কুয়াশা মন পর্ব ৮

#কুয়াশা মন

পর্ব ৮..

“আমাকে আপন ভাবলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার জীবন নিয়ে খেলতি না। আমাকে নিশ্চয় কাঠপুতুলের মতো দেখায়।” শান্ত ভঙ্গিমায় মিহির মুক্তাকে বলছিলেন, “শত খেললেও যেন আঘাত পাব না। তুই জানিস, আমি মেয়েদের পছন্দ করি না। সাবিহাকে তো ছোটকাল থেকে বরাবরই অপছন্দ। সে বড় হতেই দেখেছি তোকে সে নিজ পক্ষে করে নিয়েছে। তুই তারই ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিস। তখনই তোর প্রতি ভালোবাসা একটু কমেছে আমার। একদিন হুট করেই এমন কাজ করে বসেছিস যে, ভাবতেই শুরু করে দিয়েছিলাম, এখানে আপন কেউ আমার আর রইল না। জানিস? বাবার মনে আমাকে নিয়ে এক কণা পরিমাণ ভরসাও জাগলে আমার কী পরিমাণ সাচ্ছন্দ্য বোধ হয়? জানি না, কী অপরাধ করেছি বলে বাবার মনে আমাকে নিয়ে এটুকুও সম্মান জাগাতে পারি না।
সেদিন আমাকে হুট করে টেইলর শপে তোর স্বামীর নিয়ে যাওয়াটা মাথায় খুব আজব ঠেকেছিল। সে এর পূর্বেও এই ধরনের অদ্ভুত কাজ বহু করেছে তা আমার জানা আছে। সেদিনেরটা একটু ভিন্নই লেগেছিল। আমি তবু গেলাম। ফিরে আসার পর যখন বাবা লিপস্টিকের চিহ্নের কথা জিজ্ঞেস করলেন, তখনই বুঝলাম আসলে এসব কে করেছিল এবং কেন করেছিল। বাবাকে শত বোঝানোর পরও তিনি নিজ ধারণায় অটল রইলেন।
আমার মুখে বিন্দুমাত্র ক্লেশ ছিল না। তবে বুঝিয়েছি অনেক। বাবা ভেবেই ফেললেন আমি বাহিরে গিয়ে তাঁর অগোচরে অনুচিত কাজ করে আসি এবং এসে মিথ্যা কথা বলি। সেযাবৎ এরচেয়ে অত্যধিক কটু কথা তার পূর্বে আমি কখনও সইনি। আমার নির্দোষিতার সাফাই আমার আছে।
আমি ভাবলাম, আমার সাথে শেষবারের মতো ছিল তোর স্বামী। যা করেছেন তা হয়তো তারই কারসাজি। আবার আমার সাথে তাঁর এমন কোনো সম্পর্ক নেই যে, এমন নীচু স্তরের মজা আমার সাথে সে করবে। বড় ভাইয়ার বিয়ের সময়ের কথা মনে পড়তেই সব বুঝেছি। বিয়ের শেষে স্বামীর সাথে মিলে তুই আমাকে আর সাবিহাকে এক করার ধান্দা করেছিলি। সেদিনও সে যা করেছিল, নিশ্চয় তোর নির্দেশে করেছিল। এমন দুষ্টু-বুদ্ধি তো একমাত্র তোরই থাকতে পারে। তুই আর তোর স্বামী একসাথে মিলে করেছিস বলে ধরা যায় সাবিহার জন্যই সব করেছিস। সাবিহা সে হিসেবে তোদের পক্ষে ছিল। সাবিহা আর মামার পরিবারকে ভালো করে চিনি। মামা আমাদের প্রতিপত্তির সাথে বরাবরি করতে কতই না আকাঙ্ক্ষা রেখেছিলেন। মেয়েকে উঁচু খান্দানে বিয়ে দেওয়ার সুযোগ অতি সহজেই মেলে নাকি? প্রথম বিয়ে ভাঙার পর উপায়ান্তর না দেখে হয়তো আমার পেছনে লাগতে সাবিহাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাবিহার কথা না-ই বা বললাম। তার মতো মিথ্যাবাদী, চালবাজি মেয়ে আগে আমি কোথাও দেখেছি বলে সন্দেহ। ছোটবেলা থেকেই সে বাবার মনে প্রতিবার নিজের ভালো স্বভাবের প্রতিমা গাড়ানোর জন্য আমায় ব্যবহার করে এসেছে। আমায় বকা শুনিয়েছে সবটা সময়। নিঃসন্দেহে আমার সাথে বিয়ের করানোর খেয়াল তোর দেমাকে সে-ই ঢুকিয়েছে। প্রতিপত্তি লাভের ভূত যে চড়েছে বাবা-মেয়ে উভয়ের মাথায়। এরচেয়ে অধিক আর কীই বা বলব? সবকিছু আমি জানি, তুইও অনবগত না। কাজেই সব পরিষ্কার উভয়ের সামনেই আছে। বোন হয়েও যে আরেকজনের তরফে থাকে, ওখানে আমার আপন হওয়ার কী ভরসা? সত্যি বলতে, ভেঙে পড়েছি আমি। কাউকেই আপন বলে মনে হচ্ছে না। বিয়ের পর থেকে এগুলোর জন্য সাবিহাকে কথার করাঘাত করতে যাইনি। কী লাভ? তাকে আগেও অসংখ্যবার বকা দিয়েছি, ঝগড়া করেছি তার সাথে। প্রতিবার সে ইনিয়ে-বিনিয়ে নিজ সাফাইয়ের একটা কিসসা গেয়ে যেত। এমন করুণ সুরে বলা অনেক কথা আছে যেসবে অনেকে বিশ্বাস না করে পারে না। আমিও অনায়াসে ওর প্রতিটা মিথ্যায় বিশ্বাস করে এসেছি, যৎসামান্য হলেও। বিয়ের পর ওই ভুল আর করিনি। ওর সাথে কথা আর বলতে যাইনি। সে যে স্বার্থ চেয়েছে তা একবারেই পেয়েছে তাই বড় কথা। ভাবলাম, আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে হলেও যে যার ইচ্ছা পূরণ করুক। তুই তোর ভাবি হিসেবে একটা বান্ধবী পেয়েছিস, সাবিহার বাবার ধন বেড়েছে, বাবাও আমাকে বিয়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। এরচেয়ে অধিক কিছু কেউ করে দিতে পারে না। তোরা এখন সুখে থাকার কথা। তবে এতো চিন্তা, এতো প্রশ্ন কেন?”
আমি আর মুক্তা তাঁর দিকে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। তাঁকে এই নিয়ে বহুবার বুঝিয়েছে, পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত না হয়ে কারও চরিত্র সম্বন্ধে ফয়সালা না-ই করতে। কিন্তু তিনি এই ভুলই বারংবার পুনরাবৃত্তি করেন। অবশেষে জানলাম, তিনি আমাকে নিয়ে এই ধারণা রাখেন? তিনি একবার সবকিছুর গহীনে গিয়ে ভাবতে পারতেন।
মুক্তা তখনই বলার জন্য উদ্যত হয়, “ভাইয়া, তুমি আমাদের খুব ভুল বুঝছ। এখানে বেশিরভাগ দোষ আমার। এতে সাবিহার তো হাত নেই-ই বলতে গেলে। আমি প্রতিবার কোনো বোকামো করার আগে ভাবি না একটিবার, হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। কাজগুলো আমি ছেলেমানুষের ন্যায় করে ফেলি। আমি কল্পনাও করিনি, সেসব কাজের কারণে বাবা তোমাদের কাছ থেকে এতকাল যাবৎ মুখ ফিরিয়ে থাকবেন। আমি সত্যিই এমন ধারণা করিনি ভাইয়া। সাবিহা একদম নির্দো..”
কথা শেষ করতে না দিয়ে মুক্তার কাঁধে হাত রাখলাম। সে পাশে ঘুরে আমার দিকে তাকালে আমি নম্র চাহনিতে ইশারায় আর কিছুই বলতে নিষেধ করে দিলাম। কারণ মুক্তার এতো কথাবার্তায় তাঁর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। কথাগুলো শোনেও যেন শুনছেন না। এতকিছু তাঁকে বলে আর লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। আজীবনের জন্য আমি দোষিণী হয়ে গেলাম। আমাদের শত স্বীকারোক্তিতেও আমাকে নিয়ে গড়া তার অভিমানের দর্পণ সহজেই ভাঙবে না।
কিন্তু মুক্তার ধৈর্যের বাঁধ সহজেই তর সইছে না। সে আবার ক্ষিপ্রবেগে বলতে লাগল, “ভাইয়া তুমি এসব ঠিক করছ না। তোমার যাই মনে আসে তাই ভাববে? তুমি এভাবে সহজেই সাবিহাকে ফেলনার মতো ভাবতে পারো না। বললাম তো, ও দোষী নয়। যা হবার হয়ে গিয়েছে। ওসবকে বাদ দিয়ে সাবিহাকে আপন করে নাও। এতে সবারই ভালো।”
“তোদের ছাড়া আমি অচল নই। আমি একাই থাকতে পারব। আমি না হয় সাবিহার কাছ থেকে তালাক নেবো। তবু এই মেয়ের সাথে আমার সংসার করার আর কোনো ইচ্ছা নেই।”
“তালাক? তুমি সাবিহাকে তালাক দেবে? ভাইয়া, মেজাজ কিন্তু আমারও খারাপ হতে দেরি লাগে না। যা করছ না, আমি কিন্তু এসবের মাঝে বাবাকে নিয়ে আসতে বাধ্য হব। তাকেই বলব আপনাকে ঠিক করতে।”
“যা, যাই ইচ্ছা তাই কর। বাবার ভয়েই প্রতিবার চুপ থাকি। এই মৌনতারই সুযোগ নিয়ে আমাকে নিয়ে খেলা হচ্ছে। এইবার আমি সেই মৌনতাকেই ভাঙব। বাবাকে বলবি তাই না? ঠিক আছে, তার মাধ্যমেই আমি এই তালাকটা নেওয়াবো। দেখিস।”
মিহির মুক্তাকে আর এক শব্দ কথাও বলতে না দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরাচ্ছিলাম। মুক্তা আমার কাছ থেকে রাফাকে নিয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে লাগল। আমি নীরবে কেঁদে যাচ্ছিলাম।
“দুঃখিত আমি, কথা এতদূর এগোবে তা আমার কল্পনার ভেতরে ছিল না। দাঁড়া, আমি ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলছি।”
“কী বুঝিয়ে বলবি?” কিছুটা ধমকের সুরে বললাম, “আর কত সার্কাস দেখতে চাস আমার জীবনে? আর কত তামাশা দেখার বাকি আছে? নাকি আমার তালাকটা শেষ পর্যন্ত করিয়ে ছাড়বি? তোকে আমি বলেছিলাম, মিহিরকে নিয়ে টেনশন করিস না। আমার নিয়তি যা চায় তাই হবে। কিন্তু তুই? কেবল তোর জীবন সুখের হলেই হলো? আমাদের জীবনগুলোর কোনো মূল্য নেই? তোর পাগলামোর কারণে কত কী দেখেছি। আমাদের নামের বিয়েটা হয়েছে কেবল তোর কারণে। যদি আমাদের মাঝে তালাক হয়েও থাকে, তবে তার জন্য দায়ী কেবল তুই-ই হবি। আমি হাত জোড় করে বলছি, আমার জীবন নিয়ে আর খেলিস না। যা হবে তাই দেখে নেব। আর এমনিতেও আমাকে কী দেখার জন্য বাকি রেখেছিস? কিছুই আছে? সবই শেষ। মিটিয়ে নিয়েছিস শখ ভাবীকে বান্ধবী বানানোর? দুঃখ, এর জন্যই আজ ওর স্ত্রী হতে পারলাম না। থাক, মুক্তা, তোর উপকার আমি আর চাই না।”
আমিও তাকে যাচ্ছেতা শুনিয়ে কান্না মুছে বেরিয়ে এলাম। দৌড় লাগালাম। সময় থাকতে পৌঁছতে পারলাম না। তার আগেই তিনি গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর বাবার কল এলো।
“সাবিহা!”
“হ্যাঁ বাবা, বলুন।”
“মিহির চলে এসেছে। তুই কেন আসিসনি? ঝগড়া হয়েছে নাকি বৌমা?”
“না, তেমন একটা না।”
“আচ্ছা, বুঝেছি। তুই খাঁড়া,আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি তোর জন্য।”
“ঠিক আছে।” ফোন নামিয়ে রাখলাম।
আমি আর ভেতরে গেলাম না। ধরে নিলাম, মুক্তার সাথে এখন থেকে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। ওকে অনুসরণ করব না আমি। যা হবে নিজেই হজম করে নেবো। মিনিট দশেক পর গাড়ি চলে আসে। আমি বাসায় চলে এলাম। শুরুতেই বাধা হয়ে দাঁড়ালেন বাবা। শোধালেন, “ঝগড়া?”
“ছোটখাটো।”
“সত্যিই ছোট তো?”
“হ্যাঁ, ছোট।”
“তাহলে নিজেই ঠিক করে নিস। আবার যদি বড় হয়ে থাকে তবে বলে দে, আমি এখনই ওকে সোজা করব।”
আমি ভাবলাম, বলে দেবো। না, ভাবলাম, আগে উনাকে শেষবারের মতো বুঝাই।
“না বাবা, বড় না।”
“বড় না হলেই ভালো।”
আমি রুমে ধীরে ধীরে পা ফেলে ঢুকলাম। তিনি বিছানায় বিপরীত দিকে মুখিয়ে বসে আছেন। আমি এক বুক সাহস নিয়ে তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। বললাম, “আমি দুঃখিত। আমার কথা হয়তো শুনতে চাইবেন না..”
“আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না। যাও আমার পাশ থেকে।”
“শুনুন প্লিজ, আমি মুক্তাকে বলেছি ব্যাপারটিকে বড় আর না করতে। ও বাবাকে কিছুই বলবে না। আপনি প্লিজ রেগে থাকবেন না। আমি আমার মতো করে থাকার চেষ্টা করব। বিরক্ত করব না আপনাকে। আপনি যাই বলেন তাই হবে। স্ত্রীত্ব খাটাতে আসব না। আপনি কেবল সব কথা ভুলে যান। আমাকে তালাক দেওয়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। তালাকের মাধ্যমে হয়তো দুইজন আলাদা হয়ে যাব। অনুমান করতে গেলে, আমরা একে অপরের কাছ থেকে আলাদাই আছি। তালাকের সাক্ষরটা সমাজ থেকে আমাদের কিছু অধিকার কেড়ে নেবে। তার চেয়ে বরং যেভাবে সংসারটা এতদিন চলেছিল, সেভাবেই চলুক। আপনি আমাকে মিথ্যাবাদী, দোষিণী, চালবাজ যাই ইচ্ছে ভাবুন। কেবল আপনি আগের মতো থাকলেই হয়। এই আমার একমাত্র কাম্য। কেবল আমার কাম্য বলেই এসব করতে বলছি না। বাবার কথাও একটু ভেবে দেখুন। তিনি আমাদের জুটিকে অনেক আগেই আশীর্বাদ করে দিয়েছিলেন। আমাদের বিচ্ছেদে তাঁর ওপর খুব গহীন প্রভাব ফেলবে। কারণ কোথাও না কোথাও তিনি আমার প্রতি নিজের মেয়ের চেয়ে অধিক গুণে মমতাময়ী। যা হয়েছে, চাপা দিন। খবর বাবার কানে গেলে খুব ক্ষতি হবে।”
“কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি একবার আমার দুঃখের কথা জানলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ভেবে ফেলেছি, আজ সব গ্লানিদায়ক জিনিসকে আমার জীবন থেকে দূর করে দেব। বাবা কিছুদিন হয়তো অস্বাভাবিক থাকবেন। তারপর আমাদের জীবন আগের মতোই বিবাদহীন হয়ে পড়বে।”
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আমি হাত দিয়ে বাধা দিয়ে হাত জোড় করে বিনয়ের সাথে কেঁদে বুঝালাম। তার পায়েও ধরলাম। ক্ষমা চেয়ে তাঁর পদতলে লুটিয়ে পড়লাম। তিনি হাত দিয়ে আমাকে তোলে সরিয়ে আমাকে পেছনে রেখে চলে গেলেন।
আমি রুমে পূর্ববর্তী জায়গায় স্থির হয়ে কাঁদতে লাগলাম।
তথাকথিত প্রসঙ্গে বাহির থেকে কলরব শোনা গেল। বাবারও চেঁচানো ভেসে আসছে।
ভাবলাম, আমি এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছি? সময় এখনও হাত থেকে পিছলেনি। মামলা হাতের মুঠোয় করার সুযোগ বেশিক্ষণ থাকবে না। তৎক্ষণাৎ বাহিরে চলে গেলাম।
বাবাকে ততক্ষণে তিনি তালাকের কথা বলে সেরেছে। আমি বাবাকে বুঝানোতে লেগে পড়লাম, “কেবল একটুখানি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সব ঠিক করে ফেলব আমি।”
বাবা ওর বিরোধিতা করে বলতে লাগলেন, তিনি থাকতে আমাদের বিচ্ছেদ হতে দেবেন না।
কিন্তু মিহিরের মেজাজ চরমভাবে খারাপ হয়েছে। বাবার কথার এদিক-ওদিক কর‍তে না পেরে জেদ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন। বুঝলাম না, আজও তার কুয়াশা আচ্ছাদিত মনকে। বুঝলাম না, কেন তার তিক্ততা বাড়ছে।
বাবাকে আমি বুঝাতে লাগলাম। সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিতে লাগলাম। এও বললাম, মেজাজ ঠিক হলে ঠিকই বাসায় ফিরে আসবেন তিনি। শেষের কথার সম্ভাবনা আমি নিজেকেও দিতে পারব না। তবু সান্ত্বনার খাতিরে বললাম।
দুপুরবেলা তিনি খেতেও আসেননি। ফুফি বকবক করতে লাগলেন। তাঁর প্রতিটি কথায় লুকিয়ে আছে সবই আমার দোষ। আমি কলঙ্কিনী। এই বাড়িতে এসে সবার মাঝের দূরত্ব বাড়িয়েছি। আসলে তাই কি? যদি এমনটে হয় তবে মিহির যা চান তাই হবে। আমি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাব। তালাক চাইলে তালাক দেবো। হ্যাঁ, হয়তো পরিস্থিতি সামলাতেই বাবাও স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন। আমি চলে গেলে সবাই সুখী হবে। বড় ভাবীও আমার কাছ থেকে রেহাই পাবেন। সম্পত্তি আমার ভাগেরগুলো ফেরত দিলে তাঁর পক্ষের ভার বাড়বে। আমার সাথে রেষারেষি করবেন না আর তিনি। আজই হয়তো এই বাড়িতে আমার শেষ দিন। শেষবারের মতো না হয় একবার বাবার মাথায় তেল মালিশ করে দিয়ে আসি।

সামিরা এটুকু পড়ে ডায়েরি রেখে দিলো, রুমে বুয়া ঢুকেছেন বিধায়। বিষাদে ভরাট হয়েছে সামিরার মন। সে ভেবেছিল তার মাও মিহিরের মতো খারাপ, যে কারণে আজ পর্যন্ত মায়ের কথা সে মুখে আনেনি। বুঝাই যাচ্ছে, দোষ সকল হয়তো মিহিরেরই। ডায়েরির পরবর্তী অংশে হয়তো সে দেখবে, তার মায়ের একটা প্রত্যাশিত সুখী সংসারের ইতি ঘটবে। সামিরা ভ্রূ কুঞ্চিত করে নিজেকেই বিড়বিড় করে বলল, যদি এখানেই সমাপ্তি হয়, তবে আমার জন্ম কী করে হলো?
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here