শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ৯
হঠাৎই মায়ের উত্তেজিত কন্ঠ আমার কানে এলো।
আমি মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম তার কাছে…..
ড্রয়িং রুমে গিয়ে আমি অবাক,এখানে যেন চাদের হাট বসেছে।মিরাজ ভাই,মনিরা আর নবু কে দেখে আমারও বেশ ভালো লাগছে।
কতদিন পর এদের দেখলাম। সবার সাথে অনেক দিন পর কথা বলে মনে যেন শান্তি পাচ্ছি।
তবে এদের এখানে আসার কারন এখনও আমার অজানা।তবে জানার তেমন দরকারও নেই।
এদের দেখে আমার মায়ের ও যেন কথা ফুরাচ্ছে না…..
কথা বলার মাঝে আবারও কলিং বেল বেজে উঠলো। বেলের শব্দে বিরক্ত হলেও তা নিবারন করে দরজা খুলতে গেলাম….
দরজা খুলে সামনে তাকাতেই আমি ঝাটকা খেলাম।।
আর খাবোই বা না কেন??
কাংখিত ব্যক্তি যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে..
যাকে একনজর দেখার জন্য আমি আর আমার চোখ ব্যাকুল…
আর সেই তিনিই কিনা আজ হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালেন।।।
আমাকে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলাদ্রি দা বিরক্তিভরা কন্ঠে বলে উঠলেন…
—– কিরে…
ঢুকতে দিবি নাকি রিটার্ন চলে যাবো???
ওনার “রিটার্ন ” কথাটি কানে আসতেই আমার হুস হলো…
আমি তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে দরজা ছেড়ে সরে দাড়ালাম আর বললাম..
— হ্যা,,আসুন….
নীলাদ্রি দাকে দেখে আমার মায়ের খুশি যেন উপচে পড়ছে। তার আনন্দ আজ সীমাহীন। আর সেই সাথে নীলাদ্রি দা ও কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছেন।।।।
আজ এতদিন পর ওনাকে দেখে আমার আনন্দেরও সীমা নেই।কিন্তু তা আমি প্রকাশ করতে পারছি না….
ওনাকে দেখে চোখ ফেনানো যাচ্ছে না। কি সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। আগের থেকে আরও সুন্দর হয়েছেন।
আগের সেই বডি নেই। এখন তার বডি হয়েছে পেটানো বডি।যা তার সাথে আরও সুন্দর মানিয়েছে,,,
আগেত সেই কাধ সমান লম্বা চুল গুলোও নেই সেগুলো এখন ছোট ছোট চুলে পরিনত হয়েছে….
সব মিলিয়ে কিউটনেসের সাগর লাগছেন তিনি।তবে আগের সেই গম্ভীরতা তার পেশার কারণে মনে হচ্ছে আরও বেড়ে গেছে…
কথার মাঝেই তিনি মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ।।
— কাকিমা একটা কথা ছিলো…
—- হ্যা..
বাবা বলো….
— আসলে একটা রিকুয়েষ্ট করবো, রাখবেন প্লিজ…
—- এভাবে কেন বলছো…
তুমি তো এখন সেনাবাহিনীর ২য় লেফটেন্যান্ট….
তোমার কী এখন আর এমন মিনমিন করা সাজে ( বলেই মা হাসলেন)
—-ঠিক আছে কিন্তু গুরুজন দের কাছে আমরা তো সব সময়ই ছোট.,.
—- আচ্ছা ঠিক আছে..
বলো….
—- আসলে কাকিমা।।
পরশু দিন শুক্রবার রাতে আমরা মানে আমার কয়েকজন বন্ধু, মিরাজ, মনিরা আর নবু আমরা কুয়াকাটা যাবো।
আসলে নতুন চাকরি পেয়েছি ট্রিট টা তো কাউকে দেওয়া হয়নি তাই……
— ও…
এতো ভালো কথা,যাও আর সাবধানে আসবে…
—- কথা হলো..
আমরা আমাদের সাথে মেঘলা কে নিয়ে যেতে চাচ্ছি….
— কেন???
— আসলে ও তো নবুর বন্ধু, মিরাজ, মনিরার বিয়েতেও অনেক হেল্প করেছে আর আমার ছাত্রী ওতো ছিলো তাই….
প্লিজ….
এবার সবাই একসাথে বলে উঠলো “প্লিজ ”
— আচ্ছা….
মায়ের মুখে “আচ্ছা” সবাই খুশি সাথে আমিও……
আজ রাতে কুয়াকাটা যাবো এক সপ্তাহের জন্য তাই আমি প্যাকিং য়ে ব্যস্ত…
নিজের যা যা প্রয়োজন সব গুছিয়ে নিচ্ছি।
হঠাৎ চোখ পড়লো মনিরার বিয়ের দিন নীলাদ্রি দার দেওয়া সেই শপিং ব্যাগের দিকে….
চলবে…..
শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১০
নিজের যা যা প্রয়োজন সব গুছিয়ে নিচ্ছি।
হঠাৎ চোখ পড়লো মনিরার বিয়ের দিন নীলাদ্রি দার দেওয়া সেই শপিং ব্যাগের দিকে….
এতদিন ব্যাগটা আমার কাছেই ছিলো কিন্তু সেদিনের পর ব্যাগটার কথা আমার মনেই ছিলো না…
ব্যাগটা সেই আগের মতোই পড়ে ছিল। কিন্তু এই ব্যাগটা তিনি আমায় কেন দিলেন।না কি অন্য কাওকে দিবেন বলে আমার কাছে রেখে ছিলেন….
অনেক চিন্তা ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম নীলাদ্রি দাকে ফোন দিব…
যেই ভাবা সেই কাজ দিলাম ফোন…
তিন বার কল হবার পর নীলাদ্রি দা ফোন ধরলেন…
আর ফোন ধরেই ধমক দিয়ে বললেন….
—– এত রাতে ফোন দিচ্ছিস কেন?? ঘুমাতে দিবিনা না কি??
কয়টা বাজে জানিস….
—– আসলে একটা কথা ছিলো তাই ফোন করেছি….
—- কথাটা কাল সকালে বলতিস।
এই মাঝরাতে না জালালে কি হচ্ছিলো না।।।
—- মাঝরাত????
এখন মাঝরাত নাকি মাত্রতো রাত ১(একটা) বাজে……
—– তোর সাথে প্যাচাল পারার মতো টাইম আমার নাই…..
কি বলবি তাড়াতাড়ি বল…….
—- আসলে মনিরার বিয়ের দিন যখন আমি ওকে নিয়ে পার্লারে যাবার জন্য বেড়িয়ে ছিলাম….
তখন আপনি আমাকে একটি শপিং ব্যাগ দিয়েছেন…..
—– হ্যা..দিয়েছিলাম…
তো…..
—- আসলে পরে তো ওই ব্যাগটা আপনাকে আর দেওয়া হয়নি। কাল কী ওটা নিয়ে আসবো নাকি পরে নিবেন…
আর আমি কিন্তু ওটা এখনো আনপ্যাক করি নি…..
—- ওটা তোর জন্যই ছিলো…
—- ওও……
কী???
আমার জন্য….
— হ্যা….
— কিন্তু কেন??
এইরে ফোনটা কেটে দিলো… কিন্তু ওটা আমার জন্য কেন.. আর উনি আমাকে দিবেন ও বা কেন???
আনন্দ ও লাগছে আবার সাথে চিন্তাও হচ্ছে..
কিন্তু যাই হোক এখন দেখা যাক প্যাকেটের ভেতর কি আছে….
প্যাকেট টা আনপ্যাক করেই দেখি একটি মিষ্টি রংয়ের সুতির জামদানী শাড়ি….
শাড়িটি দেখে মনের মধ্যে একটি অন্যরকম ভালোলাগা শুরু হলো….
নিজের শাড়ি পাওয়া গিফট কিনা আমি এভাবে ফেলে রেখেছিলাম…
কি পাগল আমি….
সকালে ঘুম থেকে উঠে শাড়ি টা দেখে মন আবার ভালো হয়ে গেল। প্যাকিং ব্যাগে শাড়িটা নিয়ে নিলাম..
কারণ পরে দেখা যাবে তাড়াহুড়ায় নিতে মনে থাকবে না……
আমার হাসি মাখা মুখ দেখে মায়ের একটা কথা শুধু রেকর্ডিং য়ের মতো শুধু বেজেই চলেছে…
“”” শুধু মাত্র নীলাদ্রি এসে বলেছিল বলে যেতে দিচ্ছি….. “”
সারাদিন আজ মায়ের সব কথা শুনেছি এতে আমার মা খুব খুশি…
সন্ধ্যায় যখন রেডি হচ্ছি। তখন নবু ফোন দিলো…
— হ্যালো…
নবু বল…
—- রেডি হয়েছিস তুই….
—- হ্যাঁ, প্রায় কেন…
—- শোন।।
রেডি হয়ে এক ঘন্টার মধ্যে আমাদের বাড়িতে চলে আসবি…..
—- কেন….
—- আরে আমাদের এখান থেকেই মাইক্রো তে করে আমরা রওনা হবো….
—- আচ্ছা।।
কিন্তু আমি এখন আসবো কেমনে আর মা তো আমাকে একা যেতে দিবে না…
— এখন এটা তুই ম্যানেজ করবি…..
বলেই ফোন রেখে দিলো….
এবার আমি পড়লাম মহা বিপদে।
এখান থেকে ওদের বাড়ি প্রায় বিশ মিনিটের রাস্তা..
কেমনে যাবো…..
কি করবো বুঝতে না পেরে মায়ের কাছে গেলাম….
আমার সমস্যার কথা শুনে মায়ের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। এখনি তিনি যাবার জন্য “না” করে দিবেন…..
চলবে……