নিস্বার্থ ভালোবাসা পর্ব ১০+১১

#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১১+১২
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া

এভাবে হাসি, আনন্দ কাজের মাঝে কেটে যায় ১ মাস ২৯ দিন। আজকে তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার দিন। তাই রিদ আর শুভ্রতা বাসার সবার জন্য শপিং করতে এসেছে। শপিং শেষে রিদ শুভ্রতা দাঁড় করিয়ে পার্কিং সাইড থেকে গাড়ি আনতে যায়। রিদ তাকিয়ে দেখে শুভ্রতার দিকে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে আসছে।

রিদ গাড়ি থেকে নামতে নামতে ঐ গাড়িটা শুভ্রতার অনেক কাছে চলে এসেছে। রিদ চেয়েও কিছু করতে পারবে না। রিদ শুভ্রতার থেকে অনেকটাই দূরে থাকায় শুভ্রতা রিদের ডাক শুনতে পায় না।

রিদ: শুভ্রততততততা।

রিদ চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ করেই হাটু গেড়ে বসে পড়ে। কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখে শুভ্রতা দাঁড়িয়ে আছে। রিদ শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। রিদ তার দেহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

শুভ্রতা: রিদ দেখো আমার কিছু হয়নি। আমি একদম ঠিক আছি তুমি এভাবে কেঁদো না। তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়।

রিদ: যদি কিছু হয়ে যেতো তখন কী হতো। তুমি তো গাড়িটাকে দেখো নাই তাহলে

শুভ্রতা: আমি যখন ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেই তখন আমার হাতে টান অনুভব করি। আমি রাস্তা থেকে একটু দুরে সরে যায় গাড়িটা আমার পাশ কেটে চলে যায়। যে আমাকে সাহায্য করেছে তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। চারপাশে খুঁজি কিন্তু কাউকে দেখতে পাই না।

রিদ: তোমাকে কে বাঁচালো? এখানে আমাদের পরিচিত তো কেউ নেই।

শুভ্রতা:আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কে আমাকে বাঁচালো?

রিদ: এসব কথা বাদ দেও তুমি ঠিক আছো এটাই আমার কাছে অনেক। চলো হোটেলে বিকেল ৫ টায় আমাদের বাংলাদেশে যাওয়ার ফ্লাইট।

———————————–

বিকেল ৫ টায় আর শুভ্রতা বাংলাদেশে যাওয়ার ফ্লাইটে ওঠে পড়ে।

এইদিকে

অজানা: ঐ এনার সাহস হয় কী করে আমার শুভ্রতার ওপর আক্রমণ করার। (চিৎকার করে)

সামনে থাকা গ্লাসটা দেওয়ালে ছুড়ে মারে।

অজানা: এনা তোর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সময় শেষ হয়ে গেছে। (বাঁকা হেসে)

————————————————————-

দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তারা বাংলাদেশে পৌছায়। এয়ারপোর্টে ওয়েট করছে তাদের জন্য আনিকা, রাইহান, পাঁপড়ি। শুভ্রতা দৌড়ে গিয়ে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে।

শুভ্রতা: কেমন আছো তুমি?

শুভ্রতা: আমিও ভালো আছি।

পাঁপড়ি: হানিমুন থেকে এসে কেউ কী কখনো খারাপ থাকে? তো ভাবি খুশির খবর কবে পাবো?

এই কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই সব মেয়েরা লজ্জা পায়। কিন্তু শুভ্রতার বেলায় ব্যাপারটা ব্যতিক্রম ঘটলো শুভ্রতার মুখটা কালো হয়ে গেলো। রিদ পরিস্থিতি সামলানোর জন্য পাপড়ির মাথায় একটা চাটি মেরে বলে,

রিদ: দিন দিন তুই অভদ্র হয়ে যাচ্ছিস। আমি তোর বড় ভাই লাগি। তোরা কী বাসায় যাবে নাকি এখানে দাঁড়িয়েই এই মেলো ড্রামা করে যাবে।

সবাই গাড়ি করে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় চলে আসে। যে যার রুমে চলে যায়।রিদ আর শুভ্রতাও রুমে চলে আসে। শুভ্রতা আগে ফ্রেশ হতে চলে যায়। শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে আসলে রিদ ফ্রেশ হতে যায়। শুভ্রতা বেডে বসে এক ধ্যানে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। রিদকে তার যে একটা সত্যি জানানোর আছে। শুভ্রতা বসে আসে রিদের অপেক্ষায়। শুভ্রতার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় রিদ। টাওয়াল দিলে চুল মুছতে মুছতে শুভ্রতার সামনে আসে। রিদ শুভ্রতার সামনে আসতেই শুভ্রতা রিদের হাতে টান দিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। রিদের দুই গালে শুভ্রতা নিজের হাত রাখে।

শুভ্রতা: রিদ তুমি আমার একটা কথা রাখবে। (অশ্রুসিক্ত নয়নে)

রিদ: কী কথা?

শুভ্রতা: তুমি আমাকে ডিবোর্স দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে ফেলো।

রিদ নিজের গাল থেকে শুভ্রতার হাত সরিয়ে নেই।

রিদ: আর ইউ মেড।

শুভ্রতা রিদের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেই।

শুভ্রতা: আমি কথা শেষ না করা পর্যন্ত তুমি কোনো কথা বলবে না। রিদ আমার জীবনের চরম সত্যি হলো আমি কোনো দিন মা হতে পারবো না। আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাইলে তুমি কোনোদিন বাবা হওয়ার সুখ পাবে না। তোমাকে কেউ আদো আদো গলায় বাবা বলে ডাকবে না। ছোট ছোট হাত পা দিয়ে তোমাকে কেউ ছুঁয়ে দিবে না। তুমি হয়তো বলবে আমি আগে কেনো বলিনি। আমি জানতাম তোমাকে আগে বললেও তুমি আমাকে ছাড়তে না। দেখো মামনি -বাবাইয়ের তো ইচ্ছে হবে কেউ তাদেরকে আদো আদো গলায় দাদা-দাদু বলে ডাকুক। একসময় হয়তো তোমারোও আফসোস হবে আমাকে বিয়ে করে তুমি জীবনে সব থেকে বড় ভুল করছো। তুমি আমাকে ডিবোর্স দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে ফেলো।

রিদ ধাক্কা মেরে শুভ্রতাকে বিছানায় ফেলে দেয়।

রিদ: আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোকে আমি ছাড়বো না। বাচ্চাই তোর কাছে সবকিছু হয়ে গেলো আমার ভালোবাসাটা কিছু না। আমি তোকে এতো ভালোবাসি সেটা তোর চোখে পড়লো না। জানিস সবচেয়ে বেশি কষ্ট কখন হয়েছিল যখন জানতে পারলাম তুই কোনোদিন মা হতে পারবি না বলে আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলি। বাচ্চাই কী জীবনের সবকিছু। সত্যি বলতে তুই আমার ভালোবাসার যোগ্যই না।

রিদ হনহন করে রুম থেকে চলে যায়।

বিয়ের দিন রাতে,

রিদ যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে বাগানে চলে যায়। তখন শুভ্রতার বান্ধবী জান্নাতের সাথে দেখা হয়।

জান্নাত: ভাইয়া আপনাকে কথা বলার ছিল।

রিদ: হুম বলো।

জান্নাত: আসলে ভাইয়া শুভ্রতা কোনোদিন মা হতে পারবে না তাই আপনাকে বিয়ে করতে চায়ছে না। শুভ্রতা কাউকে বলতে না করছিল কিন্তু আমি জানি আপনি শুভ্রতাকে নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসেন। শুভ্রতা এই ত্রুটির জন্য আপনি শুভ্রতাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না। আসি ভাইয়া শুভ্রতার খেয়াল রাখবেন।

বর্তমানে

শুভ্রতা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here