#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম
____________________[৯]___________________
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে সূর্যটা ক্রমশ পশ্চিমে হেলে পড়ছে। বিকেলের আলো ফুরিয়ে এলো প্রায়। মাঝেমধ্যেই আকাশে ভেসে থাকা ছাই রঙের মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে সূর্যটা। বৃষ্টি নামবে নামবে ভাব।
দোতলার বারান্দায় ঝোলানো বহুপুরোনো দোলনাটায় বসে দোল খাচ্ছে তনু। কানে এয়ারফোন গুজে গান শুনছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে। ছাই রঙের মেঘ গুলো ধীরে ধীরে ঘনকালো রঙ ধারণ করছে।
তনু একমনে সেদিকে তাকিয়ে ভাবছে, পুকুর পাড়ে তখন কি বলল সায়ন ভাইয়া!? তার বলা কথাটা তনু মনেমনে বার কয়েক আওড়ালো। কিন্ত কথাটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। তবে এটা বুঝতে বাকি নেই যে সায়ন ভাইয়ার তার থেকে দূরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা জড়িত।
স্নেহার ডাক পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল তনুর, কান থেকে এয়ারফোন খুলে বলল,
” কি হয়েছে আপু!?
” কি হয়নি তাই বল। রুশাকে সেই কখন বললাম যে, আমার ফোনটা নিচে চার্জে দেয়া আছে গিয়ে একটু নিয়ে আয় না। সেই যে বান্দা নিচে গেছে, এখনও এলো না!
” আচ্ছা তুমি ঘরে যাও। আমি নিয়ে আসছি।
” তাড়াতাড়ি নিয়ে আসিস, তোর দুলাভাইকে কল দেবো। এতক্ষণেও আসার নাম নেই তার, এদিকে আকাশের অবস্থাও ভালো না!
স্নেহার কথা শেষ হওয়ার আগেই তনু দোলনা ছেড়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো।
____________________________________
|
|
|
|
|
তনু বসার ঘরে এসে দাড়াতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে গেলো চারপাশ। রান্নাঘর থেকে রাবেয়া হাক ছাড়ল,
” এই কে কোথায় আছিস রে! বারান্দা থেকে হারিকেনটা নিয়ে এদিকে আয়।
সাথেসাথেই হাসু মিয়া বারান্দা থেকে একটা বড় হারিকেন জ্বালিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই মশার প্রকোপ বেড়েছে খুব। কয়েল না জ্বালিয়ে দুদন্ড স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। তনু বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে স্নেহার ফোন খুজছে।
বসার ঘর থেকে খুজতে খুজতে বারান্দায় এসে দাড়ালো সে, বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে কেউ। তনু ফোন ঘুরিয়ে সেদিকে আলো ফেলতেই খেকিয়ে উঠল রুশা,
” আরে কে রে! চোখে লাইট মারছেন কেনো!?
” অন্ধকারে ভূত নাকি পেত্নী দাঁড়িয়ে আছে তাই দেখছি।
তনুর গলা পেয়ে মুখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে তাকালো রুশা, তনু এগিয়ে এসে বলল,
” স্নেহা আপু না তোকে ফোন নিয়ে যেতে বলেছিলো! তা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি এতো আকাশপাতাল ভেবে মরছিস!?
রুশা মুখ গোমড়া করে বলল, ” আজ বিকালে সায়নের সাথে নদীর পাড়ে বেড়াতে যাবো ভেবেছিলাম। অথচ সারা বিকেল ধরে সায়নকে কোথাও পেলাম না। আর এখন দ্যাখ আকাশের অবস্থা!!
” সেজন্য মন খারাপ করে আছিস!?
” হুম
রুশার গোমড়া মুখটা দেখে তনু মনেমনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্ত মুখে কিছু বলল না। এরমধ্যেই সায়নের বাবা সাদাত আহমেদ এসে গেছে। হাসু মিয়ার সাথে গল্প করতে করতে বারান্দায় এসে দাড়ালো সে। তনু আর রুশাকে দেখে বলল,
” কি অবস্থা আম্মুরা!? কেমন আছিস?
তনু আর রুশা দুজনেই বলে উঠল, ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন!?
সাদাত তাদের সাথে টুকটাক কথা বলে ঘরে চলে গেলেন। তনুও তার পেছন পেছন বসার ঘরে ঢুকে স্নেহার ফোন খুজতে লাগল।
__________________________________
|
|
|
|
|
সায়ন মাত্রই বাসায় এসে ঢুকেছে, দুপুরে তনুকে কথাটা বলার পর থেকে নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে তার। দুপুরে সেই যে খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে আর এখন ফিরল। ভেবেছিলো অনেক রাত করে ফিরবে কিন্ত কি ভেবে আগে আগেই বাসায় ফিরে এসেছে সে।
রুশাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা বিরক্ত হল সায়ন। এটাকে দেখলেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এমন গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েদের সে দুচোখে দেখতে পারে না। রুশাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে তখনই দেখলো তনু বসার ঘরে কি যেনো খুজছে। সায়নকে দেখে রুশা ন্যাকামো স্বরে ডাকল,
” সায়ন ভাইয়া!
স্নেহার ফোন খুজে পেয়েছে তনু, পেছন ফিরে যেই ওপরে উঠতে যাবে। তখনই সায়নের নাম শুনে ফিরে তাকালো সে। রুশার ডাক পেয়ে সায়নও এগিয়ে এসে বলল,
” বল রুশা!
সায়নের কন্ঠঃ শুনে মনে হচ্ছে সেও বেশ আবেগের স্বরে কথা বলছে। রুশা যেনো আরও পেয়ে বসল, ন্যাকামি করে সায়নকে বলল,
” আজ তো আমরা ঘুরতে যেতে পারলাম না। কাল কি তোমার সময় হবে!? আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার!?
মুহুর্তেই তনুর মাথায় আগুন ধরে গেলো, দু’হাতে ধরে রাখা ফোন দুটোকে শক্ত করে চেপে ধরল সে। সায়ন আড়চোখে তনুকে দেখে মুচকি হাসল, রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কাল সারাদিন সময় না পেলে রাতে ঘুরতে যাবো। তাও না হলে পরদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একসাথে ঘুরে বেড়াবো আমরা।
তনুর মেজাজ ভয়ংকর রকমের খারাপ হয়ে গেছে, হাত দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফোন দুটো ভেঙে ফেলতে চাইছে সে। কিন্ত তার নরম হাতের মুঠোয় ঠিকমতো পিষ্ট হচ্ছেনা সেগুলো। মনেমনে বলল,
” এহহ! ছেনালি দেখে বাচিনা!! খাটাশ কোথাকার!!!
এদিকে রুশা তো চোখে সরষে ফুল দেখছে। সায়ন তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে! তাও আবার সারাদিন!? এও কি সম্ভব!!? কিন্ত পরক্ষণেই মন খারাপ করে বলল,
” কিন্ত পরশু দিন তো আমরা বাসায় ফিরে যাবো!
” সেটা তো তোকে ম্যানেজ করতে হবে রুশা। আমি যদি সারাদিন তোকে নিয়ে ঘুরতে পারি, তুই এটুকু করতে পারবি না!?
” পারবো পারবো, তোমার জন্য আমি সব করতে পারবো।
তনুর আর সহ্য হচ্ছেনা, রুশার বলা কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে তার গায়ে যেনো কেউ গরম তেল ঢেলে দিয়েছে। রাগে ফুসতে ফুসতে বারান্দায় এসে স্নেহার ফোনটা রুশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” যা তো! ফোনটা স্নেহা আপুকে দিয়ে আয়!
তনু রুশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেও সায়ন ঠিকই বুঝতে পারছে যে, তনু কতটা রেগে আছে! রুশা বিরক্ত হয়ে বলল,
” দেখছিস না! আমরা কথা বলছি!! যা তুই ফোন দিয়ে আয়!!!
” না দেখতে পাচ্ছিনা। পেলেও আমার কোনো যায় আসে না। এখন যা বলছি!
তনুর ধমক শুনে চমকে উঠল রুশা, সায়নের দিকে তাকিয়ে দেখল সে ভাবলেশহীন ভাবে ফোন হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখছে। এখন সায়নকে ডেকে কিছু বললে যদি তনু আবার ঝাড়ি দেয়! সেই ভয়ে রুশা কাপা কাপা হাতে ফোনটা নিয়ে দ্রুত পায়ে ঘরে চলে গেলো।
রুশা চলে যেতেই সোজাসুজি সায়নের দিকে ফিরে তাকালো তনু। অথচ সায়নের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। সে একমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কিছুই হয়নি। তনু নিজেকে শান্ত করে সায়নকে বলল,
” আপনার সাথে কথা আছে।
” বল শুনছি।
” তখন পুকুরপাড়ে
বাকিটা বলার আগেই তনুর বাবা আর ছোট ভাই এসে দাড়ালো বারান্দায়। মাত্রই এসে উঠেছে তারা, সায়নকে দেখে রোহান তো খুশিতে একরকম হামলে পড়ল তার ওপর। সায়নও তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে সাথে করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। আর তনু সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বাবা আর ভাইয়ের ওপর হুট করে খুব রাগ চড়ে বসল তার। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠল,
” আসার আর টাইম পায় না কেউ! কথার মাঝেই এসে উঠতে হয়!! যত্তসব!!!
_____________________________________
|
|
|
|
|
ঘড়িতে রাত নয়টা বাজে। এখনও ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে অনেকক্ষণ। সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় এসে উঠেছে ইমরান। আসা থেকেই হাচি দিতে দিতে বেচারার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
তাতেও স্নেহার রাগ কমছে না। এতো দেরি করে এসেছে বলে ইমরানের সাথে কথা বলবেনা ভেবেছিলো সে। কিন্ত তার কাকভেজা অবস্থা দেখে বেশ মায়া হচ্ছে স্নেহার। কিন্ত মুখে সেটা প্রকাশ করছে না।
বসার ঘরে মাদুর পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড়বড় হারিকেনের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারিদিক। সারা বাড়িতে গমগম করছে পরিবেশ। তনুর আব্বু আর মামারা বারান্দায় বসে খোশগল্পে মগ্ন হয়ে আছে। সেইসাথে যোগ দিয়েছে হাসু মিয়া।
সেলিনা আর রাবেয়া খাবারের দিক সামলাচ্ছে, স্নেহাকে নিচে খেতে পাঠিয়ে স্নেহার মেয়ের পাশে বসে আছে তনিমা। ইমরানও সেইসাথে খেয়ে নিচ্ছে। অফিস করে আবার এতদূর আসতে আসতে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গেছে সে। খেয়ে উঠে একটু বিশ্রাম নিতে হবে।
সায়ন আর রোহান এখনও বাসায় ফেরেনি। এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় গেছে কে জানে। রুশা চিন্তিত স্বরে বলল,
” সায়ন এখনও ফিরলো না যে! ফোনে ব্যালেন্সও নেই যে কল দেবো।
তনু একটি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ” তোর কি ছাতা লাগবে রুশা!? বলিস তো হাসু মামাকে বলে এনে দিই!?
” আশ্চর্য! ছাতা দিয়ে আমি কি করবো!?
” কেন! তোর সায়নকে খুজতে যাবি!! বৃষ্টির মধ্যে তো ছাতা ছাড়া যেতে পারবি না। অবশ্য ছাতা ছাড়াও চলে যেতে পারিস। তারপর তুই অসুস্থ হলে তোর সায়ন তোর সেবা করবে।
কথা গুলো তনু স্বাভাবিক হয়ে বললেও মনেমনে রুশাকে বেদম পেটাতে চাচ্ছে সে। সারাক্ষণ শুধু সায়নের নাম জপ করতে থাকে!
” উফফ! তুইও না!! তোর মুখে কি কিছু আটকায়না তনু!!? অবশ্য আমি কিছু মনে করিনি। একদিন তো এসব হবেই।
বলতে বলতে রুশার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। রুশার গাল দুটোর চামড়া ছিলে শুকনো মরিচ ডলে দিতে মন চাচ্ছে তনুর। তারপর রুশার কি অবস্থা হবে ভেবে পৈশাচিক হাসি দিল সে। সেলিনা তাদের ডেকে বলল,
” এই তনু! যা তোর আব্বু আর মামাদের ডেকে নিয়ে আয়।
আর তোরাও এসে খেয়ে নে।
রাবেয়া প্লেটে খাবার তুলতে তুলতে বলল, ” সায়ন আর রোহান কোথায় ভাবি!? ওরাও এসে খেয়ে নিতো।
” ওরা বাজারের দিকে গেছিলো, বৃষ্টিতে বোধহয় আটকে গেছে। বৃষ্টি কমলেই চলে আসবে।
____________________________________
সবাইকে খেতে পাঠিয়ে তনু বারান্দার দোলনায় উঠে বসল। ভীষণ অস্থির লাগছে তার। যতক্ষণ না ব্যাপারটা ক্লিয়ারলি জানতে পারবে ততক্ষণ স্বস্তি পাবে না সে।
বাইরে বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এসেছে, ঠান্ডা হাওয়া বইছে চারিদিকে। তনু ওড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিল। বেশ শীত শীত অনুভূত হচ্ছে।
সায়ন আর রোহান এসে উঠেছে বারান্দায়। বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছে দুটোই। ঘরে যেতে যেতে রোহান বোনকে ডেকে বলল,
” আপু গামছা বা তোয়ালে দে তো। উফফ কি শীত!!
তনু একবার সায়নের দিকে তাকিয়ে হনহন করে ঘরে চলে গেলো। রোহান তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে নিয়েছে। এতো রাতে গোসল করবে না সে। তার নাকি ভীষণ রকমের শীত লাগছে।
সায়ন ওপরে গোসল করতে গেছে। কিন্ত ভুলে তোয়ালে না নিয়ে শুধু ট্রাউজার্স নিয়েই গোসলে ঢুকেছে সে। সেলিনা তোয়ালেটা তনুকে দিয়ে বলল,
” তনু! যা তো তোয়ালেটা সায়নকে দিয়ে আয়।
তনুও তোয়ালে নিয়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলো। সেলিনা তনুকে পাঠিয়েছে দেখে রুশা গাল ফুলিয়ে বলে উঠল, ” কাকি! আমাকে বললেই তো পারতে!! আমি দিয়ে আসতাম!!!
” তনু গেছে তো দিতে। তুই আয় খেয়ে নে।
” না থাক, আমি পরে সায়ন ভাইয়ার সাথে খাবো।
” আবার পরে কেনো! সায়ন আর তনু পরে খাবে। তুই এখন খেয়ে তোর ফুপ্পিকে ডেকে নিয়ে আয়।
রুশা না চাইতেও সবার সাথে খেতে বসে পড়ল। এদিকে তনু তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনেমনে ঠিক করল, যেভাবেই হোক এখনই সায়নের কাছ থেকে ব্যাপারটা ক্লিয়ারলি শুনবে সে।
তনুর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে সায়নের উচ্চস্বর শোনা গেলো, ” আম্মু! আমি তোয়ালে নিতে ভুলে গেছি। তাড়াতাড়ি দাও তো!
তনু একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজায় নক করে বলল,
” তোয়ালে নিয়ে এসেছি, নিন।
তনুর কন্ঠঃ পেয়ে চুপ হয়ে গেছে সায়ন, কিছুক্ষণ চুপ থেকে দরজাটা একটু খুলে হাত বাড়িয়ে দিল তোয়ালে নেওয়ার জন্য। তনু মুচকি হেসে বলল,
” কিন্ত তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
” তনু! তোর যা জানার আছে আমি বের হই তারপর জিজ্ঞেস করিস।
” উহু! আপনি বের হওয়ার পর কিছুই বলবেন না আমি জানি। এখনই বলুন। নাহলে আমি তোয়ালে নিয়ে গেলাম।
” আচ্ছা, আচ্ছা। বল!
” তখন পুকুর পাড়ে আমাকে যা বললেন তার মানে কি!?
সায়ন কোনো উত্তর দিলনা, তনু আবার বলে উঠল, ” কি হল! বলুন!!
তনুর কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ন ওয়াশরুমের দরজা খুলে তনুর হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে ভেতরে নিয়ে এলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছে তনু। সায়ন ওয়াশরুমের দরজা লক করতেই তনু চিৎকার করে উঠল। কিন্ত সে আওয়াজ আঁটকে গেল সায়নের হাতের তালুতে।
তনু ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত-পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগল। কিন্ত সায়নের ইস্পাত-দৃঢ় শরীরের সাথে পেরে উঠছে না। তবুও তনু থেমে নেই, হুট করে সায়ন এক ভয়ংকর কাজ করে ফেলল। তনুর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিল সে!
সায়নের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠল তনু। তার শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে! উত্তেজনায় দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। অথচ সায়ন তাকে ছাড়ার নামই নিচ্ছেনা। তনুর ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
” আগে বললেই তো পারতিস যে, আমার সাথে তোর গোসল করতে ইচ্ছে করছে!
সায়নের নেশা জড়ানো কন্ঠ শুনে আরও বেসামাল হয়ে পড়ছে তনু। সারা শরীরে বইছে সায়নের বেসামাল স্পর্শ! তনু যেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। লজ্জায় আরক্তিম হয়ে উঠছে সে।
কিন্ত মুহুর্তেই তাকে অবাক করে দিয়ে সায়ন তার ভেজা ট্রাউজারটা তনুর হাতে ধরিয়ে দিল। তনু ভ্রু কুচকে তাকালো সায়নের দিকে। সায়ন দু’হাতে তার আধ ভেজা চুল গুলো ওল্টাতে ওল্টাতে বলল,
” ট্রাউজারটা ধুয়ে নেড়ে দিস।
বলেই দ্রুত পায়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেল সায়ন। আর তনু হাবলার মতো তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। দৃষ্টি সরিয়ে হাতে রাখা ট্রাউজারটা দেখতেই চড়চড় করে তার রাগ উঠে গেলো। দাতে দাত পিষে সায়নকে অশ্রাব্য গালি দিতে দিতে ট্রাউজারটা ধুয়ে ফেললো তনু।
_______________________________
|
|
[চলবে]
#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম
__________________[১০]__________________
ইমরান আর স্নেহা খাওয়া শেষ করে ওপরে এসেছে। এদিকে বাচ্চা কোলে নিয়ে ঝিমাচ্ছে তনিমা। একটু ঢুলে পড়তে গেলে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে বসছে। স্নেহা ঘরে ঢুকে বিছানার দিকে এগোতে এগোতে বলল,
” ফুপ্পি! ও কি ঘুমিয়ে পড়েছে!?
স্নেহার কন্ঠঃ পেয়ে তনিমা সেদিকে তাকিয়ে বলল, ” হুম ঘুমিয়েছে। তোদের খাওয়া শেষ!?
স্নেহার পিছুপিছু ইমরান ঘরে ঢুকে বলল,” হ্যাঁ ফুপ্পি। এবার আপনি গিয়ে খেয়ে নিন। অনেক রাত হয়েছে।
তনিমা বাচ্চাটাকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বারান্দা দিয়ে হেটে সিড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল সায়ন এদিকেই আসছে। তনিমাকে দেখে সায়ন পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই তনিমা ডেকে বলল,
” সায়ন দাড়া!
সায়ন দাড়িয়ে গেল। কিন্ত তনিমার দিকে তাকালো না। পুরনো কোনো এক রাগের কারণে তনিমাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে সে।
তনিমা সায়নকে কিছু বলতে চাইছে। কিন্ত কথা গুলো কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে তনিমার গলায় এসে আঁটকে যাচ্ছে বারবার। সায়ন ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
” ফুপ্পি কিছু বলবে!? বললে বলো। আমার অনেক কাজ আছে।
” অনেক কিছুই তোকে বলতে চাই। কিন্ত কিভাবে কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিনা রে।
” তাহলে যখন বুঝতে পারবে তখন বলো।
স্পষ্টভাবে কথা গুলো বললেও ভেতরে ভেতরে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সায়ন। ফুপ্পির সামনে আর দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। তাকে এখনই ঘরে গিয়ে নিজেকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করতে হবে।
নাহলে যে তার ভেতরের কষ্ট গুলো বাইরে বেরিয়ে আসবে! যা সে কোনোমতেই হতে দেবে না। সে চায় না তার কষ্ট কেউ দেখুক। সায়ন ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তনিমা বলে উঠল,
” তনুকে এখনও ভালোবাসিস!?
সাথেসাথেই মৃদু হোচট খেলো সায়ন। অন্ধকারে সেটা দেখতে পায়নি তনিমা। নাহলে সায়নের উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতো না সে। সায়নের ভেতরটা ভীষণ রকম এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চোখেমুখে কাঠিন্য এনে দৃঢ় কন্ঠে বলল,
” কেন! আবার থ্রেট দেবে নাকি ফুপ্পি!! যেনো তোমার মেয়ের থেকে একশো হাত দূরে থাকি!!!
” আমি কখন বললাম ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকতে!?
” ওর থেকে এভাবে দূরে থাকাটা তো আমার কাছে কয়েকশো মাইলের দূরত্ব মনে হয়।
” ও কিন্ত এখনও তোকে অনেক ভালোবাসে সায়ন।
” জানি ফুপ্পি। আর জানি বলেই তো নিজেকে সামলাতে পারছিনা। তুমি বরং এখান থেকে গিয়ে ওকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিও। নাহলে এবার কিন্ত আমিই বিয়ে করে নেবো।
” বিয়ে করবি কি রে!? তুই তো এখনও চাকরিই পাসনি!!?
” চাকরি পেলে বুঝি তোমার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে!?
তনিমার মুখটা শুকিয়ে গেলো। মলিন হেসে বলল, ” তোর মতো ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পাওয়াটা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার সায়ন। তোর হাতে তনুকে তুলে দিতে পারলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হত না।
মুহুর্তেই সায়নের চোখজোড়ায় নোনাজল জমে উঠল। এতদিন ধরে মনেমনে পুষে রাখা তার রাগ অভিমান যেনো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সায়ন অবাক হয়ে বলল,
” তাহলে কেন আমাদেরকে আলাদা করে দিলে!? কেন ফুপ্পি!?
তনিমা কিছু বলার আগেই রুশা হাক ছাড়তে ছাড়তে উপরে উঠে এলো,
” ফুপ্পি! ফুপ্পি!! আম্মু ডাকছে। এসো খাবে চলো।
রুশা শুধু ডেকেই ক্ষান্ত দেয়নি, ঝড়ের বেগে এসে তনিমার হাত ধরে আবার ঝড়ের বেগে টেনে নিচে নিয়ে গেছে।
সায়ন উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তার মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্নরা জড়ো হয়েছে। যার উত্তর না পেলে শান্তি পাবে না সে।
সায়ন চলে যেতেই বারান্দায় এসে দাড়ালো তনু। তার চোখেমুখে অজানা বিস্ময় ফুটে উঠেছে। সায়নের ট্রাউজার ধুয়ে বারান্দায় নাড়তে এসে মায়ের সাথে সায়নের কথাবার্তা শুনে থমকে গেছিলো সে।
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ তাদের কথোপকথন শোনার চেষ্টা করছিলো তনু। কিন্ত সায়নের বলা শেষের কথাটা ছাড়া কিছুই স্পষ্ট শুনতে পায়নি। আর সেই শেষ কথাটাই তনুকে হতবাক করে দিয়েছে। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে তার।
______________________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
রাতের খাবার খেয়ে প্রায় সবাই যে যার ঘরে ঘুমাতে চলে গেছে। নিচতলায় বসার ঘরে বসে হারিকেনের উজ্জ্বল আলোয় ভাত খাচ্ছে সায়ন আর তনু।
আড়চোখে দুজনেই দুজনকে দেখছে কিন্ত কেউই কোনো কথা বলছেনা। তাকিয়ে থাকতে থাকতে হটাৎ করে চোখাচোখি হতেই দুজনে দৃষ্টি নামিয়ে খাওয়ায় মন দিল।
বারান্দার দিকের দরজাটায় বসে হাত পায়ের নখ কাটছে হাসু মিয়া। নখ একটু বড় হয়েছে কি তার ঠিক নেই, অমনি নেইলকার্টার নিয়ে বসে পড়েছে। আগে সে ব্লেড দিয়ে নখ কাটতো।
একবার অসাবধানতা বশত ডান হাতের একটা নখ কেটে একেবারে দুই ফালা করে ফেলেছিল সে। তারপর দীর্ঘদিন নখের ব্যাথায় ভুগেছে। নখের ব্যাথায় হাত দিয়ে ঠিকমতো খেতে পারতো না বেচারা। সেইসাথে ব্লেড নামক জিনিসটা তার দুচোখের বিষে পরিণত হল।
সেই ঘটনার পর শেভ করতে ব্লেড দরকার তাই শেভ করাই ছেড়ে দিল হাসু মিয়া। শেভ করার পরিবর্তে এখন কাচি দিয়ে দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে রাখে সে। নখ কাটতে কাটতে তনুর দিকে তাকিয়েই বলল,
” তনুমা! রান্না কেমন হইচে!?
” দারুন হইছে মামা। আর রাজহাঁসের মাংস তো আমার ফেভারিট!
” সায়ন বাবায় ইটুবে (ইউটিউব) এ রাজহাঁস রান্নার ভিডু দেখাইচে। আমি তাই দেইখা দেইখা রানছি।
তনু স্মিত হেসে আবার খেতে লাগল। রান্নাটা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। সায়ন কিছু বলছেনা, হাজার প্রশ্নের ভিড়েও তার মনের মধ্যে অজানা সুখ অনুভব হচ্ছে। বারবার ফুপ্পির বলা কথাটা তার কানে বাজছে,
” তোর মতো ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে পাওয়াটা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার সায়ন। তোর হাতে তনুকে তুলে দিতে পারলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হত না!
কথাটা মনে পড়তেই আনমনে হেসে উঠল সায়ন। তার মৃদু হাসির শব্দটাও এই নিস্তব্ধ পরিবেশের মাঝে স্পষ্ট শুনতে পেলো তনু।
চকিতে সায়নের দিকে তাকালো সে। সায়নের ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। সে খাচ্ছে কম ভাবছে বেশি। তনু মুহুর্তেই ভ্রু কুচকে বলল,
” কি ভেবে এতো হাসছেন শুনি!
তনুর কন্ঠঃ পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল সায়নের। তনুর দিকে তাকিয়ে দেখল তনু তার ঘনকালো চোখ জোড়া দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সায়ন বাকা হেসে বলল,
” ভাবছি চাকরি পেলে সেই মাসেই বিয়ে করে নেবো। আমার জন্য মেয়ে দ্যাখ তো।
সাথেসাথেই তনুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আজকাল একটুতেই খুব রেগে যায় সে। যাকে এককথায় বলে রগচটা।
এই স্বভাবটা তার খুবই অপছন্দের ছিলো। এখন সেই স্বভাব তাকেই পেয়ে বসেছে। তনু নিজেকে শান্ত রাখার অব্যর্থ চেষ্টা শেষে চাপা গর্জন করে উঠল,
” আমি কি ঘটকালি করে বেড়াই যে, আমাকে আপনি মেয়ে দেখতে বলছেন?
” ঘটকালি করাটা কিন্ত খারাপ না বুঝলি। বিয়ের কথা পাকা করতে পারলেই শুধু লাভ আর লাভ। দুই পক্ষ থেকে না হলেও মেয়ে পক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা পাবি। আর দুই পক্ষই টাকা দিলে তো কথাই নেই। এরপর হলুদ, বিয়ে, বৌভাতে মনে কর শুধু কবজি ডুবিয়ে খাবি।
সায়ন কথা গুলো বলতে বলতে বেশ আয়েশ করে হাসের মাংস কামড়ে ছিড়ছে। তনু এবার জোর করে হেসে বলল,
” তাহলে আপনিই ঘটক হয়ে যান না। এতো এতো লাভ ফেলে চাকরি করার কি প্রয়োজন!?
সায়ন একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” চাইলেও হতে পারবো না রে। আমার হবু শ্বাশুড়ি আবার চাকুরিজীবী ছাড়া মেয়ে বিয়ে দেবে না।
প্রতিত্তোরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো তনু। সাথেসাথেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে সায়নের বলা কথাটা মনে পড়ল,
” তাহলে কেন আমাদেরকে আলাদা করে দিলে!? কেন ফুপ্পি!?
___________________________________
|
|
|
|
|
সায়নের খাওয়া শেষ। সে খেয়ে উঠে বারান্দার বেসিনে হাত ধুতে গেছে। তনুর খাওয়াও শেষ প্রায়। কিন্ত বাকিটুকু সে আর খেতে পারছেনা।
সায়ন এমন কথা কেন বলল তাকে জানতে হবে। তনু এক গ্লাস পানি খেয়ে প্লেট রেখে তাড়াতাড়ি বারান্দায় এসে দাড়ালো।
হাসু মিয়ার নখ কাটা শেষ। প্রতিবারের মতো এবারও নখ কেটে একটা বিজয়ের হাসি দিল। যেন বিশাল এক যুদ্ধ জয় করেছে সে। অবশ্য নখ কাটতে পারাটা তার কাছে কোনো যুদ্ধের চেয়ে কম নয়।
হাসু মিয়া বসা থেকে উঠে এসে থালাবাসন গুলো একের পর এক সাজাতে লাগল সে। থালাবাসন একসাথে করে বারান্দায় রেখে এলো।
সকালে ওগুলো পুকুরে নিয়ে ধুতে হবে। থালাবাসন রেখে হাসু মিয়া দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। কাল সকাল থেকে আকিকার অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনেক কাজ!
সায়ন হাত ধুয়ে বারান্দায় টানানো দড়ি থেকে গামছা নিয়ে হাত মুছতে মুছতে দেখল তনু বেসিনে হাত ধুচ্ছে। তনু সাদা আর কালো মিশ্রিত সালওয়ার কামিজ পরেছে আজ। বেসিনের দিকে হালকা ঝুকে থাকায় তনুর পিঠের ওপর থেকে চুলের বিনুনিটা একপাশে সরে গেছে।
বসার ঘরে জ্বলতে থাকা হারিকেনের উজ্জ্বল আলোর ছিটে এসে পড়ছে বারান্দায়। সেই আলোর ছিটে আর বাইরে থেকে আসা চাঁদের আলোয় তনুকে অপ্সরাদের মতো লাগছে। তনুর থেকে যেন চোখ ফেরাতে পারছেনা সায়ন। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে।
তনু হাত ধুয়ে সায়নের দিকে এগিয়ে এলো। সায়নের হাত থেকে গামছা নিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল,
” একদম পালানোর চেষ্টা করবেন না বলে দিলাম। নাহলে আপনার সারা চুলে আমি চুইংগাম লাগিয়ে দেবো।
তনুর কথা শুনে সায়ন মুখ টিপে হাসল। তনু তাতে পাত্তা না দিয়ে বলল,
” আমাদের আলাদা হওয়ার আসল কারণ কি ছিলো!? আজ আমি জানতে চাই। আর আপনাকে বলতেই হবে।
সাথেসাথেই সায়নের মুখ থেকে হাসি সরে গেলো। আজ এতো বছর পর তনু আবার কেন এসব জানতে চাইছে!
সায়ন তো তাকে বলেছিলো, কেন সে তার সাথে রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করতে চায়না। যদিও সেটা পুরোপুরি সায়নের বানোয়াট কারণ ছিলো।
সায়নের উত্তর না পেয়ে তনু এবার উত্তেজিত হয়ে বলল, ” চুপ করে থাকবেন না বলুন। আমি জানতে চাই কেন আপনি আমার থেকে দূরে চলে গেলেন? কেন বারবার নিজের কাছে টেনে আবার দূরে সরিয়ে দেন আমাকে?? কেন???
তনুর চোখে পানি টলমল করছে। যেনো টোকা দিলেই গড়িয়ে পড়বে। সায়ন অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,
” কারণটা আমি নিজেও জানিনা। শুধু এটা জানি যে, হলুদ খাম তার কুরচি ফুলকে ভীষণ ভালোবাসে।
তনু আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। ঝাপিয়ে পড়ল সায়নের প্রশস্ত বুকে। দু’হাতে সায়নের গলা জড়িয়ে ধরে ফোপাঁতে লাগলো। সায়ন একটা তৃপ্তির হাসি হেসে তনুর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
” আস্তে ধর পেত্নী! তুই কি আমায় দম বন্ধ করে মারতে চাচ্ছিস!!
তনু ছাড়লো না। জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল,
” আর আমি যে এত বছর ধরে দম বন্ধ হয়ে মরছি সে বেলায়!?
সায়ন আর কিছু বলল না। তনুর কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। কিন্ত সায়নের বুকে মুখ গুজে থাকায় শব্দটা সায়ন ব্যতীত কেউ শুনতে পাচ্ছে না। সায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশে ঝুলে থাকা রূপোলী চাঁদটার দিকে তাকালো।
আড়াই বছর আগে এমনই এক জ্যোৎস্না রাতে তনুকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো সায়ন। আজ এতো অপেক্ষার পর আবারও তনুর কাছেই ধরা দিয়েছে সে। ভালোবাসা থেকে পালিয়ে লাভ নেই। দিনশেষে ভালোবাসার কাছেই ফিরতে হয়। দেরিতে হলেও ফিরতে হয়।
|
|
|
[চলবে]