আমার_একটাই_যে_তুই❤️ পর্ব ৬

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

০৬
কারো কান্নার মৃদু ধ্বনি ভেসে আসতেই ঘুম ছুটে যায় কুহুর। শরীরে তখন তার তীব্র মাত্রায় ব্যাথা। চোখ-ও জ্বালা করছে খুব। চোখ মেলে খুব কষ্টই তাকালো কুহু দেখতে পেলো, শুভ্র পাঞ্জাবিতে একটি সুদর্শন যুবক জায়নামাজের সিজদায় পড়ে কান্না করছে।কান্নার দমকেই তার পিঠ কেঁপে কেঁপে উঠছে ধীমি ধীমি আওয়াজে ভেসে আচ্ছে কিছু আওয়াজ। কিন্তু তা কর্নপাত হচ্ছে না কুহুর। কুহু চোখ মুখ কুচকালো। বুঝতে বাকি নেই এ যে ইউসুফ। এত কঠোর মানুষ এভাবে কেন কাঁদচ্ছে বুঝতে পাড়ছে কুহু। কুহু ধীরে ধীরে উঠে ইউসুফের কাছে গেল। মনে খচখচানি দূর করতে না পেরেই সে ইউসুফকে ঢেকে উঠলো প্রথমবার। সারা নেই কোনো। দ্বিতীয় বার ডাকতেই। ইউসুফ তার দিক ফিরে। কুহুর বুক ধক করে উঠে। ইউসুফের চোখ ভয়ংকর লাল। চোখের কার্নিষ ঘেঁষে টুপ করে তখন এক ফুটো মুক্ত দানা গড়িয়ে পড়লো। কুহু তাকিয়ে রইলো ইউসুফ বিলাই চোখ দুটোর দিক।এ লোকেরও এমন রূপ আছে? বিয়ে না হলেতো জানতেই পাড়তো না সে। কুহু ঢুক গিললো কিছু বলার আগেই ইউসুফ গম্ভীর কন্ঠ বলল,,

—” আজান দিচ্ছে অজু করে আয়। এক সাথে সালাত আদায় করি।”

কুহু আর কিছু বলতে পাড়লো না। তার দাম্ভিক মুখখানা দেখে যেন কথা আটকে গেলো। ঘাড় কাত করে হে সম্মতি জানিয়ে ওয়াশরুমের দিক চলে গেল। কিছুক্ষণ পর নামাজের জন্য তৈরি হয়ে ইউসুফের পাশেই একটু দূরে বসে নামাজ আদায় করতে লাগলো।

নামাজ শেষ হতেই প্রতিটি মুহূর্ত ইউসুফের দাম্ভিক মুখ খানা তার চোখ বিরাজমান। আজ অনেক দিন পর যেন শান্তি লাগেছে তার অশান্ত মনে। ইউসুফকে কেন জানি এ বেশে তার কাছে চোখ ধাধানো সুন্দর লাগচ্ছে। তখনি প্রশ্নটি উঁকি দেয় কুহুর মনে। প্রতিটি ছেলেরাই বুঝি আল্লাহর দরবারে হাজির হলো এতে অলৌকিক ভাবে তার শরীরে নূর ভেসে উঠে??

কিন্তু কই? আশিকে সে বহু বার নামাজ পড়তে দেখেছে, এমন নূর তার মুখখানায় দেখেনি কখনো। তাহলে?

আজ প্রথমবার কুহু ইউসুফকে নিয়ে এত গারো ভাবনায় লিপ্ত। সেই সাথে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখায় ব্যস্ত। যত বার সে ইউসুফের চোখে তাকিয়েছে ততবার তার বক্ষস্থল দ্রিম দ্রিম শব্দে তবলা পিটাতে শুরু করেছে। কেন হচ্ছে এমন??

ইউসুফ মোনাজাত তুললো। ক্রোদন স্বরে আল্লাহ কাছে পানাহার চাইছে। কুহু শুধু চেয়ে দেখছে এই দাম্ভিক, গম্ভীর মানুষটির কমলতা। অথচ এই যুবকটি কাল রাতে কতটা অত্যাচার করেছে। শরীরে তার দেয়া দাগ গুলো দৃশ্য মান। কুহুর এবার সব এলোমেলো লাগতে লাগলো। এ রূপ দেখে কখনো কেউ বলতে পাড়বে না, ইউসুফের একটি পৈশাচিক রূপ আছে।

ইউসুফ মোনাজাত শেষ করলো। ডান কাতরে বসেছিলো কুহু। সেদিকে ঘাড় কাত করে কুহুকে আদেশ করলো,,,

—” যখন যা ইচ্ছে কর! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর কোরআন তিলাওয়াত করতে ভুলবি না কখনো। প্রতি এক পাতা হলেও কোরআন পড়বি!”

কুহু হা করে চেয়ে আছে ইউসুফের দিক! ইউসুফ তা দেখে হেসে ফেললো। কুুহু চেয়েই রইলো। ইউসুফ বলল,,

—” আজ কোরআন পড়তে হবে না তোর যা শুয়ে পড়। এমনিতেও তোর শরীর ভালো না।”

কুহু বলবে এ মুহূর্তে বুঝতে পাড়লো না। সে ইউসুফের কথা মতোই বিছানায় উঠে গেলো। ইউসুফের দিক মুখ করে শুয়ে রইলো। ইউসুফ তার দিক ফিরে মিষ্ট করে হেসে। কোরআন পড়তে শুরু করলো। কুহু এবার অবাকের শেষ চুড়ায়। কিন্তু যখনি গুন গুন শব্দ তুলে সুন্দর স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করতে মগ্ন হলো ইউসুফ, কুহুর মনে হলো এর থেকে মধুর ধ্বনি বুঝি এ দুনিয়াতে নেই। তার কোরআন পড়ার সময়ও এত সুন্দর সুর উঠে না। কুহু চোখ বুঝে শুন্তে লাগলো। সেই সুর। শুন্তে শুন্তে কখন যে সে ঘুমের জগতে তলিয়ে গেছে বুঝতেই পারে নি।

___________

বর্ষাকাল শুরু হয়েছে আজ ১৫ দিন চলল। দু দিন যাবত বৃষ্টি থামার নাম নেই যেন। বর্ষার এই বর্ষণের ফলে ঘর বন্দি থাকে সকলেই। তবে বেশির ভাগ মানুষ পেটের দায় বাদলা দিনেই ছুটতে হয় কাজের জায়গায়। কিন্তু ইউসুফ চেয়েও যেতে পাড়ছে না আজ। বর্ষণের ফলে তাকে আঁঁটকে পড়তে হয়েছে ঘরে। কিন্তু কাজ থামেনি তার। খোলা জননার ধারে বসে গরম ধোয়া উঠানো কফি পান করতে করতে মিটিং চলছে তার। কিন্তু নিজ থেকে আসা ক্ষীণ শব্দ গুলো তার কাজে কি পরিমাণ ব্যঘাত ঘটাচ্ছে তা যতি তার বুঝতো? মুখ দিয়ে তখন বিরক্তিতে “চ” করে শব্দ বের হয়ে এলো। মিটিং কোনো রকম শেষ করেই বিরক্তি নিয়ে নিচে নেমে এলো সে।

টেবিলে আজ গরম খিচুড়ি, তার সাথে গোস্তো ভোনা, বেগুন ভাজা, ইলিশ মাছ। সাথে নানা রকম আচার। মুখে যেন জল এসে যাওয়ার মতো। মনিশা সব সাজিয়ে রাখছে। কাল তার ননদের দুই মেয়ে এসেছে কুহুকে দেখতে। মনিশা আর যেতে দেয়নি দুটোই জমজ নাম নুশরা-বুশরা। তাদের পেয়ে কুহু, মিশু ও যেন বাচ্চা হয়ে উঠেছে। ইউসুফ এরি মাঝে নিচে নেমে আসতেই। মনিশা হেসে বলল,,

—” আয় বাবা, খেতে বস। গরম গরম খিচুড়ি। ”

ইউসুফ সেদিকে গেলো।কুহুদের সোরগোলের শব্দ আবার কানে আসতেই ধমকে উঠলো,,

—” সব সময় খিখি না করলে চলে না, না? এত কিসের কিলবিল তোদের? কাজ করেও শান্তি নেই। ঘরটা যেন মাছের বাজার।”

ইউসুফের ধমকে সব চুপ। মনিশা তখন তারা দিয়ে বলল,,

—” হয়েছে অনেক খেলাধুলা এবার আয় খেতে সব। আয় আয়!”

সকলেই চুপি সারে খেতে বসে গেলো। মনিশা আর কুহু মিলে সবার খাবার বেরে দিতে লাগলো। কুহু আজ গলার মাঝে ওড়নাটা মাপলারের মতো পেঁচিয়ে রেখেছে। তা নিয়ে কখন থেকে মিশু, নুশরা-বুশরা সন্ধিহান দৃষ্টিতে চেয়ে কি বলে হেসে যাচ্ছে মিটিমিটি। কুহু তাতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছে। বার বার ওড়না টেনে ঠিক করছে। নুশরা তখন টিপনি কেঁটে বলে উঠলো,,

—” আপি তোর গলায় কিসের দাগরে?”

কুহু লজ্জায় পড়ে গেলো। ইউসুফও তখন সেদিকে তাকালো। মিশু সেই মুহূর্তে বলে উঠলো,,

—” মনে হচ্ছে তোকে কেউ কামড়েছে?

কুহুর যেন এবার নদীতে ঝাপ দিতে মন চাইছে। ইউসুফ তখন নির্বিকার ভঙ্গিতে খাচ্ছে। কুহু আড় চোখে তাকালো ইউসুফের দিক। তার জন্যই এতো লজ্জাতে পড়তে হচ্ছে আজ। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো কুহু। থুতনি টা লজ্জায় বুকের সাথে মিশিয়ে মিন মিন করে বললো,,

—” তেমন কিছু না আপু। মশা কামড় দিছিলো আর কি? ”

তখনি বুশরা বলে উঠলো,,

—” মশাটা বুঝি বেশিই বড় ছিলো তাই আপি। তোমাদের বাসায় এত বড় বড় মশা হয়!”

কুহু যেন পড়লো মাইনকার চিপায়। এ অবস্থা কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে অসহায় ভাবে তাকালো ইউসুফের দিক। বেটা নিশ্চিন্ত খাবার চিবুচ্ছে। আর ফোন চাপচ্ছে। মনিশা তখন তার অবস্থা বুঝতে পেরে কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,,

—” কি শুরু করেছিস তোরা? খেতে বসে এতো কিসের গল্প খা চুপ চাপ।”

সবাই চুপ-চাপ খেতে লাগলো। একটু যেন স্বস্তি পেল। মনিশাকে ধন্যবাদ আর ইউসুফকে বকতে বকতে রান্নাঘরে চলে গেল। মনে মনে বলল,,

—” অসভ্য লোক!”

খাবার শেষে ইউসুফ উপরে যেতেই। কুহুও উপরে গেলো। ততখনে বৃষ্টি কমে গেছে। কবির এসে নিচে ওয়েট করছে। ইউসুফ কাপড় পাল্টে বের হতেই কুহুকে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়,,

—” কি সমস্যা? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

কুহু কিড়মিড় করে বলল,,

—” কাজটি আপনি মোটটেও ভাল করেেন নি। আপনার জন্য কত বড় লজ্জায় পড়লাম সবার সামনে!”

—“তো” ইউসুফ নির্লিপ্ত কথা।

কুহু রেগে ফেটে পড়লো তখন।
—“তো মানে? সবাই কিভাবচ্ছে আমাকে?”
—” সেটা তোর আগেই ভাবা উচিত ছিলো। ”

কুহু রাগ দমাতে পড়লো না। বলল,,

—” ওহো! তাই? তাহলে একা আমি কেন এমন লজ্জা ফেইস করবো?”

ইউসুফ কুহুর কথায় ভ্রু কুচকে জিগ্যেস দৃষ্টিতে তাকালো আবার।

কুহু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ।দ্রুত ইউসুফের কাছে চলে আসে। পায়ের দু আঙ্গুলে ভর দিয়ে, ইউসুফের মুখটি দু হাতে ধরে গালের মাঝে কুটুস করে কামোড় বসিয়ে দিলো। ইউসুফ যেন বিস্ময়ে হতভম্ব। কি হয়ে গেলো এ মুহূর্তে!গালে হাত দিয়ে কুহুর দিক ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় হা করে চেয়ে রইলো। কুহু এমন কিছু করতে পারে ভাবনার বাহিরে ছিল ইউসুফের।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here