#সম্পর্ক
#১২
কিছুক্ষণ আগেও প্রকৃতি শান্ত ছিল। হুট করেই এখন দমকা হাওয়া বইছে। নিকষ কালো আকাশের দিকে তাকিয়েও বোঝা যায়, উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসছে মেঘেদের দল, প্রকৃতি ভাসিয়ে নেওয়া বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।
রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি, কমেছে। রতি বসে আছে চুপচাপ, বারান্দাতেই। রাগ, ক্ষোভ, নাকি অভিমান, ঠিক কোনটা রতি জানে না। শুধু জানে, তার বুক পোড়া যন্ত্রণা হচ্ছে। নিজের প্রতি চরম বিরক্ত সে। যে মানুষটা তাকে এভাবেও আঘাত করতে দুইবার ভাবল না, সেই মানুষটাকে কেন ভালোবাসে রতি? কীজন্য? মায়ার বিজ এতদূর অবধি গড়ায় কেন? চাইলেই কেন ভুলে যাওয়া যায় না একটা মানুষ কে? এতসব প্রশ্নের উত্তর কোথায়?
রতি বসে আছে ‘দ’ ভঙ্গিতে। চোখ দুটো কাঁদছে, কাঁদছে বুকের ভেতরটাও, হৃদপিণ্ড কেঁপে কেঁপে জানান দিচ্ছে, ‘আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম আরাফ! আমাকে এতটা আঘাত করার পূর্বে কী তোমার হাত এতটুকুও কাঁপলো না? তবে কী আমি মরে গেছি তোমার মধ্যে? নাকি তোমার ভেতরে কোনোদিন প্রবেশই করতে পারিনি? নিখুঁত ভালোবাসার ফল বুঝি এই? এত যন্ত্রণাই যদি ছিল কপালে তবে এলে কেন জীবনে? আমি তো একাই ভালোছিলাম!’ রতি মুখ নামিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। কিন্তু শব্দ হচ্ছে না। কী হবে শব্দ করে? বুকের পাড় এরচেয়েও কয়েকগুণ বেশি শব্দে ভাঙছে, কই সেটার তো শব্দ হচ্ছে না!
হঠাৎ কারো হাত রতির ঘাড় ছুঁয়ে গেল। রতি চোখ তুলে তাকাতে তাকাতে শুনলো, শিমি ডাকছে, ‘মামী?’
রতি তাকাল,লাল দুটো চোখের উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। শিমি ভড়কে গেল। সেই সঙ্গে একরাশ ভয় জেঁকে ধরল তাকে। সে চেয়ে দেখল, কপালের ডান দিক থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে একটা চিকন রক্তের ধারা নেমে আসছে। আশেপাশে অনেকখানি রক্ত শুকিয়েও গেছে। আকাশে মেঘের গর্জন, শিমি এবার কেঁপেই উঠল খানিকটা। বিস্ময় মাখা চোখ দুটি মেলে বিড়বিড় করে বলল, ‘মামী তুমি তোমার মাথা ফাটিয়েছো?’
রতি স্মিত হাসলো। সেই হাসিতে নেই কোনো ছন্দ, নেই কোনো সুর, পুরোটা জুড়ে বিচরণ কেবল কামড়ে ধরা কষ্টের! জবাব দেওয়ার জন্য মুখ খুলতেই, শিমি উঠে দাঁড়াল। তারপর ছুঁটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। শোনা যাচ্ছে, শিমি চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকছে। আবির কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরেছে। একটু বেরিয়েছিল ও.. শুয়েছিল বাবার বিছানায়। শিমির চেঁচানির চোটে ডাইনিং এ এসে হাজির হলো সে। বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বলল, ‘চিল্লাচ্ছিস কেন?’
‘মামী, মামীর মাথা..’ শিমির গলা কাঁপছে। ততক্ষণে আবিরের বাবা, শিমির বাবা দু’জনেই এসে দাঁড়িয়েছে। শিমি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়, বলল, ‘মামীর মাথা ফেটে গেছে। রক্ত পড়ছে।’
‘বলিস কী!’ অস্ফুটস্বরে বললেন সামিউল রহমান। তারপর তিনজনেই প্রায় ছুঁটে ঘরে ঢুকলেন। ততক্ষণে রতি বারান্দা থেকে ঘরে এসে ঢুকেছে। কিছু একটা খুঁজছিল কপাল চেঁপে ধরার জন্য, মাথা ঝিমঝিম করছে তার। অজ্ঞান হওয়ার বেশি দেড়ি নেই। তার আগেই সবাই দেখে ফেলল।
রতি যতটা না অবাক হলো সবার চিন্তিত মুখ দেখে, তারচেয়েও বেশি অবাক হলো, আবিরের লাল দুটি চোখ দেখে। সে উদ্ভ্রান্তের মতো রতির সামনে এসে দাঁড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে বলল, ‘এটা আশা করিনাই। এভাবে কেউ নিজেকে নিজেই আহত করে? কেন? এখানে কী ভালো থাকছেন না?’
রতি ক্ষীণ স্বরে মিনমিনিয়ে উত্তর দেয়, ‘আমি আমার মাথা ফাটাই নাই আবির ভাই।’
‘তাহলে কে ফাটাইছে, ভূতে?’ জোরালো কণ্ঠ আবিরের। রতি ভয় পেয়ে গেল। এতটা রিয়েক্ট কেন করছে এই ছেলে? আবিরের বাবা এগিয়ে এসে ছেলেকে শান্ত করলেন। বললেন, ‘তুই চুপ থাক একটু। ও’কে বলতে দে… মা বলো তুমি। কী হয়েছে? এমনটা হলো কী করে?’
রতি ভাবে, বলবে নাকি বলবে না? বললে তো আরাফের উপর এরা প্রচুর চেতে যাবে। আরাফের বিরুদ্ধে যদি মামলা টামলাই করে বসে, তখন? রতি ঘামছে, সে চাইছে না আরাফের কথা বলতে। আবার মিথ্যাও বলতে ইচ্ছে করছে না। এই মানুষ গুলো তার জন্য এতকিছু করল, করছে, তাদেরকে কী করে মিথ্যে বলবে রতি?
রতির উত্তরের আশায় চারজোড়া চোখ চেয়ে আছে।তখনি একটা ভুল কাজ হলো। রতির হাত থেকে ইটের টুকরোটি আর কাগজটি গড়িয়ে পড়ল ফ্লোরে। শব্দ শুনে চার জোড়া চোখ সেদিকে মনোনিবেশ করল, রতি ফ্যাকাশে মুখে নিজেকে মনে মনে ভয়াবহ কয়টি গালি দিয়ে আড়ষ্টতায় মুড়িয়ে গেল। আবির নিচু হয়ে ইট আর কাগজটি তুললো। লেখাটি পড়তেই তার কপালে ভাঁজের সৃষ্টি, চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছটা…
আবিরের বাবা আর দুলাভাইও পড়লেন। দু’জনেই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। তারপর তাকালেন রতির দিকে। রতি আড়ষ্ট ভঙ্গিতেই একটু হাসলো।
আবির এই বিষয়ে কথা বলল না। আরাফের মানসিকতা কতটুকু, তার প্রমাণ সে পেয়ে গেছে। আবির ধীর, ঠান্ডা গলায় বলল, ‘ফার্মেসীতে চলেন ভাবি।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, কতক্ষণ হয়ে গেছে রক্ত আসছে। এই মেয়ে তো ভীষণ শক্ত!’ তাড়া দিলেন দুলাভাই। রতি বুঝল, প্রসঙ্গ ঘুরাতেই সবার এত তাড়াহুড়ো। রতি আগ বাড়িয়ে কোনো টু শব্দ করল না।ইচ্ছে করছিল না কোথাও যাওয়ার কিন্তু না গেলেও যে চলবে না। তাই বোরকা পড়ে আবিরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল রতি.. সাথে শিমিও গেল।
_________
‘আজ তিন দিন যাবত পড়তে আসো না কেন মৌনি?’
প্রান্তকে এড়িয়ে চলতে, প্রান্তের কাছে পড়া বাদ দিয়েছে মৌনি, যদিও ব্যাপারটা মঈনুল হোসেন এখনো জানেন না। সকাল সকাল আগেভাগে স্কুলে চলে যায় সে, যাতে প্রান্তের সাথে কোনোক্রমেই দেখা না হয়। এমনকি ছাদে পর্যন্ত আসা বন্ধ করে দিয়েছে মৌনি। যেই মেয়ের আগে ছাদে না আসলে দিনটা ছাড়াছাড়া ভাবে কাটতো, সেই মেয়ে এখন ঘরে বসে গল্পের বইয়ে মন গুঁজে দেয়।
মৌনি আজকে খবর পেল, প্রান্ত নাকি বাসায় নেই। ভার্সিটি গেছে। মাধুরিকে বলেও গেছে, আসতে রাত হবে। কী নাকি অকেশান! মৌনি ভাবল এই সুযোগে একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসা যাক। পা-টাও ভালো হয়ে গেছে। একটু হাঁটলে চললে পায়ের জড়তা পুরোপুরি কেটে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, মৌনি ছাদে আসে। টবগুলোয় পানি দিয়ে রেলিং ঘেঁষে যেই না দাঁড়িয়েছে, ওমনি প্রান্ত বেরিয়ে আসে চিলেকোঠা থেকে..
মৌনি প্রথমে খেয়াল না করলেও, প্রান্তের ছুঁড়ে দেওয়া কথা শুনে ঘুরে তাকায়, তারপর ভয়ে জমে যায় সেখানেই…
আশ্চর্য, ভয় কেন পাচ্ছি আমি! উনি কে যে উনাকে ভয় পাব?
বিড়বিড় করে মৌনি। প্রান্ত কে এগিয়ে আসতে দেখে চুপ হয়ে গেল।
‘একটা প্রশ্ন তো করেছি না? জবাব নেই কেন? ঝগড়াটের সাথে সাথে বোবাও হয়ে গেল নাকি মুখটা?’ ফের বলল প্রান্ত। মৌনি মনে মনে বলল, ‘পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া কীভাবে করতে হয়, কেউ শিখুক আপনার থেকে!’ কিন্তু মুখে বলল, ‘আমি আপনার প্রশ্নটা শুনিনি। খেয়াল করিনি একচুয়ালি..’
‘ও, তো এটা বলতেও এতক্ষণ লাগে? নাটকের শেষ নেই!’
মৌনি যথেষ্ট ঠান্ডা অথচ শক্ত গলায় বলল, ‘তাহলে সেধে সেধে নাটক দেখতে এসেছেন কেন? আমি তো বলিনি, এসো এসো, আমার নাটক দেখে যাও!’
মৌনি ভাবল, এই এখনি প্রান্ত কপাল কুঁচকাবে, রাগ ছুঁড়বে, কঠিন কঠিন কথা বলবে, কিন্তু না, মৌনিকে অবাক করে দিয়ে প্রান্ত হালকা আওয়াজে হেসে উঠল, মৌনি চমকে উঠল।
‘আশ্চর্য! আপনি হাসছেন কেন?’ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল মৌনি। উত্তরে প্রান্ত আর একটু এগিয়ে আসলো, ‘হাসতে মানা নাকি?’
‘আমি কী বলেছি? এমনিতেই জানতে ইচ্ছে করল, এতো হাসির কী আছে?’
‘তুমি ফানি ফানি কথা বলছো, আর আমি হাসব না?’
‘আমি ফানি কথা বলছি?’ ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় মৌনি।
‘হুম, বলছো। আচ্ছা যাইহোক, কাল থেকে পড়তে আসবা বুঝছ?’
মৌনি শক্ত গলায় উত্তর দিল, ‘আসব না।’
‘তোমার বাবা জানে যে তুমি পড়ালেখায় এভাবে ফাঁকি দিচ্ছো?’
মৌনি নিরুত্তর, কাঠকাঠ চোখে চেয়ে রইলো।
‘স্যার অনেক আশা করে আছেন, তুমি একটা ভালো রেজাল্ট করবে এই নিয়ে। যতটুকু তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে বুঝলাম, তুমি স্যারকে আশাহত করবে রেজাল্টের সময়। তোমার প্রিপারেশন একদমই ভালো না।’
এবারেও মৌনি নিরুত্তর, শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলল ছোট্ট করে।
‘শোনো মৌনি, তোমার সাথে পার্সোনালি আমার কোনো ঝগড়া নেই বা অন্য কোনো ঝামেলাও নেই। তাহলে আমার কাছে পড়লে তোমার কোনো সমস্যা হওয়ার কথাও নয়! আর সবসময় তুমি আমার সাথে এমন রিয়েক্ট করো, যেটা মানা যায় না! আমাকে চেনো কতটুকু? এতো অল্পে কারো সাথে এতটা মিশে যাওয়া ভালো নয়।’
‘তাহলে আপনার সাথে মিশতে মানা করছেন?’ কেমন করুণ শোনালো মৌনির কণ্ঠটা…
প্রান্ত নির্বিকাল রইলো।
‘এই মেশা অন্য মেশা.. আমি জানি তুমি খুব ভালো করেই বুঝতেছো আমি কী বিষয়ে বলতেছি তাই না?’
উত্তরের বদলে মৌনি চোখ সরিয়ে অন্যত্র তাকাল।
‘দৃষ্টি সরালেই সব সমাধান হয় না। স্যার অনেক ভরসা করে আমাকে জায়গা দিয়েছেন। স্যারের সেই ভরসাটুকু আমি ভাঙতে চাই না মৌনি। বোঝো একবার!’
মৌনির বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। দুনিয়ার নিয়মকানুন কত কঠিন তাই না! কাউকে পছন্দও করতে হয় ভেবে চিনতে! এত ভাবাভাবি কেন?
মৌনি ভেজা কণ্ঠে বলল, ‘আপনি যান স্যার। আমি কাল থেকে পড়তে আসব।’
‘গুড.. নিজের খেয়াল রেখো মৌনি। সব কিছু রেডিমেট পেয়ে পেয়ে আবেগে ভেসে যেয়ো না। বাস্তবতা কী, মনে রেখো। চলি মৌনি।’
প্রান্ত নিচে নেমে যায়। মৌনি নির্মল আকাশের পানে চোখ মেলে। ভেতরটা আজ একটু বেশিই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!
_________
বেশি একটা ক্ষতি হয়নি রতির। কপালের উপরের দিক দিয়ে অনেকটা চামড়া কুঁচকে ছিঁড়ে গেছে। তাই রক্ত এসেছে। এমনিতে ভেতরে ততটা আঘাত হানতে পারেনি ইটের টুকরো। স্টিচ লাগেনি। মেডিসিন দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ডক্টর। ঠিকমতো মলম গুলো ব্যবহার করলে আস্তেধীরে চামড়া লেগে যাবে, ঠিক হয়ে যাবে।
রতিকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে আবির বলল, ‘শিমি, তুমি ভাবিকে নিয়ে বাসায় চলে যাও। আমি রিকশা ডেকে দিচ্ছি।’
রতি ইতস্তত করে বলল, ‘আপনি কোথায় যাবেন?’
আবির জবাব দিল না। সে রতির সাথে ফার্মেসীতেও ততটা কথা বলেনি। মনে হচ্ছে, আবিরের রাগ জমেছে রতির উপর। কিন্তু কেন?
রতি তাকিয়ে থাকে আবিরের দিকে। আবির রিকশা ডেকে দেয়। শিমিকে নিয়ে রতিকে উঠিয়ে দিয়ে রিকশার ভাড়া পরিশোধ করে। তারপর প্যান্টের দু’পকেটে হাত গুঁজে উলটো রাস্তায় হাঁটা শুরু করল।
রিকশা চলে যাচ্ছে, রতি ঘাড় ঘুরিয়ে আবিরের যাওয়া দেখে সামনে তাকাল। হুট করে তার মনে পড়ল, সেই ইটের টুকরো আর কাগজটা এখনো আবিরের কাছেই আছে।
বাসায় ফিরে কিছুই খেতে পারল না রতি। শিমি জোর করে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়ে ঔষধ খেতে বলল। তারপর চুপচাপ শুয়ে পড়ল রতি। কপালে যন্ত্রণা হচ্ছে ঠিক, তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভেতর। মনটা কু গাইছে বারংবার। মনে হচ্ছে, এমনকিছু একটা ঘটবে যেটা রতি কল্পনাও করতে পারছে না….
বারোটার দিকে বাসায় ফিরল আবির, সঙ্গে উকিল বাবা। রতি ঘুমিয়ে পড়েছিল। শিমি এসে ডাকতেই ঘুম ছুটে গেল। শিমি বলল, ‘মামী একটু আসো তো। খুব জরুরি।’
রতি ভয় পেল। প্রকাশ করল না। চুপচাপ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দাঁড়াল।
আবির কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। তার দিকে একবার তাকিয়ে রতি চোখ ফিরিয়ে নিল। উকিল বাবা পারত পক্ষেই একজন উকিল। আবির আর দুপুরের বিয়েতে উনিই উকিল ছিলেন।
উনি বললেন, ‘রতি মা, আরাফ বলেছে তোমাকে এই সপ্তাহের শুক্রবারে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। তোমার মতামত কী?’
রতি ক্ষণকাল চুপ করে রইল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এতকিছুর পরেও রতির মনে আরাফের জন্য ভালোবাসা ছিল, চিন্তা ছিল, রাগ ছিল। তবে এখন কোনো ধরনের অনুভূতিই হচ্ছে না।
রতি নিচু গলায় বলল, ‘আমার সমস্যা নেই। আমি রাজি আছি।’
‘ঠিক আছে। আর আজকে আরাফ যেটা করেছে তোমার সাথে, সেই শাস্তিও ও’কে দেওয়া হয়েছে।’
‘কী শাস্তি? কে দিল?’ ভ্রু কুঁচকে বলল রতি।
উকিল বাবা আবিরের দিকে তাকালেন। আবির ফ্লোরে তাকিয়ে, উকিল বাবা বললেন, ‘আবির পুলিশে কমপ্লেইন করেছে। প্রমাণ স্বরুপ আরাফের লেখা কাগজটা আবার ওই ইটের টুকরোয় লেগে থাকা রক্ত, পুলিশ গিয়ে আরাফ কে ধরে এনেছে। আপাতত আরাফ থানায়। পুলিশ কাল বাসায় আসতে পারে। তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আর তোমার রক্তের স্যাম্পল নিবে। আরাফের একটা ছোট শাস্তি হলেও হবে। ভালোই হলো। এরকম বজ্জাতের শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিলে এরা আরো লাই পেয়ে যায়।’
উকিল বাবা থামতেই আবির মাথা তুলে তাকাল। রতি আগে থেকেই চেয়ে ছিল। দুই জোড়া চোখ এক হতেই রতি চোখ সরিয়ে নিল। আবির খেয়াল করল,রতির চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। তবে কী আরাফের এরেস্টের খবর শুনে সে খুশি হয়নি?
চলবে…
®অলিন্দ্রিয়া রুহি
*আজ ব্যস্ত আছি। তাই একটু ছোট পর্বই পড়েন।