতের বাহারি দোকানগুলোয় ঢু মারব। এমনি দর কষাকষি করব। আপনি মিথ্যে বিরক্ত হবেন। এমন ভাব করবেন যেন পকেটে খুচরো পর্যন্ত নেই। থাকলেও ছাড়তে রাজি নন। দুঃখিনী আমি গাল ফুলিয়ে, ঠোঁট উলটে দোকানদারদের সামনে হালকা ঝগড়া করলাম। মিথ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কোন ঠেলাগাড়িতে সবজি বিক্রতার পাশে দাঁড়িয়ে বা তাকে সরিয়ে নিজেরাই সবজি বিক্রেতা হয়ে ফটোশুট করলাম। করলাম রাস্তার মাঝে কোন পাগলামি। মেইনরোডে দাঁড়িয়ে চলন্ত গাড়িগুলোকে থামিয়ে অতি শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাল আছেন?’ হিহিহি ঠিক কি অভিব্যক্তি ফুটবে সেই গাড়ি চালকদের? হয়ত কেউ গালি গালাজ করবে, কেউ পাগল ভাববে এই পাগলামিতে যে আনন্দ তাতে জীবনের স্বাদ আরেকভাবে পাব। ভাল না? নয়ত কোন পথচারীকে দাঁড় করিয়ে চমকে দিব এই বলে, ‘এই আপনি অমুক না? আরে চিনছেন না? সেদিনই তো পরিচয় হলো!’ কেউ উত্তর দিবে। কেউ হয়ত দিবে না। কিন্তু আনন্দটা আমাদের স্মৃতিপটেই জমা রইল। আচ্ছা এসব কি আপনার ব্যক্তিত্বে আঙুল তুলবে?”

কখন যেন বাইক থেমেছে। কথা বলতে বলতে খেয়ালে করিনি। কণ্ঠটা একটু বেশি আগেবমাখা হয়ে গেছিল। তিনি হ্যালমেট খুলে হাতে রেখেছেন। তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টে। প্রতিত্তরে মধুর হাসি হাসেন। মুগ্ধতা, ভাল লাগায় আমাকে অনুভূতিদের ঢল আরও পেয়ে বসে। তিনি নেমে যান বাইক থেকে। বলেন, “নেমে আয়। দেখি ইচ্ছেগুলো পূরণ করা যায় কিনা।”

খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠল সমস্ত সত্তা। আমি ঝলমলে চেহেরায় নেমে পরি। জিসান ভাই কাউকে কল করেন। কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেন। পাশেই একটা চা-নাস্তার হোটেল। জিসান ভাই বাইকটা সাইডে রেখে লক করলেন। আমরা হোটেলে এসে ঢুকলাম।

“কয়েক মিনিট বস। নিশান এসে বাইকটা নিয়ে যাক। পরে পুরো শহর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরব আজ।”

আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। বেহায়া মন ভদ্রতার আপন নিয়ম বানাল। মোহনীয় সুন্দরকে অবহেলা করতে নেই। এদেরকে দেখারও নির্দিষ্ট সময়সীমা বাধা নেই। বিনা দ্বিধায় মনভরে শুধু দেখবে। অবহেলায় হারালে কোন একদিন হয়ত আফসোস লাগবে! ভাল লাগার সাথে আমি নতুন করে নতুন অনুভূতিদের সাথে পরিচিত হচ্ছি। উনাকে যত দেখি তত সুখব্যাথাদের আনাগোনা টের পাই। আবেগে কান্না পায়। মন চায় একে একান্ত আপন মালিকানায় নিয়ে নেই। সারাক্ষণ ঝাপ্টে রেখে দুনিয়াকে শাসিয়ে বলি, “এই যে শুনো তোমরা এই মানুষটা আমার, একান্তই আমার। কেউ চোখ তুলেও যদি তাকিয়েছ খারাপ হবে খুব!” এক সময় এক ভাইয়া এলেন। আমার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে টুকটাক প্রশ্ন করেন। বাইকের চাবি নিয়ে চলে যান। আমরা রাস্তায় নামি। জিসান ভাই হাঁটতে হাঁটতে একসময় আমার হাতটা নিজ মুঠোয় নিলেন। আমি সপ্রশ্ন চোখে তাকাই। তিনি তখন সামনে তাকিয়ে হাঁটছেন। যেন নিত্যকার ব্যাপার। ভাল লাগার শিহরণ আরেকবার বয়ে গেল সারাদেহে। আমার জীবনের নির্দিষ্ট নিয়মে, রুটিন মাফিক ঋতুগুলোয় বসন্ত যেন নতুন করে যুক্ত হলো। পুরনো রুটিনগুলোকে নিংড়ে নিয়ে নতুনের সূচনা করল। আমার ইচ্ছেদের ভিড়ে এটাও ছিল ছোট্ট এক কল্পনা। এখন মনে হচ্ছে এটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশাল বাকিগুলো জোড়াতালিতে বড় হয়েছে। ফুটপাতের এক ফুচকার দোকানে কম্পিটিশন করলাম দুজনে। ঝাল না খেতে পারা আমি উত্তেজনায় কম্পিটিশনে নতুন মাত্রা আনতে দোকানিকে বলে ফেললাম ঝাল ঝাল করে দিতে। জিসান ভাই ভ্রু বেকিয়ে তাকিয়ে ছিলেন। কিছু বললেনি। চোখে পানি নিয়েও আমি সেগুলো গিলেছি। একসময় জিসান ভাই কেড়ে নেন প্লেট। আমি ঝালটা তখুনি বেশি টের পাই। দোকানীর দোকান থেকে একের পর এক গ্লাসের পানি পেটে চালান করি ঝাল আর কমে না। দোকানি মামা তখন হাসছেন। জিসান ভাই কোথা থেকে আইসক্রিম এনে দিলেন। তাতে ঝাল কিছু কমল। দাম মিটিয়ে বেশ বকাঝকাও করলেন আমায়। মাথা নিচু করে আইসক্রিম খেয়ে তখন শুধু হেসেছি। একে একে প্রত্যেকটাই পূরণ হলো। দ্বিতীয় বেগতিক অবস্থা হলো চলন্ত গাড়িকে থামিয়ে। আরেকটু হলে আমার ওপর দিয়ে যেত গাড়িটা। এ নিয়েও বকা খেলাম। ড্রাইভারও ঝাড়লেন আচ্ছা মতো। সব মিলিয়ে তখন খুশি খুশি মনে জিসান ভাইয়ের পাশে হাঁটছি। জিসান ভাই এখনো হাতটা শক্ত করে ধরে। কথা বলছি এসময় পেছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠ আসে, “আরে শাফি না?”

দাঁড়িয়ে যাই। পেছন ফিরি। হাসোজ্জল চেহেরায় লম্বা গড়নের এক আপু দাঁড়িয়ে। হাতে কিছু ব্যাগ। জিসান ভাই সৌজন্যের হাসিতে তাকিয়ে থাকেন। তখনো হাতটা ছাড়েননি। ছাড়াতে চাইলে বরং মুঠোটা শক্ত করেছেন আরও। কাছে এসে মেয়েটার দৃষ্টি প্রথমেই আমাদের মুঠোবন্দি হাতজোড়ার ওপর পরে। আমি বিভ্রান্ত হই। জিসান ভাই নিষ্প্রভ।

“কি ব্যাপার জামাই? বউ ছেড়ে পরকিয়া করছিস যে!”

আমি বিস্মিত হয়ে একবার আপু একবার জিসান ভাইয়ের দিকে তাকাই। জিসান ভাই বলেন, “ঠাটিয়ে লাগাব চড়! আমি তোর কোন জন্মের জামাই?”

“হ্যা, হ্যা পাশে সুন্দরী থাকলে আমাকে চিনবাই না!”

“জিনিয়া মার খাবি!”

মেয়েটা এবার সশব্দে গা দুলিয়ে হাসে। মাথা মুন্ডু না বুঝে আমি শুধু তাকিয়ে থাকি। মেয়েটা আমার দিকে চোখ নাচিয়ে প্রশ্ন করে, “কে হয়?”

জিসান ভাই এক পলক চায়লেন আমার দিকে, “প্রতিবেশি।”

“প্রতিবেশীর হাত কেউ এভাবে ধরে?”

“কৈফিয়ত দিতে আগ্রহী নই।”

আপুটা কৌশলে মুখ বেকায়। সৌন্দর্যের ছাচে সেটাও অপরূপ লাগে। মনে সংশয় পাক খায়। মেয়েটা আমাকে বলে, “লাইনে আমি সবার প্রথমে। কোন যোচ্চুরি চলবে না। পরে এসেছ পেছনে থাকবে!”

জিসান ভাই হেসে ধমকালেন। আমি কুন্ঠিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে। কথা শুনে মনে হচ্ছে একই কলেজের ইনারা। জিসান ভাইয়ের ফ্রেন্ডসার্কেলের একজন। ফ্রেন্ড দাবি জানালেও আমার ভাল লাগেনি মেয়েটির কথাগুলো। কেমন কর্তৃত্বের অহং মিশে ছিল। জিনিয়া মেয়েটিকে বিদায় করে যখন হাঁটছি তখন সন্ধ্যে নামছে। মনের কোণ রাগে মাঝে মাঝে ফুসে উঠছে। তিনি একসময় প্রশ্ন করেন, “কি হয়েছে তোর?”

উত্তর দেই না। হাত ঝারা মেরে ছাড়িয়ে নেই। গাল ফুলিয়ে হাঁটতে থাকি। তিনি হাত টেনে পাশের রাস্তায় চলে আসেন। চারপাশ তাকিয়ে দেখি পার্ক জাতীয় এলাকা। পার্কের ভেতরে পাথুরে মাচাং জাতীয় উঁচু জায়গায় আমাকে বসিয়ে দিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে সুচালো দৃষ্টিতে বলেন, “এমন গোমরা মুখো হয়ে আছিস কেন? তোর সব ইচ্ছেদেরই তো পূরণ করলাম।”

এবারও উত্তর দেই না। তিনি ভ্রু কুচকান। আগের ফর্মে চলে আসেন। ধমকে বলেন, “তব্দা হয়ে আছিস কেন? বল কি হয়েছে!”

মাচাং থেকে লাফিয়ে নামলাম। অভিমান, আক্রোশে অন্ধপ্রায় আমি ছুটে গেলাম উনার দিকে। উনার বুকে লাগাতার কিল, ঘুষি মারছি। কখন চোখের জল গাল গড়িয়েছে টের পাইনি। একসময় তিনি একহাতেই আমার দুহাত বন্ধ করেন। আমাকে উলটো ঘুরিয়ে জড়িয়ে নিলেন। বিস্মিত হয়ে বললেন, “হয়েছেটা কি তোর? কাঁদছিস কেন? আমাকেই বা মারছিস কেন?”

উনার হাতে কাঁমড় বসালাম। ছেড়ে দিলেন হাত। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। ফুসতে ফুসতে তেড়ে যাই, “ঐ মেয়েটা আপনাকে কেন জামাই বলবে হ্যা? বলেছে বলেছে মানা করে কাহিনী শেষ করবেন। ওর সাথে কিসের এত হাসাহাসি! অন্যের জামাই হয়ে থাকলে আমাকে স্বধিকারে নিচ্ছেন কেন!?”

উনার মুখভঙ্গির পরিবর্তন হলো। মৃদু হাসিতে বলেন, “আমার ফ্রেন্ডসার্কেলের একজন। স্বাভাবিক কিছু কথাবার্তা বলেছি শুধু। আরে ও তো তোর সাথে মজা করেছে!”

“মজা না ছাই! ভুলভাল বোঝাতে আসবেন না একদম। তাছাড়া আপনার সাথেও আমার কিছু নেই। যান ঐ আপুটা লাইনে আগে আছে রিলেশন করুন গিয়ে।”

তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। বলেন, “কিছু নেই তো কাঁদছিস কেন?”

“জানি না কান্না পাচ্ছে আমার। সামনে থেকে সরুন। আপনাকে আমার দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করে না।”

তিনি সরলেন না বরং আরও কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি ঘাসের ওপরই বসে পরি। আকুল হয়ে কাঁদতে থাকি। ছোট এ বিষয়ে কাঁদার কি আছে খুজে পাই না। তবু কাঁদতে থাকি। একসময় তিনিও আমার সামনে বসলেন। টিস্যু এগিয়ে দিলেন। উনার হাতটা সরিয়ে দিলাম সামনে থেকে।

“কান্না বন্ধ কর।”

হেচকি তুলতে তুলতে বলি, “আপনি সরুন সামনে থেকে।”

তিনি আমার একহাত টেনে ধরেন। মুখটা ওপরে তুলে বলেন, “আমার দিকে তাকা।”

অভিমানে হাত ঝারা মারতে গেলাম। তিনি আরেক হাতে আটকালেন। ধমকে উঠলেন, “তাকাতে বলেছি না?”

আমি তাকাই। তিনি দুহাতে চোখ দুটো আলতো করে মুছে দেন। বলেন, “জিনিয়া আমার ক্লাসমেট। কলেজে একই সাথে আড্ডা দেয়া হয়, ফ্রেন্ডসার্কেলের অন্যতম তাই স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছি। এতে ইমোশনাল হচ্ছিস কেন?”

“আপনি বুঝবেন না। ওর কথার ধরনে কিছু ছিল! উনি তবু ফ্রেন্ড আমি তো কিছুই না!”

তিনি কৌতুকে হাসেন, “কেন তুইই তো বেশি। আমার প্রতিবেশি, ছাত্রী আর..”

সপ্রশ্ন চোখে তাকাই। তিনি কথাটা অসমাপ্ত রাখেন। বলেন, “নিসার মতো তুইও প্রপোজে বিশ্বাসী?”

সরাসরি এ প্রশ্নে থমকে গেলাম। বলেন, “ওসব চিন্তা ঝেরে ফেল মাথা থেকে। আমি ওসব প্রপোজ টপোজ করতে পারব না। সম্পর্কে সরাসরি না বললে কি বোঝা যায় না?”

আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকি। তিনি টিস্যু বাড়িয়ে দেন, “চোখের পানি মুছে ফেল।” দ্বিরুক্তি করলাম না। তিনি মৃদু হাসেন। ফিসফিসিয়ে বলেন, “আমার অধিকার ফেলনা নীতিমালায় চলে না যে সবার জন্য উদারভাবে দিব।”

~চলবে❤️
~চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here