#পূর্ণতা🖤
#Part_15+16
#Writer_Megla(মেঘ)
সময়! তিন বর্ণের ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু তার কতৃর্ত্বের বিস্তৃতি অনন্ত অসীম। সঠিক সময়ের অপেক্ষায় পুরো বিশ্ববমান্ড থেমে থাকলেও……..
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। সে তার নিজের গতিতে প্রবহমান। সময়ের ছাঁচে পড়ে পাল্টে যায় অনেক কিছুই। পাল্টে যায় মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভালোলাগা, হয়তো ভালোবাসাও!!
তূর্যর ক্ষেত্রে ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পূর্ণতার প্রতি তার মনে যে বিক্ষিপ্ত অনুভূতি জন্ম নিয়েছিল সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তার অনেকটাই এখন শূন্যে মিলিয়ে গেছে। পূর্ণতার সেই ঝংকার তোলা হাসির শব্দ এখন আর তার কানে বাজে না কিংবা মাঝরাতে হঠাৎ করেই পূর্ণতাকে ছুঁয়ে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছা ও এখন আর তার মধ্যে কখনো জেগে ওঠে না।কথায় আছে,,,,,
“দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। আর যদি ভালোবাসা না থাকে দূরত্ব সেটা বোঝায়।”
আর এই কয়েক মাসে তূর্য একটা কথা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে, পূর্ণতা প্রতি তার যে অনুভূতি জন্ম নিয়েছিল, সেটা আর যাই হোক ভালোবাসা না। কিন্তু সেই অনুভূতিটার নাম কি?……
এখনো জানা নেই তূর্যর। তবে পূর্ণতার কথা যে তার একেবারেই মনে পড়ে না সেটা বলা বোধ হয় ঠিক হবে না। মাঝে মাঝেই সে তন্ময়ের কাছ থেকে পূর্ণতার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়। তবে সেটা ভালবাসা না। বরং দায়িত্ব বোধ কিংবা সিমপ্যাথিও হতে পারে। তূর্যর আজকাল পূর্ণতার প্রতি একধরনের সিমপ্যাথি কাজ করে। হাজার হলেও তো পূর্ণতা তার মামার মেয়ে। মামাতো বোন! তাই পূর্ণতার প্রতি একটা দায়িত্ব বোধ তো তার থেকেই যায়।
এই কয়েক মাসে তূর্যর জন্য সবকিছু পাল্টে গেলেও একটা বিষয় এখনো স্থবিরই আছে। সেটা হচ্ছে, তূর্য আর রিশার বিয়ে। তূর্য আর রিশার বিয়েটা এখনো হয়নি। তার কারণ রিশার বাবা! মাঝে রিশার বাবা একটু অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন তাই বিয়েটা দুই মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নেক্সট মান্থের লাস্টের দিকে তাদের বিয়ে। তূর্য ইদানিং খুব ব্যস্ত। সারাদিন হসপিটাল, চেম্বার এসব করেই তার সময় যায়। আজ তূর্য তার কেবিনে বসে ল্যাপটপে একটা রোগীর ডিটেইলস দেখছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার মুঠোফোনটা বেজে উঠল। তূর্য ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো তন্ময় ফোন করেছে। সে মনে মনে ভাবলো,
“তন্ময় এই সময় তাকে কেন ফোন করেছ? পূর্ণতার কিছু হয়নি তো?”
কথাটা ভাবতেই তূর্যর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। সে বুঝতে পারছে না, হঠাৎ পূর্ণতার জন্য তার এমন কেন লাগছে? তূর্য কোন মতে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই তন্ময় বললো,
————-“সরি তোকে এই সময় ডিস্টার্ব করার জন্য। তুই কি খুব ব্যস্ত?”
————-“খুব ব্যস্ত না। এইতো ল্যাপটপে একটা রোগীর ডিটেইলস দেখছিলাম।”
————-“ওহ্ তাহলে মোটামুটি ফ্রি ই আছিস?”
————–“হুঁ,তা বলতে পারিস। কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
————–” আসলে তোকে একটা কথা বলার ছিল। পূর্ণতার ব্যাপারে।”
‘পূর্ণতা’ নামটা শুনে আবারো তূর্যর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সে মনে মনে ভাবলো,কি বলবে তন্ময়? পূর্ণতার খারাপ কিছু হয়ে যায়নি তো?
পরক্ষনেই তূর্য নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, আমি শুধু শুধুই বাজে চিন্তা করছি। পূর্ণতার কিছু হলে নিশ্চয়ই তন্ময় এখনো নিজেকে এতোটা স্বাভাবিক রাখতে পারতো না। তন্ময় যে টাইপের ছেলে, পূর্ণতার কিছু হলে এতোক্ষণে সে নিশ্চয়ই কেঁদে কেটে বন্যা বানিয়ে ফেলতো কিন্তু আজ তন্ময়ের কন্ঠে তো কান্না বা ভয় কোনটাই মিশ্রিত নেই। বরং সে খুব স্বাভাবিক আর তার কন্ঠোও বেশ উচ্ছ্বসিত শোনাচ্ছে। নিশ্চয়ই সে ভালো কিছুই বলবে। তূর্যকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে তন্ময় বললো,
————-“এই তূর্য? আদৌও কি লাইনে আছিস তুই? শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা?”
তন্ময়ের কথায় তূর্য তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে মৃদু কন্ঠে বললো,
————–“হুঁ, শুনতে পাচ্ছি। বল কি বলবি।”
তন্ময় আমতা আমতা করে বললো,
————“না মানে আসলে বুঝতে পারছি না, তোকে যে কথাটা কিভাবে বলবো? কথাটা শুনে তুই আবার রাগ করবি না তো?”
————-“আমি শুধু শুধু তোর উপর কেন রাগ করতে যাবো? আর তুই তো পূর্ণতার ব্যাপারে কথা বলবি। তাতে আমার রাগ করার কি আছে?”
————–“তোকে আমি সেদিন বলেছিলাম, পূর্ণতা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ কিন্তু ওর সুস্থতার আসল কারণটা তোকে এখনো বলা হয়নি।”
————“মানে?”(ভ্রু কুঁচকে)
————-“আমার বাবা-মাকে তুই তো খুব ভালো করেই চিনিস। পূর্ণতার ব্যাপারে আমি তাদেরকে বিশ্বাস বা ভরসা কোনটাই পুরোপুরি করতে পারি না। তাই তুই আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়ার পর পূর্ণতার জন্য আমি একজন নতুন ডাক্তার এপয়েন্ট করছি।
ডাঃ সুজয় চোধুরী। আমাদের এখানকার বেস্ট ডাক্তার। তুইও হয়তো তাকে চিনিস। দু বছর আগে ইউএসএ থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরেছে। আর গত কয়েক মাস ধরে ডাঃ সুজয় চৌধুরীই পূর্ণতাকে দেখছে। আমি কথাটা তোকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম তোকে কথাটা কিভাবে বলবো? আর তুই শুনেই বা কি রিয়েক্ট করবি?”
তন্ময় কথা শুনে তূর্য আক্ষেপের সুরে বললো,
————“আচ্ছা তন্ময় আমি কি ডাক্তার হিসাবে এতোটাই খারাপ? এতোটাই অযোগ্য? যে নিজের মামাতো বোনের চিকিৎসাটুকু ও নিজের হাতে করতে পারবো না। আমি তো পূর্ণতাকে আমাদের সাথে নিয়েই আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু মামা-মামীই তো তাতে মত দিলো না কিন্তু তোর উপর আমার বিশ্বাস ছিল……
তুই একবার আমাকে বলতে পারতিস যে, পূর্ণতার নতুন ডাক্তার দরকার। তাহলে আমি না হয় পনের দিন পর পর একবার করে তোদের ওখানে গিয়েই ওর কাউন্সিলিং করে আসতাম।”
তূর্যর কথার প্রতিত্তরে তন্ময় খুব শান্ত গলায় বললো,
————-“আমি জানি তুই খুব ভালো ডাক্তার কিন্তু পূর্ণতার ট্রিটমেন্ট করার সাধ্য তোর নেই। হয়তো ডাক্তারি করতে গিয়ে এমন কিছু শুনলি যেটা তুই দুঃস্বপ্নেও কোনদিন ভাবতে পারিসনি। হয়তো এমন কোন সত্যের মুখোমুখি তোকে হতে হলো যেটা তোর পক্ষে কোন দিনই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
তূর্য কিছু বলছে না। শুধু চুপচাপ তন্ময়ের কথা শুনছে। তার এখন তন্ময়ের উপর খুব রাগ হচ্ছে। তূর্য মনে মনে ভাবছে,”এমন কি সত্য থাকতে পারে যেটা আমি ফেস করতে পারবো না? আসলে তন্ময় আমাকে ঠিক ভরসাই করতে পারেনি। তাই তো পূর্ণতার জন্য সে অন্য কাউকে এপয়েন্ট করেছে। সত্যিই কি আমি ডাক্তার হিসাবে এতোটাই অযোগ্য?”
তূর্য কোন কথা বলছে না দেখে তন্ময় বললো,
————-“আমার মনে হয় তুই বিজি। আমি বরং এখন ফোনটা রাখি।”
এই বলে আর এক মূহুর্ত দেরি না করে তন্ময় ফোনটা কেটে দিলো। তূর্যও রাগ করে নিজ থেকে তন্ময়কে আর ফোন করলো না। সে মনে মনে ভাবলো, পূর্ণতা যখন ভালোই আছে। তাহলে আর শুধু শুধু তার চিন্তা করে লাভ কি? আর পূর্ণতার কিছু হলেই বা কি? তন্ময় তো আছেই পূর্ণতা কিছু হলে চিন্তার করার জন্য। সেখানে তূর্যর কোন দরকার নেই। সে তো বিরিয়ানিতে এলাচ মাত্র। একটা উটকো ঝামেলা। কথাগুলো ভেবেই আবারো কাজে মনোযোগী হলো তূর্য। ক্ষণিকের জন্য ভুলে গেল ‘পূর্ণতা’ নামের তার সেই অবাধ্য অনুভূতিটাকে কিন্তু বেশিক্ষন সে পূর্ণতাকে ভুলে থাকতে পারলো না। তার কাজের মধ্যেই আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো,
সেই পাগলাটে স্বভাবের পূর্ণতা……..
যার ওই পাগলমীর বহরেই পরিতৃপ্তি ছিল তূর্য!!
তূর্যর এই মূহুর্তে পূর্ণতাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। পূর্ণতা সেই ঝংকার তোলা হাসি আর মোহময়ী কন্ঠে আসক্ত হওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগছে তার। পূর্ণতার সেই অনুনয় মিশ্রিত সুরে বলা,”ভালো ভাইয়া আমাকে একটা গল্প শোনাবে?”
এই মুহূর্তে খুব শুনতে ইচ্ছা করছে তূর্যর। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে নিজের মুঠোফোনটার দিকে হাত বাড়ালো তূর্য। এই মূহুর্তে পূর্ণতা কন্ঠটা না শুনতে পারলে সে বোধহয় দমবন্ধ হয়ে মারাই যাবে। তূর্য ফোনটা হাতে নিলেও কাউকে ফোন করলো না। বরং এই মূহুর্তে সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। সে মনে মনে ভাবলো,
“পূর্ণতা তো আমার মামাতো বোন। আর আমি নিজেও এনঞ্জেইজড। একজনের হাফ বর হয়ে অন্য কাউকে নিয়ে এরকম ভাবনা আমার একদম মানায় না। আজকের পর থেকে পূর্ণতাকে নিয়ে আমি আর কখনো ভাববো না। কক্ষনো না।”
#চলবে……
#পূর্ণতা🖤
#Part_16
#Writer_Megla(মেঘ)
প্রতিটি মানব জীবন সুখ আর দুঃখ এই দুই খণ্ডে বিভক্ত। মানুষের গোটা জীবনটাই সুখ আর দুঃখ এই দুইয়ের সমাবেশ।’সুখের পরে দুঃখ কিংবা দুঃখের পরে সুখ’ এটাই জীবনের নিয়ম। কিন্তু পূর্ণতা জীবনের কখনো ‘সুখ’ নামক শব্দটাকে অনুভব করতে পারেনি। বোধ শক্তি হওয়ার পর থেকে দুঃখের সাথেই তার বাস। চাচীর অত্যাচার আর অবহেলা সহ্য করতে করতেই যেখানে তার দিন যায়,সেখানে ‘সুখ’ নামক শব্দটা জন্য জন্য নিছকই অস্তিত্বহীন। চারপাশের মানুষের এতো সুখময় অনুভুতির মাঝে পূর্ণতা একাই গাঢ় বিষন্নতার চাদরে মোড়ানো কোন ক্ষুদ্র বালিকা……
তবে সবার মতো সেও একমুঠো সুখের স্বপ্ন দেখে। কোন একদিন একমুঠো সুখ এসে ধরা দিবে পূর্ণতার ওই বিষন্ন মনের কোণে। সবার মতো সেদিন খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে পূর্ণতাও। তার সেই হাসি ক্ষণিকের উত্তেজনার জন্য নয় বরং এক বিস্তৃত পরিতৃপ্তির হাসি!!
পূর্ণতার সেই খিলখিল হাসির শব্দ বয়ে বেড়াবে তার সুখের আভাস। সেদিন রাতের জোনাক পোকা কিংবা ভোরের প্রজাতি সবাই জানবে পূর্ণতাও সুখী হয়েছে। শত দুঃখকে পাড়ি দিয়ে সেও সুখ রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু সেই দিনটা কবে আসবে তার জীবনে? কবে? নিজেকে প্রশ্ন করে কোন উত্তর খুঁজে পায় না পূর্ণতা।
🍁
‘পূর্ণতা ভালো আছে’ কথাটা সবাই জানলেও পূর্ণতা জানে সে ভালো নেই। তন্ময় জন্য তার চাচী তাকে পাগলা গারদে আর পাঠাতে না পারলেও এই কয়েক মাসে তার অত্যাচারের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু তন্ময় এসবের কিছুই জানে না। আর সে জানেই বা কি করে? সে যার ভরসায় পূর্ণতাকে বাড়িতে নিশ্চিন্তে রেখে যায় সেই তো তার শাশুড়ির দলে নাম লিখিয়েছে। মালিহা আজকাল পূর্ণতাকে একদম সহ্য করতে পারে না। উঠতে বসতে সবসময় সে পূর্ণতাকে কথা শোনায়। দুই একবার সে পূর্ণতার গাঁয়েও হাত তুলেছে পর্যন্ত কিন্তু তন্ময় সেটা জানে না। পূর্ণতা এমনিতেই এসব কথা কখনো তন্ময়কে বলতো না। তার উপর মালিহা তাকে নিষেধ করে দিয়েছে, পূর্ণতা যেন এসব কথা তন্ময়কে কখনো না বলে। তাহলে পূর্ণতার খবর আছে।
মালিহা আর তন্ময়ের প্রথম পরিচয়টা হয়েছিল ইউএসএ থাকতে। তারা দুজন একই ভার্সিটিতে পড়তো। যেহেতু দুইজনই বাঙালি সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সখ্যতা বেশ ভালোই গড়ে উঠেছিল। সেই বন্ধুত্ব থেকে প্রেম আর প্রেম থেকে বিয়ে। কিন্তু ওদের বিয়েটা হয়েছে দুই পরিবারের মতামতের ভিত্তিতেই। যেহেতু ছেলে-মেয়ে দুজনই যোগ্য তাই তাদের মা-বাবারা কেউই আর এই বিয়েতে দ্বিমত করেনি। বিয়ের আগে তন্ময় অনেক বার মালিহাকে পূর্ণতার ব্যাপারে বলছে। এটাও বলেছে যে সে পূর্ণতার ব্যাপারে কতোটা পজিসিভ। মালিহা তখন সবসময় হাসি মুখে বললো,
————-“তুমি একদম চিন্তা করো না তন্ময়। পূর্ণতা কি শুধু তোমারা বোন? পূর্ণতা তো আমারও বোন। আর এটাতো আমার জন্য খুব খুশির ব্যাপার। আমার তো কোন বোন নেই। ভালোই হবে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে আমি পূর্ণতার মতো এতো সুইট একটা বোন পাবো।দেখ আমি সবসময় ওকে আগলে রাখবো। একদম নিজের বোনের মতো।”
আগে তন্ময় কখনো মালিহার সামনে পূর্ণতাকে ফোন করলে মালিহা পূর্ণতার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে যেত। পূর্ণতার জন্য গিফট কিনে পাঠাতো। আরো কতো কি!
কিন্তু এখন তার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রূপ দেখছে সবাই। মালিহার পূর্ণতাকে সহ্য না করতে পারার মূল কারণ হলো তন্ময়। তার ধারণা তন্ময় পূর্ণতাকে তার থেকে বেশি ভালোবাসে। সারাদিন পূর্ণতা চিন্তাই সে ব্যস্ত থাকে। সেখানে মালিহার জন্য নেই কোনো ব্যস্ততা, নেই কোনো অবকাশ। কিন্তু তন্ময়কে কিছু বলার সাহস তার নেই। তাই তার সব রাগ,ক্ষোভ সে পূর্ণতার উপর দিয়েই মিঠায়। কিন্তু তিথি আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গিয়েছে। প্রথম প্রথম তিথি তূর্যর মনোযোগ পাওয়ার জন্য পূর্ণতার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও এখন সে সত্যি সত্যিই পূর্ণতার সাথে ভালো ব্যবহার করে। পূর্ণতাকে গল্প শোনায় মাঝে মাঝে পড়তেও বসায়। পূর্ণতার পড়তে খুব ভালো লাগে কিন্তু এসএসসির পর তার আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। কারণ পূর্ণতার বড় আম্মু ওকে আর লেখাপড়া করতে দেয়নি। তার এক কথা,”এতো টাকা পয়সা খরচ করে কোন পাগলকে লেখাপড়া করিয়ে কি লাভ? পূর্ণতা তো আর কোনদিন চাকরি বাকরি করতে পারবে না। আর এরকম বধ্য পাগলকে কেই বা চাকরি দেবে?”
আজ তিথির ভার্সিটি অফ । দুপুরে তিথি আর পূর্ণতা ওদের রুমে বসে বসে গল্প করছিল। আসলে তিথি পূর্ণতাকে একটা বই পড়ে শোনাচ্ছিল। আর পূর্ণতা ও মনোযোগী শ্রোতার মতো তিথির কথা শুনছিল। এমন সময় তন্ময় তাদের রুমে এলো।
————-” আজ আমার বনুদেরকে তো খুব হাসি-খুশি দেখাচ্ছে। তা আমি কি জানতে পারি তাদের এতো খুশির কারণ কি?”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে তিথি আর পূর্ণতা দুজনই পেছন ফিরে তাকালো। দেখলো দরজার কাছে তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময়কে দেখে তিথি মজার ছলে বললো,
————-“সেই কারণটা তো আপনাকে বলা যাবে না মহাশয়। ইট’স ভেরি সিক্রেট। আমাদের দুই বোনের ব্যাপার। কোন বাইরের লোককে সেটা মোটেও বলা যাবে না।”
তন্ময় রুমের ভিতরে আসতে আসতে বললো,
———–“কি বললি? আমি বাইরের লোক।”(রাগ দেখানোর ভান করে)
তিথি হেসে বললো,
———–“বাইরের লোকই তো। এই পূর্ণতা তুই কি বলিস?”
তন্ময় ইনসেন্ট মার্কা ফেস নিয়ে বললো,
————“হ্যাঁ বনু তুমিই এর বিচার করো। আমাকে বাইরের লোক বলা তাই না? এখন তোর বিচার হবে।”(তিথির দিকে তাকিয়ে)
পূর্ণতা বুঝতে পারছে না সে এখন কি বলবে যে দিকে যাবে সেদিকেই তার বিপদ। তিথির পক্ষ নিলে তন্ময় রাগ করবে আর তন্ময়ের পক্ষ নিলে তিথি। পূর্ণতা বাচ্চাদের মত করে ঠোঁট উল্টে বললো,
————-“এভাবে বলছো কেন তিথি আপু?
প্রিয় ভাইয়া তো আমার বেস্ট ভাইয়া বাইরের লোক হতে যাবে কেন?”
পূর্ণতার কথা শুনে তিথি বিলাপের সুরে বললো,
————” বুঝি বুঝি সব বুঝি। যেই তোর প্রিয় ভাইয়াকে দেখলি, ওমনি আমাকে ভুলে গেলি। এখন প্রিয় ভাইয়াই তো তোর সব আমি তো তোর কেউ না।” এই বলে তিথি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
পূর্ণতা তিথির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
—————“আমি কখন বললাম যে, তুমি আমার কেউ হও না। তুমি তো আমার ভালো আপু। সোনা আপু। প্লীজ আর রাগ করে থেকো না আমার তো খুব কষ্ট হয়।”
পূর্ণতার কথা শুনে তিথি আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না। সে মুচকি হেসে বললো,
————-“হয়েছে তোকে আর কষ্ট পেতে হবে না। এই আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো রাগ করবো না।”(বুকে জড়িয়ে)
বোনেদের এই খুনসুটি দেখে তন্ময়ের খুব ভালো লাগছে। অবশেষে তার ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে। তিথি আর পূর্ণতা আগের আবার মতো হয়ে গেছে। তন্ময় তার বোনেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
—————–“আপনাদের মান-অভিমানের পালা শেষ হয়ে থাকলে কি আমি একটা কথা বলতে পারি?”
পূর্ণতা তিথির বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
—————“কি বলবে ভাইয়া?”
তিথির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
————–“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
————-“কি সারপ্রাইজ?”
তন্ময় মুচকি হেসে পূর্ণতার দিকে একটা ফরম এগিয়ে দিলো। ফরমটার দিকে তাকিয়ে তিথি জিজ্ঞেস করলো,
—————“এটা কিসের ফরম ভাইয়া?”
—————“পূর্ণতার কলেজ এডমিশন ফরম। এখন থেকে পূর্ণতা আবার লেখাপড়া করবে।”
কথাটা শুনে তিথি উচ্ছাস্বিত কন্ঠে বললো,
————“সত্যি বলছো ভাইয়া পূর্ণতা আবার লেখাপড়া করবে? আজ আমার পুর্ণতার জন্য খুব আনন্দ লাগছে।”
পূর্ণতা কোন কথা বলছে না। সে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সে আবার লেখাপড়া করবে। সেও কলেজে যাবে। পূর্ণতাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে তন্ময় বললো,
————-“কি হলো বনু? তুমি কোন কথা বলছো না কেন? তুমি খুশি হওনি?”
তন্ময়ের কথায় পূর্ণতা তার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এসে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
—————“আমি খুব খুশি হয়েছি ভাইয়া কিন্তু বড় আম্মু আবার রাগ করবে না তো? তোমাকে বকবে না তো?”
পূর্ণতার কথায় তন্ময় তাকে অভয় দিয়ে বললো,
————” তোমাকে এ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমি আছি তো। তুমি শুধু ভালোভাবে লেখাপড়া করবে। এতেই হবে। ঠিক আছে?”
পূর্ণতা আবারো মিষ্টি করে হেসে বললো,
———-“ঠিক আছে।”
তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে তিথিজিজ্ঞেস করলো,
———–“তো ভাইয়া পূর্ণতাকে কোন কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবে? আমাদের কলেজেই ভর্তি করিয়ে দাও। তাহলে ভার্সিটিতে যাওয়া আসার সময় আমিই ওকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারবো, আবার নিয়ে আসতে পারবো। আর ওর কোন সমস্যা হলেও আমি সেটা দেখতে পারবো।”
———-“তোদের কলেজেই দেব ভাবছি।”
———-“এটা আমাদের কলেজের ফরম? দেখি।”
তন্ময় তিথির দিকে ফরমটা এগিয়ে দিলো। তিথি একরাশ উচ্ছাস নিয়ে ফরটা দেখতে লাগতো। সে আজ সত্যিই খুব আনন্দিত। পূর্ণতা মুক্তির জয়গানে আনন্দিত। কিন্তু এই মুহূর্তে পূর্ণতা মাঝে তেমন কোন উচ্ছাস নেই। তার মাথায় এখন শুধু একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে, তার বড় আম্মু কি আদৌও রাজি হবে? সত্যিই কি সে আবারো সবার মতো লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে? নাকি আবারো একরাশ তিমির অন্ধকারে তলিয়ে যাবে তার নিষ্প্রভ সব স্বপ্নগুলো??
#চলবে……
(গত দুই দিন ধরে গল্প না দেওয়ার জন্য আমি সরি। আসলে কালকে একসাথে দুই পর্ব পোস্ট করতে চাইছিলাম কিন্তু রি চেইক করতে গিয়ে লেখা ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। তাই আর পোস্ট করতে পারিনি।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর যে বিষয়গুলো আপনাদের কাছে অতিরঞ্জিত মনে হবে প্লীজ কমেন্ট করে জানাবেন।)