#আমার_সংসার
.
.
Part:27
.
.
Writer :Mollika Moly
.
.
আমাকে আর আমার সন্তান কে আলাদা করেছেন আপনিই।একটা মায়ের কাছে থেকে তার সন্তান কে কেড়ে নিয়ে কতোবড় অন্যায় করেছেন ভেবে দেখুন। প্রচুর রেগে কথা গুলো বলে সিনহা চলে গেলো সিফাতের কাছে থেকে।আর সবটা শুনে সিফাত বসে পড়লো ফ্লোরে।
.
কি বলে গেলো সিনহা ঐসব। এগুলো সত্যি।সিনহা আমায় ভালোবাসতো।আমার আর জারার জন্য সে এতোকিছু করেছে আর আমি কি না ওকে ভুল বুঝলাম।ওকে এতো কষ্ট দেওয়ার পরও সে আমায় ভালোবাসতো আর আমি কি না জানতামই না।আমাকে একবার কেনো জানাওনি সিনহা।আমিতো তোমাকেই ভালোবেসেছিলাম জারা কে নয়।তোমার সাথে থেকে আমি কখন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি এটা নিজেও বুঝতে পারিনি।যখন বুঝলাম তখনই আমি জারার সাথে আলাদা হয়ে গেছি।ভেবেছিলাম তোমাকে ডিভোর্স দিবো না নতুন করে সেদিন ভালোবাসার কথা বলে চমকে দিবো। কিন্তু তার আগেই তো তুমি আমাকে একা করে দিয়ে গেলে।একটি বার বললেও না তুমি আমাকে ভালোবাসো।আজ তুমি শুধু তোমারটুকু বলে গেলে আমার এই কথাগুলো শুনলে না সিনহা।আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই আমি।এগুলো একলা মনে সিফাত বকতে লাগলো।
.
সিনহা সিফাতের কাছে থেকে সোজা বাড়ি চলে এলো এক মুহুর্ত অফিসে না থেকে।রুমে ঢুকে লকড করে দিয়ে বিছানার এক কোনে বসে কাঁদতে লাগলো।আর হাজারো ভাবনা স্মৃতি তাকে ঘিরে ধরলো।পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলছে ওকে কষ্ট গুলো।আজ সে নিজেকে আটকাতে পারছে না।প্রতিদিনের নিঃশব্দ আর্তনাদ আজ ভাষা পেয়েছে।মনের যতো কথা,রাগ,অভিমান আছে আজ সব কান্না হয়ে ঝড়ছে।সিফাত তাকে বরাবরই ভুল বুঝে আসে।যার কারনে নিজের সন্তান কে পরিত্যাগ করেছে সে আজ নানা রকম কথা বলে ধিক্কার দেয়।মায়ের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করে।ছিহ সিফাত ছিহ,তুমি আমায় ধিক্কার দাও আঙুল তুলো এই আঙুল টা তোমার দিকে উঠা উচিত।তোমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া উচিত তুমি ঠিক কি কি অন্যায় করেছো।এতোদিন সব সহ্য করেছি তোমার আমি কিন্তু আজ তুমি সবকিছুর উর্ধ্বে চলে গেছো।আমার মাতৃত্ব অধিকার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছো আজ তোমার প্রতি ভালোবাসা না ঘৃনা এসে গেছে।আমি ঘৃনা করি তোমায় সিফাত আহমেদ । অনেক ঘৃনা করি।ভালোবাসাটা ঘৃনায় পরিনত হয়ে গেলো আমার। একাই বকতে থাকলো সিনহা।খানিকক্ষণ নিজের ইচ্ছামতো মনে রাগে সিফাত কে বকে এখন একটু হালকা লাগছে।তারপর স্বপ্ন কে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে গেলো।
.
আর এদিকে ফাহিম অফিস থেকে ফিরছিলো।আকাশটা খুব মেঘলা।যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে।চারদিকে বাতাস হচ্ছে হালকা শীত অনুভুত হচ্ছে বাতাসে।পরিবেশ টা কেমন জানি থম থমে হয়ে আছে।বিকেলের দিকে সুর্য প্রায় পশ্চিমে হেলে পড়েছপ আলোর গতি কমে গেছে যদিও মেঘের আড়ালে সুর্য ঢাকা পড়ে গেছে।বিকেল বেলায় মনে হয় যেনো প্রকৃতি তে সন্ধ্যার আঁধারের ছায়া পড়েছে।পরিবেশ টা ভালোই লাগছে বেশ উপভোগ করার মতো।হালকা মৃদু সুরের গান শুনছে আর ড্রাইভ করছে ফাহিম।হঠাৎই তার সামনে দেখে চমকে গেলো।একটা মেয়ে হাতে কিছু শপিং ব্যাগ বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে যাচ্ছে । মুখ দেখা যাচ্ছে না সামনের চুলগুলো পুরো এলোমেলো হয়ে আছে। দুহাত ভর্তি ব্যাগ থাকার কারনে চুলগুলো সড়াতে পারছে না।ওভাবেই গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।ফাহিম ব্রেক কষলো।গাড়ি থামতেই মেয়েটি গাড়ির ওপর ব্যাগ গুলো রেখে চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো।চুল সড়াতেই ফাহিম দেখতে পেলো মেয়েটিকে।মেয়েটি আর কেউ নয় ফাহিমের মায়াপরী।ফাহিম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সাইরির দিকে।আর এদিকে সাইরি চুলগুলো ঠিক করাতে ব্যাস্ত।চুল ঠিক করে ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রিক্সা করে চলে গেলো।কিন্তু ফাহিমের সেদিকে খেয়ালই নেই সে দেখতেই আছে তার মায়াপরী কে।হঠাৎই তার ঘোর কাটে পিছনে থাকা গাড়ির হর্নের আওয়াজে।চমকে উঠে সামনে দেখে তার মায়াপরী আর নেই।আচ্ছা সে কি তবে স্বপ্ন দেখলো নাকি সত্যিই ওর সামনে মায়াপরী ছিলো।সে বুঝতে পারচে না কারন ওর স্বয়নে স্বপনে শুধুই মায়াপরী আসে সবসময়। পাগল হয়ে গেছে সে মায়াপরীর জন্য।একটুখানি হাসলো তারপর ড্রাইভ করা শুরু করলো।
.
পরের দিন অফিসে।সিফাতের কেবিনে সিফাত সিনহা মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে।
– “আমার কিছু প্রশ্ন আছে তোমাকে করার?
– ” আমি কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
– “তুমি বাধ্য সিনহা কারন তুমি লিগ্যালি আমার ওয়াইফ এখনো।
– ” সরি এই অধিকার টা আপনার আর নেই।
– “কেনো নেই সিনহা তুমি কি বিয়ে করেছো,কাজে বিয়ে করেছো,তুমি কাল বললে তুমি আমাকেই ভালোবাসো তবে সেদিন চলে আসার পর কাকে বিয়ে করলে।ভালবাসার মানুষ না থাকলে কার ভরসায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলে কোথায় ছিলে।আর কাকেই বা বিয়ে করলে,কিভাবে সব হলো এই সবকিছুর উত্তর আমাকে দাও তুমি?
– ” আমি আগেই বলেছি আমি কেনো উত্তর দিতে বাধ্য নই।এটা আপনার বাড়ি না অফিস।আর আমিও আপনার বউ না পি.এ সো আশা করবো আমাদের সম্পর্ক পি.এ আর বসের মতো থাকবে।আমি কি করি না করি,কার সাথে বিয়ে করেছি কিভাবে থেকেছি কিসের ভরসায় সবাই কে ছেড়ে এসেছি এইসব কথা বসের কাছে এক্সপ্লেন করার কথা নয়।আপনি আমার বস নিজের সীমার মাঝে থাকুন।
– “ওকে ওকে বস আমি আর তুমি পি.এ এই খাতিরে আমার জানার অধিকার নাই থাকতে পারে।কিন্তু আমি তোমার বর সেই অধিকারে আমার সব জানার অধিকার আছে।
– ” সেই অধিকার আপনি অনেক আগেই হাড়িয়েছেন।
– “নাহ এখনো হারায়নি। তুমি এখনো আমার স্ত্রী। আমাদের ডিভোর্স হয়নি এখনো,আমার পরে তোমার হাজার বর থাকুক না কেনো অধিকার আমারি সর্বাগ্রে। কারন আমরা এখনো স্বামী স্ত্রী।
– ” আমি মানিনা।
– “তুমি না মানলে কি হবে আইন মানে আমরা স্বামী স্ত্রী।
– ” আইন মানলে মানুক আমি না।আর আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
– “উহু ডিভোর্স আমি দিবো না।আমি আবারো তেমায় নিয়ে সংসার গড়বো।হবে আমাদের সংসার।তোমার স্বামী থাকলে তাকপ ডিভোর্স দাও আমাকে দেওয়ার কথা ভুলেও মাথায় নিয়ে এসো না।
– ” চুপ থাকেন আপনি,যখন যা মনে হবে সেটাই করবেন আপনি তাই না।আপনার কথায় সব হবে।আর কারো কেনো মতামত নেই।নিজের মতামত সবসময় অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনার বদঅভ্যাস তৈরি হয়েছে। আপনার মতামত আর আমার ওপর খাটবে না এটা জারার ওপর খাটান ভালো হবে।
– “কেনো জারার ওপর খাটাবো কেনো,আর তোমার ওপর খাটাবো না কেনো?
– ” জারার ওপর খাটাবেন কারন সে আপনার বউ।
কথাটি শুনে খানিকক্ষণ হাসলো সিফাত।আর সিনহা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সিফাতের দিকে সাথে কিছু বিরক্ত।
– “কি হলো অমন হাসছেন কেনো?
– ” কি বললে আবার বলো?জারা আমার কে বলে আবারো হাসতে লাগলো সিফাত।
– “কিছু না ধুরর যান তো পাগল হইছেন আপনি।বলেই সিনহা চলে গেলো সিফাতের কাছে থেকে।
– ” সিনহা এই সিনহা শুনো একটা কথা জারা আমার বউ,,কথাটি না শুনেই চলে গেলো সিনহা ফিরে তাকালো না।
যাহ চলে গেলে শুনলেই না জারা আমার বউ না।ধুরর ওকে বলতেই পারলাম না আজকে সত্যটা।যে রেগে আছে সে কি মানবে সত্যগুলো।আমাকে কি সে আর মেনে নিবে নাকি দুরে সরাই দিবে।আমায় ওকে মেনে নিতেই হবে।আমি ওর ভবিতব্য। আমও ছাড়া ও কাউকে ভালোবাসতে পারে না দিবোনা।ওর বরের কাছে থেকে ওরে আমি আলাদা করে আমার কাছে নিয়ে আসবো।সিনহা আমার ছিলো আমারি থাকবে অন্যকারো না।কথাগুলো নিজের মনে মনে বললো সিফাত।
.
to be continue…..