কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৪+২৫

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-২৪.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
সূর্য নিজের সম্পূর্ন রূপে উঠে এসেছে।সবুজ পাহাড় সতেজ করে তুলেছে নিজের তেজি আলোতে।দ্রুত গতিতে আসা সেই আলো এসে পড়ে রিঝের মুখমন্ডলে।ঘুমটা চট করে উবে যায়।অনুভব হয়,তার বুক ভারী!শক্ত বুকে নরম তুলতুলে কিছু ডেবে আছে।নরম একটা হাত ঘাঁড় গলা জড়িয়ে আছে।পা একটা তার পায়ের পাশে লেগে আছে।রিঝ চোখ খুলে।সাদা শালের মাঝে রোদের ফুলকি ঢুকছে।সোনালি আলোয় সাদা শাল আলোকিত হয়ে আছে।সেই সোনালি একফালি রোদ এসে পড়ছে পাশের মানুষের মুখে।জ্বলজ্বল করছে সেই মানুষের মুখ।কোঁকড়া চুল গুলো নিজের বুকে লেপ্টে থাকতে দেখে রিঝ মাথাটা একটু দূরে সরিয়ে তাকালো।তুতুলকে দেখে ভারী অবাক চোখে নিজের ভ্রু কুঁচকে নিলো।একটা হাত পিছনে ভর দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।ঝুলন্ত গাল গুলো ডেবে আছে তার বুকের এক পাশে।প্রকৃতি যখন নিজের রূপে রাঙ্গায় তখন তার প্রেমে পড়তে বাধ্য অবাধ্য মনের দল।রিঝ কিবুঝে হাসলো।মুখ ভর্তি চুল ডান হাতের একটা আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে নিজের তালুতে নিলো।তারপর ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো একদম চোখের উপরে।সূর্যের আলো মারাত্নক গতিতে আসছে।তাপে একটা উজ্জ্বল গরম!তুতুলের নাকে বিন্দু বিন্দু পানি কণা।আবার চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে রিঝ।শালের উপরে বিন্দু বিন্দু গোল সুতোর কাজ।সেই গোল জায়গা দিয়ে রোদ ঢুকছে।একটা রোদের গোল জ্বলক এসে ছুঁয়ে রেখেছে তুতুলের চিকন লাল ঠোঁটজোড়ার একটা অংশ।দখল করেছে কালো তিল!রিঝ চোখ উপরের দিকে রাখে।বিড়বিড় করে বলে,
“ তুমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নিজের আঁখিতে আকাশ দেখো
আমি তোমার আঁখিতে নিজের আকাশ আঁকি
তোমার শুস্ক ঠোঁট শীতের ছোঁয়া পাক।
আমি না হয় শীত হয়ে ছুঁয়ে দিবো তোমার ঠোঁট।”

কানে একটা ঠান্ডা কন্ঠ আসতেই তুতুলের ঘুম ভাঙ্গে।আড়মোড় ভেঙ্গে সে আরো চেপে ধরে রিঝকে।রিঝ ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দেয়।যেনো সে খুব বিরক্ত।বিরক্তি ভরা গলায় সে বলল,
“ জড়িয়ে ধরার এতো ইচ্ছে হলে আস্তে ধরো।এমন চেপে ধরছো কেনো??”

তুতুলের ঘুম উড়ে রোদের সাথে মিলে যায়।ধপ করে উঠে বসে বলল,
“ আমি ঘুমাইলাম কতক্ষণে??”
“ আমার আরামের বুক বালিশ হিসেবে পেয়েছো যখন ঠিক তখনই তোমারও ঘুম এসে ধরা দিয়েছে।”

তুতুল নিজের মাথা থেকে শাল সরিয়ে বলল,
“ কে যেনো কিছু একটা বলছিলো?”

বলেই সে চারপাশে তাকালো।ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখেছে মনে হয়।এখানে তো কোনো মানুষই নেই।চারপাশ ফকফকে পরিষ্কার দেখে তুতুল হাই তুললো।হঠাৎ কি মনে করে রিঝের বুকের একপাশ মুছে দিতে দিতে বলল,
“ স্যরি।কিভাবে যে আপনার বুকে চলে গেছি নিজেও জানি না।”

রিঝ হাসলো।মেয়েটা উম্মাদ!বলল,
“ এই পারফিউম আর লাগাবে না।বাজে গন্ধ।”

তুতুল নিজের গেঞ্জি টেনে ঘ্রান নেয়।কই বাজে নাতো?খুব সুন্দর একটা গন্ধ।মিষ্টি ঘ্রাণ।তুতুল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলল,
“ একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।এটা বকুল ফুলের ঘ্রান।অনেক সুন্দর।আপনি বুঝবেন না।ডায়রিতে তো শুধু গার্লফ্রেন্ডের ছবি রাখেন।মাঝে মাঝে আপনার বাসার পিছনের বকুল গাছ থেকে ফুল নিয়ে ডায়রিতে রাখতে শিখেন।দেখবেন জীবনটাই সুবাসীত হয়ে যাবে।”
“ তুমি পাশে থাকলেই আমার জীবন সুবাসীত।”
রিঝের কন্ঠ শীতল।চোখ গভীর।তুতুল আশ্চর্য হয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ কি??”
“ এই যে তোমার পারফিউমের গন্ধ আমি পাচ্ছি।এটাই বুঝাতে চেয়েছি। জ্ঞান দিতে তুমি দুই পায়ে দাড়িয়ে থাকো।নেওয়ার বেলায় দু হাতে না না করো।উঠো।”
“ আপনিও তো জ্ঞান নিতে চান না।জ্ঞানী বাবা।”
“ আমার নাম্বারটা এই নামেই সেইভ করে রেখেছ??তাই না??”

তুতুল চুল কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
“ ওই আর কি?চলেন যাই।সবাই নিশ্চুয়ই খুঁজবে।”
“ হুম চলো দ্রুত।রামিম কয়েক বার কল করেছে।”

রিঝ আগে আগে হাঁটে।তুতুল পিছনে।একটা জায়গায় এসে রিঝ দাড়ায়।তুতুলকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল,
“ আমাকে ধরো।”

তুতুল চোখ বড় বড় করে বলল,
“ মানে??”
“ আরে নিচে তাকালে তুমি একদম খাঁদে!”
তুতুল ভয় পায়।দু হাতে জড়িয়ে ধরে রিঝের গলা।রিঝ হাসলো।একদম কিনার ঘেঁষে যখন হাঁটছিলো রিঝ তখন তুতুলের কোমড়টা আরো শক্ত করে নিজের মাঝে মিশিয়ে নেয় ।সর্বাঙ্গে যেনো মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে শিহরন।তুতুলের শরীর দুলে উঠছে।বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করে শব্দ করছে।সেই শব্দ যেনো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।এই লোকটার স্পর্শ যেনো নেশা ছড়িয়ে দেয় শরীর জুড়ে।তুতুল প্রেমে পড়ছে!!হুম সে প্রেমে পড়ছে! মনের অবাধ্য মনি কোঠায় নতুন করে একঁঝাক প্রজাপতি উড়ছে।রিঝ নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে।যত্ন করে তুতুলকে ধরে রেখেছে।একটা হাত তার মাথার পিছনে।আর এক হাত কোমড়ে।রিঝের কপালের সামনের গুচ্ছ গুচ্ছ চুল ঝুলছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও দেখা দিচ্ছে।মুক্তর মত জ্বলজ্বল করছে সূর্যের আলোতে।তুতুল নিজেকে ঝাকায়।রিঝ নিজেও নড়ে উঠে।রাগি কন্ঠে চেঁচিয়ে বলে,
“ পাগল না কি! নিচে পড়তে চাও??”
“ আমি প্রেমে পড়তে চাই না।” তুতুল মুখ ফসকে বলে দিলো।যখন বুঝতে পারে তখন দুই হাতে মুখ চেপে ধরে।রিঝ কপাল কুঁচকে সেখানেই দাড়িয়ে পরে।বলে,
“ কি বললা??”

তুতুল কথা ঘুড়িয়ে বলল,
“ আসলে,ইয়ে,মানে,এই পাহাড়ের প্রেমে পড়তে চাই না।পরে দেখা যাবে এখানেই থাকতে ইচ্ছে করবে।তখন আমি পাহাড় কই পাবো??কে দিবে আমাকে পাহাড়।”
“ আমি দিবো।”

তুতুল চকিতেই চোখ গোল করে তাকায়।রিঝ একটা হাত কানের কাছে এনে তুতুলের গালে হাত রাখে।তারপর বলল,
“ যদি বলি তোমাকে আমি একটা পাহাড় কিনে দিবো!!”
“ মানে কি??কিভাবে??” তুতুল বিস্মিত।
“ হুম।দিবো কথা দিচ্ছি।তবে তার বিনিময়ে আমারও কিছু চাই।শত হোক মানুষ জাতি স্বার্থ আপন হয়।”
“ কি চাই আপনার??”
“ আগে নিজেরটা বুঝে নিও তারপর আমারটা চাইবো।”
“ আপনাকে পাহাড় কে দিবে??”
“ শুনো মেয়ে, এই সবুজের বুকে আমি তোমার নামে একটা পাহাড় না হয় গড়েই দিবো।যাতে থাকবে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছ।”
“ আপনি কিসব বলছেন??কবি কবি একটা ভাব গলায়!”

তুতুল হাসলো।রিঝও তাল মিলালো।তুতুল আবার বলল,
“ আমার জন্য আপনি এসব করবেন??কিন্তু কেনো??”

রিঝ হাসলো।হাসিতে মাখামাখি সেই মুখ খানি দেখার মত সুন্দর।তুতুল আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে।তার জন্য!!পাহাড়!!কেনো??তুতুল যে হাঁটতে হাঁটতেই তার রিসোর্টে চলে এসেছে তার খবরই ছিলো না।যখন সামনে রামিম আর আসমাকে বসে থাকতে দেখলো তখন হুশ হলো তারা চলে এসেছে স্বপ্ন রাজ্য থেকে।আসমা দৌড়ে এসে তুতুলকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ তুমি কি পাগল??না বলে এমন রুম থেকে হুট হাট গায়েব হয়ে যাও কেনো??”

তুতুল মৃদু হেসে বলল,
“ হয় তো আমি সত্যিই পাগল।কিন্তু এবার আমার দোষ ছিলো না আপু।তোমার ফ্রেন্ড আমাকে নিয়ে গেছে।কিডন্যাপ করে।”
“ হোয়াট??কে??রিঝ??”

রিঝ নিজের জ্যাকেট খুলতে ব্যস্ত ছিলো।তুতুলের কথায় সে বলল,
“ কিডন্যাপ মানে কি জানো??”
“ জানতে হবে না মিষ্টার কিডন্যাপার।”

আসমা রিঝের পাশে এসে বলল,
“ রিঝ তুই যখন তখন একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে পারছ না।” আসমা একটু রাগি হওয়ার ভান করে।রিঝ ঠোঁট বাঁকিয়ে নেয়।আসমা বুকের এক পাশে হাত রেখে মুখে একটা অদ্ভুত ভাব নিয়ে আবার বলল,
“ ভাই তুই বহুত জোস দেখতে।যে কোনো মাইয়া ক্রাশ খাইবো।বকতে আইস্সাও বকতে পারতাছি না।এইডা প্যারা দায়ক।”
রিঝ হেসে দিলো।তুতুলও হেসে কুটিকুটি।

রামিম বিরক্তি নিয়ে বলল,
“ দিনে কয়শো বার তুই ক্রাশ খাছ কইবি??যখন তখন দেখি তুই উষ্ঠা খাওয়ার মত ক্রাশ খাছ।”
“ তো কি হইছে?আমি ক্রাশ খাই এতে তো আমার নিজের বাপেরই সমস্যা নাই।তোর এতো লাগে কা?তোর উপরে তো আর খাই না।তুই আবার লাগতে আসছ ক্যান??শালা এতোক্ষণ কান খাইয়া মন ভরে নাই??”
“ না ভরে নাই।যা এবার ফ্রেশ হো।আমরাও যামু।তুই তো এফএম রেডিও।শুরু হইলে শেষ নাই।বাজতেই থাকবি।ভাঙ্গা রেকর্ড।”
“ রামিম তুই কিন্তু আমারে চেতাইতাছস??”

রামিম হেঁসে উঠে বলল,
“ অবশ্যই।তোর কি সন্দেহ আছে?

তুতুল রুমে ঢুকার আগে আবার পিছিয়ে এসে বলল,
“ আপনার মত ফকির কিনবে পাহাড়??তাও আমার জন্য?আমি তো আপনার বড় শত্রু তাই না??”

রিঝ সারা মুখে একবার হাত বুলিয়ে বলল,
“ হুম।অবশ্যই আমরা ভালো শত্রু।যে শত্রুর ভাগ আমি একজীবনে অন্য কাউকে দিতে চাই না।”
রিঝ তুতুলের দুই গাল টেনে দিলো।তুতুল বিরক্ত হলো না।তার ভালো লাগছে।ছোঁয়ায় যেনো জাদুকরী জাদু আছে!
_____________________
বান্দরবান থেকে ৭ কিলোমিটার পরেই এই শৈলপ্রপাত।ঝর্না,পাথর,পাহাড়ের জন্যই এই স্থান বেশি জনপ্রিয়।এই পাথরের পাহাড়ের রহস্য হচ্ছে মাটির পাহাড় বহু পুরানো হয়ে পাথরে পরিণত হয়েছে।বর্ষাকালে এর প্রকৃত রূপ চোখে পরে।পাহাড়ের গা ঘেঁষে নামছে ঝড়না ধারা।অপূর্ব সেই দৃশ্য বর্ষাই দখল করে রেখেছে।অন্য ঋতুতে হালকা পানির ধারা।বর্ষার মত ঝপঝপ করে পরেনা সেই পানি।কিন্তু প্রকৃতি তো নিজেই রূপ।তাই হালকা ঝড়নাও চোখে লাগে অপরূপ। রাস্তার পাশেই আছে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার বা বসার ছাউনি, সেখান থেকে অনেক ধাপের সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে প্রপাতের ধারে।রেয়ানা আর মায়শা আর হিমেল আসেনি।রেয়ানার পায়ে ব্যথা।মায়শা টায়ার্ড।আর দুই মেয়ের পাহারার দায়িত্ব নিয়ে থেকে গেছে হিমেল।যেহেতু বর্ষাকাল না তাই তাদের এই ঝর্ণা দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আপাতত।তুতুলের কারনেই ছুঁটে আসা।তা না হলে সবাই আজ নীলাচল যাওয়ার প্ল্যান করেছিলো।সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে নামক সময় সবাই দেখলো মেয়েরা বসে আছে রাস্তার পাশে।সামনে কলা, পেঁপে, জাম্বুরা, ডাব, আনারস,তেঁতুল।এগুলো খুব কম মুল্যে তারা বিক্রি করছে।মহিলাদের পরনে থামি।গায়ে ফতুয়া।গলায় কারো কারো একটা দুইটা মালা।নিচে নামার সময় তুতুল প্রশ্ন করে,
“ এতো ঘুরলাম কই একটাও বানর দেখলাম না।কিন্তু এই শহরের নামই তো বান্দরবান।”

রিঝ মুচকি হেঁসে বলল,
“ এক সময় ছিলো।এখন কালের বিবর্তমানে নেই।”
“ ছিলো তো এখন নেই কেনো??”
আসমাও আগ্রহ দেখিয়ে বলল,
“ হুম বল??”

রিঝ উপরের সিঁড়ি বেয়ে একদম উপরের একটা জায়গায় দাড়ায়।জায়গাটা উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে।যাতে উপর থেকে সৌন্দর্যের দৃশ্য সহজেই দেখা যায়।সবাই তার সাথে সাথে উপরে উঠে।গোলাকার জায়গা জুড়ে রেলিং দেওয়া।তার উপর থেকে দেখা যাচ্ছে সৃষ্টিকর্তার পাথরের তৈরি শৈলপ্রপাত।ধীরি ধীরি পানি পড়ছে।কিছু অন্য প্রজাতির ছেলে মেয়ে বাচ্চারা গোসল করছে একটা কোণে।সেখানে জমা আছে অনেক পানি।রিঝ রয়ে সয়ে চারপাশ দেখে বলল,
“ বান্দরবানের মানুষের কিছু আদি ইতিহাস আছে।কল্প কথা।বেশিরভাগ পাহাড়িই সেই কথায় বিশ্বাস করে।গল্পের মতো মনে হলেও এগুলো তারা খুব মানে। বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপকথায় আছে, এ এলাকায় একসময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের নাম রদ ক্যওচি ম্রো।”
“ মারমা ভাষা ভারী অদ্ভুত!” তুতুল রেলিংয়ে হেলে দাড়িয়ে বলল।
আসমার পিঁপাসা লেগেছে।সে পানির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ আমার তো এই পানিগুলোই খাইতে ইচ্ছে করতাছে।

দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ি পথ।ঝর্ণার উচুঁতেই সেই জায়গা ধরে একটা পথ রয়েছে।কিছু বসার স্থান যুক্ত একটা জায়গাও দেখা যাচ্ছে।কিন্তু যেতে হলে মাঝের পানির পথ পাড়ি দিতে হবে।সবাই নিচে নেমে আসে।নিচের জায়গায় উপজাতিদের ছোট ছোট দোকান।তাদের হাতের তৈরি শাল,মাফলার,ব্যাগ,ক্যাপ আরো অনেক কিছু রয়েছে।আসমা তুতুল শাল কিনে অনেক গুলো।রামিম আকাশ মাফলার কিনে।রিঝ হেড কিনে একটা।কালো রঙ্গের।দোকানের মেয়েকে উদ্দেশ্য করে রিঝ বলল,
“ শিকুবায়া।”

মেয়ে সহ আশেপাশের সব মহিলা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।তারপর মেয়েটি হেঁসে উঠে বলে,
“ শিকুবায়া।”

তুতুল পিছন থেকে রিঝের কানে কানে বলল,
“ কি সব বলতাছেন??”

রিঝ পাশ ফিরে বলল,
“ সালাম প্রনাম এসব ওরা এই ভাষায় জানায়।অভিবাদন জানানোর ভাষা এটা।
“ সিরিয়েসলি!!আপনি এদের ভাষা পারেন??”
“ একটু একটু।”
“ শুধু এটাই জানেন??”
“ আরে বাবা তুমি বলতেই তো দিলে শুধু এটা।এখন সরো।”

রিঝ আবার মেয়েটার কাছে এসে বলল,
“ ঙ্গাঁ নামে রিঝমান।কোবাং নামে জালে??”
“ ঙ্গাঁ নামে ক্যাথি মারমা।
“ মায়া’ল??”
“ মায়া।কোবা মায়া ল??”
“ ঙ্গাঁ মায়া।
“ ঙ্গাঁ গো রি পি??”

মেয়েটা এক গাল হেসে নিজের পিছনের পানির বোতল এগিয়ে দিলো।আসার সময় পানি নিয়ে আসেনি তারা।আসমা পানি খেতে চেয়েছিলো।তাই সে মেয়েটার কাছে পানি খেতে চেয়েছে।রিঝ নিজে একটু পানি খেয়ে আসমার দিকে বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ খা।”

আসমা বিমহিত হয়ে শুনছিলো সব কথা।তাই তার পানির দিকে খবর নাই।সে তাকিয়েই আছে।রিঝ বিরক্ত হয়ে বলল,
“ নে পানি।”
“ তুই এদের ভাষা পারছ??কেমনে দোস্ত??”
“ আগে খা বলদ।”

আসমা বোতলের সব পানি শেষ করে ফেলেছে।আকাশ আশাহত হয়ে বলল,
“ সব খাইলি কা??হারামি।”

মেয়েটা এবার বাংলা ভাষায় বলল,
“ আলো আসে।দেতে পারবো।”
“ এবার তো দেখছি আপনি আমাদের ভাষায় কথা বলছেন।” রিঝের কন্ঠে রশিকতা।
“ আপনে যদি আমদের বাসায় কথা বলতে পালেন আমলাও তো পালি।”

মেয়েটা হাসলো।এরা অনেক থেমে থেমে কথা বলে।আস্তে আস্তে।শান্ত ভাবে।উচ্চ শব্দে কমই কথা বলে।রিঝ পানির টাকা দিতে চাইলো।মেয়েটনিলো না।নিচে নামার আগে রিঝ বলল,
“ ধন্যবাদ।”

মেয়েটি স্বাভাবসরূপ হেঁসে বলল,
“ কোবা কুগো আহলাফা।ঙ্গাঁ কোবা আরোগো পুংগ্রো নঁয় খিঁয়াই।”

রিঝ উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠে।মাথার হেডটা ঠিক করে পরে নেয়।ঠোঁট জোড়া কামড়ে অদ্ভুত লুক দেয়।মেয়েটা লাজুক হাঁসে।তুতুল চোখ ছোট করে নেয়।সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে,
“ কি বলল উনি??”

রিঝ বলল,
“ আপনি খুব সুন্দর। আমি আপনার ছবি তুলতে চাই।”

তুতুল রেগে মেগে আগুন হয়ে বলল,
“ কেনো??আপনার ছবি একা কেনো তুলবে??কি এমন সুন্দর আপনি??হুহ্।”

তুতুল ফঁস ফঁস করে শ্বাস নেয়।রিঝ তুতুলের হাত গুলো টেনে নিজের হাতে নেয়।ঠোঁটে মৃদূ মন মাতানো হাসি ঝুঁলিয়ে তাকায়।চোখের গভীরে একটা নেশা খেলা করছে।প্রেমের নেশা না।এটা ভালোবাসার নেশা।রিঝ সব সময় চায় তুতুল তার জন্য জেলাস হোক।তাকে নিয়ে ঝগড়া করুক।তাকে নিয়ে ভাবুক।তুতুলের সব জুড়ে শুধু সে থাকুক।তুতুলের তেজি আগুনের মত বড় চোখ।রিঝের বরফের মত শীতল চোখ।দু’জোড়া চোখ এক করে দৃষ্টি এক জায়গায় রেখে রিঝ মিষ্টি কন্ঠে বলল,
“ তুমি এতো রাগছো কেনো??সত্যি কথা এবং আমার জীবনের সবচাইতে বড় সত্যি দুনিয়ার কোনো মেয়ের প্রতি আমি আসক্ত নই।কারণ নাংগো ঙ্গাঁ লোয়ে।এবং তোমাকেই আমি একমাত্র ভাবে লোয়ে করি।”

তুতুল বিস্মিত হয়ে বলল,
“ আপনি পাগল হয়ে গেছেন।কিসব বলছেন আমি কিছুই বুঝলাম না।যতসব।হাত ছাড়েন।আর ছবি তুলেন।আমার কি।পারলে গলায় ঝুলে পড়েন।সরেন।”

তুতুল সরে গেছে।মার্মারা হেঁসে উঠে।রিঝ আবার চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ আমি সত্যিই মারাত্নক আকারে নাংগো ঙ্গাঁ লোয়ে।”
বলেই ঠোঁট জোড়ে চেঁপে হেসে উঠে।রিঝ আজ বলেই দিয়েছে তার মনের সবচাইতে গোপন বাক্য।উম্মুক্ত করে দিয়েছে অবাধ্য অনুভুতিকে।আজ থেকে তার ভালোবাসাও হবে উম্মুক্ত।পাখির মতো উড়বে আকাশে।শিহরন দিবে অঙ্গে অঙ্গে।রন্ধ্রে রন্ধ্রে রক্তের সাথে মিশিয়ে দিবে প্রেমের নেশা।ভালোবাসা আলিঙ্গন করবে সূর্যকে নতুন করে।এই ঝর্ণা তার স্বাক্ষী।ভালোবাসার স্বাক্ষি।সে ভালোবাসে।অসম্ভব ভালোবাসে।যতটা না এই পাহাড় তার সবুজ লতাপাতাকে বাসে।যতটা না এই ঝর্ণা তার পাথরকে বাসে।যতটা না এই প্রকৃতি তার রূপকে বাসে।তার চাইতেও হাজার ,লক্ষ,কোটি,মিলিয়ন,বিলিয়ন অগনিত গুন বেশি সে ভালোবাসে।রিঝ চিৎকার করে বলতে বলতে নিচে নামে,
“ নাংগো ঙ্গাঁ লোয়া তুতুল।”
__________
ইনশাআল্লাহ কালকে আর এক পর্ব দিবো।আস্তে আস্তে অভ্যস পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি।রেগুলার হওয়ার চেষ্টাও করবো।অলসতাকে দূর করার চেষ্টাও করছি।আর দুই এক পর্ব পরেই বড় টুইস্ট হবে।ইনশাআল্লাহ।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here