কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৩৫.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
প্রায় আধা ঘন্টা পড়ে রিঝ এসে হাজির হয় রুমে।এসে দেখে তুতুল এখনো আগের মতো বসে আছে।দরজার দিকে চোখ নিবন্ধ ছিলো।প্রীতি এসেছে সাথে।আজ তার নাইট ডিউটি।তুতুলকে বসে থাকতে দেখে মৃদূ হেসে পাশে বসলো।একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিলো।বাম হাতের ঘড়ির দিতে তাকিয়ে চেক করলো।জিজ্ঞেস করলো,” কেমন আছ এখন??”
তুতুল চোখ তুলে রিঝের দিকে একবার চায়।তারপর কিঞ্চিত হেসে বলল,” গুড।”
“ তুমি খুব লাকি।জানো??”
“ কেনো??” তুতুল চোখ ছোট করে তাকায়।চোখে মুখে ফুটে উঠে অপ্রতিভ কৌতুহল।প্রীতি তুতুলের হাতটা নিজের হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলল,” সত্যিকারের ভালবাসা পাওয়া মানে লাকের ব্যাপার।তাই বললাম।”
তুতুল অদ্ভুত ভাবে চোখা চোখে প্রীতির দিকে তাকিয়ে থাকলো।রিঝ প্রীতির পাশে টুল টেনে বসলো।বলল,” তুই যে আমাদের সেই প্রীতি আমি কিন্তু প্রথমে বুঝতে পারিনি।”
“ আমি কোথায় তোকে দেখে বুঝতে পেরেছি যে তুই সেই গোমড়া মুখো রিঝ বাবু।দাড়ি টাড়ি রেখে আরো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছিস।”
দু’জনে হাসলো।প্রীতি রিঝের ক্লাসমিট ছিল।দু’জন এক সাথে ইন্টার লেভেল শেষ করেছিল।আলভীও তাদের সাথে পড়েছিল।যদিও ক্লাস ভিন্ন।রিঝ তীক্ষ্ন কন্ঠে বললো,” তোকে অনেক ধন্যবাদ প্রীতি।পরিশ্রম দিয়েছিস খুব।সেটার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি না।কিন্তু তুই না থাকলে আমি এভাবে আসতে পারতাম না।”
প্রীতি ঠোঁট ওল্টে মুখটা ভোঁতা করে বললো,” তুই আগের মতো রয়ে গেছস।আমি ভাবছি শালা প্রেমে টেমে পড়ে সোজা হবি।কিন্তু তা আর কই হইলি।”
“ কেনো??”
“ এই যে ফরমালিটি করছ এখনো।”
তুতুল ভ্রু কুঁচকাল।কপালে ভাঁজ ফেলে বুঝার চেষ্টা করছে।প্রীতিকে অচেনা মনে হচ্ছে।আগে কখন দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।ও,সকালে দেখেছে।ডাক্তার হবে।রিঝ ভাই কিভাবে চিনল??পর্ব পরিচিত তারা??তুতুল এক হাতে নিজের কোঁকড়া চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে নিল।হাত দিয়ে পেঁচিয়ে হাত ঘোঁপা করল।মুখটা দু’হাতে নিয়ে কথা শুনতে শুরু করল।প্রীতি মেয়েটা শ্যামবর্ণের।কাজল কালো চোখ।পাতলা হালকা গোলাপী ঠোঁট।নাকটা একটু বোঁচা।দেখতে মায়াবী।দীর্ঘ কালো চুল গুলো পিঠের উপরে বিনুনী করা।শ্যামবর্ণের মেয়েদের চোখ আর চুল হয় মারাত্নক সুন্দর।ঘায়েল করার মত।গায়ে সাদা এ্যাপ্রোন,সেলোয়ার কামিজ।গলায় ঝুলছে উড়না।কথার মাঝে হেঁসে কুটি কুটি হচ্ছে সে।পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করছে।তুতুল বুঝতে পারল প্রীতি রিঝের বন্ধু ছিলো।কিন্তু এটা বুঝতে পারলো না তার ভাইয়াকে কথার মাঝে হুট হাট টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে কেনো?তুতুল কৌতুহলের মাত্রা বাড়ায়।হাতের উপরে ভর দিয়ে একটু পাশে এগিয়ে যায়।রিঝ তখন বলছিল,” বিয়ে সাদি করেছিস??”
প্রীতি দারুন ভাবে হাসলো।বলল,” বিয়ে করলে কি এতো রাতে তোর সাথে বকবক করতাম??পাগল একটা।”
“ সেটা ঠিক।কিন্তু তোর প্ল্যান কি??আলভীর গলায় ঝুলবী??”
প্রীতি দৃঢ় কন্ঠে বলল,” যদি ঝুলায় অবশ্যয় ঝুলবো।”
তুতুল ফোড় কাটল।বলল,” মানে কি??উনি আমার ভাইয়ার গলায় ঝুলবে কেনো??আশ্চর্য্য তো!আমার ভাইয়া কি মেয়েদের গলায় নিয়ে ঘুরে না কি??”
মাথা তুলে প্রীতি তুতুলের দিকে তাকাল।তুতুল তীক্ষ্ন চোখে তাকিয়ে আছে।টান টান চোখ জোড়া।প্রীতি লজ্জা পেলো।বোনের সামনে ভাইয়ের গলায় ঝুলবে বলছিল।ভাবতেই তার শ্যমবর্ণের নরম গাল জুড়ে লজ্জার লাল আভা ছরিয়ে পড়ে।লাজুক হাঁসি ফুঁটিয়ে মুখটা ফিরিয়ে নিলো।রিঝ সময় নিয়ে বলল,” এই ঝুলা ওই ঝুলা না।মজা করে বলছিলো।ওল্টো বুঝা তোমার জাতীয় প্রবলেম।”
তুতুল তীর্যক চোখ করে বলল,” আর আমার সব কথাকে দোষের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো আপনার জাতীয় প্রবলেম।”
“ লুকিয়ে কথা শুনা ভাল না।এখন ফালতু বকা বন্ধ করো।”
“ ও হ্যালো আমি ফালতু বকি না।উনিই তো বললেন আমার ভাইয়ার গলায় ঝুলতে চান।কেনো শুধু সেটাই জানতে চাই।বলবেন??না কি ভাইয়াকে প্রশ্ন করবো??”
রিঝ তৎপর হয়ে তুতুলের পাশে এসে বসল।চোখে মুখে অসহিষ্ণতা ফুটে উঠেছে তার।তুতুলের দিকে শক্ত মুখে তাকিয়ে সে বলল,” তুমি বড্ড বেশি কথা বলো।তোমার ভাই এখানে আসলে আমাকে তাড়িয়ে ঝাড়বে।শালা হারামি একটা।”
“ আচ্ছা খারাপ মানুষ তো আপনি?আমার ভাইয়ার নামে আমার সামনেই ফালতু ভাষায় কথা বলছেন।ছিঃ।”
“ আসছে ভাইয়ের চামচী।” বেশ সহ্য কন্ঠে কথাটা উঠলো।
নার্স খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে।তুতুল চোখ বড় করে নিয়ে বলল,” এখন খাবে কে??এতো রাতে??”
রিঝ একটা ছোট টুল তুতুলের সামনে বসিয়ে দিলো।নার্সের হাত থেকে খাবার নিয়ে টুলের উপরে রাখলো।তুতুল, প্রীতি ,নার্স ,তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।রিঝ নিঁখুত ভাবে কাজ করে।টুং টাং শব্দ হয় না।টুলে রাখার সময় খুব ধীরে রাখে জিনিস গুলো।তুতুল নির্নিমেষ চেয়ে রয়েছে।রিঝ ভ্রুকুঁচিত করে বলল,” মানুষকে গভীর ভাবে দেখতে নেই।সুন্দর হোক বা না হোক প্রেমে পড়ে যেতে বাধ্য হয়।কারণ প্রতিটি মানুষের মাঝে নিঁখুত কিছু সৌন্দর্য্য লুকিয়ে থাকে।খাওয়া শুরু করা যাক।” রিঝের তরল কন্ঠস্বর।তুতুলের সম্বিৎ ফিরে এলো।খাবারের প্লেটের দিকে চোখ পড়ল।ছোট টুলে সাজিয়ে রাখা খাবার,ফল।রিঝ শার্টের হাতা বটে নেয়।চোখের চশমাটি ঠেলে দেয় ডান হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে।তুতুল খেয়াল করে।গায়ের কালো শার্ট দেখে বুঝা যাচ্ছে অফিস থেকে ফিরেই সে হসপিটালে এসেছে।কেমন যেনো মুখটা শুঁকনো শুঁকনো মনে হচ্ছে!তুতুলের কাছে হঠাৎ হঠাৎ সব অচেনা মনে হয়।মনে হয় এদের বোধ হয় সে চিনে না।আবার মনে হয় সব পরিচিত।একটা অদ্ভুত,আশ্চর্য্যজনক অনুভুতি হয় তার।রিঝ খাবার মুখে তুলে দেয়।তুতুল প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে কিছুসময় তাকিয়ে থেকে খাবার মুখে পুরে নেয়।প্রীতি অবাক নয়নে লক্ষ্য করে।এসব সে জানতো না।তার ধারণা ছিলো রিঝ অদ্ভুত ধরনের ছেলে।বই মুখে গুঁজে বসে থাকা টাইপের ছেলে।সব সময় মুখে একটা গাম্ভীর্য্য।দেখলেই ভয় কাজ করে।ক্লাস মিট হয়েও পাশে ঘেঁষার সাহস হয়নি কখনো।সব সময় চোখে মুখে কাঠিন্যতা ছেঁয়ে থাকা ছেলেটাও কত সতেজ যত্নবান হয়ে উঠেছে।কি চমৎকার দৃশ্য!আগে কখনোই তার চোখে এমন চমৎকার দৃশ্য পড়েনি।রিঝ ইষৎ হেসে বলল,” প্রীতি তোমার ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খায় বহু দিন থেকে।”
তুতুলের গলায় আটকে যায় খাবার।খঁক খঁক করে কেঁশে উঠে সে।রিঝ পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।তাকে বিচলিত দেখায় না।সহজ ভাবে সে আবার বলল,” এতো কাঁশার কিছু নেই।প্রেম ভালোবাসা সহজ ব্যাপার।যে কারো সাথে যখন তখন হয়ে যেতে পারে।প্রীতিও তোমার ভাইয়ের প্রেমে সহজ ভাবেই পড়েছে।”
“ মানে কি??ভাইয়া জানে??এসব কখন হলো??আমি তো জানতাম না।কেনো বলেন নি আগে??ভাইয়াও বললো না।এটা কেমন কথা।” তুতুলের অবিশ্বাস্য কন্ঠ স্বর।প্রীতি শুকনো ঢোক গিলে রিঝকে আটকে বলল,” তোর মাথা ঠিক আছে??ওকে এগুলো বলছিস কেনো??বাদ দে।পুরোনো কথা।”
“ পুরোনো মানে কত দিনের??” তুতুল এবার একদম প্রস্তুতি নিয়ে বসেছে।যেনো গল্পের আসর বসেছে।প্রীতি কি বলবে বুঝতে পারছে না।খুব অসস্থ্যি অনুভব করছে সে।রিঝ খাবারের একটা অংশ তুতুলের মুখের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” খেতে থাকো।আমি বলছি।”
প্রীতি ভারী অবাক হয়ে বললো,” তুই কিভাবে বলবি??তুই কি এসব ডিটেলসে জানছ না কি??চুপ কর।”
“ আমি সব জানি।”
“ কিভাবে??তুই তো ক্লাসে কখনো এসব নিয়ে আলোচনায় থাকতি না।দূরে থাকতি।”
“ ফাতলু বকা বন্ধ কর।কিছুক্ষণ পরে ওই আলভী নিশ্চয় টপকাবে।আর আলভীর এই বোন চিৎকার করে তাকে আরো আগে নিয়ে আসবে।লস আমার হবে।তো তুমি শুনো।চিৎকার করবে না।তোমার ভাইয়ের প্রেমে পড়ার মতো কোন কিছু আমি ওর মধ্যে খুঁজে পাইনি।কিন্তু এই মেয়ে পড়েছে।কিছু করার নেই।সেই ক্লাস নাইন থেকে ওর পিছনে পিছনে ঘুরছে।প্রথম দিকে হেসে উড়িয়ে দিলেও একদিন ঠাটিয়ে চড় সবিয়ে দিয়েছিল তোমার প্রিয় ভাইয়া।”
তুতুল আঁতকে উঠে বললো,” ভুলেও না।আমার ভাই!আর থাপ্পড়?ইম্পসিবল।”
“ সব পসিবল।ভোলাভালা বেঁচারা টাইপের মুখ করে ঘুরে বেড়ালেই সে ইম্পসিবল হয়ে যায় না।মানুষ মাত্রই পসিবল।আমি যদি তোমার মতো মেয়ের প্রেমে পড়তে পারি তাহলে তোমার ভাইও থাপড়াতে পারে।তখন প্রীতি বলেছিলো চাইলে আর একটাও দিতে পারবেন।তারপর থেকে আলভী প্রীতির আশেপাশে হাঁটে না।সে কাঁট কাঁট গলায় বলেদিয়েছিলো এটা প্রেম করার বয়স না।”
প্রীতি আফসোস ভরা কন্ঠে বলল,” আর এখন বলছে প্রেম করার বয়স শেষ।” তুতুলের ভারি মায়া হলো।মনে মনে ঠিক করলো এই মেয়েকেই সে নিজের ভাইয়ের বউ করবে।যে এতো বছর বিনা সার্থে ভালবেসে যেতে পারে তাকে বউ করবে না তো কাকে করবে?এটাই হবে ভা—বী।
তুতুল প্রীতির সাথে গল্প করা শুরু করে।পুরোনো দিনের কথা শুনতে থাকে।রাত কখন ভোর হয় কখন সকাল হয় কেউ টের পায় না।আলভী সকাল সকাল হাজির হয়।সবাইকে কথা বলতে দেখে কপাল কুঁচকে নেয়।রিঝকে দেখে রেগে যায়।হাক দিয়ে বলে উঠে,” তুই এখানে কি করছিস?”
রিঝ জবাবে কিছু বললো না।তুতুল ভাইকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো।আলভী কিছুসময়ের জন্য রিঝকে ভুলে গেলো।তুতুলের সাথে কথা বলতে শুরু করলো।বোনের কপালে চুমু খেল।হাতে হাত রেখে সুখ দুঃখের কথা বলল।একটা সময় তুতুল পাহাড়ের কাহিনী শুনাতে শুরু করল।তার বোকামির কথাও ছিল কথার মাঝে।আলভী সব শুনে বুঝতে পারে রিঝ কত পরিশ্রম করেছে।তার বোনের জন্য উল্টো বিপদে পড়েছে বারং বার।অনুশোচনায় মুখটা ভার হয়ে যায় তার।রিঝকে কিছু বলার মতো খুঁজে পায় না।তখন যা বলেছিলো খুব রেগেছিলো তাই বলেছিলো।রাগে মানুষ অনেক কিছু করে ফেলে।কিন্তু ঠান্ডা মস্তিষ্কে সব ভুল প্রমানিত হয়।তখন খুব আফসোস হয়।রিঝ হাত ঘড়ির দিকে তাকায়।আজ নয়টায় তার মিটিং আছে।বিদেশি ক্লাইন্ট।একটা বাড়ির ডিজাইন করতে চায়।শুনতে হবে কি রকমের ডিজাইন তার পছন্দ।তাই যেতে হবে তাড়াতাড়ি।গাঢ় নীল রঙ্গের ব্লেজারটা বেডের পাশে রাখা টুলের উপর থেকে নিয়ে হাতের ভাজে নিলো সে।শার্টের হাতা ঠিক করে নিয়ে উঠে দাড়ালো।যাওয়ার সময় তুতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,” খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করবে।আর বাসায় যাওয়ার জন্য নাচা নাচি করবে না।ফলাফল ভালো হবে না।”
কথা শেষ করেই হাঁটা শুরু করলো।দরজার কাছে যেতেই আলভী ডাক দিলো।রিঝ থমকে দাড়ালো।আলভী সামনে এসে মুখমুখি দাঁড়াল।নিচের দিকে চোখ তার।চোখে চোখ রাখতে পারলো না।কন্ঠ স্বর নিচু করে বললো,” স্যরি দোস্ত।আমি তোর সাথে অনেক বাজে বিহেভ করেছি।এটা করা উঁচিত হয়নি।যেখানে তোর কোনো দোষই ছিলো না সেখানে আমি তোকে দোষী করে অনেক কথা বলেছি।”
রিঝ এবারো কিছু বললো না।পটেকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে সে।কথা কানে যাচ্ছে।মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।আলভী এবার রিঝের হাত ধরল।রিঝ আচমকা চমকালো।পিছনে এসে হাজির হয়েছে মিস্টার হোসাইন,আর আমিনা।আলভী বললো,” তখন মাথা ঠিক ছিলো না ।”
“ তো এখন তোর মাথা ঠিক বলে তোর মনে হচ্ছে??” রিঝের প্রশ্ন শুনলেও বুঝলো না আলভী।তাই হা করে তাকিয়ে থাকলো।রিঝ পুনোরায় বলল,” এই যে হাত ধরে টানাটানি করছিস দেখে মনে হচ্ছে না তোর মাথা ঠিক আছে।”
“ টানাটানি কই করলাম?মাত্রতো ধরলাম।”
“ দেখলি তুই চেতে যাচ্ছিস।তার মানে তোর মাথা এখনো ঠিন নেই।”
আলভী কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে সত্যি মাথা ঠিক নেই।রিঝ ঠোঁট কামড়ে হাসলো।আলভী হাসির কারণ ধরতে পেরে হেসে উঠলো।পিছনের কেউ কিছু বুঝল না।পাশ কাটিয়ে মেয়ের কাছে চলে যায় তারা।রিঝ হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,” আমি কিছু মনে করিনি।সেই সময় আমারও খুব রাগ হচ্ছিলো।সময়টাই এমন ছিলো।তাই আমি ইচ্ছে করে তোর সামনে আসিনি।আমি জানি তুই তোর বোনকে খুব ভালবাসিস।ভালবাসা আমিও বুঝি।কষ্ট হয় খুব তখন।প্রিয় মানুষকে আহত অবস্থায় দেখার মতো কষ্ট পৃথিবীর আর কিছুতেই নেই।”
আলভী ছলছল চোখে তাকায়।চোখের কোণায় জল জমে তার।কন্ঠে আটকে আসে কথা।কেউ শ্বাস বন্ধ করে দিলে যেমন হয় তেমন হচ্ছে তার।পানির প্রয়োজন! রিঝ পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।তারপর পিঠ চাপড়ে বললো,” আমি আসি।আমার অফিসে যেতে হবে।তোর মতো ভবঘুরে থাকার মানুষ আমি না।”
রিঝ পাশ কাটিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।আলভী আবার পথ আটকে দিলো।রিঝ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকালো।আলভী দু হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,” স্যরি এগেইন।”
রিঝ হাসলো।
প্রীতি বসেছে আমিনার পাশে।তুতুল তার বাবার সাথে হসপিটাল ঘুরতে গেছে।প্রীতি খুব অবাক।হসপিটাল কি ঘুরার জায়গা?তুতুলের ভাষ্যমতে অবশ্যয় ঘুরার জায়গা।যেখানে দুমাসের বেশি সময় সে পার করেছে সেটা অবশ্যয় দেখার মতো জায়গা।তাই সে ঘুরছে।মিসেস আমিনা বললেন,” প্রীতি তোমার বাবাকে তো দেখলাম।পরিবারের আর কে কে আছে তোমার??”
প্রীতি সম্মানের সহিত জবাব দিলো,” আর এক ভাইয়া আছে।আর কেউ নেই।”
“ মাও না??” মিসেস আমিনার কন্ঠে অবাকতা।
“ না নেই।আমি যখন মেডিকেলের প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট তখন মা পৃথিবীর আলো ত্যাগ করেছিলেন।”
“ আমি দুঃখিত।” প্রীতির চোখ ভরে উঠেছে জলে।উপচে পড়ছে কয়েক ফোঁটা নোনা জলের স্রোত।মিসেস আমিনার মায়া হলো।তিনি প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,” পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী নয়।তুমিও যাবে আমিও।হয় তো কেউ আগে কেউ বা পড়ে।”
এভাবে কথা বাড়লো।প্রীতি এতো সকালে রোগী দেখে না।তাই সে বসে গল্প জমিয়ে দিলো।মিসেস আমিনার জানা ছিলো না এই মেয়ে এতো কথা জানে।একদিন নার্সের উপরে খুব রাগারাগী করতে দেখেছিলেন।দেখে মনে হলো খুব রাগী।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে খুব সহজ সরল।কথা বলতে ভালো লাগছে।এক কথায় দারুন লাগছে।প্রীতি কথায় কথায় বলল,” আলভী তুতুলকে খুব ভালবাসে তাই না আন্টি??”
“ হুম।অনেক।” প্রীতি নিচু কন্ঠে বলল,” সাধারনত এমন ভালোবাসা দেখা যায় না।আমারও তো ভাই আছে।তাই বললাম।ভাইয়েরা বোনদের ভালবাসে।কিন্তু এতো বেশি খুব কম।”
“ ওদের সম্পর্কটাও তো সাধারণ না।তাই সাধারণের চেয়ে উপরে থাকে সব সময়।”
“ সাধারণ না কেনো??” প্রীতির কন্ঠে প্রবল আগ্রহ।মিসেস আমিনা কথার ভাঁজে ডুবে গিয়েছিলেন।কথায় কথায় বললেন,” তুতুল আমাদের নিজের মেয়ে না,,” কথাটা শেষ করতেই তিনি বেকুব বনে গেলেন।মুখ ফসঁকে বলে ফেলেছেন কথাটা।এতো বড় রাজ নিজের মাঝে দাফন করে রেখেছিলেন তিনি।তুতুলের এতো বছরের জীবনে কখনোই এই কথা তিনি কেনো ,কেউই বেড় করে নি মুখ থেকে।ভুলেও না।কিন্তু আজ এই ভুল কিভাবে হলো?প্রীতি তাজ্জব বনে গেলো।থ মেরে জায়গায় বসেই রইলো।পরের প্রশ্ন আর করলো না।আমিনা দিশা না পেয়ে প্রীতির হাত ধরে কেঁদে উঠে বললেন,” তোমার দুটি হাতে ধরছি আমার তুতুল যাতে এসব না জানে।ও ভেঙ্গে পড়বে।এতো ভালবাসার মানুষ গুলোর সাথে তার রক্তের সম্পর্ক নেই জানলে সে সত্যি ভেঙ্গে পড়বে।”
কথাটা বলেই তিনি শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।দু হাতে নিজের গালে থাপ্পড় মেরে দিলেন।প্রীতি দ্রুত হাত ধরলো।শক্ত গলায় বলল,” আন্টি এই সত্য আমি মরে গেলিও বলবো না।আপনি এতো আফসেট হবেন না।সব দোষ আমার।আমার কারণেই আপনি বলতে বলতে মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছেন।প্লিজ আন্টি মন খারাপ করবেন না।আমি কাউকে বলবো না।আই প্রমিস।”
বাবার সাথে কথা বলতে বলতে তুতুল এসে হাজির।মায়ের চোখে জল,গাল লাল,নাক মুখ ফুলা দেখে সে ছুঁটে আসে।মায়ের পাশে বসে বললো,” আম্মু কাঁদো কেনো??কি হইছে??”
মিসেস আমিনা এখনো ভয়ে আছেন।প্রীতি হেসে উঠে বলল,” তুমি এতো দিন অসুস্থ ছিলে তো।সেই সব দিনের কথা মনে করে তিনি কষ্ট পাচ্ছে।তুমি বুঝিয়ে বলো এবার।”
তুতুল জড়িয়ে ধরে মায়ের গলা।আদুরি গলায় বলে,” আর কখনো তোমাদের ছেড়ে ভুলেও ঘুরতে যাবো না।আই প্রমিস।এবার আর বাবুদের মতো কাঁদিও না।কেউ বলবে তোমার ভাইয়ার মতো এতো বড় ছেলে আছে?আমার মতো এতো বড় মেয়ে আছে?দেখো কেমন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে ছাগলের মতো কাঁদছো তুমি।” তুতুলের ঠোঁট উল্টোনো দেখে মিসেস আমিনা হেসে উঠেন।মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে বললেন,আমার মেয়ে ছাগল।”
“ তাহলে তো তুমিও ছাগল।ছাগলের পেট থেকে তো আর গরু জন্মায় না।প্রীতি ভাবী আপনি কি শুনেছেন কখনো ছাগলের পেট থেকে গরু জন্মায়?আমি তো শুনিনি।”
প্রীতি হেসে উঠে বলল,” আমিও শুনি নি।” কয়েক সেকেন্ড পরে তার মনে পড়ে তুতুল তাকে ভাবী বলে ডাকলো।লজ্জায় মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,” আমি আসি এখন।”
তুতুলের বাবা বললো,” তুমি ডাঃপ্রীতিকে ভাবী ডাকলে কেনো??”
“ কারণ উনার জামাই আমার ভাই।”
“ মানে??”
মায়ের চিৎকার শুনে তুতুল কথা পাল্টে বললো,” আরে বাবা উনি তো আমার বড়।তাহলে হবে আপু।আপুর জামাই হবে ভাইয়া।ভাইয়ার হলে ভাইয়ার বউ হবে ভাবী।তাই না।বাদ দাও তো।বাসায় যাবো কখন বলো।”
তুতুলের কথায় বাবা মা দুজনেই হা করে তাকিয়ে থাকলো।তুতুল হড়বড়ানো বন্ধ করলোনা।
_________________________
দুপুর তিনটে কি চারটা বাজে।মিষ্টি রোদ পড়ছে পিছঢালা রাস্তার উপরে।শীতের রোদ হয় শান্ত।ঘাম ঝড়েনা এই রোদে।শরীরে রোদ পড়লেই ভালো লাগে।রিঝ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তার পাশে আনাস।আজ শপিং করতে যাবে তারা।বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।রুচিকা আর তুতুলের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।আলভী আগেই দু হাত তুলে বলে দিয়েছে সে যাবে না।মেয়েদের সাথে শপিং করার চাইতেও তার মনে হয় সারাদিন অফিসে বসে বসে হিসাব করা বেটার।রিঝ অনেক চেয়েছিলো বাঁচতে।কিন্তু তাকে জোড় করে নেওয়া হয়েছে।বাকিরা আসে আরো দশ মিনিট পরে।তুতুল রুচিকা,আরোহি।মিসেস রহমান বলেছেন,রুচিকার পছন্দ মতো কিনা হবে সব।বড়দের মধ্যে শুধু আমিনা আর আয়েশা যাচ্ছে।বাকিরা বাসায় থাকবে।গাড়িতে উঠার সময় সবার আগে আরোহি উঠে বসে রিঝের পাশের সিটে।রিঝ ড্রাইভিং করবে।তুতুল বসে মায়েদের সাথে।রুচিকা আর আনাস বসে এক সাথে।রিঝের মুখটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খুব বিরক্তি ফিল করছে।ভেবেছিলো তুতুল পাশে বসবে।কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।মাঝে কয়েকদিন তুতুলের সাথে তেমন দেখা হয়নি তার।বারান্দায় আসলে দেখা হতো বা বাসায় গেলে কয়েক নজর।তুতুলের মামা চাইছে তাদের বাসায় বিয়েটা হবে।কারণ মামার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা খুব খারাপ।যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়।বিয়ে এখন সামনাসামনি দুই বাড়িতেই হবে।শপিং মলে এসে রিঝ পড়েছে মহা বিপদে।তুতুল তাকে তেমন পাত্তাই দিলো না।সেখানে আরোহি গায়ে পড়ছে।রিঝ হাঁটছিলো।আরোহি প্রশ্ন করলো,” আপনার প্রিয় রং কি রিঝ??”
রিঝ হুঙ্কারের স্বরে বলল, “ বয়সে আমি তোমার বড়।ভাইয়া ডাকতে পারোনা।”
“ না পারিনা।আমার ভালো লাগেনা আপনাকে ভাইয়া ডাকতে।”
রিঝ একটা চেয়ারে বসলো।আরোহি কোথা থেকে চেয়ার খুঁজে এনে পাশে বসলো।তারপর বলতে শুরু করলো,” আপনি এতো বিরক্ত হচ্ছেন কেনো?”
রিঝ কিছু বলল না।চুপ করে বসে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।আরোহি আবার বলল,” আপনি কথা এতো কম বলেন কেনো??”
রিঝ এবারো কিছু বলল না।আরোহি মুখ ফুলালো।একটু কথা বললে কি হয়?যেনো জাত চলে যাবে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে প্রশ্ন করে,” আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“ না,বউ আছে।” রিঝ ফোনের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো।আরোহি হাসলো।বলল,” আপনি মজা করতে পারেন?আমার জানা ছিলো না।”
“ আমি মজা করি না।”
“ হইছে আর কঠিন গলায় বলতে হবে না।আপনি যে মজা করছেন আমি জানি।আচ্ছা আপনার প্রিয় গান কি?”
“ জানি না।”
“ আপনার সখ কি?”
“ কিছু না।”
“ আমাকে আপনার কেমন লাগে?”
“ আপাততো ফালতু লাগছে।”
আরোহি খুন্ন মনে তাকায়।ভালো না লাগলে এভাবে কেউ সরাসরি বলে দেয়??তার জানা ছিলো না।তার চোখ জ্বল জ্বল করছে।কান্না পাচ্ছে খুব।একটা সময় সে শব্দ করে কাঁদে দিলো।রিঝ একবার চোখ তুলে তাকালো।তারপর আর তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না।দূরে দেখা গেলো আকাশকে।রিঝকে দেখে আকাশ এগিয়ে এলো।তার সাথে রূমাশ্রীও আছে।রিঝ প্রশ্ন করলো,” তুই এখানে?”
“ হুম।রূমাশ্রীর কিছু ড্রেস কিনার ছিলো তাই নিয়ে এসেছি।আর সামনে আনাস ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষ্যেও কিছু কিনার প্রয়োজন ছিলো।কিন্তু ও কাঁদছে কেনো?”
আকাশ অবাক হয়ে আরোহিকে দেখছে।রিঝ উপেক্ষা করে বলল,” আমি জানি না।”
“ আপনার জন্য কাঁদছি।” আরোহি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।তুতুল একটা পাঞ্জাবি হাতে এসে দাড়ালো রিঝের সামনে।আরোহিকে কেঁদে একাকার অবস্থায় দেখে উদ্বেগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,” আরোহি তোর কি হইছে?”
“ তুতুল আপু রিঝ সব সময় আমার সাথে বাজে ভাবে কথা বলে।উনাকে বলনা সুন্দর করে কথা বলতে।”
তুতুল কিছু বুঝলো না।হা করে রিঝের দিকে তাকিয়ে থাকলো।রিঝ দাঁতে দাঁত চাপলো।চোখে মুখে রাগ স্পস্ট।তুতুল এবার আকাশের দিকে তাকালো।রূমাশ্রীকে জড়িয়ে ধরলো।কুশল বিনিময় করলো।তারপর রিঝের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আগের মতো তাকিয়ে আছে।তুতুল এবার কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বলল,” কারো সাথে বাজে ভাবে কথা বলা উঁচিত না রিঝ ভাইয়া।”
কঠিন চোখে তাকাতেই তুতুল এক গাল হাসলো।হাতের পাঞ্জাবী এগিয়ে দিয়ে বলল,” কেমন হয়েছে?”
“ সুন্দর না।” না দেখেই রিঝ উত্তর দিল।তুতুল ঠোঁট উল্টে বলল,” ভালো করে দেখে বলুন।প্লিজ।”
রিঝ চোখ তুলে তাকাল।সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী।কলারে কমলা সুতোর কাজ।বুকের এক পাশে এসে থেমেছে।ছোট ছোট কয়েক রঙ্গা ফুল,লতা বিছানো বুকের পাশে।হাতার একদম নিচের দিকে চিকন কারুকাজ।উপরে আলাদা কটি।সম্পর্ন্য কটি জুড়ে সুতোর কাজ।সুন্দর,এক কথায় অসাধারণ সুন্দর পাঞ্জাবী।আকাশ উৎফুল্ল গলায় বলল,” দারুন তো।কে পছন্দ করেছে এতো সুন্দর পাঞ্জাবী।এটা কার জন্য?”
তুতুল মুচকি হেসে বলল,” আমি পছন্দ করেছি।ভাইয়ার জন্য।”
রিঝ আগুন চোখে তাকালো।মনে মনে ভেবেছিল তার জন্য পছন্দ করা হয়েছে।কিন্তু এখন দেখছে তার মনের সাথে কপালটাও ফুটো।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রিঝ।গটগট করে বড় বড় পা বাড়িয়ে সামনে হাঁটতে শুরু করলো।আকাশ হতবাক হয়ে বলল,” কি হয়েছে ওর?”
তুতুল পিছনে পিছনে হাঁটে।রিঝ এবার থামে।পিছন ফিরে তাকায়।প্রশ্ন করে,” কি হয়েছে?”
তুতুল চারপাশে চোখ বুলিয়ে দাঁত দেখিয়ে হাসলো।বলল,” আপনি কি রাগ করেছেন?”
রিঝ তুতুলের দিকে ফিরে তাকালো।হঠাৎ করে হেসে উঠলো।বলল,” না করিনি।তা কি কি শপিং করেছো?”
“ অনেক কিছু।পাঞ্জাবী কেমন হয়েছে বলুন?”
“ সুন্দর না।কিন্তু আমার জন্য হলে অবশ্যয় সুন্দর বলতাম।”
“ আপনার পছন্দ হলে নিয়ে নিতে পারেন।আমি ভাইয়ার জন্য নীলের মধ্যে নিয়েছি।” তুতুল মুখ ফঁসকে সত্যি বলে দিল।রিঝ খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলিয়ে হাসতে লাগলো।সবাই মিলে শপিং শেষ করেছে।রিঝ তুতুলের সব ড্রেস নতুন করে পছন্দ করেছে।সবাই অবাক হয়।এমনটা রিঝ কখনো করে না।এতো অধীকারবোদ রিঝ আগে কখনো দেখায়নি।আরোহি পিছনে পিছনে ঘুরা ছাড়েনি।রিঝের সামনে কখনো জামা পড়ে জিজ্ঞেস করেছে কেমন লাগছে।কখনো বা জামা নিয়ে এসে হাজির হচ্ছে।সব মিলিয়ে রিঝ খুব বিরক্ত হলো।কেনো যেনো সব মেয়ের প্রতি সে সদয় আচরন করতে পারে না।একটা সাদা জামদানি রিঝ নিজের টাকায় কিনে দিলো তুতুলকে।ব্যাপারটা সবার চোখে বেশি আটকা পড়েছে।রুচিকা আনাসের হাতে চিমটি দিতে দিতে ব্যথা করে তুলেছে।রিঝ তুতুলের ব্যাপারটা সে জানে না।আনাস কখনো বলেনি।এখন সে জানতে চায়।আনাস বার বার এড়িয়ে যাচ্ছে।অন্যের পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলা তার পছন্দ না।শত হোক সে নিজের ভাই।শপিং মল থেকে বের হতেই কোথা থেকে ইয়াজ উড়ে আসার মতো সামনে দাঁড়ায়।তুতুল তখন রিঝের পাশে দাড়িয়ে ফুচকা খাবে বলে প্ল্যান করছিলো।আকাশ আর রূমাশ্রীও ছিলো।ইয়াজকে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কারো মুখে কথা ফুটলো না।কেমন যেনো আড়ষ্ট হয়ে জমে গেলো।ইয়াজ পরে যে ঘটনাটা ঘটালো সেটার জন্য কেউ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।হঠাৎ করে সবার সামনে সে তুতুলের হাত টেনে ধরলো।উত্তেজিত গলায় বলল,” তুতুল তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।আমি তোমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম।কিন্তু শুনেছি তুমি শপিং করতে এসেছো।তাই খোঁজ নিয়ে এখানেই চলে এসেছি।প্লিজ চলো আমার সাথে।খুব গুরুত্বপূর্ন্য কথা।”
তুতুলের বুকটা ধক করে উঠলো।না চাইতেও বার বার রিঝের দিকে চোখ গেলো।রিঝ শক্ত কাঠের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।কিছু বলছে না সে।হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করে রেখেছে।চোখটা নিচের রাস্তায় আটকে আছে।আনাস রিঝের হাতটা শক্ত করে ধরলো।তুতুল কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।ইয়াজ যখন হাতটা একটু টেনে ধরলো তুতুল তখন হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,” কি করছেন মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে?হাত ছাড়ুন।আর যা বলার এখানেই বলুন।”
“ না এখানে বলতে পারবো না।আমার সময়ের প্রয়োজন।প্লিজ চলো।” ইয়াজের কন্ঠে আকুতি ভরা।তুতুল বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে।সে আবার রিঝের দিকে তাকালো।রিঝও তাকিয়ে ছিলো।শক্ত চোয়ালটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাগে তার শরীর ঝনঝন করছে।চোখে চোখ পড়তেই তুতুলের ভেতরটা কেঁপে উঠলো।চোখের দু’পাশের কোণায় লাল লাল রক্তের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ফঁসফঁস নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছে।ইয়াজ আবার বলল,” প্লিজ।এটা খুবই প্রয়োজন তোমাকে বলা।”
রিঝ এবার তীর্যক চোখে ইয়াজের দিকে তাকালো।ইয়াজের মাঝে অদ্ভুত একটা জড়তা কাজ করছে।রিঝের রাগ যতটা না তুতুল বা পরিবার বুঝতে পারছে তার থেকেও হাজার গুণ বেশি ইয়াজ উপলব্দি করতে পারছে।তবুও সে নড়ছে না।হাতটাও ছাড়ছে না।মুঠো শক্ত করছে ক্রমোশ।
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৩৬.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
নিরিবিলি সন্ধ্যা।রুমের আলো নিভান।অন্ধকারে আচ্ছন্ন ঘর।এলোমেলো কাগজ-পত্র,কাঁথা-বালিশ পড়ে আছে বিছানার উপরে নিচে।সাথে উপুত হয়ে ঘুমচ্ছে রামিম।অফিস থেকে ফিরেছে বিকেলে।ড্রেস পরিবর্তন না করেই শুয়ে পড়েছে।বাবা মা কেউ তার সাথে থাকে না।তারা কুমিল্লায় থাকে।প্রথমে পড়ার জন্য পরে এখন কাজের জন্য এই শহরেই তার ঠিকানা এখন।কলিং বেল বেজে উঠে।রামিম ক্লান্ত শরীর আচ্ছন্ন ভাবে টেনে নিয়ে গেলো দরজার সামনে।লক খুলতেই হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করে সাদা শার্টের মেয়েটা।রামিম চোখ ভালো করে কচলে নেয়।দেখে মন দিয়ে।ভুল হচ্ছে না তো??না সে ঠিক দেখেছে।মেয়েটা তার পরিচিত।শুধু পরিচিত না,এতো তার নিজেরই বউ।আসমার মুখ ফুলা।চোখ লাল।এলোমেলো কেশ।দেখে ভয়ংকর মনে হচ্ছে।রামিম তৎপর হয়ে আসমার সামনে দাড়ালো।ভালো করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে প্রশ্ন করল,” কিরে তোর কি হইছে??হুলিয়া এতো খারাপ ক্যান??”
আসমা ক্লান্ত নয়ন ভর্তি জল নিয়ে রামিমের দিকে চেয়ে রইল।রামিম ভীতু হলো।অদ্ভুত ভয়ে বুক কেঁপে উঠল।আরো কাছে এসে প্রশ্ন করল,” কি হইছে আমারে ক??এমন অবস্থা ক্যান তোর??অফিস থেকে বাসায় যাছ নাই?”
আসমা হু হু করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।শিশু বাচ্চাদের মতো তার বিলাপ!রামিম হতবিহ্বল হয়ে পড়ল।আসস্থ করে বলল,” কান্না থামা।সব খুলে বল।আমি আছি তো।”
আসমা দু হাতে রামিমকে জড়িয়ে ধরে।আকর্ষীক ঠেলা সামলাতে রামিমের সময় লাগে কিছু।আসমা নাক টেনে টেনে বলল,” আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।”
“ কেনো??” রামিম অবাক সুর।
“ তো কি করতাম?হিটলার বাপ আমারে আবার বিয়া দিতে চায়।তুই ক আমি কয়ডা বিয়া করতাম জীবনে??শালা এতো বিয়া বিয়া কেন করে সবাই কইবি?বাল ভাল্লাগে না।”
আসমা রামিমকে ছেড়ে সোফায় বসলো ধপ করে।চোখে মুখের পানি মুছল দু’হাতে।তারপর চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নাক উঁচু করে বলল,” ওই রামিম তুই এতো অগোছালো ক্যান রে??গুঁছাই রাখতে পারছ না সব কিছু??দেখ কেমন খচ্ছরের মত লাগে সব দেখতে।এখানে আমি থাকমু??আল্লাহ ভাবা যায়??”
রামিমের মনে হঠাৎ ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো।অদ্ভুত ভাবে খেলে গেলো আনন্দের জোয়ার।আসমা থাকবে!মানে সব মেনে নিয়েছে?ছুটে এসে আসমার নিচ বরাবর বসে বলল,” তুই বিয়েটা মেনে নিয়েছিস??”
“ কোন বিয়ে??” আসমা ভাবতে শুরু করল।রামিম বলল,” তুই না থাকবি বলতাছস?আর ভুলে গেলি??পাহাড়ের বিয়ে??”
কথা মনে পড়ার ভঙ্গীতে আসমা বলল,” থাকমু তো এমনেই।এ ওই বিয়ে?ওই শালা তুই পাগল হইলি??যা ভাগ।তোর লগে বিয়া মানতে যামু ক্যান?তুই আমার বন্ধু।বন্ধুই থাকবি।হিমেলের বাসায় গিয়েছিলাম।কই যেনো গেছে।আসতে সময় লাগবে।আর মায়শা তো বাপ মায়ের সাথে থাকে।ওর বাসাও বাবা চিনে।রিঝেরটাও চিনে।আকাশেরটা দূরে।পরিচিত বাড়িতে গেলেই বাবা নিয়ে আসতো ধরে।হিমেল আসলেই বিয়ে করে নিবো।তুই বরং সাক্ষী হইস।”
রামিম রাগে ফঁস ফঁস করে শ্বাস নিয়ে বলল,” হিমেলও তো তোর বন্ধু।ওরে জামাই বানাবী কেমনে??”
“ ওই আমাদের মধ্যে একটা রিলেশন আছে।তুই মনে হয় ভুলে গেছস।আচ্ছা বাদ দে।কিছু খাইতে দে।খামু।ক্ষুধা লাগছে বহুত দোস্ত।”
রামিম উঠে দাড়ায়।ফ্রিজ খুলে দেখে শুধু জুস টাইপের জিনিস আছে আর ডিমগুলো তাকিয়ে আছে।আফসোস করে রামিম বলল,” খাবার নেই।”
“ হোয়ার্ট??তোর ঘরে খাবার নেই??তুই মানুষ তো?”
“ আমি মানুষই।কিন্তু সমস্যা হইছে গিয়ে আমি তো রান্না করতে পারিনা।সকালে বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায়।এখন যা সকালে রান্না করে দিয়েগেছে সব শেষ।রাতেও আসার কথা ছিলো।কিন্তু আসতে পারেনি কোনো একটা কাজের জন্যে।ঘুমের মাঝে ফোন রিসিভ করেছি।তাই ভালো করে বুঝতে পারিনি।কিন্তু তুই এতো আহাম্মক কেনো??ফোন করে আসতে পারলিনা??রাবিশ একটা।”
“ ফোন করার মত সময় ছিল?নিচে দেখতে আসছে ছেলে পক্ষ।আমি জানালা দিয়ে পালাইছি।হইছে বাদ দে এসব।যা খাবার জোগাড় কর।আমি এখানে ১৫দিনের মতো থাকবো।নিজের সব টাকা আর আম্মুর জমি ছিলো কিছু ওগুলো বিক্রি করে খালামনি একটা ফ্লাট নিয়ে দিয়েছে আমাকে।কিন্তু রেডি হতে সময় লাগছে।আর হিমেল চলে আসলে তো বিয়ে করে ওর ফ্লাটেই থাকতে পারমু।তো যত দিন আছি আমি রান্না করবো।কিন্তু কালকে থেকে,আজকে পারবো না কিছু।আমি টায়ার্ড।”
আসমা এতক্ষনে রামিমের দিকে তাকায়।ফোন বের করে সে কথা বলছে।খাবার অর্ডার করবে।এখন এছাড়া উপায় নেই।গায়ে আকাশী শার্ট।এক পাশের ইন খোলা।এলোমেলো চুল।গলায় ঝুলছে গোলাপি টাই।শার্টের উপরের দু’টো বোতাম খোলা।কালো প্যান্টের একটা পা উপরে উঠে আছে।বাকিটা ঠিক আছে।আসমার দারুন হাসি পেলো।সে হু হা করে হাসতে শুরু করল।রামিম দুই ভ্রু খাঁদে নামিয়ে বলল,” কি হইছে।হাসছ ক্যান?”
“ তোর অবস্থা দেখে।তোর একটা বউ এবার লাগবোরে দোস্ত।”
কথাটা বলতে বলতে সে রামিমের পায়ের প্যান্টের অংশটা নামিয়ে দিল।রামিম বিড়বিড় করে বলল,” তুই আমার বউ হয়ে থেকে জানা রে।”
আসমা উঠে যায়।টিবিলের উপরে পড়ে থাকা প্লেট গুলো সরিয়ে নেয়।বিছানার উপরে পড়ে থাকা জামা কাপড় গুঁছাতে শুরু করে।রামিম মাথা চুলকাতে চুলকাতে ঘুরতে থাকে।আসমা ঘন্টা খানেকের মধ্যে ঘরটাকে চকচকে করে ফেলে।রামিম বিস্মিত চোখে সব দেখছিলো।সব গুঁছিয়ে আসমা নিজের লাগেজ নিয়ে যায় পাশের একটা রুমে।লাগেজটা ডেমেজ হয়ে গেছে।নিচে ছুঁড়ে দিয়েছিল সে।এই বাসায় তারা আরো থেকেছিল।তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।আগে প্রায় তারা রামিমের বাসা কব্জা করে পার্টি করত।আকাশের বাড়িটা একটু দূরে।রিঝেদের অনেক বাড়ি আছে।মাঝে মাঝে নতুন নতুন বাড়িতে ছুটি কাটাতে যায় তারা।আর অল্প সময় হাতে থাকলে রামিমের বাসা।আসমা গোসল করে বের হয়।ভেঁজা চুল।গায়ে ফতুয়া।ফতুয়ার গলার অংশ ভিজে গেছে।প্যান্টের নিচের পায়ের দিকেও ভিজে চুপচুপ।আসমা চুলের পানি নিতে পারে না।ভালো করে চুল মুছতেও পারে না।ছোট বেলা থেকেই সে ছন্নছাড়া।পিঠের সম্পর্ন অংশ ভিঁজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে ফতুয়া।রামিম আসমার রুমেই বসেছিল।আসমা বিস্মিত হয়ে বলল,” তুই এখনো আমার রুমে কি করছ??”
রামিম চোখ তুলে তাকায়।প্রথম দেখায় ঝাটকা খায়।স্বচ্ছ কাঁচের মতো ঝক ঝক করছে আসমা।মায়াবতীর এক অদৃশ্য রূপ প্রকাশিত হয়েছে আজ।জ্বলজ্বল চোখে রামিম তাকিয়ে থাকে।বিমুগ্ধ চোখ তার।আসমা মুখের উপরে তুড়ি বাজায়।রামিমের হুশ ফিরে না।ধাক্কা মারে।রামিম পড়ে যেতে নেয়।আসমা বিহ্বল!হলো কি এই ছেলের।ধরে ফেলে।তাই নিচে পড়ে না।আসমা কড়া কন্ঠে প্রশ্ন করে,” ওই তোর সমস্যা কি??এমন করে চাইয়া রইছস ক্যান??ভুত দেখতাছস??”
রামিম উঠে দাড়ায়।আসমার হাতটা ধরে।আসমা হতভম্ভ!রামিম টেনে বসিয়ে দেয় বিছানায়।তারপর কোথা থেকে তোয়ালে খুঁজে নিয়ে আসে।বিছানায় পাঁ ভাজ করে বসে।তোয়ালে দিয়ে আলত করে আসমার চুলের পানি মুছে দিতে শুরু করে।আসমা মাথা পিছনে ঘুরাতে চায়।রামিম চুলের পানি নিতে নিতে বলল,” তুই মাথা সোজা রাখ।তা না হলে ঘাড় মটকাই দিমু।”
আসমা সোজা হয়ে বসে থাকে।রামিম সুন্দর করে চুলের পানি মুছে দেয়।ভালো লাগার জন্মটা যত্ন থেকেই শুরু হয় বোদ হয়।
“ তোর চুল গুলো সুন্দর তো।”
“ তুই এখন জানলি?” বিরক্ত কন্ঠে বলল আসমা।
“ আগে কখনো ছুঁয়ে দেখিনি।এটাই তো প্রথম।আগে ছুঁয়ে দেখলে আগেই বলতে পারতাম।”
“ হইছে।ফাঁকা তারিফ চাই না আমি।”
আসমা চুল ঠিক করতে করতে উঠে যায়।রামিমের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,” তুই এখনো এমন গরুর মতো বসে আছস??যা জামা পাল্টা।কেমন দেখাচ্ছে তোরে।পাগল ছাগল একটা।যা ভাগ।”
রামিম ড্রেস চেঞ্জ করে এসে বসে সোফার উপরে।আসমা তখন টিভি দেখছিল।সোফার টেবিলের উপরে ছিলো কাজু বাদাম।আসমা বসে বসে বাদাম খাচ্ছিল।রামিম বলল,” খাবার তো ওই খানেই রাখা ছিলো।খাছ নাই ক্যান?”
“ তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।যা নিয়ে আয় খামু।”
“ তুই যা আমি পারমু না।” রামিম শরীর এলিয়ে দিলো সোফার বুকের উপরে।আসমা ক্ষেপা চোখে তাকিয়ে বলল,” তুই যাবি কি না রামিম??”
রামিম নিজের কথা থেকে একচুলও নড়লো না।উল্টো আবার বলল,
“ যামু না।”
“ রামিম্মা শেষ বারের মতো কইতাছি যাবি কি না?”
“ তুই যা না প্লিজ।”
“ তুই যাবি কি না?”
রামিম হার মানলো।উঠে খাবারের পেকেট প্লেট নিয়ে এসে বসলো।তারপর বিড়বিড় করে নিম্ন সুরে বলল,”এবার বুঝতে পারছি মানুষ কয় ক্যান বউ হচ্ছে ঝামেলা।সত্যি এরা ঝামেলা।”
আসমা শেষের কথা শুনতে পায়।রাগে গমগম করে বলে উঠে,” তুই আমারে ঝামেলা কইছস??যা আর থাকমু না তোর বাসায়।এখনই চলে যামু।”
আসমা উঠে পরে।রামিম হাত টেনে ধরে।নাজুক গলায় বলে,” আরে দোস্ত রাগ করছ কা??আমি মজা করছি।তুই কবে থেকে নেকা নেকা মেয়েদের মতো কথায় কথায় রাগ করতে শুরু করছস??তুই তো এমন ছিলি না।”
“ তুই ও তো আগে মনে মনে বিড়বিড় করতি না।এখন করছ।”
“ সব কথা জোড়ে বলা যায় না দোস্ত।”
আসমা পাশে বসে।কৌতুহলি গলায় জানতে চায়,” কেনো কেনো?”
“ এখন খা তো।পরে কথা বলিছ।খুদা লাগছে না তোর।খা।”
আসমা খাবার তুলতে গিয়ে অনুভব করে তার হাত কাটা।রক্তের ছাপ লেগে আছে।মনে পড়ে বাড়ি থেকে সে জানালা দিয়ে পালিয়েছে।তখন জানালার একটা অংশে লেগে হাত কেঁটে গেছে।আসমা চামুচ খুঁজতে উঠে যেতে নেয়।রামিম বুঝতে পারে।প্রশ্ন না করেই খাইয়ে দেয় নিজের হাতে।আসমা তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে।কান্নারা গলা থেকে চোখে এসে উপঁচে পড়ে।রামিম থ হয়ে যায়।জিজ্ঞেস করে,” কি হয়েছে??কাঁদছ ক্যান??”
আসমা নাক টেনে বলল,” আম্মুর পরে আর কেউ কখনো আমাকে এভাবে খাইয়ে দেয় নাই রামিম।এতো বছরে তুই প্রথম যে আম্মুর পরে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিস।”
রামিমের খারাপ লাগে।কথা ঘুরিয়ে বলল,” তুই কিন্তু কামড়ে দেছ।আঙ্গুল গুলো গেলো আমার।পরে দেখা যাবে কামড়ানো আঙ্গুল দেখে কেউ বিয়ে করবে না।”
আসমা হাতটা মুখের ভেতরে পুরে নিয়ে একটা জোড়ে কামড় বসিয়ে দিলো।রামিম চেঁচিয়ে উঠল।হাতে ফু দিতে শুরু করল।এই দৃশ্য দেখে আসমা হু হু করে হাসলো।রামিম বাম হাতে মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,” অসভ্য মাইয়া।”
আসমা ভুল করে মুখ ফসকে বলে ফেলল,” যেমনই হইনা কেনো তোরই তো বউ।”
কথাটা বলে আসমা হাসতে শুরু করল।রামিম সহৃদয়ে কথাটা গ্রহন করে নিলো।তারপর আসমান সাথে তাল মিলিয়ে সেও হাসল।ভুল ধরিয়ে দিল না।ভুল তো বলেই নি।তাহলে ধরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে কথা থেকে।দুজনেই হাসি থেকে কুশন ছুড়াছুড়ি করা শুরু করে।ভালোবাসা যেন মারামারিতেই প্রকাশিত হচ্ছে।
_____________________
গমগমে গুমুট পরিবেশকে ছাপিয়ে রিঝ আগে কথা বলল,
“ তুতুল তুমি যাও।”
কথাটা তুতুলের কানে ঝঁন ঝঁন করে বাজল।মুখটা তরিৎ করে ফিরিয়ে একটু উচ্চ কন্ঠে বলল,” যাবো?”
রিঝ পূর্ন্য দৃষ্টি মেলে তাকাল।তুতুলকে ভাল করে দেখে বলল,” যেও।কথা বলো।দেখ কি বলে।নিশ্চুয় খুব গুরুত্বপূর্ন্য কথা আছে।তাই না মিষ্টার ইয়াজ?”
ইয়াজ হতচকিয়ে যায়।অবাক চোখে রিঝের দিকে তাকিয়ে থাকে।রিঝ স্বাভাবিক।ইয়াজের মাথায় বিন্দু বিন্দু করে জমতে শুরু করে ঘাম।তুতুলের মা আমিনা প্রতিবাদ করে বললেন,” ভুলেও না।এই বেয়াদপ ছেলের সাথে আমার মেয়ে কথা বলবে না।ভুলেও তুই যাবি না তুতুল।”
“ কথা বলতে তো সমস্যা নেই কাকি মা।ওকে,আমিও যাবো।দেখি কি কথা বলবে উনি।আপনারা সবাই বাসায় চলে যান।তুতুলকে নিয়ে আমি আসব।”
আমিনা রাজি হতে চাইলনা।রিঝ আসস্থ করল।তারপর বলল,” চলুন মিষ্টার ইয়াজ।”
রিঝ ইয়াজের হাতের কব্জিতে হাত রাখে।ভয়ংকর শক্ত করে ধরে সেই হাত।ইয়াজ ব্যথা অনুভব করে।রিঝের চোখ ঠান্ডা।মুখে মৃদূ হাসি।কেউ বুঝলো না ইয়াজের ব্যথাটা।সব সহজ দেখাল।ইয়াজ নিজে থেকে হাত ছেড়ে দিল।তুতুলের হাতটা সুন্দর করে নিজের হাতে গুঁটিয়ে নিল রিঝ।আঙ্গুল পুরে নিল নিজের আঙ্গুলের ভাঁজে।ধীরজ কন্ঠে বলল,” চল তুতুল।এবার তো ভয় নেই?”
তুতুল হাঁটল।আর কিছুক্ষণ পর পর রিঝের মুখের দিকে তাকাল।রিঝের কোন প্রতিক্রিয়া ঘটল না।সে সহজ স্বাভাবিক।ইয়াজ দাঁড়িয়ে পড়ল।বলল,” আমি শুধু তুতুলের সাথে কথা বলবো বলেছি।”
“ শুধু তুতুলের সাথে কথা হবে আপনার।আমি আপনাদের কথা শুনব না।কিন্তু তুতুলের সাথে যাবো।চলুন।”
সবাই হা করে তাকিয়ে থাকল।সবার সামনে দাপদাপ পা ফেলে তিনজনে চলে গেল।পাশের রেস্টুরেন্টে বসে তুতুল আর ইয়াজ সামনাসামনি।রিঝ বসে দূরে।ইয়াজ প্রথমে রিঝকে একবার দেখে।পিছনে ঘুরে তাকায়।তুতুল ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,” সমস্যাটা কি আপনার??আমার পিছনে ঘুরছেন কেনো??”
“ এভাবে কথা বলছ কেনো তুমি??তুমি তো এভাবে কথা বলোনা??” অবাক গলায় প্রশ্ন করল ইয়াজ।তুতুল বিরক্ত হল।বলল,” সব সময় এক রকম কথা বলতে পারবো না আমি।আপনার সাথে কথাই বলতে ইচ্ছে করছে না।তারপরেও রিঝ ভ আচ্ছা বাদ দিয়ে যা বলার বলুন।তাড়াতাড়ি।যেতে হবে।”
“ এতো তাড়া!” ইয়াজের চোখে একটা ক্ষত দেখা দিল!গভীর ক্ষত!রিঝের দিকে সে একবার ক্ষীপ্ত চোখে তাকাল।রিঝ বুঝতে পেরেও তাকাল না।কফির মগে চুমুক দিল।মুখটা সামনের দিকে ফিরানো।ভাবটা এমন যেন সে কিছুই দেখছে না।ইয়াজ হুট করে তুতুলের হাতটা নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে বলল,” আমি তোমাকে দেখতে কত বার হসপিটালে গিয়ে ছিলাম তুমি জানলে অবাক হবে।প্রতিদিন একবার করে যেতাম।কিন্তু তোমার ভাই আর রিঝ আমাকে কখনো ঢুকতে দিত না।”
তুতুল হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।কাট কাট গলায় সে বলল,” আসল কথা বলুন।”
ইয়াজ থ’ মেরে কিছুসময় তুতুলের দিকে তাকায়।তুতুলের চোখ নিচের কাঁচের টেবিলের উপরে।তরল কন্ঠে ইয়াজ বলল,”রিঝ ভাল ছেলে না।ওর এতো কাছে কেনো থাক তুমি??”
তুতুল ঝাটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,” মাথা ঠিক আছে আপনার??এতো নাটক করছেন কেনো?আর একদম কথায় কথায় হাত ধরবেন না।এসব আমি পছন্দ করি না।এটা তো আপনার আগে থেকেই জানার কথা।”
ইয়াজ আহাত চোখে তাকাল।বলল,” ঠিক আছে বলছি।রিঝ সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ না।ও যা করে সব ঠান্ডা দেখতে হলেও ও মোটেও ঠান্ডা ছেলে না।খুব ভয়ংকর সে।গেম খেলছে সে।যেটা তুমি কখনো ধরতে পারবে না।ওই যে বসে আছে,মনে হচ্ছে কিছু শুনছে না।আমি জানি ও সব শুনছে।প্রচন্ড চালাক ধরনের মানুষ সে।যেমনটা সবার সামনে দেখায় তেমন সে নয়।রিঝ আমাদের সাথে কি করেছে শুনলে ত…”
কথা বলতে বলতে ইয়াজ উত্তেজিত হয়ে পড়ল।তুতুল বাকি কথা শুনল না।খুব রেগে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল।বেশ সহজ গলায় বলল,” দেখুন আপনি কেনো রিঝ ভাইয়ার পিছনে পড়েছেন আমি জানি না।কিন্তু প্লিজ আমাদের থেকে দূরে থাকুন।আপনার সাথে আমার বা আমাদের পরিবারের কারো কোনো সম্পর্ক নেই।বিয়ে করেছেন বউ নিয়ে ভাল থাকুন।অন্যের জীবনে নাক গলানো বন্ধ করুন।আপনি তো আমাকে খুব অপছন্দ করতেন তাই না??নিজের মুখের কথা এটা।তাহলে এসব কি হচ্ছে?প্লিজ শুধু শুধু ঝামেলার সৃষ্টি করবেন না।ভালো থাকবেন।”
তুতুলের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ভাবছে,রিঝ ইয়াজের সাথে এমন কি করেছে?সে শুধু শুধু রিঝের পিছনে পড়ে আছে কেন?আশ্চর্য লোক।তুতুল অবাক হল,একটা সময় সে খুব ভেঙ্গে পড়েছিল ইয়াজ যখন বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল।তখন খুব খারাপ লেগেছিল।কিন্তু আজ তার খুব ভালো লাগছে।খুশি অনুভব হচ্ছে।বিয়ে হয়নি ভাল হয়েছে মনে হচ্ছে।তুতুল উৎফুল্ল অনুভব করছে।আনন্দের জোয়ার লেগেছে বুকে।উল্টো রিঝের বিরুদ্ধে বলা কথা গুলো গাঁ জ্বালিয়ে দিচ্ছে।ইচ্ছে করছে ইয়াজের নীল শার্টের কলার ধরে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিতে।দিলে কেমন হয়?তুতুল রিঝের দিকে তাকিয়ে মৃদূ হাসল।জায়গা ছেড়ে সরে এল।ইয়াজ পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,” আমি বিয়ে করিনি।আর আমি আজও শুধু তোমাকেই ভালবাসি।খুব ভালবাসি।একদম আগের মতো।”
চিৎকারের মত শুনতে লাগল কথাগুলো।উপস্থিত সবাই ফিরে তাকাল।সবাই অবাক নয়নে চেয়ে রইল ইয়াজের দিকে।তুতুল হতভম্ভ হয়ে পিছনে ফিরে তাকাল।মুখটা হয়ে পড়ল রক্ত শূন্য।যেন মুখের রগে চলমান সব রক্ত নিমেষে গায়েব হয়ে গেছে।সাদা মুখ ভর্তি দাড়িতে ঢাকা।উজ্জ্বল চোখ জোড়ায় জ্বলজ্বল করছে পানির ঝিলিক।ছোট করে কাটা চুলগুলোও বড় হয়েছে অনেক।কিন্তু আজ তার সহানুভুতি কাজ করছে না কেন?উল্টো কিছুই কাজ করছে না।মুখ দিয়ে কিছু বের হল না।কি বলা উঁচিত সে বুঝল না।কেমন যেন অনুভুতি শূন্য লাগছে নিজেকে।কিছুই অনুভব হচ্ছে না তার।না খারাপ,না ভাল।রিঝ ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসেছে।তুতুলের হাত ধরে তীর্যক চোখে জানতে চাইল,
“ কথা বলা শেষ মি ইয়াজ??”
ইয়াজ হিংস্র চোখে তাকিয়ে রইল।কিছু বলল না।তুতুলের সব কেমন ঘলাটে লাগছে।কিছুই মাথায় ঢুকছে না।সব কেমন ছন্নছাড়া অদ্ভুত ব্যাপার।ইয়াজ সামনে থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেল।তুতুল সেদিকে তাকিয়ে বলল,” উনি কি সব বলে গেলেন।”
“ তুমি বিশ্বাস করনি??”
“ করার মত কিছুই বলেনি।যা বলেছে সব আপনাকে ঘিরে।আচ্ছা আপনার সাথে কি উনার কোন ঝামেলা হয়েছে??”
দুজনেই হাঁটতে শুরু করল।হাতের ভাঁজে হাত রেখে।রিঝ বিড়বিড় করে বলল,” ওর সাথেই তো আমার সবচাইতে বড় ঝামেলা।” তুতুলের কানে কিছুই ঢুকল না।সে চোখ তুলে রিঝের মুখের দিকে তাকাল।রিঝ স্বাভাবিক কন্ঠে পুনোরায় বলল,” হয় তো আমাকে তোমার পাশে দেখে জেলাস ফিল করছে।”
তুতুল সজাগ হয়।বুঝতে পারে রিঝের হাতের ভাজে তার হাত।চট জলদি হাতটা টেনে নেয়।রিঝ দীর্ঘ হাসি হাসল।
রেস্টুরেন্টের বাহিরে এসে তুতুল দেখল সত্যি সত্যি সবাই চলে গেছে।কেউ নেই তারা দুজন বাদে।বেশ অসহায় চোখে রিঝের দিকে তাকালো তুতুল।রিঝ তীক্ষ্ন চোখে ডাইনে বাঁয়ে দেখতে দেখতে বলল,” কি হয়েছে?এভাবে তাকিয়ে আছ কেনো?”
তুতুল ভারী কন্ঠে বলল,” সবাই আমাদের ফেলে চলে গিয়েছে।এখন কি হবে?আর আমার খুব ঠান্ডা লাগছে।”
রিঝ হাসলো।তুতুলের গলায় জড়ানো উড়নাটা নিয়ে মাথা কান,কাঁধময় ছঁড়িয়ে দিল।তুতুল শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল।সাথে রাস্তার পাশের লোকজন।রিঝ তীক্ষ্ন কন্ঠে বলল,” কিছু জিনিসের সঠিক ব্যবহার করতে শিখো তুতুলপাখি।দেখবে ঠান্ডা কেন খারাপ ছোঁয়াও গায়ে লাগবে না।পাখির মত উড়তে কেউ বাধাপ্রয়োগ করবে না।নিজের মাঝে ফুঁটে উঠবে সৌন্দর্যের প্রতিমা।”
তুতুল মনযোগ দিয়ে রিঝের কথাগুলো মাথায় নোট করে নেয়।এটা ছোট বেলার অভ্যাস।রিঝের কথায় একটা অদ্ভুত চমৎকার জাদু আছে!কঠিন বাক্য গুলো সহজে বলে দেওয়ার মত জাদু।রিঝ সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“ কি আর হবে তুমি আমার সাথে যাবে।এমন তো নয় যে আমি তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো।নিজের বউকে কেউ কিডন্যাপ করতে শুনেছ?পাগল একটা।চল।” রিঝ আপন মনে হাসল।তুতুল রিঝের পাশে পাশে হাঁটে।আর বলে,” কথায় কথায় বউ বলবেন না।আমি আপনার বউ নই।”
“ ঠিক আছে রিঝের বউ।সমস্যা নেই।চল।”
তুতুল চোখটা বাঁকিয়ে একবার তাকাল।তারপর আর কিছু বলল না।হাঁটতে ভাল লাগছে।তাই গাড়ি নিলনা রিঝ।প্রেয়সীকে পাশে নিয়ে হাঁটার আনন্দ যে এতো প্রবল সে আগে কখন অনুভবই করে নি।কিছু অনুভুতি বড় হৃদয় কাঁপান হয়!অর্ধেক রাস্তায় এসে তুতুল বায়না ধরলো ফুচকার।রিঝ বিনা বাক্য নিয়ে গেলো দোকানের সামনে।বেঞ্চি পাতা দোকানের সামনে।সেখানে বসল দুজনে।একটি মহিলা দোকান চালাচ্ছে।পাশে তার স্বামী।মুখটা শীর্ণ,কৃষ্ণ রং গায়ের।সবাইকে এগিয়ে দিচ্ছে প্লেট।তুতুল কড়া ঝাল দিয়ে ফুচকা নেয়।খেতে বসে কাঁদে দেওয়ার মত অবস্থা।রিঝ পানি নিয়েই বসে ছিলো।বলল,” যেটা খেতে পারো না কে খেতে বলে তোমাকে?”
“ আপনাকে কে বলেছে আমি পারি না?উল্টো আপনি পারেন না।ঝাল খেতে গেলেই মরে যাই মরে যাই টাইপের অবস্থা।”
“ সিরিয়েসলি!আমি পারি না?শুনো মেয়ে আমি কি কি পারি তুমি তো জানোই না।এখন দেখবে আমি খাবো।”
রিঝ একটা ফুচকা গালে পুরে নেয়।কাহিনী সেখানেই শেষ।চোখ লাল!মুখ লাল!আগুন হয়ে সে তাকিয়ে থাকে তুতুলের দিকে।কিছুই বুঝে না তুতুল।সেও সমান তালে তাকিয়ে থাকে।একটা সময় রিঝের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে পানির ফোটায়।চোখে পড়ে তুতুলের।দ্রুত পানি দেয়।পানিতেও হয় না।দূরে হেঁটে আইসক্রিম নিয়ে আসে।তারপর জোর করে রিঝের মুখে পুরে দেয়।রিঝের এমন করুন নাজেহাল অবস্থা দেখে তুতুল বেহুশের মতো হাসে।হাসতে হাসতে বেঞ্চ থেকে পরেও যায়।তবুও হাসি থামায় না।রিঝ চোখ রাঙ্গিয়ে তুতুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর ফিক করে সেও হেসে দেয়।
“ আপনি যে এতো কম ঝালে কান্নাকাটি করে উড়ে যাওয়ার মত অবস্থায় পড়বেন আমি ভাবতে পারিনি।” হাটতে হাটতে বলল তুতুল।সাথে তার দীর্ঘ ঠোঁটের হাসি।রিঝ কিছু বলল না।সত্যি ঝালটা ছিলো ঝাঁঝালো।কোথা থেকে উড়ে আসে এক কুকুর।তুতুল প্রচন্ড ভয় পায় কুকুর।ঘেউ ঘেউ করতেই সামনে চলতে গিয়ে আচমকা ভয়ার্তস্বর করে থমকে দাঁড়িয়ে গেল তুতুল।আইসক্রিম হাতে কাঁপতে লাগল থরথর করে।কাঠের মত দাঁড়িয়ে কুকুরের আর্তনাদ ভরা চিৎকার কান পেতে শুনতে লাগল রিঝ।পাশ থেকে আচমকা রিঝের হাত চেপে ধরল তুতুল।পিছনে লুকিয়ে পড়ে বলল,” এটাকে সরিয়ে ফেলন।আমার ভয় করে।”
রিঝ কৌতুক হাসল।বলল,” নড়বে না।যেভাবে দাড়িয়ে আছ থাক।ও নিজে থেকেই চলে যাবে।বেশি নড়াচড়া করলে পরে দেখা যাবে সে ভয় পেয়ে তোমাকে কামড়ে দিবে।”
তুতুল আরো নিবির ভাবে রিঝের হাতটা ধরল।ভয়ে হৃৎপিন্ডের ঢোল পিটানো শব্দ রিঝের কান অব্দি আসছে।রিঝ ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসল।শব্দ হলেই যেন বিপদ!কুকুরটা কিছুক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে চলে গেল।কিন্তু তুতুল চোখ বুঝে পিছনেই দাড়িয়ে রইল।নির্মেঘ কুয়াশা বিহিন পথটা দেখতে খুব আকর্ষনীয়।ঝর্ণাধারার মত বেয়ে পড়ছে দুরের অর্ধঅকৃতির চাঁদের আলো।সেই মায়াবী আলোর ছোঁয়ায় রাস্তা হয়ে উঠে রূপের মায়ানগর।তুতুলের হাত রিঝের হাতের ভাঁজে।দুজনেই পাশাপাশি হাঁটছে।বুকের মধ্যে এক বিচিত্র অনুভুতি।যেন মন বলছে উড়তে চাই হাজার প্রজাপতির ন্যায়।আগে অনেক বার হেঁটে ছিল এই পাশটা ঘেঁষে।এতো ভালো তখন লাগত না।হয় তো লাগল।কিন্তু তখন তার কোন বহিঃপ্রকাশ ছিল না।এই মানুষটার কথায় বা ভাবে ভালোবাসার অভাস টুকু প্রকাশ পায়নি কখন।হঠাৎ করে এলো।ঝড়ের মত।ভালোবাসি বলে যেন আগলে নিল।এ কেমন ভালোবাসা?হঠাৎ বৃষ্টির মত ভিজিয়ে করেছে ধূলিসাৎ।কি আশ্চর্য লোক এই মানুষটা।বিপদে সব সময় ঢাল হয়ে দাড়িয়েছে।এমনই কি হয় ভালোবাসা?তাহলে এই ভালোবাসা তুতুল চায়,যে কোন কিছুর বিনিময়ে।এই লোকটার সাথেই একটা সময় তার মতের সবচাইতে বেশি অমিল ছিল।আজ তার মতটাই যেন হয়ে উঠেছে সে।ভালোবাসার গতি বড় বিচিত্র!
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।