#গল্পটা_আমারই
(সুরমা)
পর্ব : ১৫
আমি নেতিয়ে গেলাম। লজ্জাবতী গাছে ছুঁয়ে দিলে গাছের পাতাগুলো যেমন করে নেতিয়ে যায় তেমন করে আমিও অর্ণবের স্পর্শে নেতিয়ে গেলাম। আমার চারপাশ নিরব হয়ে গেলো।
মনে হচ্ছিল আমার সমস্ত শক্তি শেষ। অর্ণব আমাকে ঝাপটে ধরে রেখেছে। আমি ওর হাত দুটো দেখছিলাম। ফর্সা হাতে কালো ঘন লোমে আবৃত। হাতের লোমগুলো দেখেই আমার শরীর শিহরণ দিয়ে গেলো।
আমার খুব ইচ্ছে করছিল ওর হাত ছুঁয়ে দিতে। এর আগে কখনও অর্ণবকে এভাবে খেয়াল করি নি। আমি বাম হাত দিয়ে অর্ণবের বাম হাত চেপে ধরি। অর্ণব বলে,,,
– মীরা দেখো। টোপটা মাছ খেতে চাচ্ছে। যখন দেখবে সাদা কাটিটা পানির নিচে চলে গেছে তখন বুঝবে মাছ বরশীতে আটকে গেছে। তখন মাছটা তুলে আনবে। তুমি একটা মাছ ধরতে পারলেই চলে যাবো। আর মাছ দরকার নেই। অনেকগুলো ধরলাম।
আমি অর্ণবের দিকে একটু তাকিয়ে আবার অর্ণবের হাত গুলো দেখলাম। আমার খুব ভালো লাগছিল। ইচ্ছে করছিল না অন্য কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে। আমি অর্ণবের বুকে আমার পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম। মনে মনে বললাম,,
– দরকার নেই মাছ ধরার। আমি মাছ ধরবো না। এভাবে বসে থাকতেই ভালো লাগছে। মাছ, তুই চলে যা এখান থেকে। অন্যসময় আমি তোকে খাবার দিয়ে যাবো। এই খাবারটা খাস না। কিন্তু আমার দোয়া কবুল হলো না। আমার চিন্তা শেষ হতে না হতেই অর্ণব বলে,,,,,
– মীরা, মাছটা বরশীতে আটকে গেছে। এবার টেনে তুলো। আমি জাস্ট হা করে অর্ণবকে দেখছিলাম। কি সব হচ্ছিল। অর্ণব বরশীটা টেনে তুলে। প্রায় এক দেড় কেজি ওজনের রুইমাছ। মাছটা এতো বড় দেখে অর্ণব বলে,,,,,
– দেখো মাছটা কতো বড়। আমি একটাও এতো বড় মাছ ধরতে পারি নি। আমি উঠে একপাশে দাঁড়ালাম। অর্ণবকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। অর্ণব বলে,,,
– এই মাছটা তুমি ধরেছো। বাকি গুলো আমি। আমার সব গুলো মাছ তোমার মাছটার কাছে কিছুই না। কথাটা বলে অর্ণব হাসলো। এবার আমারও হাসি পেলো। মাছটা অর্ণব নিজেই ধরেছে। তবুও বলছে আমার ক্রেডিট।
অথচ আমি সারা বছর চেষ্টা করেও এটা কেন, একটা পুটি মাছও ধরতে পারতাম না। আমার খুব লজ্জা লাগছে। অর্ণব আমাকে খুশি করার জন্য এসব বলছে? অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
– মীরা, তোমার খুশি লাগছে না এতো বড় একটা মাছ ধরলে? আমি এক হাত অন্য হাত দিয়ে মুচড়াতে মুচড়াতে বললাম,,,
– আমি জানি মাছ আমি ধরি নি। তুমি ধরেছো। আমার কথা শোনে অর্ণব চাপাহেসে বলে,,,,
– আরে পাগলি আমি ধরিনি। তুমিই ধরেছো। আমি এতক্ষণ কতো গুলো মাছ ধরলাম একটাও কি তোমারটার মতো এতো বড় পেয়েছি? আমি জাস্ট তোমাকে দেখিয়ে দিলাম। অর্ণবের কথা শোনে আমি অল্প হাসলাম। অর্ণবও হাসলো।
রাতে আন্টি অর্ণবের ধরা মাছ ভাজি করে। আরো দুরকম তরকারীও রান্না করে। আমি বেশ তৃপ্তি সহকারে খেলাম। অর্ণবদের বাসায় রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টায় খাওয়ার পর্ব শেষ হয়ে যায়। আন্টি সকাল সকাল ঘুমাতে যান।
ফজরের আযানের সাথে সাথে উঠে নামাজ পড়েন। খাওয়াদাওয়ার পর আন্টি শুয়ে পড়লেন। আমিও আন্টির সাথে শুইলাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। ঢাকায় রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে বারোটা একটা বেজে যায়। আমি অর্ণবকে কল দিলাম।
একবার রিং হতেই অর্ণব কলটা পিক করে। আমি শোয়া থেকে উঠে রুমের একপাশে গেলাম। অর্ণব বলে,,,,,
– কি হয়েছে? ঘুমাও নি?
– না, আমার ঘুম আসছে না।
– কেন? কোনো প্রবলেম?
– না, প্রবলেম না। মেসে তো লেইট করে শুই। তাই এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসছে না।
– ওহ! আচ্ছা আমার রুমে আসো। অর্ণবের কথা শোনে আমার শরীরের লোমগুলো কাটা দিয়ে উঠে। আমি আমতা আমতা করে বলি,,,,
– তো,মা,র রুমে গিয়ে কি করবো? আমার এমন তোতলানো কথা শোনে অর্ণব হেসে বলে,,,,
– এভাবে ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন? তোমাকে নিয়ে বাইরে জোছনা বিলাস করবো। আজ পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।
বাহিরে খুব সুন্দর। আমি একটু লজ্জা পেলাম। মাথাটা আমার গেছে। সব সময় উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা করি।
– কি হলো ম্যাডাম? আসবেন কিনা বলেন।
– আসছি।
– আচ্ছা আসো।
আমি আর অর্ণব পুকুর পাড়ে বসে আছি। চাঁদের আলোয় পুকুরের পানি ঝিকমিক করছে। আমি অর্ণবের হাত চেপে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে চাঁদটাকে দেখছি।
সত্যি চাঁদটা আজ বেশ সুন্দর। পুকুরের পাড়টা বাঁধাই করে থাকার কারণে আমরা আরামে বসলাম। অচেনা অজানা একটা জায়গায়ও আমার একটুকুও ভয় লাগছে না। অর্ণবকে আমার আপন মনে হয়।
আপনের চেয়ে আপন। ওকে এক কথায় বিশ্বাস করা যায়। ওর সাথে থাকলে আমার আর কিছু চাইনা। আমি অর্ণবের হাতটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলাম। অর্ণব বলে,,,
-মীরা
-হুম
-আমাদের এখানে থাকতে তোমার খুব কষ্ট হবে তাইনা? আমি মাথা তুলে অর্ণবের দিকে চেয়ে থেকে বললাম,,
-আমার একটুকু কষ্ট হবে না। তুমি পাশে থাকলে আমি সব কিছু মানিয়ে নিতে পারবো।
-আমার জব হলেও প্রথমে তোমাকে ঢাকায় রাখতে পারবো না। তোমাকে আমার মায়ের সাথে গ্রামেই থাকতে হবে। তারপর আমি সব কিছু গুছিয়ে তোমাকে আর মাকে আমার কাছে নিয়ে যাবো।
আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। অর্ণবকে ছাড়া থাকতে হবে ভেবেই আমার কান্না পাচ্ছে। আমি বললাম,,,
-তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে? তুমি থাকবে না আমার সাথে?
-আমি এখানে থাকলে জব করবো কিভাবে? আমি কেঁদেই দিলাম। দুহাত দিয়ে চোখ কচলাতে লাগলাম। অর্ণব আমার দুহাতের কব্জি ধরে বলে,,
-কাঁদছো কেন?
-আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো না। আমি তোমার সাথেই থাকবো। তুমি যেখানে থাকবে আমি আন্টিকে নিয়ে সেখানে থাকবো। অর্ণব আমাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরে বলে,,,,
-আরে পাগলি, আমার কি তোমাকে ছাড়া থাকতে মন চাইবে? আমি যদি পারি অবশ্যই তোমাকে আমার কাছে রাখবো। কিন্তু তুমি যদি আমাকে একটু সময় দাও তাহলে ভালো একটা বাসায় তোমাকে রাখতে পারবো।
সুন্দর একটা লাইফ উপহার দিতে পারবো। যেমনটা সব স্ত্রীরা আশা করে তেমনটা।
-আমার চাইনা এতকিছু। আমি তোমার সাথে গাছতলা থাকলেও সুখে থাকবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে বিয়ের পর ঢাকায় সেটেল হবো। কি বলো? বকুলতলায় একটা ঘর বানাবো কাগজ দিয়ে। দুজন আরামছে থাকবো।
অর্ণবের কথা শোনে আমি অর্ণবের বুক থেকে মাথা তুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি অর্ণব হাসছে। ওর হাসি দেখেই আমি বুঝতে পারছি ওও আমার সাথে ফান করছে। আমি রাগে অর্ণবের নাক ধরে একটা টান দেই। অর্ণব নিজের নাকে হাত দিয়ে বলে,,,,,
-আচ্ছা, আমরা যে এতো বিয়ের প্ল্যান করছি। তোমার ফ্যামিলি কি আমাকে মেনে নিবে?
-অবশ্যই মেনে নিবে। আমি যদি বলি আমার আব্বু না করবে না। আমি যা চাই আব্বু তাই দেয়।
-তুমি সিউর তাঁরা আমাকে মেনে নিবে? আমার তো কিছুই নেই। তোমাদের অবস্থার কথা চিন্তা করলে সেই তুলনায় আমি ফকির। তাহলে কেন আমাকে মেনে নিবে তাঁরা?
-কারণ, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তুমি ফকির এই কথাটা কোনোদিন বলবে না। তোমার যা আছে তা কয়জনের আছে বলতো? তুমি তো বাদশাহ। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার ফ্যামিলি তোমাকে মেনে নেওয়ার জন্য এইটুকু কারণেই যথেষ্ট।
আমি অর্ণবের বুকটা ঝাপটে ধরলাম। অর্ণবও আমাকে জড়িয়ে ধরে। বেশ কিছুক্ষণ সময় অর্ণবের সাথে গল্প করলাম। অর্ণব বলে,,,
-মীরা,
-হুম
-এখন গিয়ে ঘুমাও। রাত ১২টা বাজে।
-আরেকটু থাকি না
-না, আর না। এখন গিয়ে ঘুমাও। কাল তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। আমি অর্ণবকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
-সত্যি?
-হুম। পরদিন ঢাকায় ব্যাক করবো।
-কাল আমরা কোথায় যাবো?
-সারপ্রাইজ। এখন বলা যাবে না।
-বলনা। না বললেতো আমার ঘুম হবে না।
-আরামের একটা ঘুম দাও। নাহলে এনজয় করতে পারবে না।
চলবে——-