ভালোবাসাকে দিলাম ছুটি
Ariful Islam Akash
৫ম পর্ব……
যাকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করার জন্য ভাবতে হবে কেনো? যা হবার হবে, আমি কথাকে নিয়ে রওনা দিলাম কাজী অফিসের দিকে। আধ ঘন্টার মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
কাজী অফিস থেকে বের হয়ে আমি আর কথা একটা রেস্টুরেন্টে যেয়ে বসলাম।
তারপর খাবারের অর্ডার দিয়ে আমি কথার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— এবার কি করবো?
— কি করবো মানে?
— না মানে আমাদের বিয়েটা তো হয়ে গেলো। কিন্ত আমি চাইলেই তো আর তোমাকে এখন আমার বাসায় নিয়ে যেতে পারবো না। বাসায় তো তুলি আছে।
— তো সারা জিবন থাকবে না কি? তুলিকে বিদায়ের ব্যবস্থা করো।
— ডির্বসের কথা বলছো?
— হ্যাঁ, ওটাই।
— কিন্ত তার জন্যও তো সময় দরকার।
— ঠিক আছে আমি তোমাকে সময় দিলাম। আর একটা কথা, তুমি আর তুলি এক রুমে থাকবে না।
— মানে?
— আকাশ মানে টা একদম পরিষ্কার। তুমি যতই আমাকে ভালোবাসোনা কেনো একটা মেয়ের সাথে এক রুমে থাকাটা আমি কখনো মেনে নিবো না। কারন, ছেলেদের আমি খুব ভালো করেই চিনি।
— কথা তুমি কয়টা ছেলেকে চিনো আমি যানি না। কিন্ত আমাকে কখনো অন্যদের সাথে বিচার করবে না।
— আমি যানি তুমি অন্যদের মত নয়। কিন্ত অন্যদের মত হতে কতক্ষণ?
আমি আর কিছু বললাম না। খাওয়া শেষ করে উঠে পরলাম। তারপর কথাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় চলে এলাম।
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছি। খাওয়ার মাঝখানে আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তাহলে কি ভাবলে?
— কোন বিষয়ে আব্বু?
— নিজের ব্যপারে, আমি চাইছিলাম তুমি আমাদের ব্যবসাটাই দেখা শোনা করো। নিজেদের কোম্পানি থাকতে তুমি অন্যর অধীনে কেনো জব করবে?
— আব্বু আমি ভেবে বলবো।
খাওয়া শেষ করে ছাদে চলে এলাম। রাতের শহর টা দেখতে বেশ ভালো লাগে আমার।
— ধ্যন করছেন?
ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে ছিলাম। কারো কথা শুনে পিছন ফিরে দেখি তুলি দাড়িয়ে আছে। আমি বললাম,
— তুমি এখানে?
— কেনো আসতে পারি না?
— না, অব্যশই পারো।
— তাহলে?
— সিড়ি দিয়ে ৩ তলা থেকে ছাদে চলে এলে? তোমার পায়ে বেশ জোর আছে দেখছি।
তুলি হেসে ফেললো আমার কথা শুনে। আমি বললাম,
— কেমন লাগছে ঢাকা শহর? তুমি তো মনে হয় প্রথম এলে তাই না?
আবারো হাসলো তুলি, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আপনি হয়ত আমার সম্পকে ভালো করে যানেন না। বা খোজ খবর নেন নি। প্রথম বার নয়, আমি এসএসসির পর থেকেই ঢাকাতে আছি। এবং এইসএসসি ঢাকা *** কলেজ থেকে শেষ করেছি। বতর্মানে আইইউবিএটি তে পড়াশোনা করছি।
তুলির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এটা সত্য যে তুলির ব্যপারে তেমন কিছু যানি না আমি। আমার ধারনা ছিলো গ্রামের মেয়ে, গ্রামেই বড় হয়েছে। তাছাড়া, তুলির আচারনে কখনো বুঝারও উপায় নেই যে মেয়েটা এত স্মাট। থাকে তো একদম গ্রামের মেয়েদের মত। আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুলি বললো,
— এমন অবাক হয়ে গেলেন কেনো?
— না মানে অবাক হবো কেনো। যাই হোক, তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো। আমি ভাবছিলাম কি করে বলি। বা তুমি বিষয়টি কিভাবে নিবে। কিন্ত এখন মনে হচ্ছে তুমি অতটা অবুঝ নয় যতটা আমি মনে করতাম।
— আপনি বলতে কি চাইছেন?
— তুলি আমি তো তোমাকে প্রথম দিনই বলেছিলাম যে আমি কথা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না বা কথার জায়গাতে অন্য কাউকে রাখতে পারবো না। তাই আমার মনে হয় আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো হবে। কারন, তুমি আমার সাথে কখনো সুখি হবে না। কথা ছাড়া আমি শূন্য, তাই আমার সাথে থাকলে তোমার জিবনটাও আনন্দহীন হয়ে পড়বে। আমি বুঝতে পারছি যে এই কথা গুলো তোমার জন্য অনেক বেশি যন্ত্রনাদায়ক। কিন্ত আমার কিছু করার নেই। আজ না হয় কাল কথাগুলো তোমাকে বলতেই হত। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ নেই আমার। তারপরও তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি কথা গুলো বলে থামলাম। তুলি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না। আমিও কিছু না বলে দাড়িয়ে রইলাম। একটু পর তুলি বললো,
— ঠিক আছে, আপনি ডির্বোসের ব্যবস্থা করুন।
তুলির কন্ঠটা কেমন যেনো কাপা কাপা শুনালো। কথা গুলো বলেই তুলি আর দাড়ালো না। সিড়ির দিকে হাটা ধরলো। আমি ঠ্যায় দাড়িয়ে রইলাম একটু পর তুলির গলা শুনে চমকে উঠলাম। আমি একটা দৌড় দিয়ে সিড়ির কাছে আসতেই দেখি কয়েক ধাপ নিচে তুুলি বসে আছে। আমি তুলির কাছে গিয়ে বললাম,
— কি হলো, চিৎকার করলে কেনো? আর এখানে বসে আছো কেনো?
— তাড়াহুড়া করে নামতে যেয়ে ডান পা টা ফসকে গেছে।
— ব্যথা পেয়েছো?
— না, সেই রকম মজা পেয়েছি। মজার ঠ্যলায় এখানে বসে আছি।
— এভাবে কথা বলছো কেনো?
— আপনি বুদ্ধর মত প্রশ্ন করেন কেনো? আপনি যানেন না সিড়িতে পড়ে গেলে ব্যথা লাগে কি না?
— আমি তো কখনো পড়ি নি।
— তাহলে আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। তখন বুঝতে পারবেন।
— আচ্ছা ভুল হয়েছে আমার। এবার ঝগড়া না করে হাতটা দাও আমি ধরছি তুমি উঠার চেষ্টা করো।
— লাগবে না কারো সাহায্য। আমি একাই উঠতে পারবো।
— সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। বেশি কথা না বলে হাতটা দাও।
তুলি হাত বাড়িয়ে দিল। আমি ওকে দাড় করালাম। কিন্ত ডান পায়ে ভর দিতেই পারছে না ব্যথার জন্য। আমি বললাম,
— তোমার ওজন কত?
— কেনো?
— আচ্ছা বলতে হবে না। ধরে নাও আগামী পাঁচ মিনিট তুমি বেহুশ থাকবে।
— মানে?
ওহ এই মেয়েটা এত প্রশ্ন করে কেনো কে যানে। আমি কথা না বলে সোজা তুলিকে কোলে তুলে নিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তুলি বুঝতে পারলো সে মাটিতে নেই। সাথে সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করলো। আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম,
— এই চুপ করো তো, চিৎকার করে একদম কানের পোকা নড়িয়ে দিলো। এভাবে চিৎকার করলে লোকে বলবে আমি নাসির। অন্যর বউকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।
তুলি ধমক শুনে চুপ করে গেলো। আমি রুমে এসে তুলিকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বললাম,
— এত ভাড়ি তো সদর ঘাটের লবনের বস্তাও হয় না। বাবা রে বাবা, আর একটু হলেই শহীদ হয়ে যেতাম।
— আপনি আমাকে বস্তা বলছেন? কে বলেছিলো কোলে তুলতে? এখন কথা শুনাচ্ছেন।
— কেউ বলে নি, তবে এই বান্দা যদি না থাকতো তাহলে সারা রাত সিড়িতে বসে থাকতে হতো। এ জন্যই কথায় আছে, মানুষের উপকার করতে নেই।
— হ্যাঁ মহান কাজ করেছেন আপনি, দাড়ান আপনার জন্য নোবেল প্রাইজের ব্যবস্থা করছি।
কথা গুলো বলেই তুলি হেটে বাথরুমে চলে গেলো। আমি বিছানায় বসে পড়লাম। একটু পর মনে হলো তুলি তো পায়ে ব্যথা পেয়েছে তাহলে এখন ঠিক হয়ে গেলো কি করে? একদম ভালো মানুষের মত হেটে গেলো সামনে দিয়ে। তাহলে কি তুলি আমাকে বোকা বানিয়েছে?
বেশ কয়দিন হলো আব্বুর সাথে অফিসে আসছি। সকালে আব্বুর সাথে আসি বিকালে আব্বুর সাথেই বাসায় যাই। কথার সাথে মাঝে ম্যধ্যে দেখা করি, কখনো শপিং,কখনো রেস্টুরেন্ট, এভাবেই দিন চলছে। তুলির সাথে ডির্বসের ব্যপারটা নিয়ে আমি একটা উকিলের সাথে কথা বলেছি। এবং আমরা দুজনেই ডির্বোসের আবেদন করেছি। কোট আমাদের ছয় মাস সময় বেধে দিয়েছে। এই ছয় মাসের মধ্যেই আমাদের ডির্বোস হয়ে যাবে। এই ব্যপারটা আমি তুলি আর কথা ছাড়া কেউ যানে না। তেমনি কথার সাথে আমার বিয়ের ব্যপারটাও আমি আর কথা ছাড়া কেউ যানে না।
তুলির সাথে আমার সম্পকটা একদম বন্ধুর মত। যদিও আমরা যানি যে আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হবে। একসাথে থাকা কখনো সম্ভব নয়। তাই একে অপরের প্রতি মায়া বাড়িয়েও কোনো লাভ নেই। কিন্ত নিজের অজান্তেই তুলির মায়ায় জরিয়ে গেছি আমি।
আজ বিকালে কথাকে নিয়ে বের হয়েছিলাম বাইকে ঘুরতে। আমরা প্রায় এরকম ঘুরতে যাই। ফিরার সময় টাফিক জ্যামে আটকে গেলাম। কথা পেছন থেকে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তারপর আমার কাধের উপর থুতনি রেখে বললো,
— বাবু আমি আর ওয়েট করতে পারছি না। কবে আমরা এক হবো বলো তো?
— কেনো? আমরা তো এক হয়েই আছি। এই যে তুমি আমাকে জরিয়ে ধরে আছো।
— আমি এই এক হওয়ার কথা বলছি না। একেবারে পারমানেন্ট ভাবে এক হওয়ার কথা বলছি। দেখো না, আমাদের বিয়ের চার মাস হয়ে গেলো অথচ আমরা এখনো দুরে দুরে আছি। আমার আর একটুও ভালো লাগে না। কবে যে তোমাকে কাছে পাবো।
— আর একটু ধোর্য ধরো জান। কথায় আছে না সবুরে মেওয়া ফলে।
আমরা কথা বলতে ছিলাম আর টাফিক সিগনালের জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম। অথচ, আমার মাথায়ই আসেনি আমার বাইকের পাশে যে গাড়ি টা দাড়িয়ে আছে সেটা আমাদেরই গাড়ি। এবং গাড়ির ভিতরে সংয় আমার বাবা বসে আছে।
চলবে……?
( বিঃদ্রঃ ভুল তুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রিচেক দিতে পারি নি, বানান ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। )