মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৪৫
রাতে বাইরে থেকে খাওয়া শেষে বাসায় ফিরছে প্রিয়ম আর মোনা।প্রিয়মের কোলে ঘুমন্ত প্রিন্সেস। মোনার মাথায় বিচিত্র রকমের চিন্তা ভালো লাগছে না কিছু। বার বার লিলি বেগমের বলা কথা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করছে। প্রিয়ম এক হাত দিয়ে প্রিন্সেস’কে আগলে রেখেছে,অন্য হাতে দিয়ে মোনার হাত ধরেছে শক্ত করে। প্রিয়ম মিহি গলায় বলল,
– “মোনা পাখি,আমাদেরও প্রিন্সেসের মত কিউট টুইন বেবি হবে।চোখ গুলো নীল রঙা হবে।”
হঠাৎ করেই মোনার শরীর জুড়ে হিমশীতল শিহরণ বয়ে গেল।প্রিয়মের গলার স্বর যেন মাদকপূর্ণ। প্রিয়মের বলা কথা গুলো শত সহস্র আবেগ মিশ্রতি। মাদকাসক্ত হয়ে যায় মোনা। এই সুমধুর অনুভূতি গুলোও একটু পরে বিষাক্ত হয়ে যায় লিলি বেগমের বলা কথা গুলো মনে পড়ায়। মোনা বিষাদময় গলায় বলল,
– “প্রিয়ম আমি এই ভালোবাসার জন্য খালা’কে কষ্ট দিতে পারব না।প্লীজ সম্পর্ক’টার ইতি টানি আমরা! আপনি আমার কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করুন।”
প্রিয়ম ক্ষুব্ধ হয়ে মোনার দিকে তাকায়।আবছা অন্ধকারেও প্রিয়মের চোখের রাগ স্পষ্ট ভাবে প্রকটিত হচ্ছে। বিরক্ত গলায় বলে,
– “চুপচাপ হাঁটো।মুখ থেকে যেন আর একটা কথা বের না হয়।”
প্রিয়মের বলা কথার প্রতিবাদ করার জোর খুঁজে পেল না মোনা। দমে গেল কিছু’টা। মোনার হৃদয়ে প্রেম নামক যে সত্তা আছে সে সবকিছু উপেক্ষা করে পাশাপাশি হাঁটছে বলছে।সব সমস্যার একদিন সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু ভালোবাসা হারালে সেই অপূর্ণতা সারা জীবন কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে।মোনা প্রিয়মের হাত’টা আলতো করে ধরে হাঁটতে লাগল।ভরসা পাচ্ছে প্রিয়মের কথায়। ভালোবাসার মায়াজাল থেকে বের হয়ে আসা এত সহজ না মোনা সেটা উপলব্ধি করছে।
বাসায় ফিরে প্রিন্সেস’কে খাটে শুইয়ে দিয়ে প্রিয়ম আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো মোনা’কে। এতক্ষণ উদাস মনে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকার কারণে হঠাৎ প্রিয়মের স্পর্শে হকচকিয়ে উঠল। প্রিয়মের মুখ মোনার কাঁধের উপর।এই স্পর্শে কেমন মাতাল মাতাল হয়ে যায় মোনা।তখন মোনা আর কিছু ভাবতে পারে না,ভাবনা শক্তি অসড় যায়। প্রিয়ম মোনার কাঁধের উপর নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে জড়ানো গলায় বলে,
– “গুড নাইট মোনা পাখি। ঘুমিয়ে যাও।”
প্রিয়ম পাশের রুমে চলে গেল। মোনা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশ্বাস ঘনতর হচ্ছে। হৃৎপিণ্ড এমন ভাবে লাফাচ্ছে যেন বিকল হয়ে যাবে। চোখ আপনা-আপনি বুঁজে আছে। এই স্পর্শানুভূতির রেশ কাটাতে সময় লেগেছে বেশ। প্রিয়ম’কে যত ভুলতে চায় তত বেশি প্রিয়মের মোহনীশক্তি যেন মোনায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।নিজের স্বচ্ছ,উচিত চিন্তা-ভাবনা গুলো হেরে যায় এভাবে। প্রেম মানুষ’কে নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। মানুষ উন্মাদ হয়ে যায়।সব বাঁধা বিপত্তি গুলো পদাঘাতে ভেঙে ফেলতে চায়।
___
সকালে জ্যাকের কর্মচারী নিতে আসে প্রিন্সেস’কে।প্রিন্সেস দুই হাতে মোনার গলা ধরে মোনার বুকের মাঝে মিশে আছে। জ্যাকের কর্মচারীর সাথে যাবে না কিছুতেই।মোনার,কপালে,গালে চুমু খেয়ে লালা দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বার বার জপছে ,
– “মাদার,মাদার।”
মোনা প্রিন্সেসের গালে চুমু খেয়ে ভীষণ আদুরে গলায় বলল,
– “মাদার আবার নিয়ে আসবো তোমায়। এখন যাও। তুমি যদি না যাও জ্যাক বকবে কিন্তু।”
প্রিন্সেস ওঁর কোমল,নরম দুই’টা হাত দিয়ে টাটা দিচ্ছে মোনা’কে। মোনা তাকিয়ে আছে সেদিকে। যতক্ষণ দৃষ্টি সীমার ভিতরে ছিলো, ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলো মোনা। দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরতেই দেখে প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে।
– “প্রিন্সেস তোমায় মাদার ডাকে কেন?কে শিখিয়েছে এই ডাক?”
মোনা নিজেও জানে না কে শিখিয়েছে এই ডাক।জ্যাক ছাড়া আর কে শিখাবে?খুব গোপনে মোনা একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “আমি শিখিয়েছি। আর শুনেন কাল থেকে রাতে এখানে আসবেন না। এক বাসায় থাকা! ব্যাপার’টা কেমন না?”
প্রিয়ম হাসলো।প্রিয়মের অহেতুক হাসি’তে মোনা বিরক্ত হলো বেশ। মোনা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
– “আশ্চর্য হাসছেন কেন?”
প্রিয়ম হাসি থামিয়ে বলে,
– “আচ্ছা তোমার কি মনে হয় এর আগে কোন গার্লফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে ছিলাম আমি?তোমার বাসায় কেন আসি বলো তো? তুমি আমার খালাত গার্লফ্রেন্ড তাই আসি।”
মোনা কপাল ঘুচিয়ে রেখেছে।প্রিয়ম মুহূর্তেই সিরিয়াস হয়ে বলল,
– “মোনা পাখি, একটা বেস্ট সিদ্ধান্ত খুঁজে পেয়েছি।”
মোনা চমকে যায়। কিছুটা শঙ্কিতও হয় কি সিদ্ধান্ত এই ভেবে?মোনা তীব্র আগ্রহী গলায় উতলা হয়ে বলে,
– “কি সিদ্ধান্ত?”
– “খুব মূল্যবান সিদ্ধান্ত।কোন বেনেফিট ছাড়া এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা যাবে না।”
প্রিয়মের গলায় কিছু’টা কৌতুক।এমন মুহূর্তে কৌতুক ভালো লাগছে না মোনার। চিন্তায় মগজ উত্তপ্ত হয়ে গেছে। মোনা অধৈর্য হয়ে বলল,
– “মজা করার সময় না এটা।বলুন তাড়াতাড়ি।”
প্রিয়ম কয়েক পা এগিয়ে মোনার কাছে এসে দাঁড়ায়।
– “আচ্ছা মোনা ধরো আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।সম্পর্ক’টা এই পর্যন্ত সমাপ্ত। আর আমি বিভা’কে বিয়ে করে নিলাম। প্রতিনিয়ত তুমি বিভার সাথে দেখবে আমায়।কষ্ট হবে না? মনে পরবে না আমাদের স্মৃতি গুলো?”
যন্ত্রনার উত্তল এক ঢেউ মোনার হৃদয়ে বয়ে যাচ্ছে।যদি এমন হয় তবে ভাগ্য’কে মেনে নিতে হবে। মোনা উত্তর না দিয়ে প্রিয়মের দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মোনার মনের শোকাকূল ভাব বেদনা হয়ে গলায় ছলছল করছে। নিজেকে সংবরণ করে উত্তর দেয়,
– “আমি যখন খুব ছোট আমাদের বাসার পাশে বড় মেলা হত।আমার বয়সী ছেলে-মেয়ে’রা হুমড়ি খেয়ে পড়ত কেনাকাটার জন্য।আমারো কিনতে ইচ্ছে করত কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলিনি। জীবনে কোন ঈদ কিংবা উৎসবে ড্রেস চাইনি। এরকম অনেক কথা আছে, যা বললে আপনি বুঝতে পারবেন আই ক্যান কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।ছোট বেলা থেকে এই অভ্যাস’টা আমার রপ্ত করা আছে।হ্যাঁ কষ্ট হবে আমার। কিন্তু জীবনে হোঁচট খেয়ে উঠে দাঁড়িয়েছি অনেকবার,অভ্যস্ত আমি।”
প্রিয়ম কিছুক্ষণ মোনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত পর বলল,
– “এত সিরিয়াস ভাবে কথা বলো কেন?এত সিরিয়াস হও কেন সবকিছু নিয়ে?”
মোনা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়ম কোন ভনিতা ছাড়াই বলল,
– “মোনা আমরা বিয়ে করব।”
মোনা হতবিহ্বল হয়ে তাকালো।চমকালো খুব।গাঢ় গলায় বলল,
– “সম্ভব না।”
– “কেন সম্ভব না?শুনো আমি তো চাকরি’তে জয়েন করেছি বেশি দিন হয় নি। আমার বাপের অনেক টাকা পয়সা। কিন্তু আমার নিজের প্রতিষ্ঠিত হতে বছর খানেক সময় লাগবে। তারপর আমি তোমাকে, নিশান কে,আম্মুকে,এরিক কে নিয়ে বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাবো। তোমাকে আমার বউ হিসেবে মানতে আম্মুর অসুবিধা নেই।বরংচ আম্মু আরো বেশি খুশি হবে।আমি বাসায় বলবো যে আমি এক বছর পর বিভা’কে বিয়ে করব। তাহলে বাসার সব সমস্যার সমাধান।আর আমরাও ভালো থাকব।”
প্রিয়মের কথা শুনে মোনা নির্বাক হয়ে রইল। ভাবা সহজ কিন্তু করা’টা কি এত সহজ?এমন’টা হলে ভালো হয়,খুব ভালো হয়। মোনা’কে নিরুত্তর দেখে প্রিয়ম আবার বলে,
– “তোমার তো সব সমস্যা তোমার খালা তাই না?তোমার খালার কোন সমস্যা হবে না।এমন’টা হলে ভালো থাকবে সে।কিছু বলছ না কেন?”
মোনা চিন্তাগ্রস্থ চিত্তে বলল,
– “কোন কিছু ভাবা তো খুব সহজ,করা কি এতটা’ই সহজ?”
– “এখনো ভরসা করতে পারো নি আমার উপর?ভাবনার মত’ই হবে সব।আর কি দোটানা তোমার শুনি?”
মোনার মুখাবয়ব দেখে মনে হচ্ছে কঠিন এক চিন্তায় বিমগ্ন হয়ে গেছে।কপালে ভাঁজ পড়েছে কয়েক’টা।প্রিয়ম পুনরায় বলল,
– “কি হলো তোমার?এত চিন্তা কিসের?মোনা আমি তোমার দায়িত্ব নিতে চাই,বিয়ে করতে চাই।”
মোনা যেন ভাবনার অতলে তলিয়ে গেল। ক্ষুদ্র একটা মস্তিষ্কে কত বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়।মোনা চায় প্রিয়ম’কে তবুও এত দ্বিধান্বিত কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না মোনা।উন্মনা গলায় বলল,
– “আপনার অফিসের সময় হয়ে গেছে।”
– “তুমি আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?ভরসা নেই আমার উপর?বলো কবে বিয়ে করবে?আজ,কাল,পরশু?”
মোনা চিন্তান্বিত হয়ে বলল,
– “এখন বিয়ে কেমন যেন ঝামেলা! এক বছর পরেই না হয়–”
– “আমি তোমার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছি। বৈধ ভাবে চাচ্ছি তোমায়।এক বছর পর জানাবো সবাই’কে। তোমার ব্যাপারে তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর কেউ নেই। সিদ্ধান্ত তো তোমার’ই নিতে হবে।”
মোনা কথা বাড়ালো না। নিচু স্বরে বলল,
– “ভার্সিটি’তে যেতে হবে। পরে কথা বলি এসব নিয়ে।”
প্রিয়মও ঘাঁটালো না আর।পুরো ভার্সিটি’তে শুধু এসব কথা মোনার মাথায় ঘোরপাক খেয়েছে। অজানা এক শঙ্কা কাজ করছে। ভালো থাকতে পারবে তো সারা’টা জীবন প্রিয়মের সাথে?
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে জ্যাকের ডায়েরি নিয়ে বসলো। তিন’টা ডায়েরি’ই বেগুনি রঙের।এর ভিতর একটা ডায়েরি মোনা একদিন পড়েছিল একটু। প্রথম ডায়েরি’টা তে লেখা ‘প্রেমময় বসন্ত’। জ্যাকের সাথে রিলেশন চলাকালীন সময়ের লেখা। দ্বিতীয়’টা হলো ‘কুইন লাইফ’। বিয়ের পরের লেখা ডায়েরি। তৃতীয়’টা হলো ‘প্রেসন্যান্সির দিন গুলো’।ডায়েরি’তে সুন্দর মুহুর্ত গুলোর লিপিবদ্ধ করে রাখার আইডিয়া’টা দারুন।দুইজন একদিন বৃদ্ধ হয়ে যাবে কিংবা দুইজনের পথ আলাদা হয়ে যাবে কিন্তু ডায়েরির লেখা গুলো অম্লান হয়ে থাকবে। ফ্যাকাশে কিংবা পাণ্ডুর হবে না।
এত মোটা তিন’টা ডায়েরি ইংলিশে লিখতে কত টাইম লাগবে! এই ভেবে মোনা মনে মনে হতাশ হলো। প্রেমময় বসন্ত ডায়েরি’টার কাজ আগে শেষ করবে। মোনা ডায়েরি খুলে অপ্সীর মত সুন্দরী এক মেয়ের ছবি দেখে। অকারণেই অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করল। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। মনে হচ্ছে প্রিন্সেস বড় হলে ঠিক এমন চেহেরার হবে। মোনা মনোযোগ সহকারে ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে।তিন পৃষ্ঠা পর প্রথম লেখা-
‘তোমার প্রথম স্পর্শ প্রথম চুমু। ধারালো এক অনুভূতি! আই ক্যান নট এক্সপ্লাইনড দিজ।”
লেখার নিচে ছোট একটা তারিখ লেখা।মোনার লজ্জা লাগছে,কারো একান্তে লেখা অনুভূতি গুলো এভাবে পড়া! মোনা লেখাগুলো ইংরেজি’তে লিখছে। ডায়েরির ভাঁজে ভাঁজে শুদ্ধ ভালোবাসা আবদ্ধ। প্রতিটা পৃষ্ঠা জুড়ে ভালোবাসা ,ভালোলাগা, আবেগ, অনুভূতির ছড়াছড়ি। লিখতে লিখতে সময়জ্ঞান ভুলে গেল মোনা।ফোনের রিংটোনের শব্দে সম্বিত ফিরে। মোনা ফোনের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে। এত রাত হয়ে গেছে! মোনা ফোন রিসিভ করে,
– “মোনা পাখি’টা কি করছেন?”
মোনা কয়েক মুহূর্ত পর বলে,
– “পড়ছি। কোথায় আপনি?এখনো অফিস থেকে এখনো ফিরেন নি?”
– “মোনা আমি বাসায় আসছি।”
মোনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
– “বাসায়?”
– “হ্যাঁ।ওই ব্যাপার’টা আব্বু-আম্মু’কে বলতে।”
মোনা একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে নিচু গলায় বলল,
– “কোন বিষয়?”
– “বিভা’কে এক বছর পর বিয়ে করব এসব।”
মোনা অকারণেই হাসলো। আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করল,
– “তা আপনার ফিঁয়ান্সির প্রতিক্রিয়া কি?বিয়েতে দাওয়াত করেন ভাইয়া। আমি খুব ভালো ড্যান্স করতে পারি।গানও পারি। বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীত। Justin Bieber এর গানও পারি কয়েক’টা। চলবে? আর শুনুন—”
প্রিয়মের হুংকারে মোনার কথা’টা অর্ধসমাপ্ত’ই থেকে গেল।প্রিয়ম ক্রুধ হয়ে বলল,
– “কিসের ফিঁয়ান্সি?কিসের বিয়ে?কিসের গান?কিসের ড্যান্স?আর আমি ভাইয়া না?”
মোনা হেসে উঠল। প্রিয়ম থেমে গেল। মোনা’কে খুব কম’ই হাসতে দেখেছে।প্রিয়মের গলায় আফসোস।
– “ইস মোনা পাখি! এরকম ভাবে আমার সামনে বসে হেসো তো একটু।”
– “এত প্রেম আসে কোত্থেকে? যান বিভা আপু’কে সময় দেন। রাতে এক রুমে থাকবেন নাকি?কোথায় বিভা আপু কোথায়?”
প্রিয়ম ফোন’টা কেটে দিলো।মোনাও ফোন না দিয়ে ডায়েরি লেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কয়েক মিনিট পর প্রিয়ম আবার ফোন দিয়ে গলায় অভিমান নিয়ে বলল,
– “ফোন কেটে দিলাম রাগ করে, তাও ফোন দিলে না।”
এইটুকু বলে থেমে সিরিয়াস গলায় বলল,
– “সকালের কথার উত্তর এখনো দিলে না মোনা।”
মোনা এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলল,
– “আচ্ছা খালা-খালু কি বলেছে আপনার কথা শুনে?”
প্রিয়েস হেসে বলল,
– “তাঁরা তো খুশিতে আত্মহারা।”
মোনা ডায়েরি গুলো বন্ধ করে ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় যায়। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে কথা বলে চলেছে।ফোনে এত বলা মোনার কখনো’ই পছন্দ না। কিন্তু আজ খুব একটা অপছন্দ মনে হচ্ছে না।প্রিয়ম এক পর্যায়ে বলে,
– “মোনা পাখি।”
– “হুঁ।”
প্রিয়ম আহত গলায় বলল,
– “আমায় তুমি বলা যায় না?একটু রোমান্টিক প্রেমিকা হও না। আপনি বলে সম্বোধন করো,মাঝে মাঝে আবার ভাইয়াও ডাকো!”
– “তো কি আংকেল ডাকব?”
প্রিয়ম যথারীতি হতাশ হয়ে গেল।বলল,
– “না,না থাক।কিছু ডাকতে হবে না।প্রেম করেছো আমার সাথে এই বেশি।”
কথা বলা শেষে মোনা রুমে আসে।কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছে যেন। লম্বা লম্বা কয়েক’টা শ্বাস ফেলে। আবহাওয়া’টা একটু ঠাণ্ডা। নিশান গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। মোনা নিশানের গায়ে একটা চাদর এনে দেয়। লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। মোনার মাথায় হাজার রকমের চিন্তা এসে ভর করে। জীবন সঙ্গী কিংবা হাজবেন্ড এই শব্দ’টায় মোনার বিতৃষ্ণা রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে যায় এই শব্দে। বিয়ের ব্যাপারে কি বলবে প্রিয়ম’কে?প্রিয়ম’কে ভালোবাসে। সারা জীবন পাশে চায়। আবার বিয়ের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। নিজের উপর ক্ষোভ হয় মোনার।
__
সকালে ঘুম ঘুম চোখে মোনা তাকিয়ে দেখে প্রিয়ম মোনার শয্যার পাশে বসা। মোনা চোখ কচলিয়ে ভালো করে তাকায়।দ্রুত উঠে বসে চমকানো গলায় বলল,
– “আপনি কখন আসছেন?দরজা তো বন্ধ ছিলো।”
মোনা পাশের বালিশের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশান নেই।ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে।
– “এত অবাক হওয়ার কি আছে?নিশান দরজা খুলেছে।”
মোনা কুঁচকানো জামাকাপড় টেনেটুনে ঠিক করে, মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে।প্রিয়ম পাঞ্জাবি পড়েছে। কালো রঙা একটা পাঞ্জাবি।অন্য সব দিনের থেকে সুন্দর লাগছে। কোন সুরুচিসম্পন্ন মেয়ে এক পলকেই প্রেমে পড়ে যাবে। সদ্য গোসল করে এসেছে বোধ হয়,চুল গুলো ভেজা।মোনা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
– “হঠাৎ পাঞ্জাবি?”
প্রিয়ম উত্তর না দিয়ে বলে,
– “মোনা তোমার শাড়ি আছে?কালো রঙের শাড়ি?”
মোনা অধৈর্য গলায় বলল,
– “আছে আম্মুর একটা কালো রঙের শাড়ি।আমার খুব পছন্দের। একটু সাদা মিক্স।কিন্তু কেন?”
প্রিয়ম মোনার একটু কাছে গিয়ে বসলো। মোনার হাত’টা শক্ত করে ধরে বলল,
– “যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়ি’টা পড়ে নেও।বিয়ে করতে যাবো। বাংলাদেশে তো শাড়ি, পাঞ্জাবি পরেই বিয়ে করে।নিশান’কে ও রেডি করিয়ে দেও।”
(চলবে)