গল্পটা_আমারই পর্ব : ১৭

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ১৭
(সুরমা)

প্রায় আধ ঘণ্টা পর আমরা সেই কাঙ্খিত জায়গায় উপস্থিত হলাম। জায়গাটা দেখে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে। আমার দুচোখ ছানাবড়া। আমি এই কোন রাজ্যে আসলাম।

আমি সাইকেলে বসে থেকেই অর্ণবের হাত কামচে ধরলাম। অর্ণব আমার বিস্ময় বুঝতে পেরেছে। অর্ণব বলে,,,,,

– আগে সাইকেল থেকে নামো। এতো এক্সাইটেড হচ্ছো পরে সাইকেল থেকে পড়ে যাবে।

আমি অর্ণবের কথায় পাত্তা দিলাম না। আমি হা করেই আছি। অর্ণব নিজেই কোলে করে আমাকে সাইকেল থেকে নামায়। মাটিতে নেমে আমি কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

অর্ণব সাইকেলটা একপাশে রেখে দেয়। যতদূর চোখ যায় আমি ততদূর পর্যন্ত নিজের চোখ বুলিয়ে নিলাম। বাগানটা লালে লাল হয়ে আছে। উপর থেকে শুরু করে মাটি পর্যন্ত রক্তিম লাল বর্ণ। চারপাশে মানুষের ঢল। এই বাগানের সুন্দর্যে আমি বিমোহিত। অর্ণব আমার পাশে এসে দাঁড়ায়ে বলে,,,,,

– কেমন লাগছে বলো।
– জাস্ট ওয়াও। এতো সুন্দর জায়গা। আমি আগে কখনও যাই নি। এতো শিমুল ফুল। এতো গাছ।
– হুম। এখানে তিন হাজার শিমুল গাছ। এই শিমুল বাগান এখন ভ্রমণ পিপাসুদের একটা আকর্ষণীয় স্পট।

অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমার যে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমার ইচ্ছে করছে মনের সুখে উড়ে বেড়াই।

আমি ছুটাছুটি শুরু করলাম। চারপাশ লালে লাল হয়ে আছে। হাজার হাজার শিমুলগাছ। নিচে শিমুলফুলের বিছানা হয়ে আছে। এতো শিমুল ফুল লাইফে ফাস্ট দেখছি। আমি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌঁড়াচ্ছি।

আমি কিছুতেই নিজেকে রিলাক্স করতে পারছি না। কেবল মনে হচ্ছে আমি নতুন কোনো ভুবনে চলে এসেছি। আমি যেখানে যাচ্ছি অর্ণবও আমার পিছন পিছন যাচ্ছে।

আমি দৌঁড়ে এসে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার এতো ভালো লাগছে। অর্ণবও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,

– পাগলি একটা। এমন লাফালাফি করছো কেন? যদি শাড়িতে প্যাচ লেগে পড়ে যাও। হুম।
– আমার অনেক ভালো লাগছে। এতো সুন্দর জায়গা আগে কখনও দেখি নি। তাই একটু বেশিই এক্সাইটেড।

তুমি আমাকে আজ বাঁধা দিও না। আমার আমার যা মন চায় তাই করবো। দৌঁড়াবো। লাফাবো। যা খুশি করবো। ঢাকা গেলেতো এই সুযোগ হবে না।

– আচ্ছা ঠিক আছে । যা মন চায় করো। তুমি নিজের মতো এনজয় করো।
– আমার কয়েকটা ছবি তোলে দাওনা। ঢাকা গিয়ে সবাইকে দেখাবো।

অর্ণব কয়েকটা ছবি তোলে দেয়। বাগানে কয়েকজন ক্যামেরাম্যান ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে। আমিও তাদের দিয়ে ছবি তুলালাম। অর্ণবের সাথেও কয়েকটা ছবি তুললাম। এই প্রথম অর্ণবের সাথে আমার ছবি তোলা। আগে কখনও তোলার সৌভাগ্য হয়নি।

আমি অর্ণবের থেকে অনেকটা দূরে চলে গেলাম। লোকজন এই জায়গাটায় কম।

আমি নিচে বসে অনেকগুলো শিমুল ফুল জড়ো করে একটা লাভ বানালাম। সেখানে নামও লিখলাম। অর্ণব+মীরা। আমি এর আগে কখনও অর্ণবের সাথে নিজের নাম লিখিনি। এই প্রথম। জাস্ট একটা নাম লিখায় যে এতো ভালোলাগা কাজ করে আমার জানা ছিল না।

আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। অর্ণব একটা শিমুলগাছে হেলে দাঁড়িয়েছিল। আমি দৌঁড়ে গিয়ে অর্ণবের বুকে ঝেপে পড়ে কাঁদতে লাগলাম। আমার কান্না দেখে অর্ণব বেশ অবাক হয়।

অর্ণব আমাকে নিজের বুক থেকে তুলে চোখ মুছে দিয়ে বলে,,,,,,
– কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?
– আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমার কথা শোনে অর্ণব বোকার মতো তাকিয়ে বলে,,,,

– আমিতো জানি তুমি আমায় ভালোবাসো।
– তুমি যতটুকু জানো আমি তোমাকে তারচেয়ে বেশি ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। তোমাকে ছাড়া আমি মরেই যাবো। অর্ণব আমার গাল দুটো নিজের দুহাত দিয়ে ধরে বলে,,,,,,

– পাগলি। ছেড়ে থাকার কথা আসছে কোথায় থেকে? আর নেক্সট টাইম যদি আবার কখনও মরার কথা বলছো তাহলে খবর আছে। আমরা দুজন দুজনের জন্য বেঁচে থাকবো। একসাথে বুড়ো হবো।

বুড়ো বুড়ির সংসার হবে। প্রেম হবে। আমাদের ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনী, তারপর আরো কি কি জানি হয় ওরাও আমাদের রোমাঞ্চ দেখবে। তখনও আমরা মরবো না। অর্ণবের কথা শোনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।

চোখ ভর্তি পানি থাকার সত্ত্বেও না হেসে পারলাম না। অর্ণব আমার চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে,,,,

– আমিও আমার এই পিচ্চিটাকে খুব খুব ভালোবাসি। অর্ণব আমার কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দে। আমি নাক টানতে টানতে বললাম,,,,

– আমাকে কখনও ছেড়ে চলে যাবে নাতো?
– যাওয়ার কথা আসছে কেন? কোথায় যাবো তোমাকে ছেড়ে?

– যদি দূরে কোথাও চলে যাও।
– আমি চলে যেতে চাইলেই তুমি যেতে দিবে? বেঁধে রাখতে পারবে না?

– কি দিয়ে বেঁধে রাখবো? আমার কাছেতো দড়ি নাই। আমার কথা শোনে অর্ণব নিজের কপালে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,,,,,,

– তারমানে এতক্ষণ তুমি দড়ির জন্য কাঁদছিলে? ওকে ফাইন। আর কাঁদতে হবে না । আজকেই একটা মোটা দেখে দড়ি কিনে দিবো।

আমি অর্ণবের দিকে ছলছল চোখে তাকালে অর্ণব আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে যায়। আমি একদম অর্ণবের বুকের সাথে মিশে দাঁড়াই। অর্ণব আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,,,,,,
– বেঁধে রাখার জন্য দড়ি লাগে না। ভালোবাসা হলেই হয়। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।

এছিল আমার আর অর্ণবের প্রেম কাহিনী। আমি আমার প্রতি নিঃশ্বাসে অর্ণবকে ফিল করতাম। আমাদের বেশ ভালোই চলছিল দুটি মানুষের খুনসুটি। একটা মানুষকে যতটুকু ভালোবাসা যায় আমি ততটুকু ভালোবেসেছিলাম।

কিন্তু কথায় আছে, ভালোবাসলেও সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না। আমার ক্ষেত্রেও সেরকম।

আজ আমার বিয়ে। কিন্তু বিয়েটা আমার সেই প্রাণপ্রিয় মানুষটার সাথে হচ্ছে না। আমার বিয়েটা হচ্ছে আমার বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলের সাথে। আগে কখনও ভাবিনি অর্ণবকে এতো ভালোবাসার পরও তাকে আপন করে পাওয়া হবে না। ওকে ছাড়াই আমার নতুন জীবনের সূচনা হবে।

চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here