হলুদ খাম, পর্ব:৮

#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম

__________________[৮]__________________

মায়ের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংলো তনুর, ঢুলুঢুলু চোখে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলা এগারোটা বাজে! এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে সে!! আড়মোড়া ভেঙে তনু উঠে বসল। পাশ ফিরে দেখল, রুশা নেই। হয়তো তার আগেই সে ঘুম ভেঙে উঠে গেছে।

তনিমা মেয়েকে খেতে ডেকে আবার নিচে চলে গেলো।
এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো উঁচু করে হাত খোপা করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো তনু। বড় বারান্দাটা সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। বারান্দা পেরিয়ে মায়ের ঘরে ঢুকে ব্রাশ আর টুথপেষ্ট নিয়ে তনু ওয়াশরুমে এসে ঢুকল।

ওপরতলায় কারও কোনো সাড়াশব্দ নেই, সবাই হয়তো নিচে আছে। তনু ব্রাশ করতে করতে আনমনে বেসিনের আয়নায় তাকাতেই চমকে উঠল। সাথেসাথেই তার হাত চলে গেলো গলায়।

তার গলা আর কাধের মাঝামাঝি নরম চামড়ায় রক্তজমাট বেধে খয়েরী রঙ ধারণ করেছে! গতরাতের সেই ঘটনা মনে পড়তেই রাগে গজগজ করতে লাগল তনু। দাতে দাত পিষে বলল,

” গলায় এতো জোরে কেউ কামড় দেয়! উফফ, কত্তো জ্বালা করছিলো!! উনি কি ভ্যাম্পায়ার নাকি!!!? কি জানি! হতেও পারে!!!

তনু দ্রুত ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো। ছোট ছোট ধাপের সিড়ি বেয়ে হনহনিয়ে নেমে এদিক ওদিক তাকালো সে। বাইরের বারান্দায় স্নেহা আপু তার মেয়েকে কোলে নিয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।

রান্নাঘর থেকে মা আর ছোট মামির গলা পেয়ে তনু রান্নাঘরের দরজায় এসে দাড়ালো। রাবেয়া একটা টুলে বসে খাতা কলম নিয়ে কিসের যেনো লিস্ট বানাচ্ছে।

তনুকে দেখে ঢেকে রাখা ব্রেকফাস্ট নিয়ে মেয়ের দিকে এগিয়ে দিল তনিমা। তনু ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,

” রুশা কোথায় আম্মু!?

” কি জানি। ব্রেকফাস্ট করে উঠোনে পায়চারি করছিলো দেখছিলাম।

রাবেয়া খাতা কলম রেখে লিস্টটা ভাজ করতে করতে বলল,

” পায়চারি করছে কি আর সাধে! সারারাত ফোন অফ ছিলো তার। সকালে কারেন্ট আসার পর ফোন চার্জে দেওয়ার পর চাতক পাখির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগল, ” কি দিন এলো রে! ফোন ছাড়া তো এরা দুদন্ড স্বস্তিতে থাকতে পারেনা দেখি!!

তনিমাও সেইসাথে সায় দিয়ে বলল, ” এখনকার জেনারেশনটা এমনই হয়ে গেছে ভাবি। ছেলেমেয়েরা সারাদিন ফোন আর ল্যাপটপ নিয়েই পড়ে থাকে।

” আমার রাইসা আবার এমন ছিলো না, কিন্ত এই রুশাটা হয়েছে একেবারে ফোনের পোকা।

” তাহলে আর বলছি কি! আমার রোহানও তো, সারাক্ষণ ফোনে গেইম খেলতে ব্যস্ত। ফোন পেলে আর তাকে খুজেই পাওয়া যায় না।

তনিমা কথা বলতে বলতে তনুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,

” তনু অবশ্য ফোন বেশি ধরেনা, কিন্ত সারাদিন বইয়ে মুখ গুজে থাকে।

” সে তো খুবই ভালো কথা আপা। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখাটা ঠিকমতো করলেও তো দেখে শান্তি মেলে।

” তাই বলে কি পরিবারের সাথে একটু সময় কাটানোরও সময় পাবে না!? তুমিই বলো ভাবি!!

” না সে তো অবশ্যই! হাজার পড়া থাকুক, তার মাঝে পরিবারকে তো একটু সময় দেওয়া উচিৎ!!

তনু একটা রাগ মিশ্রিত নিঃশ্বাস ফেলে মায়ের দিকে তাকালো। তনিমা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও বুঝতে পারছে তার মেয়ে এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তনু প্লেট আর এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে গটগট করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার, মনে হচ্ছে সবকিছুর জন্য শুধু সে নিজেই দায়ী। নিজের কষ্টকে সবার থেকে আড়াল করতে গিয়ে পরিবার থেকেও অনেক দূরে চলে গেছে সে। অনেক দূরে! বারান্দার দিকে যেতে যেতে সে বিড়বিড়িয়ে বলল,

” তুই খুব স্বার্থপর হয়ে গেছিস তনু!

________________________________________










মোটাতাজা একটা ছাগলকে আমগাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেধে রেখেছে হাসু মিয়া। এটাকে স্নেহার মেয়ের আকিকায় জবাই করা হবে। রুশা আম গাছের পাতা ছিড়ে ছিড়ে একটা একটা করে ছাগলকে খাওয়াচ্ছে। ছাগলটাও বেশ আয়েশ করে পাতা চিবাতে ব্যস্ত।

স্নেহার মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, তাকে নিয়ে ওপরতলায় চলে গেলো স্নেহা। তনু বারান্দায় এসে গ্লাসটা মেঝেতে রেখে প্লেট নিয়ে বসে পড়ল দোলনায়। পরোটা ছিড়ে ছিড়ে ভাজি আর ডিম পোচ দিয়ে খেতে লাগল।

খেতে খেতে বাড়ির বিশাল উঠান থেকে শুরু করে গেট পর্যন্ত তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দেখে নিল তনু। কিন্তু যতদূর চোখ যায় তার তীর সীমানায় কোথাও সায়নকে দেখতে পেলো না সে। তনু পরোটা ছিড়ে গালে পুরতে পুরতে বলল,

” আপনাকে এখন সামনে পেলে এই পরোটার মতো করে আপনাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো আমি। তারপর যা করার আমার পেটে গিয়ে কইরেন!

এমন আজগুবি চিন্তাভাবনা মনে আসতেই নিজ মনেই হেসে ফেলল তনু। ঠিক তখনই কারো কন্ঠঃ পেয়ে ফিরে তাকালো সে। দু’হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে সায়ন সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল,

” তনু তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি দে তো! উফফ বাইরে কি গরম পড়ছে!!

তনু দোলনা ছেড়ে উঠলো না, গতরাতের কথা ভেবে ঠায় বসে রইলো। মনেমনে বলল,

” আপনাকে মারার মতো সাহস আমার নেই। তাই এভাবেই প্রতিশোধ নেবো আমি। দেবো না আপনাকে পানি। পারলে নিজে গিয়ে পানি খান। গলায় কামড় দেওয়ার আগে মনে ছিলো না! যে তনুও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। হুহ!!

এদিকে সায়ন গরমে হাসফাস করছে। তনুকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তার। এবার একটু চেচিয়ে উঠলো,

” তনু! তোর কি কানে কথা যাচ্ছেনা!? বললাম না এক গ্লাস পানি দিতে!!

সায়নের ধমক পেয়ে তনু আর চুপচাপ বসে থাকতে পারলো না। টুপ করে দোলনা থেকে নেমে পড়ল। সায়নের ক্লান্তি মাখা মুখটার দিকে তাকাতেই তার বুকটা ধক করে উঠল। এরমধ্যেই কোত্থেকে রুশা ছুটে এসে বলল,

” আমি পানি এনে দিচ্ছি তুমি বসো।

বলেই দ্রুত পায়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটল সে। তনুর এতক্ষণে টনক নড়ল, দ্রুত নিজের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে দিল সায়নের দিকে। সায়ন রাগে গজগজ করতে করতে গ্লাসটা একরকম ছিনিয়ে নিল তনুর হাত থেকে। তনু কোনোরকম রিয়াক্ট না করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

সায়ন ঢকঢক করে পুরো পানিটুকু খেয়ে গ্লাসটা তনুর হাতে ধরিয়ে দিল। রুশা এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,

” পানিটুকু খেয়ে নাও, এক্ষুনি ফ্রিজ থেকে নিয়ে এসেছি।

” আমি ঠান্ডা পানি খাইনা।

বাজারের ব্যাগ দুটো দেখিয়ে বলল, ” এগুলো রান্নাঘরে নিয়ে যা তো।

বলেই দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে অদূরে আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা হাসু মিয়াকে ডাকতে লাগল সায়ন,

” চাচা! খামার থেকে রাজহাঁসটা নিয়ে পুকুরপাড়ে চলেন!!

রুশা হতভম্ব হয়ে সায়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তনু অবাক হলেও মনেমনে সে বেজায় খুশি! সায়নের ওপর থেকে গতকালের রাগটা মুহুর্তেই মিলিয়ে গেছে তার। ইচ্ছে করছে সায়নের ফর্সা গালে টুপ করে একটা চুমু খেতে!!! পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে রুশাকে বলল,

” এখনও দাড়িয়ে আছিস যে! ভাইয়া না বলল ব্যাগ দুটো রান্নাঘরে নিয়ে যেতে!!

” আমি একা দুটো ব্যাগ কিভাবে নিয়ে যাবো!? একটা আমি নিই আরেকটা তুই নে।

তনু সে কথায় পাত্তা না দিয়ে আবারও দোলনায় বসে পড়ল, পরোটা ছিড়ে খেতে খেতে নরম সুরে বলল,

” আমি এখন খাচ্ছি দেখতে পাচ্ছিস না!

রুশা বিরক্তি মাখা চোখে তাকিয়ে গটগট করে রান্নাঘরে চলে গেলো।

______________________________________










বেলা গড়িয়ে দুপুর নেমেছে, গাছপালা ঘেরা পুকুরের পাড়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। কাপড়চোপড় হাতে নিয়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তনু, আজ কতদিন পর পুকুরে গোসল করবে ভেবে খুশিতে চকচক করছে তার চোখজোড়া। যদিও সে সাতার কাটতে পারেনা। সিড়ির ধাপ যতদূর পর্যন্ত ততদূর গিয়ে গিয়ে ডুব মেরে গোসল করবে তনু।

কিন্ত পুকুরে গোসল করতে হবে বলে রুশার ভীষণ বিরক্ত লাগছে। সেও সাতার কাটতে পারেনা, দাদুবাসায় এলে সবসময় ওপরের গোসলখানায় গোসল সেরে নেয়। কিন্ত আজ মোটরে কি যেন সমস্যা হয়েছে তাই বাড়ির গোসলখানার ট্যাপে পানি আসছে না। মিস্ত্রি ডেকে ওটা ঠিক করতে হবে। অগত্যা আজ সবাই পুকুরেই গোসল করবে।

পুকুর পাড়ে কাপড় পালটানোর জন্য তিন পাশ ঘেরা ইট সিমেন্টের একটা ঘর আছে। সামনে আটকানোর জন্য আছে টিনের একটা নড়বড়ে দরজা।

তনিমা আর রাবেয়া আগেই গোসল করে উঠে গেছে, স্নেহাও গোসল করে কাপর পাল্টাচ্ছে। তনু সিড়ির ধাপে বসতে বসতে রুশাকে ডাকল,

” এই রুশা! ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস! আয় একসাথে গোসল করে নিই।

” আমি পুকুরে গোসল করবো না, আমার ভয় লাগে!

” আরে ভয়ের কি আছে! আমি আছি তো!!

” তুই থেকে কি হবে!? তুই নিজেও তো সাতার কাটতে পারিস না!

” হুহ! থাক তোর আসা লাগবেনা। আমি একাই গোসল করবো। যা ভাগ এখান থেকে। সারাদিন গোসল না করেই থাক। ইতর কোথাকার!!

তনু হাত-পা ডলে ধীরে ধীরে পানিতে নেমে পড়ল, কি সুন্দর ঠান্ডা পানি! টুপ করে একটা ডুব দিয়ে উঠল সে!! এদিকে রুশা ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে। পুকুরে গোসল না করলে আজ তাকে গোসল না করেই থাকতে হবে। তার সাথে শুনতে হবে, সে একটা “ইতর”! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সেও পুকুরে নেমে পড়ল।

________________________________________





দুই বোন মিলে বেশ কিছুক্ষণ পানিতে লাফঝাপ দিয়ে উঠে এলো। কাপড়চোপড় পাল্টাতে গেলো পুকুর পাড়ের ঘরটায়। রুশা জামাকাপড় পরে নিজের ভেজা কাপড় ধুয়ে বালতিতে রেখেই বাইরে বেরিয়ে এলো। তনু বিরক্তি মাখা মুখে বলে উঠল,

” রুশা! কাপড় গুলো রেখে গেলি কেনো!? নিয়ে দড়িতে নেড়ে দে!!

” আমি তখন ঐ ভারি ভারি বাজারের ব্যাগ দুটোকে একাই রান্নাঘরে নিয়ে গেছিলাম। তুই একটুও হেল্প করিস নি। সো এখন তুই আমার কাপড় দড়িতে নেড়ে দিবি। বায় বায় বনু!

রুশা আর একমুহূর্ত সেখানে না দাড়িয়ে নাচতে নাচতে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। তনু একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বালতি নিয়ে পুকুর পাড়ের দড়িতে নেড়ে দিতে গেলো।

কাপড় নাড়তে নাড়তে হটাৎ পুকুরের পানিতে সাতার কাটার শব্দ পেয়ে ফিরে তাকালো তনু। সায়ন পুরো পুকুরে সাতরে বেড়াচ্ছে! তনু একবার সেদিকে তাকাচ্ছে আবার কাপড় নাড়ছে। এভাবে দেখতে দেখতে হটাৎ করে দেখল সায়নকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না!!

না চাইতেও চিন্তিত মনে পুকুরের চারিপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলাতে লাগল তনু!!! কিন্ত না! সায়ন কোথাও নেই!! দ্রুত পায়ে পুকুরের পাড়ে এগিয়ে এলো সে। ভয়ে আতংকে তনুর গলা বুক শুকিয়ে আসছে। আতংকিত গলায় ডেকে উঠল,

” সায়ন ভাইয়া!

সায়নের কোনো সাড়াশব্দ নেই, হালকা বাতাসে পুকুরের পানি মৃদু ঢেউ খেলে খেলে উঠছে। তনুর এবার ভীষণ ভয় হতে লাগল। তনু কাপা কাপা গলায় আবার ডেকে উঠল,

” সায়ন ভাইয়া!!

জলজ্যান্ত একটা মানুষ হুট করে কোথায় চলে গেলো!? পাড়ে উঠে এলে তো তনুর চোখে পড়তো। কিন্ত পাড়ে তো সায়ন আসেনি!! তনুর এবার কান্না পাচ্ছে, টলমল চোখে তাকিয়ে আবার ডেকে উঠল,

” সায়ন!

পরক্ষণেই সিড়ির কাছাকাছি পানির ওপর ভেসে উঠল সায়ন। তনুর কান্না মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল,

” কি ভেবেছিলি গাধী!? পানিতে ডুবে মরেছি কিনা!!?

সায়ন তনুর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে সিড়ি বেয়ে উঠে পাড়ে এসে দাড়ালো। তনু তাকে দেখা মাত্রই ছুটে এসে জাপটে ধরল সায়নকে। তনু ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল,

” একদম এসব বাজে কথা মুখেও আনবেন না বলে দিলাম। নাহলে আপনার মুখ আমি ঘুষি মেরে ভোতা বানিয়ে দেবো!

” ঘুষি মেরে হাত ব্যাথা না করে একটু চুমু খেলেই তো পারিস।

তনু সাথেসাথেই সায়নকে ছেড়ে সরে এলো, সায়নের ভেজা গায়ে এতক্ষণ লেপ্টে থাকায় তনুর জামাকাপড়ও অনেকটা ভিজে গেছে। তনুকে ভেজা অবস্থায় দেখে সায়নের কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে। তনুর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,

” বজ্জাত মেয়ে! বিয়ের আগেই বাসর করার শখ জেগেছে নাকি তোর!?

সায়নের একের পর এক ভয়ানক বাক্য শুনে তনুর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হচ্ছে। সোজা হয়ে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছেনা। কিন্ত সায়নের কথা গুলোর প্রতিত্তোরে কড়া জবাব দিতে মন চাচ্ছে তনুর। আস্তে আস্তে মুখ তুলে সায়নের দিকে তাকালো সে।

সাথেসাথেই তার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল, শুধু ট্রাউজার পরে ভেজা শরীরে তনুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন। ফর্সা গালের খোচাখোচা দাড়ি বেয়ে টুপটাপ করে পানি পড়ছে! উন্মুক্ত বুকের পশম বেয়েও গড়িয়ে পড়ছে পানির ধারা!! কি ভয়ানক মাতাল করা দৃশ্য!!! তনু এবার সরাসরি সায়নের চোখে তাকিয়ে বলল,

” এভাবেই শেষ করে দেবেন আমাকে!? না দূরে যেতে দিচ্ছেন!! না কাছে আসতে দিচ্ছেন!!!

সায়নের কি হল কে জানে, দু’হাতে তনুর কোমর পেচিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। তনুর নিঃশ্বাস দ্রুত ওঠা নামা করছে। সায়ন তার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজল। তনুও আর তাকিয়ে থাকতে পারছেনা। অজানা শিহরণে চোখ বুজে ফেলল সে। সায়ন কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলল,

” আড়াইটা বছর ধরে তুই যে যন্ত্রণায় ছটফট করছিস, প্রতিনিয়ত আমি তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণায় ভুগছি। কিন্ত কিছুই করতে পারছিনা, মনে হচ্ছে আমার হাত-পা বেধে রাখা হয়েছে!

সাথেসাথেই চরম বিস্ময়ে তনু তার চোখ জোড়া মেলে সায়নের দিকে তাকালো। এসব কি বলছে সায়ন!? তার হাত-পা বেধে রাখা হয়েছে মানে!!?

তনু কিছু বলার আগেই সায়ন তাকে ছেড়ে দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। তনু বিস্ময় মাখা চোখে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পথে।










[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here