আমার_সংসার
.
part:02
.
written by Mollika Moly(দুষ্টু পেত্নী)
…
ঘুমিয়েছি প্রায় ৪ টার নাগাদ হবে,একটু চোখ লাগতেই,মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো।কতো সুন্দর মিহি কন্ঠে মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছে, এই কুয়াশা মাখা ভোরে সেই আযান চারদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। জাগান দিচ্ছে মানুষকে, আল্লাহর কাছে পাপ মোচনের জন্য আহব্বান করছে।আযানের সুর খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলে মনে হয় সুরের মধ্যে হারিয়ে যাই,পৃথীবির সব সুন্দর সুরগুলোর মধ্যে প্রধান সুন্দর সুর হলো আযানের সুর।আযানের কাছে সবরকম সুরই তুচ্ছ। খানিক টা সময় মুগ্ধ হয়ে আযানের সুর গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলাম,মনে প্রশান্তি এলো।
.
বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামজ পড়ে বাহিরে বের হলাম।এখনো বাড়িতে কেউ উঠেনি।সবাই ঘুমে বিভোর।এতো সকাল সকাল হয়তো এই বাড়িতে কারো উঠার অভ্যাস নেই।কিন্তু আমি তো আগে থেকেই সকালে উঠি , বিয়ের আগে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায আদায় করে, সংসারের কাজে লেগে পড়তাম,রান্না করা ছোট দুই ভাইবোন কে স্কুলের জন্য তৈরী করে দিয়ে তবেই আমি কলেজে যেতাম।আবার কলেজ থেকে ফেরার পথে টিউশনি করে আসতাম।আমি নিজের খরচ নিজেই চালাতাম টিউশনির টাকায়,সেই সাথে বাবা,মা আর ছোট ছোট দুই ভাই বোন কে নিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার টাকেও গুছিয়ে নিয়েছিলাম।সংসারের দায় ভার আমার ওপরেই পরে ছিলো।কেনো না বাবা,দুর্ভাগ্যবশত অসুস্থ ছিলো,বেশ কয়েক বছর আগে হঠাৎ প্যারালাইজড হয়ে যায়,তার একপাশ অকেজো হয়ে যায়,এমতাবস্থায় তার পক্ষে রোজগার করা সম্ভব নয়।একটা বড় ভাইয়ো ছিলো না যে সংসারের দায় কাঁধে তুলে নিবে,তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজে সংসারের দায় নিজের কাধে নিয়েছিলাম।বেশ ভালোই চলছিলো আমাদের, কোনোকিছুরই অভাব ছিলো না,অভাব ছিলো না বলা টাও ঠিক না কারন আমাদের চাহিদা বেশি ছিলো না,মানুষে র চাহিদা অল্প হলে সেটা পুরণ সম্ভব,আর চাহিদা বেশি হলে তা পুরন করা অসম্ভব, কখনোই তার অভাব ফুরোবে না,ধনী গরিব সুখ দুঃখের বিষয় না।আসল সুখ হলো চাহিদায় তার আত্মতৃপ্তিতে।আমি যদি অট্টালিকায় বাস করেও যদি চাহিদা তার চাইতেও বেশি হয় তবে আমি কখনোই সুখী হতে পারবো না,আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমায় সুখী হতে দেবে না।অপরদিকে কুড়ে ঘরে থেকে যদি আত্মতৃপ্তি পাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি তবে আমি পৃথীবির সুখী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।সেজন্য আমি কুড়ে ঘরে থেকেও অনেক সুখী ছিলাম, আত্মতৃপ্তি ছিলো। কথায় কথায় অনেক কথা বলে ফেললাম অতীতের,থাক সেসব কথা আমি এখন বর্তমানের কথাগুলোই বলি,যেটা ফেলে এসেছি সেটাই অতীত, অতীতের দিকে ফিরে তাকানো, মনে রাখা ঠিক না তবে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
.
পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ। পুরো বাড়ি ডিম লাইটের আলোয় ঘেরা।ঘুরে দেখতে লাগলাম পুরো বাড়িটা, চোখ পড়লো সিড়ির দিকে।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম,ছাদে যাওয়ার আগেই ডানপাশে একটা ঘর পেলাম।যেটাকে বলে চিলেকোঠার ঘর।ঘরে না ঢুকে সোজা ছাদে গেলাম।চারদিকে ভোরের আলো ফুটেছে।চারিকে দু একটা কাক ডাকের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাস্তায় মানুষজনের চলাচল শুরু হয়েছে,চায়ের দোকানে চায়ওয়ালার চায়ের কাপের চিনি মেশানোর টুংটাং আওয়াজ শুরু হয়ে গেছে,আওয়াজ টা শুনতে না পেলেও তাকিয়ে অনুভব করতে পারছি।ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে সকালের শহর টা দেখছি। পুরোই গ্রামের বিপরীত। গ্রামে ভোর হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর শহরে কাকের ডাকে।গ্রামের ছেলে পেলেরা ঘুম থেকে উঠেই শীতের সকালে খেজুরের রস দিয়ে তৈরী পায়েশ, পিঠা নিয়ে বসে পরে রোদে।আর শহুরের ছেলে মেয়েরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই তরিঘরি করে রেডী হয়ে বেরিয়ে পরে স্কুলের উদ্দেশ্যে।শহুরে সবাই ব্যস্ত জীবন।আমার শ্বশুর আমাদের গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি।কিন্তু তিনি গ্রামে থাকেন না,তিনি থাকতে চাইলেও তার ছেলে আমার বর থাকেন না,সেজন্য স্বপরিবারে শহরে থাকে,তার ছেলের বউ হয়ে আসার সুবাদে শহরে আমার প্রথম সকাল দেখা।
.
খানিকটা সময় ছাদে থাকার পর সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই চিলেকোঠার ঘরে চোখ গেলো।আকর্ষণ করছিলো ঘর টা।দরজার খুলতেই মাকড়সা র জাল,ধুলোবালি গায়ে এসে পড়লো একটু খানি কাশি পেলো।হালকা পরিস্কার করে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম।ঘরের সবকিছু সাদা কাপড়ে ঢাকা।সঠিক বুঝতে পারছি না এর নিচে কি আছে,বেশ বেলা হয়েছে,হয়তো সবাই উঠে পড়েছে, নতুন বউ এতো সকালে এদিক ওদিক যাওয়া কেমন জানি তাই চিলেকোঠার ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে আসলাম। তবে পরবর্তীতে এই ঘর টা ভালো দেখবো।
.
নিচে নেমে সোজা রান্না ঘরে গিয়ে দেখি কাজের মেয়েটা উঠে কি যেনো খুটিনাটি কাজ করছে,কতোয় বা বয়স হবে এই ৯-১০ খুব বেশি হলে ১১ হবে।
লাল রংয়ের একটা ফ্রক পড়ে আছে।পিছন থেকে ওর কাধে হাত দিয়ে বললাম,,
.
–কি নাম তোমার?
.
–সুবর্ণ,আমার নাম,ভাবী ঘুম থাইকা উইঠ্যা পড়ছেন,এতো সক্কাল সক্কাল।
.
–সকাল সকাল কই ৮-৩০ বাজে,আমিতো ৫ টায় উঠেছি।
.
–কি কন ভাবি আফনে অতো সকালে এই বাড়িতে কেউ উডে না,বড় সাহেব একটু সকালে উঠে কিন্তু আজকাল বড় সাহেবের হাটুর ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে খুব,সকালে উঠলেও বিছানা ছাড়ে না,আর খালা তো কোনড়ের ব্যথায় কিছু করতেই পারে না,আর সিফাত ভাই সে তো অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে সারাদিন ঘুমাই,বিকেলে উঠে আবার কোথায় যেনো বেরিয়ে যায়,রোজ রোজ এমন করে।কথাগুলো সুবর্ণ বললো। আমার শ্বশুর কে বড়সাহেব আর শাশুড়ি কে সে খালা বলে ডাকে।
.
–বাবার কি ঘুম ভেংগেছে? সুবর্ণ কে জিঞ্জেস করলাম।
.
–হয় ভাংছে তয় বিছানা থেকে উডে নাই এহনো।আপনি খাড়ান ভাবী আমি আপনারে এহনি চা করে দিতাছি।বলেই চা করতে যাবে তখনি আমি বললাম,
.
–থাক আমি করি চা সবার জন্য,তুমি বরং অন্য কাজ করো।
.
–নাহ ভাবী,আপনার কাজ এটা না,আপনি এ বাড়ির বউ,এগুলো তো চাকর বাকরের কাজ।
.
–সুবর্ণ,, একটুখানি রেগে বললাম।
.
–কতদিন হলো আছিস এখানে,তোকে তুই করেই বললাম,কারন তুই আমার ছোট বোনের বয়সী।
.
–তয় কি হইছে আপনি আমারে তুই করেই কইবেন,সবাইতো হেইডাই কয়,আমার যহন ৬ বছর বয়স হয়নাই তখন থেকে আছি এই বাড়িতে,বড় সাহেব খালা,আমারে অনেক ভালোবাসে,ছোট থাইকা বড় করছে।
.
–তোকে কি তারা এগুলো বলে কখনো খারাপ ব্যবহার করে নাকি তোর সাথে?
.
–নাহ ভাবী,কি কন এগুলো,তারা খারাপ ব্যবহার কোনোদিনই করে না, অনেক ভালবাসে আমারে।আমার বয়স সাড়ে ৫ বছর তখন আমার বাপে আমার মায়েরে তালাক দেয় তহন আমার মা আবার আরেক টা বিয়ে করে নতুন বাপে আমারে মায়ের সাথে থাকতে দেয় নাই তখন এই খালা আমারে সাথে নিয়ে আসছে এহানে।
.
–হুম তাহলে এগুলো কেন বলিস,আর বলবি না,তারা তোকে কতো ভালবাসে,তুই এই বাড়ির কাজের লোক না মেয়ে বুঝলি?
.
–হয় ভাবী আর কমু না।
.
–হুম এবার কোথায় কি আছে দেখা দেখি।
বলতেই সুবর্ণ সব দেখিয়ে দিলো সব, আমি চা বানিয়ে বাবার রুমে খবরের কাগজ আর চা নিয়ে গেলাম।
.
–আসসালামু আলাইকুমস সালাম মা, বাবা শুভ সকাল।
এই নিন আপনার চা আর খবরের কাগজ বলেই মা আর বাবার দিকে চা আর খবরের কাগজ এগিয়ে দিলাম।
.
—অলাইকুমস আসসালাম মা,শুভ সকাল।বলে বাবা,মা হাত বাড়িয়ে চা নিয়ে মা বলে উঠলো।
.
–ঘুম থেকে কতো সকালে উঠেছো মা,এতো সকালে চা ও বানিয়ে ফেলেছো,আমরা এতো সকালে উঠতেই পারেি না, কোমড়ের ব্যথায়,একবার উঠে ফজরের নামায আদায় করে দুজনেই শুয়ে পড়ি আবারও।
.
–মা এতো সকাল কোথায় বলেন তো ঘরির কাটায় কাটায় দেখুন ৯ঃ০০ টা বেজে গেছে,আর আপনারদের ব্যথা উপশমের জন্য সকালে উঠে হাটা হাটি করা জুরুরি।
.
–তা ঠিক বলেছো বউ মা,আমরা এই অলসতার কারনে ব্যথা বাড়ছে আমাদের,আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছি।বাবা বলল কথাগুলো।
.
–হুম বাবা, আগামী কাল থেকে আপনি আর মা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায আদায় করে হাটতে বের হবেন,it’s my order.
.
–ওরে বাপরে ভয় পাইছি,আমার মা এই বয়সে আমায় শাসন করছে।বাবা বললো।
.
–হ্যা তাই শাসন করছি আমার এই বয়স্ক ছেলে মেয়ে কে।
.
–যথাজ্ঞা মাতা,তোমার আদেশে স্থির, আমরা হাহাহা বলেই বাবা, মা দুজনে একসাথে হেসে উঠলেন।মা বলে উঠলো,,
.
to be continue,,,,,