দেশলাই পর্ব ৩০+৩১

দেশলাই – ৩০ পর্ব

মায়ের উত্তেজিত গলা শোনা যাচ্ছে।
ইলির বুক ধুকপুক করছে। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মা-বাবার আলাপ শোনার ইচ্ছা ছিল কিন্তু পা যেন অসাড় হয়ে আসছে। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে পালঙ্কে ধপাস করে বসে। কান দিয়ে গরম ভাপ বেরুচ্ছে। আবার উঠে দাঁড়ায়। দরজার পাশ থেকে কান পেতে শুনতে পেল লতিফ মিয়া স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বললেন,
– ‘অস্থির হইবা না তো। বিয়ের আলাপ দিছে তো কি হইছে?’

– ‘কেন দেবে? ওরা জানে না আমার মেয়ের বিয়া ঠিক? আর এতো পড়ালেখা করাইছি কি রাফসানের কাছে বিয়া দেয়ার লাগি?’

– ‘রাফসানের কি হইছে?’

– ‘রাফসান বিয়াত্তা। তাছাড়া ও কোনোভাবে আমাদের মেয়ের যোগ্য না।’

– ‘তাইলে তোমার মেয়ে ওর কাছে বিয়া বসতে চায় কেন?’

– ‘কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো? ইলি রাফসানের কাছে বিয়া বসতে চাইবে কেন? কে বলছে এগুলো?’

– ‘এইতো রাফসানের চাচা বললো ওরা না-কি একজন আরেকজনকে পছন্দ করে। রাফসান আর ইলি মিলেই না-কি তাকে দিয়ে বিয়ার আলাপ দেওয়াইছে।’

– ‘কি? দুধকলা দিয়া কি আমি কাল সাপ পুষেছি? ছেলের মতো দেখতাম এই পোলারে। আজ কোথায় হাত দিছে। আমি এগুলো বিশ্বাস করি না।’ কথাটি বলে তিনি চেয়ার থেকে উঠে হাঁক ছাড়লেন, ‘ইলি, এই ইলি, কইরে এদিকে আয়।’

– ‘চুপ কর। এখন ওরে ডাকাডাকি করিস না।’

রহিমা বেগম চুপ করলেন। খানিক্ষণ থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,
– ‘কোনো অঘটন ঘটলে আমার বইনের কাছে কি জবাব দিমু।’

– ‘কোনো অঘটন ঘটবে না।’

– ‘আমার খাঁড়া নিষেধ। তোমার বইনের ছেলেরে যেন আর আমার বাড়ির ত্রি-সিমানায় না দেখি।’

– ‘পাগলের মতো কথা বলবা না। সে বিয়ের আলাপ দিছে বাগিয়ে নিয়ে যায়নি। রাফসান এখন ভালো ব্যবসা করে। এদিকে তোমার মেয়েও যদি তাকে পছন্দ করে থাকে তাহলে সে বিয়ের আলাপ দিয়ে দোষ করেনি। পারলে নিজের মেয়ের দোষ দেখো।’

রহিমা বেগম কিছু একটা ভাবলেন। তারপর খাবার প্লেট-গুলো গোছাতে গোছাতে বললেন,
– ‘ওদেরকে ক্লিয়ার বলে দাও ইলির বিয়া ঠিকঠাক।’

– ‘হ তা বলা যাবে।’

এরপর আর কোনো কথাবার্তা শোনা গেল না। ইলির এখন কি করা উচিত সে ঠিক বুঝতে পারছে না। মোবাইলটা পাশ থেকে নিয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে দেয়। রাফসানকে বলা দরকার। সে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেয়,
– ‘তোমার চাচা কল দিয়েছিলেন আব্বার কাছে। কিন্তু আব্বা-আম্মা খুব রেগে গেছেন। তারা না করে দেবেন। এখন আমি কি করবো বলো তো। আমার খুব ভয় করছে। প্লিজ রাফসান ভাই। যতই ঝড়তুফান আসুক তুমি ঠিক থাইকো প্লিজ।’

খানিক্ষণ পর ওপাশে মেসেজ সিন দেখিয়ে মেসেজ আসে,
– ‘অস্থির হয়ো না ইলি। তারা সহজে রাজি হবেন না আগেই তো জানো। তোমাকেই চেষ্টা করতে হবে। আমি তো আর মামা-মামীকে কিছু বলতে পারি না।’

– ‘হ্যাঁ।’

দরজায় নক পেয়ে ইলি মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে খুলে দেয়। রহিমা বেগম এসেছেন। খুব স্বাভাবিক গলায় বললেন,
– ‘তোর লগে ঘুমাবো।’

ইলি কিছুই বললো না। চুপচাপ আবার মোবাইলের ডাটা বন্ধ করে শুয়ে রইল।
রহিমা বেগম পাশে শুয়ে মেয়ের মাথায় বিলি কাটাতে কাটতে বললেন,
– ‘চুলে কি তেল-টেল দিছ নারে ইলি? কাল দিনে একবার ভালো করে আছড়িয়ে তেল দিয়ে দেবো মনে করে দিস তো।’

ইলি পাশ ফিরে বললো,
– ‘মা এতো কাছে আসবা না তো।’

– ‘কেন?’

– ‘গন্ধ করে।’

– ‘চা খাবি? চা জ্বাল দিয়ে আনি?’

– ‘না মা চা খাব না। তোমার ইচ্ছা হলে খাও আর পারলে এই রুম থেকে চলে যাও।’

– ‘এভাবে কথা বলছিস কেন মা?’

– ‘এমনিই।’

তিনি টেনে মেয়েকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বুকের কাছে এনে বললেন,
– ‘বড়ো হয়ে গেছিস তাই না? কত অচেনা লাগে তোকে।’

ইলি মায়ের বুকে আদুরে বিড়ালের মতো মুখ চেপে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
– ‘মানুষ যতো বড়ো হয় আপনজন থেকে দূরে যায় মা।’

– ‘তুই দূরে যাবি কেন? আমাদের একমাত্র মেয়ে তুই। তোর তো সুখই চাই আমরা। তুই দূরে গেলে আমাদের আর কি রইল?’

ইলির এই মুহূর্তে মনে হলো মায়ের থেকে আপন আর পৃথিবীতে কেউ নেই। সে কেন অযথা ভয় পায়? মা’কে বললে অবশ্যই তিনি রাজি হয়ে যাবেন। ইলি মা’কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– ‘মা আমি কিছু চাইলে তুমি দেবে না?’

রহিমা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– ‘অবশ্যই দিব মা, তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোকে নিয়েই তো আমাদের সবকিছু।’

– ‘মা আমি হৃদকে বিয়ে করতে চাই না।’

রহিমা বেগম শান্ত গলায় বললেন,
– ‘কেন মামণি?’

– ‘আমি তোমাদের একমাত্র মেয়ে। তোমাদের ছেড়ে দূরে কেন যাবো মা? দুনিয়াতে কি টাকা-পয়সা সব?’

– ‘তাহলে কি করবি?’

– ‘আমি চাকুরী করবো মা আর তোমাদের সাথে থাকবো।’

– ‘এভাবে কি জীবন চলে রে মা? বিয়ে সংসার তো করতে হয়।’

– ‘আমার রাফসান ভাইকে ভালো লাগে মা। বিয়ে করলে তাকেই করবো।’

রহিমা বেগম কিছু না বলে শক্ত হয়ে রইলেন।
– ‘মা কিছু তো বলো। ওঁকে পেলে আমি অনেক সুখী থাকবো মা। তোমাদেরও দেখাশোনা করতে পারবো।’

– ‘এখন ঘুমা পড়ে দেখা যাবে।’

– ‘ও তো এখন বেকারও না, ভালো ব্যবসা করছে। তাছাড়া আমার এতো টাকা-পয়সা চাই না মা। শরম-লজ্জা সব ভেঙে বলছি কেন বুঝতেই তো পারছো। প্লিজ তোমরা একটু রাজি হয়ে যাও।

– ‘ইলি এখন ঘুমা। পরে দেখা যাবে।’

ইলি কিছু বললো না। মা’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল। ভোরে ঘুম ভেঙে দেখলো মা পাশে নেই। সে ব্রাশ হাতে পুকুরে গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে এসে দেখে মা চুলোয় চা বসিয়েছেন। ইলি পেছন থেকে মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ‘আমার লক্ষী মা।’

রহিমা বেগম শান্ত গলায় বললেন,
– ‘ইলি নাস্তা করে রেডি হয়ে যা। আমরা এ বাড়ি তালা মেরে তোর নানাবাড়ি চলে যাবো।’

– ‘কি বলছো মা এগুলো?’

– ‘যা শুনলি তাই বলেছি। তোর মামারা দেশে আসার আগপর্যন্ত আমরা সেখানেই থাকবো। সেখানে থেকেই বিয়ে হবে।’

– ‘কি বলছো মা এগুলো? আমি তোমাকে বললাম না রাফসান ভাই ছাড়া আর কাউকে আমি বিয়ে করবো না।’

রহিমা বেগম পেছন ঘুরে মেয়ের গালে জোরে একটা চড় মারলেন। ইলি টাল সামলাতে না পেরে দেয়ালে গিয়ে ছিটকে পড়লো।

– ‘মা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? মারছো কেন?’

– ‘চুপ কর খানকির বাচ্চা। তোরে আরও আগেই না মারা আমার ভুল ছিল। প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছি।’

– ‘মা তুমি আমাকে চিনতে পারছো না। জোর করে তুমি আমাকে কখনও বিয়ে দিতে পারবে না।’

রহিমা বেগম রাগে তরকারি নাড়ার চামচ ছুড়ে মারলেন ইলির দিকে। ইলি হাত দিয়ে চামচ ফেরালেও নিচের ঠোঁটে লেগে গলগল করে রক্ত বেরুলো৷ ইলি ঠোঁট চেপে ধরে মায়ের দিকে তাকায়। কেমন অচেনা লাগছে আজ৷ চোখ লাল হয়ে গেছে। এই মা কেবল মমতাময়ী না৷ প্রয়োজনে রাক্ষুসিও। আবার জাপ্টে ধরলেন এসে ইলির চুল, টেনে তুলে গালে আরেকটা চড় দিয়ে বললে,
– ‘চুপ একদম চুপ, তোর বিয়া হৃদের লগে হবে। আর পালিয়ে যদি যাস তাইলে জীবনে কোনোদিন মা-বাপের মুখ দেখতে পাবি না। ভাবিস না অন্য আট-দশজনের মতো বাচ্চা নিয়ে হাজির হবো আর নানা-নানি খুশিতে গদগদ হয়ে যাবে৷ এমন মা-বাপ আমরা না। পালিয়ে যেতে হলে দরজা খোলা আছে চলে যা। আর কোনোদিন ফিরে আসবি না। আমরাও মনে করবো নিঃসন্তান।’

ইলি করুণ চোখে তাকিয়ে মায়ের পা ধরে কেঁদে ফেললো,
– ‘প্লিজ মা, তুমি আপন মা হয়ে আমাকে এমন বিপদে ফেলো না। আমি তোমাদের ছেড়েও যেতে পারবো না। রাফসানকে ছেড়েও বাঁচবো না। প্লিজ মা তোমার পা ধরে বলছি প্লিজ একটু দয়া করো। প্লিজ।’

রাগে আবার চুল ধরে টেনে তুলে বললেন,
– ‘লজ্জা করে না এগুলো বলতে? লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নেমেছিস তাই না? দুইটারে বিশ্বাস করে মিশতে দিতাম তোরা বিশ্বাসের এই দাম দিয়েছিস? তুই খানকি ভালো হবি কীভাবে? তোর ফুপুই তো এরকম ছিল।’

কোত্থেকে লতিফ মিয়া এসে অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে বললেন,
– ‘আরে কি করছো এগুলো? সর্বনাশ! রক্ত বাইর হচ্ছে, ছাড়ো, আমার মেয়েকে ছাড়ো বলছি।’

ইলিকে রহিমা বেগমের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে তিনি সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
– ‘যাও তো মা। গিয়ে রেডি হও।’

ইলি বাবার পায়েও পড়ে গেল।
– ‘প্লিজ বাবা, তোমরা আমাকে মারো কাটো যা ইচ্ছা করো। শুধু শেষপর্যন্ত রাফসান ভাইয়ের সাথে বিয়েটা দিয়ো। আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।’

রহিমা বেগম আবার তেড়ে এলেন,
– ‘শুনছো তোমার আহ্লাদী মেয়ের কথা? ওকে আমার কাছে ছেড়ে দাও। নির্লজ্জের বাচ্চারে আজ মেরেই ফেলবো।’

– ‘চুপ, চুপ করো রহিমা। যাও তোমার কাজ করো গিয়া। উঠো তো মা ইলি। পরে দেখা যাবে কি করা যায়। ঠোঁটের রক্ত মুছে নাও।’

ইলি সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে আসে। রাফসানকে কল দেয়। ওপাশে ‘হ্যালো’ বলতেই রহিমা বেগম এসে হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিলেন। ইলি বালিশে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে থাকে। রহিমা বেগম রান্নাবাড়া বাদ দিয়ে লতিফ মিয়াকে বললেন,
– ‘এখনই কল দিয়ে গাড়ি আনাও, খাওয়া-দাওয়া কিচ্ছু হবে না।’

– ‘তুমি শান্ত হও রহিমা। আজ থেকে কয়েকদিন হরতাম। গাড়ি-টারি চলবে না।’

– ‘আমাকে শান্ত হতে বলছো? মেয়ে কি বলছে শোনো না? সে হৃদের কাছে বিয়েই বসবে না। বিয়ে ঠিকঠাক করা। তারা দেশে ফিরবে। এখন এসব কি বলে তোমার মেয়ে?’

– ‘বিয়ে ঠিকঠাক হলে কি হইছে? বিয়া তো হয়নি তাই না? তাছাড়া আমরা মেয়ের সুখ চাই। সে যদি বলে রাফসানকে বিয়া করলে ভালো থাকবে আমাদের কি?’

– ‘তারমানে কি? তুমিও মেয়ের সুরে গান গাইছো?’

– ‘না আমি মেয়ের সুরে গান গাইছি না। কথার কথা বললাম। মেয়েকে রাজি করাতে না পারলে আমাদের রাফসানের কাছেই বিয়া দেয়া উচিত। তাছাড়া এখন রাফসান বেকার না। তোমার মেয়েকে ভরণ-পোষণের অবস্থা তার আছে।’

রহিমা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। লাল টকটকে চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ‘আমার বইনে কি করে নাই আমাদের জন্য? এখন ঠিকঠাক বিয়া ভাইঙ্গা দিবা? আমি কি জবাব দেবো তাকে?’

– ‘বেশি বেশি বুঝো না রহিমা। বিয়ে ভাইঙ্গা দেওয়ার কথা কে বলছে? ওর বিয়া হৃদের সাথেই হোক আমি চাই। কিন্তু মেয়েকে তো জোর করে কিছু করা যায় না। এখনও সময় আছে তাকে বুঝাইতে হবে।’

– ‘যাও বুঝাও গিয়ে। বেহায়া মাইয়ারে আহ্লাদী করে বুঝাও।’

লতিফ মিয়া মেয়ের রুমের দিকে গেলেন।
দরজা খুলে দেখলেন কেউ নেই। রুমে না পেয়ে এদিক-ওদিক খুঁজলেন। কোথাও নেই। রান্নাঘরে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ‘ইলি কই গেল? রুমে তো নেই।’

ইলি রক্তাক্ত ঠোঁটে দৌড়াচ্ছে। রাস্তার মানুষরা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। ইলি সবকিছু উপেক্ষা করে কবর গলি পেরিয়ে তাল গাছের নীচ দিয়ে নেমে বন পথে দৌড়ায়।
খানিক বাদেই পৌঁছে যায় রাফসানদের বাড়িতে। কারও দিকে না তাকিয়ে রাফসানের রুমে যায়। রাফসান নিজেই অস্থিরতায় আছে। রাতে হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট করার সময় ইলি অফলাইন হয়ে গেল। আজ আবার ফোনে ‘হ্যালো’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মামীর আক্রমণ স্পষ্ট বুঝা গিয়েছিল। দরজা “খ্যাঁক” করে খুলতেই মাথা তুলে তাকায়। ইলিকে দেখে সে আঁতকে উঠে বিছানা থেকে৷ এ কি অবস্থা ইলির। ঝাপিয়ে পড়ে এসে রাফসানের বুকে।
– ‘কি হয়েছে ইলি? এই অবস্থা কি করে হলো তোর?’

– ‘একটা কিছু করো রাফসান ভাই। ওরা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছে। পায়ে পর্যন্ত ধরেছি। কেউ আমাকে বুঝতে চায় না।’

– ‘শান্ত হ ইলি। দাঁড়া তোর ঠোঁটের রক্ত মুছে দেই।’

রাফসান টেবিল থেকে টিস্যু এনে আলগোছে রক্ত মুছছিল। তখনই এসে হাঁক ছাড়লেন রহিমা বেগম। সাথে লতিফ মিয়াও দাঁড়িয়ে আছেন। ইলি আবার জাপ্টে ধরে রাফসানকে। রহিমা বেগম রাগে থরথর করে কাঁপছেন। মেয়েকে চুল ধরে টেনে ছাড়িয়ে রাফসানকে নিজের অজান্তেই চড় মেরে দিলেন।
বাড়ির সকল জড়ো হয়ে গেছে। লতিফ মিয়া স্ত্রীকে টেনে সরিয়ে বললেন,
– ‘রহিমা তুমি কি পাগল হইয়া গেছো? সামান্য ব্যাপার তুমি নিজেই বড়ো করে ফেলতেছো।’

রাফসান শান্ত গলায় বললো,
– ‘মামা লোকজন ভীড় করবে, চিল্লাচিল্লি না করে বাড়িতে চলে যাও।’

কিন্তু ইলি হাউমাউ করে কাঁদছে, তাকে কোনোভাবে নেয়া যাচ্ছে৷ রাফসান শান্ত গলায় ইলিকে বললো,
– ‘ইলি চলে যাও। ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ আসা শুরু করবে। যাও, চলে যাও বাড়িতে।’

লতিফ মিয়া মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। বাসায় গিয়েই রহিমা বেগমকে জোরে একটা চড় দিয়ে বললেন,
– ‘তুই অন্যের ছেলেকে চড় মারলি কেন? তোর মেয়ে তার কাছে গেল কেন? সে কি এসে নিয়েছে? ছোট্ট ব্যাপারকে তুই হৈচৈ করে বড়ো করছিস। মেয়ে না চাইলে তুই বিয়ে দিতে পারবি? এখন রাফসান যদি ফিরিয়ে না দিয়ে পালিয়ে নিয়ে যেতো কি করতি? স্পষ্ট শুনে রাখ। মেয়েকে আমি জোর করে কোথাও বিয়ে দেবো না। প্রয়োজনে রাফসানের কাছেই বিয়ে দেবো। রাফসান কোনো রাস্তার ছেলে না।’

রহিমা বেগম কিছুই বললেন না। আহত নয়নে তাকিয়ে রইলেন। ইলি চলে গেল নিজের রুমে।
খানিক পরেই পাগলের মতো রাফসানকে বাইক চালিয়ে যেতে দেখা গেল। সময় যেতে যেতে এলাকাজুড়ে একটা হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। সবাই দৌড়াচ্ছে বাজারের দিকে। ইলি জানালা থেকে বাইরে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।দেশলাই – ৩১ পর্ব

লতিফ মিয়া গেইটের দিকে এগোলেন। ইলির বুক ধুকপুক করছে। সেও জানালার কাছ থেকে সরে বাইরে আসে। তার অবচেতন মন সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করতে পারায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
লতিফ মিয়া একজনকে দাঁড় করিয়ে
এতো হৈ-হুল্লোড়ের কারণ জানতে চাইলেন। লোকটি দৌড়াতে দৌড়াতে বললো, ‘শুনছি বাজারে আগুন লাগছে।’

লতিফ মিয়া পেছনে তাকিয়ে রহিমা বেগমকে বললেন, ‘তোমরা থাকো, আমি একটু দেখে আসি তো।’

ততক্ষণে ইলি গেইট পেরিয়ে চলে গেছে। রহিমা বেগম পেছন থেকে ডাকছেন। ইলি থামছে না। লতিফ মিয়া স্ত্রীকে বললেন, ‘কোনো সমস্যা নাই তুমি বাসায় যাও, আমি ইলির সাথে আছি।’

দূর থেকে কালো ধোঁয়া আকাশে উড়তে দেখে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে আগুনের ভয়ংকর শব্দ।
কলেজ গলি থেকে লাইন ধরে মানুষ যাচ্ছে। বাজারে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের টিম এসেছে। আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। রেস্টুরেন্টের ওপর পাশে গ্যাস সিলেন্ডারের দোকানের সামনে ছিল একটি বাস। হরতালের দিনেও এখান থেকে কমবেশি সিএনজি, রিকশা, বাস প্রতিদিনের মতো চলছিল। হঠাৎ কোত্থেকে একদল ছেলেরা লাঠি হাতে চারদিকে তাণ্ডব চালায়। স্টেশনে দাঁড় করানো সিএনজিগুলো ভাংচুর করে। দোকানদাররা স্যাটার ফেলে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে চলে যায়। হঠাৎ করে গ্যাস সিলেন্ডারের সামনের বাসটিতে কেউ একজন আগুন দেয়। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। বাস থেকে প্রথমে গ্যাস সিলেন্ডারের দোকানের বারান্দার টিনের নিচে কাঠের বর্গায় আগুন লাগে। খানিক পরেই প্রচণ্ড শব্দে পুরো বাজার কাঁপিয়ে তুলে। আশপাশের এলাকাজুড়ে হৈচৈ পড়ে। ভাংচুরকারীরা যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। উপজেলা থেকে প্রথমে পুলিশ আসে। ততক্ষণে গ্যাসের দোকানে বিস্ফোরণ থেকে আগুন রাফসানের দোকান সহ আরও নয়টি দোকানে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত।

ইলি মানুষের ভীড় ঠেলে চারদিকে তাকায়। রাফসানকে দেখা যাচ্ছে না। লতিফ মিয়া মেয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ইলি বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘রাফসান ভাইকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?’

– ‘কোথাও আছে হয়তো, শান্ত হ মা।’

ইলি হাঁপাচ্ছে৷ পা যেন অবশ হয়ে আসছে। সে আবার বললো,

– ‘বাবা আমার সাথে মোবাইল নাই। কারও মোবাইল এনে রাফসান ভাইকে কল দাও।’

– ‘মা তুই বাড়িতে চল। বাড়ি গিয়ে কল দেওয়া যাবে।’

– ‘না বাবা আমি এখানেই থাকবো।’

– ‘তাহলে কলেজের দিকে চল সেখানে বসবি আমি দেখছি রাফসান কোথায়।’

ইলি উঠে দাঁড়ায়। লতিফ মিয়া তাকে কলেজের বারান্দায় নিয়ে বসালেন। খানিক্ষণ পর ফিরে এসে বললেন রাফসান না-কি শাহজালাল ফার্মেসিতে।
ইলি আঁতকে উঠে বললো, ‘কেন? কি হয়েছে ওর?’

– ‘লোকজন বললো মাথা ঘুরে না-কি পড়েছিল।’

– ‘চলো তো যাই আমরা।’

– ‘হ্যাঁ চল।’

তারা বাজারের ভেতর দিয়ে না গিয়ে ট্রেনের রাস্তা ধরে হেঁটে ব্রিজের পাশ দিয়ে শাহজালাল ফার্মেসিতে যায়। রাফসানের দোকানের কর্মচারী সহ আরও কয়েকজন মানুষ বাইরে বসে আছে। লতিফ মিয়া কি হয়েছে জানতে চাইলে তারা বললো, রাফসান না-কি বাইক থেকে নেমে ভীড় ঠেলে না গিয়ে প্রথমে একটা দোকানের সিঁড়ি থেকে উঁকি দিয়ে দেখছিল। তখনই মাথা ঘুরে সামনের পিলারে পড়ে ভুরুর নিচের চামড়া ফেটে রক্ত বেরোয়। তারা দেখতে পেয়ে তাকে ধরাধরি করে ফার্মেসিতে নিয়ে এসেছে। ইলি ততক্ষণে ভেতরে চলে গেছে। রাফসান সীটে চোখবুঁজে শুয়ে আছে। লতিফ মিয়া ডাক্তারকে বললেন,

– ‘সেলাই লেগেছে না-কি?’

ডাক্তার বললো, ‘না, শুধু ওয়াশ করে দিয়েছি। আর মাথা ঘুরেছে যেহেতু তাই একটু শুয়ে থেকে রেস্ট নেয়ার জন্য আঁটকে রেখেছি আরকি। বেশি কিছু হয়নি।’

ইলি স্বাভাবিকভাবে আস্তে করে ডাকলো, ‘রাফসান ভাই।’

সে লাল টকটকে চোখ মেলে তাকায়।

– ‘এখন ঠিক আছো তো?’

– ‘হ্যাঁ।’

লতিফ মিয়া ডাক্তারকে বললেন, ‘তাকে এখন নিয়ে যাওয়া যাবে তো?’

– ‘হ্যাঁ পারবেন।’

– ‘আপনার টাকা বাজারে এলে দিয়ে যাবো।’

– ‘আচ্ছা ঠিকাছে।’

লতিফ মিয়া রাফসানের হাত ধরে বললেন,
– ‘ধীরে ধীরে উঠ তো।’

রাফসান পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে উঠে কর্মচারীকে ডেকে চাবি দিয়ে বললো,
– ‘বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে আসিস।’

রাফসানকে একটা রিকশায় তুলে দিয়ে ইলি আর লতিফ মিয়া আরেকটা রিকশা করে বাড়ি ফিরলেন। ইলির ইচ্ছে থাকলেও রাফসানের সঙ্গে কথা বলতে পারলো না। রাফসান চলে গেছে তাদের বাড়িতে। লতিফ মিয়া তাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে বললেন, ‘ইলি অতিরিক্ত কিচ্ছু ভালা না, তুমি যুবতী মাইয়া যখন-তখন বাজারে দৌড়ে চলে যেতে পারো না। একটু আগেও তোমাকে রাফসানদের বাড়ি থেকে এনেছি। সেখানে তুমি জড়াজড়ি কাণ্ড করেছো। এগুলো করলে তো এলাকায় মুখ দেখানো যাবে না।’

ইলি কিছুই বললো না। চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রইল। মোবাইল এখনও রহিমা বেগমের কাছে।
রাফসানের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল। এখন সে কি করছে? কি করবে? মা-বাবা কি আর রাজি হবেন রাফসানের কাছে বিয়ে দিতে? ইলির চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। রাফসান ভাইয়ের এই খারাপ সময়ে সে অন্য কারও কাছে বিয়ে বসতে পারে না। প্রয়োজনে পালিয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ইলি ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় লতিফ মিয়া চা নিয়ে এসে মেয়েকে ডেকে তুললেন। খানিক পরে রহিমা বেগমও এলেন। ইলির লাল টকটকে চোখ। থমথমে ভারী মুখ। লতিফ মিয়া মেয়ের দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘নে মা, চা খেলে ভালো লাগবে।’

ইলি স্বাভাবিকভাবেই চা নেয়। লতিফ মিয়া চা’য়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
– ‘দেখ মা, এখন আর পাগলামি করিস না। তুই পাগলামি করলে রাফসানও এখন আরও দুশ্চিন্তায় পড়বে। তার কি এখন আর বিয়ের অবস্থা আছে বল মা?’

ইলি শান্ত গলায় বললো,
– ‘হৃদের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে দাও বাবা। রাফসান ভাইয়ের আবার অবস্থা ভালো হলে বিয়ে করবে।’

– ‘তুই বুঝতে পারছিস না মা। মানুষের সবকিছুর একটা শেষ আছে। রাফসান আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। এখন তারও অস্তিত্ব থাকে কি-না দেখ। দোকানে কত লক্ষ টাকার মালামাল ছিল জানিস? সবই গেছে। চাচারা ঋণ করে দিয়েছিল দোকান। আর কোত্থেকে তাকে দেবে? এমনিতেই রাফসানের চাচীরা প্রথম থেকেই এগুলো ভালোভাবে নিচ্ছিল না। এখন রাফসানের বিয়ে-শাদি তো দূর, নিজে খেয়ে-দেয়ে বেঁচে থাকাটাই বড়ো।’

– ‘দোকান তো আর সে জ্বালায়নি বাবা।’

– ‘সে জ্বালায়নি ঠিকাছে, কিন্তু জ্বলেছে তো মা। এখন আর এসব পাগলামি করিস না। আমরাও তো তোর ভালো চাই। তোর সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চাই। হৃদের সাথে বিয়ে হলে সব দিক থেকে ভালো হয়রে মা।’

ইলি বিছানা থেকে নেমে টেবিলে চায়ের কাপ রেখে বাথরুমে ঢোকার আগে বললো,
– ‘এতো বুঝাতে হবে না বাবা। তোমরা হৃদের সাথে বিয়ে ভেঙে দাও। রাফসান ভাইকে আমি অনেক আগেই মনে-প্রাণে গ্রহণ করে নিয়েছি। এখন তার সুখ-দুঃখ ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথে আমি জড়িত। একবার ভাবো, যদি রাফসান ভাইয়ের সাথে আমার এক মাস আগে বিয়ে হতো আর আজ তার এই অবস্থা হতো আমি কি ডিভোর্স দিতাম?’

রহিমা বেগম দাঁত কটমট করে তাকাচ্ছেন।
লতিফ মিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। ইলি বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মুখ-হাত ধুয়ে আবার বাইরে এসে বললো,
– ‘আমার মোবাইলটা দাও। বাড়াবাড়ি বেশি করবা না। আর ভালো করে শোনে রাখো, জোর করে আমাকে তোমরা বিয়ে দিতে পারবে না৷ এগুলো মাথা থেকে বাদ দিতে পারো। এখন মোবাইল দিয়ে রুম থেকে বাইরে যাও।’

লতিফ মিয়া ‘হা’ করে চেয়ে রইলেন। তারপর রহিমা বেগমকে বললেন, ‘ওর মোবাইল নিয়েছো কেন? মোবাইল দাও এনে।’
রহিমা বেগম মোবাইল এনে দিলেন। লতিফ মিয়া শান্ত গলায় বললেন, ‘আচ্ছা মা তুমি ঠান্ডা মাথায় ভাবো, আমরা যাচ্ছি।’

ইলি মোবাইল হাতে নিয়ে রাফসানকে মেসেজ দিতে যেয়েও দিলো না। রাফসান এখন এমনিতেই মানসিক চাপে আছে। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই দুপুরের প্রসঙ্গ আসবে। সুতরাং দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়ে লাভ নেই। এর থেকে কাল দেখা করবে গিয়ে। তখনও বিয়ের ব্যাপারে কিছুই বলবে না। অন্য প্রসঙ্গে কথা বলবে। সান্ত্বনা দেবে।

ভোর সাতটায় ইলি ঘুম থেকে উঠে। অন্যদিনের মতো ব্রাশ নিয়ে পুকুরে না গিয়ে বাথরুমে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে ভ্যানিটিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মোবাইলের কভারের নিচে নেয়। এই এক জ্বালা৷ মেয়েদের সেলোয়ার-কামিজ, শাড়ি কোনো কিছুতেই পকেট নাই। মেয়েদের যেন পকেটের দরকার পড়তেই পারে না। চুলগুলো খোঁপা করে ওড়না মাথায় দিয়ে দরজা খুলে বাইরে আসে। ঘর থেকে রহিমা বেগম ডেকে বললেন,
– ‘এই কোথায় যাচ্ছিস রে?’

– ‘বাইরে যাচ্ছি।’

– ‘কেন?’

– ‘রাফসান ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি।’
কথাটি বলে ইলি গেইট খুলে হাঁটতে থাকে। রহিমা বেগম দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছেন। ইলি হেঁটে হেঁটে গেল বিল পাড়ের দোকানে। সেখানে বাড়িতে নাস্তা তৈরি করার মতো কিছুই পেল না।
নুডলস, তেল, ডিম আর অল্প পিঁয়াজ মরিচ নিয়ে রাফসানদের বাড়িতে এলো। উঠোনের উত্তরদিকে রাফসানের চাচি শীম পারছিলেন। ইলিকে দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
– ‘তোমার কি লজ্জা-শরম নাই ইলি? কাল তোমার কারণে জোয়ান-যুবক ব্যাটাকে তোমার মা চড় মেরে দিলেন। আজ আবার আসছো তুমি?’

ইলি কিছুই বললো না। তার কাছে মানুষের গুরুত্ব খুবই কম। গুরুত্ব দিতে হলে সে যুবতী মেয়ে হয়ে দোকান থেকে পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে আসতেও লজ্জা পেতো। মেয়েরা এমন কত ধরণের লজ্জা পায়। কে কি ভাববে। কে কি বলবে ইলি ভাবে না৷ এখন একটা চাকুরী হলে আরও কম ভাবতো। রাফসানের নক দেয়।
কোনো সাড়া না পেয়ে কল দিলো। একটা রিং হতেই রাফসান ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম গলায় বললো,
– ‘হ্যালো।’

– ‘দরজা খুলো।’

– ‘বুঝিনি।’

– ‘তোমার দরজা খুলো।’

– ‘ও আচ্ছা।’

রাফসান দরজা খুলে অবাক নয়নে তাকিয়ে বললো,
– ‘তুই?’

– ‘পথ ছাড়ো ভেতরে যাবো।’

রাফসান সরে দাঁড়ায়। ইলি ভেতরে যেয়ে টেবিলে পলিথিনের ব্যাগ রেখে বললো,
– ‘ঘুমে ডিস্টার্ব দিলাম তাই না?’

– ‘ঘুম রাখ, তুই আজ আবার আসলি কেন?’

– ‘এমনিই আসলাম।’

– ‘ইলি পাগলামি করিস না। গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে সব জানবে। শেষে মুখ দেখাতে পারবি না।’

– ‘আমি এগুলো ভাবি না রাফসান ভাই। যাও মুখ ধুয়ে আসো। আমি নুডলস বানাতে রান্না ঘরে যাচ্ছি।’

– ‘এগুলো রেখে বাড়িতে চলে যা। আমি নিজেই খেয়ে নেবো।’

– ‘কেন? আমি রান্না করে এক সঙ্গে খাই?’

– ‘তুই বুঝতেই পারছিস না ইলি কি করছিস। মানুষ এখন সব খেয়াল করবে। মামা-মামীরা মুখ দেখাতে পারবেন না। এখানে রান্না করে খাওয়াইয়ে গেছিস সেটা নিয়ে নানান মানুষ নানান ধরনের গল্প ফাঁদবে।’

– ‘তুমি ছেলে মানুষ হয়ে অন্যদের কথা এতো ভাবছো কেন?’

– ‘ইলি চাচিরাও নিশ্চয় কান পেতে আছেন। তুই এখন চলে যা। এমনিতেই মন-মেজাজ ভালো নেই।’

ইলি আহত নয়নে খানিক্ষণ তাকিয়ে রইল। সে যেভাবে ভেবে এসেছিল সেরকম কিছুই হয়নি। উল্টো তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা সামনে চলে এসেছে। ইলি চেয়ার থেকে উঠে বললো,
– ‘আচ্ছা যাচ্ছি।’

— চলবে—
লেখা: MD Jobrul Islam
— চলবে— ( উপন্যাসের শেষদিক চলছে। সবাই কমেন্ট করবেন। ফিনিশিং কি হতে পারে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে আপনাদের ভাবনা প্রকাশ করবেন )
লেখা: MD Jobrul Islam

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here