গল্পটা_আমারই পর্ব : ১৬

গল্পটা_আমারই

পর্ব : ১৬
(সুরমা)

আমি ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম। ফলে রাত কাটলো এপাশ ওপাশ করে। কি সারপ্রাইজ ভাবতে ভাবতেই আমার চোখের ঘুম উদাও হয়ে যায়। সকালের দিকে কখন যে আমার চোখটা লেগে যায় বলতেই পারি না।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো আন্টির ডাক শোনে। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আন্টি আমার মাথার পাশে বসে আছেন। আমার চোখ দুটো ঘুমে ভরপুর। তবুও হাল্কা হেসে আন্টির দিকে চোখ টেনে তাকালাম। আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,,

– ঘুম ছাড়ছে না? আমি আন্টির কথা শোনে শুধু হাসলাম। আন্টি আবার বললো,,,

– অর্ণব তোর জন্য বসে আছে। তোকে নাকি কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে। আন্টির কথা শুনে এবার আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আমি চোখ গুলো কচলাতে কচলাতে বললাম,,,,

– আমি এক্ষণি রেডি হয়ে আসছি। আমি ঝড়ের গতিতে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আন্টি আর অর্ণব পাশাপাশি বসে আছে। অর্ণব আমার দিকে তাকালে আমি একটু মুচকি হাসি দিলাম। অর্ণবও হাসলো। আন্টি আমাকে দেখেই বললেন,,,,

– খেয়ে যা। তোরা গেলে কখন আসিস ঠিক নেই। আন্টি চলে গেলেন খাবার রুমে। অর্ণব আমার পাশে এসে বললো,,,

– এতো লেইট করলে কেন? রাতে বলেছিলাম না সকাল সকাল উঠতে?
– আমি বুঝতে পারি নি।
– ঠিক আছে। আজকে তুমি শাড়ি পরো। আমি অবাক হয়ে বললাম,,,

– শাড়ি কেন?
– এমনি। শাড়ি পরে ঘুরবে। শাড়ি পরলে তোমাকে অপরূপ লাগে। আমার ইচ্ছে করছে তোমায় শাড়ি পরা অবস্থায় দেখি। অর্ণবের কথা শোনে আমি চোখ গুলো বড় বড় করে তাকালাম।

দেখলাম অর্ণবও আমার দিকে অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছি, অর্ণব খুব করে চাইছে আমি শাড়ি পরি। অর্ণবের সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারলে নিজেরও শান্তি লাগে। আমি বললাম,,,,

– আমার কাছে তো কোনো শাড়ি নেই।
– তুমি পরতে চাইলে আমি শাড়ির ব্যবস্থা করে দিবো। আমি অর্ণবের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। অর্ণব আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারলো। সে বললো,,,,

– ওয়েট। অর্ণব নিজের রুমে গিয়ে আবার ফিরে আসে। হাতে প্যাকেট। আমি অবাক হয়ে অর্ণবকে দেখছিলাম। অর্ণব আমার হাতে প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলে,,,

– এটা নাও। আমি অর্ণবের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে দেখি একটা নেভি ব্লু শাড়ি। শাড়িটা খুব সুন্দর। আমি অবাক হয়ে অর্ণবের দিকে তাকালে অর্ণব বলে,,,,

– এটা তোমার জন্য এনেছি। পছন্দ হয়েছে?
– খুব খুব। এতো সুন্দর শাড়ি। জাস্ট অসাধারণ। আমার এত্তো এত্তো পছন্দ হয়েছে। আমি শাড়িটা নিয়ে কিছুক্ষণ লাফালাফি করলাম। অর্ণব দুহাত বগলের নিচে দিয়ে আমাকে দেখছিল।

কিন্তু হঠাৎ আমার সব লাফালাফি হাওয়া হয়ে গেলো। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি অর্ণবের দিকে অসহায় হয়ে তাকালাম। অর্ণব আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে,,,,

-আবার কি হলো?
– আমিতো শাড়ি পরতে পারি না। আমার কথা শোনে অর্ণব হেসে বলে,,,,
– আমার মা খুব ভালো শাড়ি পরাতে পারে। মাকে বলো পরিয়ে দিবে।

– সত্যি?
– হুম
– আচ্ছা তাহলে যাই। আন্টির কাছ থেকে গিয়ে শাড়িটা পরে আসি। আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম আমাকে শাড়িটা পরিয়ে দিতে।

আন্টি আমাকে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। অর্ণব পাঞ্জাবি পরেছে। সাদা পাঞ্জাবি। ওকে কেমন জামাই জামাই লাগছিল। অর্ণবকে আগে যতবার দেখেছি কোনো সময় এমন লাগে নি।

আজকে ওকে একটু বেশিই ডেসিং লাগছে। আমার চোখ অর্ণবের ওপর থেকে সরছিল না। আমি বেহায়ার মতো অর্ণবের দিকে চেয়ে ছিলাম। অর্ণবও আমাকে দেখছিল। ওর চোখ দুটো ছোট ছোট।

আমার দিকে কেমন অদ্ভুত চাহনি তার। আমরা দুজন দুজনের চোখের নেশায় ডুবে গিয়েছিলাম। আমাদের দুজনের ধ্যান ভাঙ্গলো আন্টির কথা শোনে। আন্টি এসে বললেন,,,,,

-বাহ! আমার ছেলে মেয়ে দুজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে। আন্টির কথায় দুজনেই মাথা নিচু করে ফেলি। আন্টি আবার বলেন,,,,

– কিরে, তোরা কখন যাবি বলতো? যাওয়ার সময় যেতে চাসনা আর একবার গেলে আর আসতে মনে থাকে না । যা এখন বের হো। দুপুরের খাবারের আগে বাসায় আসবি। আন্টি তাড়া দেওয়াতে আমরা দুজন বের হলাম।

আজ সব কিছুই ইন্টারেস্টিং লাগছে। একতো আমি শাড়ি পরলাম। অর্ণব পাঞ্জাবি। এখন আবার যাবো দুজনে বাই সাইকেলে। অর্ণব সাইকেল নিয়ে আসাতে আমি আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম। আল্লাহ, আমি কখনও সাইকেলে চড়ি নি। আজ সাইকেলে চড়তে হবে? আমি অবাক হয়ে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,
– সাইকেল দিয়ে কি করবে?
– আমরা এখন যেখানে যাবো সেটা বেশ খানিকদূর। হেঁটে গেলে সময় চলে যাবে। তাই সাইকেল নিয়েছি। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,,,,,

– আমি সাইকেলে চড়বো না। আমার ভয় লাগে। তুমি বাইক নিতে পারো নি? আমার কথা শোনে অর্ণব কিছুটা চাপাহাসি দিয়ে বলে,,,,

– গরীবের সাইকেলেই বাইকের সমান। এই সাইকেলটা আমার ছোট বেলার। আসো, তোমার ভালো লাগবে।
– যদি পড়ে যাই?

– পড়বে কেন? আমি আছি না? আসো। আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম। একতো পরেছি শাড়ি।তার উপর সাইকেল। আমার সারা শরীর বরফের মতো হয়ে গেছে। অর্ণব আমাকে সামনে বসালো।

ভয়ে আমি থরথর করে কাঁপছি। অর্ণবের দুহাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছি। অর্ণবের মুখটা আমার মাথার সাথে লাগানো। সাইকেল চলছে গন্তব্যের দিকে। আমি চুপ করে বসে আছি।

কখন কি হয় আল্লাহ জানে। তবে অর্ণব খুব সুন্দর করে চালাচ্ছে। খারাপ লাগার কারণ নেই। ভালোই লাগছে। শুধু একটু ভয় ভয় করছে। অর্ণব সাইকেল চালাতে চালাতে বলে,,,,,

– মীরা
– হুম
– আজ তোমাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। আমি একটু ঘাড় ঘুরিয়ে অর্ণবের মুখ দেখে বললাম,,,,,
– বউ বউ লাগছে না কেন? আমার কথা শোনে অর্ণব বেশ অবাক। আমি বুঝতে পারছি সে বিস্মৃত। আমি আবার বললাম,,,,,

– আসলে তোমাকে জামাই জামাই দেখাচ্ছে। সেই ভাবেতো আমাকে বউ বউ লাগার কথা ছিল। আমার কথা শোনে অর্ণব সাইকেল থামিয়ে বলে,,,,
– কিহ!

– হুম। আমি মুখটা অসহায় করে আহ্লাদী হয়ে বললাম,,,

– আমাদের বিয়ে হবে কবে? আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে অর্ণবের দিকে তাকালাম। অর্ণব কেমন করে জানি আমাকে দেখছিল। আমি মুখটা করুণ করে রাখলাম। অর্ণব বলে,,,,,

– এই পিচ্চি মাথায় সব সময় বিয়ে বিয়ে আসে কেন? পড়াশোনা আসতে পারে না? ইউনিক কিছু আসতে পারে না? আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললাম,,,

– সব সময় বিয়ের কথা বলি না। সব সময়তো পড়াশোনাই করি। আর আমি মোটেও পিচ্চি না। তুমি আমাকে পিচ্চি বলবে না। আমি বড়।

– হুম, সেতো দেখতেই পারছি। বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। আমি ভ্রু কুঁচকে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,

– আমি বিয়ে করবো না? অর্ণব আবার সাইকেল চালাতে চালাতে বললো,,,,

– হুম করবে। বাসায় বলো ছেলে দেখতে।
– ছেলে দেখবে মানে?
– বিয়ে করলে ছেলে দেখতে হবে না?
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো।

– অহ! আমি ভেবেছিলাম,,,,,,অর্ণব কথা শেষ করার আগেই আমি রেগে বললাম,,,,,,

– আমি তোমার সাথে যাবো না। আমাকে নামিয়ে দাও। আমার কান্না চলে আসছিল। অর্ণব কিভাবে ভাবলো আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলবো।

আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। অর্ণব সেই পানিটা দেখতে পেলো না। তবে অর্ণব আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলে,,,,,

– আরে পাগলি আমিতো ফান করছিলাম। সিরিয়াস নিচ্ছো কেন? ভালোবাসি তো। অর্ণবের একটা কথা আমার হৃদয় সব সময় ছুঁয়ে যায়। সেটা হলো, ‘ভালোবাসি তো’।

ওকে আমি কতোটা ভরসা করি সেটা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার সারাটা দুনিয়া জুড়ে অর্ণব। ওর মুখে ভালোবাসি কথাটা আমার কাছে হিরার চেয়েও দামি। আমি চুপ করে বসে রইলাম। অর্ণব বললো,,,,,

– একটা জব হলেই তোমার বাবা মায়ের কাছে তোমাকে চাইবো। খালি হাতে গিয়ে বললেই তোমার বাবা মা তোমাকে আমায় দিয়ে দিবে?

– তুমি চেয়েই দেখো দেয় কিনা। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে আসো না। আমি আর ফিরে যেতে চাইনা। এই কয়দিনে আমার অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। তোমাকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতে পারি না।

– খালি হাতে তোমার বাবা মায়ের সামনে গিয়ে আমি দাঁড়াতে পারবো না। কিছু একটা করি। তারপর যাবো। তাছাড়া এখন হয়তো তুমি বলছো সব মেনে নিবে।

বাট বিয়ের পর সব কিছু মেনে নিতে পারবে না। তখন চাওয়া পাওয়াতে ছাড় থাকবে না। মীরা, আমি চাইনা অল্প কিছুর জন্য আমাদের সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হোক। যখন তোমার সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করার ক্ষমতা আমার থাকবে তখনেই আমি তোমাকে আমার করে নিয়ে আসবো।

আমি কিছু বললাম না। ও যা বলবে তাই করবে। অযথা কথা বলে লাভ নাই। তবে আমার মন যে মানে না। আমি যে সত্যি অর্ণবকে আপন করে পেতে চাই। ওর সাথে থাকতে চাই।

ওর হাত ধরে হাঁটতে চাই এখন থেকেই। অর্ণব তো আমাকে বুঝতে চায়না। তবে আমি অপেক্ষা করবো। সেই প্রিয় মুহূর্ত টার জন্য অপেক্ষা করবো। অপেক্ষা করবো অর্ণবকে আমার করে পাওয়ার জন্য।

চলবে———

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here