পূর্ণতা পর্ব ১৭

#পূর্ণতা🖤
#Part_17
#Writer_Megla(মেঘ)

ঢাকা শহরের অতি অত্যাধুনিক একটা রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে আছে রিশা আর তূর্য। রিশার দৃষ্টি ব্ল্যাক কালার স্যুট পরিহিত তূর্যর দিকে। রিশা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে, ইশশ,ফরমাল গেট আপেও ছেলেটাকে কতো সুন্দর লাগে! মনে হয় একদম খেয়ে ফেলি।কিন্তু তূর্যর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে রেস্টুরেন্টটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। গত কয়েক বছরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় রেস্টুরেন্টের প্রতিটি দেয়ালে কতো পরিবর্তন এসেছে! তূর্যকে এভাবে এদিকে ওদিকে তাকাতে দেখে রিশাও তূর্যর দৃষ্টি অনুসরণ করলো কিন্তু সে বিষয়ে কিছুই দেখতে পেল না। তাই সে তূর্যকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
————-“কি হলো? কিছু কি খুঁজছো তুমি?”

রিশার কথায় তূর্য তার দৃষ্টি ফিরিয়ে একবার রিশার দিকে তাকালো। তার পর হালকা হেসে বললো,
————-” না কিছু না। আসলে আমি রেস্টুরেন্টটা দেখছিলাম।”
কথাটা বলেই তূর্য আবার তার কাজে মনোযোগী হয়ে পড়লো।

রিশা মৃদু কন্ঠে বললো,
————–“ওহ্।”

————–“হুঁ।”( আনমনে)

ক্ষাণিক পরে কিছু একটা ভেবে হঠাৎ চোখ ফিরিয়ে রিশার দিকে তাকালো। তার পর রিশার দিকে গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। আজ রিশাকে দেখে পূর্ণতার কথা খুব মনে পড়ছে তার। তূর্য বুঝতে পারছে না তার সাথে বারবার কেন এমন হচ্ছে? জীবনে এই নিজের সাথে করা কোন প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পারছে না তূর্য। যতবার সে পূর্ণতাকে ভুলতে চেষ্টা করছে ততবার আরো বেশি করে পূর্ণতার কথা মনে পড়ছে তার।

তূর্যকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেন জানি খুব লজ্জা লাগছে রিশার। খুব বলতে ইচ্ছে করছে, এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো? কিন্তু সেটা বলা কি ঠিক হবে? তূর্য যে টাইপের ছেলে যদি তাকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলে দেয়। তখন সে কি করবে? তাই সে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
————-” কার কথা এতো ভাবছো তুমি?”

তূর্য অস্ফুট স্বরে বললো,
————–“পূর্ণতার কথা।”

‘পূর্ণতা’ নামটা শুনে রিশার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বাচ্চাদের মত করে বললো,
————–“তুমি বলেছিলে আমাকে পূর্ণতার সাথে দেখা করাবে। এখন কিন্তু করালে না। কবে দেখা করাবে বলতো।আমার না খুব ইচ্ছা পূর্ণতাকে একবার জড়িয়ে ধরার। খুব মিষ্টি মেয়ে তাই না। অবশ্য তোমার বোন বলে কথা মিষ্টি তো হবেই। বলো না কবে দেখা করাবে?”

—————-“বলেছি যখন অবশ্যই দেখা করাবো।”

—————” আচ্ছা?আমাদের বিয়েতে পূর্ণতা আসবে তো? পূর্ণতা না আসলে কিন্তু আমি বিয়েই করবো না বলে দিলাম।”

রিশার কথা শুনে তূর্য হেসে বললো,
—————-“বাপরে কি হুমকি।”

কথাটা বলেই হঠাৎ আনমনা হয়ে পড়লো তূর্য। রিশা মেয়েটা নিতান্তই সহজ সরল। মানুষকে খুব সহজেই ভালোবাসতে জানে। শুধু তূর্যর মুখে পূর্ণতার কথা শুনে এই কয়েক মাসেই পূর্ণতাকে সে কতো ভালোবেসে ফেলেছে।তূর্য মনে মনে ভাবছে, এই ভালোবাসা কি আদৌও শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারবে সে? নাকি একরাশ ভুল বোঝাবুঝি আর হিংসার আড়ালে সব মিলিয়ে যাবে?

🍁
পূর্ণতা কখনো ভাবতেই পারেনি যে, তাকে আবার লেখাপড়া করানোর জন্য তার বড় আম্মু কোন দিন রাজী হবে। কিন্তু তার এই ধারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা করে দিয়ে তার বড় আম্মু তন্ময়ের এক কথায়ই পূর্ণতাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতে পারমিশন দিয়ে দিয়েছে।

আজ পূর্ণতার কলেজে প্রথম দিন ছিল। প্রথম দিনটা বেশ ভালোই কেটেছে তার। ক্লাসের সবাই অমায়িক। তার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করছে। কয়েক জনের সাথে বেশ বন্ধুত্ব ও হয়েছে পূর্ণতার।

কলেজ থেকে আসতে আসতে পূর্ণতার প্রায় বিকাল হয়ে গেল। সে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে দেখলো তার চাচী টেবিলে খাবার সাজিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। পূর্ণতার খুব ক্ষুধা পেয়েছে তাই সে তার চাচীকে দেখে বললো,
—————-“বড় আম্মু আমার না খুব ক্ষুধা লাগছে। একটু খেতে দিবে?”

—————” একটু খাবি কেন? আয় আয় আমি তো খাবার সাজিয়ে তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। সারাদিন না খেয়ে চেহারার কি অবস্থা হয়েছে। আয় তাড়াতাড়ি খেয়ে বোস।”

বড় আম্মুর কথা শুনে পূর্ণতার চোখ চড়কগাছ। সে বুঝতে পারছে না তার বড় আম্মু আজ তার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছে কেন? এর মধ্যে নিশ্চই কোন ব্যাপার আছে।কিন্তু আপাতত এসব কথা ভাবার সময় তার নেই। এই মুহূর্তে তার কিছু খাওয়া দরকার। খুব ক্ষুধা পেয়েছে। পূর্ণতা টেবিলে বসে তাড়াতাড়ি করে খাবার খেতে লাগলো। তার বড় আম্মু তার দিকে তাকিয়ে বললো,
—————“খাওয়া দাওয়া শেষ করে একবার আমার ঘরে আসিস তো মা।”

—————“আচ্ছা।”

পূর্ণতা খাওয়া দাওয়া শেষ করে তার বড় আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললো,
——————“আসবো?”

—————-” হ্যাঁ আয় মা।”

—————–“কি বলবে বড় আম্মু?”

পূর্ণতার বড় আম্মু ওর হাত ধরে বললো,
————“পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। এতো দিন ধরে তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি কিন্তু তুই কিছুই বলতে পারিসনি সব মুখ বুজে সহ্য করে নিয়েছিস। তবে কথা দিচ্ছি আজ থেকে আর কোন দিন তোর উপর কোন অত্যাচার করবো না। আর কোন দিন তোর স্বাধীনতা ভঙ্গের কারণ হবো না।”

তার বড় আম্মুর মুখে এরকম কথা শুনে পূর্ণতা তার বড় আম্মুর চোখের দিকে তাকালো। এই প্রথম তির চোখে পূর্ণতা নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে। এই প্রথম পূর্ণতা যেন মুক্তির স্বাদ অনুভব করছে। যদিও পরিপূর্ণ মুক্তি তার এখনো মিলেনি। তবুও পথের খোঁজ তো সে পেয়েছে!

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here