প্রণয়ের রং
পর্ব – ০৪
___” দূর থেকে কি আর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা যায় বলো? এই নাও একদম কাছে চলে এসেছি এবার। এখন দেখো মন ভরে। তাকাও। ”
বলে মুচকি মুচকি হাসছে শুভ্র। মেয়েটাকে এভাবে লজ্জায় ফেলতে বড্ড ভালো লাগে ওর। লজ্জা রাঙা মুখটা দেখতে আরও মায়া মায়া লাগে।
নিমিতা দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু নিসপিস করছে। মনে মনে হাজার কথা বললেও মুখে যেন কুলুপ এটে দিয়েছে কেউ। কিছুই বের হচ্ছেনা মুখ দিয়ে।
___” এভাবে এত কাছে এসে দাড়ালে কি আর মুখে কথা আসবে? পেটেই তো সব গুটুর গুটুর করবে। ”
মনে মনে হা-হুতাস করছে নিমিতা..
দূর থেকে আবির সবটা দেখছিল। নিমিতার এত কাছে শুভ্র দাড়িয়ে এটা সে সহ্য করতে পারছে না।
নিমিতা কিছু বলতে যাবে.. তখনই __
___” নিমি। এখানে কি করছিস? ওদিকটায় বসবি চল।”
এসেই বললো আবির।
আবির আসাতে শুভ্র নিমিতার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।
নিমিতা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আরেকটু হলেই যেন অজ্ঞান হয়ে যেত।
নিমিতার গানের গলা অনেক ভালো। সবাই ওকে রিকুয়েস্ট করলো গান গাইতে। নিমিতা স্টেজে গিয়ে খালি গলায় গান ধরলো –
দাড়িয়ে আছো তুমি
আমার গানের ও পারে..
আমার সুরগুলি পায় চরণ
আমি পাইনে তোমারে ।
বাতাস বহে মরি মরি
আর বেঁধে রেখো না তরী..
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয় মাঝারে
দাড়িয়ে আছো তুমি
আমার গানের ও পারে।
শুভ্র অবাক হয়ে নিমিতার গান শুনছিলো। আর কতোবার করে প্রেমে পরবে মেয়েটির!! একটা অচেনা অজানা মেয়ে কখন তার মনের মাঝে ঢুকে ড্রাম বাজাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারে নি।
গানের মাঝে হঠাৎ ফ্যানের বাতাসে নিমিতার পেটের দিকটার শাড়ির আঁচল অনেকটা সরে গেল। নিমিতা বুঝতে না পারলেও স্পষ্টভাবে তার পেটের একপাশ বের হয়ে আছে।
তোমার সাথে গানের খেলা
দূরের খেলা যে..
বেদনাতে বাঁশি বাজায়
সকল বেলা যে..
নিমিতা চোখ বন্ধ করে গান গাইছিল। শুভ্র হঠাৎ স্টেজে উঠে নিমিতার হাত শক্ত করে টেনে ধরলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় নিমিতা চমকে উঠে চোখ মেলে দেখে শুভ্র তার হাত ধরেছে।
কাউকে কিছু না বলেই চোখ মুখ কঠিন করে হিরহির করে টেনে নামিয়ে আনে নিমিতাকে।
নিমিতা কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না। হঠাৎ কি হলো উনার..
___” আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমায় নিয়ে? হাত ছাড়ুন আমি ব্যাথা পাচ্ছি ”
নিমিতা দেখলো সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। ওর চোখে পানি চলে এসছে। খুব রাগ হচ্ছে শুভ্রের উপর।
___” আর একটা কথা বলেছো তো ছাদে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেবো। ”
রেগে গিয়ে বললো শুভ্র।
নিমিতা ভয়ে চুপ করে গেল। সে বুঝতে পাচ্ছে না যে তার দোষ টা কি। গান বলাতেই কি রেগে গেলেন উনি?
একেবারে ক্যাম্পাস পেরিয়ে গেটের বাইরে এসে থামলো শুভ্র।
___” খুব শখ না সেজে গুজে ভার্সিটিতে আসার? অন্যদের শরীর দেখানোর খুব ইচ্ছে তোর? ”
চোখমুখ কঠিন করে বললো শুভ্র।
নিমিতার কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বেরোবে এবার। কি বলছে এসব এই লোক! কোনোভাবে কান্না আটকে বললো __
___ ” কি বললেন আপনি? আমায় এমন মেয়ে মনে হয়? ”
___” কি করলাম আমি? একটু আগেও তো আপনি..
___” চুপ। এখনো কথা বলার সাহস আছে? কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি।
এরপর যদি আর কোনোদিন এসব পাতলা ফিনফিনে তেনা পেঁচিয়ে ক্যাম্পাসে পা রেখেছিস তো টেনে ছিড়ে ফেলবো এই তেনা। ”
এবার নিমিতা কপাল কুঁচকে তাকালো।
___” তেনা? তেনা কই পড়লাম আমি? ”
___” তো এটা কি শাড়ি? শাড়ি এমন হয়? রিকশা করে দিচ্ছি। সোজা বাড়ি চলে যাও। ”
এই বলেই রিকশা ডেকে দিল শুভ্র।
নিমিতার এত এত রাগ হচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারবে না। আর কিছু না বলেই শুভ্রের থেকে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রিক্সায় উঠে পরলো সে।
পুরো রাস্তা নিমিতা কাঁদতে কাঁদতে গেল।
___” এই লোক টা কি ভাবে টা কি নিজেকে? আর কোনোদিনও সামনে আসবো না উনার। শুধু নামটাই শুভ্র।
কিন্তু মন.. মনটা একেবারে কাজল – কালো। কি করে পারলো আমার সাথে এমন করতে? ”
চলবে…
নিমিতা আনাম