স্বপ্নময় ভালোবাসা
রোকসানা আক্তার
||পর্ব-০৫||
ছপছপ ঘামে জামার উপরের অংশ ভিঁজে যায়। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম গালের উপর দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার মতো বেয়ে পড়ছে।আমি বাম হাতের তালু দিয়ে কপালটা মুছে নিয়ে হাতে রাখা হ্যান্ড ব্যাগটা আলতোভাবে বিছানার এককোণে রাখি।
ক্লান্তি মাখা শরীর নিয়ে ব্যাগের পাশ ঘেঁষে বসি।মাথাটা ঝিমঝিম করছে।চোখ ছোট্ট হয়ে আসছে।চোখ মেলে তাকাতেও যেন পারবো না এমন কাহিল কাহিল লাগছে।এই মুহূর্তে আরেকবার শাওয়ার নিতে পারলে বোধহয় একটু আরাম লাগতো।
টোয়া রিনতির সাথে কী কথা সেড়ে ভেতরে এসেই সুইচ টিপে ফ্যান চালিয়ে দেয়।আর ফঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বেহুতাশ বিছানায় উপর গা ছড়িয়ে বসে।আমি উঠে যেয়ে ব্যাগ থেকে একটা জামা নিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই টোয়া বলে উঠলো,
“শাওয়ার নিবি?”
“হু।”
“আমিও নিতে পারলে বোধহয় একটু ভালো লাগতো।খুব গরম লাগছে।”
“তাহলে নিয়ে নিস।”
“আচ্ছা,আগে তুই চ্যান্জ করে আয়।”
টোয়ার কথায় সায় দিয়ে বাথরুমে ঢুকে যাই।
অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নিতে থাকি।ঠান্ডা জলে গা টা ভালোভাবে ভেঁজানোর পরে চ্যান্জ করে বাইরে আসি।আমাকে দেখামাত্র টোয়া উঠে দাড়ায়।তারপর সেও ড্রেস হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকে।
আমি প্রশান্তি মনে বিছানার উপর বসি।কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর হঠাৎ আমার কিছু একটা মনে পড়ে যায়।আমি তড়িৎ বেগে পাশে তাকাই।পাশে আমার হ্যান্ড ব্যাগটি আর এই হ্যান্ড ব্যাগের মধ্যে আকাশের দেওয়া সেই প্যাকিং টি।আমি সতর্ক চোখে চারপাশ তাকিয়ে ব্যাগটা আলতো হাতে নিই।চেইন খুলে প্যাকিংটা বের করি।প্যাকিংটা খুলতে যাবো এমতাবস্থায় আমার ফোন বেজে উঠে।আমি চমকে প্যাকিংটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখি।দেখা হয়নি।তার আগে ফোনটা রিসিভ করতে উঠে দাড়াই।টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিতেই ভ্রু কুঁচকে আসে আমার।নাম্বারটি আননউন।আননউন নাম্বারে কল করার মতো আমার তেমন কেউ নেই।এই নাম্বারটি আমার একান্ত পার্সোনাল।পরিচিত দুই একজন ছাড়া কারো কাছে এই নাম্বারটি নেই।তাহলে কে কল করতে পারে?ভেবেই খানিক ভয় এবং কৌতূহল নিয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কোনো পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“হ্যালো? আর ইউ,সানা?”
আমি খানিক বিচলিত হয়ে একটা ঢোকর গিলি।তারপর টান টান গলায় বললাম,
“জ্বী!আপনি কে?”
“আমি মিস্টার তুরাব মাহমুদ!এগোরার বর্তমানে সিনিয়র মোটিভেটর!আই হোপ ইউ ক্যান নও মি নাউ।বায় দ্য ওয়ে,যেটা বলতে কল করেছি আপনি গতকাল ইন্টারভিউ না দিয়ে চলে আসলেন কেন?”
ওপাশের ব্যক্তির বলা শব্দগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তে আমার মেরুদণ্ড বরাবর একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়।বুকের ভেতরের হৃদপিণ্ডটা দুই হাত লাফিয়ে উঠে।শাওয়ার নিয়েছি মাত্র এরমাঝেই তরতর ঘামতে থাকি।দম নিতে পারছি না।শ্বাসটা ঘন হয়ে আসছে যেন এমন একটা পরিস্থিতির জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না!খুব খুব কষ্টে বুকে হাত রেখে জোরে শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ি।নিজেকে যথেষ্ট সামলে বললাম,
“ইচ্ছে হলাম তাই চলে এসছি!”
“চাকরিটা ত আপনার খুবই প্রয়োজন ছিল,তাই না?”
এ’কথাটা এবার আমার বুঁকে মাঝে তীরের মতো এসে বিঁধলো।সাথে আত্মসম্মানেও এসে আঘাত করলো।চোঁখ খিঁচে সহ্য করে নিয়ে বললাম,
“প্রয়োজন থাকলেই যে এগোরাতে চাকরিটা করতাম তা ভাববেন না।”
ওপাশের ব্যক্তি খানিক হেসে দিয়ে বললো,
“ওয়াও!খুব ভালো কথা জানেন আপনি।মানুষকে উপকার করার কথা ভেবে যদি এমন কুৎসা কথা শুনতে হবে জানতাম তাহলে যেচে এসে কখনোই বলতাম না!”
“উপকার!কীসের উপকার?আমি কারো দয়া উপকার চাই না।”
“আপনাকে করছি না।আপনার পরিবারকে করছি!কারণ,আগে দায়িত্বটা ছিল একরকম। এখন দায়িত্বটা ছেড়ে দিচ্ছি অন্যরকমভাবে।যাইহোক,যেহেতু করবেন না,তাহলে কারো ইচ্ছেতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমার নেই।রাখছি!”
“আমার কথা শেষ হয়নি!
বলেই চোখবুঁজে খানিক চুপ থেকে তারপর আবার বললাম,
“যাদের টাকা নেই, ভাববেন না তাদের আত্মসম্মান নেই!টাকা নামক বস্তুটা থেকেও মানুষের কপট কথার মুখটা কিছু মানুষের জন্যে জঘন্য!”
মুহূর্তে না দেরী করে কলটা কেঁটে দিই!কেনজানি এবার ছলছল চোখ থেকে লোনা পানি ঝরতে থাকে।চোখের পানি টুকু আঁটকাতে আমি কোনোরকম বাঁধা প্রদান করছি না!খুব নিস্তব্ধ, নির্জীব, নিষ্প্রভ হয়ে দাড়িয়ে আছি!
কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর টোয়া দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে কিছুটা ধাতস্থ হয়।দাড়িয়ে থাকার কারণ বুঝতে না পেরে আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রাখতেই আমি ছোট্ট চোখে তুলে টোয়ার দিকে তাঁকাই।আমি বুঝতে না দিলেও সে আমার গালে পানির শুকনো দাগ দেখে বুঝতে সময় লাগে নি আমি যে এতক্ষণ খুব কেঁদেছি।এবার আমার কাঁধে খুব জোরে চাপড়ে ধরে বললো,
“সানা,তুই কেঁদেছিস এতক্ষণ?কেন কেঁদেছিস?কি হয়েছে তোর? কি হয়েছে?”
আমার চুপ থাকা দেখে টোয়া এবার আমার গালে ধরে বললো,
“বলছিস না কেন? কি হয়েছে তোর?”
নিজেকে আর সংযত রাখতে পারিনি।সারা শরীর কেঁপে উঠে।নাকমুখ ফুঁপিয়ে উঠে।বুকটা দ্রুতগতিতে উঠানামা করে।আর সঙ্গে সঙ্গেই টোয়া আমায় তারদিকে নিয়ে জোরে চেপে ধরে।আমি হিতাহিতজ্ঞান শূন্যতা হয়ে টোয়াকেও জড়িয়ে ধরে জোরে আওয়াজ করে কান্না করে দিই।আমার কান্নাতে সকল মান-অভিমান,বাঁধা সব ছিন্নভিন্ন হয়ে এক নিষ্পাপ শিশুতে পরিণত হয়!!
চলবে..
(ছোট্ট হয়ে গেছে দুঃখিত!আসলে আজকে সময় ছিলনা।বেড়াতে এসছি।কিছু সময় বের করে নিয়ে এটুকু লিখলাম।তারজন্যে আমি দুঃখিত!)