নিস্বার্থ ভালোবাসা পর্ব ১৩+১৪

#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১৩
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া

(পাঁপড়ি নামটা চেইন্জ করে ফুল দেওয়া হয়ছে)

বর্তমানে

শুভ্রতা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। আস্তে আস্তে রাত গভীর হতে থাকে সবাই শুভ্রতাকে ডিনার করার জন্য ডাকে কিন্তু শুভ্রতা শরীর খারাপের বাহানা দেখিয়ে না করে দেয়। এখন বাজে রাত বারটা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু শুভ্রতা জেগে আছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা শুধু শুনা যাচ্ছে শুভ্রতার ফুফানোর আওয়াজ। রিদ সেই কখন বের হয়ে গেছিলো কিন্তু এখনো ফিরে আসে নি। হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে যাচ্ছে শুভ্রতা।

শুভ্রতা: আমি রিদকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

এইদিকে

ফুল গভীর ঘুমে মগ্ন তার দিকে তাকিয়ে আছে এক জুড়া চোখ। অনেক বছরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। ফুলের মুখটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। হাত দিয়ে ফুলের মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো খুব যত্ন সহকারে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। ঘুমের মাঝেই কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে ফুল। ফুলের মুখে হালকা ফুঁ দেয় ফুল চোখ মুখ কোচকে নেয় যা দেখে লোকটি মৃদু হাসে। লোকটি আবার ফুলকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফুল এবার একটু নড়েচড়ে ওঠে। লোকটি ফুলের কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায়। ফুল ধপ করে চোখ খুলে ফেলে তার আগেই লোকটি চলে যায়। ফুল তড়িৎ বেগে শুয়া থেকে ওঠে বসে। চারদিকে চোখ বুলায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।

ফুল: আমি জানি তুমি এখানে এসেছিলে। আর এটাও জানি তুমি এখনো এখানে আছো। প্লিজ আমার সামনে আসো। আজকে তোমাকে আমার সামনে আসতেই হবে । নাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব। এই অপরাধবোধ নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না। কিছুতেই না।

ফুলের পাশে রাখা ফল কাটার ছুড়িটা হাতে নিয়ে নিজের বাম হাতের শিরা বরাবর ধরে।

ফুল: আমি এক থেকে তিন পর্যন্ত কাউন করবো এর মাঝে তুমি না আসলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব। এক…দুই…

যখনি তিন বলতে যাবে তার আগেই একটা সুঠাম দেহি ছেলে দৌড়ে এসে ফুলের হাত থেকে ছুড়িটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় ফুলের গালে। ফুলের হাত থেকে রক্ত পড়ছে। জুড়ে চাপ দিয় ছুড়িটা হাতে ধরায় অল্প একটু হাত কেটে যায়।

ফুল: রাত।

রাত: পাগল হয়ে গেছিস তুই। নিজের ক্ষতি করতে চাইছিলি। তুই শুধু আমার তোর প্রত্যেকটা বডি পার্ট শুধু আমার। এই শরীরে আঘাত করার অধিকার তোকে কে দিয়েছে?

ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে ফুলের হাত টেনে এনে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে রাত। আলতো হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। ফুলতো এক ধ্যানে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কতদিন পরে তার রাতকে সে দেখছে। এই কতদিনে চেহেরায় কতটা পরিবর্তন এসেছে। ফুল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রাতকে দেখছে। আগের থেকে অনেকটা ফর্সা হয়ে গেছে। অনেকটা রোগাটে হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। এতেই অনেক সুন্দর লাগছে রাতকে। রাত ফুলের বাম গালে হাত রাখে।

রাত: তুমি এতো অবুঝ কেনো? তুমি বুঝো না তোমার শরীরের একটু আঘাত আমার ভিতরটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়।

ফুল: তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো?

রাত: তুমি কোনো ভুল করোনি তাই ক্ষমা করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি জানি তুমি আমাকে বাঁচানোর জন্য সবকিছু করে ছিলে।

ফুল: তাহলে এতোদিন আমার সামনে আসো নাই কেনো?

রাত:উহু আর কোনো প্রশ্ন নই। সময় হলেই সব জানতে পারবে। আমার পিচ্চি বউ তোমার মাথায় এতো পেশার নিতে হবে না। অনেকদিন ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমায় না। তোমার কোলে মাথা রেখে আজকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমুতে চাই। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে?

ফুল বিছানায় বসে ইশারায় রাতকে কোলে মাথা রাখতে বলে। রাত আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা। রাত ধপ করে ফুলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। ফুল রাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

রাত: একটা শুনাবে? অনেকদিন ধরে তোমার মধুর কন্ঠে গান শুনি না।

ফুল মাখা নেড়ে সম্মতি জানায়।

রাতের সব তারা আছে~~
দিনের গভীরে~~
বুকের মাঝে মন যেখানে ❤
রাখবো তোকে সেখানে 😍
তুই কি আমার হবিরে ~❤
…………………………………
………………………………..
রাতের সব তারা আছে~~
দিনের গভীরে~~
বুকের মাঝে মন যেখানে ❤
রাখবো তোকে সেখানে 😍
তুই কি আমার হবিরে ~❤

মন বাড়িয়ে আছি দাঁড়িয়ে
তোর হৃদয়ে গেছি হারিয়ে
তুই জীবন মরণ সবিরে
তুই কি আমার হবিরে ~❤

রাতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফুলও ঘুমিয়ে পড়ে।
#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১৪
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া

রাতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফুলও ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফুল অবাক হয়ে যায় কারণ কোথাও রাত নাই।

ফুল: এটা কী স্বপ্ন ছিল? না এটা স্বপ্ন হতে পারে না রাত সত্যিই এসেছিল। কিন্তু এখন কোথায় গেলো? রাত তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারো না। আমি না ঘুমালে তো রাত আমাকে ছেড়ে যেতে পারতো না। আমি কেনো ঘুমিয়ে গেলাম।

ফুলে রাগে, দুঃখে বেড থেকে ছুড়ে সব নিচে ফেলে দিচ্ছে। তখনি ফুলের নজর যায় বালিশের নিচে রাখা সাদা কাগজের দিকে। সে তাড়াতাড়ি কাগজটা হাতে নেয়।

ফুল: তার মানে সত্যিই রাত এসেছিল।

ফুল কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে।

আমার সানফ্লাওয়ার

আমি জানি তুমি সকালে ঘুম থেকে ওঠে আমাকে না পেয়ে ডেস্পারেট হয়ে যাবে। একবার ভাববে এটা স্বপ্ন ছিল আরেকবার ভাববে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে দেখে আমি চলে গেছি। কিন্তু তোমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমি স্বপ্নে আসেনি সত্যি সত্যি এসেছিলাম। আমি চাইলেও তোমার সাথে থাকতে পারতাম না। আসার সময় তোমাকে বলে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার ঐ নিষ্পাপ ঘুমুন্ত মুখ দেখে আর ডেকে তুলার সাহস পায়নি। এখন হয়তো তোমার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে যে আমি কেনো সবার থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছি? আজকে তোমাকে সব বলবো। আজকে বিকেল ৩টায় তোমার ভার্সিটির পাশে যে বাসা আছে ঐটার থার্ড ফ্লোরের লিফটের পাশের ফ্ল্যাটে চলে এসো। আমার মর্নিং কিসিটা কিন্তু পাওনা রইলো।

ইতি
তোমার
রাত

ফুল সবটা পরে মুচকি হেসে খোলা চুল গুলো হাত দিয়ে খোপা করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

এইদিকে

শুভ্রতা কাঁদতে কাঁদতে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসেই ঘুমিয়ে পড়ে। এখন বাজে সকাল ৮টা। রিদ রুমে এসে দেখে শুভ্রতা এলোমেলো ভাবে বেডে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো চুলগুলো এলোমেলো। শুভ্রতাকে দেখেই রিদ আতকে ওঠে। শব্দহীন ভাবে হেঁটে শুভ্রতার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে রিদ। যেনো শুভ্রতার ঘুম ভেঙে না যায়। আলতো হাতে শুভ্তার মুখের ওপর এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। শুভ্রতার কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায়। চোখের নিচের পানি গুলো মুছে দেয়।

রিদ:এক রাতেই নিজের কী অবস্থা করেছিস? আমাকে বলিস ডিবোর্স দিতে। আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারো না। আমাকে ডিবোর্স দেওয়ার কথা বলার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।

রিদ শুভ্রতাকে কোলে তুলে নেয় বেডে সুন্দর করে শুয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়। অফিসে যাওয়ার আগে শুভ্রতার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। শুভ্রতার ঘুম ভাঙ্গে ১১ টার দিকে। হাই তুলে শুয়া থেকে ওঠে বসে।

শুভ্রতা: আমি তো ফ্লোরে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কী করে? তারমানে রিদ চলে এসেছে।

শুভ্রতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ কপালে ওঠে যায়।

শুভ্রতা: হায় আল্লাহ ১১ টা বেজে গেছে। আমি এতো বেলা অব্দি ঘুমিয়েছি অথচ কেউ ডাকেনি।

শুভ্রতা তড়িৎ বেগে ওয়াশরুমে দরজার সামনে গিয়ে দেখে রিদ নেই। দৌড়ে বেলকনিতে যায় সেখানেও রিদকে পায় না। তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে যায়।

শুভ্রতা: মামুনি, মামুনি।

আনিকা: কী হয়েছে?

শুভ্রতা: রিদ কোথায়?

আনিকা: রিদ তো অনেক আগেই অফিসে চলে গেছে।

শুভ্রতা: আমাকে না বলে চলে গেছে।

আনিকা: রিদ তো বলল তুই অসুস্থ তাই যেনো তোকে কেউ ডাকাডাকি না করে। এসব কথা বাদ দে। কালকে রাত থেকে এখন পর্যন্ত খাসনি। খাবি চল।

শুভ্রতা: খাবো না।

আনিকা: খাবারের ওপর রাগ করতে আছে সোনামা। এখন না খেলে পড়ে আরো অসুস্থ হয়ে যাবি।

শুভ্রতা: একদিন না খেলে কেউ মরে যায় না।

শুভ্রতা হনহন করে ওপরে চলে যায়।

আনিকা: এগুলোকে নিয়ে আর পারি না। এতো বড় হয়ে গেছে এখনো এদের মাঝের বাচ্চামো ভাব যায়নি। এখনো বাচ্চাদের মতোই খাবারের ওপর রাগ করে।

———————————–

ফুল দাঁড়িয়ে আছে রাতের দেওয়া ঠিকানাই। কলিংবেল বাজাবে নাকি বাজাবে না চলে যাবে তা নিয়ে দিদ্বায় ভুগছে।

ফুল: রাত বলেছিল লিফটের পাশের ফ্ল্যাট। কিন্তু এখানে তো লিফটের পাশে দুটো ফ্ল্যাট। রাত তো বলেনি লিফটের বাম পাশের ফ্ল্যাট না ডান পাশের ফ্ল্যাট। কোনটা রাতের ফ্ল্যাট বুঝবো কী করে?

ফুল এসব ভাবনায় মগ্ন ছিল তখন তার হাতে ধরে টান দিয়ে একটা রুমের ভিতর নিয়ে আসে। ফুল ভয়ে চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই কেউ তার মুখ চেপে ধরে।

রাত: সেই কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি। আসছো লেইট করে তারপরেও দরজার সামনে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলে।

পরিচিত কন্ঠ শুনে সামনে তাকায় ফুল। সামনে তাকিয়ে থমকে যায় ফুল। এটা তার রাত শুধুই তার রাত। আগেরদিন রাত হওয়ায় আবছা আলোয় দুজন দুজনকে ভালো করে দেখতে পায়নি।কতোদিন পরে এতো কাছ থেকে দুজন দুজনকে দেখছে। দুজন দুজনের দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনকে দেখার প্রতিযোগিতা চলছে। চারদিকে পিন ড্রব সাইলেন্ট।

এইদিকে

অন্ধকার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে এনা। এক ফোটা পানির জন্য কাতরাচ্ছে কিন্তু কেউ পানি দিচ্ছে না। সারাদিন ধরে সে এখানে বাধা অবস্থায় আছে।

চলবে…….
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here