সাইকো_লাভার পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম
রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি আমি আদি,চাচ্চু আর রায়ান ভাইয়া,,,রিয়াজ ভাইয়া আর সাথী আপুর ডেড বডি আর ওদের সাঙ্গু পাঙ্গুদের রায়ান ভাইয়ার টিম ধরে নিয়ে গেছে।রায়ান ভাইয়াও চলে যাচ্ছিল কিন্তু আমিই রেখে দিয়েছি,,,জায়গাটা খুব সুন্দর তাই গাড়ি নিয়ে আসি নি হেঁটেই যাচ্ছি,,,আর কলার কাদিটা আমার সাথে চিপকে আছে,,,মনে হচ্ছে পাশ থেকে সরলেই আমাকে তুলে কেউ নিয়ে যাবে,,,চাচ্চু মুখ টিপে হাসছে।
দিয়াঃ একটু দূরে গিয়ে হাঁটুন না,,,চাচ্চু আর রায়ান ভাইয়াও আছে এখানে।(ফিসফিসিয়ে)
আদিঃ ত কী হয়েছে থাকুক,,,আমি ত আমার বউয়ের সাথে হাঁটছি।
বলেই আমার হাত ধরে ফেলল আমি রাগি চোখে আদির দিকে তাকাতেই ও এক চোখ টিপ দিল।আদিকে কিছু বলে লাভ নাই,,,তার চেয়ে ভালো আদিকে একটু জ্বালাই।
দিয়াঃ রায়ান ভাইয়া,,,তুমি না বলেছিলে আমাদের বাড়িতে দোলনা বানিয়ে দিবে।
কথাটা শুনে আদি আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল।
রায়ানঃ হে বলেছিলাম কিন্তু নানা ঝামেলায় আর করা হয়ে উঠে নি,,,এখন কোথাও দোকান পেলে ভালো রসি কিনে নিয়ে নিব আর কালকে গিয়ে বানিয়ে দিয়ে আসব নি।(হেঁসে)
আদিঃ রসি দিয়ে বানানোর কী দরকার ভালো দোলনা কিনে আনলেই ত হয়,,,এখন কত সুন্দর সুন্দর নানা ধরনের ডিজাইন করা দোলনা পাওয়া যায়।আমি তোমাকে সেখান থেকে সুন্দর একটা দোলনা এনে দিব।(দাঁতে দাঁত চেপে)
দিয়াঃ না না না,,,আমার ঐ রসি দিয়ে বানানো দোলনাই চাই।
চাচ্চুঃ দিয়া এসব না করে তোর জন্য বরং একটা নাগর দোলা নিয়ে আসি তখন সারাদিন নাগর দোলায় হাওয়া খাস বাড়িতে কী বলিস।
দিয়াঃ নননননননননননননা🔊🔊🔊।
আমার চিৎকার শুনে সবাই কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আদিঃ উফফ আল্লাহ আমার কান গেলো,,,এভাবে চেঁচালে কেন?
রায়ানঃ দিয়া তোমার কী হয়েছে এভাবে চিৎকার কেন করলে?
চাচ্চু কিছু না বলে হেঁসে চলেছে,,,আমি আমাদের থেকে কিছুটা দূরে একটা পেয়ারা গাছ দেখতে পেলাম তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে উঠলাম।
দিয়াঃ চাচ্চু ঐখানে দেখো একটা পেয়ারা গাছ,,,চলো পেয়ারা পারব।
চাচ্চুঃ দিয়া এখানে কেউ নেই তাই না বলে পারলে সেটা চুরি হবে,,,তাই চুপচাপ কোন দুষ্টুমি না করে চল এখান থেকে।
আদিঃ আরে চাচা শ্বশুর মিয়া দিনের বেলা চুরি হয় নাকি রাতের বেলা চুরি করলে চুরি হয়।(এটা লেখিকার বড় ভাইদের কমন ডায়লগ🤣)। দিয়া চলো আমার সাথে পেয়ারা পারবা না তুমি।
আমি ত খুশিতে গদগদ হয়ে আদির সাথে যাচ্ছি আর আদির ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
আদিঃ নাও এবার যতখুশি পেয়ারা খাও।
দিয়াঃ কিন্তু আমি ত নাগাল পাব না,,,তুমি পেরে দাও না।
আদিঃ আমি পারতে পারব না,,,আর নিজে পেরে পেয়ারা খেলে সেই স্বাদ দ্বীগুন বেড়ে যায়।
দিয়াঃ সত্যি। (আদির কথা বিশ্বাস করে খুশি হয়ে)
আদিঃ হে সত্যি।(বাঁকা হেঁসে)
দিয়াঃ কিন্তু আমি ত নাগাল পাব না।(মুখটা ছোট করে)
আদিঃ কোন সমস্যা নাই আমি ডালটা ধরে নিচু করছি তুমি পেরে নাও।
দিয়াঃ ঠিক আছে তবে।
বলার পরেই আদি একটা মোটা ডাল ধরে নিচু করল,,,গাছটা মোটামুটি বড়ই আর গাছে অনেক পেয়ারা আছে,,,আদি ডালটা নিচু করতেই আমি পেয়ারা পারতে নিলেই আদি ডালটা আবার উপরে তুলে নেয়,,,আর আমি লাফ দিয়েও নাগাল পাই না,,,এরকম আদি কয়েকবার করার পর খুব রাগ উঠে গেলো,,,আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি জনাব এটা ইচ্ছে করেই করছে,,,কিন্তু আমিও ছাড়ার পাত্রী নই তাই কয়েকবার লাফ দেয়ার পর একবার নাগাল পাই তখন আদির হাতেই ডালটা ছিল।আমি ধরার সাথে সাথেই বজ্জাতটা ডাল ছেড়ে দিল আর আমি গাছে ঝুলে গেলাম।
দিয়াঃ আম্মু গো বাঁচাও 🔊🔊।
আমি ডালটা শক্ত করে ধরে ঝুলে থেকেই চিৎকার করছি।আমার চিৎকার শুনে চাচ্চু আর রায়ান ভাইয়া সেখানে আসল অরা একটু দূরে দাড়িয়ে ছিল।আমার এ অবস্থা দেখে আদি হেঁসে কুটিকুটি।বজ্জাত কলার কাদি একবার খালি নামি দেখিস তকে কাঁটার বর্তা করে খাওয়াব।
চাচ্চুঃ আরে তুই ওখানে এভাবে বাঁদরের মত ঝুলছিস কেন?
আদিঃ চাচা শ্বশুর মিয়া আপনার ভাতিজীর উপযুক্ত স্থান ওখানেই,,,খালি বাঁদরামি করে,,,এখন ওখানেই ঝুলে থাকুক।(হাসতে হাসতে)
রায়ানঃ আরে দিয়া ত পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবে,,,দিয়া তুমি ডালটা শক্ত করে ধরো আমি নামাচ্ছি তোমাকে।
আদিঃ না কেউ যাবে না দিয়াকে নামাতে,,,এটা অর শাস্তি খুব শয়তানি করে।
রায়ানঃ কিন্তু,,,
আদিঃ কোন কিন্তু নয় তুমি চাচ্চুকে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটো আমি দিয়াকে নিয়ে একটু পর আসছি।
দিয়াঃ না যাবে না তোমরা,,,রায়ান ভাইয়া তুমি যেও না,,,আমাকে নামাও প্লিজ,,,আমি এভাবে ঝুলে থাকলে আমার কিছু হবে না কারন আমি স্ট্রং গার্ল।(ভাব নিয়ে)
কিন্তু এই গাছটার কথা একটু চিন্তা করো,,,গাছ বেচারার ত কষ্ট হচ্ছে প্লিজ গাছটাকে বাঁচাও।
চাচ্চুঃ চিপায় পড়ছে নিজে অথচ সেটা স্বীকার করবে না এখনও নিজেকে ভাগিনী প্রমান করতে চাইছে।
আদিঃ চাচা শ্বশুর মিয়া আপনারা যান আমি নিয়ে আসছি।
দিয়াঃ চাচ্চু তুমি যেও না এই কলার কাদির কাছে রেখে যেও না আমাকে,,,আমাকে এভাবেই ঝুলিয়ে রাখবে বজ্জাতটা,,,ঐ রায়ান ভাইয়া গো যাইয়ো না তুমি।
আমার কথা না শুনে তারা সামনে এগিয়ে গেলো।আর আমি এখনও গাছে ঝুলে আছি,,,এবার কান্না পাচ্ছে।
আদিঃ খুব শখ না দোলনায় চড়ার এখন ঝুলে থাকো।খালি রায়ান ভাইয়া রায়ান ভাইয়া করা এবার বুঝো মজা।
দিয়াঃ তোমার বউ এভাবে ঝুলে আছে আর তুমি মজা নিতাছো হে,,,ব্রেকআপ দিব তোমাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য।
আদি আমার কথা শুনে হো হো করে হাসতে লাগল,,,রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,,,হাতও ব্যাথা হয়ে গেলো।এভাবে কতক্ষণ ঝুলে থাকা যায়,,,লাফ দিয়ে নামলেই কোমড়টা ভাঙ্গবে অনেকটা উঁচুতে ঝুলাইছে শয়তানটা।
আদিঃ দিয়া তুমিও না মাঝেমধ্যে এমন সব কথা বলো যে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।(হাসতে হাসতে)
দিয়াঃ হাসা বন্ধ করো নয়ত তোমার দাঁতগুলো আমি হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গব।
আদি আবারও হাসতে লাগল,,,এবার আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই দিলাম।আদি আমার কান্না দেখে হাসি থামিয়ে বলল,,,
আদিঃ কান্না থামাও দিয়া,,,নামাব তোমাকে প্লিজ কান্না থামাও।
দিয়াঃ তাড়াতাড়ি নামাও আমাকে।
আদিঃ নামাব তবে একটা শর্ত আছে।
দিয়াঃ কী শর্ত?
আদিঃ আমাকে একটা মিষ্টি দিতে হবে।
দিয়াঃ একটা কেন যতটা খেতে চাইবে ততটা মিষ্টি খাওয়াব এবার প্লিজ নামাও আমাকে।
আদিঃ শিয়োর ত।
দিয়াঃ হ রে ভাই শিয়োর,,,এবার ত নামা আামকে।
আদি আর কিছু না বলে গাছের ডালটা ধরে নিচু করে আর আমিও ডালটা ছেড়ে মাটিতে দাঁড়াই। আর নেমেই আদিকে ধাম ধুম কয়টা কিল বসিয়ে দেই,,,আদি হাসতে হাসতে আমার হাত দুটো আটকে বলল,,,
আদিঃ এবার আমার মিষ্টি দেও।
দিয়াঃ মিষ্টি এখানে কই পাব,,,সামনে চলো গিয়ে দেখি কোন মিষ্টির দোকান আছে কী না সেখানে গিয়ে মন ভরে মিষ্টি খেও।
আদিঃ বেক্কল মার্কা পোলাপান আমি দোকানের মিষ্টির কথা বলি নি আমি চুমু দেয়ার কথা বলছি।(বিরক্ত হয়ে)
আমি আদির কথা শুনে পুরাই টাস্কি খেলাম,,,কয় কী এই ছেরায়।
দিয়াঃ আমি চুমু টুমু দিতে পারব না।হাত ছাড়ো চাচ্চুর কাছে যাব।
আদিঃ জানিই তুমি দিবে না তাই আমার মিষ্টি আমিই নিয়ে নিব।
বলেই আদি আমার কপালে,গালে ভালবাসার পরশ একে দিল,,,আমি চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।একটু পর আদি আমাকে ছেড়ে দাঁড়াতেই আমি এক দৌড় দিয়ে চলে এলাম,,,আদি সেটা দেখে হাসতে হাসতে আমার পিছন পিছন আসছে।
#চলবে…
(আজ একটু বিজি ছিলাম তাই দেরি হল গল্প দিতে,,,সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
❤HAPPY NEW YEAR 2021❤
রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে যাতে সূর্যের দেখা মিলে এই নতুন বছরে,,,নতুন বছর সবার হাসি খুশিতে কাটুক এ দোয়াই করি)