দেশলাই ২৬ পর্ব
– ‘চল এবার যাই।’
ইলি মাথা তুলে তাকিয়ে বলে, ‘এখনই চলে যাবে?’
– ‘তাহলে কি করবি এখানে?’
– ‘আরও কতকিছু দেখার বাকি আছে।’
রাফসান চারপাশে তাকিয়ে বললো,
– ‘এখানে কি আছে আর দেখার মতো?’
ইলি ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘ও সরি৷ তুমি বলছো এখান থেকে বের হতে, আমি ভেবেছিলাম উদ্যান থেকে চলে যেতে বলছো।’
– ‘আরে না, এতো মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তাও আবার শাড়ি পরা নারী আছে পাশে আমি বাসায় যেতে ব্যস্ত হবো কেন?’
– ‘কারণ তুমি অনূভুতিহীন রোবট মানব।’
– ‘এই অপবাদ কি এখন আর দেয়া ঠিক হবে?’
ইলি মুচকি হেঁসে ওর হাত ধরে বললো,
– ‘চলো অন্যদিকে যাই।’
দু’জন এখান থেকে বের হয়ে উদ্যানের ভেতরের ট্রেনের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। রাফসান ইলির দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘রোবট, পাথর, রসকষহীন পুরুষ এইসব অপবাদ থেকে আমাকে মুক্তি পেতে হলে কি করতে হবে ম্যাডাম?’
ইলি কথাটির জবাব না দিয়ে ওর চুলে আঙুল চালিয়ে ঠিকঠাক করে দিয়ে বললো, ‘পাঞ্জাবিতে তোমাকে আজ দারুণ লাগছে।’
– ‘আমার প্রশ্নের জবাব তো পেলাম না।’
– ‘তুমি আজ অনেক সুন্দর করে কথা বলছো। তবুও আগের মতো আবার বই পড়া শুরু করবে প্লিজ?’
– ‘কেন? বই না পড়লে কি মানুষ সুন্দর করে কথাও বলতে পারে না?’
– ‘আমি এতোকিছু জানি না। আমি আরকি চাই আমার বরটা বই পড়ুয়া হোক।’
– ‘আগে তো পড়তাম।’
ইলি আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে ওর কাঁধে মাথা রেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
– ‘হ্যাঁ, আমি নিজেই তোমার কাছ থেকে বই পড়া শিখেছিলাম। কিন্তু ইন্তিশার বাচ্চা আমার বরটাকে যা-তা বানালো।’
– ‘তাহলে রোবট, পাথর, রসকষহীন এসবের সাথে যা-তা যোগ হলো?’
– ‘এই তুমি মেয়েদের মতো কথা প্যাঁচানো কোত্থেকে শিখছো?’
– ‘জানি না, তবে এক রূপবতীর প্রভাব পড়লে পড়তেও পারে আমার উপর।’
– ‘বাজে কথা বলবে না। আমার কথা প্যাঁচানোর স্বভাব নেই।’
– ‘আমি তোকে বলছি কীভাবে বুঝলি? নিজেকে রূপবতী ভাবা শুরু করেছিস না-কি?’
ইলি কাঁধ থেকে মাথা তুলে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো, ‘তুমি আসলেই একটা রসকষহীন খাটাশ পুরুষ।’
রাফসান ‘হা-হা’ করে হেঁসে উঠে ইলিকে আবার টেনে কাছে এনে বললো, ‘সরি, রসিকতা করেছিলাম। তুইতো আসলেই রূপবতী৷’
ইলি আবার খুশিতে গদগদ হয়ে কাঁধে মাথা রেখে বললো, – ‘কেমন রূপবতী?’
– ‘পুরুষ মানুষের চরিত্র নষ্ট করার মতো।’
ইলি আবাক চোখে রাফসানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে প্রশংসা না-কি অপমান করা হলো।
– ‘এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?’
– ‘পুরুষ মানুষের চরিত্র নষ্ট করার মতো রূপবতী মানে?’
– ‘মানে অধিক সুন্দর আরকি৷’
– ‘কথা অন্যদিকে নিবে না। বলো কি বুঝাতে চাইছো। পুরুষ মানুষের চরিত্র নষ্ট করার মতো আমি না৷ যদি হতাম তাহলে তুমি চরিত্রহীন হতে।’
– ‘হয়েছি।’
ইলি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, – ‘রহস্য করো না তো। সোজাসাপটা বলো কি বলতে চাও। আমি তোমার ইন্তিশার মতো না ছেলেদের চরিত্র নষ্ট করবো।’
রাফসান মুচকি হেঁসে ওর পিঠের দিকে হাত নিয়ে ধরে বললো,
– ‘রেগে যাচ্ছিস কেন?’
ইলি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘আমাকে আদর করতে ইচ্ছা করছে তাই না?’
রাফসান ডান হাতে ওর মাথায় গাট্টা মারে,
– ‘এভাবে বলিস কেন? আদর পেলেও লজ্জায় পালাবে।’
ইলি ফিক করে হেঁসে পেছন থেকে রাফসানের হাত টেনে নিজের পেটে রেখে ওর কাঁধে আবার মাথা হেলে দেয়।
তারা এভাবে অনেক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে ট্রেনের রাস্তা ফেলে কখন যে বন অধিদপ্তর অফিসের সামনে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি। আরেকটু সামনে যেতেই ইলি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, ‘ওই যে দেখা যায় টিলায় কেন্টিন। চলো কফি-টফি কিছু খেয়ে আসি।’
– ‘আচ্ছা চল।’
দু’জন টিলায় উঠতে থাকে। সুন্দর করে মাটি কেটে সিঁড়ির মতো রাস্তা করা হয়েছে। দুই পাশে চা পাতার গাছ। কেন্টিনের পরিবেশও ঝকঝকে সুন্দর। দু’জন কফি অর্ডার দেয়। টেবিলের ওপর পাশে রাফসান বসেছে। ইলি বারংবার তাকাচ্ছিল। বুকটা শিরশির করছে। মানুষটাকে আজ এতো মায়াবী লাগছে কেন? চুলগুলো একপাশে ফেলা। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বেগুনি কালার পাঞ্জাবির হাত গুটানো। বাঁ হাতে ঘড়ি। ইলি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে একটা ছবি তুলে নিলো।
– ‘ছবি তুলেছিস?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘দে তোর তুলে দেই।’
– ‘উদ্যানের অন্য জায়গার তুলনায় এখান এতো সুন্দর না যে ছবি তুলতে হবে।’
– ‘তাইলে আমার তুললি কেন?’
– ‘এতো কথা বলবে না তো, মানুষ তাকাচ্ছে।’
– ‘ও আচ্ছা।’
– ‘কফি এলো।’
রাফসান কফিতে চুমুক দেয়। বুকের ভেতর সারাক্ষণ কেমন ওম লেগে আছে। অগোচরে ইলিকে নিয়ে সেখানে একটা আশার বাসার নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। কফি শেষ করে তারা আবার নিচে নামে। ইলি ওর হাত ধরে হাঁটে। রাফসান ওর মুখের দিকে খানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে অস্ফুটে বললো, ‘অসহ্য।’
ইলি ভ্রু কুঁচকে হাত ছেড়ে দেয়। তারপর ম্লান মুখে বললো, ‘সরি।’
– ‘কেন?’
– ‘হাত ধরলে এরকম বিরক্ত হও বলোনি কেন?’
– ‘কে বলছে বিরক্ত হই?’
– ‘এই যে হাত ধরার পর ‘অসহ্য’ বললে?’
রাফসান মুচকি হেঁসে ওকে কাছে টেনে চোখে চোখ রেখে গালে হাত দিয়ে বললো, ‘অসহ্য বলেছি অন্য কারণে৷ বিয়ের আগে আর শাড়ি পড়বি না। অসহ্য লাগে। আর চুলগুলো এমনভাবে একপাশে করে সামনের দিকে ফেলেছিস আমি তো খুন হয়ে যাবো।’
– ‘অ্যাঁ, সব মিথ্যে কথা। আমি কেন্টিনে থাকতে আপনাকে নিয়ে উল্টো এগুলো ভেবেছি। এখন আমাকে বলা হচ্ছে।’
– ‘কি ভেবেছিস?’
– ‘কিযে সুদর্শন লাগছিল আপনাকে। ইচ্ছে করছিল বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখি।’
রাফসান মুচকি হেঁসে তাকায়, ‘আচ্ছা তুই আমাকে হঠাৎ “আপনি” বলিস কেন?’
– ‘এগুলো খেয়াল করবেন না তো।’
– ‘কেন?’
– ‘আমার কেন জানি আপনি ডাকতে ভালো লাগে। আবার কেউ আমাকে “তুই” করে বললে খারাপ লাগে।’
– ‘আচ্ছা বিয়ের আগ পর্যন্ত আড়ালে ‘তুমি’ করে বলবো, ঠিকাছে?’
– ‘আচ্ছা। কিন্তু আমি ‘আপনি’ বললে কি খারাপ লাগে?’
– ‘ভালো খারাপ কিচ্ছু লাগে না। বাট তোর ভালো লাগলে ডাকিস।’
– ‘আবার কিন্তু ‘তোর’ বললেন।’
– ‘ধীরে ধীরে ঠিক হবে।’
ইলি আবার ওর হাত ধরে কাঁধে মাথা ফেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘ইশ যদি কোনোভাবে আপনার সাথে বিয়েটা হয়ে যেতো।’
– ‘এভাবে বলিস না তো। তুই ইচ্ছা করে নিজেকে আমার কাছে ছোট করিস কেন?’
– ‘ভালোবাসার মানুষের কাছে ছোট হতেও ভালো লাগে।’
– ‘তুই অনেক কাব্যিক হয়ে গেছিস।’
– ‘হওয়ার কারণ আছে। আমি তো দীর্ঘদিন বিরহ যন্ত্রণায় ভুগেছি। জানো? আমার নোটে কত কথা লেখা সে সময়কার? তুমি যখন ইন্তিশার সাথে রিলেশনে ছিলে।’
– ‘আচ্ছা একদিন পড়বো।’
– ‘অ্যাঁ এগুলো কখনও দেখাবো না আপনাকে।’
– ‘আচ্ছা, দেখাতে হবে না।’
– ‘আচ্ছা রাফসান ভাই৷ আব্বা-আম্মার পা ধরে কাঁদলেও কি হৃদের সঙ্গে বিয়ে ভাঙবেন না?’
– ‘এভাবে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিস কেন? শুধু মুখে বললেও ভেঙে দিতে পারেন। তারা তো মেয়ের সুখ চাইবেন।’
– ‘হ্যাঁ, আমি জানি একটু বকাঝকা করলেও রাজি হবেন।’
রাফসান মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকায়। নিজের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য এদিক-ওদিক তাকানো। আচমকা তার চোখে পানি এসে যাচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না। তবে ইলির ভালোবাসার গভীরতা সে টের পাচ্ছে। ওর বুকের ভেতর ভালোবাসার সমুদ্র কত বড়ো কে জানে। তার জন্য এতো ভালোবাসা গোপন করে কীভাবে চললো এতোদিন? একটা মানুষকে মানুষ এভাবেও ভালোবাসতে পারে না-কি? চোখটা তার জলে ভরে যাচ্ছে৷ শেষপর্যন্ত রাফসান ঝাপসা চোখ গোপন করতে সফল হয়ে বললো,
– ‘ইলি।’
– ‘হু।’
– ‘তুই আমাকে না পাওয়ার ভয় পেতে শুরু করেছিস, তাই না?’
– ‘পাই একটু একটু। তবুও বিশ্বাস করি স্রষ্টা বলতে তো একজন আছেন। তিনি আমাকে এতো কষ্ট দেবেন না।’
রাফসান ইলিকে কাছে টেনে আরেকটু ঘনিষ্ট হলো, ইলি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
– ‘যে কষ্ট আমি সইতে পারবো না। করুণাময় কেন আমাকে সেই কষ্ট দেবেন রাফসান ভাই?’
– ‘ইলি তুই মুখে যতই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলছিস। ভেতরে ভেতরে কিন্তু অনেক ভয় পাচ্ছিস স্পষ্ট এখন বুঝতে পারছি। এতো ভয়ের কিছু নাই। দেখিস বুঝিয়ে বললে হৃদের সাথে বিয়ে ভেঙে মামা-মামীরা রাজি হয়ে যাবেন।’
– ‘হ্যাঁ, অবশ্যই রাজি হবেন। আমার আপন বাবা-মা আমাকে একটু বুঝবেন না? দরকার হয় পায়ে ধরে কাঁদবো।’
– ‘হ্যাঁ, অবশ্যই রাজি হবেন। এগুলো নিয়ে ভেবে ভয় পাচ্ছিস কেন অযথা। যা হবার হবে।’
দু’জন ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখে বাড়িতে ফিরে এলো সন্ধ্যায়। আসার সময় খেয়াল করে রাফসান তার সিমকার্ড তুলে এনেছে। রুমে বসে রাতেই ভিডিয়ো কলে কথা হলো তিনজন চাচার সঙ্গে। তারা নানান কারণে রেগে আছেন৷ অসংখ্য অভিযোগ আছে৷ তবুও ভাতিজার জন্য সীমাহীন দূর্বলতা। কথা বলার পর পরই সব রাগ অভিযোগ যেন বানের জলের সাথে নর্দমায় ভেসে গেছে।
রাফসানকে জিজ্ঞেস করেন কি করতে চায় এখন। সে জানালো দেশে কোন ব্যবসা করার কথা ভাবছে। তারা তিনজনই বেশ খুশি হলেন। কারণ বাড়িতে একজন পুরুষ মানুষ থাকা দরকার। সুতরাং দেশে কি ব্যবসা করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে বললেন। এদিকে আগের স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে কারও নেই। বড়ো ভাইয়ের একমাত্র সন্তান। তাঁর বংশের প্রদীপ জ্বলুক তারা সকলেই চায়। চাচাদের সঙ্গে কথা বলে রাফসান বেশ চিন্তামুক্ত হলো। এখন শুধু ব্যবসা করে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে। তবে একটাই চিন্তা, ইলি হৃদের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে দিতে পারবে তো? মামা-মামীকে মানাতে পারবে তো?
রাফসানের কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে পারবে। ইলির কথা মামা-মামী ফেলতে পারবেন না। রাফসানের মনের অলিগলিতে যেন রঙিন প্রজাতি উড়তে শুরু করেছে। মনটা আগের মতো নিজের সজীবতা ফিরে পেয়েছে। একটা সুস্থ-সুন্দর প্রেমময় জীবনের জন্য মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইলি গেল কোথায়? ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। রাফসান বিছানা থেকে নেমে দেখলো খালা ছাড়া ওখানে কেউ নেই। সে রান্নাঘরের দিকে উঁকি দেয়। ভাবী রান্না-বান্না করছেন। ইলি বুকে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।
ডাক দেবে না-কি তাদের সঙ্গে যোগ দেবে ভেবে পাচ্ছে না। আমতা-আমতা করে আবার ফিরে যায় রুমে। বিছানায় গা হেলিয়ে দিতেই ইলি দরজার কাছে এসে বললো,
– ‘কি করছো?’
রাফসান আধশোয়া হয়ে তাকিয়ে বললো, – ‘এদিকে বস এসে, তোকে না রান্নাঘরে দেখে এলাম?’
ইলি পালঙ্কের একপাশে বসতে বসতে বললো,
– ‘তুমি রান্নাঘরে গিয়েছিলে না-কি?’
– ‘অ্যাঁ, আমাকে দেখে এসে ন্যাকামি করছিস।’
– ‘না তো আমি দেখিনি। হঠাৎ মনে হলো তুমি কি করছো দেখি গিয়ে, তাই এলাম।’
– ‘আমি তোকে খুঁজতেই গিয়েছিলাম, গল্প করছিস দেখে ফিরে এসেছি।’
– ‘ও আচ্ছা। কেন খুঁজছিলে?’
– ‘এমনিতেই।’
ইলি ফিসফিস করে বললো, ‘আমরা এক রুমে বসে গল্প করলে ওরা ভালোভাবে না নিতেও পারে। আমি ফুপুর পাশে শুয়ে তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিচ্ছি।’
– ‘আচ্ছা।’
ইলি পারভীন বেগমের পাশে শুয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো, ‘শরীর খারাপ লাগছে না-কি ফুপু?’
তিনি গোঙানির সুরে বললেন, ‘হ দূর্বল লাগতাছে।’
– ‘ও তাইলে শুয়ে থাকো।’
ইলি হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে রাফসানকে মেসেজ দিলো, ‘তুমি কেন খুঁজছিলে সত্য করে বলো তো?’
সঙ্গে সঙ্গেই মেসেজ সিন হয়ে টাইপিং দেখিয়ে মেসেজ এলো,
– ‘হঠাৎ তোকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই।’
– ‘মিথ্যে না-কি আসলেই দেখতে ইচ্ছা করছিল?’
– ‘আসলেই।’
– ‘তুমি কি টেলিপ্যাথি বিশ্বাস করো?’
– ‘টেলিপ্যাথি কি?’
– ‘টেলিপ্যাথি হচ্ছে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে মনের ক্ষমতায় বার্তা পৌঁছে যায়।’
– ‘আজগুবি কথা বলিস না তো।’
– ‘আরে আজগুবি না৷ বিজ্ঞানীরাও সমর্থন করে।’
– ‘এটা কীভাবে হয়?’
– ‘আমি এতো ডিটেইলস জানি না। তবে অনেক সময় দেখা যায় আমরা কারও সম্পর্কে ভাবছি হঠাৎ তার কল বা মেসেজ এসে যায়। একেই বলে টেলিপ্যাথি।সবচেয়ে বেশী কাজ করে মা ও সন্তানের ক্ষেত্রে।
প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রেও এটা ভাল কাজ করে। ঐ প্রান্তে যদি প্রেমিকা তোমার জন্য পাগলপাড়া হয়, এ প্রান্তে তোমার হৃদয়ও তার জন্য কাঁদবে যদি সত্যিকার প্রেম হয়।’
– ‘আজগুবি কথাবার্তা।’
– ‘আজগুবি না তো। ধর্মেও আছে। বিজ্ঞানও এখন সমর্থন করছে এগুলো।’
– ‘তাহলে বলতে চাচ্ছিস একটু আগে আমাদের মধ্যে টেলিপ্যাথি হয়েছে?’
– ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’
– ‘কি যে বলিস। মেয়ে মানুষরা আরও কত কি বিশ্বাস করে।’
– ‘তোমার মাথা করে। এগুলো সবাই জানে শুধু তুমি জানো না।’
– ‘হা-হা-হা। আচ্ছা শোন। চাচাদের সাথে ভিডিয়ো কলে কথা হয়েছে।’
– ‘তাই না-কি? কি কথা হলো?’
– ‘এইতো দেশে ব্যবসা করার কথা বললাম। তারা খুশি মনেই মানলেন।’
– ‘ওয়াও, খুশির সংবাদ।’
– ‘হুম।’
– ‘আমাদের সবকিছু কত সহজে হচ্ছে। দেইখো আল্লাহ আমাদের ঠিকই মিল করাবেন।’
– ‘হৃদের সাথে বিয়ে হলে কিন্তু অনেক সুখে থাকতি। হৃদকে পছন্দ না হলেও আরও ভালো জায়গায় তোর বিয়ে হতো।’
– ‘কচু হইতো। এগুলো বলবে না তো। আইসা শেষে কামড় দেবো।’
– ‘আগের কামড়েরও দাগ রয়ে গেছে।’
– ‘ইশ, তোমার ব্যথা করছিল তাই না?’
– ‘আমার কিছুই হয়নি৷ বাট তুই নড়াচড়া না করায় আমি কত জোরে কামড় দিয়েছি। ভাবলেই কষ্ট লাগছে।’
– ‘তুমি ইচ্ছা করেই দিয়েছো। বাড়াবাড়ি যে করি তাই রাগ মিটিয়েছো। পেটে এতো জোরে কামড় দেয় কেউ? আমার মাথা ঝিমঝিম করা শুরু করেছিল। পেটে সাধারণত চিমটি কাটলেও জান বের হয়ে যায়। আর এতো জোরে কামড়।’
– ‘ইশ, সরি ইলি। আমার যে এখন কেমন কষ্ট হচ্ছে বুঝাতে পারবো না। প্লিজ তুইও একবার আমার পেটে কামড় দিয়ে রক্ত বের করে ফেল না এসে। না হয় নিজেই ব্লেড দিয়ে কাটি।’
– ‘ব্লেড দিয়ে কাটবে কেন? আমার কি দাঁত নেই? আমিও কামড় দেবো।’
– ‘আচ্ছা দিছ। তোর দাগ পড়ে গেছে তাই না?’
– ‘হুম, রক্ত জমে আছে লাল হয়ে আছে।’
– ‘ইশ কেন যে এমন করলাম।’
– ‘এতো পস্তাতে হবে না। আমি আজ রাতে এসেই কামড় দিয়ে প্রতিশোধ নেবো।’দেশলাই – ২৭ পর্ব
ওপাশ থেকে মেসেজ আসার আগেই ইলির মোবাইলে মায়ের কল এলো।
রিসিভ করতেই ঝাঁঝালো গলায় রহিমা বেগম বললেন,
– ‘এই তুই না-কি দু’দিন থেকে হৃদের কল ধরছিস না?’
ইলির বুক খানিকটা কেঁপে উঠলো। আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘বাইরে ছিলাম মা, টিউন শুনিনি।’
– ‘বাইর থাইকা আইসা কি কল দেওয়া যায় না?’
– ‘আচ্ছা দেবো।’
– ‘বাড়িতে কোনদিন আসবি?’
– ‘আরও কয়েকদিন পর আসবো।’
– ‘এতো থাকাথাকির কি আছে? ফুপুকে দেখতে গেছিস দেখা শেষ হয়েছে কাল চলে আয়।’
– ‘কি বলো মা, এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবো?’
– ‘তাড়াতাড়ি কীভাবে হইল? আজ তিন রাত চইলা গেল।’
– ‘আমি ঘুরতে চাইছিলাম।’
– ‘ঘুরতে কয়দিন লাগে? এতো ঘুরাঘুরি বিয়ার পরে জামাইর লগে করন যাইব।’
ইলি খানিকটা রাগ করে বললো,
– ‘আচ্ছা কালই চলে আসছি। এরপর কোথাও যেতে বললে আমি যাবো না।’
ফোনের লাইন কেটে যায়। রাফসানের মেসেজ সিন না করে ইলি ম্লান মুখে বসে থাকে।
খানিক পর তাদের খাবার টেবিলে যাবার ডাক এলো। ইলি খেতে চাচ্ছিল না। সকলের জোরাজুরিতে খেয়ে চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ে। একটু পর রাফসানও এলো। ইলি ম্লান মুখে একা বিছানায় শুয়ে আছে। সে পাশে গিয়ে বললো,
– ‘হঠাৎ কি হয়েছে?’
– ‘কিছু হয়নি। কাল বাড়িতে চলে যাবো।’
– ‘কি বলিস, সত্যি চলে যাবি?’
– ‘হু।’
– ‘ফোনে কার সাথে কথা বলছিলি?’
– ‘আম্মার সাথে।’
– ‘ও আচ্ছা। তাহলে মামী যেতে বলেছেন?’
– ‘হ্যাঁ, এখন যাও তো। গিয়ে ঘুমাও।’
ইলির মেজাজ খারাপ দেখে রাফসান আর ঘাঁটাতে গেল না। বিছানায় এসে গা হেলিয়ে দিলো। কিন্তু ঘুম আসছে না। মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ দেয়,
– ‘ফোনে এমন কি কথা হলো হঠাৎ করে ম্যাডামের এতো মন খারাপ।’
খানিক্ষণ চলে যায়। কোনো রিপ্লাই না পেয়ে মোবাইল পাশে রেখে চোখবুঁজে। মেসেজ টিউন শুনতে পেয়ে আবার মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ইলি রিপ্লাই দিয়েছে, – ‘হৃদের কল রিসিভ না করায় আম্মা রাগ করেছেন। এখন বলো তো অনিচ্ছায় কারও সাথে কি কথা বলা যায়? তাও আবার হৃদ হবু স্ত্রী হিসেবে কথা বলে, আমার তখন অস্বস্তি লাগে।’
রাফসান কোনো রিপ্লাই দিলো না। ওপাশে আবার টাইপিং দেখাচ্ছে।
– ‘আমি আম্মাকেও মুখের উপর কিছু বলতে পারছি না, এবার বাড়িতে গিয়ে সোজাসুজি বলে দেবো হৃদের সাথে আমি যোগাযোগ রাখতে পারবো না।’
– ‘গিয়ে বুঝেশুনে বলিস, এতো তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আচ্ছা এখন ঘুমা। শুভ রাত্রি।’
– ‘শুভ রাত্রি।’
কিন্তু ইলি ঘুমালো না। চ্যাট করে মন খারাপ ভাব খানিকটা কেটে গেছে। সে মোবাইল পাশে রেখে ফুপুকে দেখে নেয়৷ তিনি বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন। ইলি চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে রাফসানের রুমে চলে যায়। সে চোখবুঁজে শুয়ে আছে। ইলি আস্তে করে মাথায় হাত রাখে। রাফসান চমকিত চোখে তাকায়। ইলি কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
– ‘কামড় দিতে এলাম।’
রাফসান চারদিকে তাকায়,
– ‘কেউ দেখে ফেলবে তো।’
– ‘দেখুক।’ বলেই পালঙ্কে উঠে ওর বুকে মাথা রাখে।
রাফসান পিঠে হাত রেখে বললো,
– ‘কাল থেকে আর এতো কাছাকাছি পাবো না।’
– ‘হু।’
রাফসান মুচকি হেঁসে বললো,
– ‘আমাকে কামড় দিয়ে প্রতিশোধ নিবি তাই না?’
– ‘হু।’
– ‘তাইলে দে।’
ইলি পুরোপুরি ওর উপরে উঠে মুখের উপর মুখ এনে তাকায়। গরম শ্বাস দু’জনের মুখে আছড়ে পড়ছে। ইলি ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে নাক ঠোঁট ঘষে ওর পুরো মুখে। ইলি কানে মুখ নিয়ে বললো,
– ‘কামড়টা ঠোঁটে দেই?’
– ‘হু।’
– ‘না ঠোঁটে কামড়টা তোলা থাক, বিয়ের পর দেবো।’
– ‘আচ্ছা।’
ইলি ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেঞ্জিটা উপরে তুলে বললো,
– ‘খুলে ফেলো।’
রাফসান বাধ্য ছেলের মতো গেঞ্জি খুলে পাশে রাখে। ইলি ওর লোমশ বুকে মাথা রেখে খানিক্ষণ শুয়ে রইল। তারপর ফিসফিস করে বললো,
– ‘কামড় দিতে ইচ্ছা করছে না। এর চাইতে তুমি একটু আদর করে দাও চলে যাবো।’
রাফসান ওকে নিচে ফেলে কপালে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,
– ‘বিয়ের পর অনেক আদর করবো, এখন চলে যাও।’
– ‘ইশ, এই প্রথম ‘তুমি’ করে বললে।’
রাফসান কোনো জবাব না দিয়ে পাশ থেকে মোবাইলটা নেয়। তারপর নিচের দিকে এসে কামিজটা উপরে তুলে ডিসপ্লের বাতি ফেলে। খানিকটা মেদজমা ধবধবে সাদা পেটের নাভীর পাশে রক্ত জমে আছে। রাফসান মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ইশ এটা কি করলাম।’
ইলি কোনো জবাব দিলো না। রাফসান ওর ক্ষতস্থানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। নরম পেটের একপাশে হাত লাগতেই নিজের শরীরে উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে। ইলিও চোখবুঁজে আছে। রাফসান মোহনীয় পেট থেকে নিজেকে সামলে নেবার জন্য কামিজ টেনে দেয়। পাশে শুয়ে ওর এক পা তুলে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
– ‘যাবে না?’
– ‘ইচ্ছা করছে না। নিজের বরটাকে রেখে একা থাকতে ভালো লাগে বলো?’
রাফসান ওর গলায় নাক ডুবিয়ে বলে, -‘আমারও ছাড়তে ইচ্ছা করছে না ইলি। যদি বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখা যেতো।’
– ‘অ্যাঁ, আমি গতকাল বললাম এই কথা।’
– ‘হু, আমাদের ইচ্ছা তো একই তাই আমিও বললাম।’
– ‘আসলেই? না-কি আমাকে বাচ্চাদের মতো মন বুলানো কথা বলছো?’
– ‘আমি কি মন বুলিয়ে তোমাকে কিছু করছি না-কি?’
ইলি ফিক করে হেঁসে ফেললো,
– ‘কিছু না করার জন্য মন বুলানো কথা বলে বিদায় দিচ্ছ।’
– ‘তাহলে কি করবো বলো।’
– ‘ঠোঁটে না হোক গালে একটা আদর তো দিতে পারো। কপালে চুমু দিয়ে শুধু বিদায় করতে চাচ্ছ। একটুও আন্তরিক না তুমি।’
রাফসান আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
– ‘উদ্যানে কত আন্তরিক ছিলাম। এখন তো রাত, এতো মিষ্টি একটা মেয়ে পাশে থাকলে কখন কি হয় নিজেরই ভয় লাগে।’
ইলি ফিক করে হেঁসে মুখ ঢেকে নেয়। তারপর ফিসফিস করে বলে,
– ‘বাবা তাহলে তো তোমার কাছ ঘেঁষা যাবে না। বেচারা নিজেকেই সামলানো নিয়ে আতংকে থাকে।’
– ‘ইন্ডিয়া থেকে এসেই তোমাকে দেখে আমি অবাক হয়ে হয়েছিলাম। আগে এতটা খেয়াল করিনি। ওইদিন প্রথম খেয়াল করেছি।’
– ‘কি খেয়াল করলে?’
– ‘খেয়াল করলাম শুধু সুন্দরী না। আরও কেমন যেন।’
– ‘মেয়েদের মতো কথাবার্তা বলো কেন? কেমন যেনটা কি?’
– ‘আমি কি সাহিত্যিক? মনে মনে অনেক কিছু বুঝলেও ঠিক গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারি না।’
– ‘আচ্ছা এতো গুছানো লাগবে না। কেমন যেনটা কি? মানে খারাপ না ভালো?’
– ‘মানে শুধু সুন্দরী বললে সেই সৌন্দর্য প্রকাশ পায় না এমন। অনেক বেশি মায়া লাগে। হেঁটে যাবার সময় পেছন থেকে তাকালে ভেতরে কেমন কেমন করে।’
– ‘কি আবোল-তাবোল কথাবার্তা। ঠিকমতো প্রশংসাও করতে পারে না।’
– ‘হু।’
– ‘আদরও করতে পারো না।’
– ‘বিয়ের পর পারবো।’
– ‘কচু পারবে।’
– ‘উদ্যানে করিনি?’
– ‘অ্যাঁ পাইছে একটা, উদ্যানে যেন উনি রোমান্টিকতার ইতিহাস করে ফেলছেন।’
রাফসান মুচকি হেঁসে ওর গালে চুমু খেয়ে বললো,
– ‘প্লিজ রাগ করো না। এখন আদর করতে গেলে বাদর হয়ে যাবো।’
ইলি ফিক করে হেঁসে বললো, ‘আদর বাদর শুনে ফেইসবুকে পড়া একটা কবিতার কথা মনে পড়ে গেছে।’
– ‘কি?’
– ‘কান দাও বলছি।’
রাফসান কান পেতে দেয়। ইলি ফিসফিস করে বলে,
– ‘অল্প একটু ছোঁয়া দাও
আরও খানিক আদর,
তুমি আমার লতানো দেহ
কাঁপিয়ে তোলা বাদর।’
রাফসান দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো, ‘কি? তুমি নিজে বানিয়ে বলে আমাকে বাদর ডাকলে তাই না?’
– ‘আরে না, আমি ফেইসবুকে পড়েছি।’
– ‘লেখক বাদর বললো কেন? ওরে বয়কট করলাম।’
ইলি ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘এখানে “বাদর” মানে “দুষ্ট” বুঝানো হয়েছে হয়তো।’
– ‘দুষ্টকে বাদর কেন বলা হলো?’
– ‘এতো প্রশ্ন করো না তো। কবিতা যারা বুঝে বুঝেই। অন্যদের এতো বুঝালেও লাভ হয় না।’
– ‘রেগে যাচ্ছ কেন?’
– ‘রাগবো না? এই রাতে কাছে পেয়েও আদর না করে অযথা প্রশ্ন করছো।’
– ‘না এতো রাতে আদর করতে গেলে বাদর হয়ে যাব।’
– ‘তোমার আদর করতেই ইচ্ছা করছে না সেটা বলো।’
– ‘কি যে বলো না।’
– ‘হু ঠিকই বলেছি। মানুষ কি সারাক্ষণ শাড়ি পরে ঘুরতে হবে আদর পাওয়ার জন্য?’
– ‘ইশ, এভাবে বলছো কেন?’
– ‘একশোবার বলবো, হাজারবার বলবো।’
– ‘আচ্ছা যা ইচ্ছা বলো। বিয়ের পর দেখাবো মজা।’
– ‘কচু দেখাবে তুমি।’
রাফসান টেনে বুকে তুলে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত রেখে বললো,
– ‘এতো রাগ করছো কেন?’
– ‘জানি না, অযথাই রাগ হচ্ছে।’
– ‘আচ্ছা তাহলে আমরা বসে কানে কানে গল্প করি। তুমি ঘুম পেলে চলে যাবে।’
– ‘আচ্ছা।’
রাফসান বাঁ পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ইলিকে টেনে কোলে বসায়। ইলি ওর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বসেছে। রাফসান ওর পেটের দিকে হাত নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরা। তার উষ্ণ শ্বাস আছড়ে পড়ছে ওর পিঠে। আলগোছে ওর চুলের খোঁপা খুলে দেয়। চুলে নাক ডোবায়। আবার চুল তুলে নগ্ন ঘাড়ে চুমু খায়৷ ইলি বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। রাফসান এবার পিঠে মুখ ঘষতে ঘষতে পেট মৃদু চেপে ধরে। ইলি এবার ঘুরে ওর মুখামুখি হয়ে কোলে বসে মুখটা আঁজলা করে ধরে অন্ধকারে খানিক্ষণ চেয়ে থাকে। তারপর আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে চোখবুঁজে ফিসফিস করে বলে, -‘আর কবে যে এমন কাছাকাছি তোমাকে পাবো।’
– ‘পাবে না?’
– ‘উহু, বিয়ে ছাড়া হয়তো আর এভাবে পাবো না।’
– ‘তা ঠিক।’
– ‘আমার ভীষণ ইচ্ছা করে তোমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাত বেঘোরে ঘুমোতে।’
– ‘একদিন ইচ্ছা পূর্ণ হবে ইলি।’
– ‘জানো? আমার প্রায়ই মনে হয় আমাদের মিলন হবে। আবার মনে হয় এটা অসম্ভব। মৃত্যুর আগে কেউ কি স্বর্গ পেতে পারে? পৃথিবীতে স্বর্গসুখ পাওয়ার কি নিয়ম আছে?’
– ‘ইশ, এভাবে ভাবিস না ইলি।’
ইলি ওর কাঁধে মুখ গুঁজে মৃদু কান্নায় কেঁপে উঠে। রাফসান বিরক্তির সুরে বলে,
– ‘আচ্ছা এখন কাঁদছিস কেন বলতো? তুই অযথা হারানোর ভয় পাস তাই না?’
– ‘না, আমি ভয় পাই না। আমি জানি পাবো।’
– ‘তাহলে কাঁদিস কেন?’
– ‘জানি না।’
– ‘তুই আমাকেও ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস।’
– ‘আচ্ছা আর এমন করবো না। কিন্তু তুমি আমাকে আবার ‘তুই’ বলছো কেন? আমি তোমার বউ না বলো?’
রাফসান অন্ধকারে ওর মুখটা আঁজলা করে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
-‘আমার বউটা।’
ইলি চুপচাপ লোমশ বুকে চোখবুঁজে থাকে। একটুও নড়ে না। এই বুকেই যেন জগতের সব সুখ-শান্তি। এই বুকের ধুকপুকেই যেন জগতের সকল রহস্যের সমাধান। এখন ভূমিকম্প হলেও ইলি চোখ খুলবে না। রাফসানকে ঘোর লাগা গলায় বলবে, ‘এই নড়ছো কেন?’
রাফসান অস্থির হয়ে বলবে, ‘ইলি বাইরে তো খুব হৈচৈ শোনা যাচ্ছে, চলো তো দেখি বাইরে কি হচ্ছে।’
ইলি আঁটকে বলবে,
– ‘মানুষ তো হৈচৈ করবেই। এই বেরসিক মানুষগুলোর কাজই হচ্ছে অন্যের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করা।’
আধা ঘণ্টা এভাবেই চলে গেল। রাফসান ওর মাথায় হাত দিয়ে আস্তে করে ডাকে। কিন্তু কোনো সাড়া পেল না। ইলি ঘুমিয়ে গেছে। এখন কি করবে? ওর এমন শান্তির ঘুম থেকে জাগাতেও ইচ্ছা করছে না। রাফসান আলগোছে ইলিকে কোলে নিয়ে পালঙ্ক থেকে নামে। সতর্কভাবে ওই রুমে তাকায়। ডিম লাইট জ্বলছে। রাফসান পা টিপেটিপে ইলিকে ভালোভাবে বিছানায় রেখে চলে আসে। ( ছবি পাঠিকা একজন তুলে পাঠিয়েছে )
—চলবে—
লেখা: MD Jobrul Islam
—-চলবে—-
লেখা: MD Jobrul Islam