#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া-সাত্তার-ঊর্মি
০৭
বৃষ্টির পর হালকা মৃদু রোদ তার সাথে মিলিয়ে ফুরফুরে বাতাসে মন ছুঁয়ে যাচ্ছে কুহুর। পার্কের চেয়ারে কুহু, মিশু, নুশরা-বুশরা বসে আছে। ইউসুফকে না জানিয়ে শুধু মাত্র মনিশার অনুমতি নিয়েই ছুটেছে তারা। পাশ দিয়ে ছোট একটি ছেলে বাদাম নিয়ে যাচ্ছে পড়নে তার ছেড়ার গেন্জি আর একটি ময়লা পেন্ট। কুহু ছেলেটিকে ডাকলো,,
—” এই বাবু! ১০টাকার বাদাম দেও না?”
ছেলেঠি তার ফোঁকলা দাঁতে হেসে বলল,,
—“জে আফা।”
কুহুর মায়া হলো কেন জানি ছেলেটির দিক। সে জিগ্যেস করলো,,
—” নাম কি তোমার?
—” পিন্টু!”
—” বাসা কই?”
—” চড়েই!”
—” তুমি যে এসব করছো? তোমার বাবা-মা কই? তারা কি করে? এতটুকুন ছেলেকে কেউ কাজে পাঠায়?”
ছেলেটির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। বলল,,
—” আমার বাপ-মা নাই! চাচার সাথে থাকি। কাম না করলে ভাত দেয় না!”
কুহুর খারাপ লাগলো খুব। বাবা-মা ছাড়া ছেলে-মেয়েদের খুব কষ্ট। কুহু এবার ছেলেটিকে পার্স থেকে ১০০ টাকার একটি নোট দিলো। তা দেখে মিশু বলল,,
—” আরে তুই এত টাকা কেন দিচ্ছিস? এদের কাজই এমন। মিথ্যা বলে টাকা নেয়া!”
ছেলেটির মুখের রঙ উড়ে গেল। মলিন হেসে বলল,,
—” আফা এত টাকা লাগবো না। ১০ টা দেন যাই গা!”
কুহু মিশুকে বলল,,
—” আপু এভাবে বলো না। এর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও মিথ্যা বলছে না। আর ওইতো টাকা চায়ও নি আমি দিচ্ছি। বাবু তুমি রাখো এটা কিছু খেও কেমন?”
ছেলেটি কেঁদে দিলো। আজ কতদিন একটি জামা কিনবে বলে সে টাকা জমাচ্ছিলো। আজ পূর্ণ হলো তার চাহিদা। ছেলেটি হাসতে হাসতে যেতে লাগলো। কুহু তার হাসি দেখে তার খুব ভাল লাগচ্ছে। সেও হাসচ্ছে। কিন্তু সে হাসি রইলো না বেশিক্ষণ হুট করেই ছেলেটির চিৎকার ভেসে আসে। সাদা গেন্জিটা লাল রং ধারণ করে। মুহূর্তেই ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাদাম গুলো সব পরে যায় এদিক ও দিক। কুহু স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ছেলেটি কাতরাতে থাকে। আশে-পাশে ভীড় জমে যায়। কুহুর সাথে মিশুও থমকে যায়। যখন তার চোখে ধরা পরে। রাস্তার ওপারে একটি লোক গাড়ির ভিতর থেকে আবার গুলি করতে উদ্যোগ নিচ্ছে গান পয়েন্ট কুহুর দিক তাক করে। সে এক চিৎকার দিলো। কুহু তখনি তার দিকে ফিরে গুলিটি তার মাথা এক ইঞ্চি দূরে থেকেই চলে যায়। লোকটি তখন মিশুকে দেখে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়।
কুহু আবার ঝটকা খায় যখন বাচ্চাটির নিথর দেহকে একটি গামছা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। কুহু সেখানেই বসে পড়ে। কান্না করতে লাগে। মিশু সামলাতে চায় কিন্তু ব্যর্থ। এদিকে নুশরা কল করে ইউসুফকে।
ইউসুফ সকলের সাথে বসে কথা বলছে। কবির সহ আজ সবাই ইউসুফকে দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগলো। ইউসুফ গম্ভীর মুখে তখন তাদের বলে উঠে,,
—” এভাবে হাসার কি আছে? ঘরে কি আপনাদের বউ নেই?”
সবাই সে মুহূর্তে বিব্রত বোধ করলো। কবির তখন মুখে চেপে হাসে। কারণ তার স্যার ভুলেই গেছে বউ তো তার ঘরেই নেই। কিন্তু মজার বিষয়, তার স্যার লজ্জা পাচ্ছে না বরং গর্ব বোধ করেছে এমন ভাব করে কথা বলে যাচ্ছে। তার স্যার যে কি রকম নির্লজ্জ তা আজ বুঝতে পারলো কবির।তার ভাবার মাঝেই ইউসুফের ফোন বেজে উঠলো। যা তার হাতে দিয়া। নুশরার কল দেখে এগিয়ে দিলো ইউসুফের দিক। ইউসুফ ফোন কানে দিতেই ভেসে আসে নুশুরার কান্নার শব্দ।
মনিশাকে ঘাপটি মেরে ধরে এখনো হু হু করে কাঁদছে কুহু। ইউসুফ ঘরে আসতেই কান্না বন্ধ হয়ে গেলো তার। কিন্তু কান্না দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
ইউসুফ কন্ঠে রাগ ঢেলে বলল,,
—” বাসা থেকে কোন সাহসে বের হয়েছিলি?”
কুহু চুপ। ভয়ে চোখে জোড়াও নিভু নিভু হয়ে আসচ্ছে।
ইউসুফের কন্ঠ এবার আরো চওড়া হলো,,
—” কথা বলছিস না কেনো? ”
মনিশা ইউসুফকে বুঝাতে চাইলো,,
—” আমার কাছে বলে গেছিলো। ওকে কেন বকছিস? ও কি জানত এমন হবে?”
—” আমি জানতাম তাই না করেছিলাম। কিন্তু আমার কথার তো দাম নেই তোমাদের কাছে?এদের বোকামির কারণে ছেলেটির প্রান গেল।”
—” এভাবে বলছিস কেন? ও এমনিতেই ভয়ে আছে!”
—” ভয় পাবারি কথা। চল তুই আমার সাথে উপরে।”
টেনে ধরলো কুহুর হাত জোড়া। কুহু কান্না বেরে গেলো।
—” খালামনি আমি যাবো না।”
—“যেতে তো তোকে হবেই!” কাঁধে তুলে নিলো কুহুকে। আর কুহু চিৎকার করে কেঁদেই গেল। যাবে না কিছুতেই।
কুহু রুমে বসে এখনো ফুপাচ্ছে। ইউসুফ তার পাশে বসলো। এক হাত তাকে আকড়ে ধরে বলল,,
—” কাঁদিস না। আমি তোকে কিছু বলবো না। খারাপ লাগছে বাচ্চাটির জন্য। ”
কুহু এবার ইউসুফ বুকে হেলে পড়ে কেঁদে দিলো। ইউসুফ মাথায় হাত বুলিও বলতে লাগলো,,
—“কাঁদিস না। যারা এমন করেছে তাদের আমি ছাড়বো না।”
চলবে,,