#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০৪
উঁচু একটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে। নেমে দাঁড়ালো ইউসুফ। সূর্য তার তেজ কমিয়ে পারি দিচ্ছে ঘুমন্ত রাজ্য। মুহূর্তেই আকাশের মাঝে তার রেখে যাওয়া ছিঁটেফোঁটার ঝলকানিতে লাল লাল হয়ে ঢেউ তুলে গেছে সুদূর রাঙ্গা মেঘ গুলো। ইউসুফের মনে আক্ষেপ হলো।” ইশ! ছুতে পারতাম তারে?”
মুহুর্তেই সেই আক্ষেপ উবে গেল, পিছনের একটি গাড়ি শব্দহীন গাড়ি এসে থামতেই। কিন্তু ইউসুফ তাকালো না সেদিক। তার দৃষ্টি সামনের সুন্দর দৃশ্যে।
—” নেতার পদধূলি হঠাৎ আজ আমার এলাকায়।” ঠোঁটে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল কথাটি আশিক।
ইউসুফ তার দিক ফিরলো। বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে তুললো ঠোঁটে,,
—” পরগাছা বড় হয়ে গেলে উপরে ফেলতে তো আসতেই হবে!”
মুহূর্তেই হলদে মুখটি ফ্যাকাসে হয়ে গেল আশিকের। খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল,,
—” আমার এলাকায় দাঁড়িয়ে আমাকে অপমান করছিস?”
—” ভুলে যাচ্ছিস! তোর এলাকা আমার আন্ডারেই পড়ে!”
শক্ত হয়ে গেল আশিকের চোয়াল। বলল,,
—” আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুই কখনো আমার বন্ধু ছিলি!”
ইউসুফ হো হো করে হেসে উঠলো। যেন কোন জোকস মেরেছে আশিক। এক হাতে পেটে ধরে হাসতে লাগলো। আশিক থমথম মুখে চেয়ে আছে।
—” তুই এখনো ভাবিস? আমি তো কবেই সেই ভাবনাটাই ছুড়ে ফেলেছি। তোর মতো খচ্চর আর আমার বন্ধু থাকবে!”
রাগে ফেঁটে পড়লো আশিক। চেচিয়ে উঠলো সে।
—” ইউসুফ…। তুই আমাকে অপমান করছিস কিন্তু!”
—“এতক্ষণে বুঝলি?”
রাগ সামলাতে পারলোনা আশিক। চেঁপে ধরলো ইউসুফের গলা। আকস্মিক ঘটনায় ইউসুফ বিস্মিত। পরক্ষণেই সে নিজেও চেঁপে ধরে আশিকের কন্ঠনালি। ইউসুফ আত্মা রক্ষার জন্য ছোট বেলায় মহসিন তাকে কারাত প্রশিক্ষন করিয়ে ছিলেন। সেই সুবাদে শত্রু পক্ষের অাক্রমণ উলটাতে ইউসুফ বিচক্ষণ। আশিক কাতরে উঠলো। ইউসুফের গলা থেকে হাত আলগা হয়ে যায়। ইউসুফ ঘুড়িয়ে তাকে খাদের কিনারায় নিয়ে আসে। আশিকের ভয়ে চোখ মুখে আতঙ্ক বাহিরে দেখা যাচ্ছে। চোখ তার নিভু নিভু। ইউসুফ তার সেই বিখ্যাত টাল পড়া গালে বাঁকা হাসলো। বলল,,
—” কি বলিস? ছেড়ে দি? উড়ে যাক তোর প্রাণ পাখি!”
আশিক কাতরাচ্ছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এবার। চোখ উল্টো আসচ্ছে। ইউসুফ তখনি তাকে কিনারা থেকে সরে আসে। আশিকে ছেড়ে দেয়। আশিক বড় বড় দম নিতে থাকে। ইউসুফ তখন তার গাড়ির সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে বলল,,
—” আমার সাথে লাগতে আসিস না। প্রাণ হারাবি।আর হে! আমি জিতেছি এবার নেতাও হয়ে গেছি। বাজি তুই হেরে গেছিস। এবার ট্রফি হিসেবে কুহু আমার!”
আশিকের ঠোঁটে এবার হাসি। ভ্রু কুচকে গেল ইউসুফের। আশিক তার হাসি বহাল রেখে বলল,,
—” কুহু তোকে না আমাকে ভালবাসে।”কন্ঠে তার গর্বের আভাস।
ইউসুফ রাগে গা রি রি করলো। তবুও ঠান্ডা গলায় বলল,,
—” কিন্তু তুই ওকে ভালবাসিস না!”
—” ভাল তো তুইও বাসিস না!”
ইউসুফ তীর্যক নয়নে তাকলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,
—” তোর না ভাবলেও চলবে। আমার ট্রফি আমি যেভাবেই হোক আপন করেই নিবো। তুই এর মাঝে এলে আমার পুকুরে সেই রাক্ষুসে মাছে খাবার বানাতে দু মিনিট ও সময় লাগবে না!”
আশিক ভয় পেল এবার। ইউসুফ কতটুকু ভয়ংকর আর হিংস্র এক মাত্র তার কাছের মানুষই জানে। আশিক শুকনো ঢুক গিললো। মনে পড়লো তার কলেজের একটি দিনের কথা। স্কুল থেকেই ইউসুফের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব । কলেজ শেষের একদিন ফেয়ারওয়েল তাদেরই এক বন্ধু ইউসুফের গায়ে হাত তুলে ফেলে। সকলেই হো হো করে হাসতে লাগে। সেদিন ছেলেটিকে কিছু না বললেও একদিন ছেলেটির লাশ তারা ঠিকি পায়। আর তা আশিক স্বচোখে দেখে কিভাবে তাকে ইউসুফ মেরেছিলো। তা ভেবেই গা শিউরে উঠলো।
আশিক মুখে বলল,,
—” কুহুর সাথে কেন খেলছিস? ও তো তোর বোনই হয়? তার ভালোবাসার কেড়ে তুই কখনো তার মনে তোর জায়গায় করতে পাড়বি?”
ইউসুফ এবার গাড়ির বোনাটের উপর শুয়ে পা দুলাতে দুলাতে বলল,,
—” যা আমার চাই। তা যে কোনো মুল্যেই চাই। আর রইলো কুহুর ভালবাসার কথা? আজ নয় কাল আমি অর্জন করেই ফেলবো।”
—” কি আছে ওই মেয়েতে যে এতো মরিয়া হয়ে উঠেছিস? সেই মেয়েই না তোর কাল হয়ে দাঁড়ায়।”
আশিকের কথায় হাসে ইউসুফ। ঠোঁট দুটি নাড়িয়ে বলল,,
—” ওর হাতে মরতে পাড়লেও আমি ধন্য। তুই বুঝবি না। ও যে আমার একাই যে তুই!”
পরের কথাটি বিড় বিড় করে বললো ইউসুফ। আশিক বুঝতে পাড়লো। তাকিয়ে রইলো। ইউসুফ বলল,,
—” বাড়ি যা। আজকের পর কুহুর সাথে তোর যেন কোন যোগাযোগ না থাকে!”
ত্যাগ করে সেই স্থান ইউসুফ। আশিক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁটে তার শয়তানি হাসি। বিড় বিড় করে বলে,,
—” তোর সময় ঘনিয়ে আসচ্ছে বলে।”
গত একমাস আগের সেই দিনটি এখনো দৃশ্যমান আশিকের চোখে। সে রাগে ফেঁটে পড়ে৷ তার সামনেই বসে আছে আলতাফ শেখ আশিকে মামা। তিনি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,,
—” ভাগ্নে রাগে নয়। বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই না হারাতে পাড়বে তাকে!”
আশিক নিভলো। তবুও তার কানে যখন আসে ইউসুফ লাষ্ট পর্যন্ত কুহুকে বিয়ে করে নিয়েছে। রাগ মাথা চড়ে বসে। সেদিন সে যেতে বাস স্টেশনে তার আগেই ইউসুফের লোকেরা আঁটকে দেয় তাকে। নয় তো আজ তার হাতের মুঠে থাকতো ইউসুফের দুর্বলতা। সে ছোট শ্বাস ছাড়লো বলল,,
—” শালা বহুত ভাগ্যবান। যা চায় তাই পায়। ”
______________
রোকেয়া বানুর সামনে সেই পাতিলটি। যা পুরে লাল হয়ে আছে। ইউসুফ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,,
—” দাদু পাতিলটি উঠাও!”
রোকেয়া বানু ভয়ে চুপসে গেছে। আদরের নাতির সামনে আহ্লাদী কান্না সুরে বলল,,
—” তুমি এসব কিতা বলল? আমার হাত পুইড়া যাইবো!”
—” আমিও তাই চাই! যে হাত আমার বউয়ের হাত পুড়িয়েছে, সে হাত আমি কিভাবে ঠিক থাকবে?”
ইউসুফ এগিয়ে এলো। রোকেয়া বানু “ও আল্লাহ্ গো ” বলেই পিছিয়ে গেল রাহির কাছে। রাহি কাঁপছিলো। রোকা বানু তার পিছনে আসতেই সে দৌঁড়ে পালালো। রোকেয়া বানু অসহায় মুখ করে বলল,,
—” আমি তুমরা দাদু লাগি আর তুমরা এমন করতাসো?”
ইউসুফ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,
—” আপন দাদু হলে কি আর তাই করতে? সৎ দেখেই এ কাজ করলে!”
রোকেয়া বানু নতজানু। মাফ চাওয়ার মতো হাত দুটো এক করে বলল,,
—” আমি তুমার বউয়ের ধারে কাছে যামু না মাফ কইড়া দাও!”
_______________
কুহু রুমে বসে আছে। ঘন ঘন শ্বাস ফালছে সে। ইউসুফের এ রূপ কখনোই দেখেনি সে! নিজ দাদুর গায়ে হাত তুলতে পিছপা হয় না। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। এ কার সাথে বিয়ে হলো তার? আশিক কেন সেদিন এলো না? আজ হয়তো দিনটি অন্য রকম হতো?
কুহুর ভাবার মাঝে ইউসুফ রুমে প্রবেশ করে। ইউসুফ দেখে ভয়ে কুকরে যায়। ইউসুফ তা লক্ষ করে। কাছে এসে বসে কুহুর। কুহু তখন পিছিয়ে যেতে যায়। ইউসুফ হাত ধরে তার কাছে নিয়ে আসে। কুহু ইউসুফের চোখের দিকে তাকায়। নিরব, শান্ত বিলাই চোখ কত কিছু বলে যাচ্ছে যা বুঝতে অক্ষম কুহু। ইউসুফ বলল,,
—” বাবুইপাখি ভয় পাচ্ছিস আমায়? ”
কুহু জবাব দিলো না। ইউসুফ ছোট শ্বাস ছাড়লো। কুহুর দু গালে হাত রেখে বলল,,
—” আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখতে চাই। নাকি ডর-ভয়! আমি দাদুর সাথে সে কাজটি না করলে সে তোর আরো ক্ষতি করতো। আমার আমি তোর ক্ষতি দেখি কিভাবে বল।”
তবুও কিছু বলল না কুহু মাথা নত করে ভাবতে লাগলো তখনের কথা কিভাবে তার জন্যই শাসিয়ে ছিল তার দাদু কে হোক সে সৎ। কিন্তু তবুও কেন যেন ইউসুফকে তার ভয় হয়। খুব ভয় হয়। এমন না যে সে তার উপর হাত তুলেছে। বা বাসর রাত থেকে এখন পর্যন্ত অশ্লীল ভাবে ছুয়েছে? তাহলে… তাহলে কেন, এমন মন হয়? লোকটির ভিতর-বাহির দুটো দুই রকম?
এসব ভাসতেই তার আশিকের কথা মনে পড়লো আবার। ছেলেটিকে সে বিশ্বাস করে মনে প্রানে ভাল বেসেছিলো। আর এখন পর্যন্ত একটি খবর সে নিলো না? কুহু কেমন আছে? সেদিন কি হয়েছিল? তাও জানা নেই তার? তবুও খুঁজ নিলো না। তাহলে সত্যি ধোঁকা দিয়ে ছিলো? এসব ভাবতেই চোখ পড়লো ইউসুফের ফোনের দিক। ইউসুফ ওয়াশরুমে পানির শব্দ আসচ্ছে। সেই সুযোগে ফোন হাতিয়ে নিয়ে বারান্দায় এলো। কি আশ্চর্য? ফোন খুলতেই ভেসে উঠলো কুহুর বউ রূপের ঘুমন্ত ছবি। নিশ্চয় ঘুমের মাঝে ইউসুফ তুলেছে? সে দিকে তোয়াক্কা না করে সে কল করলো আশিকে নাম্বারে।কল হচ্ছে। কুহুর দেখ খানা কাঁপন ধরলো। অধীর আগ্রহে ওপাশ থেকে ফোন তোলার অপেক্ষা করতে লাগলো। আর তখনি…!
#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
০৫
ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে ইউসুফ। কুহুকে রুমের মাঝে না দেখে বেলকনিতে উঁকি দিতেই দেখতে পায় কুহুকে। সে বাহিরের দিক মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।হালকা পিছন সাইড দেখা যাচ্ছে। ইউসুফ আর একটু সামনে যেতেই দেখলো কুহুর জামার চেইন পিঠ পর্যন্ত নেমে এসেছে। ভিতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে। ইউসুফের চোখ কঁপালে। বাচ্চা বউটি তার এভাবেই ঘর থেকে হয়েছিলো নাকি? কুহুর দিক পা বাড়ালো। আরেকটু কাছে যেতেই ইউসুফ চোখে পড় পিঠ থেকে কিছুটা উপরে আর ঘাড় থেকে কিছুটা নিচে লাল হয়ে থাকা জম্ম দাগটি। এটি যেন ইউসুফের দুর্বলতা। এ দাগটির যতবার দেখে মুহূর্তেই তার যেন পুরো পৃথিবী উল্টে যায়। ইউসুফ তার অকপটেই কুহুর জামার চেইন লাগিয়ে দিল। জম্মদাগের স্থানটিতে গভীর ভাবে ঠোঁট বসালো।
কুহু তখন ঘোরের মাঝে ছিলো। ফোনের ওপাশ থেকে কখন থেকে বলে যাচ্ছে নাম্বার টি বন্ধ আছে। বুকে তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। আর তখনি কারো ঠান্ডা ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠে। সারা শরীর লোম যেন দাঁড়িয়ে যায় তার। কুহু আবেশে চোখ বুঝে। ইউসুফ এবার গভীর ভাবে তাকে দুহাতে জড়িয়ে নেয়। ঠোঁটের স্পর্শ এবার যেন আরো গাড়ো হচ্ছে।
কুহুর হুশ ফিরতেই ছিটকে দূরে চলে আসে। ইউসুফ আহত দৃষ্টিতে তাকায় কুহুর দিক। কুহ তখন চেঁচিয়ে উঠে,,
—” আপনার সাহস কত? আপনি আমাকে স্পর্শ করছেন?”
ইউসুফ নিজের কাজে নিজেই বিস্মিত।সে বলল,,
—” রিয়্যাক্ট কেন করছি! আমি তোর হাসবেন্ড। অধিকার আছে তোর উপর আমার। ”
—“কিন্তু সেই অধিকার আমি আপনাকে দেই নি। না কখনো দিব! ”
ইউসুফ চুপ রইলো। ব্যথাতুর সুরে বলল,,
—” সরি!”
রুম থেকে বের হতে নিলো ইউসুফ তখনি তার কিছু একটা মনে পড়তেই সে পিছনে ঘুরে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। কুহুর হাত তার ফোন। ইউসুফ সন্ধিহান দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,,
—” আমার ফোন তোর হাতে কেন?”
কুহু এতক্ষণ বাঘিনী রূপে ছিলো। প্রশ্নটি শোনার পর ভেজা বিড়াল হয়ে গেলো সে। মুহুর্তেই রং পাল্টে গেলো মুখের। ইউসুফ এগিয়ে এসে ফোন হাতে নিতেই। কুহু আমতা আমতা করে বলল,,
—” আম্মুকে কল করছিলাম!”
—” সত্যি বলছিস? তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ইউসুফের।
কুহু মাথা নাড়ালো। ইউসুফ আবার বলল,,
—” মিথ্যা আমার সহ্য হয় না। তার জন্য কঠিন শাস্তি পেতে হয় সবাইকে। সে আমার আপনজন হোক বা কলিজা হোক কাউকে ছাড় দেই না।”
কুহু ঘামতে লাগলো। অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো। ইউসুফ কুহুর কাছে এসে দাঁড়ালো। কঁপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দিয়ে বলল,,
—” মানুষ তখন এভাবে ঘামে যখন সে মিথ্যা বলে!”
কুহু সাথে সাথেই ঘাম মুছলো। চাপা হেসে ববলার ট্রাই করলো,,
—” গরম লাগছে তো তাই ঘামচ্ছি!”
ইউসুফ জহুরি নজরে তাকালো কুহুর দিক। কুহু চুপসে যাওয়া মুখটি নতজানু করে ফেলে। ইউসুফের জেরা যেন সেখানেই শেষ হলো না সে আরো প্রশ্ন করবে তার আগেই ডাক পরে মনিশার। সে চেঁচিয়ে বলে,” আসচ্ছি খালামনি!”
বলেই পাশ কেঁটে বের হয়ে যায়। রুমের বাহিরে এসে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগে সে। মাঝে মাঝে ইউসুফকে তার জমরুদ মনে হয়।
______________
—-” আমার হাতের চিকেন তন্দুরি ইউসুফের খুব প্রিয় জানিস!”মনিশা উৎসাহের সাথে বলল।
তেলের মাঝে লেগ পিস দিয়ে আবার বলল,,
—” বরাবর তার এই লেগ পিসটাই চাই। হাসলেন তিনি। আবার বললেন,,
—” ভাবচ্ছিস তোকে কেন বলছি? তাই না! ”
কুহু হাসলো শুধু। মনিশা বলল,,
—” ছেলেটি আমার খুব খাদুক প্রিয়। আমি তো থাকবো সারাজীবন তোরই দেখতে হবে আমার পাগলাটে ছেলেটাকে। তাই বলছি!”
কুহু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। মনিশার কথায় তার কান্না কান্না পেল। সে দুঃখী গলায় বলল,,
—” এমন বলো না খালামনি। তুমি কোথাও যাবে না।”
মনিশা বুকে জড়িয়ে নিলেন কুহু বড্ড আফসোস হলো তার। এ পরিবারে সে আর বেশিদিন চেয়েও থাকতে পারবেন না। তার তো যেতেই হবে। এখন শুধু দায়িত্ব একটি তার এই বেপরোয়া ছেলেটি আর এ সংসার কুহুকে বুঝিয়ে দেয়ার। তারপর চিরো বিদায়।
___________
কুহু ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকলো। ইউসুফ চলে গেছে এতক্ষণে। এ ব্যক্তিটি যতক্ষণ সামনে থাকে ততখন যেন তার প্রাণ পাখি বের হয়ে যাওয়ার জন্য উথাল-পাথাল করে বেড়ায়। কিন্তু কুহুর ভাবনা শুধু ভাবনাতেই রইলো। রুমে ঢুকেই ইউসুফকে দেখে হকচকিয়ে গেল। ইউসুফ সোফার উপর পা তুলে বসে আছে। দু হাতের আঙ্গুলে তার ফোন খানা ঘুরাচ্ছে তার দিকে তাকিয়েই। তার দৃষ্টিও যেন কেমন।
—-” ভয় পেলি যে!” ইউসুফের কন্ঠে কুহু তার দিকে তাকায়। চাপা হেসে বলে,,
—” ভয় পাবো কেন? আপনি বাঘ না ভালুক!”
—-” এ মুহূর্তে তোর জন্য দুটোই।”কন্ঠ অতি মাত্রায় শীতল।
কুহুর গলা শুকিয়ে কাঠ। সে বলল,,
—” ভয় দেখাচ্ছেন?”
—” ভয় দেখানোর মতো কোনো কাজ করেছিস?”
কুহুর এবার ভয়ঙ্কর রকমের ভয় করতে লাগলো। সে কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না ইউসুফের ভাবমূর্তি। তার অবলীলায় প্রশ্নের পিষ্ঠে প্রশ্ন করা কিছুতেই হজম হচ্ছে না। কুহু এ মুহূর্তে ঠিক কি করবে ভেবে উঠতে পারছে। তবুও সাহস করে বলল,,
—” আমি তো তেমন কিছু করিনি। “কন্ঠ নালির কাঁপণ স্পষ্ট।
ইউসুফ বাঁকা হাসতে হাসতে উঠে আসতে লাগলো কুহুর দিক। বলল,,
—” তাই!”
কুহুর কি হলো সে দরজার কাছে চলে এলো। কিন্তু হায় দরজা বন্ধ। কিছুতেই খুলতে পাড়ছে না। লক হয়ে গেছে।
—” ওটার সাথে লড়াই করে লাভ নেই। খুলবে না। লক আমি করে দিয়েছি!”
কুহু ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো,,
—” কেন করেছেন?”
ইউসুফ কুহুর দু পাশে দু হাত রেখে তাকে বাহু ডোড়ে বন্ধ করে নেয়। ফিসফিস করে বলে,,
—” আমাদের প্রাইভিসির জন্য!”
কুহু পিলে চমকে গেলো। ইউসুফ কি করতে চাইছে?
—” যা ভাবছিস তাই!”
ইউসুফের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো। লোকটি মনের কথা কেমনে বুঝলো। কুহুর যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে হাপনি রোগীর মতো ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। কন্ঠ নালিতে কথা গুলো আঁটকে যাচ্ছে। তবুও সর্বস্র শক্তি প্রয়োগ করে বলল,,
—-” দূরে স্বরে দাঁড়ান। আমাকে কাছে আসবেনা।!”
ইউসুফের এতক্ষণ দমিয়ে রাখা রাগ এবার ফুটলো যেন। দুহাতে কুহুর বাহু চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,,
—” আমি তোর বর হয়ে তোকে ছুঁতে পারবো না কাছে আসতে পারবো না! কিন্তু তুই পরপুরুষের সাথে পরক্রিয়ায় লিপ্ত হবি? তা সহ্য করবো? ”
কুহু ইউসুফের কথায় বিস্ময় ব্যথার কথা ভুলেই গেলো।
—” আমি কারো সাথে পরক্রিয়া করছি না।”
—” তাই? বিয়ের পরও অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে তোর বিবেকে বাজলো না? ভুলে গেছিস? তুই আমার স্ত্রী।”
—” এ বিয়ে আমি মানি না!জোড় করে করেছেন আপনি। তাই আমার যা ইচ্ছে আমি করবো।” কুহুর ডর-ভয় উগে, কন্ঠে তেজ প্রকাশ পেলো!”
ইউসুফ কুহুর চিবুকে চেপে ধরে বলল,,
—” আবার বল!”
কুহু আবার বলতেই ইউসুফ কুহুর গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসিয়ে দিলো। কুহু ফুপিয়ে উঠলো। ঠোঁট কেঁটে রক্ত বেড়িয়ে এলো। কুহু এবার চেচিয়ে বলল,,
—” আমি আশিককে ভালবাসি! বুঝলেন? আপনি মারুন কাটুন যা ইচ্ছে করুন। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধু ওর নামই লিখা আছে!”
কথাটি কর্ণপাত হতেই ইউসুফ হিংস্র হয়ে উঠলো। কুহুকে টেনে তুলে বলল,,
—” আজ থেকে এ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার দেয়া দাগ পাবি শুধু। বলেছিলাম মিথ্যা বলিস না শুনলি না তো? ”
ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো কুহুকে। কুহু হতবুদ্ধি কি হতে চলেছে তার সাথে। সে উঠতে নিতেই ইউসুফ তার উপর চড়ে বসে। কুহু গলায়, ঘাড়ে সহ বিরতিহীন ভাবে কামড়াতে শুরু করে। কুহুর চিৎকার শুধু ইউসুফের ঘরের চারদেয়ালে গুঞ্জন হতে থাকে। কুহুর কাছে ইউসুফকে হিংস্র পশু মনে হচ্ছে। সে যেন তার ইউসুফ ভাইকে এ ইউসুফের সাথে মেলাতেই পাড়চ্ছে না। ভয় হচ্ছে খুব। মনে হচ্ছে এটি যদি স্বপ্ন হয়! ভেঙ্গে যাক দেখতে চাই না দুঃস্বপ্ন। নিতে পারছে না আর কুহু। ইউসুফের প্রতিটা কামুরে মরণ যন্ত্রণা অনুভব করছে সে। ধীর ধীরে চোখ বুঝে ফেলল কুহু। হাড়িয়ে গেল গহীন অন্ধকারে।
চলবে,,
(রেসপন্স পাচ্ছি না কেন আপনাদের? আগ্রহ কি হারিয়ে ফেলেছেন?🙃🙃)
চলবে,,